alt

সারাদেশ

ঢাকার নিকটবর্তী এলাকায়

১০টি সরকারি হাইস্কুল স্থাপন প্রকল্প বাস্তবায়নে তুঘলকি কান্ড

সংবাদ অনলাইন ডেস্ক : বৃহস্পতিবার, ২৯ অক্টোবর ২০২০

ঢাকার নিকটবর্তী এলাকায় ১০টি নতুন সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপন প্রকল্পের বাস্তবায়ন নিয়ে একের পর এক তুঘলকি কান্ড ঘটছে। অর্থ ব্যয় না হলেও ৩০০ কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ, এক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ৯ কর্মকর্তা-কর্মচারীর অভিযোগ এবং সর্বোপরি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কলেজ উইংকে না জানিয়ে প্রকল্প পরিচালকে (পিডি) পরিকল্পনা ও উন্নয়ন শাখা থেকে বদলির ঘটনায় তুলপার সৃষ্টি হয়েছে। এই অবস্থায় ওই প্রকল্পের পিডি’র পদ ভাগাতে শিক্ষা ভবনের তিনজন কর্মকর্তা মরিয়া চেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে, যাদের মধ্যে একজন বিতর্কিত পিডিও আছেন। পিডির পদে বসতে নানারকম অনৈতিক তদবির চলছে বলেও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

দুর্নীতি প্রসঙ্গে প্রকল্পের সাবেক পিডি ড. আমিরুল ইসলাম (২৭ সেপ্টেম্বর ওএসডি) সংবাদকে বলেন, ‘এই প্রকল্পে এখন পর্যন্ত মোট ব্যয় হয়েছে মাত্র ১৩ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। ৩০০ কোটি টাকা দুর্নীতির প্রশ্নই আসে না।’

গাছপালা কর্তন ও ভূমি অধিগ্রহণসহ নানা অভিযোগে ‘ঢাকা সন্নিকটবর্তী ১০টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপন’ প্রকল্পের ৩০০ কোটি টাকা লুটপাটের অভিযোগ ওঠে। এ অভিযোগ খতিয়ে দেখতে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোমিনুর রশিদ আমিনকে সভাপতি করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কমিটির দুই সদস্য করা হয় মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) পরিচালক অধ্যাপক আমির হোসেন এবং পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদফতরের অডিট কর্মকর্তা ফরিদ উদ্দিনকে।

এ কমিটি সম্প্রতি প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। তদন্ত কমিটির সদস্য অধ্যাপক আমির হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রকল্পে কোন আর্থিক দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাৎ হয়নি, অভিযোগটি শুধু অনুমান ছিল। প্রকল্পে আর্থিক দুর্নীতি হওয়ার সম্ভাবনাও ছিল না। আরডিপিপি (সংশোধিত প্রকল্প দলিল) এখনও চূড়ান্ত হয়নি। ক্রয়-কার্যক্রমও চূড়ান্ত হয়নি।’

৬৭৩ কোটি ৪৬ লাখ ৪৬ হাজার টাকার ‘১০’ স্কুল স্থাপন প্রকল্পের বাস্তবায়ন মেয়াদ হলো ২০১৭ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। কিন্তু শক্তিশালী সিন্ডিকেটের কবলে পড়ায় নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পের বাস্তবায়ন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

