রাসায়নিক বিস্ফোরণে প্রাণহানি দুই
গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার দক্ষিণ ভাংনাহাটি গ্রামে একটি বোতাম তৈরি কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে দুই জনের মৃত্যু হয়েছে। রোববার রাত ৮টায় গাজীপুর ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ মামুন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, “এ পর্যন্ত দুইজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। দুটো মরদেহ আগুনে পুড়ে বিকৃত হয়ে গেছে। ফলে তাদের পরিচয় নিশ্চিত করা যাচ্ছে না।"
ফায়ার সার্ভিসের সাতটি ইউনিটের টানা আড়াই ঘণ্টার চেষ্টায় রোববার (২২ ডিসেম্বর) বিকেল ৪টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। এ ঘটনায় বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
দুপুর দেড়টার দিকে শ্রীপুর পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ভাংনাহাটি গ্রামের "এম অ্যান্ড ইউ ট্রিমস লিমিটেড" কারখানার কেমিক্যাল গুদাম থেকে আগুনের সূত্রপাত ঘটে। কারখানার কর্মীরা জানান, হঠাৎ গুদামে থাকা রাসায়নিক পদার্থে আগুন ধরে যায় এবং মুহূর্তেই কয়েকটি ড্রাম বিস্ফোরণ হয়। বিস্ফোরণের শব্দে কারখানার ভেতরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
স্থানীয় বাসিন্দারা ও কারখানার কর্মীরা প্রথমে নিজেরাই আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন। কিন্তু গুদামে রাসায়নিক পদার্থ মজুত থাকায় আগুন দ্রুত কারখানার অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতি গুরুতর হয়ে উঠলে ফায়ার সার্ভিসে খবর দেওয়া হয়।
গাজীপুর ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক মোহাম্মদ আল মামুন জানান, খবর পেয়ে শ্রীপুর ফায়ার স্টেশনের দুটি ইউনিট প্রথমে ঘটনাস্থলে পৌঁছে কাজ শুরু করে। পরে পরিস্থিতি বিবেচনায় জয়দেবপুর ও রাজেন্দ্রপুর ফায়ার স্টেশনের পাঁচটি ইউনিট যুক্ত হয়। সবমিলিয়ে সাতটি ইউনিট টানা কাজ করে প্রায় আড়াই ঘণ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
ফায়ার সার্ভিসের একজন কর্মকর্তা জানান, "কারখানায় কেমিক্যাল ড্রাম থাকায় আগুন নিয়ন্ত্রণে বাধা সৃষ্টি হয়েছে। তীব্র তাপে ড্রামগুলো ফুলে বিস্ফোরণ ঘটায়, যা আগুন আরও বাড়িয়ে দেয়।"
অগ্নিকাণ্ডে দুইজনের মৃত্যু নিশ্চিত করেছেন ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক। তবে মৃত ব্যক্তিদের পরিচয় তাৎক্ষণিকভাবে শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। স্থানীয় লোকজন ও কর্মীদের মতে, অন্তত সাতজন আহত হয়েছেন, যাঁদের মধ্যে কয়েকজনকে ঢাকায় চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়েছে। আহতদের বেশিরভাগই আগুন থেকে পালানোর সময় আহত হন।
"এম অ্যান্ড ইউ ট্রিমস লিমিটেড" নামে আধাপাকা ভবনটি বোতাম তৈরির জন্য ব্যবহৃত হতো। ভবনটিতে রাসায়নিক ও প্লাস্টিকজাত দ্রব্য মজুত ছিল। এক কর্মী জানান, আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায় মালামাল সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন তাঁরা। তবে বিস্ফোরণের কারণে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে ওঠে।
স্থানীয় বাসিন্দা মো. ওমর ফারুক বলেন, "টিনের চালার ফাঁক দিয়ে আগুনের শিখা বের হতে দেখে আমরা এগিয়ে যাই। আগুনের ভয়ে আশপাশের বাড়িঘর থেকে লোকজন তাদের আসবাবপত্র নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়।"
ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা জানান, তারা ১টা ৫৬ মিনিটে প্রথম ইউনিট পাঠান এবং প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালান। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলেও পুরোপুরি নির্বাপনের কাজ শেষ হতে আরও সময় লাগবে বলে জানান তারা।
কারখানা কর্তৃপক্ষের বক্তব্য অনুপস্থিত
