alt

উপ-সম্পাদকীয়

তথ্যপ্রযুক্তির যুগে জনগণের তথ্য অধিকার নিশ্চিত হোক

মরতুজা আহমদ

: মঙ্গলবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২২

২৮ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক তথ্য অধিকার দিবস। তথ্য চাওয়া, পাওয়া ও প্রদানের বিষয়টিকে বিশ্বের প্রত্যেক মানুষের মৌলিক অধিকার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার উদ্দেশ্যেই বিশ^ব্যাপী দিবসটি পালিত হয়ে থাকে। তথ্যে মানুষের প্রবেশাধিকারকে টেকসই উন্নয়ন ও মানবাধিকারের পূর্ব শর্ত হিসেবে গণ্য করা হয়ে থাকে। ফলে দিবসটি পালনের লক্ষ্য থাকে তথ্য অধিকার সম্পর্কে সব মানুষকে সচেতন করা, দেশে দেশে এ-সংক্রান্ত আইনকানুন, বিধিবিধান প্রণয়ন ও এগুলোর যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা। এ পর্যন্ত জনগণের তথ্য অধিকার বা তথ্যের স্বাধীনতা-সংক্রান্ত ১৩২টি আইন প্রণীত হয়েছে। বাংলাদেশেও ২০০৯ সনে তথ্য অধিকার আইন প্রণয়ন ও কার্যকর হয়। আইনটি সার্বজনীন, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও অনন্য।

বাংলাদেশেও প্রতি বছরের ন্যায় এ বছর ২৮ সেপ্টেম্বর দিবসটি সারা দেশে পালিত হচ্ছে। কেন্দ্র থেকে উপজেলা পর্যন্ত গৃহীত হয়েছে নানাবিধ কর্মসূচি। এবার আমাদের দিবস পালনে মূল প্রতিপাদ্য-‘তথ্যপ্রযুক্তির যুগে জনগণের তথ্য অধিকার নিশ্চিত হোক’-তথ্যপ্রযুক্তির যুগে এহেন বিষয় অত্যন্ত সময়োপযোগী ও অর্থবহ হয়েছে বলে আমরা মনে করি। তথ্য অধিকার আইন ২০০৯ ও এ সংশ্লিষ্ট বিধি ও প্রবিধি প্রতিটিই তথ্যপ্রযুক্তি বান্ধব। সারা বিশ্বেই এখন তথ্যপ্রযুক্তির জয়জয়কার; উন্নয়ন, সমৃদ্ধি ও অগ্রগতির সোপান। বাংলাদেশেও জনগণের তথ্যে প্রবেশাধিকার নিশ্চিতকরণে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার হচ্ছে, আইন ও বিধিমালাও এ ক্ষেত্রে যথেষ্ট সহায়ক।

আইনটির মূল লক্ষ্যই হলো তথ্যের অবাধ প্রবাহ রচনা করা। জনগণের তথ্য অধিকার নিশ্চিত করা, কর্তৃপক্ষের স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা বৃদ্ধি করে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা। এ জন্য আইনে তথ্য গোপনকে নিরুৎসাহিত করে তথ্যকে সহজলভ্য করার জন্য নানা বিধিবিধানের অবতারণা করা হয়েছে। দুটি পদ্ধতিতে নাগরিকের তথ্য পাওয়ার নিশ্চয়তা থাকবে। একটি আবেদনের ভিত্তিতে অন্যটি কর্তৃপক্ষ স্ব-প্রণোদিত হয়ে তথ্য অবারিত করবে। উভয় পদ্ধতিতেই নাগরিকের তথ্যপ্রাপ্তি সহজলভ্য করার জন্য তথ্য সংগ্রহ, সংরক্ষণ, ব্যবস্থাপনা, প্রচার ও প্রকাশকে আইনে বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে। জনগণকে তথ্যের আদান-প্রদানে সব ক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার উৎসাহিত করা হয়েছে।

তথ্য অধিকার আইন ও বিধিমালার আওতায় জনগণের তথ্যপ্রাপ্তি ও প্রদানে ই-মেইলের ব্যবহার, সব কর্তৃপক্ষের ইন্টারনেট সংযোগ সার্বক্ষণিক সচল রাখা, এমনকি অভ্যন্তরীণ, অন্যান্য দপ্তর সংস্থা ও জনগণের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে ইন্ট্রানেট ও এক্সট্রানেট সংযোগ রাখা, ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে তথ্যের বিন্যাস, রক্ষণ ও পরিচালনা যেমন মাইক্রোফোন বা কম্পিউটার প্রযুক্তির ব্যবহার করে অনুলিপি তৈরি ও সংরক্ষণ, একই ধরনের সফটওয়ার ব্যবহার ও অনুসরণ, রিয়েল টাইম মনিটরিং, কাগজবিহীন অফিস ব্যবস্থা চালুকরণ, নথি বা জনগণের তথ্যের আবেদনের গতিবিধি নিরুপণের জন্য ফাইল ট্রাকিং সিস্টেম ব্যবহার, ইলেকট্রনিক ফাইল রেজিস্ট্রেশন সিস্টেম, ইলেকট্রনিক নোটিং-ফাইলিং ও সিগনেচার ব্যবস্থা, কমপ্যাক্ট ডিস্ক (সিডি) তৈরি ও সরবরাহকরণ এবং ইলেকট্রনিক ব্যবস্থায় তথ্য-উপাত্তসহ শ্রেণীবিন্যাসকৃত নথি ধারণ, স্বপ্রণোদিত তথ্য প্রদান ও প্রকাশের কার্যকর মাধ্যম হিসাবে ওয়েবসাইটের আবশ্যিক ব্যবহার ও হালনাগাদকরণ, তথ্যের নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা ইত্যাদি বিষয়ক সুনির্দিষ্ট বিধিবিধান রয়েছে। স্বপ্রণোদিত তথ্য প্রকাশে ওয়েবসাইটের সর্বোত্তম ব্যবহার স্বচ্ছ ও জবাবদিহিতামূলক প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিশ্চিত করছে, যা সুশাসনের অন্যতম অনুষঙ্গ।

