উত্তরীয় হিমেল হাওয়ায় আবারও বাড়ছে ঠান্ডা। কুয়াশা আর শীতে জুবুথুবু উত্তরের জনপদ। তবে দেশের সর্বত্রই বাড়ছে শীতের তীব্রতা। বুধবার (১ জানুয়ারি) সকালে আবহাওয়া বিভাগ জানায়, আগামী অন্তত তিন দিন দেশের বিভিন্ন স্থানে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়বে। মধ্যেরাত বা ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত থাকতে পারে এই কুয়াশা।
নতুন বছরের প্রথমদিনে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ঘন কুয়াশায় বিমান, নৌযান ও সড়কে যান চলাচল কিছুটা ব্যাহত হতে পারে বলে সতর্ক করেছে আবহাওয়া দফতর।
কুয়াশার কারণে সকালের দিকে শীতের অনুভূতি বাড়তে পারে। চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে তাপমাত্রা দুই থেকে তিন ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং রংপুর, রাজশাহী ও খুলনা বিভাগে তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে।
আগামী শুক্রবার পর্যন্ত অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। তবে আগামী পাঁচ দিনে তাপমাত্রা হালকা বাড়তে পারে বলেও জানানো হয়েছে। আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী, বুধবার সকাল ৬টায় দেশের সর্বনি¤œ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে দিনাজপুরে ১০ দশমিক ছয় ডিগ্রি সেলসিয়াস।
ঠান্ডার তীব্রতায় চরম বিপাকে লালমনিরহাটের স্বল্প আয়ের মানুষ
লালমনিরহাট প্রতিনিধি জানিয়েছেন, উত্তরের সীমান্তবর্তী জেলা লালমনিরহাটে ঘন কুয়াশা ও ঠান্ডায় জেঁকে বসেছে শীত। গত দু’দিন ধরে সূর্যের দেখা মিলছে না। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া লোকজন বাইরে বের হচ্ছেন না। হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা।
ঠান্ডার তীব্রতায় চরম বিপাকে পড়েছে খেটে খাওয়া ও ছিন্নমূল মানুষ। শীতবস্ত্রের অভাবে কষ্টে পড়েছে তিস্তা পাড়ের হতদরিদ্র, ছিন্নমূল ও স্বল্প আয়ের শ্রমজীবী মানুষ। শীতের দাপটে গ্রামাঞ্চলের অনেকেই আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে।
বুধবার সকাল ৯টায় জেলায় সর্বনি¤œ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। লালমনিরহাটের পাঁচ উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স গুলোতে নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট ও অ্যাজমাজনিত রোগে ৩৫ জন শিশু ও বৃদ্ধ ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
কালীগঞ্জের নিথক এলাকার দিনমজুর মিনাল হোসেন বলেন, খুব ঠান্ডা, বাড়ি থেকে বাহির হওয়া যাচ্ছে না। কুয়াশায় কিছু দেখা যায়ছোল (যাচ্ছে) না। তারপরও আমরা কাজের সন্ধানে বের হয়েছি। পেটতো আর ঠান্ডা বোঝে না বাহে।
হাতীবান্ধার ভ্যানচালক এনামুল হোসেন বলেন, এই ঠান্ডায় কোনো লোকজন নেই, তাই ভ্যান নিয়ে বসে আছি। পরিবার চালা অনেক কষ্টকর হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
কালীগঞ্জের ভোটমারী ইউনিয়নের তিস্তার চরের কৃষক আইয়ুব আলী বলেন, এই ঠান্ডায় কাজকাম করা যায় না। হাত গুটিয়ে আসে। খুবই কষ্টের মধ্যে আছি আমরা।
তুষভান্ডার ইউনিয়নের ভ্যান চালক মোকলেছুর রহমান জানায়, কষ্ট হলেও নিজের জীবিকার তাগিদে ভোরেই ভ্যান নিয়ে বের হতে হয়েছে। অনেক বেশি ঠান্ডা পড়েছে। এত বেশি ঠান্ডায় অনেকেই ভ্যানে চড়তে চায় না। তবুও বের হয়েছি। পরিবার বাঁচানোর জন্য তো ভ্যান চালাতেই হবে।
হাতীবান্ধা মেডিকেল আবাসিক অফিসার আনারুল হক বলেন, কয়েকদিন শীত কম থাকলেও দুদিন থেকে শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট ও অ্যাজমা জনিত রোগের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে শিশু ও বৃদ্ধরা আক্রান্ত হচ্ছে। এজন্য শিশু-বৃদ্ধের খেয়াল রাখতে হবে যাতে কোনো প্রকার ঠান্ডা না লাগে।