এ ঘটনায় কারখানা কর্তৃপক্ষের কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, কারখানাটি দীর্ঘদিন ধরে রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করত, যা অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি বাড়িয়েছে।
অগ্নিকাণ্ডের সঠিক কারণ বা মোট ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনও নির্ধারণ করা যায়নি। তবে ধারণা করা হচ্ছে, গুদামে থাকা রাসায়নিকের ত্রুটিজনিত কারণে আগুনের সূত্রপাত ঘটে।
এ ঘটনার পর আশপাশের বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয়রা জানান, বিস্ফোরণের তীব্র শব্দে পুরো এলাকা কেঁপে ওঠে। অনেকেই নিজেদের বাড়ি ছেড়ে নিরাপদ স্থানে চলে যান।
ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, অগ্নিকাণ্ডের উৎস ও ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণে তদন্ত শুরু করা হবে। একইসঙ্গে কারখানার নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ করে ভবিষ্যতে এমন ঘটনা এড়ানোর জন্য সুপারিশ করা হবে।
এ ধরনের অগ্নিকাণ্ডে রাসায়নিক দ্রব্যের সঠিক সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব আরও একবার উঠে এসেছে। ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, শ্রীপুর অঞ্চলের কারখানাগুলোতে নিয়মিত নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণ বাড়ানো হবে।
এই দুর্ঘটনা ভবিষ্যতে এমন ঘটনা প্রতিরোধে সবার জন্য সতর্কবার্তা। কারখানার কর্মীদের সুরক্ষার জন্য পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ এবং রাসায়নিক দ্রব্যের সঠিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
গাজীপুরের এই অগ্নিকাণ্ড প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতির দিক থেকে উদ্বেগজনক হলেও, ফায়ার সার্ভিসের দ্রুত পদক্ষেপ বড় ধরনের বিপর্যয় এড়াতে সহায়ক হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে আরও কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
রাসায়নিক বিস্ফোরণে প্রাণহানি দুই
সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার দক্ষিণ ভাংনাহাটি গ্রামে একটি বোতাম তৈরি কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে দুই জনের মৃত্যু হয়েছে। রোববার রাত ৮টায় গাজীপুর ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ মামুন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, “এ পর্যন্ত দুইজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। দুটো মরদেহ আগুনে পুড়ে বিকৃত হয়ে গেছে। ফলে তাদের পরিচয় নিশ্চিত করা যাচ্ছে না।"
ফায়ার সার্ভিসের সাতটি ইউনিটের টানা আড়াই ঘণ্টার চেষ্টায় রোববার (২২ ডিসেম্বর) বিকেল ৪টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। এ ঘটনায় বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
দুপুর দেড়টার দিকে শ্রীপুর পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ভাংনাহাটি গ্রামের "এম অ্যান্ড ইউ ট্রিমস লিমিটেড" কারখানার কেমিক্যাল গুদাম থেকে আগুনের সূত্রপাত ঘটে। কারখানার কর্মীরা জানান, হঠাৎ গুদামে থাকা রাসায়নিক পদার্থে আগুন ধরে যায় এবং মুহূর্তেই কয়েকটি ড্রাম বিস্ফোরণ হয়। বিস্ফোরণের শব্দে কারখানার ভেতরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
স্থানীয় বাসিন্দারা ও কারখানার কর্মীরা প্রথমে নিজেরাই আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন। কিন্তু গুদামে রাসায়নিক পদার্থ মজুত থাকায় আগুন দ্রুত কারখানার অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতি গুরুতর হয়ে উঠলে ফায়ার সার্ভিসে খবর দেওয়া হয়।
গাজীপুর ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক মোহাম্মদ আল মামুন জানান, খবর পেয়ে শ্রীপুর ফায়ার স্টেশনের দুটি ইউনিট প্রথমে ঘটনাস্থলে পৌঁছে কাজ শুরু করে। পরে পরিস্থিতি বিবেচনায় জয়দেবপুর ও রাজেন্দ্রপুর ফায়ার স্টেশনের পাঁচটি ইউনিট যুক্ত হয়। সবমিলিয়ে সাতটি ইউনিট টানা কাজ করে প্রায় আড়াই ঘণ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
