alt

উপ-সম্পাদকীয়

ডিজিটাল শিল্পযুগ ও অন্যান্য প্রসঙ্গ

মোস্তাফা জব্বার

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : সোমবার, ০৩ অক্টোবর ২০২২

দুই

চতুর্থ শিল্পবিপ্লব ও আমরা : আমরা চতুর্থ শিল্পবিপ্লব নিয়ে কথা বলছি। আমাদের মূল প্রবন্ধটা চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের। যিনি এর তাত্ত্বিক গুরু তার নাম ক্লাউস সোয়াব। সোয়াব হচ্ছেন ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের প্রধান এবং এই চতুর্থ শিল্পবিপ্লব শব্দটা প্রথম উচ্চারিত হয় ২০১১ সালে হ্যানোভারে। সেখান থেকে জার্মান সরকার মোটামুটিভাবে একটু গুরুত্ব দেয় এবং ক্লাউস সোয়াব ২০১৬ সালে যে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের কনফারেন্স হয় তাতে এই চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের এজেন্ডাটা প্রকাশ করেন। এটি স্মরণ করুন যে ডিজিটাল যুগ অথবা চতুর্থ শিল্পবিপ্লব ক্লাউস সোয়াব বলেছেন ২০১৬ সালে আর আমাদের শেখ হাসিনা ডিজিটাল বাংলাদেশ বলেছেন ২০০৮ সালে।

আমাদের পরে ২০০৯ সালে ব্রিটেন ডিজিটাল ব্রিটেন ঘোঘণা করেছে ২০১৪ তে ভারত ডিজিটাল ইন্ডিয়া ঘোষণা করেছে ১৫ আগস্টে। পাকিস্তান ডিজিটাল পাকিস্তান ঘোষণা করেছে ২০১৯ সালের ৫ ডিসেম্বর। আমি এটা বলব যে ৩২৪ বছর প্রযুক্তিতে পিছিয়ে থাকা দেশটা প্রথম পৃথিবীর একটি দেশ যে দেশ তাকে ডিজিটাল করার জন্য একটি ঘোষণা দিতে পেরেছে। এখন আমি বলব বিশ্বের যে কোন দেশের সঙ্গে তুলনা করে দেখেন এই যে আপনি যেভাবে একটি জুম মিটিং করে এরকম একটি আলোচনা সভা করতে পারছেন আমি এই সময়কালের ভেতরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ এমন কোন উন্নত দেশ নেই যার সঙ্গে ভার্চুয়াল মিটিং করেনি। আমি দেখতে পেরেছি তাদের কানেকশন যন্ত্রণা দিয়েছে। অনেক সময় দেখা গেছে কথা বলতে গিয়ে তারা স্পষ্ট করে উচ্চারণ করতে পারেননি।

আমাদের ইন্টারনেটের ক্ষেত্রে বা টেলিকমিউনিকেশনের ক্ষেত্রে সমস্যা নেই এটা আমি বলব না। কিন্তু আমি এটি বলব যে বাংলাদেশে আমাদের ইন্টারনেটের যুগ শুরু হয়েছে ১৯৯৬ সালে। আমরা মোবাইল ইন্টারনেটের যুগে প্রবেশ করেছি যে ২০১৩ সালে। ভয়েস কল এবং ইন্টারনেটের ডাটা দুটো ক্ষেত্রেই যদি আমরা আসল জায়গায় এসেছি ২০১৮ সালে যখন আমরা ৪-জি যুগে প্রবেশ করেছি। আমাদের ছিল যে ২০০৮ সালে আমাদের টোটাল ব্যান্ডউইডথ ব্যবহৃত হতো সাড়ে সাত জিবিপিএস। ইন্টারনেট ব্যবহার করত সাড়ে সাত লাখ লোক। আজকে বাংলাদেশের হিসাব টেনে বলব আমরা এখন সাড়ে সাত জিডিপিএস থেকে ৩৪৪০ জিবিপিএস ব্যবহার করি। একই সঙ্গে যে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী সাড়ে সাত লাখ ছিল এটা এখন ১৩ কোটিতে উন্নীত হয়েছে। আপনি একটু হিসাব করে দেখেন ১৩ বছরের মধ্যে একটা দেশের এ রকম রূপান্তর পৃথিবীর কোন দেশ করতে পেরেছে কি না। আমি এটুকু বলব যে দেশে ৩২৪ বছর পরে প্রিন্টিং মেশিন এসেছিল সেই দেশে কিন্তু ৫-জি এসেছে পৃথিবীর অন্য দেশগুলোর সমান তালে। আমরা প্রথম ৫-জির সঙ্গে পরিচিতি হই ২০১৮ সালে বার্সেলোনাতে গিয়ে। সেখানে আমরা দেখি এই ৫-জিকে বলা হচ্ছে ফোর্থ ইন্ডস্ট্রিয়াল রেভল্যুশনের হাইওয়ে। দুটো অভিজ্ঞতা আমার মনে আছে। আজকে চমৎকারভাবে স্বাস্থ্য প্রযুক্তি নিয়ে আমাদের সংগীতা আহমেদ কথা বলেছেন। আমি তারই একটি দৃষ্টান্ত এখানে উল্লেখ করতে চাই।

