সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি। সব হাসপাতালে রোগীর ভিড়, বেড সংকট। ঢাকা মেডিকেলে করোনা ইউনিটের সামনে থেকে নেয়া ছবি -সোহরাব আলম
দেশে প্রথম করোনা শনাক্তের তিনমাস পর গত বছরের জুনের প্রথম সপ্তাহে চূড়ায় (পিকে) ওঠে সংক্রমণ। জুলাইয়ের শেষ নাগাদ সর্বোচ্চ সংক্রমণ ঘটে। প্রথম ঢেউয়ে পিকে অর্থাৎ সর্বোচ্চ সংক্রমণের সময় ৭ জুন থেকে ৭ জুলাই পর্যন্ত ৩০ দিনে প্রায় এক লাখ তিন হাজার মানুষের করোনা শনাক্ত হয়। ওই মাসে মৃত্যু হয়েছিল এক হাজার ২৬৩ জনের। গত বছরের ২ জুলাই একদিনে সর্বোচ্চ চার হাজার ১৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছিল।
অথচ করোনার ‘দ্বিতীয় ঢেউ’য়ে ‘বিপজ্জনক’ গতিতে ছড়াচ্ছে সংক্রমণ। দ্বিতীয় ঢেউয়ে মাত্র একমাসের সংক্রমণই গত বছরের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। মৃত্যুর সংখ্যাও পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। গত ৩১ মার্চ থেকেই দৈনিক ৫০ জনের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
এবার মার্চের শুরু থেকেই পুনরায় বাড়তে থাকে সংক্রমণ। এর আগে গত জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় দৈনিক শনাক্তের হার ৩/৪ শতাংশ এবং দৈনিক শনাক্তের সংখ্যা চার থেকে পাঁচশ’র কাছাকাছি নেমেছিল।
শিশু ও তরুণদেরও মৃত্যু হচ্ছে :
স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী, করোনায় শিশু-তরুণদের মৃত্যুও বাড়ছে। বুধবার (৭ এপ্রিল) পর্যন্ত দেশে করোনায় ৩৯ জন শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এদের সবারই বয়স ছিল ১০ বছরেরও কম। এছাড়াও করোনায় ১১ থেকে ২০ বছর বয়সী ৭০ জন তরুণের মৃত্যু হয়েছে।
শিশু ও তরুণদের করোনা সংক্রমণের বিষয়ে জানতে চাইলে সরকারের রোগতত্ত্ব ও রোগ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এএসএম আলমগীর সংবাদকে বলেন, ‘স্বাস্থ্যবিধি না মানলে যে কেউ করোনায় আক্রান্ত হতে পারেন। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে, আমরা যারা বয়স্ক নাগরিক, নিজেরাও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাফেরা করছি না, মাস্ক পরছি না; আবার ছেলেমেয়েদের নিয়েও বাইরে ঘোরাফেরা করছি। এভাবে চলতে থাকলে শিশু, তরুণ বা যুবকরা আক্রান্ত হতেই পারে।’
সারাবিশ্বেই তরুণ ও যুবকরা বেশি করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন- উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তরুণদের মধ্যে মৃত্যুঝুঁকি কম, যেহেতু কো-মর্বিডিটি (অন্যান্য রোগ) নেই। বয়স্ক ও প্রবীণদের তা বেশি থাকে, এজন্য ঝুঁকিও বেশি।’
‘লকডাউন’ না মানায় তৃণমূলেও সংক্রমণের আশঙ্কা :
এদিকে করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে সরকারের দেয়া ‘লকডাউন’ পুরোপুরি কার্যকর না হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও আইইডিসিআরের কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, ‘লকডাউন’ ঘোষণার আগেই লাখ লাখ মানুষ রাজধানী ছেড়ে গ্রামের বাড়িতে গিয়েছেন। কেউ কেউ এক জেলা থেকে অন্য জেলায় গিয়েছেন। ওই সময় যাতায়াতে লঞ্চ, বাস- কোন যানবাহনেই ন্যূনতম স্বাস্থ্যবিধি কেউ অনুসরণ করেননি। এতে গ্রামাঞ্চল বিশেষ করে তৃণমূল পর্যায়েও এখন সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
ডা. এএসএম আলমগীর বলেছেন, ‘গত দু’তিন দিন আমরা মানুষের মধ্যে মাস্ক পরা বেড়েছে। এখন যদি লকডাউন পুরোপুরি কার্যকর হয়, তাহলে আগামী ৫-৭-১০ দিনের মধ্যে সংক্রমণের গতি থামতে পারে। কিন্তু আশঙ্কাও রয়েছে, লকডাউনের আগে মানুষ যেভাবে হুড়োহুড়ি করে গ্রামাঞ্চলে গিয়েছে তাতে তৃণমূল পর্যায়েও এখন সংক্রমণ হতে পারে।’
