alt

উপ-সম্পাদকীয়

বাঁচো, বাঁচো এবং বাঁচো

মনিরুল হক রনি

: শুক্রবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২২

‘মরিতে চাহি না আমি সুন্দর ভুবনে, মানবের মাঝে আমি বাঁচিবার চাই।’-বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘প্রাণ’ কবিতার অনবদ্য এই চরণ দুটিতে প্রকাশ পেয়েছে মানুষের বেঁচে থাকার চরম আকুতি। প্রতিটি মানুষই পৃথিবীতে বাঁচতে চায়। উপভোগ করতে চায় পৃথিবীর রূপ, রস, গন্ধ। তবে মানুষের জীবন মূলত একটি ফ্রেমে বন্দী। প্রকৃতির নিয়মেই তাকে মরতে হয়-আজ না হয় কাল। কারণ, মৃত্যু অবধারিত; পৃথিবীর চিরন্তন সত্য। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সবশেষ তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে একজন নারী গড়ে ৭৪.২ বছর আর একজন পুরুষ ৭১.১ বছর বাঁচে।

তবে এটি একটি পরিসংখ্যান মাত্র। এত বছরও যে ঠিক বাঁচবে, তারও কোন নিশ্চয়তা নেই। নানা দুর্যোগে, দুর্ঘটনায়, আর নিত্যনতুন নানা রোগে কে যে কখন মারা যাবে, তা বলাই মুশকিল। এসব অপঘাতে অল্প বয়সেই ঝরে যাচ্ছে কত না তাজা প্রাণ! তখন মনে হয় তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের সেই চিরন্তন বাণী- ‘হায়! জীবন এত ছোট কেনে?’

আসলেই জীবন খুবই ছোট। রঙিন এই পৃথিবীতে ছোট জীবনকে উপভোগ করাই তাই বুদ্ধিমানের কাজ। অথচ আমরা ঠুনকো আঘাতেই হেরে যায় জীবনের কাছে। ছোট ছোট নানা কারণে তৈরি হয় জীবনের প্রতি বিতৃষ্ণা। এই বিতৃষ্ণা থেকেই তৈরি হয় বিষণ্নতা। বিষণ্নতায় ভুগে একসময় ছোট এই জীবনটাকেই শেষ করে দিই।

নিজের জীবনকে নিজেই শেষ করে দেয়ার নিষ্ঠুর এ ধরনকেই বলে আত্মহত্যা বা আত্মহনন। ইদানীং আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়েছে আশঙ্কাজনকহারে। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ক্রমেই আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ছে। এদের একটি বড় অংশ শিক্ষার্থী। কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া শিক্ষার্থী তো আছেই, বাদ নেই স্কুলের শিক্ষার্থীও। সম্প্রতি আঁচল ফাউন্ডেশনের এক তথ্য বলছে, চলতি বছরের প্রথম আট মাসে ৩৬৪ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। অর্থাৎ এ সময়ের মধ্যে গড়ে ৪৫ জনের বেশি শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। আত্মহত্যাকারীদের ৫৩ শতাংশই স্কুলের শিক্ষার্থী। সংখ্যায় যা ১৯৪ জন।

আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি দেখা গেছে ১৩ থেকে ২০ বছর বয়সীদের মধ্যে, শতকরা হারে যা ৭৮.৬ শতাংশ। এর মাঝে সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যা করেছে ১৪ থেকে ১৬ বছর বয়সীরা, যার সংখ্যা ১৬০ জন। ২০২০ সালের জুন থেকে ২০২১ সালের জুলাই পর্যন্ত ১৩ মাসে গণমাধ্যমে ১৫১ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার খবর প্রকাশিত হয়েছিল। এ বছরের আট মাসে তা দ্বিগুণের বেশি।

একটি জাতি বা সমাজের জন্য আত্মহত্যা অনাকাক্সিক্ষত হলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যে হারে আত্মহত্যার সংখ্যা বাড়ছে, তা সত্যিই ভীতিজাগানিয়া। বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যার যে প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে, তা রীতিমতো ভাবিয়ে তুলছে। আত্মহত্যার এই উল্লম্ফন আমাদের আধুনিক ক্ষয়িষ্ণু সমাজের নিদারুণ প্রতিচ্ছবি। প্রযুক্তিনির্ভর সমাজে আমরা যে দিন দিন ধৈর্যহীন ও অসহিষ্ণু হয়ে জীবনের প্রতি বিতৃষ্ণ হয়ে উঠছি, ক্রমবর্ধন আত্মহত্যা বৃদ্ধি সেটাই নির্দেশ করে।