আমি একটা স্টলে গেলাম। স্টলে যাওয়ার পর এক ভদ্রলোক বললেন স্যার আপনার স্বাস্থ্যটা একটু পরীক্ষা করে দেখি। আমাকে একটা যন্ত্রের সামনে নিয়ে দাঁড় করিয়ে দিলেন এবং কিছুক্ষণ পর এক ভদ্রলোক আমাকে জানালেন আমার প্রেসার থেকে আরম্ভ করে আমার শারীরিক অবস্থা কি তা তিনি জানেন। আমি জানতে পারলাম এ ভদ্রলোক লন্ডনে বসে আছেন। অর্থাৎ লন্ডনে বসে থেকে আমার শারীরিক পরীক্ষাগুলো সম্পন্ন করে দিলেন। এ একটি অভিজ্ঞতার পরে আমি বুঝতে পারলাম যে আমার সামনে চতুর্থ শিল্পবিপ্লব কি নিয়ে আসতেছে। আমরা যে পিছিয়ে আছি তা সত্য কথা।

কিন্তু আপনি আজকে বলতে পারবেন বাংলাদেশে ৮০টি চক্ষু ক্লিনিক আছে উপজেলাতে, যে চক্ষু ক্লিনিকে একজন নার্স একজন রোগীর চক্ষু পরীক্ষা করে এবং সেই চক্ষু পরীক্ষার পরিপ্রেক্ষিতে চশমা দেয়া থেকে শুরু করে ড্রপ দেয়া এবং অন্যান্য চিকিৎসা করার সবটা চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট থেকে করা হয়। আমরা এ কথা কল্পনাও করতে পারতাম না যে আমি এ যুগে পৌঁছাতে পারব। একই সঙ্গে আরেকটি অভিজ্ঞতা আমি শেয়ার করব। বার্সেলোনায় বিভিন্ন স্টল ও সেমিনার যখন ঘুরে বেড়াচ্ছিলাম তখন আমার ছেলে বিজয় সঙ্গে ছিল। সে এক সেমিনারে গিয়ে পেল ইন্দোনেশিয়ার দুই যুবক একটা প্রেজেন্টেশন দিচ্ছে। ওরা প্রেজেন্টেশন দেওয়ার পর বিজয় দুজনকেই ধরে নিয়ে এলো আমার কাছে। ওরা বলল যে তুমি কি জান যে আমরা আইওটি দিয়ে কি কাজ করি? আমি বললাম যে না আমার তো কোন ধারণাই নেই। তখনো পর্যন্ত জামান ভাই আইওটি ডিভাইস রপ্তানি করা শুরু করেনি। সে কারণে আমার অভিজ্ঞতাও ছিল না। ওরা বলল যে দেখ আমরা আইওটি যন্ত্র পুকুরে ভাসাইছি। আমি বললাম পুকুরে ভাসিয়ে তুমি কি করতেছো। বলল আমরা ৫-জি টেকনোলজি দিয়ে মোবাইল ফোনকে কানেক্ট করছি আইওটির সঙ্গে। আইওটি ডিভাইসটা কি করে?

সে প্রথমে আমাদের মেপে দেখায় এই জায়গাটাতে কি পরিমাণ মাছ রাখা যেতে পারে। আমরা সে অনুপাতে দেখলাম প্রচলিত নিয়মে যে মাছ রাখতাম এখন প্রায় দ্বিগুণ মাছ চাষ করতে পারি। আমরা পুকুরের পাড়েও যাই না এখন। ঘড়ি ধরে আমরা ওখানে খাবার দিতে যাই না। এই আইওটি ডিভাইস আমাকে কখন মাছের ক্ষুধা লাগছে এবং মাছের কতটুকু ক্ষুধা লেগেছে এটা আমাকে জানিয়ে দেয়। আমি সেই অনুপাতে তাদের খাবারটা দেই। আমি অবাক হয়ে বললাম যে বাবা একটু বলত দেখি তোমাদের আইওটি ডিভাইস মাছের পেটে খিদা লাগছে কি না, এটা কি আন্দাজ করে বা মেপে তারপর খবরটা দেয়?