গত একমাসের ‘ভয়ংকর’ চিত্র :
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, গত ৭ মার্চ দেশে ৬০৬ জনের করোনা শনাক্ত এবং ১১ জনের মৃত্যু হয়েছিল। ওইদিন নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ছিল ৪ দশমিক ৩০ শতাংশ। একমাসের মাথায় বুধবার দেশে শনাক্তের হার ছিল ২২ দশমিক ০২ শতাংশ। অর্থাৎ গত একমাসেই শনাক্তের হার ৪ শতাংশ থেকে ২২ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে।
৭ মার্চ পর্যন্ত দেশে মোট পাঁচ লাখ ৫০ হাজার ৩৩০ জনের করোনা শনাক্ত এবং আট হাজার ৪৬২ জনের মৃত্যু হয়েছিল। বুধবার পর্যন্ত মোট শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়ায় ছয় লাখ ৫৯ হাজার ২৭৮ জন এবং মৃত্যুর সংখ্যা পৌঁছে ৯ হাজার ৪৪৭ জনে।
এ হিসেবে গত ৩১ দিনে এক লাখ আট হাজার ৯৪৮ জনের করোনা শনাক্ত এবং ৯৮৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।
টানা চারদিনই দৈনিক শনাক্ত ৭ হাজারের বেশি :
করোনার প্রথম ধাক্কায় মাত্র তিনদিন সর্বোচ্চ চার হাজারের কিছু বেশি মানুষের করোনা শনাক্ত হয়েছিল। আর এবার গত চারদিনই দৈনিক শনাক্তের সংখ্যা সাত হাজার ছাড়িয়ে গেছে।
বুধবার বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ৬ এপ্রিল সকাল ৮টা থেকে বুধবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে রেকর্ড সাত হাজার ৬২৬ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এর আগে ৬ এপ্রিল সাত হাজার ২১৩ জন, ৫ এপ্রিল সাত হাজার ৭৫ জন এবং ৪ এপ্রিল সাত হাজার ৮৭ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছিল।
মৃত্যুও বাড়ছে ‘আশঙ্কাজনকভাবে’:
টানা দু’দিনই দেশে করোনায় ৬০ জনের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বুধবার দেশে করোনায় ৬৩ জনের মৃত্যুর কথা জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এর আগের ২৪ ঘণ্টায় এখন পর্যন্ত একদিনে সর্বোচ্চ ৬৬ জনের মৃত্যুর তথ্য জানিয়েছিল অধিদপ্তর।
আর করোনার প্রথম ধাক্কায় গত বছরের ৩০ জুন একদিনে সর্বোচ্চ ৬৪ জনের মৃত্যুর কথা জানিয়েছিল স্বাস্থ্য বিভাগ।
২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের রেকর্ড :
২৪ ঘণ্টায় দেশে এখন পর্যন্ত একদিনে সর্বোচ্চ সাত হাজার ৬২৬ জনের করোনা শনাক্ত করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। তাদের নিয়ে দেশে এ পর্যন্ত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ছয় লাখ ৫৯ হাজার ২৭৮ জনে।
আর এই ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হওয়া ৬৩ জনকে নিয়ে দেশে করোনায় মোট ৯ হাজার ৪৪৭ জনের মৃত্যু হলো।
যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় বিশ্বে করোনা শনাক্তে ৩৩তম স্থানে এবং মৃত্যুর সংখ্যায় ৪০তম অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত একদিনে বাসাবাড়ি ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তিন হাজার ২৫৬ জন করোনা রোগী সুস্থ হয়েছেন। এ নিয়ে মোট সুস্থ রোগীর সংখ্যা পাঁচ লাখ ৬১ হাজার ৬৩৯ জন।
গত একদিনে সারাদেশের ২৩৭টি ল্যাবে ৩৪ হাজার ৬৩০টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এ পর্যন্ত পরীক্ষা হয়েছে মোট ৪৮ লাখ ৮২ হাজার ৫৬৫টি নমুনা।
এদিন নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় করোনা শনাক্তের হার ছিল ২২ দশমিক ০২ শতাংশ, এ পর্যন্ত মোট শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৫০ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৮৫ দশমিক ১৯ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৪৩ শতাংশ।
