alt

সারাদেশ

রোগীর চাপ, শয্যা ফাঁকা নেই

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : শুক্রবার, ৩০ জুলাই ২০২১

গ্রাম থেকে রাজধানীতে আসছে করোনা রোগীরা, কিন্তু হাসপাতালে শয্যা খালি নেই, তাই স্বজনরা রোগী নিয়ে এক হাসপাতাল থেকে ছুটছে আরেক হাসপাতালে। শুক্রবার ঢাকা মেডিকেল হাসপাতাল প্রাঙ্গণে অ্যাম্বুলেন্স থেকে নামানো হচ্ছে মুমূর্ষু রোগী-সংবাদ

শুক্রবার (৩০ জুলাই) সকালে পর পর দুটি অ্যাম্বুলেন্স এসে থামে মহাখালীর ডিএনসিসি কোভিড-১৯ হাসপাতালে। দুই রোগীর অবস্থাই আশঙ্কাজনক। এর মধ্যে একজন হাসনা বেগম। তার বাড়ি নরসিংদীতে, বয়স ৬০। হাসনার স্বজনরা জানান, সপ্তাহ খানেক আগে তার করোনা পজেটিভ আসে। ২৯ জুলাই বৃহস্পতিবার অবস্থা খারাপ হলে নরসিংদী হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। অক্সিজেন ও আইসিইউ সংকট থাকায় উন্নত চিকিৎসার জন্য চিকিৎসক ঢাকায় আনার পরামর্শ দেন। তড়িঘড়ি করে সকালেই ঢাকায় নিয়ে আসি। প্রথমে মুগদা হাসপাতালে নেয়া হলেও বেড খালি নেই বলে তারা ভর্তি করাত রাজি হননি। সেখান থেকে নিয়ে এসেছি মহাখালীতে। অন্য রোগী শামসু মিয়ারও একই অবস্থা। ফেনী থেকে এসেছেন ঢাকায়। একাধিক হাসপাতাল ঘুরে থেমেছেন মহাখালী ডিএনসিসি কোভিড-১৯ হাসপাতালে।

রোগী নিয়ে ছোটাছুটি করা স্বজনদের ব্যস্ততা থেমে নেই এই লকডাউনে। দিন যত যাচ্ছে, মৃত্যুশয্যায় থাকা রোগীর স্বজনদের হাহাকারও যেন আরও বাড়ছে। করোনার হুঙ্কারে চিকিৎসার জন্য নির্ধারিত হাসপাতালগুলোতে সিট ফাঁকা নেই। সব মিলিয়ে রাজধানীর হাসপাতালগুলো এখন যেন আর রোগীর ভার সইতে পারছে না। কর্তৃপক্ষ হাসপাতালের সামনে ‘সিট খালি’ নেই জানিয়ে বিজ্ঞপ্তি টানাতে বাধ্য হচ্ছে।

শুক্রবার বিকেলে ৫টার দিকে আরও কয়েকটি অ্যাম্বুলেন্স এসে থামে মহাখালী ডিএনসিসি কোভিড-১৯ হাসপাতালের সামনে। এর মধ্যে ঢাকা মেডিকেলসহ একাধিক হাসপাতাল ঘুরে এখানে এসেছেন বেশ কয়েকজন রোগী। যাদের প্রত্যেকেই করোনা আক্রান্ত। তাদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অক্সিজেন সংকট ও বেড খালি না থাকায় ঘুরতে হয়েছে একাধিক হাসপাতাল। এদিকে সময় যত যাচ্ছে রোগীর অবস্থাও তত আশঙ্কাজনক হচ্ছে। এমতাবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করতে পারবেন নাকি অ্যাম্বুলেন্সেই স্বজনকে হারাবেন, সেই শঙ্কায় আছেন তারা।

মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া থেকে শ্বাসকষ্ট ও জ্বর নিয়ে ঢাকা মেডিকেলে করোনা ইউনিটে ভর্তি হতে এসেছেন সুমাইয়া (১৮)। চিকিৎসা না পেয়ে মেয়েকে নিয়ে ফিরে যান মা মাজেদা বেগম। সংবাদকে তিনি বলেন, ‘শ্বাষকষ্ট দেইখা মাইয়ারে বালা করনের লইগা ঢাকা মেডিকেল করোনা ইউনিটে নিয়া আইছিলাম। মেডিকেল-২ এর নিচতালা, যেহানে করোনা রোগী ভর্তির রুম, সেখানে ডাক্তার আমার মাইয়ারে ভর্তি করে নাই। ডাক্তার কইছে, আপনার মাইয়ারে বাইত নিয়া যান, কিছু ওষুধ খাওয়ান, তাইলে বালা অইয়া যাইবো। বাবা অহন আমরা কই যামু, আমরা গরিব মানুষ, সুমাইয়ার বাবা মিস্ত্রি কাম করে। বাইরে হাসপাতালালে অসুস্থ মেয়েকে চিকিৎসা করাতে তো মেলা টাহা লাগবো’ বলে কান্না করেন তিনি।

শ্বাসকষ্ট নিয়ে ভর্তি হতে এসেছেন আরেক রোগী জাহানারা (৫৫)। মুগদা এলাকা থেকে ঢামেকে করোনা ইউনিটে এসেছেন ভর্তি হওয়ার জন্য। কিন্তু অনেকক্ষণ অপেক্ষা করেও ঢামেকে ভর্তি হতে না পেরে অবশেষে স্বজনরা রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে তাকে ভর্তি করান।

রাজধানীর একাধিক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে সংবাদ। তারা জানান, সাধারণ বেডে ভর্তি রোগীর ছুটি হলে নতুন রোগী ভর্তি করাতে হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে অপেক্ষমাণ রোগীদের চাপ এত বেশি যে, বেশিরভাগ রোগীকেই ফেরত দিতে বাধ্য হচ্ছেন তারা।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজমুল হক সংবাদকে জানান, প্রতিদিন গ্রাম থেকে প্রচুর করোনা রোগী ঢাকা মেডিকেলে আসছে। রীতিমত আমরা হিমশিম খাচ্ছি। একটা অক্সিজেন পোর্ট তিন থেকে চারজন করোনা রোগীকে ভাগ করে দিতে হয়। অক্সিজেন পোর্ট বেশি পরিমাণে দরকার।

তিনি জানান, ঢাকা মেডিকেলে করোনা ইউনিটে নতুন ১৩টি আইসিউ বেড সংযোজন করা হয়েছে। সেগুলোর কয়েকটি রোগীদের দেয়া যাচ্ছে। অল্প সময়ের মধ্যে আরও বেড চালু হবে। তখন সংকট আরেকটু কমবে।

ঢাকার হাসপাতালে শয্যা সংকট তৈরি হয়েছে জানিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, রাজধানীর মুগদা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল এবং কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে পরিদর্শনে গিয়ে রোগী ও তাদের স্বজনদের সঙ্গে তিনি কথা বলেছেন। তাদের প্রতি ১০ জনের মধ্যে আটজনই গ্রাম থেকে এসেছেন।

তিনি জানান, পরে ঢাকার অন্যান্য হাসপাতালে খোঁজ নিয়েও দেখা গেছে, ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ গ্রাম থেকে আসা। একই সঙ্গে ভর্তি থাকা রোগীদের ৯০ শতাংশই টিকা নেননি। এর মধ্য দিয়ে প্রমাণ হয়, গ্রামে সংক্রমণ পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। সুতরাং গ্রামে ব্যাপকভিত্তিক টিকাদান শুরু করতে হবে। একই সঙ্গে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। অন্যথায় পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, রাজধানীতে সরকারি ও বেসরকারি করোনা হাসপাতালের সংখ্যা ৪৩টি। এসব হাসপাতালের ৫ হাজার ৭৯৯টি বেড আছে। এসব বেডের মধ্যে গত কয়েক দিন ধরে সর্বোচ্চ দেড় হাজারের মতো খালি হচ্ছে, যা মোট বেডের ২৫ শতাংশ। বাকি সাড়ে চার হাজার অর্থাৎ ৭৫ শতাংশই রোগী ভর্তি।

অন্যদিকে এসব হাসপাতালে আইসিইউ বেডের সংখ্যা ৮৮৬টি। এর মধ্যে ঈদের পর থেকে সর্বোচ্চ ১০০ সিট খালি থাকছে। যা মোট আইসিইউয়ের মাত্র ১০ শতাংশ। বাকি ৭৮৬টি, অর্থাৎ ৯০ শতাংশ আইসিইউতে রোগী।

রোগী বাড়লে হাসপাতালে শয্যা সংকট তৈরি হবে বলে মনে করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকও। এর আগে তিনি বলেছেন, ইতোমধ্যে রাজধানীর কভিড-১৯ ডেডিকেটেড হাসপাতালে শয্যার ওপর চাপ তৈরি হয়েছে। অনেক হাসপাতালে আইসিইউর পাশাপাশি সাধারণ শয্যাও ফাঁকা পাওয়া যাচ্ছে না। একটি শয্যা ফাঁকা হলে ১০ থেকে ১৫ জন রোগী সিরিয়ালে থাকছেন। কার আগে কে ভর্তি হবেন- এমন প্রতিযোগিতা চলছে। ঢাকায় বেশি রোগী শনাক্ত হচ্ছে। এর মধ্যে গ্রাম থেকে আক্রান্তরা ঢাকায় ভিড় করছেন। সব মিলিয়ে ঢাকার হাসপাতালে শয্যা সংকট তৈরি হয়েছে। এভাবে রোগী বাড়তে থাকলে কোন চিকিৎসা ব্যবস্থাপনাই কাজে আসবে না। সুতরাং সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এজন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।

ছবি

৭টি ইউনিটই বন্ধ, উৎপাদনে ফিরতে গ্যাস চায় ঘোড়াশাল বিদ্যুৎকেন্দ্র

ছবি

আখাউড়া সীমান্ত দিয়ে ত্রিপুরায় পৌঁছাল ৬০ কার্টন হাঁড়িভাঙ্গা আম

ছবি

টানা বৃষ্টিতে বেগমগঞ্জে জলাবদ্ধতা, দুর্ভোগ

দৌলতপুরে একই ক্লিনিকে এক মাসে দুই প্রসূতির মৃত্যু : ক্লিনিক মালিকের বাড়িতে হামলা

বিএনপি সমর্থিত ড্যাবের নির্বাচন নিয়ে পঙ্গু হাসপাতালে মতবিনিময়

ফকিরহাটে হ্যামকো কোম্পানির কারখানায় ডাকাতি, গ্রেপ্তার ৯ লুণ্ঠিত মালামাল উদ্ধার

জুলাই শহীদদের স্মরণে সিরাজগঞ্জে স্মৃতিস্তম্ভ উদ্বোধন

চান্দিনা পৌরসভার বাজেট ঘোষণা

বাঁশখালী ডিগ্রি কলেজের সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক

চট্টগ্রামে খাবারে তেলাপোকা, জরিমানা গুনল ৩ হোটেল

ছবি

বোয়ালখালীতে আমনের বীজতলা তৈরিতে ব্যস্ত কৃষক

ডুমুরিয়ার বাজারে বেড়েছে সবজি ও মাছের দাম

দোহারে ডাকাতি মামলায় আটক ৪

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ৪ খুনের মামলায় আরসা প্রধান আতাউল্লাহ রিমান্ডে

ছবি

খাগড়াছড়িতে পানিবন্দী মানুষের দুর্ভোগ, দীঘিনালা-লংগদু সড়কে যান চলাচল বন্ধ

ছবি

নদের পাড় কেটে নৌকার উপর শত শত জিও ব্যাগ ভর্তি

সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে নিহতের বাড়িতে এনসিপি নেতারা