ওরা বলে: না আমাদের টেকনোলজিটা খুব সহজ। মাছের চলাফেরা থেকে নির্ধারণ আইওটি ডিভাইস ব্যাখ্যা করে জানে যে মাছের কি পরিমাণ খিদে লেগেছে। এটিই হচ্ছে তরুণদের একটি প্রকল্প এবং এটি আপনি বাংলাদেশে দেখতে পাবেন। এক দুই বছরের ভেতরে এটা ব্যাপক হারে ব্যবহৃত হবে। পুকুরের মাছ চাষিরা আইওটি ডিভাইস ব্যবহার করবে। একই সঙ্গে আপনি দেখতে পাবেন জমিতে সার অথবা সেচ দেয়ার জন্য এই যন্ত্র ব্যবহৃত হচ্ছে। আসলে তৃতীয় শিল্প বিপ্লব যেটাকে আমরা ইনফরমেশন এইজ বলি তার ধারাবাহিকতায় কিন্তু ক্লাউস সোয়াব ফোর্থ ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভল্যুশনের কথা বলেছেন। আমরা সেটাকে ডিজিটাল যুগ বলব। আমি এবারে পরিপ্রেক্ষিতটা একটু বিবেচনা করে বলতে চাই ফোর্থ ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভল্যুশন জার্মানির ক্লাউস সোয়াব কেন বলতে গেছে এবং উন্নত দেশগুলো কেন ফোর্থ ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভল্যুশন নিয়ে লাফালাফি করতেছে তা জানা দরকার।

এই লাফালাফি করার একটি কারণ ইতিমধ্যেই জামান ভাই বলেছেন। আমরা এখন পপুলেশন ডিভিডেন্ডের মধ্যে বাস করছি আর উন্নত দুনিয়ার যারা এই তিন শিল্পবিপ্লব পার হয়েছে তারা আমাদের উল্টোটা নিয়ে আছে। ওদের বয়স্কদের সংখ্যা ৭০ শতাংশের ওপরে। এদের ওষুধ দেয়ার মতো লোক ওরা খুঁজে বের করতে পারে না। যার ফলে বাংলাদেশের মতো দেশগুলো থেকে মানুষ নিয়ে অথবা অন্য কোন কাজ করার জন্য নিয়োজিত লোকজন দিয়ে তাদের শূন্যতা পূরণ করতে হয়। বাংলাদেশ মানুষের জন্যই কিন্তু গার্মেন্টশিল্পে একটি বিশাল জায়গা দখল করতে পেরেছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে রোবোটিকসের কথা বলা হয়।

আমার স্পষ্ট মনে আছে বেসিসের এক্সপোজিশনের ক্ষেত্রে অ্যাম্বাসেডরদের দাওয়াত দিয়েছিলাম এবং জার্মানরা শুধু বলছিল দেখ তোমাদের দিন কিন্তু শেষ। আমি বলছিলাম কি কারণে। বলে তোমার গার্মেন্ট ফ্যাক্টরি কিন্তু আমার ফ্রাঙ্কফুটে চলে যাবে। একই বিষয়ে ২০১৮ সালে বার্সিলোনায় জার্মান মন্ত্রী বলছিল দেখ আমরা পৃথিবীতে এক অসাধারণ ভালো সময়ে আসছি। আমি বললাম কি রকম ভালো সময়। দেখ পৃথিবীতে ১২ বিলিয়ন ড্রাইভার লাগে। এখন যে টেকনোলজি আবিষ্কার করছি তাতে আমি ড্রাইভার লেস গাড়ি দিয়ে চলব। সুতরাং এই যে টেকনোলজির কথা বলা হচ্ছে এই টেকনোলজিকে বলা হচ্ছে উন্নত বিশ্বে বা পশ্চিমা বিশ্বে তাদের মানুষের অভাব পূরণ করার জন্য। আমি একটি কথা স্পষ্ট করে বলতে চাই মানুষের রিপ্লেসমেন্ট যন্ত্র দিয়ে কোনোকালে হয়নি, হতেও পারবে না। এটি উপলব্ধি করার পরিপ্রেক্ষিতে জাপান কিন্তু প্রথম থেকেই ভিন্ন সুরে কথা বলছে। তারাই বলছে এই যান্ত্রিক সভ্যতার দিকে মানবজাতি এগুতে পারে না। সেই কারণে তারা বলেছে সোসাইটি ৫.০ গড়ে তুলব। সোসাইটি ৫.০-এর মধ্যে দুটো খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় পড়েছে। তারা বলছে প্রযুক্তি আসবে কিন্তু সেটি হবে মানবিক।

এখন কিন্তু পশ্চিমা দুনিয়া ফোর্থ ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভল্যুশনের পর ফিফথ ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভল্যুশনের কথা বলছে। কারণ, ফোর্থ ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভল্যুশন যান্ত্রিক এবং ফিফথ ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভল্যুশনকে বলছে মানবিক। এই মানবিক সভ্যতা যতক্ষণ গড়ে না ওঠবে ততক্ষণ পর্যন্ত কিন্তু তাদের পক্ষে কোনোভাবেই এই মানব সভ্যতাকে সামনে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে না। ফলে আলটিমেটলি আমি যেটা বুঝতেছি ফোর্থ ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভল্যুশন এলো এবং গেল এবং তার জায়গাটা পঞ্চম শিল্পবিপ্লব এসে পূরণ করতে শুরু করল। আমি মনে করি যে বাংলাদেশের জন্য এই যে বিশ্বব্যাপী রূপান্তরের জায়গা খুব ভালো করে উপলব্ধি করা দরকার। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এটি জামান ভাই বলেছে আমরা যদি শুধু রোবট ব্যবহারকারী হই তাহলে আমাদের জন্য খবর আছে।