ক্রমপ্রসারমান এ তথ্যপ্রযুক্তির যুগে বিভিন্ন তথ্যপ্রযুক্তি যেমন মোবাইল অ্যাপস, হটলাইনস, সার্ভিস সেন্টার, অনলাইন প্ল্যাটফর্ম, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, রোবোটিকস ইত্যাদি ব্যবহার করে তথ্যের উৎপাদন, সংরক্ষণ, ব্যবস্থাপনা, তথ্য কাস্টমাইজেশন, পার্সোনালাইজেশন, তথ্যের প্রচার, প্রকাশ, বিস্তার ও তথ্যের নানামুখী ও সর্বোত্তম ব্যবহার অনেক সহজ, দ্রুত ও ব্যয় সাশ্রয়ী হয়। এ পদ্ধতি অত্যন্ত দক্ষ, কার্যকর, স্বচ্ছ, অংশগ্রহণমূলক, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও জবাবদিহিমূলক।

তথ্য কমিশন অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের সহযোগিতায় তথ্য আদান-প্রদানে বিভিন্ন ক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার ও চর্চা বৃদ্ধিতে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। অনলাইনে আবেদন গ্রহণ ও তথ্য প্রদান, অভিযোগ শুনানি ও নিষ্পত্তিকরণ, অনলাইনে প্রশিক্ষণ প্রদান, ভিডিও কনফারেন্সিং ইত্যাদি ব্যাপকভাবে প্রচলন করেছে। সব কর্তৃপক্ষের জন্য ওয়েবসইট বাধ্যতামূলক করার ফলে বাংলাদেশে এখন প্রায় ৫০ হাজার ওয়েবসাইট সংবলিত সর্ববৃহৎ ওয়েবপোর্টাল রয়েছে। প্রায় প্রতিটিতেই জনগণের তথ্য অধিকারসংক্রান্ত দিকনির্দেশনামূলক একটি বার্তা রয়েছে। গত দুই বছরে করোনাকালে তথ্য কমিশনে ৪৫৭টি অভিযোগ অনলাইনে শুনানি ও নিষ্পত্তি হয়েছে।

ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের ফলে কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অর্থনীতি, শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্য, দক্ষতা উন্নয়ন, কর্মসংস্থানসহ জাতীয় জীবনের সর্ব ক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধির কারণে মানুষের তথ্য প্রাপ্তির সুযোগ প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। সরকারের বিভিন্ন নীতি-সহায়তার ফলে বর্তমানে সব সরকারি দপ্তরে ই-সেবা চালু, ইন্টারনেট ও মুঠোফোনের সহজলভ্যতা নিশ্চিত হয়েছে। দেশে প্রায় ৩ হাজার ৮০০-এর অধিক ইউনিয়নে রয়েছে উচ্চগতির (ব্রডব্যান্ড) ইন্টারনেট। ইন্টারনেট ও মুঠোফোনের সহজলভ্যতায় মানুষের তথ্যপ্রযুক্তিতে অভিযোজন ও সক্ষমতা দুই-ই বেড়েছে। “এক দেশ এক রেট” নামে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের জন্য ট্যারিফ ঘোষণা করা বা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে অর্ধেক খরচে বাংলায় খুদে বার্তা বা এসএমএস চালু করার মতো উদ্যোগসমূহ গ্রাহক পর্যায়ে ইন্টারনেটের দামকে হাতের নাগালে ও আরও শৃঙ্খলার মধ্যে নিয়ে এসেছে এবং ধীরে ধীরে শহর ও গ্রামাঞ্চলে বিরাজমান ডিজিটাল বিভাজন দূর করছে। ৩৩৩, ৯৯৯, ১৬২৬৩ সহ বিভিন্ন কলসেন্টার সার্ভিসের মাধ্যমে মানুষ ফোন করেই প্রয়োজনীয় তথ্য পাচ্ছে।

ভূমি সেবা ডিজিটাইজেশন করার ফলে ই-পর্চা, ই-নামজারি, ই-ভূমি উন্নয়ন করসহ নানাবিধ ভূমিসংক্রান্ত তথ্য জনগণ ঘরে বসেই পাচ্ছে। সরকার এক সেবা বা ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেবা চালু করেছে, যা স্বল্প সময়, স্বল্প ব্যয়ে এমনকি অফিসে না গিয়েও তথ্যসহ সেবা প্রাপ্তির সুযোগ সৃষ্টি করেছে। তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে মহিলাদের ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে উপজেলা পর্যায়ে ‘তথ্য আপা’ প্রকল্পের অধীন ‘তথ্য সেবা কর্মকর্তা’ নিয়োগ দানের মাধ্যমে বাড়িতে থেকেই মহিলাদের প্রয়োজনীয় তথ্য প্রাপ্তির পথ সহজ করা হয়েছে।

