alt

উপ-সম্পাদকীয়

মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের আচরণ প্রসঙ্গে

এম এ কবীর

: বৃহস্পতিবার, ০৬ অক্টোবর ২০২২

গত দশ বছরে প্রশাসনের প্রায় তিন হাজার কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতি, নারীঘটিত সমস্যাসহ বিভিন্ন অভিযোগ জমা হয়েছে। অভিযোগে অন্তত পাঁচশর মতো বিভাগীয় মামলা দায়ের হলেও এগুলোতে একশর মতো কর্মকর্তাকে গুরুদন্ড কিংবা লঘুদন্ড দেয়া হয়েছে।

বান্দরবানের আলীকদম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মেহরুবা ইসলাম ফুটবল খেলার পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রতিযোগিতার ট্রফি ভেঙে তীব্র সমালোচনার জন্ম দেন, যে ঘটনার ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। বগুড়ায় ইউএনও সমর পালের বিরুদ্ধে উপজেলা প্রকৌশলী কার্যালয়ের নৈশপ্রহরী আলমগীর হোসেনকে মারধরের অভিযোগ উঠে। এর আগে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ মমিনুর রহমান বর্তমান সরকারকে আবারো ক্ষমতায় আনার জন্য সবার কাছে দোয়া চান, যার ভিডিও ভাইরাল হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।

এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে পটুয়াখালীর গলাচিপা, কক্সবাজারের টেকনাফ, ফরিদপুরের বোয়ালমারী ও নওগাঁর বদলগাছীসহ কয়েকটি স্থানে মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের আচরণে সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। তাদের এ ধরনের আচরণ ও ক্ষমতার অপব্যবহারের ঘটনা প্রায়ই ঘটছে।

গত বছরের আগস্টে লালমনিরহাটের আদিতমারীর ইউএনও মুনসুর উদ্দিনের বিরুদ্ধে স্থানীয় দুজনকে হুমকি-ধমকি দেয়ার অভিযোগ ওঠে। ব্যক্তি মালিকানাধীন জমিতে নালা তৈরিতে আপত্তি জানালে ইউএনও ‘থাপ্পড় দিয়ে দাঁত ফেলে দেয়ার’ কথা জানানোর পাশাপাশি জমি খাস করে ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ করে ভারতে পাঠিয়ে দেয়ার হুমকি দেন বলে জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ জমা পড়ে। পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার খারিজ্জমা ইসহাক মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে এসএসসি পরীক্ষার প্রথম দিনে ১৫ সেপ্টেম্বর পরীক্ষা শুরুর ৫ থেকে ৬ মিনিটের মধ্যে ৯ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়। জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইসমাইল রহমান তাদের বহিষ্কার করেন। এ ঘটনায় আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে। এতে ইসমাইল রহমানের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ, ৯ শিক্ষার্থীর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার, প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে ১০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার কথা বলা হয়।

গত জুলাই মাসে কক্সবাজারের এক সাংবাদিককে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করার অভিযোগ উঠে টেকনাফ উপজেলার ইউএনও মোহাম্মদ কায়সারের বিরুদ্ধে। তীব্র সমালোচনার মুখে অবশেষে তাকে প্রত্যাহার করে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা করা হয়। এর আগে গত বছরের মে মাসে নারায়ণগঞ্জে ৩৩৩ নম্বরে ফোন করে সরকারি ত্রাণ চেয়ে সহযোগিতা চান এক ব্যক্তি। ফোন পেয়ে ওই ব্যক্তির বাড়িতে ত্রাণ পৌঁছে দিতে যান উপজেলা প্রশাসনের লোকজন। দেখতে পান সহযোগিতা চাওয়া ওই ব্যক্তি চারতলা বাড়ির মালিক। তখন উপজেলা প্রশাসন ফরিদ আহমেদ নামের ওই ব্যক্তিকে শাস্তি হিসেবে ১০০ জনকে খাদ্যসহায়তা দেয়ার শাস্তি দেন। পরে জানা যায়, শাস্তির মুখে পড়া ফরিদ আহমেদ চারতলা বাড়ির পুরো মালিক নন। চারতলা বাড়ির মালিক ছয় ভাই ও এক বোন। তিনি বাড়ির মাত্র তিনটি কক্ষের মালিক। এ ঘটনায় নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ইউএনও আরিফা জহুরা সমালোচনার মুখে পড়েন।

