দেশব্যাপী আলোচিত কলেজছাত্রী মোশারাত জাহান মুনিয়ার ‘অস্বাভাবিক মৃত্যুর’ ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় একমাত্র আসামী বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীরকে অব্যাহতি দিয়ে আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন মামলার বাদী তার বোন নুসরাত জাহান।
তার অভিযোগ, ‘প্রভাবিত হয়ে’ এ মামলায় আনভীরকে অব্যাহতি দিয়ে প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে। আর এই মামলায় সমঝোতা করেননি বলে তাকে চাকরীচ্যুত করা হয়েছে বলেও অভিযোগ তার। ‘শুধু তাই নয়, নষ্ট করা হয়েছে মুনিয়ার ফরেনসিক আলামতও’ এই অভিযোগও করলেন নুসরাত।
“মামলাটি সমঝোতা করতে বিভিন্নভাবে চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে আমাকে চাকরীচ্যুত করা হয়েছে। আমাকে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করতেই হয়রানী করা হচ্ছে। মামলার ধার্য্য তারিখে আমরা আইনী প্রক্রিয়া অনুসরণ করে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করব,” বলেন নুসরাত।
বেশ কিছুদিন ধরেই খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না নুসরাত জাহানের। তিনি তার কুমিল্লা শহরের বাসায়ও থাকছেন না। তবে গত মঙ্গলবার বিকালে সংবাদের সঙ্গে যোগাযোগ হয় তার। তখন তিনি বলেন তাকে বিভিন্ন ভাবে হুমকি দেয়া হচ্ছে। তার অভিযোগ বেশ কিছু অনলাইন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার ‘চরিত্র হনন’ করা হচ্ছে। সে কারনেই তিনি কোনও গনমাধ্যমের সঙ্গেও কথা বলছিলেন না।
তিনি অভিযোগ করেন, “সাম্প্রতিক সময়ে দেখছি বিভিন্ন অনলাইন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমার চরিত্র জড়িয়ে মিথ্যা অপপ্রচার করা হচ্ছে। আমাকে মানসিকভাবে হয়রানি ও সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করতেই এ ধরণের কার্যক্রম অব্যাহত রাখা হয়েছে।”
তদন্ত নিয়ে নুসরাতের অভিযোগ
মুনিয়ার বড় বোন নুসরাত বলেন, “আমি মামলার বাদী হয়ে গত দুইমাস ধরে গুলশান জোনের ডিসি, এডিসি ও গুলশান থানার ওসিকে একাধিকবার ফোন দিয়েছি। তারা আমার ফোন ধরেননি, কখনো কেটে দিয়েছেন। আমাকে কোন গুরুত্বই দেয়া হয়নি। গত ১৯ জুলাই এ প্রতিবেদন আদালতে দেয়া হলেও আমি নোটিশ পেয়েছি গত ২৫ জুলাই।”
এ বিষয়ে জানতে মামলার তদন্তের দায়িত্বে থাকা গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে এ বিষয়ে তিনি কোন কথা বলবেন না বলে জানান। তবে তিনি বলেন, “আমরা প্রতিবেদন আদালতে দিয়েছি। বাদীও জানে। এখন আদালত এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিবেন।”
পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে ১৯ জুলাই আনভীরকে অব্যহতি দিয়ে তারা এই মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দিয়েছে। আগামীকাল ২৯ জুলাই ওই প্রতিবেদন বিষয়ে আদলতের সিদ্ধান্ত দেবার কথা বলে পুলিশ জানিয়েছে।
গত ২৬ এপ্রিল গুলশানে একটি ফ্ল্যাট থেকে কলেজ ছাত্রী মুনিয়ার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ফ্ল্যাট থেকে বিভিন্ন আলামতের মধ্যে কয়েকটি ডায়েরি পায় পুলিশ। যেগুলো ছিলো মুনিয়ার ব্যাক্তিগত। ওই ডায়েরির লেখা থেকে পুলিশ জানতে পারে মুনিয়ার সঙ্গে বসুন্ধরার এমডি আনভীরের প্রেমের সম্পর্ক ছিলো। মুনিয়াকে ‘বিয়ে করে স্ত্রীর মর্যাদা দেওয়ার স্বপ্ন’ দেখিয়েছে আনভীর বলে জানায় পুলিশ। স্ত্রী পরিচয় দিয়ে মুনিয়াকে বাসাও ভাড়া নিয়ে দেয় আনভীর। যে বাসায় আনভীরের যাতায়াত ছিলো।