রাজারহাট আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার বলেন, এক মাস ধরে এ জেলার সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ১১ থেকে ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওঠানামা করছে। আগামীতে তাপমাত্রা আরও কমে শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ঘনকুয়াশার সঙ্গে হিমেল বাতাস, কনকনে ঠান্ডায় জমে গেছে ফুলবাড়ী
ফুলবাড়ী প্রতিনিধি জানান, দিনাজপুরের সর্বত্রই ঠান্ডার তীব্রতা বাড়ছে। তবে ফুলবাড়ীতে যেনো জেঁকে বসেছে শীত। কনকনে হিমেল হাওয়ায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে এ উপজেলার মানুষ। সকাল থেকে সূর্যের দেখা না পাওয়া আর বৃষ্টির মতো কুয়াশা পড়ার কারণে এ উপজেলায় সব থেকে বেশি কষ্টে পড়েছেন ছিন্নমূল মানুষজন। এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে উপজেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০-১২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে উঠানামা করছে।
দিনাজপুর আবহাওয়া কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তোফাজ্জল হোসেন বলেন, ১ জানুয়ারি সকাল ৬টায় দিনাজপুর জেলায় ১১ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এতে বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ ৯৪ শতাংশ এবং বাতাসের গড় গতিবেগ ঘণ্টায় ৪ কিলোমিটার। তবে সকাল ৯টায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা হিসেবে রেকর্ড করা হয়েছে।
ফুলবাড়ী উপজেলার আলাদিপুর ইউনিয়নের বাসুদেবপুর সূর্য্যপাড়া গ্রামের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর নারী ক্ষেতমজুর রেজিনা টুডু (৩২) ও সোনালী সরেন (৪০) বলেন, দিনে সূর্য উঠলেও ঠান্ডা বাতাসের কারণে খেতে কাজ করা কষ্টকর হয়। বেশিক্ষণ ক্ষেতে কাজ করলে হাত-পা ঠান্ডা হয়ে অবশ হয়ে যাচ্ছে, এজন্য বেশিক্ষণ জমিতে কাজ করা যাচ্চে না। সন্ধ্যা থেকে দুপুর পর্যন্ত কনকনে ঠান্ডায় ঘর থেকে বের হওয়া যাচ্ছে না।
উপজেলার খয়েরবাড়ী ইউনিয়নের উত্তর লক্ষ্মীপুর গ্রামের কৃষিশ্রমিক আবদুর রহমান বলেন, জমিতে চারা তৈরির জন্য ধান ছিটানোর কাজ করছেন। কিন্তু এত ঠান্ডা যে, কাদা পানিতে পা রাখা যাচ্ছে না। ঠান্ডার কারণে ঠিকমত কাজ করতে পারছি না।
অটোরিকশাচালক সামসুর রহমান বলেন, সকালে হেডলাইট জ্বালিয়ে অটো চালাতে হচ্ছে। অতিরিক্ত ঠান্ডায় যাত্রী কম হয়। রুটিরুজির জন্য কনকনে ঠান্ডা ও শীতে গাড়ি নিয়ে বেড়িয়েছেন সড়কে।
বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, গ্রামে থাকা ছিন্নমূল, অসহায় ও দরিদ্র পরিবারের শিশু ও বৃদ্ধদের অবস্থা নাকাল। অনেকেই খড়-কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা চালাচ্ছেন। ঘন কুয়াশার কারণে রাস্তার অদূরে কিছুই দেখা যায় না। তাই দুর্ঘটনা এড়াতে সড়ক, মহাসড়কগুলোতে যানবাহন চলাচল করছে হেডলাইট জ্বালিয়ে ধীরগতিতে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. মশিউর রহমান বলেন, শীতের তীব্রতা বৃদ্ধির কারণে শীতজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। এর মধ্যে সর্দি-কাশি, নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ার প্রকোপ বেশি। কয়েক দিন ধরে তীব্র শীতের কারণে শিশুদের নিউমোনিয়া, ডায়রিয়াসহ শীতজনিত রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে। শিশুদের যাতে শীত না লাগে এ ব্যাপারে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. সানাউল্লাহ বলেন, উপজেলার দুঃস্থ শীতার্তদের জন্য ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে প্রথম পর্যায়ে ২০০ এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে ৮৭০টি কম্বল এবং নগদ ৩ লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। নগদ তিন লাখ টাকা দিয়ে আরো ৯১০টি কম্বল কেনা হয়েছে। ইতোমধ্যেই কম্বলগুলো উপজেলার এতিমখানাসহ, ছিন্নমূল মানুষ ও দুঃস্থদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার, ০২ জানুয়ারী ২০২৫