আপত্তিকর ভিডিও প্রকাশের ঘটনায় জামালপুরের এক ডিসিকে শাস্তির মুখে পড়তে হয়েছিল। এছাড়া মধ্যরাতে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে সাংবাদিককে সাজা দেয়া ও ‘নির্যাতনের’ ঘটনায় কুড়িগ্রামের তৎকালীন ডিসি সুলতানা পারভীনসহ তৎকালীন জেলা প্রশাসনের কয়েক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়। অবশ্য পরে ডিসিকে অভিযোগের দায় থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়।

বিভিন্ন সময় দেশে জনপরিসরে প্রশাসনিক নির্বাহী বা আমলাদের আচরণ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা তৈরি হয়েছে। সংবাদমাধ্যমে কোনো কোনো ঘটনার খবর পরিবেশিত হওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে নাগরিক পরিসর থেকে শুরু করে রাজনৈতিক অঙ্গনেও তা আলোচনার বিষয় হয়ে উঠে। পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সরকারকে মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের ওপর অনেকাংশেই নির্ভর করতে হয়। মূলত সরকারের বিভিন্ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে তাদের ভূমিকাই থাকে মুখ্য। ফলে শাসন ব্যবস্থায় দেশের রাজনৈতিক নির্বাহীরা বেশি মাত্রায় প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের ওপর বা আমলাতন্ত্রের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছেন কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। কাছাকাছি সময়েই দেশে মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে স্থানীয় রাজনীতিকদের সংঘাত নিয়েও রাজনীতিবিদ ও আমলাদের মধ্যে দ্বিধাবিভক্তি দৃশ্যমান হয়েছে। এই বিভক্তি নিরসনে শীর্ষ পর্যায় থেকে হন্তক্ষেপ করতে হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন ঘটনায় সাধারণ জনগণের সঙ্গে স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তাদের আচরণকে অনেকে ঔপনিবেশিক বলেও অভিযোগ করেন। ১৯৭৫ সালের ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন- ‘সরকারি কর্মচারীদের বলি, মনে রেখো এটা স্বাধীন দেশ। এটা ব্রিটিশের কলোনি নয়। পাকিস্তানের কলোনি নয়। ঘুণে ধরা ইংরেজ আমলের, পাকিস্তানি আমলের যে শাসনব্যবস্থা তা চলতে পারে না।’ মূলত আমলাদের সাধারণের সঙ্গে ঔদ্ধত্য ও দুর্নীতিগ্রস্ততার কারণে তিনি এ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছিলেন।

বর্তমানে উপসচিবদের মধ্য থেকে ডিসি করা হয় এবং সিনিয়র সহকারী সচিবদের মধ্য থেকে ইউএনও করা হয়। সচিব থেকে শুরু করে সহকারী সচিব (মাঠ প্রশাসনে সহকারী কমিশনার) পর্যন্ত দেশে এখন প্রশাসনের কর্মকর্তা আছেন ৫ হাজার ৯৭৩ জন। মাঠ প্রশাসনের পদগুলোর মধ্যে জেলা প্রশাসক (ডিসি) এবং ইউএনওর পদটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদ। প্রতি উপজেলায় একজন ইউএনও থাকেন। দেশে উপজেলা আছে ৪৯২টি।

সরকারি কর্মকর্তারাই সময় ও প্রয়োজন অনুসারে তাদের চরিত্র এবং আচরণগত পরিবর্তন এনেছেন কালে কালে। অন্যদিকে জনপ্রশাসনের সব ক্যাডার সার্ভিসের মধ্যে প্রশাসন ক্যাডারের একাধিপত্য এবং অন্যান্য ক্যাডারের প্রতি বৈষম্যের বিষয়টি নিয়েও দীর্ঘদিন ধরে ক্ষোভ ও হতাশা রয়েছে। এমন অভিযোগ রয়েছে যে, প্রশাসনের ক্যাডাররা অন্য ক্যাডার যেমন- শিক্ষা, চিকিৎসা ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মূল্যায়নই করেন না। অবশ্য দীর্ঘ ৩৯ বছর পর প্রশাসনিক সংস্কারের মধ্য দিয়ে সব মন্ত্রণালয়ের অর্গানোগ্রাম হালনাগাদ করার প্রয়াস নিয়েছে সরকার; কিন্তু তার সুফল দৃশ্যমান নয়। যদিও আন্তঃক্যাডার তো বটেই, সেবা নিতে আসা সাধারণ জনগণ এবং জনপরিসরে আমলাদের বিশেষ করে স্থানীয় প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের আচরণ কী হবে, সে বিষয়ে দেশে-বিদেশে তারা প্রশিক্ষণ নিয়ে থাকেন। তবে এসব নেতিবাচক কর্মকান্ড নিয়ে সমালোচনা যেমন আছে তেমনই মাঠ প্রশাসনের অনেক কর্মকর্তার ভালো কাজ নিয়ে প্রশংসাও আছে। রাজশাহীর পবা উপজেলার তৎকালীন সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহাদত হোসেন (বর্তমানে উপসচিব) সেবা সহজ করতে চালু করেছিলেন ‘মাটির মায়া’। এ নিয়ে তখন এসি ল্যান্ডের ‘মাটির মায়া’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশের পর ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন তিনি।