জীবনের প্রতি বীতশ্রদ্ধ মানুষের আত্মহননের পথ বেছে নেয়া সচারাচর নির্জলা স্বেচ্ছায় নয়। এর পেছনে আছে মনোসামাজিক নানাবিধ কারণ। তবে অধিকাংশ আত্মহত্যার কারণ মানসিক। আর আত্মহত্যার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ মানসিক রোগটি হচ্ছে বিষণ্নতা। বিশেষজ্ঞদের মতে, বিষণ্নতা রোগমুক্ত ব্যক্তির তুলনায় আক্রান্ত ব্যক্তির আত্মহত্যায় মৃত্যুঝুঁকি ২০ গুণ বেশি। এ ছাড়াও একাকিত্ব, বিবাহবিচ্ছেদ বা সম্পর্ক ভেঙে যাওয়া, প্রিয়জনের মৃত্যু, শিক্ষা বা পেশাগত ক্ষেত্রে ব্যর্থতা, আর্থিক সংকট, ঋণগ্রস্ততা, বেকারত্ব, যেকোনো দ্বন্দ্ব, বীভৎসতা, দুর্যোগ, বিপর্যয়, ধর্ষণ ও যৌন হয়রানি, বিয়েতে প্রত্যাখ্যাত, স্বামী পছন্দ না হওয়া, আত্মহত্যা বা মাদকাসক্তির ইতিহাস, দীর্ঘমেয়াদি বা ক্যান্সারের মতো দুরারোগ্য শারীরিক রোগ, অতীতে আত্মহত্যার চেষ্টা বা নিজের ক্ষতি করার প্রবণতা ইত্যাদি কারণগুলোও আত্মহননের দিকে প্ররোচিত করে বলে মনে করা হয়।

সাম্প্রতিক সময়ে শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার পেছনে আঁচল ফাউন্ডেশনের পর্যবেক্ষণে উঠে আসা কারণগুলোর মধ্যে পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়া, পড়াশোনার চাপ, সেশনজট, অভিমান, প্রেম-ভালোবাসাঘটিত বিষয়, পরিবার থেকে কিছু চেয়ে না পাওয়া, পারিবারিক কলহ, চুরি বা মিথ্যা অপবাদ, মোটর বাইক কিনে না দেয়া ইত্যাদি অন্যতম।

আমাদের অভিভাবকদের মধ্যে এখন উত্যুঙ্গ প্রত্যাশা। তারা সন্তানদের ওপর চাপিয়ে দেন জিপিএ ফাইভ বা ভালো রেজাল্টের বাড়তি বোঝা। জিপিএ ফাইভ পাওয়াই যেন জীবনের সফলতার মূল কথা। সন্তানরাও তাই যতটা না নিজের জন্য তার চেয়ে বেশি বাবা-মার প্রত্যাশা পূরণে ঝাঁপিয়ে পড়ে ক্লাসে ফার্স্ট হতে, জিপিএ ফাইভ অর্জনে। আর এটা করবেই না বা কেন। যেখানে জিপিএ ফাইভ মেধার মূল্যায়নের অন্যতম মাপকাঠি হয়ে দাঁড়ায়, বুয়েট, মেডিকেল কিংবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়ার অন্যতম নিয়ামক হিসেবে গণ্য হয়, সেখানে শিক্ষার্থীরা তো মরণপণ চেষ্টা করবেই। তা সে পারুক বা না পারুক। কিন্তু বাস্তবতা হলো অনেকে সেই কাক্সিক্ষত ফল অর্জন করতে পারে না। তখন নিজের এই অকৃতকার্য হওয়াকে জীবনের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা মনে করে সে। ব্যর্থতার এই গ্লানি থেকে মুক্তির চটজলদি সমাধান হিসেবে আত্মহত্যাকেই তার কাছে শ্রেয় মনে হয়।