তখন মুনিয়ার বোন নুসরাত বাদী হয়ে মুনিয়ার ‘আত্নহত্যায় প্ররোচনার’ দায়ে আনভীরকে অভিযুক্ত করে মামলা করেন।
নুসরাত জাহান বলেন, “ওইসময় পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদন এবং ফরেনসিক রিপোর্টের ভিত্তিতে আমি ন্যায় বিচার পাওয়ার প্রত্যাশা করেছিলাম। কিন্তু আনভীরকে অব্যাহতি দিয়ে এমন প্রতিবেদনসহ সার্বিক বিষয় আমাকে হতাশ করেছে।”
ফরেনসিক রিপোর্টের কথা উল্লেখ করে নুসরাত দাবী করেন, “মামলা দায়েরের পর আমি ফরেনসিক বিভাগ থেকে জানতে পেরেছি, মুনিয়া ৬ সপ্তাহের অন্তঃস্বত্তা ছিল। কিন্তু এখন বলা হচ্ছে টিউমার।” তার অভিযোগ নষ্ট করা হয়েছে ফরেনসিক আলামত।
ময়না তদন্ত প্রতিবেদন তৈরিতে দায়িত্বে ছিলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের তিন চিকিৎসকের কমিটি। তাদের পক্ষে ওই কমিটির সদস্য ডাঃ প্রদীপ বিশ্বাস সংবাদকে জানান তারা এই বিষয়ে কোনও কথা বলবেন না। “আমরা ময়না তদন্তের প্রতিবেদন জমা দিয়েছি। আমাদের আর কোনও বক্তব্য নাই,” বলেন ডাঃ বিশ্বাস।
কেন চাকরি হারালেন নুসরাত
নুসরাত জানান, তিনি পদ্মা ব্যাংক লিমিটেড, কুমিল্লা শাখায় রিটেইল ডিপোজিট ডিপার্টমেন্টে মার্কেটিং এক্সিকিউটিভ হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
“আমার ছোটবোন মুনিয়ার মৃত্যুর পর আমি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ি। এতে আমি ১৩ দিন অফিসে যেতে পারিনি। ওই সময়ে আমাকে ১৩ দিন অনুপস্থিতি দেখিয়ে ১১ হাজার ৮শ টাকা বেতন কেটে রাখা হয়।”
তার অভিযোগ মুনিয়ার মৃত্যুর বিষয়টি আলোচনায় আসার পর পদ্মা ব্যাংক এর মানবসম্পদ বিভাগের এক শীর্ষ কর্মকর্তা গত ৩০ মে আনভীরের সাথে সমঝোতার জন্য তাকে প্রস্তাব দেন। “কিন্তু আমি আপোষ করিনি। এরপর আমাকে ব্যাংকের উর্ধ্বতন বিভিন্ন কর্মকর্তা দিয়েও মামলাটি নিষ্পত্তির জন্য প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল। কিন্তু আমি একই উত্তর দিয়েছি, আমার বোনের ন্যায় বিচারের স্বার্থে আপোষ করব না।
“পরবর্তীতে গত ১৩ জুলাই আমাকে আকস্মিকভাবে চাকরিচ্যুত করা হয়। ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী এক মাস আগে সতর্ক করার কথা থাকলেও আমার ক্ষেত্রে তা করা হয়নি।
নুসরাতের চাকরীচ্যুতির বিষয়ে জানতে চাইলে পদ্মা ব্যাংকের কুমিল্লা শাখার ব্যবস্থাপক আশেক উল্লাহ বলেন, ‘বিষয়টি হেড অফিস ভাল বলতে পারবে, আমি কিছুই জানি না।’
এ বিষয়ে পদ্মা ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগের প্রধান আহসান উল্লাহ খান এর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি। পদ্মা ব্যাংকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে তিনি এ বিষয়ে কথা বলবেন না।
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে পদ্মা ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা সংবাদকে বলেন, “মুনিয়ার মামলার সঙ্গে তার বোনের চাকরি চলে যাওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই। তার বোন নুসরাত জাহান আমাদের ব্যাংকের সেলস বিভাগের একজন অস্থায়ী কর্মকর্তা ছিলেন। তার দায়িত্ব ছিল ব্যাংকের জন্য ফান্ড সংগ্রহ করা। প্রতি মাসে তাকে টার্গেট দেওয়া হতো। কিন্তু গত ৮ মাসে কোনো টার্গেটই তিনি পুরণ করতে পারেননি। তাই মানবসম্পদ বিভাগ তাকে চাকরি থেকে অব্যহতি দিয়েছে।