আবার করোনাকালেও মাঠ প্রশাসনের অনেকে ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেছেন। ২০২০ সালের এপ্রিলে করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে মারা যান ঝিনাইদহ সদর উপজেলার এক ব্যক্তি। তখন ভয়ে কেউ এগিয়ে আসেননি। এমনকি জানাজা পড়ানোর মতো কাউকে পাওয়া যায়নি। তখন ঝিনাইদহ সদরের ইউএনও মো. বদরুদ্দোজা শুভ নিজেই তার সঙ্গে থাকা কয়েকজনকে নিয়ে জানাজার ব্যবস্থা করেন এবং ইমামতি করেন। এ নিয়ে তখন তিনি গণমাধ্যমের শিরোনাম হন। বাল্যবিবাহ ঠেকানোর স্বীকৃতি হিসেবে ফারাজ হোসেন সাহসিকতা পুরস্কার ২০১৯ পান নেত্রকোনার বারহাট্টা উপজেলার সাবেক ইউএনও ফরিদা ইয়াসমিন।

সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকার গাইবান্ধা-৫ (সাঘাটা-ফুলছড়ি) উপনির্বাচনে একটি রাজনৈতিক মতবিনিময় সভায় অংশ নেয়ায় প্রধান বিচারপতির কাছে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। বিচারপতির বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ আনা হয়। ২৯ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির বিএনপিপন্থি ৬ আইনজীবী নেতা এ অভিযোগ দাখিল করেন। প্রধান বিচারপতির ব্যক্তিগত সহকারী ?লিখিত অভিযোগটি গ্রহণ করেছেন।

প্রধান বিচারপতির কাছে দাখিল করা লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে- সুপ্রিম কোর্ট বাংলাদেশের মানুষের বিচার পাওয়ার সর্বশেষ আশ্রয়স্থল। ধর্ম, বর্ণ, দলমত নির্বিশেষে এদেশের সব মানুষ তাদের বিচার পাওয়ার আশায় এবং সাংবিধানিক সংকটে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়ে থাকেন। আদালত তার সততা, নিরপেক্ষতা, প্রজ্ঞা ও আইনের আলোকে দেশের মানুষের জন্য ন্যায় বিচার নিশ্চিত করে থাকেন। এ দেশের মানুষ এখনো এটাই বিশ^াস করে। একজন মাননীয় বিচারপতি যখন বিচারিক দায়িত্ব পালন করেন তখন তার ধর্মীয়, রাজনৈতিক বা অন্য সব পরিচয়ের ঊর্ধ্বে উঠে নিরপেক্ষ বিচার করে থাকেন।

আইনের আলোকে সুষ্ঠু বিচার করা যেমন জরুরি তেমনি সাধারণ মানুষের মধ্যে ন্যায় বিচার পাওয়া যাবে, নিরপেক্ষ বিচার পাওয়া যাবে, এই বিশ^াস থাকাটাও জরুরি। বিচার বিভাগের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা ও বিশ^াস ধরে রাখার আবশ্যকতায় সিভিল আপিল নং-০৬/২০১৭ বাংলাদেশ সরকার এবং অন্যান্য বনাম অ্যাভোকেট আসাদুজ্জামান সিদ্দিকী এবং অন্যান্য মামলায় বিচারপতিদের জন্য আচরনবিধি নির্ধারণ করে দেয়া হয়।

সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে, মিডিয়ায় ও ভিডিও থেকে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়- মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের মাননীয় বিচারপতি খুরশীদ আলম সরকার আসন্ন জাতীয় সংসদ উপনির্বাচনে গাইবান্ধা-৫ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর নির্বাচনী মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন। ওই মতবিনিময় সভায় স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা ও প্রার্থী উপস্থিত ছিলেন এবং মাইক হাতে মাননীয় বিচারপতি মহোদয়কে বক্তব্য দিতে দেখা গেছে। ওই মতবিনিময় সভায় উপস্থিত সংসদ সদস্য প্রার্থী মাননীয় বিচারপতি সাহেবকে তার স্থানীয় অভিভাবক হিসেবে উল্লেখ করেছেন। ওই সভাকে রাজনৈতিক দলের মতবিনিময় সভা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। একটি রাজনৈতিক দলের মতবিনিময় সভায় উপস্থিত হয়ে তিনি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ কর্তৃক নির্ধারিত নিম্নলিখিত আচরণ বিধি ভঙ্গ করেছেন।

(15) ÔA Judge should not engage in any political activities whatsoever in the country and abroadÕ

(21) ÔA Judge shall not enter into public debate or express his views in public on political matters or on matters that are pending or are likely to arise for judicial determinationÕ.

আমরা সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি মনে করি ওই ঘটনার মাধ্যমে বিচারপতি খুরশীদ আলম সরকার সুপ্রিম কোর্টের বিচারক হিসেবে আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন এবং সুপ্রিম কোর্টের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছেন। তাই এ বিষয়ে আমরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির কোষাধ্যক্ষ মোহাম্মদ কামাল হোসেন, সিনিয়র সহ-সম্পাদক মাহফুজ বিন ইউসুফ, সহ-সম্পাদক মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান খান, কার্যনির্বাহী সদস্য গোলাম আকতার জাকির, মনজুরুল আলম সুজন ও কামরুল ইসলাম চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন। তারা বিএনপি সমর্থিত নীল প্যানেল থেকে নির্বাচিত। ‘নির্বাচনী সভায় বিচারপতি : প্রধান বিচারপতির কাছে অভিযোগ’ শিরোনামে ওই সংবাদটি দৈনিক সমকালসহ দেশের প্রায় সব সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ করা হয়েছে।

নাগরিকদের সঙ্গে যে কোনো অসদাচরণ শাস্তিযোগ্য হবে এমন একটি বিধি আছে ২০১৮ সালের সরকারি কর্মচারী বিধিমালায়। যেখানে অসদাচরণ বলতে অসঙ্গত আচরণ, চাকরি শৃঙ্খলা হানিকর আচরণ কিংবা শিষ্টাচারবহির্ভূত আচরণকে বোঝানো হয়েছে। এ আচরণবিধি এবং চাকরিবিধি সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ নিয়েই কর্মকর্তারা চাকরিতে যোগ দিয়ে থাকেন।

[লেখক : ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক; সভাপতি, ঝিনাইদহ জেলা রিপোর্টার্স ইউনিটি]

টেকসই কৃষিতে নবায়নযোগ্য জ্বালানির সম্ভাবনা

ছবি

জয়নুলের সাঁওতাল দম্পতি এবং সুমনের সৌন্দর্যপ্রিয়তা

এরপরও কি গাছ লাগাবেন না, বন রক্ষা করবেন না?

বিশ্ব ধরিত্রী দিবস

সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মিছিলের শেষ কোথায়

খুব জানতে ইচ্ছে করে

কোন দিকে মোড় নিচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের সংকট?

কৃষিগুচ্ছ : ভর্তির আবেদনের নূ্যূনতম যোগ্যতা ও ফলাফল প্রস্তুতিতে বৈষম্য

ছবি

গণপরিবহনে নৈরাজ্যের শেষ কোথায়

ছাত্র রাজনীতি : পক্ষে-বিপক্ষে

ছবি

বি আর আম্বেদকর : নিম্নবর্গের মানুষের প্রতিনিধি

চেকের মামলায় আসামির মুক্তির পথ কী

রাম-নবমী : হিন্দুত্বের নয়া গবেষণাগার

‘একটি গ্রাম একটি পণ্য’ উদ্যোগ কি সফল হবে

কিশোর গ্যাং : সমস্যার মূলে যেতে হবে

গীতি চলচ্চিত্র ‘কাজল রেখা’ : সুস্থধারার চলচ্চিত্র বিকাশ ঘটুক

ছবি

ঋতুভিত্তিক চিরায়ত বাঙালি সংস্কৃতি

ছবি

স্মরণ : কাঙ্গাল হরিনাথ মজুমদার

ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস

দাবদাহে সুস্থ থাকবেন কীভাবে

কত দিন পরে এলে, একটু শোনো

রম্যগদ্য : আনন্দ, দ্বিগুণ আনন্দ...