বর্তমান সময়ে খুব কম অভিভাবকই চান তাদের সন্তান মানবিক মানুষ হোক; বাস্তবতার নিরিখে শিখুক, জানুক। জিপিএ ফাইভ পাওয়াই যে সফলতার একমাত্র মূলমন্ত্র নয়, আমাদের অভিভাবকরা তা মানতে নারাজ। ভালো রেজাল্টের চেয়েও যে আদর্শ ও নৈতিকতাবোধসম্পন্ন মানুষ হওয়া জরুরি, সেটা আমরা দিন দিন ভুলে যাচ্ছি।

অধিকাংশ আত্মহত্যার কারণ মানসিক। আর আত্মহত্যার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ মানসিক রোগটি হচ্ছে বিষণ্নতা

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার একটি বড় কারণ হতাশা। শিক্ষাজীবন শেষ করে কাক্সিক্ষত চাকরি না পেয়ে বেকারত্বের গ্লানি বইতে বইতে তাদের মগজে-মস্তিষ্কে আস্তানা গাড়ে হতাশা। একসময় আত্মহত্যাকেই হতাশার গ্লানি থেকে মুক্তির একমাত্র পথ বলে মনে করেন তারা। আর বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়াদের কাক্সিক্ষত চাকরি বলতে বিসিএস; কিংবা নিদেনপক্ষে একটা সরকারি চাকরি। এটা ছাড়া তারা যেন কিছু ভাবতেই পারে না।

সামাজিক মর্যাদা, সরকারি নানা সুযোগ-সুবিধা, বিয়ের বাজারে পাত্রীপক্ষের কাছে বিসিএস বা সরকারি চাকরিজীবী পাত্রের আকাশচুম্বী চাহিদা ইত্যাদি তরুণ প্রজন্মের কাছে বিসিএস বা সরকারি চাকরিকে সোনার হরিণে পরিণত করেছে। বিসিএস বা সরকারি চাকরির অতিমাত্রায় প্রত্যাশা আমাদের একটি হতাশাপ্রবণ তরুণ প্রজন্ম উপহার দিচ্ছে।

কিন্তু বিসিএস বা সরকারি চাকরি-ই কি সব! কেন আমরা অন্য চাকরি খুঁজি না। কেন উদ্যোক্তা হয় না। বিসিএস বা অন্য সরকারি চাকরি পাওয়ার চেয়ে অন্য চাকরি বা নিজে কিছু করে জীবন উপভোগ করা সমীচীন নয় কি! বিসিএস বা অন্য সরকারি চাকরির প্রতি এই বিকারগস্ত উন্মাদনা আমাদেরকে বিসিএসপ্রতিবন্ধী প্রজন্ম উপহার দিচ্ছে। তাই বাস্তবতার দৃষ্টিতে বিবেচনা করে আমাদের মন-মানসিকতায় পরিবর্তন আনা জরুরি।

প্রেম বা ভালোবাসায় ব্যর্থ হলে মরে যেতে হবে কেন? পৃথিবীতে একমাত্র মা-বাবার ভালোবাসা ছাড়া কোনো ভালোবাসাই নিঃস্বার্থ ও চিরন্তন নয়। ‘তোমাকে ছাড়া বাঁচবো না’, ‘তুমিই আমার সব’- এ ধরনের কথা বলা তথাকথিত ভালোবাসার ব্যক্তিটিই নির্দ্বিধায় অন্যের সঙ্গে সংসার পেতে দিব্যি সুখে বাস করছে। হয়ত তোমার কথা ভাববারই সময় নেই তার। তাহলে কেন এই প্রেম-ভালোবাসায় ব্যর্থতার কারণে নিজের জীবনকে বিসর্জন দেয়া?

যে তোমাকে প্রকৃতই ভালোবাসবে, সে তোমাকে ছেড়ে যেতে পারে কি? পৃথিবী বড় কঠিন। এখানে আবেগের কোন ঠাঁই নেই। যারা ‘প্রেম’ নামক মরীচিকার পেছনে ছুটে নিজের জীবনকে ধ্বংস করে দেয়, তারা বোকার স্বর্গে বাস করে বৈকি! তাই নিজের জীবনকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসতে হবে। নিজেকে সময় দিতে হবে প্রচুর।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো হতে হবে শিক্ষার্থীবান্ধব। প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য দেখভালের জন্য অন্তত একজন করে স্থায়ী ‘মেন্টাল কাউন্সিলর’ নিয়োগ দেয়ার বিষয়টি ভেবে দেখা যেতে পারে। অভিভাবকদেরকে আরও সচেতন হতে হবে এবং সন্তানদের যথেষ্ট সময় দিতে হবে। তাদের পাস-ফেলনির্ভর শিক্ষা নয়, বরং মানবিক ও আদর্শ মানুষ হওয়ার শিক্ষা দিতে হবে। তাদের অতি আদরে নমনীর পুতুল না বানিয়ে বাস্তবতাকে মেনে বড় হওয়ার শিক্ষা দিতে হবে। ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত করতে হবে। পরনির্ভরশীল নয় বরং ছোট থেকেই তাদের ছোট-খাটো দায়িত্ব দিয়ে আস্তে আস্তে আত্মনির্ভরশীল হয়ে কীভাবে পরিবেশ পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে হয় সে শিক্ষা দিতে হবে। অভিভাবক হিসেবে প্রতিটি মা-বাবার এটা নৈতিক দায়িত্ব।