২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হওয়া ৬৩ জনের মধ্যে ৩৯ জন পুরুষ এবং ২৪ জন নারী। তাদের সবার মৃত্যু হয়েছে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায়। এর মধ্যে ৪০ জনের বয়স ৬০ বছরের বেশি, ১০ জনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছর, পাঁচজনের বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে, দু’জনের বয়স ৩১ থেকে ৪০ বছর, তিনজনের বয়স ২১ থেকে ৩০ বছর এবং একজনের বয়স ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে ছিল।
মৃত্যু হওয়া লোকজনের মধ্যে ৪১ জন ঢাকা বিভাগের, ১০ জন চট্টগ্রাম বিভাগের, চারজন রাজশাহী বিভাগের, একজন বরিশাল বিভাগের, তিনজন সিলেট বিভাগের এবং দু’জন ময়মনসিংহ বিভাগের বাসিন্দা ছিলেন।
দেশে বুধবার পর্যন্ত মৃত্যু হওয়া ৯ হাজার ৪৪৭ জনের মধ্যে সাত হাজার ৮২ জন পুরুষ এবং দুই হাজার ৩৬৫ জন নারী। এর মধ্যে পাঁচ হাজার ৩০৩ জনের বয়স ছিল ৬০ বছরের বেশি। অন্যদের মধ্যে দুই হাজার ৩২৪ জনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছর, এক হাজার ৫৯ জনের বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছর, ৪৬৮ জনের বয়স ৩১ থেকে ৪০ বছর, ১৮৪ জনের বয়স ২১ থেকে ৩০ বছর, ৭০ জনের বয়স ১১ থেকে ২০ বছর এবং ৩৯ জনের বয়স ছিল ১০ বছরের কম।
এ পর্যন্ত মারা যাওয়া লোকজনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঢাকায়। ঢাকা বিভাগেই করোনায় পাঁচ হাজার ৪৩৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। অন্যদের মধ্যে এক হাজার ৬৯৪ জন চট্টগ্রাম বিভাগের, ৫১৭ জন রাজশাহী বিভাগের, ৫৯৭ জন খুলনা বিভাগের, ২৮০ জন বরিশাল বিভাগের, ৩৩২ জন সিলেট বিভাগের, ৩৮১ জন রংপুর বিভাগের এবং ২০৭ জন ময়মনসিংহ বিভাগের বাসিন্দা ছিলেন।
সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি। সব হাসপাতালে রোগীর ভিড়, বেড সংকট। ঢাকা মেডিকেলে করোনা ইউনিটের সামনে থেকে নেয়া ছবি -সোহরাব আলম
বুধবার, ০৭ এপ্রিল ২০২১
দেশে প্রথম করোনা শনাক্তের তিনমাস পর গত বছরের জুনের প্রথম সপ্তাহে চূড়ায় (পিকে) ওঠে সংক্রমণ। জুলাইয়ের শেষ নাগাদ সর্বোচ্চ সংক্রমণ ঘটে। প্রথম ঢেউয়ে পিকে অর্থাৎ সর্বোচ্চ সংক্রমণের সময় ৭ জুন থেকে ৭ জুলাই পর্যন্ত ৩০ দিনে প্রায় এক লাখ তিন হাজার মানুষের করোনা শনাক্ত হয়। ওই মাসে মৃত্যু হয়েছিল এক হাজার ২৬৩ জনের। গত বছরের ২ জুলাই একদিনে সর্বোচ্চ চার হাজার ১৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছিল।
অথচ করোনার ‘দ্বিতীয় ঢেউ’য়ে ‘বিপজ্জনক’ গতিতে ছড়াচ্ছে সংক্রমণ। দ্বিতীয় ঢেউয়ে মাত্র একমাসের সংক্রমণই গত বছরের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। মৃত্যুর সংখ্যাও পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। গত ৩১ মার্চ থেকেই দৈনিক ৫০ জনের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
এবার মার্চের শুরু থেকেই পুনরায় বাড়তে থাকে সংক্রমণ। এর আগে গত জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় দৈনিক শনাক্তের হার ৩/৪ শতাংশ এবং দৈনিক শনাক্তের সংখ্যা চার থেকে পাঁচশ’র কাছাকাছি নেমেছিল।
শিশু ও তরুণদেরও মৃত্যু হচ্ছে :
স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী, করোনায় শিশু-তরুণদের মৃত্যুও বাড়ছে। বুধবার (৭ এপ্রিল) পর্যন্ত দেশে করোনায় ৩৯ জন শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এদের সবারই বয়স ছিল ১০ বছরেরও কম। এছাড়াও করোনায় ১১ থেকে ২০ বছর বয়সী ৭০ জন তরুণের মৃত্যু হয়েছে।