উত্তরীয় হিমেল হাওয়ায় আবারও বাড়ছে ঠান্ডা। কুয়াশা আর শীতে জুবুথুবু উত্তরের জনপদ। তবে দেশের সর্বত্রই বাড়ছে শীতের তীব্রতা। বুধবার (১ জানুয়ারি) সকালে আবহাওয়া বিভাগ জানায়, আগামী অন্তত তিন দিন দেশের বিভিন্ন স্থানে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়বে। মধ্যেরাত বা ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত থাকতে পারে এই কুয়াশা।
নতুন বছরের প্রথমদিনে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ঘন কুয়াশায় বিমান, নৌযান ও সড়কে যান চলাচল কিছুটা ব্যাহত হতে পারে বলে সতর্ক করেছে আবহাওয়া দফতর।
কুয়াশার কারণে সকালের দিকে শীতের অনুভূতি বাড়তে পারে। চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে তাপমাত্রা দুই থেকে তিন ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং রংপুর, রাজশাহী ও খুলনা বিভাগে তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে।
আগামী শুক্রবার পর্যন্ত অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। তবে আগামী পাঁচ দিনে তাপমাত্রা হালকা বাড়তে পারে বলেও জানানো হয়েছে। আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী, বুধবার সকাল ৬টায় দেশের সর্বনি¤œ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে দিনাজপুরে ১০ দশমিক ছয় ডিগ্রি সেলসিয়াস।
ঠান্ডার তীব্রতায় চরম বিপাকে লালমনিরহাটের স্বল্প আয়ের মানুষ
লালমনিরহাট প্রতিনিধি জানিয়েছেন, উত্তরের সীমান্তবর্তী জেলা লালমনিরহাটে ঘন কুয়াশা ও ঠান্ডায় জেঁকে বসেছে শীত। গত দু’দিন ধরে সূর্যের দেখা মিলছে না। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া লোকজন বাইরে বের হচ্ছেন না। হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা।
ঠান্ডার তীব্রতায় চরম বিপাকে পড়েছে খেটে খাওয়া ও ছিন্নমূল মানুষ। শীতবস্ত্রের অভাবে কষ্টে পড়েছে তিস্তা পাড়ের হতদরিদ্র, ছিন্নমূল ও স্বল্প আয়ের শ্রমজীবী মানুষ। শীতের দাপটে গ্রামাঞ্চলের অনেকেই আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে।
বুধবার সকাল ৯টায় জেলায় সর্বনি¤œ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। লালমনিরহাটের পাঁচ উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স গুলোতে নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট ও অ্যাজমাজনিত রোগে ৩৫ জন শিশু ও বৃদ্ধ ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
কালীগঞ্জের নিথক এলাকার দিনমজুর মিনাল হোসেন বলেন, খুব ঠান্ডা, বাড়ি থেকে বাহির হওয়া যাচ্ছে না। কুয়াশায় কিছু দেখা যায়ছোল (যাচ্ছে) না। তারপরও আমরা কাজের সন্ধানে বের হয়েছি। পেটতো আর ঠান্ডা বোঝে না বাহে।
হাতীবান্ধার ভ্যানচালক এনামুল হোসেন বলেন, এই ঠান্ডায় কোনো লোকজন নেই, তাই ভ্যান নিয়ে বসে আছি। পরিবার চালা অনেক কষ্টকর হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
কালীগঞ্জের ভোটমারী ইউনিয়নের তিস্তার চরের কৃষক আইয়ুব আলী বলেন, এই ঠান্ডায় কাজকাম করা যায় না। হাত গুটিয়ে আসে। খুবই কষ্টের মধ্যে আছি আমরা।
তুষভান্ডার ইউনিয়নের ভ্যান চালক মোকলেছুর রহমান জানায়, কষ্ট হলেও নিজের জীবিকার তাগিদে ভোরেই ভ্যান নিয়ে বের হতে হয়েছে। অনেক বেশি ঠান্ডা পড়েছে। এত বেশি ঠান্ডায় অনেকেই ভ্যানে চড়তে চায় না। তবুও বের হয়েছি। পরিবার বাঁচানোর জন্য তো ভ্যান চালাতেই হবে।
হাতীবান্ধা মেডিকেল আবাসিক অফিসার আনারুল হক বলেন, কয়েকদিন শীত কম থাকলেও দুদিন থেকে শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট ও অ্যাজমা জনিত রোগের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে শিশু ও বৃদ্ধরা আক্রান্ত হচ্ছে। এজন্য শিশু-বৃদ্ধের খেয়াল রাখতে হবে যাতে কোনো প্রকার ঠান্ডা না লাগে।