পিডির পদ ভাগাতে মরিয়া তিন কর্মকর্তা

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ মুখ্য বিষয় নয়। মাউশি’র দু’জন উপ-পরিচালক ওই প্রকল্পের পিডির দায়িত্ব পেতে নানা মহলে চেষ্টা-তদবির করছেন। সম্প্রতি বাস্তবায়ন সম্পন্ন হওয়া মাউশি’র একটি প্রকল্পের পিডি যেকোন মূল্যে ওই প্রকল্পের দায়িত্ব পেতে মরিয়া চেষ্টা করছেন। ওই পিডির বিরুদ্ধে দরপত্রের কাগজপত্র টেম্পারিং করে পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও নিজের দুই স্ত্রীর মামলার কারণে সাময়িক চাকরিচ্যুত ‘১০ স্কুল স্থাপন প্রকল্পে’র সাবেক এক কর্মকর্তা নিজের পছন্দের একজনকে ওই পদে বসাতে দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে নিয়মিত তদবির করছেন। মূলত প্রকল্পের পুরো নিয়ন্ত্রণ নেয়া এবং ঠিকাদারদের সঙ্গে আঁতাত করেই ওই কর্মকর্তা পিডিসহ প্রকল্প কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে সরকারের বিভিন্ন স্তরে ভিত্তিহীন অভিযোগ করতে থাকেন। আবার মন্ত্রণালয়ের এক প্রভাবশালী কর্মকর্তাও ওই প্রকল্পে পছন্দের পিডি পদায়নের চেষ্টা করছিলেন। তাদের তৎপরতার কারণেই গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পটি মুখ থুবড়ে পড়েছে।

জানা গেছে, ঢাকার কেরানীগঞ্জ ও পূর্বাঞ্চল এলাকায় ২টি বিদ্যালয়ের জন্য জমি অধিগ্রহণ/বন্দোবস্তের কাজ সমাপ্ত হয়েছে। বাকি ৮টি জমির মধ্যে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে অবস্থিত ৭টি জমির সম্ভাব্যতা যাচাই শেষ হয়েছে। অর্থাৎ জমি অধিগ্রহণের কাজ চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। এ প্রকল্পের প্রধান এবং জটিল ও সময়সাপেক্ষ কাজ হলো প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের জন্য কম বেশি ২ একর করে ১০টি প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রায় ২০ একর জমি অধিগ্রহণ করা।

তদন্ত প্রতিবেদন

তদন্ত প্রতিবেদনে অর্থ-আত্মসাতের আয়োজনের জন্য দায়ী করা হয় ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসনের সার্ভেয়ারদের ও কানুনগোদের। আর মাউশি’র সহকারী পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন, দিল আফরোজ বিনতে অছির) দায় এড়াতে পারেন না বলে মন্তব্য করা হয়েছে। দিল আফরোজ বিনতে অছিরকে অভিযুক্ত করা হয়েছে ডিসি অফিস থেকে প্রাপ্ত সম্ভাব্য মূল্য প্রাক্কলনের প্রতিটি পৃষ্ঠায় প্রতিস্বাক্ষর করার জন্য। দিল আফরোজ বিনতে অছির সংবাদকে বলেন, ‘আমি প্রকল্পের কর্মকর্তা নই, ভূমি অধিগ্রহণের ব্যয় প্রাক্কলনের কোন পর্যায়েই আমি সম্পৃক্ত ছিলাম না। আমাকে প্রকল্পের সদস্য সচিব বলা হয়েছে, অথচ এই প্রকল্পে সদস্য সচিব বলে কোন পদ নেই।’

তদন্ত প্রতিবেদনের একটি অংশে বলা হয়, ‘যদিও টাকাটি এখনও খরচ হয়নি বা একেবারে সরকারের আর্থিক কোন ক্ষতি হয়নি। তবে যেকোন দুর্নীতির শুরু হয় প্রাক্কলন তৈরির সময় থেকে। অর্থাৎ সঠিকভাবে চিহ্নিত না হলে বা ধরা না পড়লে এই টাকা যেকোন চ্যানেলে সময়ের পরিক্রমায় সিন্ডিকেট কর্তৃক আত্মসাতের আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যায় না।’

প্রতিবেদনের ১০ নম্বর অধ্যায়ে বলা হয়, ‘সার্বিক দিক বিবেচনায় দেখা যায় যে, ঢাকা সন্নিকটবর্তী ১০টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপন প্রকল্পে ব্যক্তি মালিকানাধীন জমির ৬টি প্রকল্পে মধ্যে শুধুমাত্র গাছপালা ও অবকাঠামো ‘যদি থাকে’ উল্লেখ করে কম করে হলেও প্রায় ১০১ কোটি টাকার উপরে অতিরিক্ত প্রাক্কলন করা হয়েছে এবং নারায়ণগঞ্জের একটি প্রকল্পে নালা শ্রেণী, ভিটি শ্রেণী হিসেবে দেখিয়ে প্রায় ২৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা বেশি ধরা হয়েছে। অর্থাৎ প্রাথমিক তদন্তে শুধু এই খাতে অতিরিক্ত ১২৫ কোটি টাকার মতো সম্ভাব্য প্রাক্কলন প্রস্তুত করা হয়েছে যা নৈতিকতা বিবর্জিত।’

