শাহ মো. জিয়াউদ্দিন
সারাদেশে প্রচলিত একটি শব্দ এখন শরীয়াভিত্তিক ব্যাংক ব্যবস্থা। দেশের প্রায় সকল মালিকানাধীন ব্যাংকগুলো শরীয়াভিত্তিক ব্যাংকি কার্যক্রম ব্যবস্থা চালু করেছে। বাস্তবে এ শরীয়ার বিষয়টা ব্যাংকের চলমান কার্যক্রমের সাথে কতটা সামঞ্জস্যপূর্ণ তা কেউ মনিটরিং করছে না। যে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো শরীয়াভিত্তিক সাইনবোর্ড বা লেবেল এঁটে বর্তমান ব্যাংকিং কার্যক্রম চালাচ্ছে তা তাদের পূর্বের ব্যাংকিংয়ের (পূর্বের বলতে শরীয়ার লেবেল লাগানোর আগে) সাথে কার্যক্রমগুলোর কী পরিমাণ পার্থক্য, তা নিরূপণ করা উচিত। এ পার্থক্য সম্পর্কিত ব্যাখ্যাটাও গণমাধ্যমে আসা দরকার।
দেশের রাজনৈতিক, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক সব কার্যক্রমের সাথে ইসলামিক কিছু শব্দ জুড়ে দেওয়া হচ্ছে একটি বিশেষ কৌশলে। অথচ ওই সব রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, কার্যক্রমগুলোর মাঝে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায় যে, এ কার্যক্রমগুলোতে চলছে চরম অনৈতিকতা। ধর্মকেও ব্যবসায়িক বা কায়েমী স্বার্থ হাসিলের হাতিয়ার বানিয়ে স্বার্থ হাসিলের কাজটি করছে স্বার্থান্বেষী মহল বা গোষ্ঠী।
আজ থেকে চল্লিশ বছর আগে দেশের ব্যাংকিং সেক্টরে শরীয়াভিত্তিক কোন প্রথা চালু ছিল না। সেই সময় কী পরিমাণ টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে আর বর্তমানে শরীয়ার লেবেল এঁটে কী পরিমাণ টাকা বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে তার একটি যথাযথ পরিসংখ্যান বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশ করা উচিত। শরীয়া প্রচলনের আগে ব্যাংকের ঋণ খেলাপির হার শরীয়ার প্রচলনের পর প্রায় কয়েক গুণই বেড়েছে। তাহলে শরীয়ার নামে চালু করা অর্থনীতি দেশের জন্য কতটা কল্যাণ বয়ে আনছে তারও একটি হিসাব করার দরকার।
১৯৯০ সালে দেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৪ হাজার ৬৪৬ কোটি টাকা। ২০২১ সালে খেলাপি ঋণের পরিমাণ এসে দাঁড়ায় ১ লাখ ১ হাজার ১৫০ কোটি টাকা। ১৯৯০ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়েছে প্রায় ২৭ গুণ। ২০ ও ২১ সালে প্রায় পৌনে দুই বছরে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৬ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা। এই পৌনে দুই বছরে খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির হার ৭ দশমিক ২৩ শতাংশ। বাংলাদেশের প্রথম সেনা শাসক মেজর জেনারেল জিয়া বিসমিল্লাহ ও দ্বিতীয় সেনা শাসক লেফটেন্যান্ট জেনারেল এরশাদ রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম সংবিধানে অন্তর্ভুক্তি করেন। এর মাধ্যমে দেশের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক কার্যক্রমে প্রবল বেগে ধর্মের ব্যবহার শুরু হয়। এ ধর্ম ব্যবহারের গতিধারাটা দিন দিন অস্বভাবিক হারে বাড়ছে। গত পৌনে দুই বছরে অর্থনীতিতে শরীয়ার কার্যক্রম বেড়েছে আগের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি; তারপরও কেন অব্যাহত হারে ঋণ খেলাপি বেড়েই চলেছে। সুরা বাকারাহ আয়াত নং ২৮২-তে বর্ণিত আছে- ‘হে বিশ্বাসীগণ যখন তোমরা নির্দিষ্ট মেয়াদে ধারে কারবার (ব্যবসা) করবে তা লিখে রাখবে।’ শরীয়াভিত্তিক ঋণ বিতরণের বিভিন্ন পর্যালোচনায় হাদিস অনুসারে যে বর্ণনা পাওয়া যায় তা হলো- ‘ঋণদাতা যখন মানুষের উপকার্থে ঋণ প্রদান করে, তা ঋণ গ্রহিতার দ্বিনী ও নৈতিক দায়িত্ব হবে তা যথা সম্ভব তাড়াতাড়ি ফিরিয়ে দেয়া। তা যদি নির্দিষ্ট সময়ে পরিশোধ না করে টালবাহানা শুরু করে, মিথ্যা ওজর আপত্তি পেশ করে করতে লাগে, তা সঠিক কাজ হবে না।’ সুরা নিসার ৫৮নং আয়াতে বলা আছে- ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের নির্দেশ দিচ্ছেন হকদারদের হক তাদের কাছে পৌঁছে দিতে।’ উপরে বর্ণিত আয়াত অনুসারে স্পষ্টত বুঝা যায় যে, ঋণ গ্রহিতার কাছে ঋণ প্রদানকারী আর্থিক প্রতষ্ঠিানসমূহ বা ব্যক্তিরা হকদার হয়ে যায় তাই প্রত্যেক হকদারের হক পরিশোধ করার বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে ইসলাম ধর্মের আলোকে। অথচ দেখা যায় যে, হকদারের হক পরিশোধ না করে, ঋণ খেলাপিরা ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ করে এই অর্থ বিদেশে পাচার করে দিচ্ছেন। বাংলাদেশে বর্তমান ঋণ খেলাপির সংখ্যানুসারে দেখা যায়- শরীয়ার বর্ণনা অনুযায়ী ঋণ গ্রহীতা নির্বাচনে দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো সম্পূর্ণ ব্যর্থ। যদি তাই হয়ে থাকে তাহলে কেন শরীয়ার লেবেল নিত্যনতুনভাবে লাগানো হচ্ছে?
যমুনা ব্যাংকের বগুড়া শাখার ভল্টে পাওয়া গেছে জাল টাকা। তাছাড়া এই ব্যাংকের ভল্টে রয়েছে অযোগ্য নোট এবং বিনিময় করা যাবে না এরকম টাকাও পাওয়া গেছে। ব্যবহার অযোগ্য নোটের মধ্যে ৩৬৯টি ৫০০ টাকার নোট এবং ৮৬টি ১০০ টাকার নোট। সব মিলিয়ে এসব নোটের মূল্যমান ১ লাখ ৯৩ হাজার ১০০ টাকা। তাছাড়া পেমেন্ট রিফিউজ বা প্রচলনের অযোগ্য সিলযুক্ত নোটও ওই ব্যাংকের ভল্টে রয়েছে।
ইসলামী ব্যাংক থেকে নভেম্বর মাসের ১ তারিখ থেকে ১৭ তারিখ পর্যন্ত দুই হাজার চারশ’ ষাট কোটি টাকা তুলে নিয়েছে একটি অসাধু চক্র। কী করে এই চক্র টাকা হাতিয়ে নিল তা ব্যাংক কর্তৃপক্ষের ব্যাখ্যা দেয়া প্রয়োজন। এটা অস্বাভাবিক লেনদেন। কারণ এ ধরনের অস্বাভাবিক লেনদেন ইতোপূর্বে ঘটেনি। ইসলামী ব্যাংক এতদ বিষয়ে একটি প্রেস নোটও দিয়েছে। প্রেস নোট দিয়ে ঘা বাঁচানো কতটা যৌক্তিক। বাংলাদেশের প্রথম ইসলামিক শরীয়া অনুসারে ইসলামী ব্যাংকের পথচলা শুরু। দেশের প্রথম মৌলবাদী অর্থনীতির সুতিকাগার হলো ইসলামী ব্যাংক। তাছাড়া ইসলামী ব্যাংকগুলোর বিগত কয়েক মাসের ঋণ কেলেঙ্কারিটাও ভয়ঙ্কর। একটি দৈনিকের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়- নানা উপায়ে ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক থেকে প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকার ঋণ ভুল তথ্যর মাধ্যমে তুলে নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ইসলামী ব্যাংক থেকে সাত হাজার ২৪৬ কোটি টাকা। আর বাকি টাকা হলো- সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের। এরাই কিন্তু শরীয়াভিত্তিক ব্যাংক।