‘জনগণের দোরগোড়ায় সেবা’- এই স্লোগানকে সামনে রেখে বর্তমানে সারাদেশে মোট ৫২৮৬টি ডিজিটাল সেন্টার আছে, যার মধ্যে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের সংখ্যা ৪৫৫৪ টি, পৌর ডিজিটাল সেন্টারের সংখ্যা ৩২৫টি, নগর ডিজিটাল সেন্টারের সংখ্যা ৪০৭টি। এতে প্রায় ১১ হাজারের অধিক উদ্যোক্তা নাগরিক সেবা প্রদানে কর্মরত আছে, যাদের অর্ধেক নারী উদ্যোক্তা। তারা এক স্থান থেকেই প্রান্তিক জনগণের নানাবিধ তথ্য ও সেবা তাৎক্ষণিক প্রদানে সদা প্রস্তুত রয়েছে।

সারা বিশ্বের ন্যায় বাংলাদেশেও তথ্যপ্রযুক্তি বা ডিজিটাল বিভাজন রয়েছে। চিরাচরিত কারণগুলো ছাড়াও প্রযুক্তির দ্রুত পরিবর্তন ও প্রয়োগের কারণে নবতর সামাজিক বিভাজন তৈরি হচ্ছে

বাংলাদেশ ফরমস পোর্টাল, ট্রেড পোর্টালসহ সরকারি নানাধর্মী সেবার জন্য আলাদা আলাদা ই-পোর্টাল তৈরি করে তাকে ন্যাশনাল পোর্টালের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে, যার ফলে ঘরে বসে বা যেকোন ডিজিটাল সেন্টারে গিয়েই জনগণ তথ্য সেবা গ্রহণ করতে পারছে। যেমন বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) ওয়েবসাইট হতে বিএডিসির বীজ, সার, সেচ সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য পাওয়া যায়, ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন ‘লবণাক্ততা তথ্য সেবা’-এর মাধ্যমে উপকূলীয় এলাকার পানিতে কখন, কোথায় এবং কী মাত্রায় লবণাক্ততা থাকে, তা সহজেই জানা যায়। জাতীয় ই-তথ্য কোষের মাধ্যমে কৃষি ও জীবন-জীবিকা সংশ্লিষ্ট সব ওয়েবসাইটকে একটি পোর্টালের মাধ্যমে একীভূত করা হয়েছে, যার মাধ্যমে প্রান্তিক কৃষক হতে শুরু করে কৃষি সংশ্লিষ্ট ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ী এবং কৃষিভিত্তিক বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠী সবাই তথ্য সমৃদ্ধ হচ্ছে।

বিনা মূল্যে টেলিমেডিসিন সেবা পেতে রয়েছে স্বাস্থ্য বাতায়ন, যার মাধ্যমে ২৪ ঘণ্টা বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চিকিৎসকের পরামর্শ এবং প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যতথ্য পাওয়া যায়। করোনাকালীন স্বাস্থ্য বাতায়নের গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি অনুভূত হয়েছে। জাতীয় পর্যায়ের ১৩ হাজারের বেশি কমিউনিটি ক্লিনিকসহ ২৪ হাজার স্বাস্থ্যকর্মীকে ডিভাইসসহ ইন্টারনেট সংযোগ প্রদানের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ, টেলিমেডিসিন সেবা, ভিডিও কনফারেন্স, স্বাস্থ্যশিক্ষা, প্রশিক্ষণ প্রদানের নিমিত্ত ‘হেলথ সিস্টেম স্ট্রেনদেনিং’ কর্মসূচি বাস্তবায়ন এবং স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতালের ইলেকট্রনিক তথ্য, স্বাস্থ্য জনবল, হাসপাতাল অটোমেশন, জনস্বাস্থ্যবিষয়ক তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের জন্য ডিএসআইএস-২ নামক সফটওয়ারকে নেটওয়ার্কের আওতায় আনার ফলে জনগণের স্বাস্থ্যসেবা-সংক্রান্ত তথ্য প্রাপ্তির পথ সুগম হয়েছে।

দেশে প্রায় ৩৬ হাজার স্কুল, ৫০০টির বেশি কলেজ, ১৫০টির বেশি বিশ্ববিদ্যালয়, ৭০টির বেশি মেডিকেল কলেজ, ৫০০টির বেশি বেসরকারি শিক্ষা ইনস্টিটিউটের ভর্তি আবেদন, বেতন ও ফিস জমা প্রদান, পরীক্ষার ফলাফল সব কিছুই অনলাইনে পরিচালিত হচ্ছে। এখন আর পরীক্ষার ফলাফলের জন্য প্রতিষ্ঠানে যেতে হয় না, শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকরা ঘরে বসেই মোবাইলে এসএমএস অথবা ই-মেইলের মাধ্যমে তাৎক্ষণিক পেয়ে যায়। শিক্ষার্থীরা এখন যে কোন মূহূর্তে ইন্টারনেটের কারণে লাখ লাখ বই পড়তে পারছে, ইচ্ছা করলে যে কেউ শুধু একটি বই নয়, আস্ত একটি লাইব্রেরি তার পকেটে রেখে দিতে পারছে।