ছবি

ইতিহাসের এক অবিস্মরণীয় নাম

বৈসাবি : ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বর্ষবরণ উৎসব

‘ইন্ডিয়া আউট’ ক্যাম্পেইন

উদার-উদ্দাম বৈশাখ চাই

ঈদ নিয়ে আসুক শান্তি ও সমৃদ্ধি, বিস্তৃত হোক সম্প্রীতি ও সৌহার্দ

প্রসঙ্গ: বিদেশি ঋণ

ছাত্ররাজনীতি কি খারাপ?

জাকাত : বিশ্বের প্রথম সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা

বাংলাদেশ স্কাউটস দিবস : শুরুর কথা

ছবি

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত

প্রবাসীর ঈদ-ভাবনা

বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস

ধানের ফলন বাড়াতে ক্লাইমেট স্মার্ট গুটি ইউরিয়া প্রযুক্তি

কমিশন কিংবা ভিজিটে জমি রেজিস্ট্রির আইনি বিধান ও প্রাসঙ্গিকতা

tab

উপ-সম্পাদকীয়

মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের আচরণ প্রসঙ্গে

এম এ কবীর

বৃহস্পতিবার, ০৬ অক্টোবর ২০২২

গত দশ বছরে প্রশাসনের প্রায় তিন হাজার কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতি, নারীঘটিত সমস্যাসহ বিভিন্ন অভিযোগ জমা হয়েছে। অভিযোগে অন্তত পাঁচশর মতো বিভাগীয় মামলা দায়ের হলেও এগুলোতে একশর মতো কর্মকর্তাকে গুরুদন্ড কিংবা লঘুদন্ড দেয়া হয়েছে।

বান্দরবানের আলীকদম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মেহরুবা ইসলাম ফুটবল খেলার পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রতিযোগিতার ট্রফি ভেঙে তীব্র সমালোচনার জন্ম দেন, যে ঘটনার ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। বগুড়ায় ইউএনও সমর পালের বিরুদ্ধে উপজেলা প্রকৌশলী কার্যালয়ের নৈশপ্রহরী আলমগীর হোসেনকে মারধরের অভিযোগ উঠে। এর আগে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ মমিনুর রহমান বর্তমান সরকারকে আবারো ক্ষমতায় আনার জন্য সবার কাছে দোয়া চান, যার ভিডিও ভাইরাল হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।

এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে পটুয়াখালীর গলাচিপা, কক্সবাজারের টেকনাফ, ফরিদপুরের বোয়ালমারী ও নওগাঁর বদলগাছীসহ কয়েকটি স্থানে মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের আচরণে সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। তাদের এ ধরনের আচরণ ও ক্ষমতার অপব্যবহারের ঘটনা প্রায়ই ঘটছে।

গত বছরের আগস্টে লালমনিরহাটের আদিতমারীর ইউএনও মুনসুর উদ্দিনের বিরুদ্ধে স্থানীয় দুজনকে হুমকি-ধমকি দেয়ার অভিযোগ ওঠে। ব্যক্তি মালিকানাধীন জমিতে নালা তৈরিতে আপত্তি জানালে ইউএনও ‘থাপ্পড় দিয়ে দাঁত ফেলে দেয়ার’ কথা জানানোর পাশাপাশি জমি খাস করে ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ করে ভারতে পাঠিয়ে দেয়ার হুমকি দেন বলে জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ জমা পড়ে। পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার খারিজ্জমা ইসহাক মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে এসএসসি পরীক্ষার প্রথম দিনে ১৫ সেপ্টেম্বর পরীক্ষা শুরুর ৫ থেকে ৬ মিনিটের মধ্যে ৯ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়। জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইসমাইল রহমান তাদের বহিষ্কার করেন। এ ঘটনায় আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে। এতে ইসমাইল রহমানের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ, ৯ শিক্ষার্থীর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার, প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে ১০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার কথা বলা হয়।

গত জুলাই মাসে কক্সবাজারের এক সাংবাদিককে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করার অভিযোগ উঠে টেকনাফ উপজেলার ইউএনও মোহাম্মদ কায়সারের বিরুদ্ধে। তীব্র সমালোচনার মুখে অবশেষে তাকে প্রত্যাহার করে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা করা হয়। এর আগে গত বছরের মে মাসে নারায়ণগঞ্জে ৩৩৩ নম্বরে ফোন করে সরকারি ত্রাণ চেয়ে সহযোগিতা চান এক ব্যক্তি। ফোন পেয়ে ওই ব্যক্তির বাড়িতে ত্রাণ পৌঁছে দিতে যান উপজেলা প্রশাসনের লোকজন। দেখতে পান সহযোগিতা চাওয়া ওই ব্যক্তি চারতলা বাড়ির মালিক। তখন উপজেলা প্রশাসন ফরিদ আহমেদ নামের ওই ব্যক্তিকে শাস্তি হিসেবে ১০০ জনকে খাদ্যসহায়তা দেয়ার শাস্তি দেন। পরে জানা যায়, শাস্তির মুখে পড়া ফরিদ আহমেদ চারতলা বাড়ির পুরো মালিক নন। চারতলা বাড়ির মালিক ছয় ভাই ও এক বোন। তিনি বাড়ির মাত্র তিনটি কক্ষের মালিক। এ ঘটনায় নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ইউএনও আরিফা জহুরা সমালোচনার মুখে পড়েন।

আপত্তিকর ভিডিও প্রকাশের ঘটনায় জামালপুরের এক ডিসিকে শাস্তির মুখে পড়তে হয়েছিল। এছাড়া মধ্যরাতে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে সাংবাদিককে সাজা দেয়া ও ‘নির্যাতনের’ ঘটনায় কুড়িগ্রামের তৎকালীন ডিসি সুলতানা পারভীনসহ তৎকালীন জেলা প্রশাসনের কয়েক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়। অবশ্য পরে ডিসিকে অভিযোগের দায় থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়।

বিভিন্ন সময় দেশে জনপরিসরে প্রশাসনিক নির্বাহী বা আমলাদের আচরণ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা তৈরি হয়েছে। সংবাদমাধ্যমে কোনো কোনো ঘটনার খবর পরিবেশিত হওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে নাগরিক পরিসর থেকে শুরু করে রাজনৈতিক অঙ্গনেও তা আলোচনার বিষয় হয়ে উঠে। পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সরকারকে মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের ওপর অনেকাংশেই নির্ভর করতে হয়। মূলত সরকারের বিভিন্ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে তাদের ভূমিকাই থাকে মুখ্য। ফলে শাসন ব্যবস্থায় দেশের রাজনৈতিক নির্বাহীরা বেশি মাত্রায় প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের ওপর বা আমলাতন্ত্রের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছেন কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। কাছাকাছি সময়েই দেশে মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে স্থানীয় রাজনীতিকদের সংঘাত নিয়েও রাজনীতিবিদ ও আমলাদের মধ্যে দ্বিধাবিভক্তি দৃশ্যমান হয়েছে। এই বিভক্তি নিরসনে শীর্ষ পর্যায় থেকে হন্তক্ষেপ করতে হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন ঘটনায় সাধারণ জনগণের সঙ্গে স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তাদের আচরণকে অনেকে ঔপনিবেশিক বলেও অভিযোগ করেন। ১৯৭৫ সালের ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন- ‘সরকারি কর্মচারীদের বলি, মনে রেখো এটা স্বাধীন দেশ। এটা ব্রিটিশের কলোনি নয়। পাকিস্তানের কলোনি নয়। ঘুণে ধরা ইংরেজ আমলের, পাকিস্তানি আমলের যে শাসনব্যবস্থা তা চলতে পারে না।’ মূলত আমলাদের সাধারণের সঙ্গে ঔদ্ধত্য ও দুর্নীতিগ্রস্ততার কারণে তিনি এ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছিলেন।

বর্তমানে উপসচিবদের মধ্য থেকে ডিসি করা হয় এবং সিনিয়র সহকারী সচিবদের মধ্য থেকে ইউএনও করা হয়। সচিব থেকে শুরু করে সহকারী সচিব (মাঠ প্রশাসনে সহকারী কমিশনার) পর্যন্ত দেশে এখন প্রশাসনের কর্মকর্তা আছেন ৫ হাজার ৯৭৩ জন। মাঠ প্রশাসনের পদগুলোর মধ্যে জেলা প্রশাসক (ডিসি) এবং ইউএনওর পদটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদ। প্রতি উপজেলায় একজন ইউএনও থাকেন। দেশে উপজেলা আছে ৪৯২টি।