ধর্মের নামে দেশের অর্থনীতিতে চলছে এক ধরনের লুটপাট। শরীয়ার নামে যে ব্যাংক বা ইনস্যুরেন্স কোম্পানিসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো চলছে তা কতটা প্রকৃতার্থে শরীয়াভিত্তিক। এ প্রতিষ্ঠানগুলো যদি শরীয়াভিত্তিক নাই হয়ে থাকে তাহলে কেন কেন্দ্রীয় ব্যাংক শরীয়ার নামে এ ধরনের আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে কার্যক্রম চালানোর অনুমোদন দিচ্ছে। বর্তমানে দেশে ধর্মটা হয়ে গেছে নিরাপত্তার ঢাল। কারণ ধর্মের নামে সাইনবোর্ড দিয়ে লুটপাট করলে তার অভ্যন্তরের বিষয় নিয়ে কেউ কথা বলতে পারবে না। এতদ সম্পর্কিত বিষয়ে কোন কথা যিনি বলবেন তাকেই নাস্তিক আখ্যা দিয়ে নাস্তানাবুদ করা হয়। ধর্মীয় অনুভূতির সঠিক সংজ্ঞা নাই। ধর্ম নিয়ে যারা কায়েমী স্বার্থ সিদ্ধি করছে তাদের বাধা দিলে বা সমালোচনা করলে অনুভূতিতে আঘাত হানার অভিযোগ তুলে সমালোচককে জেলে ঢোকানো হয়। রাষ্ট্রীয় বিধি ব্যবস্থায় এ ধরনের কিছু নিয়ম বিদ্যমান থাকায় সুযোগ নিয়ে নিচ্ছে বিশেষ একটি মহল। ১৯৪৭ সালে জিন্নাহ দ্বিজাতি তত্ত্ব ব্যবহার করে ধর্মের নামে ক্ষমতায় বসেন। ব্যক্তি জীবনে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ কোনদিনই ধর্মপ্রাণ মানুষ ছিলেন না। পূর্ববাংলার মানুষ পাকিস্তানের এই ধর্ম ব্যবহারের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য বাংলাদেশকে স্বাধীন করে। আজ স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পরে এসে দেখা যাচ্ছে পাকিস্তানি আমলের চাইতে বেশি শোষণ করা হচ্ছে সাধারণ মানুষকে ধর্মের নামে। রাষ্ট্রের সর্বস্তরে ধর্মের অপব্যবহার বন্ধ করা দরকার।
[লেখক : উন্নয়নকর্মী]
শাহ মো. জিয়াউদ্দিন
শুক্রবার, ০৯ ডিসেম্বর ২০২২
সারাদেশে প্রচলিত একটি শব্দ এখন শরীয়াভিত্তিক ব্যাংক ব্যবস্থা। দেশের প্রায় সকল মালিকানাধীন ব্যাংকগুলো শরীয়াভিত্তিক ব্যাংকি কার্যক্রম ব্যবস্থা চালু করেছে। বাস্তবে এ শরীয়ার বিষয়টা ব্যাংকের চলমান কার্যক্রমের সাথে কতটা সামঞ্জস্যপূর্ণ তা কেউ মনিটরিং করছে না। যে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো শরীয়াভিত্তিক সাইনবোর্ড বা লেবেল এঁটে বর্তমান ব্যাংকিং কার্যক্রম চালাচ্ছে তা তাদের পূর্বের ব্যাংকিংয়ের (পূর্বের বলতে শরীয়ার লেবেল লাগানোর আগে) সাথে কার্যক্রমগুলোর কী পরিমাণ পার্থক্য, তা নিরূপণ করা উচিত। এ পার্থক্য সম্পর্কিত ব্যাখ্যাটাও গণমাধ্যমে আসা দরকার।
দেশের রাজনৈতিক, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক সব কার্যক্রমের সাথে ইসলামিক কিছু শব্দ জুড়ে দেওয়া হচ্ছে একটি বিশেষ কৌশলে। অথচ ওই সব রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, কার্যক্রমগুলোর মাঝে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায় যে, এ কার্যক্রমগুলোতে চলছে চরম অনৈতিকতা। ধর্মকেও ব্যবসায়িক বা কায়েমী স্বার্থ হাসিলের হাতিয়ার বানিয়ে স্বার্থ হাসিলের কাজটি করছে স্বার্থান্বেষী মহল বা গোষ্ঠী।