সন্তানকে অতি আদরে বাস্তবতা বিবর্জিত ঘরকুনো করে বড় করা অতি ভালোবাসা নয়। বরং এটি তাকে বিপদে ফেলে দেয়া। সন্তানকে যেমন ভালোবাসতে হবে, তেমনি তাকে জীবনের উত্থান-পতন, ঘাত-প্রতিঘাত সম্পর্কে জাগতিক শিক্ষা দিতে হবে।

রবীন্দ্রনাথের ভাষায় আবারও বলতে হয়- ‘পুণ্যে পাপে দুঃখে সুখে, পতনে উত্থানে/মানুষ হইতে দাও তোমার সন্তানে.../পদে পদে ছোটো ছোটো নিষেধের ডোরে/বেঁধে বেঁধে রাখিয়ো না ভালোছেলে করে। /প্রাণ দিয়ে, দুঃখ স’য়ে, আপনার হাতে/সংগ্রাম করিতে দাও ভালোমন্দ-সঙ্গে।’

এই পৃথিবীটা একটা দুঃখ-সুখের লীলাভূমি। প্রতিনিয়তই এখানে আমাদের যুদ্ধ করে বাঁচতে হয় দুঃখ-যাতনা ও নানা প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে। কারণ, এই পৃথিবী ফুলশয্যা নয়। এখানে প্রতিক্ষণে সামনে আসে হাজারো দুর্বিষহ দুঃখ, দুর্দশা, যন্ত্রণা, দুর্যোগ-দুর্ঘটনা। এগুলোকে মোকাবিলা করেই বাঁচতে হবে। আর সে বাঁচাই হবে সার্থক। কবি নির্মলেন্দু গুণের সুরে বলতে চাই- ‘দুঃখকে স্বীকার করো না,- সর্বনাশ হয়ে যাবে।/ দুঃখ করো না, বাঁচো, প্রাণ ভরে বাঁচো।/ বাঁচার আনন্দে বাঁচো। / বাঁচো, বাঁচো এবং বাঁচো।’

[লেখক : প্রভাষক, সমাজকর্ম বিভাগ,

সাভার সরকারি কলেজ]

চিকিৎসা জগতের বাতিঘর জন হপকিনস বিশ^বিদ্যালয়

জলবায়ু পরিবর্তনের দৃশ্যমান প্রভাব

দুর্নীতির বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর অবস্থান ও আজকের বাংলাদেশ

আবিষ্কারমূলক শিখন পদ্ধতি

টেকসই কৃষিতে নবায়নযোগ্য জ্বালানির সম্ভাবনা

ছবি

জয়নুলের সাঁওতাল দম্পতি এবং সুমনের সৌন্দর্যপ্রিয়তা

এরপরও কি গাছ লাগাবেন না, বন রক্ষা করবেন না?

বিশ্ব ধরিত্রী দিবস

সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মিছিলের শেষ কোথায়

খুব জানতে ইচ্ছে করে

কোন দিকে মোড় নিচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের সংকট?