প্রকল্প সম্পর্কে বিশেষজ্ঞ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা সংবাদকে বলেন, ‘সরকারি যেকোন প্রকল্পের ডিপিপি (প্রকল্প দলিল) প্রস্তুত করার পর ন্যূনতম এক বছর থেকে তিন বছরে তা অনুমোদন পায়। এরপর প্রকল্পে কর্মকর্তা নিয়োগ হলে অর্থ বরাদ্দ অনুযায়ী বাস্তবায়ন শুরু হয়। এ কারণে ২/৪ বছর আগে বাজারদর ও নির্মাণ ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়। এতে ব্যয় কম-বেশি হয়। এই বিবেচনায় স্টিয়ারিং কমিটিতে সবকিছুর বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এর ফলে প্রাক্কলিত ব্যয় নির্ধারণের সঙ্গে প্রকল্প কর্মকর্তা বা মাউশির কোন কর্মকর্তা দায়ী থাকতে পারে না।’

জমি অধিগ্রহণের সম্ভাব্য প্রাক্কলনের আনুষঙ্গিক খরচ বাবদ ২ শতাংশ (১ কোটি ৯৮ লাখ) টাকা বেশি ধরা হয়েছে তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এ বিষয়ে আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘জমি অধিগ্রহণ ম্যানুয়াল ১৯৯৭ অনুযায়ী জেলা প্রশাসকের কার্যালয় যেকোন জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে আনুষঙ্গিক খরচ বাবদ ২ শতাংশ টাকা কর্তন করে। এটা দুর্নীতি নয়, সরকারি নিয়ম।’

বিরামপুরে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান: ৩ প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা, ১ ভুয়া নার্স আটক

ছবি

চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে জনগণকে ‘রুখে দাঁড়াতে’ বললেন আইন উপদেষ্টা

নন্দীগ্রামে বাসের চাপায় মটরসাইকেল আরোহী দুই ভাই নিহত

সিলেটে গর্ভবতী স্ত্রীকে পুড়িয়ে মারার চেষ্টা, মৃত সন্তান প্রসব

বগুড়ায় ২ মাদক ব্যবসায়ী গ্রেপ্তার

লালপুরে আম পাড়াকে কেন্দ্র করে গুলি বর্ষণের ঘটনায় আটক ২

টঙ্গীতে মাহফুজ হত্যা, গ্রেপ্তার ৪

ছবি

ঝিকরগাছায় ভিজিডির চালে ওজনে কম, বিতরণ বন্ধ

শ্রীমঙ্গলে টি টেস্টিং ও কোয়ালিটি কন্ট্রোল প্রশিক্ষণ

ছবি

ধনবাড়ীতে বাড়িঘর ভাঙচুর স্বর্ণালংকার ও শুঁটকি লুট

পদ্মায় বৃদ্ধের মরদেহ উদ্ধার

ছবি

নৌকা তৈরিতেই ফিরছে আগৈলঝাড়ার অর্ধশতাধিক পরিবারের সচ্ছলতা

ছবি

দশমিনায় মাচায় ধুন্দল চাষে খরচ কম, লাভ দ্বিগুণ

বগুড়ায় অ্যান্টি-র‌্যাবিস ভ্যাকসিন না থাকায় দুর্ভোগ

সুন্দরগঞ্জে ডিলার নিয়োগে অনিয়মের প্রতিবাদে মানববন্ধন

ছবি

টঙ্গীবাড়ীতে বাল্কহেড চলাচল বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন

ভালুকায় দুই শিশু সন্তান ও মাকে জবাই করে হত্যা

সংস্কার ছাড়া দেশে কোনো নির্বাচন নয় নাহিদ ইসলাম

ছবি

অবৈধভাবে ট্রলার বোঝাই ১৮ বস্তা চিংড়ি শুঁটকি জব্দ

কসবায় পাওনা টাকা চাওয়াকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, আহত ৬

চাটখিলে মুক্তিযোদ্ধার ঘর জবরদখল, প্রাণনাশের হুমকির অভিযোগ

ছবি

সাতক্ষীরার শিক্ষাঙ্গনে কোমর পানি, পাঠদান-পরীক্ষা ব্যাহত

ট্রলারসহ ভারতীয় জেলে আটক

হবিগঞ্জে-ট্রাক মোটরসাইকেল সংঘর্ষে নিহত ১ আহত ২

ছবি

সিরাজগঞ্জে এবার পাট চাষে বাম্পার ফলনের আশা

শহরকে যানজটমুক্ত করতে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে : ডিসি

মাদারগঞ্জে কলেজছাত্রকে গলা কেটে হত্যা, গুরুতর আহত ১

ছবি

জিনারদীতে নরসিংদী কমিউটার ট্রেনের যাত্রাবিরতির দাবিতে মানববন্ধন

কাঁঠালিয়ায় বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

ভোলাহাটে বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস পালিত

ছবি

একটি সেতুতে পাল্টে গেল ১৫ গ্রামের মানুষের জীবন

ময়মনসিংহে নিখোঁজ দুই শিশুর মরদেহ উদ্ধার

পলাশে ইয়াবা টেবলেটসহ মাদক ব্যবসায়ী গ্রেপ্তার

ভারপ্রাপ্তের কারণে আটকে আছে শূন্যপদে নিয়োগ, দুর্ভোগে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা

ছবি

দশমিনায় জেলে পল্লীতে নীরবতা ও হতাশা, নদীতে ইলিশ মাছের আকাল

খাগড়াছড়ির শান্তি পরিবহন ও মোটর সংঘর্ষে নিহত ২

tab

সারাদেশ

ঢাকার নিকটবর্তী এলাকায়

১০টি সরকারি হাইস্কুল স্থাপন প্রকল্প বাস্তবায়নে তুঘলকি কান্ড

সংবাদ অনলাইন ডেস্ক

বৃহস্পতিবার, ২৯ অক্টোবর ২০২০

ঢাকার নিকটবর্তী এলাকায় ১০টি নতুন সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপন প্রকল্পের বাস্তবায়ন নিয়ে একের পর এক তুঘলকি কান্ড ঘটছে। অর্থ ব্যয় না হলেও ৩০০ কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ, এক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ৯ কর্মকর্তা-কর্মচারীর অভিযোগ এবং সর্বোপরি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কলেজ উইংকে না জানিয়ে প্রকল্প পরিচালকে (পিডি) পরিকল্পনা ও উন্নয়ন শাখা থেকে বদলির ঘটনায় তুলপার সৃষ্টি হয়েছে। এই অবস্থায় ওই প্রকল্পের পিডি’র পদ ভাগাতে শিক্ষা ভবনের তিনজন কর্মকর্তা মরিয়া চেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে, যাদের মধ্যে একজন বিতর্কিত পিডিও আছেন। পিডির পদে বসতে নানারকম অনৈতিক তদবির চলছে বলেও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

দুর্নীতি প্রসঙ্গে প্রকল্পের সাবেক পিডি ড. আমিরুল ইসলাম (২৭ সেপ্টেম্বর ওএসডি) সংবাদকে বলেন, ‘এই প্রকল্পে এখন পর্যন্ত মোট ব্যয় হয়েছে মাত্র ১৩ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। ৩০০ কোটি টাকা দুর্নীতির প্রশ্নই আসে না।’

গাছপালা কর্তন ও ভূমি অধিগ্রহণসহ নানা অভিযোগে ‘ঢাকা সন্নিকটবর্তী ১০টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপন’ প্রকল্পের ৩০০ কোটি টাকা লুটপাটের অভিযোগ ওঠে। এ অভিযোগ খতিয়ে দেখতে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোমিনুর রশিদ আমিনকে সভাপতি করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কমিটির দুই সদস্য করা হয় মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) পরিচালক অধ্যাপক আমির হোসেন এবং পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদফতরের অডিট কর্মকর্তা ফরিদ উদ্দিনকে।