আজ থেকে চল্লিশ বছর আগে দেশের ব্যাংকিং সেক্টরে শরীয়াভিত্তিক কোন প্রথা চালু ছিল না। সেই সময় কী পরিমাণ টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে আর বর্তমানে শরীয়ার লেবেল এঁটে কী পরিমাণ টাকা বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে তার একটি যথাযথ পরিসংখ্যান বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশ করা উচিত। শরীয়া প্রচলনের আগে ব্যাংকের ঋণ খেলাপির হার শরীয়ার প্রচলনের পর প্রায় কয়েক গুণই বেড়েছে। তাহলে শরীয়ার নামে চালু করা অর্থনীতি দেশের জন্য কতটা কল্যাণ বয়ে আনছে তারও একটি হিসাব করার দরকার।
১৯৯০ সালে দেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৪ হাজার ৬৪৬ কোটি টাকা। ২০২১ সালে খেলাপি ঋণের পরিমাণ এসে দাঁড়ায় ১ লাখ ১ হাজার ১৫০ কোটি টাকা। ১৯৯০ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়েছে প্রায় ২৭ গুণ। ২০ ও ২১ সালে প্রায় পৌনে দুই বছরে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৬ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা। এই পৌনে দুই বছরে খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির হার ৭ দশমিক ২৩ শতাংশ। বাংলাদেশের প্রথম সেনা শাসক মেজর জেনারেল জিয়া বিসমিল্লাহ ও দ্বিতীয় সেনা শাসক লেফটেন্যান্ট জেনারেল এরশাদ রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম সংবিধানে অন্তর্ভুক্তি করেন। এর মাধ্যমে দেশের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক কার্যক্রমে প্রবল বেগে ধর্মের ব্যবহার শুরু হয়। এ ধর্ম ব্যবহারের গতিধারাটা দিন দিন অস্বভাবিক হারে বাড়ছে। গত পৌনে দুই বছরে অর্থনীতিতে শরীয়ার কার্যক্রম বেড়েছে আগের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি; তারপরও কেন অব্যাহত হারে ঋণ খেলাপি বেড়েই চলেছে। সুরা বাকারাহ আয়াত নং ২৮২-তে বর্ণিত আছে- ‘হে বিশ্বাসীগণ যখন তোমরা নির্দিষ্ট মেয়াদে ধারে কারবার (ব্যবসা) করবে তা লিখে রাখবে।’ শরীয়াভিত্তিক ঋণ বিতরণের বিভিন্ন পর্যালোচনায় হাদিস অনুসারে যে বর্ণনা পাওয়া যায় তা হলো- ‘ঋণদাতা যখন মানুষের উপকার্থে ঋণ প্রদান করে, তা ঋণ গ্রহিতার দ্বিনী ও নৈতিক দায়িত্ব হবে তা যথা সম্ভব তাড়াতাড়ি ফিরিয়ে দেয়া। তা যদি নির্দিষ্ট সময়ে পরিশোধ না করে টালবাহানা শুরু করে, মিথ্যা ওজর আপত্তি পেশ করে করতে লাগে, তা সঠিক কাজ হবে না।’ সুরা নিসার ৫৮নং আয়াতে বলা আছে- ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের নির্দেশ দিচ্ছেন হকদারদের হক তাদের কাছে পৌঁছে দিতে।’ উপরে বর্ণিত আয়াত অনুসারে স্পষ্টত বুঝা যায় যে, ঋণ গ্রহিতার কাছে ঋণ প্রদানকারী আর্থিক প্রতষ্ঠিানসমূহ বা ব্যক্তিরা হকদার হয়ে যায় তাই প্রত্যেক হকদারের হক পরিশোধ করার বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে ইসলাম ধর্মের আলোকে। অথচ দেখা যায় যে, হকদারের হক পরিশোধ না করে, ঋণ খেলাপিরা ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ করে এই অর্থ বিদেশে পাচার করে দিচ্ছেন। বাংলাদেশে বর্তমান ঋণ খেলাপির সংখ্যানুসারে দেখা যায়- শরীয়ার বর্ণনা অনুযায়ী ঋণ গ্রহীতা নির্বাচনে দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো সম্পূর্ণ ব্যর্থ। যদি তাই হয়ে থাকে তাহলে কেন শরীয়ার লেবেল নিত্যনতুনভাবে লাগানো হচ্ছে?