কারণ, রোবট ব্যবহার করলে আমার যে জনসংখ্যা আছে আমার যে মানবসম্পদ আছে এই মানবসম্পদকে কি করব এটা আমি খুঁজে বের করতে পারব না। বরং আমি রোবট ব্যবহারকারী হব আমার যেখানে দরকার সেখানে? অন্যদিকে আমি রোবট বানিয়ে ওদের সাপ্লাই করব। আমাদের এখানে রোবট দরকার আছে। তবে মানুষের বিকল্প হিসেবে নয়। আমার স্পষ্ট মনে আছে এটুআইয়ের একটা প্রজেক্টে বিচারক ছিলাম আমি। সেখানে বগুড়ার ক্লাস সেভেনে পড়া একটা ছেলেকে পাই। ওর নাম আজমাইল আকমল। এই ছেলেটা আমাকে একটা প্রকল্প দেখাল : সে নিজে একটা রোবট বানিয়েছে। আমি দেখে বললাম যে বাবা তোমার এই রোবট কি কাজ করবে। ওই সময়কালে খিলগাঁওতে একটা বাচ্চা একটা পাইপের ভেতরে পড়ে গিয়েছিল। ওটার ভেতর মানুষ ঢুকতে পারে না বলে বাচ্চাটা ওই পাইপের ভেতরে মারা গেল। ও বলল আমার রোবট দরকার বাচ্চাটাকে উদ্ধার করতে। সে পাইপের ভেতর ঢুকবে ও বাচ্চাটাকে উদ্ধার করবে। প্র্যাকটিক্যালি এটিই হচ্ছে মানবিক চিন্তা।

আমার সেখানে রোবট দরকার, যেখানে আমার মানুষ কাজ করতে পারবে না। রোবট মানুষকে সহায়তা করবে। মানুষের যে জায়গাতে যতটুকু সহায়তা করা দরকার, ততটুতু সহায়তাই যেন সে করতে পারে। অতএব সেই দিক থেকে আমি মনে করি আমাদের ফোর্থ বা ফিফথ ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভল্যুশন নিয়ে যখন কথা বলব তখন আমাদের এটাও বলতে হবে যে হ্যাঁ যন্ত্র আমার দরকার। কিন্তু একে মানবিক যন্ত্র হিসেবে আমাদের গড়ে তুলতে হবে। অতএব আমি মনে করি যে আমরা আজকে যে আলোচনাটা করছি তাতে পুরো প্রেক্ষিতটিকেই তুলে ধরতে পারলাম।

[লেখক : তথ্যপ্রযুক্তিবিদ, কলামিস্ট, দেশের প্রথম ডিজিটাল নিউজ সার্ভিস আবাসের চেয়ারম্যান- সাংবাদিক, বিজয় কি-বোর্ড ও সফটওয়্যার এবং বিজয় ডিজিটাল শিক্ষা সফটওয়্যারের উদ্ভাবক, ডিজিটাল প্রযুক্তির অনেক ট্রেডমার্ক, প্যাটেন্ট ও কপিরাইটের স্বত্বাধিকারী]

টেকসই কৃষিতে নবায়নযোগ্য জ্বালানির সম্ভাবনা

ছবি

জয়নুলের সাঁওতাল দম্পতি এবং সুমনের সৌন্দর্যপ্রিয়তা

এরপরও কি গাছ লাগাবেন না, বন রক্ষা করবেন না?

বিশ্ব ধরিত্রী দিবস

সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মিছিলের শেষ কোথায়

খুব জানতে ইচ্ছে করে

কোন দিকে মোড় নিচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের সংকট?

কৃষিগুচ্ছ : ভর্তির আবেদনের নূ্যূনতম যোগ্যতা ও ফলাফল প্রস্তুতিতে বৈষম্য

ছবি

গণপরিবহনে নৈরাজ্যের শেষ কোথায়

ছাত্র রাজনীতি : পক্ষে-বিপক্ষে

ছবি

বি আর আম্বেদকর : নিম্নবর্গের মানুষের প্রতিনিধি

চেকের মামলায় আসামির মুক্তির পথ কী

রাম-নবমী : হিন্দুত্বের নয়া গবেষণাগার

‘একটি গ্রাম একটি পণ্য’ উদ্যোগ কি সফল হবে

কিশোর গ্যাং : সমস্যার মূলে যেতে হবে

গীতি চলচ্চিত্র ‘কাজল রেখা’ : সুস্থধারার চলচ্চিত্র বিকাশ ঘটুক

ছবি

ঋতুভিত্তিক চিরায়ত বাঙালি সংস্কৃতি

ছবি

স্মরণ : কাঙ্গাল হরিনাথ মজুমদার

ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস

দাবদাহে সুস্থ থাকবেন কীভাবে

কত দিন পরে এলে, একটু শোনো

রম্যগদ্য : আনন্দ, দ্বিগুণ আনন্দ...