সমগ্র বাংলাদেশের ১ লাখ ৪৫ হাজার কিলোমিটারজুড়ে অপটিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্ক রাজধানী থেকে বিভাগে, বিভাগ থেকে জেলায়, জেলা থেকে উপজেলায়, উপজেলা থেকে ইউনিয়ন পর্যায়ে বিস্তৃতি লাভ করেছে, যার মাধ্যমে সাধারণ গ্রামীণ জনগণকে সরকারের ই-সেবার অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব হয়েছে। এতে সর্বস্তরের মানুষের তথ্যপ্রযুক্তিতে অভিযোজন ও সক্ষমতা বেড়েছে, যা জনগণের তথ্য অধিকার প্রতিষ্ঠায় শক্তিশালী ভূমিকা পালন করছে।

এ কথা সত্য সারা বিশ্বের ন্যায় বাংলাদেশেও তথ্যপ্রযুক্তি বা ডিজিটাল বিভাজন বা গ্যাপ বিরাজমান রয়েছে। চিরাচরিত কারণগুলো ছাড়াও প্রযুক্তির দ্রুত পরিবর্তন ও প্রয়োগের কারণে নবতর সামাজিক বিভাজন তৈরি হচ্ছে। এর সঙ্গে তাল মিলিয়ে নীতিনির্ধারক ও বাস্তবায়নকারীদেরও সচেষ্ট থাকতে হবে। দ্রুত, স্বচ্ছ ও বিকেন্দ্রীকৃত তথ্য যোগাযোগপ্রযুক্তিকে গুরুত্ব দিয়ে জনগণের বিশেষত : প্রান্তিক, অসহায় ও ঝুঁকিপূর্ণ লাখ লাখ মানুষের হাতের নাগালে নিয়ে আসা নিশ্চিত করতে হবে। তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি, অংশগ্রহণ ও তথ্যপ্রযুক্তিতে প্রবেশাধিকার সুগম করার পথ রচনা করতে হবে। এ বিভাজন যতক্ষণ থাকবে, ততক্ষণ তথ্য যোগাযোগপ্রযুক্তির পাশাপাশি প্রচলিত পদ্ধতিতে জনগণের তথ্য অধিকার নিশ্চিতকরণের কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হবে।

শুধু জ্ঞান দিলেই চলবে না, জনগণকে তার এ তথ্য অধিকার বা প্রয়োজনীয় তথ্যপ্রাপ্তির সব মাধ্যম ব্যবহারের মাধ্যমে তাদের মোটিভেট ও কনভিন্স করতে হবে। যেখানে টেলিভিশন, ওয়েবসাইট, ই-মেইল কার্যকর নয়, সেখানে তাদের নিকট তথ্য নিয়ে হাজির হতে হবে। তাদের নিয়ে টিভিসি, প্রামাণ্যচিত্র, পোস্টার তৈরি ও প্রদর্শন করতে হবে। উঠান বৈঠক, দেয়ালচিত্র, পথনাটক, জারি-সারি গানের আয়োজন করতে হবে। এ সব ক্ষেত্রে কমিউনিটি বেতারসহ গণমাধ্যম অত্যন্ত কার্যকর। জনপ্রতিনিধি, প্রশাসন, সুশীল সমাজ, বেসরকারি সংস্থা, শিক্ষক সম্প্রদায়, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার, ধর্মীয় নেতাদের মুখের কথাও জনগণের তথ্য অধিকার বাস্তবায়নে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। এককথায়, জনগণের দ্রুত ও প্রয়োজনীয় সব তথ্যপ্রাপ্তি নিশ্চিতকরণে সব প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা ও অবারিত করাই হলো মূল কথা।

[লেখক : প্রধান তথ্য কমিশনার, তথ্য কমিশন]

ছবি

স্মরণ : কাঙ্গাল হরিনাথ মজুমদার

ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস

দাবদাহে সুস্থ থাকবেন কীভাবে

কত দিন পরে এলে, একটু শোনো

রম্যগদ্য : আনন্দ, দ্বিগুণ আনন্দ...

ছবি

ইতিহাসের এক অবিস্মরণীয় নাম

বৈসাবি : ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বর্ষবরণ উৎসব

‘ইন্ডিয়া আউট’ ক্যাম্পেইন

উদার-উদ্দাম বৈশাখ চাই

ঈদ নিয়ে আসুক শান্তি ও সমৃদ্ধি, বিস্তৃত হোক সম্প্রীতি ও সৌহার্দ

প্রসঙ্গ: বিদেশি ঋণ

ছাত্ররাজনীতি কি খারাপ?