যমুনা ব্যাংকের বগুড়া শাখার ভল্টে পাওয়া গেছে জাল টাকা। তাছাড়া এই ব্যাংকের ভল্টে রয়েছে অযোগ্য নোট এবং বিনিময় করা যাবে না এরকম টাকাও পাওয়া গেছে। ব্যবহার অযোগ্য নোটের মধ্যে ৩৬৯টি ৫০০ টাকার নোট এবং ৮৬টি ১০০ টাকার নোট। সব মিলিয়ে এসব নোটের মূল্যমান ১ লাখ ৯৩ হাজার ১০০ টাকা। তাছাড়া পেমেন্ট রিফিউজ বা প্রচলনের অযোগ্য সিলযুক্ত নোটও ওই ব্যাংকের ভল্টে রয়েছে।
ইসলামী ব্যাংক থেকে নভেম্বর মাসের ১ তারিখ থেকে ১৭ তারিখ পর্যন্ত দুই হাজার চারশ’ ষাট কোটি টাকা তুলে নিয়েছে একটি অসাধু চক্র। কী করে এই চক্র টাকা হাতিয়ে নিল তা ব্যাংক কর্তৃপক্ষের ব্যাখ্যা দেয়া প্রয়োজন। এটা অস্বাভাবিক লেনদেন। কারণ এ ধরনের অস্বাভাবিক লেনদেন ইতোপূর্বে ঘটেনি। ইসলামী ব্যাংক এতদ বিষয়ে একটি প্রেস নোটও দিয়েছে। প্রেস নোট দিয়ে ঘা বাঁচানো কতটা যৌক্তিক। বাংলাদেশের প্রথম ইসলামিক শরীয়া অনুসারে ইসলামী ব্যাংকের পথচলা শুরু। দেশের প্রথম মৌলবাদী অর্থনীতির সুতিকাগার হলো ইসলামী ব্যাংক। তাছাড়া ইসলামী ব্যাংকগুলোর বিগত কয়েক মাসের ঋণ কেলেঙ্কারিটাও ভয়ঙ্কর। একটি দৈনিকের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়- নানা উপায়ে ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক থেকে প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকার ঋণ ভুল তথ্যর মাধ্যমে তুলে নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ইসলামী ব্যাংক থেকে সাত হাজার ২৪৬ কোটি টাকা। আর বাকি টাকা হলো- সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের। এরাই কিন্তু শরীয়াভিত্তিক ব্যাংক।
ধর্মের নামে দেশের অর্থনীতিতে চলছে এক ধরনের লুটপাট। শরীয়ার নামে যে ব্যাংক বা ইনস্যুরেন্স কোম্পানিসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো চলছে তা কতটা প্রকৃতার্থে শরীয়াভিত্তিক। এ প্রতিষ্ঠানগুলো যদি শরীয়াভিত্তিক নাই হয়ে থাকে তাহলে কেন কেন্দ্রীয় ব্যাংক শরীয়ার নামে এ ধরনের আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে কার্যক্রম চালানোর অনুমোদন দিচ্ছে। বর্তমানে দেশে ধর্মটা হয়ে গেছে নিরাপত্তার ঢাল। কারণ ধর্মের নামে সাইনবোর্ড দিয়ে লুটপাট করলে তার অভ্যন্তরের বিষয় নিয়ে কেউ কথা বলতে পারবে না। এতদ সম্পর্কিত বিষয়ে কোন কথা যিনি বলবেন তাকেই নাস্তিক আখ্যা দিয়ে নাস্তানাবুদ করা হয়। ধর্মীয় অনুভূতির সঠিক সংজ্ঞা নাই। ধর্ম নিয়ে যারা কায়েমী স্বার্থ সিদ্ধি করছে তাদের বাধা দিলে বা সমালোচনা করলে অনুভূতিতে আঘাত হানার অভিযোগ তুলে সমালোচককে জেলে ঢোকানো হয়। রাষ্ট্রীয় বিধি ব্যবস্থায় এ ধরনের কিছু নিয়ম বিদ্যমান থাকায় সুযোগ নিয়ে নিচ্ছে বিশেষ একটি মহল। ১৯৪৭ সালে জিন্নাহ দ্বিজাতি তত্ত্ব ব্যবহার করে ধর্মের নামে ক্ষমতায় বসেন। ব্যক্তি জীবনে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ কোনদিনই ধর্মপ্রাণ মানুষ ছিলেন না। পূর্ববাংলার মানুষ পাকিস্তানের এই ধর্ম ব্যবহারের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য বাংলাদেশকে স্বাধীন করে। আজ স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পরে এসে দেখা যাচ্ছে পাকিস্তানি আমলের চাইতে বেশি শোষণ করা হচ্ছে সাধারণ মানুষকে ধর্মের নামে। রাষ্ট্রের সর্বস্তরে ধর্মের অপব্যবহার বন্ধ করা দরকার।
[লেখক : উন্নয়নকর্মী]