ফায়ার সার্ভিসের একজন কর্মকর্তা জানান, "কারখানায় কেমিক্যাল ড্রাম থাকায় আগুন নিয়ন্ত্রণে বাধা সৃষ্টি হয়েছে। তীব্র তাপে ড্রামগুলো ফুলে বিস্ফোরণ ঘটায়, যা আগুন আরও বাড়িয়ে দেয়।"
অগ্নিকাণ্ডে দুইজনের মৃত্যু নিশ্চিত করেছেন ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক। তবে মৃত ব্যক্তিদের পরিচয় তাৎক্ষণিকভাবে শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। স্থানীয় লোকজন ও কর্মীদের মতে, অন্তত সাতজন আহত হয়েছেন, যাঁদের মধ্যে কয়েকজনকে ঢাকায় চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়েছে। আহতদের বেশিরভাগই আগুন থেকে পালানোর সময় আহত হন।
"এম অ্যান্ড ইউ ট্রিমস লিমিটেড" নামে আধাপাকা ভবনটি বোতাম তৈরির জন্য ব্যবহৃত হতো। ভবনটিতে রাসায়নিক ও প্লাস্টিকজাত দ্রব্য মজুত ছিল। এক কর্মী জানান, আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায় মালামাল সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন তাঁরা। তবে বিস্ফোরণের কারণে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে ওঠে।
স্থানীয় বাসিন্দা মো. ওমর ফারুক বলেন, "টিনের চালার ফাঁক দিয়ে আগুনের শিখা বের হতে দেখে আমরা এগিয়ে যাই। আগুনের ভয়ে আশপাশের বাড়িঘর থেকে লোকজন তাদের আসবাবপত্র নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়।"
ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা জানান, তারা ১টা ৫৬ মিনিটে প্রথম ইউনিট পাঠান এবং প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালান। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলেও পুরোপুরি নির্বাপনের কাজ শেষ হতে আরও সময় লাগবে বলে জানান তারা।
কারখানা কর্তৃপক্ষের বক্তব্য অনুপস্থিত
এ ঘটনায় কারখানা কর্তৃপক্ষের কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, কারখানাটি দীর্ঘদিন ধরে রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করত, যা অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি বাড়িয়েছে।
অগ্নিকাণ্ডের সঠিক কারণ বা মোট ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনও নির্ধারণ করা যায়নি। তবে ধারণা করা হচ্ছে, গুদামে থাকা রাসায়নিকের ত্রুটিজনিত কারণে আগুনের সূত্রপাত ঘটে।
এ ঘটনার পর আশপাশের বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয়রা জানান, বিস্ফোরণের তীব্র শব্দে পুরো এলাকা কেঁপে ওঠে। অনেকেই নিজেদের বাড়ি ছেড়ে নিরাপদ স্থানে চলে যান।
ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, অগ্নিকাণ্ডের উৎস ও ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণে তদন্ত শুরু করা হবে। একইসঙ্গে কারখানার নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ করে ভবিষ্যতে এমন ঘটনা এড়ানোর জন্য সুপারিশ করা হবে।
এ ধরনের অগ্নিকাণ্ডে রাসায়নিক দ্রব্যের সঠিক সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব আরও একবার উঠে এসেছে। ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, শ্রীপুর অঞ্চলের কারখানাগুলোতে নিয়মিত নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণ বাড়ানো হবে।
এই দুর্ঘটনা ভবিষ্যতে এমন ঘটনা প্রতিরোধে সবার জন্য সতর্কবার্তা। কারখানার কর্মীদের সুরক্ষার জন্য পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ এবং রাসায়নিক দ্রব্যের সঠিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
গাজীপুরের এই অগ্নিকাণ্ড প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতির দিক থেকে উদ্বেগজনক হলেও, ফায়ার সার্ভিসের দ্রুত পদক্ষেপ বড় ধরনের বিপর্যয় এড়াতে সহায়ক হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে আরও কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।