“শুধু মুনিয়ার বোনই নয়, একইসঙ্গে আরও কয়েকজন অস্থায়ী কর্মকর্তাকে অব্যহতি দেওয়া হয়েছে টার্র্গেট পূরণ না করতে পারার কারণে। প্রতিটি ব্যাংকে সেলস বিভাগে অনেক কর্মকর্তাকে অস্থায়ী নিয়োগ দেওয়া হয়। আবার টার্গেট পুরণ না করতে পারলে চাকরিচূত্য করাও হয়। এটি খুবই সাধারণ একটি বিষয়,” বলেন ঐ কর্মকর্তা।
তবে নুসরাতের দাবী তিনি ৩ কোটি ৯৪ লাখ টাকার ডিপোজিট বা আমানত এনেছেন। আর বিপরীতে তার প্রণোদনা বা ইনটেনসিভ বাবদ ৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা পাওয়ার কথা থাকলেও তিনি তা পাননি। তিনি এই অভিযোগও করলেন যে তাকে সর্বশেষ মাসের বেতনও দেয়া হয়নি।
মামলার পরবর্তী কার্যক্রম
মামলার পরবর্তী কার্যক্রম প্রসঙ্গে নুসরাত জাহান বলেন, “আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আইনী প্রক্রিয়া অনুসরণ করে আইনজীবির মাধ্যমে মামলার পরবর্তী কার্যক্রম পরিচালনা করব। এ মুহুর্তে এ নিয়ে আর কিছু বলতে চাই না।“
‘আত্নহত্যায় প্ররোচনার’ মামলার পরে পুলিশের পক্ষ থেকে আদালতের মাধ্যমে বসুন্ধরার আনভীরের দেশ ত্যাগে নিশেধাজ্ঞা দেয়া হয়। শুরুতে এই মামলা নিয়ে পুলিশ বেশ সরব ছিল। পরে ১৯ জুলাই আনভীরকে অব্যহতি দিয়ে পুলিশ এই মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেয়। তবে কীসের ভিত্তিতে পুলিশের এই সিদ্ধান্ত, ফরেনসিক বা ময়না তদন্ত প্রতিবেদনে কী পাওয়া গেছে সে বিষয়ে বহুবার যোগাযোগ করা হলেও তদন্তসংশ্লিষ্ট কারো কাছ থেকে কোনও উত্তর পাওয়া যায়নি।
বুধবার, ২৮ জুলাই ২০২১
দেশব্যাপী আলোচিত কলেজছাত্রী মোশারাত জাহান মুনিয়ার ‘অস্বাভাবিক মৃত্যুর’ ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় একমাত্র আসামী বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীরকে অব্যাহতি দিয়ে আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন মামলার বাদী তার বোন নুসরাত জাহান।
তার অভিযোগ, ‘প্রভাবিত হয়ে’ এ মামলায় আনভীরকে অব্যাহতি দিয়ে প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে। আর এই মামলায় সমঝোতা করেননি বলে তাকে চাকরীচ্যুত করা হয়েছে বলেও অভিযোগ তার। ‘শুধু তাই নয়, নষ্ট করা হয়েছে মুনিয়ার ফরেনসিক আলামতও’ এই অভিযোগও করলেন নুসরাত।
“মামলাটি সমঝোতা করতে বিভিন্নভাবে চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে আমাকে চাকরীচ্যুত করা হয়েছে। আমাকে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করতেই হয়রানী করা হচ্ছে। মামলার ধার্য্য তারিখে আমরা আইনী প্রক্রিয়া অনুসরণ করে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করব,” বলেন নুসরাত।
বেশ কিছুদিন ধরেই খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না নুসরাত জাহানের। তিনি তার কুমিল্লা শহরের বাসায়ও থাকছেন না। তবে গত মঙ্গলবার বিকালে সংবাদের সঙ্গে যোগাযোগ হয় তার। তখন তিনি বলেন তাকে বিভিন্ন ভাবে হুমকি দেয়া হচ্ছে। তার অভিযোগ বেশ কিছু অনলাইন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার ‘চরিত্র হনন’ করা হচ্ছে। সে কারনেই তিনি কোনও গনমাধ্যমের সঙ্গেও কথা বলছিলেন না।