ছবি

ইতিহাসের এক অবিস্মরণীয় নাম

বৈসাবি : ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বর্ষবরণ উৎসব

‘ইন্ডিয়া আউট’ ক্যাম্পেইন

উদার-উদ্দাম বৈশাখ চাই

ঈদ নিয়ে আসুক শান্তি ও সমৃদ্ধি, বিস্তৃত হোক সম্প্রীতি ও সৌহার্দ

প্রসঙ্গ: বিদেশি ঋণ

ছাত্ররাজনীতি কি খারাপ?

জাকাত : বিশ্বের প্রথম সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা

বাংলাদেশ স্কাউটস দিবস : শুরুর কথা

ছবি

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত

প্রবাসীর ঈদ-ভাবনা

বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস

ধানের ফলন বাড়াতে ক্লাইমেট স্মার্ট গুটি ইউরিয়া প্রযুক্তি

কমিশন কিংবা ভিজিটে জমি রেজিস্ট্রির আইনি বিধান ও প্রাসঙ্গিকতা

tab

উপ-সম্পাদকীয়

ডিজিটাল শিল্পযুগ ও অন্যান্য প্রসঙ্গ

মোস্তাফা জব্বার

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

সোমবার, ০৩ অক্টোবর ২০২২

দুই

চতুর্থ শিল্পবিপ্লব ও আমরা : আমরা চতুর্থ শিল্পবিপ্লব নিয়ে কথা বলছি। আমাদের মূল প্রবন্ধটা চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের। যিনি এর তাত্ত্বিক গুরু তার নাম ক্লাউস সোয়াব। সোয়াব হচ্ছেন ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের প্রধান এবং এই চতুর্থ শিল্পবিপ্লব শব্দটা প্রথম উচ্চারিত হয় ২০১১ সালে হ্যানোভারে। সেখান থেকে জার্মান সরকার মোটামুটিভাবে একটু গুরুত্ব দেয় এবং ক্লাউস সোয়াব ২০১৬ সালে যে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের কনফারেন্স হয় তাতে এই চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের এজেন্ডাটা প্রকাশ করেন। এটি স্মরণ করুন যে ডিজিটাল যুগ অথবা চতুর্থ শিল্পবিপ্লব ক্লাউস সোয়াব বলেছেন ২০১৬ সালে আর আমাদের শেখ হাসিনা ডিজিটাল বাংলাদেশ বলেছেন ২০০৮ সালে।

আমাদের পরে ২০০৯ সালে ব্রিটেন ডিজিটাল ব্রিটেন ঘোঘণা করেছে ২০১৪ তে ভারত ডিজিটাল ইন্ডিয়া ঘোষণা করেছে ১৫ আগস্টে। পাকিস্তান ডিজিটাল পাকিস্তান ঘোষণা করেছে ২০১৯ সালের ৫ ডিসেম্বর। আমি এটা বলব যে ৩২৪ বছর প্রযুক্তিতে পিছিয়ে থাকা দেশটা প্রথম পৃথিবীর একটি দেশ যে দেশ তাকে ডিজিটাল করার জন্য একটি ঘোষণা দিতে পেরেছে। এখন আমি বলব বিশ্বের যে কোন দেশের সঙ্গে তুলনা করে দেখেন এই যে আপনি যেভাবে একটি জুম মিটিং করে এরকম একটি আলোচনা সভা করতে পারছেন আমি এই সময়কালের ভেতরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ এমন কোন উন্নত দেশ নেই যার সঙ্গে ভার্চুয়াল মিটিং করেনি। আমি দেখতে পেরেছি তাদের কানেকশন যন্ত্রণা দিয়েছে। অনেক সময় দেখা গেছে কথা বলতে গিয়ে তারা স্পষ্ট করে উচ্চারণ করতে পারেননি।