রাজারহাট আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার বলেন, এক মাস ধরে এ জেলার সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ১১ থেকে ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওঠানামা করছে। আগামীতে তাপমাত্রা আরও কমে শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ঘনকুয়াশার সঙ্গে হিমেল বাতাস, কনকনে ঠান্ডায় জমে গেছে ফুলবাড়ী
ফুলবাড়ী প্রতিনিধি জানান, দিনাজপুরের সর্বত্রই ঠান্ডার তীব্রতা বাড়ছে। তবে ফুলবাড়ীতে যেনো জেঁকে বসেছে শীত। কনকনে হিমেল হাওয়ায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে এ উপজেলার মানুষ। সকাল থেকে সূর্যের দেখা না পাওয়া আর বৃষ্টির মতো কুয়াশা পড়ার কারণে এ উপজেলায় সব থেকে বেশি কষ্টে পড়েছেন ছিন্নমূল মানুষজন। এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে উপজেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০-১২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে উঠানামা করছে।
দিনাজপুর আবহাওয়া কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তোফাজ্জল হোসেন বলেন, ১ জানুয়ারি সকাল ৬টায় দিনাজপুর জেলায় ১১ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এতে বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ ৯৪ শতাংশ এবং বাতাসের গড় গতিবেগ ঘণ্টায় ৪ কিলোমিটার। তবে সকাল ৯টায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা হিসেবে রেকর্ড করা হয়েছে।
ফুলবাড়ী উপজেলার আলাদিপুর ইউনিয়নের বাসুদেবপুর সূর্য্যপাড়া গ্রামের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর নারী ক্ষেতমজুর রেজিনা টুডু (৩২) ও সোনালী সরেন (৪০) বলেন, দিনে সূর্য উঠলেও ঠান্ডা বাতাসের কারণে খেতে কাজ করা কষ্টকর হয়। বেশিক্ষণ ক্ষেতে কাজ করলে হাত-পা ঠান্ডা হয়ে অবশ হয়ে যাচ্ছে, এজন্য বেশিক্ষণ জমিতে কাজ করা যাচ্চে না। সন্ধ্যা থেকে দুপুর পর্যন্ত কনকনে ঠান্ডায় ঘর থেকে বের হওয়া যাচ্ছে না।
উপজেলার খয়েরবাড়ী ইউনিয়নের উত্তর লক্ষ্মীপুর গ্রামের কৃষিশ্রমিক আবদুর রহমান বলেন, জমিতে চারা তৈরির জন্য ধান ছিটানোর কাজ করছেন। কিন্তু এত ঠান্ডা যে, কাদা পানিতে পা রাখা যাচ্ছে না। ঠান্ডার কারণে ঠিকমত কাজ করতে পারছি না।
অটোরিকশাচালক সামসুর রহমান বলেন, সকালে হেডলাইট জ্বালিয়ে অটো চালাতে হচ্ছে। অতিরিক্ত ঠান্ডায় যাত্রী কম হয়। রুটিরুজির জন্য কনকনে ঠান্ডা ও শীতে গাড়ি নিয়ে বেড়িয়েছেন সড়কে।
বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, গ্রামে থাকা ছিন্নমূল, অসহায় ও দরিদ্র পরিবারের শিশু ও বৃদ্ধদের অবস্থা নাকাল। অনেকেই খড়-কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা চালাচ্ছেন। ঘন কুয়াশার কারণে রাস্তার অদূরে কিছুই দেখা যায় না। তাই দুর্ঘটনা এড়াতে সড়ক, মহাসড়কগুলোতে যানবাহন চলাচল করছে হেডলাইট জ্বালিয়ে ধীরগতিতে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. মশিউর রহমান বলেন, শীতের তীব্রতা বৃদ্ধির কারণে শীতজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। এর মধ্যে সর্দি-কাশি, নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ার প্রকোপ বেশি। কয়েক দিন ধরে তীব্র শীতের কারণে শিশুদের নিউমোনিয়া, ডায়রিয়াসহ শীতজনিত রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে। শিশুদের যাতে শীত না লাগে এ ব্যাপারে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. সানাউল্লাহ বলেন, উপজেলার দুঃস্থ শীতার্তদের জন্য ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে প্রথম পর্যায়ে ২০০ এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে ৮৭০টি কম্বল এবং নগদ ৩ লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। নগদ তিন লাখ টাকা দিয়ে আরো ৯১০টি কম্বল কেনা হয়েছে। ইতোমধ্যেই কম্বলগুলো উপজেলার এতিমখানাসহ, ছিন্নমূল মানুষ ও দুঃস্থদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে।