এস ডি সুব্রত
কোটি কোটি দর্শকের আবেগ, উচ্ছ্বাস আর উন্মাদনা নিয়ে মরুর দেশ কাতারে শুরু হয়েছে বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনের মহাউৎসব বিশ্বকাপ ফুটবল। খেলা হচ্ছে কাতারের পাঁচটি শহরের ৮টি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত স্টেডিয়ামে। সব কটি স্টেডিয়ামই কাতারের রাজধানী দোহার কেন্দ্রস্থলের ৩৫ কিলোমিটারের মধ্যে। অন্যরকম এক অভিজ্ঞতাই উপহার দিচ্ছে কাতার বিশ্বকাপ। কেউ চাইলেই একদিনে একাধিক স্টেডিয়ামে একাধিক খেলা দেখতে পারবেন। এ এক অন্যরকম সুযোগ ফুটবল ভক্তদের জন্য। ফুটবলের জনপ্রিয়তা আগে যেমন ছিল এখনও তেমনটিই আছে। কমেনি কোনভাবেই। এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায় বর্তমান বিশ্বে ফুটবল সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয় খেলা। আধুনিক সভ্যতার অপরিহার্য একটি অঙ্গ হলো খেলাধুলা। খেলাধুলা সৃজনশীলতার অন্যতম একটি মাধ্যম। শরীরকে সুস্থ রাখা এবং আনন্দ পাওয়ার মাধ্যম হিসেবে খেলাধুলার জন্ম। এর মধ্যে ফুটবল একটি মাধ্যম। বায়ুভর্তি একটি চামড়ার গোলক, দুই দল খেলোয়াড় এবং সবুজ মাঠ যে কী সাংঘাতিক উন্মাদনা ঘটাতে পারে সেটা ফুটবল দুনিয়ার দিকে তাকালেই সহজেই আন্দাজ করা যায়।
নব্বই মিনিটের রুদ্ধশ্বাস খেলাটির মধ্যে আবেগ, উচ্ছ্বাস, নান্দনিকতা, নাটকীয়তা, শিল্প, হিংস্রতা, রাগ, ক্ষোভ, ভালোবাসা, হাসি-কান্না, টাকা, রাজনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য সবকিছু এমন মিলেমিশে আছে যে অবাক না হয়ে পারা যায় না। কোটি কোটি মানুষের আনন্দ, উল্লাস, উত্তেজনা ফুটবলকে ঘিরে। পেলে থেকে ম্যারাডোনা, রোনাল্ডো, রোনালদিনহো আর মেসি, নেইমার, সুয়ারেজ বিশ্বব্যাপী যাদের নাম জড়িয়ে আছে ফুটবলের সঙ্গে। ফুটবল মানে একটা সবুজ মাঠ, একটাই বল। খেলোয়াড়দের মধ্যে পার্থক্য করে দেয় শুধু পরিশ্রম আর প্রতিভা। ফুটবল এমন একটা জায়গা যেখানে জাতি-ধর্ম-সামাজিক অবস্থান নির্বিশেষে সবাইকে স্বাগত জানানো হয়। এ কারণেই বোধ হয় সারাবিশ্বের সর্বাধিক জনপ্রিয় খেলা ফুটবল। বিশ্ব ফুটবলে যেমন আর্জেন্টিনা ব্রাজিল তেমনভাবে দেশীয় ফুটবলে আবাহনী ও মোহামেডান। সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বকাপে স্পেন, জার্মান, ফ্রান্স, ক্যামেরুন, জাপান, পর্তুগাল, দারুণ নৈপুণ্য দেখাচ্ছে। আমাদের বাংলাদেশে ফুটবল খেলা চলছে প্রায় একশ বছর ধরে। এই খেলা ঘিরে উৎসাহ উদ্দীপনার স্রোত বয়ে চলেছে কালের স্রোতে। এই ফুটবল আমাদের যেমন আনন্দে আপ্লুত করেছে , আবার জীবনের আর পাঁচটা ক্ষেত্রের পরাজয় ভোলাতে, ব্যর্থতার গ্লানি ঢাকতে সাহায্য করেছে। অন্যদিকে আনন্দ-যন্ত্রণা, আশা-নিরাশার আলো-আঁধারিকে কেন্দ্র করে এই ফুটবল নিয়ে কত মজার ও বেদনাদায়ক ঘটনা ঘটছে। অতি আবেগের কারণে ফুটবলপ্রেমীদের মধ্যে ঘটছে নানা অপ্রীতিকর ঘটনা।