আমাদের ইন্টারনেটের ক্ষেত্রে বা টেলিকমিউনিকেশনের ক্ষেত্রে সমস্যা নেই এটা আমি বলব না। কিন্তু আমি এটি বলব যে বাংলাদেশে আমাদের ইন্টারনেটের যুগ শুরু হয়েছে ১৯৯৬ সালে। আমরা মোবাইল ইন্টারনেটের যুগে প্রবেশ করেছি যে ২০১৩ সালে। ভয়েস কল এবং ইন্টারনেটের ডাটা দুটো ক্ষেত্রেই যদি আমরা আসল জায়গায় এসেছি ২০১৮ সালে যখন আমরা ৪-জি যুগে প্রবেশ করেছি। আমাদের ছিল যে ২০০৮ সালে আমাদের টোটাল ব্যান্ডউইডথ ব্যবহৃত হতো সাড়ে সাত জিবিপিএস। ইন্টারনেট ব্যবহার করত সাড়ে সাত লাখ লোক। আজকে বাংলাদেশের হিসাব টেনে বলব আমরা এখন সাড়ে সাত জিডিপিএস থেকে ৩৪৪০ জিবিপিএস ব্যবহার করি। একই সঙ্গে যে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী সাড়ে সাত লাখ ছিল এটা এখন ১৩ কোটিতে উন্নীত হয়েছে। আপনি একটু হিসাব করে দেখেন ১৩ বছরের মধ্যে একটা দেশের এ রকম রূপান্তর পৃথিবীর কোন দেশ করতে পেরেছে কি না। আমি এটুকু বলব যে দেশে ৩২৪ বছর পরে প্রিন্টিং মেশিন এসেছিল সেই দেশে কিন্তু ৫-জি এসেছে পৃথিবীর অন্য দেশগুলোর সমান তালে। আমরা প্রথম ৫-জির সঙ্গে পরিচিতি হই ২০১৮ সালে বার্সেলোনাতে গিয়ে। সেখানে আমরা দেখি এই ৫-জিকে বলা হচ্ছে ফোর্থ ইন্ডস্ট্রিয়াল রেভল্যুশনের হাইওয়ে। দুটো অভিজ্ঞতা আমার মনে আছে। আজকে চমৎকারভাবে স্বাস্থ্য প্রযুক্তি নিয়ে আমাদের সংগীতা আহমেদ কথা বলেছেন। আমি তারই একটি দৃষ্টান্ত এখানে উল্লেখ করতে চাই।

আমি একটা স্টলে গেলাম। স্টলে যাওয়ার পর এক ভদ্রলোক বললেন স্যার আপনার স্বাস্থ্যটা একটু পরীক্ষা করে দেখি। আমাকে একটা যন্ত্রের সামনে নিয়ে দাঁড় করিয়ে দিলেন এবং কিছুক্ষণ পর এক ভদ্রলোক আমাকে জানালেন আমার প্রেসার থেকে আরম্ভ করে আমার শারীরিক অবস্থা কি তা তিনি জানেন। আমি জানতে পারলাম এ ভদ্রলোক লন্ডনে বসে আছেন। অর্থাৎ লন্ডনে বসে থেকে আমার শারীরিক পরীক্ষাগুলো সম্পন্ন করে দিলেন। এ একটি অভিজ্ঞতার পরে আমি বুঝতে পারলাম যে আমার সামনে চতুর্থ শিল্পবিপ্লব কি নিয়ে আসতেছে। আমরা যে পিছিয়ে আছি তা সত্য কথা।

কিন্তু আপনি আজকে বলতে পারবেন বাংলাদেশে ৮০টি চক্ষু ক্লিনিক আছে উপজেলাতে, যে চক্ষু ক্লিনিকে একজন নার্স একজন রোগীর চক্ষু পরীক্ষা করে এবং সেই চক্ষু পরীক্ষার পরিপ্রেক্ষিতে চশমা দেয়া থেকে শুরু করে ড্রপ দেয়া এবং অন্যান্য চিকিৎসা করার সবটা চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট থেকে করা হয়। আমরা এ কথা কল্পনাও করতে পারতাম না যে আমি এ যুগে পৌঁছাতে পারব। একই সঙ্গে আরেকটি অভিজ্ঞতা আমি শেয়ার করব। বার্সেলোনায় বিভিন্ন স্টল ও সেমিনার যখন ঘুরে বেড়াচ্ছিলাম তখন আমার ছেলে বিজয় সঙ্গে ছিল। সে এক সেমিনারে গিয়ে পেল ইন্দোনেশিয়ার দুই যুবক একটা প্রেজেন্টেশন দিচ্ছে। ওরা প্রেজেন্টেশন দেওয়ার পর বিজয় দুজনকেই ধরে নিয়ে এলো আমার কাছে। ওরা বলল যে তুমি কি জান যে আমরা আইওটি দিয়ে কি কাজ করি? আমি বললাম যে না আমার তো কোন ধারণাই নেই। তখনো পর্যন্ত জামান ভাই আইওটি ডিভাইস রপ্তানি করা শুরু করেনি। সে কারণে আমার অভিজ্ঞতাও ছিল না। ওরা বলল যে দেখ আমরা আইওটি যন্ত্র পুকুরে ভাসাইছি। আমি বললাম পুকুরে ভাসিয়ে তুমি কি করতেছো। বলল আমরা ৫-জি টেকনোলজি দিয়ে মোবাইল ফোনকে কানেক্ট করছি আইওটির সঙ্গে। আইওটি ডিভাইসটা কি করে?