জাকাত : বিশ্বের প্রথম সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা

বাংলাদেশ স্কাউটস দিবস : শুরুর কথা

ছবি

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত

প্রবাসীর ঈদ-ভাবনা

বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস

ধানের ফলন বাড়াতে ক্লাইমেট স্মার্ট গুটি ইউরিয়া প্রযুক্তি

কমিশন কিংবা ভিজিটে জমি রেজিস্ট্রির আইনি বিধান ও প্রাসঙ্গিকতা

ছবি

ঈদের অর্থনীতি

পশ্চিমবঙ্গে ভোটের রাজনীতিতে ‘পোস্ট পার্টিশন সিনড্রম’

শিক্ষকের বঞ্চনা, শিক্ষকের বেদনা

নিরাপদ সড়ক কেন চাই

রম্যগদ্য : ‘প্রহরীর সাতশ কোটি টাকা...’

ছবি

অবন্তিকাদের আত্মহনন

শিক্ষাবিষয়ক ভাবনা

অপ্রয়োজনে সিজারিয়ান নয়

পণ্য রপ্তানিতে বৈচিত্র্য আনতে হবে

আত্মহত্যা রোধে নৈতিক শিক্ষা

আউশ ধান : পরিবেশ ও কৃষকবান্ধব ফসল

ছবি

বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস

জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের আতুড়ঘর

চেক ডিজঅনার মামলার অধিক্ষেত্র ও প্রাসঙ্গিকতা

বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন ও বাংলাদেশের কৃষি

ছবি

‘হৃৎ কলমের’ পাখি এবং আমাদের জেগে ওঠা

ছবি

ভূগর্ভস্থ পানি সুরক্ষায় বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ

tab

উপ-সম্পাদকীয়

তথ্যপ্রযুক্তির যুগে জনগণের তথ্য অধিকার নিশ্চিত হোক

মরতুজা আহমদ

মঙ্গলবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২২

২৮ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক তথ্য অধিকার দিবস। তথ্য চাওয়া, পাওয়া ও প্রদানের বিষয়টিকে বিশ্বের প্রত্যেক মানুষের মৌলিক অধিকার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার উদ্দেশ্যেই বিশ^ব্যাপী দিবসটি পালিত হয়ে থাকে। তথ্যে মানুষের প্রবেশাধিকারকে টেকসই উন্নয়ন ও মানবাধিকারের পূর্ব শর্ত হিসেবে গণ্য করা হয়ে থাকে। ফলে দিবসটি পালনের লক্ষ্য থাকে তথ্য অধিকার সম্পর্কে সব মানুষকে সচেতন করা, দেশে দেশে এ-সংক্রান্ত আইনকানুন, বিধিবিধান প্রণয়ন ও এগুলোর যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা। এ পর্যন্ত জনগণের তথ্য অধিকার বা তথ্যের স্বাধীনতা-সংক্রান্ত ১৩২টি আইন প্রণীত হয়েছে। বাংলাদেশেও ২০০৯ সনে তথ্য অধিকার আইন প্রণয়ন ও কার্যকর হয়। আইনটি সার্বজনীন, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও অনন্য।

বাংলাদেশেও প্রতি বছরের ন্যায় এ বছর ২৮ সেপ্টেম্বর দিবসটি সারা দেশে পালিত হচ্ছে। কেন্দ্র থেকে উপজেলা পর্যন্ত গৃহীত হয়েছে নানাবিধ কর্মসূচি। এবার আমাদের দিবস পালনে মূল প্রতিপাদ্য-‘তথ্যপ্রযুক্তির যুগে জনগণের তথ্য অধিকার নিশ্চিত হোক’-তথ্যপ্রযুক্তির যুগে এহেন বিষয় অত্যন্ত সময়োপযোগী ও অর্থবহ হয়েছে বলে আমরা মনে করি। তথ্য অধিকার আইন ২০০৯ ও এ সংশ্লিষ্ট বিধি ও প্রবিধি প্রতিটিই তথ্যপ্রযুক্তি বান্ধব। সারা বিশ্বেই এখন তথ্যপ্রযুক্তির জয়জয়কার; উন্নয়ন, সমৃদ্ধি ও অগ্রগতির সোপান। বাংলাদেশেও জনগণের তথ্যে প্রবেশাধিকার নিশ্চিতকরণে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার হচ্ছে, আইন ও বিধিমালাও এ ক্ষেত্রে যথেষ্ট সহায়ক।

আইনটির মূল লক্ষ্যই হলো তথ্যের অবাধ প্রবাহ রচনা করা। জনগণের তথ্য অধিকার নিশ্চিত করা, কর্তৃপক্ষের স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা বৃদ্ধি করে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা। এ জন্য আইনে তথ্য গোপনকে নিরুৎসাহিত করে তথ্যকে সহজলভ্য করার জন্য নানা বিধিবিধানের অবতারণা করা হয়েছে। দুটি পদ্ধতিতে নাগরিকের তথ্য পাওয়ার নিশ্চয়তা থাকবে। একটি আবেদনের ভিত্তিতে অন্যটি কর্তৃপক্ষ স্ব-প্রণোদিত হয়ে তথ্য অবারিত করবে। উভয় পদ্ধতিতেই নাগরিকের তথ্যপ্রাপ্তি সহজলভ্য করার জন্য তথ্য সংগ্রহ, সংরক্ষণ, ব্যবস্থাপনা, প্রচার ও প্রকাশকে আইনে বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে। জনগণকে তথ্যের আদান-প্রদানে সব ক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার উৎসাহিত করা হয়েছে।