তিনি অভিযোগ করেন, “সাম্প্রতিক সময়ে দেখছি বিভিন্ন অনলাইন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমার চরিত্র জড়িয়ে মিথ্যা অপপ্রচার করা হচ্ছে। আমাকে মানসিকভাবে হয়রানি ও সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করতেই এ ধরণের কার্যক্রম অব্যাহত রাখা হয়েছে।”
তদন্ত নিয়ে নুসরাতের অভিযোগ
মুনিয়ার বড় বোন নুসরাত বলেন, “আমি মামলার বাদী হয়ে গত দুইমাস ধরে গুলশান জোনের ডিসি, এডিসি ও গুলশান থানার ওসিকে একাধিকবার ফোন দিয়েছি। তারা আমার ফোন ধরেননি, কখনো কেটে দিয়েছেন। আমাকে কোন গুরুত্বই দেয়া হয়নি। গত ১৯ জুলাই এ প্রতিবেদন আদালতে দেয়া হলেও আমি নোটিশ পেয়েছি গত ২৫ জুলাই।”
এ বিষয়ে জানতে মামলার তদন্তের দায়িত্বে থাকা গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে এ বিষয়ে তিনি কোন কথা বলবেন না বলে জানান। তবে তিনি বলেন, “আমরা প্রতিবেদন আদালতে দিয়েছি। বাদীও জানে। এখন আদালত এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিবেন।”
পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে ১৯ জুলাই আনভীরকে অব্যহতি দিয়ে তারা এই মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দিয়েছে। আগামীকাল ২৯ জুলাই ওই প্রতিবেদন বিষয়ে আদলতের সিদ্ধান্ত দেবার কথা বলে পুলিশ জানিয়েছে।
গত ২৬ এপ্রিল গুলশানে একটি ফ্ল্যাট থেকে কলেজ ছাত্রী মুনিয়ার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ফ্ল্যাট থেকে বিভিন্ন আলামতের মধ্যে কয়েকটি ডায়েরি পায় পুলিশ। যেগুলো ছিলো মুনিয়ার ব্যাক্তিগত। ওই ডায়েরির লেখা থেকে পুলিশ জানতে পারে মুনিয়ার সঙ্গে বসুন্ধরার এমডি আনভীরের প্রেমের সম্পর্ক ছিলো। মুনিয়াকে ‘বিয়ে করে স্ত্রীর মর্যাদা দেওয়ার স্বপ্ন’ দেখিয়েছে আনভীর বলে জানায় পুলিশ। স্ত্রী পরিচয় দিয়ে মুনিয়াকে বাসাও ভাড়া নিয়ে দেয় আনভীর। যে বাসায় আনভীরের যাতায়াত ছিলো।
তখন মুনিয়ার বোন নুসরাত বাদী হয়ে মুনিয়ার ‘আত্নহত্যায় প্ররোচনার’ দায়ে আনভীরকে অভিযুক্ত করে মামলা করেন।
নুসরাত জাহান বলেন, “ওইসময় পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদন এবং ফরেনসিক রিপোর্টের ভিত্তিতে আমি ন্যায় বিচার পাওয়ার প্রত্যাশা করেছিলাম। কিন্তু আনভীরকে অব্যাহতি দিয়ে এমন প্রতিবেদনসহ সার্বিক বিষয় আমাকে হতাশ করেছে।”
ফরেনসিক রিপোর্টের কথা উল্লেখ করে নুসরাত দাবী করেন, “মামলা দায়েরের পর আমি ফরেনসিক বিভাগ থেকে জানতে পেরেছি, মুনিয়া ৬ সপ্তাহের অন্তঃস্বত্তা ছিল। কিন্তু এখন বলা হচ্ছে টিউমার।” তার অভিযোগ নষ্ট করা হয়েছে ফরেনসিক আলামত।
ময়না তদন্ত প্রতিবেদন তৈরিতে দায়িত্বে ছিলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের তিন চিকিৎসকের কমিটি। তাদের পক্ষে ওই কমিটির সদস্য ডাঃ প্রদীপ বিশ্বাস সংবাদকে জানান তারা এই বিষয়ে কোনও কথা বলবেন না। “আমরা ময়না তদন্তের প্রতিবেদন জমা দিয়েছি। আমাদের আর কোনও বক্তব্য নাই,” বলেন ডাঃ বিশ্বাস।
কেন চাকরি হারালেন নুসরাত
নুসরাত জানান, তিনি পদ্মা ব্যাংক লিমিটেড, কুমিল্লা শাখায় রিটেইল ডিপোজিট ডিপার্টমেন্টে মার্কেটিং এক্সিকিউটিভ হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
“আমার ছোটবোন মুনিয়ার মৃত্যুর পর আমি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ি। এতে আমি ১৩ দিন অফিসে যেতে পারিনি। ওই সময়ে আমাকে ১৩ দিন অনুপস্থিতি দেখিয়ে ১১ হাজার ৮শ টাকা বেতন কেটে রাখা হয়।”