সে প্রথমে আমাদের মেপে দেখায় এই জায়গাটাতে কি পরিমাণ মাছ রাখা যেতে পারে। আমরা সে অনুপাতে দেখলাম প্রচলিত নিয়মে যে মাছ রাখতাম এখন প্রায় দ্বিগুণ মাছ চাষ করতে পারি। আমরা পুকুরের পাড়েও যাই না এখন। ঘড়ি ধরে আমরা ওখানে খাবার দিতে যাই না। এই আইওটি ডিভাইস আমাকে কখন মাছের ক্ষুধা লাগছে এবং মাছের কতটুকু ক্ষুধা লেগেছে এটা আমাকে জানিয়ে দেয়। আমি সেই অনুপাতে তাদের খাবারটা দেই। আমি অবাক হয়ে বললাম যে বাবা একটু বলত দেখি তোমাদের আইওটি ডিভাইস মাছের পেটে খিদা লাগছে কি না, এটা কি আন্দাজ করে বা মেপে তারপর খবরটা দেয়?

ওরা বলে: না আমাদের টেকনোলজিটা খুব সহজ। মাছের চলাফেরা থেকে নির্ধারণ আইওটি ডিভাইস ব্যাখ্যা করে জানে যে মাছের কি পরিমাণ খিদে লেগেছে। এটিই হচ্ছে তরুণদের একটি প্রকল্প এবং এটি আপনি বাংলাদেশে দেখতে পাবেন। এক দুই বছরের ভেতরে এটা ব্যাপক হারে ব্যবহৃত হবে। পুকুরের মাছ চাষিরা আইওটি ডিভাইস ব্যবহার করবে। একই সঙ্গে আপনি দেখতে পাবেন জমিতে সার অথবা সেচ দেয়ার জন্য এই যন্ত্র ব্যবহৃত হচ্ছে। আসলে তৃতীয় শিল্প বিপ্লব যেটাকে আমরা ইনফরমেশন এইজ বলি তার ধারাবাহিকতায় কিন্তু ক্লাউস সোয়াব ফোর্থ ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভল্যুশনের কথা বলেছেন। আমরা সেটাকে ডিজিটাল যুগ বলব। আমি এবারে পরিপ্রেক্ষিতটা একটু বিবেচনা করে বলতে চাই ফোর্থ ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভল্যুশন জার্মানির ক্লাউস সোয়াব কেন বলতে গেছে এবং উন্নত দেশগুলো কেন ফোর্থ ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভল্যুশন নিয়ে লাফালাফি করতেছে তা জানা দরকার।

এই লাফালাফি করার একটি কারণ ইতিমধ্যেই জামান ভাই বলেছেন। আমরা এখন পপুলেশন ডিভিডেন্ডের মধ্যে বাস করছি আর উন্নত দুনিয়ার যারা এই তিন শিল্পবিপ্লব পার হয়েছে তারা আমাদের উল্টোটা নিয়ে আছে। ওদের বয়স্কদের সংখ্যা ৭০ শতাংশের ওপরে। এদের ওষুধ দেয়ার মতো লোক ওরা খুঁজে বের করতে পারে না। যার ফলে বাংলাদেশের মতো দেশগুলো থেকে মানুষ নিয়ে অথবা অন্য কোন কাজ করার জন্য নিয়োজিত লোকজন দিয়ে তাদের শূন্যতা পূরণ করতে হয়। বাংলাদেশ মানুষের জন্যই কিন্তু গার্মেন্টশিল্পে একটি বিশাল জায়গা দখল করতে পেরেছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে রোবোটিকসের কথা বলা হয়।

আমার স্পষ্ট মনে আছে বেসিসের এক্সপোজিশনের ক্ষেত্রে অ্যাম্বাসেডরদের দাওয়াত দিয়েছিলাম এবং জার্মানরা শুধু বলছিল দেখ তোমাদের দিন কিন্তু শেষ। আমি বলছিলাম কি কারণে। বলে তোমার গার্মেন্ট ফ্যাক্টরি কিন্তু আমার ফ্রাঙ্কফুটে চলে যাবে। একই বিষয়ে ২০১৮ সালে বার্সিলোনায় জার্মান মন্ত্রী বলছিল দেখ আমরা পৃথিবীতে এক অসাধারণ ভালো সময়ে আসছি। আমি বললাম কি রকম ভালো সময়। দেখ পৃথিবীতে ১২ বিলিয়ন ড্রাইভার লাগে। এখন যে টেকনোলজি আবিষ্কার করছি তাতে আমি ড্রাইভার লেস গাড়ি দিয়ে চলব। সুতরাং এই যে টেকনোলজির কথা বলা হচ্ছে এই টেকনোলজিকে বলা হচ্ছে উন্নত বিশ্বে বা পশ্চিমা বিশ্বে তাদের মানুষের অভাব পূরণ করার জন্য। আমি একটি কথা স্পষ্ট করে বলতে চাই মানুষের রিপ্লেসমেন্ট যন্ত্র দিয়ে কোনোকালে হয়নি, হতেও পারবে না। এটি উপলব্ধি করার পরিপ্রেক্ষিতে জাপান কিন্তু প্রথম থেকেই ভিন্ন সুরে কথা বলছে। তারাই বলছে এই যান্ত্রিক সভ্যতার দিকে মানবজাতি এগুতে পারে না। সেই কারণে তারা বলেছে সোসাইটি ৫.০ গড়ে তুলব। সোসাইটি ৫.০-এর মধ্যে দুটো খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় পড়েছে। তারা বলছে প্রযুক্তি আসবে কিন্তু সেটি হবে মানবিক।