শিশু ও তরুণদের করোনা সংক্রমণের বিষয়ে জানতে চাইলে সরকারের রোগতত্ত্ব ও রোগ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এএসএম আলমগীর সংবাদকে বলেন, ‘স্বাস্থ্যবিধি না মানলে যে কেউ করোনায় আক্রান্ত হতে পারেন। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে, আমরা যারা বয়স্ক নাগরিক, নিজেরাও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাফেরা করছি না, মাস্ক পরছি না; আবার ছেলেমেয়েদের নিয়েও বাইরে ঘোরাফেরা করছি। এভাবে চলতে থাকলে শিশু, তরুণ বা যুবকরা আক্রান্ত হতেই পারে।’
সারাবিশ্বেই তরুণ ও যুবকরা বেশি করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন- উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তরুণদের মধ্যে মৃত্যুঝুঁকি কম, যেহেতু কো-মর্বিডিটি (অন্যান্য রোগ) নেই। বয়স্ক ও প্রবীণদের তা বেশি থাকে, এজন্য ঝুঁকিও বেশি।’
‘লকডাউন’ না মানায় তৃণমূলেও সংক্রমণের আশঙ্কা :
এদিকে করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে সরকারের দেয়া ‘লকডাউন’ পুরোপুরি কার্যকর না হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও আইইডিসিআরের কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, ‘লকডাউন’ ঘোষণার আগেই লাখ লাখ মানুষ রাজধানী ছেড়ে গ্রামের বাড়িতে গিয়েছেন। কেউ কেউ এক জেলা থেকে অন্য জেলায় গিয়েছেন। ওই সময় যাতায়াতে লঞ্চ, বাস- কোন যানবাহনেই ন্যূনতম স্বাস্থ্যবিধি কেউ অনুসরণ করেননি। এতে গ্রামাঞ্চল বিশেষ করে তৃণমূল পর্যায়েও এখন সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
ডা. এএসএম আলমগীর বলেছেন, ‘গত দু’তিন দিন আমরা মানুষের মধ্যে মাস্ক পরা বেড়েছে। এখন যদি লকডাউন পুরোপুরি কার্যকর হয়, তাহলে আগামী ৫-৭-১০ দিনের মধ্যে সংক্রমণের গতি থামতে পারে। কিন্তু আশঙ্কাও রয়েছে, লকডাউনের আগে মানুষ যেভাবে হুড়োহুড়ি করে গ্রামাঞ্চলে গিয়েছে তাতে তৃণমূল পর্যায়েও এখন সংক্রমণ হতে পারে।’
গত একমাসের ‘ভয়ংকর’ চিত্র :
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, গত ৭ মার্চ দেশে ৬০৬ জনের করোনা শনাক্ত এবং ১১ জনের মৃত্যু হয়েছিল। ওইদিন নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ছিল ৪ দশমিক ৩০ শতাংশ। একমাসের মাথায় বুধবার দেশে শনাক্তের হার ছিল ২২ দশমিক ০২ শতাংশ। অর্থাৎ গত একমাসেই শনাক্তের হার ৪ শতাংশ থেকে ২২ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে।
৭ মার্চ পর্যন্ত দেশে মোট পাঁচ লাখ ৫০ হাজার ৩৩০ জনের করোনা শনাক্ত এবং আট হাজার ৪৬২ জনের মৃত্যু হয়েছিল। বুধবার পর্যন্ত মোট শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়ায় ছয় লাখ ৫৯ হাজার ২৭৮ জন এবং মৃত্যুর সংখ্যা পৌঁছে ৯ হাজার ৪৪৭ জনে।
এ হিসেবে গত ৩১ দিনে এক লাখ আট হাজার ৯৪৮ জনের করোনা শনাক্ত এবং ৯৮৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।
টানা চারদিনই দৈনিক শনাক্ত ৭ হাজারের বেশি :
করোনার প্রথম ধাক্কায় মাত্র তিনদিন সর্বোচ্চ চার হাজারের কিছু বেশি মানুষের করোনা শনাক্ত হয়েছিল। আর এবার গত চারদিনই দৈনিক শনাক্তের সংখ্যা সাত হাজার ছাড়িয়ে গেছে।
বুধবার বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ৬ এপ্রিল সকাল ৮টা থেকে বুধবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে রেকর্ড সাত হাজার ৬২৬ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এর আগে ৬ এপ্রিল সাত হাজার ২১৩ জন, ৫ এপ্রিল সাত হাজার ৭৫ জন এবং ৪ এপ্রিল সাত হাজার ৮৭ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছিল।
মৃত্যুও বাড়ছে ‘আশঙ্কাজনকভাবে’:
টানা দু’দিনই দেশে করোনায় ৬০ জনের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বুধবার দেশে করোনায় ৬৩ জনের মৃত্যুর কথা জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এর আগের ২৪ ঘণ্টায় এখন পর্যন্ত একদিনে সর্বোচ্চ ৬৬ জনের মৃত্যুর তথ্য জানিয়েছিল অধিদপ্তর।
আর করোনার প্রথম ধাক্কায় গত বছরের ৩০ জুন একদিনে সর্বোচ্চ ৬৪ জনের মৃত্যুর কথা জানিয়েছিল স্বাস্থ্য বিভাগ।
২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের রেকর্ড :
২৪ ঘণ্টায় দেশে এখন পর্যন্ত একদিনে সর্বোচ্চ সাত হাজার ৬২৬ জনের করোনা শনাক্ত করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। তাদের নিয়ে দেশে এ পর্যন্ত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ছয় লাখ ৫৯ হাজার ২৭৮ জনে।
আর এই ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হওয়া ৬৩ জনকে নিয়ে দেশে করোনায় মোট ৯ হাজার ৪৪৭ জনের মৃত্যু হলো।
যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় বিশ্বে করোনা শনাক্তে ৩৩তম স্থানে এবং মৃত্যুর সংখ্যায় ৪০তম অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত একদিনে বাসাবাড়ি ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তিন হাজার ২৫৬ জন করোনা রোগী সুস্থ হয়েছেন। এ নিয়ে মোট সুস্থ রোগীর সংখ্যা পাঁচ লাখ ৬১ হাজার ৬৩৯ জন।
গত একদিনে সারাদেশের ২৩৭টি ল্যাবে ৩৪ হাজার ৬৩০টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এ পর্যন্ত পরীক্ষা হয়েছে মোট ৪৮ লাখ ৮২ হাজার ৫৬৫টি নমুনা।
এদিন নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় করোনা শনাক্তের হার ছিল ২২ দশমিক ০২ শতাংশ, এ পর্যন্ত মোট শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৫০ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৮৫ দশমিক ১৯ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৪৩ শতাংশ।
২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হওয়া ৬৩ জনের মধ্যে ৩৯ জন পুরুষ এবং ২৪ জন নারী। তাদের সবার মৃত্যু হয়েছে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায়। এর মধ্যে ৪০ জনের বয়স ৬০ বছরের বেশি, ১০ জনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছর, পাঁচজনের বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে, দু’জনের বয়স ৩১ থেকে ৪০ বছর, তিনজনের বয়স ২১ থেকে ৩০ বছর এবং একজনের বয়স ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে ছিল।
মৃত্যু হওয়া লোকজনের মধ্যে ৪১ জন ঢাকা বিভাগের, ১০ জন চট্টগ্রাম বিভাগের, চারজন রাজশাহী বিভাগের, একজন বরিশাল বিভাগের, তিনজন সিলেট বিভাগের এবং দু’জন ময়মনসিংহ বিভাগের বাসিন্দা ছিলেন।
দেশে বুধবার পর্যন্ত মৃত্যু হওয়া ৯ হাজার ৪৪৭ জনের মধ্যে সাত হাজার ৮২ জন পুরুষ এবং দুই হাজার ৩৬৫ জন নারী। এর মধ্যে পাঁচ হাজার ৩০৩ জনের বয়স ছিল ৬০ বছরের বেশি। অন্যদের মধ্যে দুই হাজার ৩২৪ জনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছর, এক হাজার ৫৯ জনের বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছর, ৪৬৮ জনের বয়স ৩১ থেকে ৪০ বছর, ১৮৪ জনের বয়স ২১ থেকে ৩০ বছর, ৭০ জনের বয়স ১১ থেকে ২০ বছর এবং ৩৯ জনের বয়স ছিল ১০ বছরের কম।
এ পর্যন্ত মারা যাওয়া লোকজনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঢাকায়। ঢাকা বিভাগেই করোনায় পাঁচ হাজার ৪৩৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। অন্যদের মধ্যে এক হাজার ৬৯৪ জন চট্টগ্রাম বিভাগের, ৫১৭ জন রাজশাহী বিভাগের, ৫৯৭ জন খুলনা বিভাগের, ২৮০ জন বরিশাল বিভাগের, ৩৩২ জন সিলেট বিভাগের, ৩৮১ জন রংপুর বিভাগের এবং ২০৭ জন ময়মনসিংহ বিভাগের বাসিন্দা ছিলেন।