সরকারি কর্মকর্তারাই সময় ও প্রয়োজন অনুসারে তাদের চরিত্র এবং আচরণগত পরিবর্তন এনেছেন কালে কালে। অন্যদিকে জনপ্রশাসনের সব ক্যাডার সার্ভিসের মধ্যে প্রশাসন ক্যাডারের একাধিপত্য এবং অন্যান্য ক্যাডারের প্রতি বৈষম্যের বিষয়টি নিয়েও দীর্ঘদিন ধরে ক্ষোভ ও হতাশা রয়েছে। এমন অভিযোগ রয়েছে যে, প্রশাসনের ক্যাডাররা অন্য ক্যাডার যেমন- শিক্ষা, চিকিৎসা ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মূল্যায়নই করেন না। অবশ্য দীর্ঘ ৩৯ বছর পর প্রশাসনিক সংস্কারের মধ্য দিয়ে সব মন্ত্রণালয়ের অর্গানোগ্রাম হালনাগাদ করার প্রয়াস নিয়েছে সরকার; কিন্তু তার সুফল দৃশ্যমান নয়। যদিও আন্তঃক্যাডার তো বটেই, সেবা নিতে আসা সাধারণ জনগণ এবং জনপরিসরে আমলাদের বিশেষ করে স্থানীয় প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের আচরণ কী হবে, সে বিষয়ে দেশে-বিদেশে তারা প্রশিক্ষণ নিয়ে থাকেন। তবে এসব নেতিবাচক কর্মকান্ড নিয়ে সমালোচনা যেমন আছে তেমনই মাঠ প্রশাসনের অনেক কর্মকর্তার ভালো কাজ নিয়ে প্রশংসাও আছে। রাজশাহীর পবা উপজেলার তৎকালীন সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহাদত হোসেন (বর্তমানে উপসচিব) সেবা সহজ করতে চালু করেছিলেন ‘মাটির মায়া’। এ নিয়ে তখন এসি ল্যান্ডের ‘মাটির মায়া’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশের পর ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন তিনি।

আবার করোনাকালেও মাঠ প্রশাসনের অনেকে ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেছেন। ২০২০ সালের এপ্রিলে করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে মারা যান ঝিনাইদহ সদর উপজেলার এক ব্যক্তি। তখন ভয়ে কেউ এগিয়ে আসেননি। এমনকি জানাজা পড়ানোর মতো কাউকে পাওয়া যায়নি। তখন ঝিনাইদহ সদরের ইউএনও মো. বদরুদ্দোজা শুভ নিজেই তার সঙ্গে থাকা কয়েকজনকে নিয়ে জানাজার ব্যবস্থা করেন এবং ইমামতি করেন। এ নিয়ে তখন তিনি গণমাধ্যমের শিরোনাম হন। বাল্যবিবাহ ঠেকানোর স্বীকৃতি হিসেবে ফারাজ হোসেন সাহসিকতা পুরস্কার ২০১৯ পান নেত্রকোনার বারহাট্টা উপজেলার সাবেক ইউএনও ফরিদা ইয়াসমিন।

সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকার গাইবান্ধা-৫ (সাঘাটা-ফুলছড়ি) উপনির্বাচনে একটি রাজনৈতিক মতবিনিময় সভায় অংশ নেয়ায় প্রধান বিচারপতির কাছে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। বিচারপতির বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ আনা হয়। ২৯ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির বিএনপিপন্থি ৬ আইনজীবী নেতা এ অভিযোগ দাখিল করেন। প্রধান বিচারপতির ব্যক্তিগত সহকারী ?লিখিত অভিযোগটি গ্রহণ করেছেন।