কৃষিগুচ্ছ : ভর্তির আবেদনের নূ্যূনতম যোগ্যতা ও ফলাফল প্রস্তুতিতে বৈষম্য

ছবি

গণপরিবহনে নৈরাজ্যের শেষ কোথায়

ছাত্র রাজনীতি : পক্ষে-বিপক্ষে

ছবি

বি আর আম্বেদকর : নিম্নবর্গের মানুষের প্রতিনিধি

চেকের মামলায় আসামির মুক্তির পথ কী

রাম-নবমী : হিন্দুত্বের নয়া গবেষণাগার

‘একটি গ্রাম একটি পণ্য’ উদ্যোগ কি সফল হবে

কিশোর গ্যাং : সমস্যার মূলে যেতে হবে

গীতি চলচ্চিত্র ‘কাজল রেখা’ : সুস্থধারার চলচ্চিত্র বিকাশ ঘটুক

ছবি

ঋতুভিত্তিক চিরায়ত বাঙালি সংস্কৃতি

ছবি

স্মরণ : কাঙ্গাল হরিনাথ মজুমদার

ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস

দাবদাহে সুস্থ থাকবেন কীভাবে

কত দিন পরে এলে, একটু শোনো

রম্যগদ্য : আনন্দ, দ্বিগুণ আনন্দ...

ছবি

ইতিহাসের এক অবিস্মরণীয় নাম

বৈসাবি : ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বর্ষবরণ উৎসব

‘ইন্ডিয়া আউট’ ক্যাম্পেইন

উদার-উদ্দাম বৈশাখ চাই

ঈদ নিয়ে আসুক শান্তি ও সমৃদ্ধি, বিস্তৃত হোক সম্প্রীতি ও সৌহার্দ

প্রসঙ্গ: বিদেশি ঋণ

ছাত্ররাজনীতি কি খারাপ?

জাকাত : বিশ্বের প্রথম সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা

বাংলাদেশ স্কাউটস দিবস : শুরুর কথা

ছবি

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত

tab

উপ-সম্পাদকীয়

বাঁচো, বাঁচো এবং বাঁচো

মনিরুল হক রনি

শুক্রবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২২

‘মরিতে চাহি না আমি সুন্দর ভুবনে, মানবের মাঝে আমি বাঁচিবার চাই।’-বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘প্রাণ’ কবিতার অনবদ্য এই চরণ দুটিতে প্রকাশ পেয়েছে মানুষের বেঁচে থাকার চরম আকুতি। প্রতিটি মানুষই পৃথিবীতে বাঁচতে চায়। উপভোগ করতে চায় পৃথিবীর রূপ, রস, গন্ধ। তবে মানুষের জীবন মূলত একটি ফ্রেমে বন্দী। প্রকৃতির নিয়মেই তাকে মরতে হয়-আজ না হয় কাল। কারণ, মৃত্যু অবধারিত; পৃথিবীর চিরন্তন সত্য। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সবশেষ তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে একজন নারী গড়ে ৭৪.২ বছর আর একজন পুরুষ ৭১.১ বছর বাঁচে।

তবে এটি একটি পরিসংখ্যান মাত্র। এত বছরও যে ঠিক বাঁচবে, তারও কোন নিশ্চয়তা নেই। নানা দুর্যোগে, দুর্ঘটনায়, আর নিত্যনতুন নানা রোগে কে যে কখন মারা যাবে, তা বলাই মুশকিল। এসব অপঘাতে অল্প বয়সেই ঝরে যাচ্ছে কত না তাজা প্রাণ! তখন মনে হয় তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের সেই চিরন্তন বাণী- ‘হায়! জীবন এত ছোট কেনে?’

আসলেই জীবন খুবই ছোট। রঙিন এই পৃথিবীতে ছোট জীবনকে উপভোগ করাই তাই বুদ্ধিমানের কাজ। অথচ আমরা ঠুনকো আঘাতেই হেরে যায় জীবনের কাছে। ছোট ছোট নানা কারণে তৈরি হয় জীবনের প্রতি বিতৃষ্ণা। এই বিতৃষ্ণা থেকেই তৈরি হয় বিষণ্নতা। বিষণ্নতায় ভুগে একসময় ছোট এই জীবনটাকেই শেষ করে দিই।

নিজের জীবনকে নিজেই শেষ করে দেয়ার নিষ্ঠুর এ ধরনকেই বলে আত্মহত্যা বা আত্মহনন। ইদানীং আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়েছে আশঙ্কাজনকহারে। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ক্রমেই আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ছে। এদের একটি বড় অংশ শিক্ষার্থী। কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া শিক্ষার্থী তো আছেই, বাদ নেই স্কুলের শিক্ষার্থীও। সম্প্রতি আঁচল ফাউন্ডেশনের এক তথ্য বলছে, চলতি বছরের প্রথম আট মাসে ৩৬৪ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। অর্থাৎ এ সময়ের মধ্যে গড়ে ৪৫ জনের বেশি শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। আত্মহত্যাকারীদের ৫৩ শতাংশই স্কুলের শিক্ষার্থী। সংখ্যায় যা ১৯৪ জন।

আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি দেখা গেছে ১৩ থেকে ২০ বছর বয়সীদের মধ্যে, শতকরা হারে যা ৭৮.৬ শতাংশ। এর মাঝে সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যা করেছে ১৪ থেকে ১৬ বছর বয়সীরা, যার সংখ্যা ১৬০ জন। ২০২০ সালের জুন থেকে ২০২১ সালের জুলাই পর্যন্ত ১৩ মাসে গণমাধ্যমে ১৫১ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার খবর প্রকাশিত হয়েছিল। এ বছরের আট মাসে তা দ্বিগুণের বেশি।

একটি জাতি বা সমাজের জন্য আত্মহত্যা অনাকাক্সিক্ষত হলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যে হারে আত্মহত্যার সংখ্যা বাড়ছে, তা সত্যিই ভীতিজাগানিয়া। বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যার যে প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে, তা রীতিমতো ভাবিয়ে তুলছে। আত্মহত্যার এই উল্লম্ফন আমাদের আধুনিক ক্ষয়িষ্ণু সমাজের নিদারুণ প্রতিচ্ছবি। প্রযুক্তিনির্ভর সমাজে আমরা যে দিন দিন ধৈর্যহীন ও অসহিষ্ণু হয়ে জীবনের প্রতি বিতৃষ্ণ হয়ে উঠছি, ক্রমবর্ধন আত্মহত্যা বৃদ্ধি সেটাই নির্দেশ করে।

জীবনের প্রতি বীতশ্রদ্ধ মানুষের আত্মহননের পথ বেছে নেয়া সচারাচর নির্জলা স্বেচ্ছায় নয়। এর পেছনে আছে মনোসামাজিক নানাবিধ কারণ। তবে অধিকাংশ আত্মহত্যার কারণ মানসিক। আর আত্মহত্যার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ মানসিক রোগটি হচ্ছে বিষণ্নতা। বিশেষজ্ঞদের মতে, বিষণ্নতা রোগমুক্ত ব্যক্তির তুলনায় আক্রান্ত ব্যক্তির আত্মহত্যায় মৃত্যুঝুঁকি ২০ গুণ বেশি। এ ছাড়াও একাকিত্ব, বিবাহবিচ্ছেদ বা সম্পর্ক ভেঙে যাওয়া, প্রিয়জনের মৃত্যু, শিক্ষা বা পেশাগত ক্ষেত্রে ব্যর্থতা, আর্থিক সংকট, ঋণগ্রস্ততা, বেকারত্ব, যেকোনো দ্বন্দ্ব, বীভৎসতা, দুর্যোগ, বিপর্যয়, ধর্ষণ ও যৌন হয়রানি, বিয়েতে প্রত্যাখ্যাত, স্বামী পছন্দ না হওয়া, আত্মহত্যা বা মাদকাসক্তির ইতিহাস, দীর্ঘমেয়াদি বা ক্যান্সারের মতো দুরারোগ্য শারীরিক রোগ, অতীতে আত্মহত্যার চেষ্টা বা নিজের ক্ষতি করার প্রবণতা ইত্যাদি কারণগুলোও আত্মহননের দিকে প্ররোচিত করে বলে মনে করা হয়।

সাম্প্রতিক সময়ে শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার পেছনে আঁচল ফাউন্ডেশনের পর্যবেক্ষণে উঠে আসা কারণগুলোর মধ্যে পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়া, পড়াশোনার চাপ, সেশনজট, অভিমান, প্রেম-ভালোবাসাঘটিত বিষয়, পরিবার থেকে কিছু চেয়ে না পাওয়া, পারিবারিক কলহ, চুরি বা মিথ্যা অপবাদ, মোটর বাইক কিনে না দেয়া ইত্যাদি অন্যতম।