আবেগের আতিশয্যে প্রায়ই বিনোদন থেকে দূরে সরে যায় এবং মারামারিতে লিপ্ত হয়। ফুটবল নিয়ে হচ্ছে জুয়া, বাজি। আবেগের কারণে তুমুল জনপ্রিয় এই খেলা হয়ে ওঠে বেদনাদায়ক। খেলায় হার-জিত থাকবেই। এ সত্যটি মেনে নিয়ে দলের সাপোর্ট করলে অসুন্দর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে না আমাদের। স্যাটেলাইট টিভির কল্যাণে আমরা বর্তমানে বিদেশি ফুটবলের উন্নত নান্দনিক ক্রীড়াশৈলী দেখে বিস্মিত, উত্তেজিত। আর সেইসঙ্গে আমাদের ফুটবল দৈন্য দেখে আফসোসের সীমা নেই। আমাদের ফুটবল আজও কত পেছনে পড়ে আছে তা ভাবলে ভীষণভাবে বেদনাহত হই। বর্তমান বিশ্ব প্রতিযোগিতার বিশ্ব। উৎকর্ষতার যুগ।
টিকে থাকতে হলে পরিবর্তনের পথে হাঁটতে হবে। আমাদের ফুটবলকে কেমন করে আনা যাবে আলোকিত গৌরবে তা ভাবতে হবে। খেলোয়াড়, অনুশীলন, আস্থা, উদ্যম, ব্যবস্থাপনা, সংগঠক, পরিচালক, প্রশিক্ষণ কোথায় আমাদের ত্রুটি তা খুঁজে বের করতে হবে। প্রতিভাবান খেলোয়াড় খুঁজে বের করায় মনোযোগী না হলে এ হতাশা চিরস্থায়ী হবে।
ফুটবলের মাঠে যত মারামারি খুনোখুনি হয়, এমনটি আর কোন খেলায় হয় না। এই অবস্থা থেকেও বেরিয়ে আসতে হবে আমাদের। এবারের কাতার বিশ্বকাপে ঘটছে নানা অঘটন। সৌদি ঝড়ে কুপোকাত হয়েছে ফুটবল জায়ান্ট আর্জেন্টিনা। জাপানের কাছে ধরাশায়ী হয়েছে গতিময় ফুটবলের দেশ জার্মান। আরো হয়তো নানা অঘটন ঘটবে। সব অঘটন ছাপিয়ে বিশ্বকাপ ফুটবল আনন্দে বুঁদ হয়ে থাকবে ফুটবল ভক্তরা। বিশ্বকাপ ফুটবল হয়ে উঠুক বিশ্বশান্তির প্রতীক। সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির হয়ে উঠুক বিশ্বকাপ ফুটবল।
[লেখক: প্রাবন্ধিক]
এস ডি সুব্রত
বুধবার, ৩০ নভেম্বর ২০২২
কোটি কোটি দর্শকের আবেগ, উচ্ছ্বাস আর উন্মাদনা নিয়ে মরুর দেশ কাতারে শুরু হয়েছে বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনের মহাউৎসব বিশ্বকাপ ফুটবল। খেলা হচ্ছে কাতারের পাঁচটি শহরের ৮টি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত স্টেডিয়ামে। সব কটি স্টেডিয়ামই কাতারের রাজধানী দোহার কেন্দ্রস্থলের ৩৫ কিলোমিটারের মধ্যে। অন্যরকম এক অভিজ্ঞতাই উপহার দিচ্ছে কাতার বিশ্বকাপ। কেউ চাইলেই একদিনে একাধিক স্টেডিয়ামে একাধিক খেলা দেখতে পারবেন। এ এক অন্যরকম সুযোগ ফুটবল ভক্তদের জন্য। ফুটবলের জনপ্রিয়তা আগে যেমন ছিল এখনও তেমনটিই আছে। কমেনি কোনভাবেই। এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায় বর্তমান বিশ্বে ফুটবল সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয় খেলা। আধুনিক সভ্যতার অপরিহার্য একটি অঙ্গ হলো খেলাধুলা। খেলাধুলা সৃজনশীলতার অন্যতম একটি মাধ্যম। শরীরকে সুস্থ রাখা এবং আনন্দ পাওয়ার মাধ্যম হিসেবে খেলাধুলার জন্ম। এর মধ্যে ফুটবল একটি মাধ্যম। বায়ুভর্তি একটি চামড়ার গোলক, দুই দল খেলোয়াড় এবং সবুজ মাঠ যে কী সাংঘাতিক উন্মাদনা ঘটাতে পারে সেটা ফুটবল দুনিয়ার দিকে তাকালেই সহজেই আন্দাজ করা যায়।
