# ৬৮ দিন ১৩ গরুর খাবারসহ রক্ষণাবেক্ষণ করে পেয়েছেন ৬৬ হাজার টাকা
# অথচ তিন শ্রমিকের মজুরিই দিতে হয়েছে ১ লাখ ২২ হাজার টাকা
# দৈনিক ২৭০ টাকা দেয়ার কথা থাকলেও খামারি পেয়েছেন ৭৪ টাকা ৬৬ পয়সা
চলতি বছরের ১৮ এপ্রিল ১৩ টি ভারতীয় ষাঁড় ও বদল গরু জব্দ করে পুলিশ। নিয়মানুযায়ী, পরদিন আদালতের মাধ্যমে নিলামের আগ পর্যন্ত সেগুলো একজন খামারিকে রক্তনাবেক্ষণের দায়িত্ব দেয়া হয়। পুলিশের জিম্মানামা ও আলামতের বর্ণনায় সংশ্লিষ্ট আদালতের নাজির, পুলিশ ও খামারির স্বাক্ষরে খামারিকে ষাঁড় ও গরু প্রতি দৈনিক ২৭০ টাকা প্রদান করার কথা উল্লেখ রয়েছে। এরপর ২৫ জুন আদালতের নিলাম কমিটি এগুলো নিলাম দেয়ার পর ৬৮ দিনে খামারির পাওয়ার কথা ২ লাখ ৩৮ হাজার ৬৮০ টাকা। কিন্তু আদালতের আদেশে নিলামের টাকা থেকে খামারিকে দেয়া হয় মাত্র ৬৬ হাজার টাকা। এতে করে কাগজেপত্রে লিখিত হিসাব থেকে খামারি এক লাখ ৭২ হাজার ৬৮০ টাকা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। এ হিসেবে দৈনিক ২৭০ টাকার পরিবর্তে প্রতি ষাঁড় বা গরুতে খামারিকে দেয়া হয়েছে মাত্র ৭৪ টাকা ৬৬ পয়সা। নিলাম কমিটির এমন বিবেচনায় দিশেহারা সেই খমারি। আর এভাবেই পুলিশের জব্দকৃত পশু রক্ষণাবেক্ষণ করে চরম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সিলেটের বিভিন্ন খামারি।
ঘটনাটি সিলেট জেলার জৈন্তাপুর এলাকার। এ সংক্রান্ত সকল নথিপত্র এসেছে এ প্রতিবেদকের হাতে। এ থেকে জানা যায়, ১৮ এপ্রিল সিলেট-তামাবিল মহাসড়কের জৈন্তাপুর মডেল থানার সামনে একটি পিকআপ থেকে ১৩টি ভারতীয় ষাঁড় ও গরু জব্দ করে পুলিশ। ওই দিনই পুলিশ বিশেষ ক্ষমতা আইনে জৈন্তাপুর মডেল থানায় একটি মামলা (জি আর নং ৭০/ ২৫, থানার মামলা নং ১১) দায়ের করে। এরপর মামলাটি তদন্তের জন্য দায়িত্ব দেয়া হয় এসআই শংকর চন্দ্র দেবকে। তিনি পরদিন একটি জিম্মানামা তৈরি করে জব্দকৃত পশু রক্ষণাবেক্ষণের জন্য জৈন্তাপুরের ১ নং নিজপাট ইউনিয়নের গৌরী শংকর গ্রামের খামারি মোহাম্মদ আলী মাক্কুকে বুঝিয়ে দেন। এই জিম্মানামার নিচে আবেদনকারী হিসেবে মাক্কু ও এস আই শংকর চন্দ্র দেবনাথ এবং চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, সিলেট-এর নাজির মো: ফাইজুল ইসলামের স্বাক্ষর রয়েছে। এর উপরের অংশে লেখা রয়েছে, প্রতিটি গরু রক্ষণাবেক্ষণ করার জন্য দৈনিক মজুরি ১২০ টাকা এবং গরুর খাবার বা খরচ বাবদ ১৫০ টাকা মোট ২৭০ টাকা করে প্রদান করা হবে। এই হিসেবে ১৩ টি গরুর পেছনে দৈনিক মজুরি সহ খরচ আসে ৩ হাজার ৫১০ টাকা। কিন্তু খামারি এই পরিমাণ টাকা বুঝে পাননি।
খামারি গরু সমজে নেয়ার ৬৮ দিন পর গত ২৫ জুন চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত- সিলেট থেকে গরুগুলো নিলাম প্রদান করা হয়। মোট ৬ লাখ ২৫ হাজার ২০০ টাকায় ওসমানীনগরের মোঃ আব্দুল ছালিক নিলাম বিজয়ী হন। এই টাকা থেকে খামারিকে ষাঁড় ও গরুর লালন পালন খরচ হিসেবে ৬৬ হাজার টাকা প্রদানের আদেশ দেয়া হয়৷ নিলাম কমিটির সভাপতি হিসেবে ছিলেন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ধ্রুব জ্যোতি পাল, সদস্য সচিব সিনিয়র জুডিশিয়ান ম্যাজিস্ট্রেট মো. ওমর ফারুক ও সদস্য সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কাজী মো. আবু জাহের বাদল।