আমাদের অভিভাবকদের মধ্যে এখন উত্যুঙ্গ প্রত্যাশা। তারা সন্তানদের ওপর চাপিয়ে দেন জিপিএ ফাইভ বা ভালো রেজাল্টের বাড়তি বোঝা। জিপিএ ফাইভ পাওয়াই যেন জীবনের সফলতার মূল কথা। সন্তানরাও তাই যতটা না নিজের জন্য তার চেয়ে বেশি বাবা-মার প্রত্যাশা পূরণে ঝাঁপিয়ে পড়ে ক্লাসে ফার্স্ট হতে, জিপিএ ফাইভ অর্জনে। আর এটা করবেই না বা কেন। যেখানে জিপিএ ফাইভ মেধার মূল্যায়নের অন্যতম মাপকাঠি হয়ে দাঁড়ায়, বুয়েট, মেডিকেল কিংবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়ার অন্যতম নিয়ামক হিসেবে গণ্য হয়, সেখানে শিক্ষার্থীরা তো মরণপণ চেষ্টা করবেই। তা সে পারুক বা না পারুক। কিন্তু বাস্তবতা হলো অনেকে সেই কাক্সিক্ষত ফল অর্জন করতে পারে না। তখন নিজের এই অকৃতকার্য হওয়াকে জীবনের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা মনে করে সে। ব্যর্থতার এই গ্লানি থেকে মুক্তির চটজলদি সমাধান হিসেবে আত্মহত্যাকেই তার কাছে শ্রেয় মনে হয়।

বর্তমান সময়ে খুব কম অভিভাবকই চান তাদের সন্তান মানবিক মানুষ হোক; বাস্তবতার নিরিখে শিখুক, জানুক। জিপিএ ফাইভ পাওয়াই যে সফলতার একমাত্র মূলমন্ত্র নয়, আমাদের অভিভাবকরা তা মানতে নারাজ। ভালো রেজাল্টের চেয়েও যে আদর্শ ও নৈতিকতাবোধসম্পন্ন মানুষ হওয়া জরুরি, সেটা আমরা দিন দিন ভুলে যাচ্ছি।

অধিকাংশ আত্মহত্যার কারণ মানসিক। আর আত্মহত্যার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ মানসিক রোগটি হচ্ছে বিষণ্নতা

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার একটি বড় কারণ হতাশা। শিক্ষাজীবন শেষ করে কাক্সিক্ষত চাকরি না পেয়ে বেকারত্বের গ্লানি বইতে বইতে তাদের মগজে-মস্তিষ্কে আস্তানা গাড়ে হতাশা। একসময় আত্মহত্যাকেই হতাশার গ্লানি থেকে মুক্তির একমাত্র পথ বলে মনে করেন তারা। আর বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়াদের কাক্সিক্ষত চাকরি বলতে বিসিএস; কিংবা নিদেনপক্ষে একটা সরকারি চাকরি। এটা ছাড়া তারা যেন কিছু ভাবতেই পারে না।

সামাজিক মর্যাদা, সরকারি নানা সুযোগ-সুবিধা, বিয়ের বাজারে পাত্রীপক্ষের কাছে বিসিএস বা সরকারি চাকরিজীবী পাত্রের আকাশচুম্বী চাহিদা ইত্যাদি তরুণ প্রজন্মের কাছে বিসিএস বা সরকারি চাকরিকে সোনার হরিণে পরিণত করেছে। বিসিএস বা সরকারি চাকরির অতিমাত্রায় প্রত্যাশা আমাদের একটি হতাশাপ্রবণ তরুণ প্রজন্ম উপহার দিচ্ছে।

কিন্তু বিসিএস বা সরকারি চাকরি-ই কি সব! কেন আমরা অন্য চাকরি খুঁজি না। কেন উদ্যোক্তা হয় না। বিসিএস বা অন্য সরকারি চাকরি পাওয়ার চেয়ে অন্য চাকরি বা নিজে কিছু করে জীবন উপভোগ করা সমীচীন নয় কি! বিসিএস বা অন্য সরকারি চাকরির প্রতি এই বিকারগস্ত উন্মাদনা আমাদেরকে বিসিএসপ্রতিবন্ধী প্রজন্ম উপহার দিচ্ছে। তাই বাস্তবতার দৃষ্টিতে বিবেচনা করে আমাদের মন-মানসিকতায় পরিবর্তন আনা জরুরি।

প্রেম বা ভালোবাসায় ব্যর্থ হলে মরে যেতে হবে কেন? পৃথিবীতে একমাত্র মা-বাবার ভালোবাসা ছাড়া কোনো ভালোবাসাই নিঃস্বার্থ ও চিরন্তন নয়। ‘তোমাকে ছাড়া বাঁচবো না’, ‘তুমিই আমার সব’- এ ধরনের কথা বলা তথাকথিত ভালোবাসার ব্যক্তিটিই নির্দ্বিধায় অন্যের সঙ্গে সংসার পেতে দিব্যি সুখে বাস করছে। হয়ত তোমার কথা ভাববারই সময় নেই তার। তাহলে কেন এই প্রেম-ভালোবাসায় ব্যর্থতার কারণে নিজের জীবনকে বিসর্জন দেয়া?