এ কমিটি সম্প্রতি প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। তদন্ত কমিটির সদস্য অধ্যাপক আমির হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রকল্পে কোন আর্থিক দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাৎ হয়নি, অভিযোগটি শুধু অনুমান ছিল। প্রকল্পে আর্থিক দুর্নীতি হওয়ার সম্ভাবনাও ছিল না। আরডিপিপি (সংশোধিত প্রকল্প দলিল) এখনও চূড়ান্ত হয়নি। ক্রয়-কার্যক্রমও চূড়ান্ত হয়নি।’

৬৭৩ কোটি ৪৬ লাখ ৪৬ হাজার টাকার ‘১০’ স্কুল স্থাপন প্রকল্পের বাস্তবায়ন মেয়াদ হলো ২০১৭ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। কিন্তু শক্তিশালী সিন্ডিকেটের কবলে পড়ায় নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পের বাস্তবায়ন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

পিডির পদ ভাগাতে মরিয়া তিন কর্মকর্তা

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ মুখ্য বিষয় নয়। মাউশি’র দু’জন উপ-পরিচালক ওই প্রকল্পের পিডির দায়িত্ব পেতে নানা মহলে চেষ্টা-তদবির করছেন। সম্প্রতি বাস্তবায়ন সম্পন্ন হওয়া মাউশি’র একটি প্রকল্পের পিডি যেকোন মূল্যে ওই প্রকল্পের দায়িত্ব পেতে মরিয়া চেষ্টা করছেন। ওই পিডির বিরুদ্ধে দরপত্রের কাগজপত্র টেম্পারিং করে পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও নিজের দুই স্ত্রীর মামলার কারণে সাময়িক চাকরিচ্যুত ‘১০ স্কুল স্থাপন প্রকল্পে’র সাবেক এক কর্মকর্তা নিজের পছন্দের একজনকে ওই পদে বসাতে দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে নিয়মিত তদবির করছেন। মূলত প্রকল্পের পুরো নিয়ন্ত্রণ নেয়া এবং ঠিকাদারদের সঙ্গে আঁতাত করেই ওই কর্মকর্তা পিডিসহ প্রকল্প কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে সরকারের বিভিন্ন স্তরে ভিত্তিহীন অভিযোগ করতে থাকেন। আবার মন্ত্রণালয়ের এক প্রভাবশালী কর্মকর্তাও ওই প্রকল্পে পছন্দের পিডি পদায়নের চেষ্টা করছিলেন। তাদের তৎপরতার কারণেই গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পটি মুখ থুবড়ে পড়েছে।

জানা গেছে, ঢাকার কেরানীগঞ্জ ও পূর্বাঞ্চল এলাকায় ২টি বিদ্যালয়ের জন্য জমি অধিগ্রহণ/বন্দোবস্তের কাজ সমাপ্ত হয়েছে। বাকি ৮টি জমির মধ্যে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে অবস্থিত ৭টি জমির সম্ভাব্যতা যাচাই শেষ হয়েছে। অর্থাৎ জমি অধিগ্রহণের কাজ চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। এ প্রকল্পের প্রধান এবং জটিল ও সময়সাপেক্ষ কাজ হলো প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের জন্য কম বেশি ২ একর করে ১০টি প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রায় ২০ একর জমি অধিগ্রহণ করা।