নিলাম কমিটির আদেশ অনুযায়ী লক্ষ্য করা যায়, জিম্মানামায় যে কথা উল্লেখ ছিল সেটির প্রায় এক চতুর্থাংশই পূরণ হয়নি। গরু প্রতি দৈনিক ২৭০ টাকা দেয়ার কথা থাকলেও খামারি পেয়েছেন ৭৪ টাকা ৬৬ পয়সা; যা লিখিত থেকে ১৯৫ টাকা ৩৪ পয়সা কম। আর পুরোপুরি ৬৮ দিনের হিসাব করলে মোট টাকা থেকে তা দাঁড়ায় ১ লাখ ৭২ হাজার ৬৮০ টাকা কম। এত বড় অংক ফারাকের নিলাম কমিটির আদেশ নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন খামারি মোহাম্মদ আলী মাক্কু।
এ বিষয়ে মোহাম্মদ আলী মাক্কু বলেন, নিলাম কমিটি এ ধরনের আদেশ দেবেন তা ভাবতেও পারিনি। বর্তমান সময়ে বিশ্বস্ত একজন শ্রমিক পাওয়া খুবই কষ্টকর। আর পেলেও তার দৈনিক মজুরি ওকে ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা। এসব গরুর জন্য দুইজন শ্রমিক কাজ করেছে। আর যাতে কোন চুরির ঘটনা না ঘটে সেজন্য একজন চৌকিদারও পাহারা দিয়েছেন।
মাক্কুর দেয়া তথ্য অনুযায়ী, একজনের মজুরি যদি ৬০০ টাকাও হয় তাহলে তিন জনের দৈনিক মজুরি আসে এক হাজার ৮শ টাকা। সে হিসাবে ৬৮ দিনে শুধু মজুরিই আসে ১ লাখ ২২ হাজার ৪০০ টাকা।
মোহাম্মদ আলী মাক্কু বলেন, গরুকে ঘাসসহ অন্যান্য খাবার দেয়া হয়েছে। ১৩ টি গরুর পেছনে এতেও অনেক টাকা খরচ হয়েছে। তাহলে নিলাম কমিটি তাকে মাত্র ৬৬ হাজার টাকা কি করে দেয় সেটাই তার প্রশ্ন!
শনিবার, ২৬ জুলাই ২০২৫
# ৬৮ দিন ১৩ গরুর খাবারসহ রক্ষণাবেক্ষণ করে পেয়েছেন ৬৬ হাজার টাকা
# অথচ তিন শ্রমিকের মজুরিই দিতে হয়েছে ১ লাখ ২২ হাজার টাকা
# দৈনিক ২৭০ টাকা দেয়ার কথা থাকলেও খামারি পেয়েছেন ৭৪ টাকা ৬৬ পয়সা
চলতি বছরের ১৮ এপ্রিল ১৩ টি ভারতীয় ষাঁড় ও বদল গরু জব্দ করে পুলিশ। নিয়মানুযায়ী, পরদিন আদালতের মাধ্যমে নিলামের আগ পর্যন্ত সেগুলো একজন খামারিকে রক্তনাবেক্ষণের দায়িত্ব দেয়া হয়। পুলিশের জিম্মানামা ও আলামতের বর্ণনায় সংশ্লিষ্ট আদালতের নাজির, পুলিশ ও খামারির স্বাক্ষরে খামারিকে ষাঁড় ও গরু প্রতি দৈনিক ২৭০ টাকা প্রদান করার কথা উল্লেখ রয়েছে। এরপর ২৫ জুন আদালতের নিলাম কমিটি এগুলো নিলাম দেয়ার পর ৬৮ দিনে খামারির পাওয়ার কথা ২ লাখ ৩৮ হাজার ৬৮০ টাকা। কিন্তু আদালতের আদেশে নিলামের টাকা থেকে খামারিকে দেয়া হয় মাত্র ৬৬ হাজার টাকা। এতে করে কাগজেপত্রে লিখিত হিসাব থেকে খামারি এক লাখ ৭২ হাজার ৬৮০ টাকা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। এ হিসেবে দৈনিক ২৭০ টাকার পরিবর্তে প্রতি ষাঁড় বা গরুতে খামারিকে দেয়া হয়েছে মাত্র ৭৪ টাকা ৬৬ পয়সা। নিলাম কমিটির এমন বিবেচনায় দিশেহারা সেই খমারি। আর এভাবেই পুলিশের জব্দকৃত পশু রক্ষণাবেক্ষণ করে চরম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সিলেটের বিভিন্ন খামারি।