নব্বই মিনিটের রুদ্ধশ্বাস খেলাটির মধ্যে আবেগ, উচ্ছ্বাস, নান্দনিকতা, নাটকীয়তা, শিল্প, হিংস্রতা, রাগ, ক্ষোভ, ভালোবাসা, হাসি-কান্না, টাকা, রাজনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য সবকিছু এমন মিলেমিশে আছে যে অবাক না হয়ে পারা যায় না। কোটি কোটি মানুষের আনন্দ, উল্লাস, উত্তেজনা ফুটবলকে ঘিরে। পেলে থেকে ম্যারাডোনা, রোনাল্ডো, রোনালদিনহো আর মেসি, নেইমার, সুয়ারেজ বিশ্বব্যাপী যাদের নাম জড়িয়ে আছে ফুটবলের সঙ্গে। ফুটবল মানে একটা সবুজ মাঠ, একটাই বল। খেলোয়াড়দের মধ্যে পার্থক্য করে দেয় শুধু পরিশ্রম আর প্রতিভা। ফুটবল এমন একটা জায়গা যেখানে জাতি-ধর্ম-সামাজিক অবস্থান নির্বিশেষে সবাইকে স্বাগত জানানো হয়। এ কারণেই বোধ হয় সারাবিশ্বের সর্বাধিক জনপ্রিয় খেলা ফুটবল। বিশ্ব ফুটবলে যেমন আর্জেন্টিনা ব্রাজিল তেমনভাবে দেশীয় ফুটবলে আবাহনী ও মোহামেডান। সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বকাপে স্পেন, জার্মান, ফ্রান্স, ক্যামেরুন, জাপান, পর্তুগাল, দারুণ নৈপুণ্য দেখাচ্ছে। আমাদের বাংলাদেশে ফুটবল খেলা চলছে প্রায় একশ বছর ধরে। এই খেলা ঘিরে উৎসাহ উদ্দীপনার স্রোত বয়ে চলেছে কালের স্রোতে। এই ফুটবল আমাদের যেমন আনন্দে আপ্লুত করেছে , আবার জীবনের আর পাঁচটা ক্ষেত্রের পরাজয় ভোলাতে, ব্যর্থতার গ্লানি ঢাকতে সাহায্য করেছে। অন্যদিকে আনন্দ-যন্ত্রণা, আশা-নিরাশার আলো-আঁধারিকে কেন্দ্র করে এই ফুটবল নিয়ে কত মজার ও বেদনাদায়ক ঘটনা ঘটছে। অতি আবেগের কারণে ফুটবলপ্রেমীদের মধ্যে ঘটছে নানা অপ্রীতিকর ঘটনা।
আবেগের আতিশয্যে প্রায়ই বিনোদন থেকে দূরে সরে যায় এবং মারামারিতে লিপ্ত হয়। ফুটবল নিয়ে হচ্ছে জুয়া, বাজি। আবেগের কারণে তুমুল জনপ্রিয় এই খেলা হয়ে ওঠে বেদনাদায়ক। খেলায় হার-জিত থাকবেই। এ সত্যটি মেনে নিয়ে দলের সাপোর্ট করলে অসুন্দর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে না আমাদের। স্যাটেলাইট টিভির কল্যাণে আমরা বর্তমানে বিদেশি ফুটবলের উন্নত নান্দনিক ক্রীড়াশৈলী দেখে বিস্মিত, উত্তেজিত। আর সেইসঙ্গে আমাদের ফুটবল দৈন্য দেখে আফসোসের সীমা নেই। আমাদের ফুটবল আজও কত পেছনে পড়ে আছে তা ভাবলে ভীষণভাবে বেদনাহত হই। বর্তমান বিশ্ব প্রতিযোগিতার বিশ্ব। উৎকর্ষতার যুগ।
টিকে থাকতে হলে পরিবর্তনের পথে হাঁটতে হবে। আমাদের ফুটবলকে কেমন করে আনা যাবে আলোকিত গৌরবে তা ভাবতে হবে। খেলোয়াড়, অনুশীলন, আস্থা, উদ্যম, ব্যবস্থাপনা, সংগঠক, পরিচালক, প্রশিক্ষণ কোথায় আমাদের ত্রুটি তা খুঁজে বের করতে হবে। প্রতিভাবান খেলোয়াড় খুঁজে বের করায় মনোযোগী না হলে এ হতাশা চিরস্থায়ী হবে।
ফুটবলের মাঠে যত মারামারি খুনোখুনি হয়, এমনটি আর কোন খেলায় হয় না। এই অবস্থা থেকেও বেরিয়ে আসতে হবে আমাদের। এবারের কাতার বিশ্বকাপে ঘটছে নানা অঘটন। সৌদি ঝড়ে কুপোকাত হয়েছে ফুটবল জায়ান্ট আর্জেন্টিনা। জাপানের কাছে ধরাশায়ী হয়েছে গতিময় ফুটবলের দেশ জার্মান। আরো হয়তো নানা অঘটন ঘটবে। সব অঘটন ছাপিয়ে বিশ্বকাপ ফুটবল আনন্দে বুঁদ হয়ে থাকবে ফুটবল ভক্তরা। বিশ্বকাপ ফুটবল হয়ে উঠুক বিশ্বশান্তির প্রতীক। সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির হয়ে উঠুক বিশ্বকাপ ফুটবল।
[লেখক: প্রাবন্ধিক]