এখন কিন্তু পশ্চিমা দুনিয়া ফোর্থ ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভল্যুশনের পর ফিফথ ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভল্যুশনের কথা বলছে। কারণ, ফোর্থ ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভল্যুশন যান্ত্রিক এবং ফিফথ ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভল্যুশনকে বলছে মানবিক। এই মানবিক সভ্যতা যতক্ষণ গড়ে না ওঠবে ততক্ষণ পর্যন্ত কিন্তু তাদের পক্ষে কোনোভাবেই এই মানব সভ্যতাকে সামনে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে না। ফলে আলটিমেটলি আমি যেটা বুঝতেছি ফোর্থ ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভল্যুশন এলো এবং গেল এবং তার জায়গাটা পঞ্চম শিল্পবিপ্লব এসে পূরণ করতে শুরু করল। আমি মনে করি যে বাংলাদেশের জন্য এই যে বিশ্বব্যাপী রূপান্তরের জায়গা খুব ভালো করে উপলব্ধি করা দরকার। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এটি জামান ভাই বলেছে আমরা যদি শুধু রোবট ব্যবহারকারী হই তাহলে আমাদের জন্য খবর আছে।

কারণ, রোবট ব্যবহার করলে আমার যে জনসংখ্যা আছে আমার যে মানবসম্পদ আছে এই মানবসম্পদকে কি করব এটা আমি খুঁজে বের করতে পারব না। বরং আমি রোবট ব্যবহারকারী হব আমার যেখানে দরকার সেখানে? অন্যদিকে আমি রোবট বানিয়ে ওদের সাপ্লাই করব। আমাদের এখানে রোবট দরকার আছে। তবে মানুষের বিকল্প হিসেবে নয়। আমার স্পষ্ট মনে আছে এটুআইয়ের একটা প্রজেক্টে বিচারক ছিলাম আমি। সেখানে বগুড়ার ক্লাস সেভেনে পড়া একটা ছেলেকে পাই। ওর নাম আজমাইল আকমল। এই ছেলেটা আমাকে একটা প্রকল্প দেখাল : সে নিজে একটা রোবট বানিয়েছে। আমি দেখে বললাম যে বাবা তোমার এই রোবট কি কাজ করবে। ওই সময়কালে খিলগাঁওতে একটা বাচ্চা একটা পাইপের ভেতরে পড়ে গিয়েছিল। ওটার ভেতর মানুষ ঢুকতে পারে না বলে বাচ্চাটা ওই পাইপের ভেতরে মারা গেল। ও বলল আমার রোবট দরকার বাচ্চাটাকে উদ্ধার করতে। সে পাইপের ভেতর ঢুকবে ও বাচ্চাটাকে উদ্ধার করবে। প্র্যাকটিক্যালি এটিই হচ্ছে মানবিক চিন্তা।

আমার সেখানে রোবট দরকার, যেখানে আমার মানুষ কাজ করতে পারবে না। রোবট মানুষকে সহায়তা করবে। মানুষের যে জায়গাতে যতটুকু সহায়তা করা দরকার, ততটুতু সহায়তাই যেন সে করতে পারে। অতএব সেই দিক থেকে আমি মনে করি আমাদের ফোর্থ বা ফিফথ ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভল্যুশন নিয়ে যখন কথা বলব তখন আমাদের এটাও বলতে হবে যে হ্যাঁ যন্ত্র আমার দরকার। কিন্তু একে মানবিক যন্ত্র হিসেবে আমাদের গড়ে তুলতে হবে। অতএব আমি মনে করি যে আমরা আজকে যে আলোচনাটা করছি তাতে পুরো প্রেক্ষিতটিকেই তুলে ধরতে পারলাম।

[লেখক : তথ্যপ্রযুক্তিবিদ, কলামিস্ট, দেশের প্রথম ডিজিটাল নিউজ সার্ভিস আবাসের চেয়ারম্যান- সাংবাদিক, বিজয় কি-বোর্ড ও সফটওয়্যার এবং বিজয় ডিজিটাল শিক্ষা সফটওয়্যারের উদ্ভাবক, ডিজিটাল প্রযুক্তির অনেক ট্রেডমার্ক, প্যাটেন্ট ও কপিরাইটের স্বত্বাধিকারী]

back to top