তথ্য অধিকার আইন ও বিধিমালার আওতায় জনগণের তথ্যপ্রাপ্তি ও প্রদানে ই-মেইলের ব্যবহার, সব কর্তৃপক্ষের ইন্টারনেট সংযোগ সার্বক্ষণিক সচল রাখা, এমনকি অভ্যন্তরীণ, অন্যান্য দপ্তর সংস্থা ও জনগণের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে ইন্ট্রানেট ও এক্সট্রানেট সংযোগ রাখা, ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে তথ্যের বিন্যাস, রক্ষণ ও পরিচালনা যেমন মাইক্রোফোন বা কম্পিউটার প্রযুক্তির ব্যবহার করে অনুলিপি তৈরি ও সংরক্ষণ, একই ধরনের সফটওয়ার ব্যবহার ও অনুসরণ, রিয়েল টাইম মনিটরিং, কাগজবিহীন অফিস ব্যবস্থা চালুকরণ, নথি বা জনগণের তথ্যের আবেদনের গতিবিধি নিরুপণের জন্য ফাইল ট্রাকিং সিস্টেম ব্যবহার, ইলেকট্রনিক ফাইল রেজিস্ট্রেশন সিস্টেম, ইলেকট্রনিক নোটিং-ফাইলিং ও সিগনেচার ব্যবস্থা, কমপ্যাক্ট ডিস্ক (সিডি) তৈরি ও সরবরাহকরণ এবং ইলেকট্রনিক ব্যবস্থায় তথ্য-উপাত্তসহ শ্রেণীবিন্যাসকৃত নথি ধারণ, স্বপ্রণোদিত তথ্য প্রদান ও প্রকাশের কার্যকর মাধ্যম হিসাবে ওয়েবসাইটের আবশ্যিক ব্যবহার ও হালনাগাদকরণ, তথ্যের নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা ইত্যাদি বিষয়ক সুনির্দিষ্ট বিধিবিধান রয়েছে। স্বপ্রণোদিত তথ্য প্রকাশে ওয়েবসাইটের সর্বোত্তম ব্যবহার স্বচ্ছ ও জবাবদিহিতামূলক প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিশ্চিত করছে, যা সুশাসনের অন্যতম অনুষঙ্গ।

ক্রমপ্রসারমান এ তথ্যপ্রযুক্তির যুগে বিভিন্ন তথ্যপ্রযুক্তি যেমন মোবাইল অ্যাপস, হটলাইনস, সার্ভিস সেন্টার, অনলাইন প্ল্যাটফর্ম, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, রোবোটিকস ইত্যাদি ব্যবহার করে তথ্যের উৎপাদন, সংরক্ষণ, ব্যবস্থাপনা, তথ্য কাস্টমাইজেশন, পার্সোনালাইজেশন, তথ্যের প্রচার, প্রকাশ, বিস্তার ও তথ্যের নানামুখী ও সর্বোত্তম ব্যবহার অনেক সহজ, দ্রুত ও ব্যয় সাশ্রয়ী হয়। এ পদ্ধতি অত্যন্ত দক্ষ, কার্যকর, স্বচ্ছ, অংশগ্রহণমূলক, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও জবাবদিহিমূলক।

তথ্য কমিশন অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের সহযোগিতায় তথ্য আদান-প্রদানে বিভিন্ন ক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার ও চর্চা বৃদ্ধিতে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। অনলাইনে আবেদন গ্রহণ ও তথ্য প্রদান, অভিযোগ শুনানি ও নিষ্পত্তিকরণ, অনলাইনে প্রশিক্ষণ প্রদান, ভিডিও কনফারেন্সিং ইত্যাদি ব্যাপকভাবে প্রচলন করেছে। সব কর্তৃপক্ষের জন্য ওয়েবসইট বাধ্যতামূলক করার ফলে বাংলাদেশে এখন প্রায় ৫০ হাজার ওয়েবসাইট সংবলিত সর্ববৃহৎ ওয়েবপোর্টাল রয়েছে। প্রায় প্রতিটিতেই জনগণের তথ্য অধিকারসংক্রান্ত দিকনির্দেশনামূলক একটি বার্তা রয়েছে। গত দুই বছরে করোনাকালে তথ্য কমিশনে ৪৫৭টি অভিযোগ অনলাইনে শুনানি ও নিষ্পত্তি হয়েছে।

ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের ফলে কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অর্থনীতি, শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্য, দক্ষতা উন্নয়ন, কর্মসংস্থানসহ জাতীয় জীবনের সর্ব ক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধির কারণে মানুষের তথ্য প্রাপ্তির সুযোগ প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। সরকারের বিভিন্ন নীতি-সহায়তার ফলে বর্তমানে সব সরকারি দপ্তরে ই-সেবা চালু, ইন্টারনেট ও মুঠোফোনের সহজলভ্যতা নিশ্চিত হয়েছে। দেশে প্রায় ৩ হাজার ৮০০-এর অধিক ইউনিয়নে রয়েছে উচ্চগতির (ব্রডব্যান্ড) ইন্টারনেট। ইন্টারনেট ও মুঠোফোনের সহজলভ্যতায় মানুষের তথ্যপ্রযুক্তিতে অভিযোজন ও সক্ষমতা দুই-ই বেড়েছে। “এক দেশ এক রেট” নামে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের জন্য ট্যারিফ ঘোষণা করা বা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে অর্ধেক খরচে বাংলায় খুদে বার্তা বা এসএমএস চালু করার মতো উদ্যোগসমূহ গ্রাহক পর্যায়ে ইন্টারনেটের দামকে হাতের নাগালে ও আরও শৃঙ্খলার মধ্যে নিয়ে এসেছে এবং ধীরে ধীরে শহর ও গ্রামাঞ্চলে বিরাজমান ডিজিটাল বিভাজন দূর করছে। ৩৩৩, ৯৯৯, ১৬২৬৩ সহ বিভিন্ন কলসেন্টার সার্ভিসের মাধ্যমে মানুষ ফোন করেই প্রয়োজনীয় তথ্য পাচ্ছে।

