লকডাউনে নমুনা পরীক্ষা কমেছে
‘লকডাউনে’ গত দু’দিনে করোনার নমুনা পরীক্ষা কমেছে। এই দু’দিনে প্রায় চার হাজার করে নমুনা পরীক্ষা কমেছে। এতে স্বাভাবিকভাবেই শনাক্তের সংখ্যা কমেছে, কিন্তু শনাক্তের হার কমেনি, বরং কিছুটা বেড়েছে। পরীক্ষা কমলেও এই দু’দিনে রেকর্ড সংখ্যক মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, সংক্রমণ বাড়লে মৃত্যুও বাড়ে, এটাই স্বাভাবিক। তবে এখন যারা মারা যাচ্ছেন তারা দুইতিন সপ্তাহ আগে সংক্রমিত হয়েছে। আরও কিছুদিন মৃত্যু বাড়তে পারে। তবে সমন্বিত প্রচেষ্টায় কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা সম্ভব হলে সংক্রমণ ও মৃত্যু দ্রুততম সময়ের মধ্যে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে।
দেশে করোনায় মৃত্যু দশ হাজার ছাড়িয়েছে বৃহস্পতিবার (১৫ এপ্রিল)। করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ে চলতি মাসের ১৫ দিনেই এক হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার ৯৪ জন এবং এর আগের দিন ৯৬ জনের মৃত্যুর তথ্য জানিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এ নিয়ে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত করোনায় প্রাণহানির সংখ্যা দাঁড়ালো মোট দশ হাজার ৮১ জনে। এই ১৫ দিনে প্রায় এক লাখ মানুষের করোনাও শনাক্ত হয়েছে।
নমুনা পরীক্ষা কম হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরামর্শক ও বিশিষ্ট রোগতত্ত্ববিদ ডা. মুশতাক হোসেন বৃহস্পতিবার সংবাদকে বলেছেন, ‘লকডাউনে কড়াকড়ির কারণে অনেকেই হয়তো ঝামেলা মনে করে নমুনা পরীক্ষা করাতে কেন্দ্রে যাননি। আবার ১৪ এপ্রিল সরকারি ছুটির দিন থাকায় অনেকে এমনিতেই বাসা থেকে বের হয়নি। এসব কারণেই নমুনা পরীক্ষা কিছুটা কম হতে পারে।’
আগামীকাল নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা বাড়তে পারে-ধারণা করে এই জনস্বাস্থ্যবিদ বলেন, ‘শক্র ও শনিবার কিছুটা কমতে পারে, এরপর তা আবার বাড়বে।’
নমুনা পরীক্ষা কমলেও মৃত্যু বাড়ার বিষয়ে ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, ‘এখন যাদের মৃত্যু হচ্ছে, তারা সম্ভবত ৫ এপ্রিলের আগে সংক্রমিত হয়েছেন। লকডাউনের সুফল পেতে নূন্যতম আরও দেড় সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হবে।’
দুই সপ্তাহেই এক হাজারের বেশি মৃত্যু
গত ৩১ মার্চ ৫২ জনের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে করোনায় মোট মৃত্যু ৯ হাজার ৪৬ জনে পৌঁছে। এরপর মাত্র ১৫ দিনের মাথায় বৃহস্পতিবার ৯৪ জনের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে মোট সংখ্যা দাঁড়ায় দশ হাজার ৮১ জনে। দেশে করোনা সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর এই প্রথম দ্রুততম সময়ের এক হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর গঠিত পাবলিক হেলথ অ্যাডভাইজরি কমিটির সদস্য ডা. আবু জামিল ফয়সাল বৃহস্পতিবার সংবাদকে বলেছেন, ‘এখন যে সংক্রমণ শনাক্ত হচ্ছে, তার সঙ্গে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ার কোন সর্ম্পক নেই। কারণ এখন যারা মারা যাচ্ছেন, তারা দুই-তিন সপ্তাহ আগেই সংক্রমিত হয়েছেন। তারপর আস্তে আস্তে খারাপ হতে হতে এই পর্যায়ে এসেছে।’
আগামী কিছুদিন এভাবেই হয়তো আরও মৃত্যু দেখতে হবে, এমন আশঙ্কা করে তিনি বলেন, ‘আমরা যদি সাংঘাতিকভাবে মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে বাধ্য করতে পারতাম তাহলে এটা নিয়ন্ত্রণে আসত। কিন্তু আমরা এটা বুঝতেছি না, না বুঝার কারণটা হলো-আমরা মানুষকে বুঝানোর চেষ্টা করিনি। টেলিভিশনে (সচেতনতামূলক প্রচারণা) মানুষকে বোঝানোর মতো কোন ম্যাসেজ দেয়া হচ্ছে? কোন মাইকিং হচ্ছে? স্থানীয়ভাবে যে জনপ্রতিনিধিরা আছেন তারা কি এলাকার মানুষকে বোঝাচ্ছেন? ইমাম সাহেবরা কি মসজিদে বলছেন? মানুষকে ঘরে রাখা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, মাস্ক পরা, এসব বিষয় নিশ্চিত করতে সমন্বিত প্রচেষ্টা দরকার। সেটা কি আছে?’
গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা শনাক্তের দশ দিন পর ১৮ মার্চ প্রথম একজনের মৃত্যু খবর দিয়েছিল স্বাস্থ্য বিভাগ।
করোনায় প্রথম মৃত্যুর প্রায় আড়াই মাস পর গত বছরের ১০ জুন প্রাণহানির সংখ্যা এক হাজার ছাড়িয়ে যায়। এরপর ৫ জুলাই দুই হাজার, ২৮ জুলাই তিন হাজার, ২৫ অগাস্ট চার হাজার, ২২ সেপ্টেম্বর পাঁচ হাজার, ৪ নভেম্বর ছয় হাজার ছাড়িয়ে যায়। এরপর ১২ ডিসেম্বর সাত হাজার, গত ২৩ জানুয়ারি আট হাজারের ঘর অতিক্রম করে।
নমুনা পরীক্ষা কমার চিত্র
বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বৃস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে আগের ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশের ২৫৭টি ল্যাবে (পরীক্ষাগার) ১৯ হাজার ৯৫৯টি নমুনা পরীক্ষায় পাঁচ হাজার ৯১৫ জনের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ২১ শতাংশ।
আগের দিন অধিদপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ১৪ এপ্রিল সকাল ৮টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে ২৪ হাজার ৮২৫টি নমুনা পরীক্ষায় পাঁচ হাজার ১৮৫ জনের সংক্রমণ শনাক্ত হয়। শনাক্তের হার ২০ দশমিক ৮৯ শতাংশ। ওইদিন রেকর্ড ৯৬ জনের মৃত্যু হয়।
গত ১৩ এপ্রিল সারাদেশে ৩২ হাজার ৯৫৫টি নমুনা পরীক্ষায় ছয় হাজার ২৮ জনের করোনা শনাক্ত হয়, নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ছিল ১৮ দশমিক ২৯ শতাংশ।
এর আগে ১২ এপ্রিল ৩৪ হাজার ৯৬৮টি নমুনা পরীক্ষায় সাত হাজার ২০১ জনের সংক্রমণ শনাক্ত হয়, নমুনা পরীক্ষার অনুপাতে শনাক্তের হার ছিল ২০ দশমিক ৫৯ শতাংশ।
দ্বিতীয় ঢেউয়ে প্রাণঘাতী সংক্রমণ
গত মার্চের শুরু থেকেই দেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে। এর আগে জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে শনাক্তের হার ৩/৪ শতাংশ এবং দৈনিক শনাক্তের সংখ্যাও ৩শ’ কাছাকাছি নেমেছিল। ১ মার্চ থেকে ক্রমেই বাড়তে থাকে সংক্রমণ ও মৃত্যু।
গত ৩১ মার্চ ৫২ জনের মৃত্যুর তথ্য জানিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এরপর থেকে দৈনিক মৃত্যু ৫০ জনের নিচে নামেনি, এখন একশ’র কাছাকাছি পৌঁছে। এর মধ্যে ১৪ এপ্রিল একদিনে সর্বোচ্চ ৯৬ জনের মৃত্যু হয়।
সংক্রমণের প্রথম ঢেউয়ে গত বছরের ২ জুলাই একদিনে সর্বোচ্চ চার হাজার ১৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছিল। অথচ দ্বিতীয় ঢেউয়ে গত কয়েক দিন ধরে দৈনিক ছয় হাজারের বেশি মানুষের করোনা শনাক্ত হয়ে আসছিল। এর মধ্যে গত ৭ এপ্রিল রেকর্ড সাত হাজার ৬২৬ জনের করোনা শনাক্ত হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটির তালিকায় বিশ্বে করোনা শনাক্তে ৩৩তম স্থানে এবং মৃত্যুর সংখ্যায় ৩৮তম অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ।