তার অভিযোগ মুনিয়ার মৃত্যুর বিষয়টি আলোচনায় আসার পর পদ্মা ব্যাংক এর মানবসম্পদ বিভাগের এক শীর্ষ কর্মকর্তা গত ৩০ মে আনভীরের সাথে সমঝোতার জন্য তাকে প্রস্তাব দেন। “কিন্তু আমি আপোষ করিনি। এরপর আমাকে ব্যাংকের উর্ধ্বতন বিভিন্ন কর্মকর্তা দিয়েও মামলাটি নিষ্পত্তির জন্য প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল। কিন্তু আমি একই উত্তর দিয়েছি, আমার বোনের ন্যায় বিচারের স্বার্থে আপোষ করব না।
“পরবর্তীতে গত ১৩ জুলাই আমাকে আকস্মিকভাবে চাকরিচ্যুত করা হয়। ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী এক মাস আগে সতর্ক করার কথা থাকলেও আমার ক্ষেত্রে তা করা হয়নি।
নুসরাতের চাকরীচ্যুতির বিষয়ে জানতে চাইলে পদ্মা ব্যাংকের কুমিল্লা শাখার ব্যবস্থাপক আশেক উল্লাহ বলেন, ‘বিষয়টি হেড অফিস ভাল বলতে পারবে, আমি কিছুই জানি না।’
এ বিষয়ে পদ্মা ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগের প্রধান আহসান উল্লাহ খান এর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি। পদ্মা ব্যাংকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে তিনি এ বিষয়ে কথা বলবেন না।
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে পদ্মা ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা সংবাদকে বলেন, “মুনিয়ার মামলার সঙ্গে তার বোনের চাকরি চলে যাওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই। তার বোন নুসরাত জাহান আমাদের ব্যাংকের সেলস বিভাগের একজন অস্থায়ী কর্মকর্তা ছিলেন। তার দায়িত্ব ছিল ব্যাংকের জন্য ফান্ড সংগ্রহ করা। প্রতি মাসে তাকে টার্গেট দেওয়া হতো। কিন্তু গত ৮ মাসে কোনো টার্গেটই তিনি পুরণ করতে পারেননি। তাই মানবসম্পদ বিভাগ তাকে চাকরি থেকে অব্যহতি দিয়েছে।
“শুধু মুনিয়ার বোনই নয়, একইসঙ্গে আরও কয়েকজন অস্থায়ী কর্মকর্তাকে অব্যহতি দেওয়া হয়েছে টার্র্গেট পূরণ না করতে পারার কারণে। প্রতিটি ব্যাংকে সেলস বিভাগে অনেক কর্মকর্তাকে অস্থায়ী নিয়োগ দেওয়া হয়। আবার টার্গেট পুরণ না করতে পারলে চাকরিচূত্য করাও হয়। এটি খুবই সাধারণ একটি বিষয়,” বলেন ঐ কর্মকর্তা।
তবে নুসরাতের দাবী তিনি ৩ কোটি ৯৪ লাখ টাকার ডিপোজিট বা আমানত এনেছেন। আর বিপরীতে তার প্রণোদনা বা ইনটেনসিভ বাবদ ৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা পাওয়ার কথা থাকলেও তিনি তা পাননি। তিনি এই অভিযোগও করলেন যে তাকে সর্বশেষ মাসের বেতনও দেয়া হয়নি।
মামলার পরবর্তী কার্যক্রম
মামলার পরবর্তী কার্যক্রম প্রসঙ্গে নুসরাত জাহান বলেন, “আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আইনী প্রক্রিয়া অনুসরণ করে আইনজীবির মাধ্যমে মামলার পরবর্তী কার্যক্রম পরিচালনা করব। এ মুহুর্তে এ নিয়ে আর কিছু বলতে চাই না।“
‘আত্নহত্যায় প্ররোচনার’ মামলার পরে পুলিশের পক্ষ থেকে আদালতের মাধ্যমে বসুন্ধরার আনভীরের দেশ ত্যাগে নিশেধাজ্ঞা দেয়া হয়। শুরুতে এই মামলা নিয়ে পুলিশ বেশ সরব ছিল। পরে ১৯ জুলাই আনভীরকে অব্যহতি দিয়ে পুলিশ এই মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেয়। তবে কীসের ভিত্তিতে পুলিশের এই সিদ্ধান্ত, ফরেনসিক বা ময়না তদন্ত প্রতিবেদনে কী পাওয়া গেছে সে বিষয়ে বহুবার যোগাযোগ করা হলেও তদন্তসংশ্লিষ্ট কারো কাছ থেকে কোনও উত্তর পাওয়া যায়নি।