যে তোমাকে প্রকৃতই ভালোবাসবে, সে তোমাকে ছেড়ে যেতে পারে কি? পৃথিবী বড় কঠিন। এখানে আবেগের কোন ঠাঁই নেই। যারা ‘প্রেম’ নামক মরীচিকার পেছনে ছুটে নিজের জীবনকে ধ্বংস করে দেয়, তারা বোকার স্বর্গে বাস করে বৈকি! তাই নিজের জীবনকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসতে হবে। নিজেকে সময় দিতে হবে প্রচুর।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো হতে হবে শিক্ষার্থীবান্ধব। প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য দেখভালের জন্য অন্তত একজন করে স্থায়ী ‘মেন্টাল কাউন্সিলর’ নিয়োগ দেয়ার বিষয়টি ভেবে দেখা যেতে পারে। অভিভাবকদেরকে আরও সচেতন হতে হবে এবং সন্তানদের যথেষ্ট সময় দিতে হবে। তাদের পাস-ফেলনির্ভর শিক্ষা নয়, বরং মানবিক ও আদর্শ মানুষ হওয়ার শিক্ষা দিতে হবে। তাদের অতি আদরে নমনীর পুতুল না বানিয়ে বাস্তবতাকে মেনে বড় হওয়ার শিক্ষা দিতে হবে। ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত করতে হবে। পরনির্ভরশীল নয় বরং ছোট থেকেই তাদের ছোট-খাটো দায়িত্ব দিয়ে আস্তে আস্তে আত্মনির্ভরশীল হয়ে কীভাবে পরিবেশ পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে হয় সে শিক্ষা দিতে হবে। অভিভাবক হিসেবে প্রতিটি মা-বাবার এটা নৈতিক দায়িত্ব।

সন্তানকে অতি আদরে বাস্তবতা বিবর্জিত ঘরকুনো করে বড় করা অতি ভালোবাসা নয়। বরং এটি তাকে বিপদে ফেলে দেয়া। সন্তানকে যেমন ভালোবাসতে হবে, তেমনি তাকে জীবনের উত্থান-পতন, ঘাত-প্রতিঘাত সম্পর্কে জাগতিক শিক্ষা দিতে হবে।

রবীন্দ্রনাথের ভাষায় আবারও বলতে হয়- ‘পুণ্যে পাপে দুঃখে সুখে, পতনে উত্থানে/মানুষ হইতে দাও তোমার সন্তানে.../পদে পদে ছোটো ছোটো নিষেধের ডোরে/বেঁধে বেঁধে রাখিয়ো না ভালোছেলে করে। /প্রাণ দিয়ে, দুঃখ স’য়ে, আপনার হাতে/সংগ্রাম করিতে দাও ভালোমন্দ-সঙ্গে।’

এই পৃথিবীটা একটা দুঃখ-সুখের লীলাভূমি। প্রতিনিয়তই এখানে আমাদের যুদ্ধ করে বাঁচতে হয় দুঃখ-যাতনা ও নানা প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে। কারণ, এই পৃথিবী ফুলশয্যা নয়। এখানে প্রতিক্ষণে সামনে আসে হাজারো দুর্বিষহ দুঃখ, দুর্দশা, যন্ত্রণা, দুর্যোগ-দুর্ঘটনা। এগুলোকে মোকাবিলা করেই বাঁচতে হবে। আর সে বাঁচাই হবে সার্থক। কবি নির্মলেন্দু গুণের সুরে বলতে চাই- ‘দুঃখকে স্বীকার করো না,- সর্বনাশ হয়ে যাবে।/ দুঃখ করো না, বাঁচো, প্রাণ ভরে বাঁচো।/ বাঁচার আনন্দে বাঁচো। / বাঁচো, বাঁচো এবং বাঁচো।’

[লেখক : প্রভাষক, সমাজকর্ম বিভাগ,

সাভার সরকারি কলেজ]

back to top