ভূমি সেবা ডিজিটাইজেশন করার ফলে ই-পর্চা, ই-নামজারি, ই-ভূমি উন্নয়ন করসহ নানাবিধ ভূমিসংক্রান্ত তথ্য জনগণ ঘরে বসেই পাচ্ছে। সরকার এক সেবা বা ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেবা চালু করেছে, যা স্বল্প সময়, স্বল্প ব্যয়ে এমনকি অফিসে না গিয়েও তথ্যসহ সেবা প্রাপ্তির সুযোগ সৃষ্টি করেছে। তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে মহিলাদের ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে উপজেলা পর্যায়ে ‘তথ্য আপা’ প্রকল্পের অধীন ‘তথ্য সেবা কর্মকর্তা’ নিয়োগ দানের মাধ্যমে বাড়িতে থেকেই মহিলাদের প্রয়োজনীয় তথ্য প্রাপ্তির পথ সহজ করা হয়েছে।

‘জনগণের দোরগোড়ায় সেবা’- এই স্লোগানকে সামনে রেখে বর্তমানে সারাদেশে মোট ৫২৮৬টি ডিজিটাল সেন্টার আছে, যার মধ্যে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের সংখ্যা ৪৫৫৪ টি, পৌর ডিজিটাল সেন্টারের সংখ্যা ৩২৫টি, নগর ডিজিটাল সেন্টারের সংখ্যা ৪০৭টি। এতে প্রায় ১১ হাজারের অধিক উদ্যোক্তা নাগরিক সেবা প্রদানে কর্মরত আছে, যাদের অর্ধেক নারী উদ্যোক্তা। তারা এক স্থান থেকেই প্রান্তিক জনগণের নানাবিধ তথ্য ও সেবা তাৎক্ষণিক প্রদানে সদা প্রস্তুত রয়েছে।

সারা বিশ্বের ন্যায় বাংলাদেশেও তথ্যপ্রযুক্তি বা ডিজিটাল বিভাজন রয়েছে। চিরাচরিত কারণগুলো ছাড়াও প্রযুক্তির দ্রুত পরিবর্তন ও প্রয়োগের কারণে নবতর সামাজিক বিভাজন তৈরি হচ্ছে

বাংলাদেশ ফরমস পোর্টাল, ট্রেড পোর্টালসহ সরকারি নানাধর্মী সেবার জন্য আলাদা আলাদা ই-পোর্টাল তৈরি করে তাকে ন্যাশনাল পোর্টালের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে, যার ফলে ঘরে বসে বা যেকোন ডিজিটাল সেন্টারে গিয়েই জনগণ তথ্য সেবা গ্রহণ করতে পারছে। যেমন বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) ওয়েবসাইট হতে বিএডিসির বীজ, সার, সেচ সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য পাওয়া যায়, ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন ‘লবণাক্ততা তথ্য সেবা’-এর মাধ্যমে উপকূলীয় এলাকার পানিতে কখন, কোথায় এবং কী মাত্রায় লবণাক্ততা থাকে, তা সহজেই জানা যায়। জাতীয় ই-তথ্য কোষের মাধ্যমে কৃষি ও জীবন-জীবিকা সংশ্লিষ্ট সব ওয়েবসাইটকে একটি পোর্টালের মাধ্যমে একীভূত করা হয়েছে, যার মাধ্যমে প্রান্তিক কৃষক হতে শুরু করে কৃষি সংশ্লিষ্ট ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ী এবং কৃষিভিত্তিক বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠী সবাই তথ্য সমৃদ্ধ হচ্ছে।

বিনা মূল্যে টেলিমেডিসিন সেবা পেতে রয়েছে স্বাস্থ্য বাতায়ন, যার মাধ্যমে ২৪ ঘণ্টা বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চিকিৎসকের পরামর্শ এবং প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যতথ্য পাওয়া যায়। করোনাকালীন স্বাস্থ্য বাতায়নের গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি অনুভূত হয়েছে। জাতীয় পর্যায়ের ১৩ হাজারের বেশি কমিউনিটি ক্লিনিকসহ ২৪ হাজার স্বাস্থ্যকর্মীকে ডিভাইসসহ ইন্টারনেট সংযোগ প্রদানের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ, টেলিমেডিসিন সেবা, ভিডিও কনফারেন্স, স্বাস্থ্যশিক্ষা, প্রশিক্ষণ প্রদানের নিমিত্ত ‘হেলথ সিস্টেম স্ট্রেনদেনিং’ কর্মসূচি বাস্তবায়ন এবং স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতালের ইলেকট্রনিক তথ্য, স্বাস্থ্য জনবল, হাসপাতাল অটোমেশন, জনস্বাস্থ্যবিষয়ক তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের জন্য ডিএসআইএস-২ নামক সফটওয়ারকে নেটওয়ার্কের আওতায় আনার ফলে জনগণের স্বাস্থ্যসেবা-সংক্রান্ত তথ্য প্রাপ্তির পথ সুগম হয়েছে।