২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার
গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্ত রোগীর হার ২০ দশমিক ৮৯ শতাংশ। এই পর্যন্ত শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ১৩ দশমিক ৮৩। আর শনাক্ত রোগীদের মৃত্যুর হার দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ৪৩ শতাংশে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে ২৫৭টি ল্যাবে ১৯ হাজার ৯৫৯টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৫১ লাখ ১৫ হাজার ৫৭২টি।
একদিনে মৃত্যু হওয়া ৯৪ জনের মধ্যে ৬৪ জন পুরুষ আর নারী ৩০ জন। তাদের মধ্যে চারজন বাড়িতে এবং ৯০ জনের মৃত্যু হয়েছে হাসপাতালে।
দেশে এ পর্যন্ত মারা যাওয়া ১০ হাজার ৮১ জনের মধ্যে সাত হাজার ৪৯৯ জন পুরুষ এবং দুই হাজার ৫৮২ জন নারী।
২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ৫২ জনের বয়স ৬০ বছরের বেশি, ২৫ জনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছর, ১৪ জনের বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছর এবং তিনজনের বয়স ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ছিল। এর মধ্যে ৬৯ জন ঢাকা বিভাগের, ১২ জন চট্টগ্রাম বিভাগের, ছয়জন রাজশাহী বিভাগের, তিন খুলনা বিভাগের, দুইজন বরিশাল বিভাগের, একজন করে সিলেট ও রংপুর বিভাগের বাসিন্দা ছিলেন।
লকডাউনে নমুনা পরীক্ষা কমেছে
বৃহস্পতিবার, ১৫ এপ্রিল ২০২১
‘লকডাউনে’ গত দু’দিনে করোনার নমুনা পরীক্ষা কমেছে। এই দু’দিনে প্রায় চার হাজার করে নমুনা পরীক্ষা কমেছে। এতে স্বাভাবিকভাবেই শনাক্তের সংখ্যা কমেছে, কিন্তু শনাক্তের হার কমেনি, বরং কিছুটা বেড়েছে। পরীক্ষা কমলেও এই দু’দিনে রেকর্ড সংখ্যক মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, সংক্রমণ বাড়লে মৃত্যুও বাড়ে, এটাই স্বাভাবিক। তবে এখন যারা মারা যাচ্ছেন তারা দুইতিন সপ্তাহ আগে সংক্রমিত হয়েছে। আরও কিছুদিন মৃত্যু বাড়তে পারে। তবে সমন্বিত প্রচেষ্টায় কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা সম্ভব হলে সংক্রমণ ও মৃত্যু দ্রুততম সময়ের মধ্যে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে।
দেশে করোনায় মৃত্যু দশ হাজার ছাড়িয়েছে বৃহস্পতিবার (১৫ এপ্রিল)। করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ে চলতি মাসের ১৫ দিনেই এক হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার ৯৪ জন এবং এর আগের দিন ৯৬ জনের মৃত্যুর তথ্য জানিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এ নিয়ে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত করোনায় প্রাণহানির সংখ্যা দাঁড়ালো মোট দশ হাজার ৮১ জনে। এই ১৫ দিনে প্রায় এক লাখ মানুষের করোনাও শনাক্ত হয়েছে।