প্রধান বিচারপতির কাছে দাখিল করা লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে- সুপ্রিম কোর্ট বাংলাদেশের মানুষের বিচার পাওয়ার সর্বশেষ আশ্রয়স্থল। ধর্ম, বর্ণ, দলমত নির্বিশেষে এদেশের সব মানুষ তাদের বিচার পাওয়ার আশায় এবং সাংবিধানিক সংকটে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়ে থাকেন। আদালত তার সততা, নিরপেক্ষতা, প্রজ্ঞা ও আইনের আলোকে দেশের মানুষের জন্য ন্যায় বিচার নিশ্চিত করে থাকেন। এ দেশের মানুষ এখনো এটাই বিশ^াস করে। একজন মাননীয় বিচারপতি যখন বিচারিক দায়িত্ব পালন করেন তখন তার ধর্মীয়, রাজনৈতিক বা অন্য সব পরিচয়ের ঊর্ধ্বে উঠে নিরপেক্ষ বিচার করে থাকেন।

আইনের আলোকে সুষ্ঠু বিচার করা যেমন জরুরি তেমনি সাধারণ মানুষের মধ্যে ন্যায় বিচার পাওয়া যাবে, নিরপেক্ষ বিচার পাওয়া যাবে, এই বিশ^াস থাকাটাও জরুরি। বিচার বিভাগের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা ও বিশ^াস ধরে রাখার আবশ্যকতায় সিভিল আপিল নং-০৬/২০১৭ বাংলাদেশ সরকার এবং অন্যান্য বনাম অ্যাভোকেট আসাদুজ্জামান সিদ্দিকী এবং অন্যান্য মামলায় বিচারপতিদের জন্য আচরনবিধি নির্ধারণ করে দেয়া হয়।

সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে, মিডিয়ায় ও ভিডিও থেকে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়- মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের মাননীয় বিচারপতি খুরশীদ আলম সরকার আসন্ন জাতীয় সংসদ উপনির্বাচনে গাইবান্ধা-৫ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর নির্বাচনী মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন। ওই মতবিনিময় সভায় স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা ও প্রার্থী উপস্থিত ছিলেন এবং মাইক হাতে মাননীয় বিচারপতি মহোদয়কে বক্তব্য দিতে দেখা গেছে। ওই মতবিনিময় সভায় উপস্থিত সংসদ সদস্য প্রার্থী মাননীয় বিচারপতি সাহেবকে তার স্থানীয় অভিভাবক হিসেবে উল্লেখ করেছেন। ওই সভাকে রাজনৈতিক দলের মতবিনিময় সভা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। একটি রাজনৈতিক দলের মতবিনিময় সভায় উপস্থিত হয়ে তিনি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ কর্তৃক নির্ধারিত নিম্নলিখিত আচরণ বিধি ভঙ্গ করেছেন।

(15) ÔA Judge should not engage in any political activities whatsoever in the country and abroadÕ

(21) ÔA Judge shall not enter into public debate or express his views in public on political matters or on matters that are pending or are likely to arise for judicial determinationÕ.

আমরা সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি মনে করি ওই ঘটনার মাধ্যমে বিচারপতি খুরশীদ আলম সরকার সুপ্রিম কোর্টের বিচারক হিসেবে আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন এবং সুপ্রিম কোর্টের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছেন। তাই এ বিষয়ে আমরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির কোষাধ্যক্ষ মোহাম্মদ কামাল হোসেন, সিনিয়র সহ-সম্পাদক মাহফুজ বিন ইউসুফ, সহ-সম্পাদক মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান খান, কার্যনির্বাহী সদস্য গোলাম আকতার জাকির, মনজুরুল আলম সুজন ও কামরুল ইসলাম চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন। তারা বিএনপি সমর্থিত নীল প্যানেল থেকে নির্বাচিত। ‘নির্বাচনী সভায় বিচারপতি : প্রধান বিচারপতির কাছে অভিযোগ’ শিরোনামে ওই সংবাদটি দৈনিক সমকালসহ দেশের প্রায় সব সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ করা হয়েছে।

নাগরিকদের সঙ্গে যে কোনো অসদাচরণ শাস্তিযোগ্য হবে এমন একটি বিধি আছে ২০১৮ সালের সরকারি কর্মচারী বিধিমালায়। যেখানে অসদাচরণ বলতে অসঙ্গত আচরণ, চাকরি শৃঙ্খলা হানিকর আচরণ কিংবা শিষ্টাচারবহির্ভূত আচরণকে বোঝানো হয়েছে। এ আচরণবিধি এবং চাকরিবিধি সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ নিয়েই কর্মকর্তারা চাকরিতে যোগ দিয়ে থাকেন।

[লেখক : ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক; সভাপতি, ঝিনাইদহ জেলা রিপোর্টার্স ইউনিটি]

back to top