ঘটনাটি সিলেট জেলার জৈন্তাপুর এলাকার। এ সংক্রান্ত সকল নথিপত্র এসেছে এ প্রতিবেদকের হাতে। এ থেকে জানা যায়, ১৮ এপ্রিল সিলেট-তামাবিল মহাসড়কের জৈন্তাপুর মডেল থানার সামনে একটি পিকআপ থেকে ১৩টি ভারতীয় ষাঁড় ও গরু জব্দ করে পুলিশ। ওই দিনই পুলিশ বিশেষ ক্ষমতা আইনে জৈন্তাপুর মডেল থানায় একটি মামলা (জি আর নং ৭০/ ২৫, থানার মামলা নং ১১) দায়ের করে। এরপর মামলাটি তদন্তের জন্য দায়িত্ব দেয়া হয় এসআই শংকর চন্দ্র দেবকে। তিনি পরদিন একটি জিম্মানামা তৈরি করে জব্দকৃত পশু রক্ষণাবেক্ষণের জন্য জৈন্তাপুরের ১ নং নিজপাট ইউনিয়নের গৌরী শংকর গ্রামের খামারি মোহাম্মদ আলী মাক্কুকে বুঝিয়ে দেন। এই জিম্মানামার নিচে আবেদনকারী হিসেবে মাক্কু ও এস আই শংকর চন্দ্র দেবনাথ এবং চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, সিলেট-এর নাজির মো: ফাইজুল ইসলামের স্বাক্ষর রয়েছে। এর উপরের অংশে লেখা রয়েছে, প্রতিটি গরু রক্ষণাবেক্ষণ করার জন্য দৈনিক মজুরি ১২০ টাকা এবং গরুর খাবার বা খরচ বাবদ ১৫০ টাকা মোট ২৭০ টাকা করে প্রদান করা হবে। এই হিসেবে ১৩ টি গরুর পেছনে দৈনিক মজুরি সহ খরচ আসে ৩ হাজার ৫১০ টাকা। কিন্তু খামারি এই পরিমাণ টাকা বুঝে পাননি।
খামারি গরু সমজে নেয়ার ৬৮ দিন পর গত ২৫ জুন চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত- সিলেট থেকে গরুগুলো নিলাম প্রদান করা হয়। মোট ৬ লাখ ২৫ হাজার ২০০ টাকায় ওসমানীনগরের মোঃ আব্দুল ছালিক নিলাম বিজয়ী হন। এই টাকা থেকে খামারিকে ষাঁড় ও গরুর লালন পালন খরচ হিসেবে ৬৬ হাজার টাকা প্রদানের আদেশ দেয়া হয়৷ নিলাম কমিটির সভাপতি হিসেবে ছিলেন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ধ্রুব জ্যোতি পাল, সদস্য সচিব সিনিয়র জুডিশিয়ান ম্যাজিস্ট্রেট মো. ওমর ফারুক ও সদস্য সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কাজী মো. আবু জাহের বাদল।
নিলাম কমিটির আদেশ অনুযায়ী লক্ষ্য করা যায়, জিম্মানামায় যে কথা উল্লেখ ছিল সেটির প্রায় এক চতুর্থাংশই পূরণ হয়নি। গরু প্রতি দৈনিক ২৭০ টাকা দেয়ার কথা থাকলেও খামারি পেয়েছেন ৭৪ টাকা ৬৬ পয়সা; যা লিখিত থেকে ১৯৫ টাকা ৩৪ পয়সা কম। আর পুরোপুরি ৬৮ দিনের হিসাব করলে মোট টাকা থেকে তা দাঁড়ায় ১ লাখ ৭২ হাজার ৬৮০ টাকা কম। এত বড় অংক ফারাকের নিলাম কমিটির আদেশ নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন খামারি মোহাম্মদ আলী মাক্কু।
এ বিষয়ে মোহাম্মদ আলী মাক্কু বলেন, নিলাম কমিটি এ ধরনের আদেশ দেবেন তা ভাবতেও পারিনি। বর্তমান সময়ে বিশ্বস্ত একজন শ্রমিক পাওয়া খুবই কষ্টকর। আর পেলেও তার দৈনিক মজুরি ওকে ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা। এসব গরুর জন্য দুইজন শ্রমিক কাজ করেছে। আর যাতে কোন চুরির ঘটনা না ঘটে সেজন্য একজন চৌকিদারও পাহারা দিয়েছেন।
মাক্কুর দেয়া তথ্য অনুযায়ী, একজনের মজুরি যদি ৬০০ টাকাও হয় তাহলে তিন জনের দৈনিক মজুরি আসে এক হাজার ৮শ টাকা। সে হিসাবে ৬৮ দিনে শুধু মজুরিই আসে ১ লাখ ২২ হাজার ৪০০ টাকা।
মোহাম্মদ আলী মাক্কু বলেন, গরুকে ঘাসসহ অন্যান্য খাবার দেয়া হয়েছে। ১৩ টি গরুর পেছনে এতেও অনেক টাকা খরচ হয়েছে। তাহলে নিলাম কমিটি তাকে মাত্র ৬৬ হাজার টাকা কি করে দেয় সেটাই তার প্রশ্ন!