তদন্ত প্রতিবেদন

তদন্ত প্রতিবেদনে অর্থ-আত্মসাতের আয়োজনের জন্য দায়ী করা হয় ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসনের সার্ভেয়ারদের ও কানুনগোদের। আর মাউশি’র সহকারী পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন, দিল আফরোজ বিনতে অছির) দায় এড়াতে পারেন না বলে মন্তব্য করা হয়েছে। দিল আফরোজ বিনতে অছিরকে অভিযুক্ত করা হয়েছে ডিসি অফিস থেকে প্রাপ্ত সম্ভাব্য মূল্য প্রাক্কলনের প্রতিটি পৃষ্ঠায় প্রতিস্বাক্ষর করার জন্য। দিল আফরোজ বিনতে অছির সংবাদকে বলেন, ‘আমি প্রকল্পের কর্মকর্তা নই, ভূমি অধিগ্রহণের ব্যয় প্রাক্কলনের কোন পর্যায়েই আমি সম্পৃক্ত ছিলাম না। আমাকে প্রকল্পের সদস্য সচিব বলা হয়েছে, অথচ এই প্রকল্পে সদস্য সচিব বলে কোন পদ নেই।’

তদন্ত প্রতিবেদনের একটি অংশে বলা হয়, ‘যদিও টাকাটি এখনও খরচ হয়নি বা একেবারে সরকারের আর্থিক কোন ক্ষতি হয়নি। তবে যেকোন দুর্নীতির শুরু হয় প্রাক্কলন তৈরির সময় থেকে। অর্থাৎ সঠিকভাবে চিহ্নিত না হলে বা ধরা না পড়লে এই টাকা যেকোন চ্যানেলে সময়ের পরিক্রমায় সিন্ডিকেট কর্তৃক আত্মসাতের আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যায় না।’

প্রতিবেদনের ১০ নম্বর অধ্যায়ে বলা হয়, ‘সার্বিক দিক বিবেচনায় দেখা যায় যে, ঢাকা সন্নিকটবর্তী ১০টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপন প্রকল্পে ব্যক্তি মালিকানাধীন জমির ৬টি প্রকল্পে মধ্যে শুধুমাত্র গাছপালা ও অবকাঠামো ‘যদি থাকে’ উল্লেখ করে কম করে হলেও প্রায় ১০১ কোটি টাকার উপরে অতিরিক্ত প্রাক্কলন করা হয়েছে এবং নারায়ণগঞ্জের একটি প্রকল্পে নালা শ্রেণী, ভিটি শ্রেণী হিসেবে দেখিয়ে প্রায় ২৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা বেশি ধরা হয়েছে। অর্থাৎ প্রাথমিক তদন্তে শুধু এই খাতে অতিরিক্ত ১২৫ কোটি টাকার মতো সম্ভাব্য প্রাক্কলন প্রস্তুত করা হয়েছে যা নৈতিকতা বিবর্জিত।’

প্রকল্প সম্পর্কে বিশেষজ্ঞ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা সংবাদকে বলেন, ‘সরকারি যেকোন প্রকল্পের ডিপিপি (প্রকল্প দলিল) প্রস্তুত করার পর ন্যূনতম এক বছর থেকে তিন বছরে তা অনুমোদন পায়। এরপর প্রকল্পে কর্মকর্তা নিয়োগ হলে অর্থ বরাদ্দ অনুযায়ী বাস্তবায়ন শুরু হয়। এ কারণে ২/৪ বছর আগে বাজারদর ও নির্মাণ ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়। এতে ব্যয় কম-বেশি হয়। এই বিবেচনায় স্টিয়ারিং কমিটিতে সবকিছুর বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এর ফলে প্রাক্কলিত ব্যয় নির্ধারণের সঙ্গে প্রকল্প কর্মকর্তা বা মাউশির কোন কর্মকর্তা দায়ী থাকতে পারে না।’

জমি অধিগ্রহণের সম্ভাব্য প্রাক্কলনের আনুষঙ্গিক খরচ বাবদ ২ শতাংশ (১ কোটি ৯৮ লাখ) টাকা বেশি ধরা হয়েছে তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এ বিষয়ে আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘জমি অধিগ্রহণ ম্যানুয়াল ১৯৯৭ অনুযায়ী জেলা প্রশাসকের কার্যালয় যেকোন জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে আনুষঙ্গিক খরচ বাবদ ২ শতাংশ টাকা কর্তন করে। এটা দুর্নীতি নয়, সরকারি নিয়ম।’

back to top