দেশে প্রায় ৩৬ হাজার স্কুল, ৫০০টির বেশি কলেজ, ১৫০টির বেশি বিশ্ববিদ্যালয়, ৭০টির বেশি মেডিকেল কলেজ, ৫০০টির বেশি বেসরকারি শিক্ষা ইনস্টিটিউটের ভর্তি আবেদন, বেতন ও ফিস জমা প্রদান, পরীক্ষার ফলাফল সব কিছুই অনলাইনে পরিচালিত হচ্ছে। এখন আর পরীক্ষার ফলাফলের জন্য প্রতিষ্ঠানে যেতে হয় না, শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকরা ঘরে বসেই মোবাইলে এসএমএস অথবা ই-মেইলের মাধ্যমে তাৎক্ষণিক পেয়ে যায়। শিক্ষার্থীরা এখন যে কোন মূহূর্তে ইন্টারনেটের কারণে লাখ লাখ বই পড়তে পারছে, ইচ্ছা করলে যে কেউ শুধু একটি বই নয়, আস্ত একটি লাইব্রেরি তার পকেটে রেখে দিতে পারছে।

সমগ্র বাংলাদেশের ১ লাখ ৪৫ হাজার কিলোমিটারজুড়ে অপটিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্ক রাজধানী থেকে বিভাগে, বিভাগ থেকে জেলায়, জেলা থেকে উপজেলায়, উপজেলা থেকে ইউনিয়ন পর্যায়ে বিস্তৃতি লাভ করেছে, যার মাধ্যমে সাধারণ গ্রামীণ জনগণকে সরকারের ই-সেবার অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব হয়েছে। এতে সর্বস্তরের মানুষের তথ্যপ্রযুক্তিতে অভিযোজন ও সক্ষমতা বেড়েছে, যা জনগণের তথ্য অধিকার প্রতিষ্ঠায় শক্তিশালী ভূমিকা পালন করছে।

এ কথা সত্য সারা বিশ্বের ন্যায় বাংলাদেশেও তথ্যপ্রযুক্তি বা ডিজিটাল বিভাজন বা গ্যাপ বিরাজমান রয়েছে। চিরাচরিত কারণগুলো ছাড়াও প্রযুক্তির দ্রুত পরিবর্তন ও প্রয়োগের কারণে নবতর সামাজিক বিভাজন তৈরি হচ্ছে। এর সঙ্গে তাল মিলিয়ে নীতিনির্ধারক ও বাস্তবায়নকারীদেরও সচেষ্ট থাকতে হবে। দ্রুত, স্বচ্ছ ও বিকেন্দ্রীকৃত তথ্য যোগাযোগপ্রযুক্তিকে গুরুত্ব দিয়ে জনগণের বিশেষত : প্রান্তিক, অসহায় ও ঝুঁকিপূর্ণ লাখ লাখ মানুষের হাতের নাগালে নিয়ে আসা নিশ্চিত করতে হবে। তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি, অংশগ্রহণ ও তথ্যপ্রযুক্তিতে প্রবেশাধিকার সুগম করার পথ রচনা করতে হবে। এ বিভাজন যতক্ষণ থাকবে, ততক্ষণ তথ্য যোগাযোগপ্রযুক্তির পাশাপাশি প্রচলিত পদ্ধতিতে জনগণের তথ্য অধিকার নিশ্চিতকরণের কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হবে।

শুধু জ্ঞান দিলেই চলবে না, জনগণকে তার এ তথ্য অধিকার বা প্রয়োজনীয় তথ্যপ্রাপ্তির সব মাধ্যম ব্যবহারের মাধ্যমে তাদের মোটিভেট ও কনভিন্স করতে হবে। যেখানে টেলিভিশন, ওয়েবসাইট, ই-মেইল কার্যকর নয়, সেখানে তাদের নিকট তথ্য নিয়ে হাজির হতে হবে। তাদের নিয়ে টিভিসি, প্রামাণ্যচিত্র, পোস্টার তৈরি ও প্রদর্শন করতে হবে। উঠান বৈঠক, দেয়ালচিত্র, পথনাটক, জারি-সারি গানের আয়োজন করতে হবে। এ সব ক্ষেত্রে কমিউনিটি বেতারসহ গণমাধ্যম অত্যন্ত কার্যকর। জনপ্রতিনিধি, প্রশাসন, সুশীল সমাজ, বেসরকারি সংস্থা, শিক্ষক সম্প্রদায়, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার, ধর্মীয় নেতাদের মুখের কথাও জনগণের তথ্য অধিকার বাস্তবায়নে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। এককথায়, জনগণের দ্রুত ও প্রয়োজনীয় সব তথ্যপ্রাপ্তি নিশ্চিতকরণে সব প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা ও অবারিত করাই হলো মূল কথা।

[লেখক : প্রধান তথ্য কমিশনার, তথ্য কমিশন]

back to top