নমুনা পরীক্ষা কম হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরামর্শক ও বিশিষ্ট রোগতত্ত্ববিদ ডা. মুশতাক হোসেন বৃহস্পতিবার সংবাদকে বলেছেন, ‘লকডাউনে কড়াকড়ির কারণে অনেকেই হয়তো ঝামেলা মনে করে নমুনা পরীক্ষা করাতে কেন্দ্রে যাননি। আবার ১৪ এপ্রিল সরকারি ছুটির দিন থাকায় অনেকে এমনিতেই বাসা থেকে বের হয়নি। এসব কারণেই নমুনা পরীক্ষা কিছুটা কম হতে পারে।’
আগামীকাল নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা বাড়তে পারে-ধারণা করে এই জনস্বাস্থ্যবিদ বলেন, ‘শক্র ও শনিবার কিছুটা কমতে পারে, এরপর তা আবার বাড়বে।’
নমুনা পরীক্ষা কমলেও মৃত্যু বাড়ার বিষয়ে ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, ‘এখন যাদের মৃত্যু হচ্ছে, তারা সম্ভবত ৫ এপ্রিলের আগে সংক্রমিত হয়েছেন। লকডাউনের সুফল পেতে নূন্যতম আরও দেড় সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হবে।’
দুই সপ্তাহেই এক হাজারের বেশি মৃত্যু
গত ৩১ মার্চ ৫২ জনের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে করোনায় মোট মৃত্যু ৯ হাজার ৪৬ জনে পৌঁছে। এরপর মাত্র ১৫ দিনের মাথায় বৃহস্পতিবার ৯৪ জনের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে মোট সংখ্যা দাঁড়ায় দশ হাজার ৮১ জনে। দেশে করোনা সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর এই প্রথম দ্রুততম সময়ের এক হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর গঠিত পাবলিক হেলথ অ্যাডভাইজরি কমিটির সদস্য ডা. আবু জামিল ফয়সাল বৃহস্পতিবার সংবাদকে বলেছেন, ‘এখন যে সংক্রমণ শনাক্ত হচ্ছে, তার সঙ্গে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ার কোন সর্ম্পক নেই। কারণ এখন যারা মারা যাচ্ছেন, তারা দুই-তিন সপ্তাহ আগেই সংক্রমিত হয়েছেন। তারপর আস্তে আস্তে খারাপ হতে হতে এই পর্যায়ে এসেছে।’
আগামী কিছুদিন এভাবেই হয়তো আরও মৃত্যু দেখতে হবে, এমন আশঙ্কা করে তিনি বলেন, ‘আমরা যদি সাংঘাতিকভাবে মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে বাধ্য করতে পারতাম তাহলে এটা নিয়ন্ত্রণে আসত। কিন্তু আমরা এটা বুঝতেছি না, না বুঝার কারণটা হলো-আমরা মানুষকে বুঝানোর চেষ্টা করিনি। টেলিভিশনে (সচেতনতামূলক প্রচারণা) মানুষকে বোঝানোর মতো কোন ম্যাসেজ দেয়া হচ্ছে? কোন মাইকিং হচ্ছে? স্থানীয়ভাবে যে জনপ্রতিনিধিরা আছেন তারা কি এলাকার মানুষকে বোঝাচ্ছেন? ইমাম সাহেবরা কি মসজিদে বলছেন? মানুষকে ঘরে রাখা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, মাস্ক পরা, এসব বিষয় নিশ্চিত করতে সমন্বিত প্রচেষ্টা দরকার। সেটা কি আছে?’
গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা শনাক্তের দশ দিন পর ১৮ মার্চ প্রথম একজনের মৃত্যু খবর দিয়েছিল স্বাস্থ্য বিভাগ।
করোনায় প্রথম মৃত্যুর প্রায় আড়াই মাস পর গত বছরের ১০ জুন প্রাণহানির সংখ্যা এক হাজার ছাড়িয়ে যায়। এরপর ৫ জুলাই দুই হাজার, ২৮ জুলাই তিন হাজার, ২৫ অগাস্ট চার হাজার, ২২ সেপ্টেম্বর পাঁচ হাজার, ৪ নভেম্বর ছয় হাজার ছাড়িয়ে যায়। এরপর ১২ ডিসেম্বর সাত হাজার, গত ২৩ জানুয়ারি আট হাজারের ঘর অতিক্রম করে।
নমুনা পরীক্ষা কমার চিত্র
বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বৃস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে আগের ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশের ২৫৭টি ল্যাবে (পরীক্ষাগার) ১৯ হাজার ৯৫৯টি নমুনা পরীক্ষায় পাঁচ হাজার ৯১৫ জনের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ২১ শতাংশ।
আগের দিন অধিদপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ১৪ এপ্রিল সকাল ৮টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে ২৪ হাজার ৮২৫টি নমুনা পরীক্ষায় পাঁচ হাজার ১৮৫ জনের সংক্রমণ শনাক্ত হয়। শনাক্তের হার ২০ দশমিক ৮৯ শতাংশ। ওইদিন রেকর্ড ৯৬ জনের মৃত্যু হয়।
গত ১৩ এপ্রিল সারাদেশে ৩২ হাজার ৯৫৫টি নমুনা পরীক্ষায় ছয় হাজার ২৮ জনের করোনা শনাক্ত হয়, নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ছিল ১৮ দশমিক ২৯ শতাংশ।
এর আগে ১২ এপ্রিল ৩৪ হাজার ৯৬৮টি নমুনা পরীক্ষায় সাত হাজার ২০১ জনের সংক্রমণ শনাক্ত হয়, নমুনা পরীক্ষার অনুপাতে শনাক্তের হার ছিল ২০ দশমিক ৫৯ শতাংশ।
দ্বিতীয় ঢেউয়ে প্রাণঘাতী সংক্রমণ
গত মার্চের শুরু থেকেই দেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে। এর আগে জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে শনাক্তের হার ৩/৪ শতাংশ এবং দৈনিক শনাক্তের সংখ্যাও ৩শ’ কাছাকাছি নেমেছিল। ১ মার্চ থেকে ক্রমেই বাড়তে থাকে সংক্রমণ ও মৃত্যু।
গত ৩১ মার্চ ৫২ জনের মৃত্যুর তথ্য জানিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এরপর থেকে দৈনিক মৃত্যু ৫০ জনের নিচে নামেনি, এখন একশ’র কাছাকাছি পৌঁছে। এর মধ্যে ১৪ এপ্রিল একদিনে সর্বোচ্চ ৯৬ জনের মৃত্যু হয়।
সংক্রমণের প্রথম ঢেউয়ে গত বছরের ২ জুলাই একদিনে সর্বোচ্চ চার হাজার ১৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছিল। অথচ দ্বিতীয় ঢেউয়ে গত কয়েক দিন ধরে দৈনিক ছয় হাজারের বেশি মানুষের করোনা শনাক্ত হয়ে আসছিল। এর মধ্যে গত ৭ এপ্রিল রেকর্ড সাত হাজার ৬২৬ জনের করোনা শনাক্ত হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটির তালিকায় বিশ্বে করোনা শনাক্তে ৩৩তম স্থানে এবং মৃত্যুর সংখ্যায় ৩৮তম অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ।
২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার
গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্ত রোগীর হার ২০ দশমিক ৮৯ শতাংশ। এই পর্যন্ত শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ১৩ দশমিক ৮৩। আর শনাক্ত রোগীদের মৃত্যুর হার দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ৪৩ শতাংশে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে ২৫৭টি ল্যাবে ১৯ হাজার ৯৫৯টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৫১ লাখ ১৫ হাজার ৫৭২টি।
একদিনে মৃত্যু হওয়া ৯৪ জনের মধ্যে ৬৪ জন পুরুষ আর নারী ৩০ জন। তাদের মধ্যে চারজন বাড়িতে এবং ৯০ জনের মৃত্যু হয়েছে হাসপাতালে।
দেশে এ পর্যন্ত মারা যাওয়া ১০ হাজার ৮১ জনের মধ্যে সাত হাজার ৪৯৯ জন পুরুষ এবং দুই হাজার ৫৮২ জন নারী।
২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ৫২ জনের বয়স ৬০ বছরের বেশি, ২৫ জনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছর, ১৪ জনের বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছর এবং তিনজনের বয়স ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ছিল। এর মধ্যে ৬৯ জন ঢাকা বিভাগের, ১২ জন চট্টগ্রাম বিভাগের, ছয়জন রাজশাহী বিভাগের, তিন খুলনা বিভাগের, দুইজন বরিশাল বিভাগের, একজন করে সিলেট ও রংপুর বিভাগের বাসিন্দা ছিলেন।