ছবি

পূর্বধলায় গাছের চারা বিতরণ

মুন্সীগঞ্জে পরিত্যক্ত কক্ষে যুবকের মরদেহ

ছবি

বোয়ালখালীতে ব্যক্তি উদ্যোগে রাস্তা সংস্কার

ঝর্ণা দেখতে গিয়ে আটকে পড়া ৮ শিক্ষার্থীকে উদ্ধার করল পুলিশ

সীমান্ত দিয়ে নারীসহ সাতজনকে পুশইন

মাদারগঞ্জ সড়কে আহত ৩, পা বিছিন্ন ১

মাওয়ায় স্পিডবোট ট্রলার সংঘর্ষের ৬ দিন পর নিখোঁজ যুবকের মরদেহ উদ্ধার

ছবি

আষাঢ় ঘনালেই জেগে ওঠে পদ্মা তীরের জেলেপাড়া

পীরগাছায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৩ আহত ৫০

ছবি

পরিবেশের ক্ষতিকর গাছের চারা ধ্বংস কার্যক্রমের উদ্বোধন

কেশবপুরে খালের জলকপাট ভেঙে লোকালয়ে পানি

পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় মামলা, আসামি ৫ হাজার

চাঁদপুরে অস্ত্রসহ ৬ কিশোর গ্রেপ্তার

ছবি

দুমকিতে অতি বৃষ্টিতে জনজীবনে ভোগান্তি

মোরেলগঞ্জে এইচএসসি পরীক্ষার কেন্দ্র সচিবকে অব্যাহতি

চাঁদপুরে ৭ মাদক কারবারি গ্রেপ্তার

বাগেরহাটে এক পরিবারের ৮টি গরু চুরি

জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে দোকান ভাঙচুর-লুটপাট

যমজ শিশুকে হত্যা করেছে মা নিজেই, আদালতে জবানবন্দি

tab

সারাদেশ

রোগীর চাপ, শয্যা ফাঁকা নেই

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

গ্রাম থেকে রাজধানীতে আসছে করোনা রোগীরা, কিন্তু হাসপাতালে শয্যা খালি নেই, তাই স্বজনরা রোগী নিয়ে এক হাসপাতাল থেকে ছুটছে আরেক হাসপাতালে। শুক্রবার ঢাকা মেডিকেল হাসপাতাল প্রাঙ্গণে অ্যাম্বুলেন্স থেকে নামানো হচ্ছে মুমূর্ষু রোগী-সংবাদ

শুক্রবার, ৩০ জুলাই ২০২১

শুক্রবার (৩০ জুলাই) সকালে পর পর দুটি অ্যাম্বুলেন্স এসে থামে মহাখালীর ডিএনসিসি কোভিড-১৯ হাসপাতালে। দুই রোগীর অবস্থাই আশঙ্কাজনক। এর মধ্যে একজন হাসনা বেগম। তার বাড়ি নরসিংদীতে, বয়স ৬০। হাসনার স্বজনরা জানান, সপ্তাহ খানেক আগে তার করোনা পজেটিভ আসে। ২৯ জুলাই বৃহস্পতিবার অবস্থা খারাপ হলে নরসিংদী হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। অক্সিজেন ও আইসিইউ সংকট থাকায় উন্নত চিকিৎসার জন্য চিকিৎসক ঢাকায় আনার পরামর্শ দেন। তড়িঘড়ি করে সকালেই ঢাকায় নিয়ে আসি। প্রথমে মুগদা হাসপাতালে নেয়া হলেও বেড খালি নেই বলে তারা ভর্তি করাত রাজি হননি। সেখান থেকে নিয়ে এসেছি মহাখালীতে। অন্য রোগী শামসু মিয়ারও একই অবস্থা। ফেনী থেকে এসেছেন ঢাকায়। একাধিক হাসপাতাল ঘুরে থেমেছেন মহাখালী ডিএনসিসি কোভিড-১৯ হাসপাতালে।

রোগী নিয়ে ছোটাছুটি করা স্বজনদের ব্যস্ততা থেমে নেই এই লকডাউনে। দিন যত যাচ্ছে, মৃত্যুশয্যায় থাকা রোগীর স্বজনদের হাহাকারও যেন আরও বাড়ছে। করোনার হুঙ্কারে চিকিৎসার জন্য নির্ধারিত হাসপাতালগুলোতে সিট ফাঁকা নেই। সব মিলিয়ে রাজধানীর হাসপাতালগুলো এখন যেন আর রোগীর ভার সইতে পারছে না। কর্তৃপক্ষ হাসপাতালের সামনে ‘সিট খালি’ নেই জানিয়ে বিজ্ঞপ্তি টানাতে বাধ্য হচ্ছে।

শুক্রবার বিকেলে ৫টার দিকে আরও কয়েকটি অ্যাম্বুলেন্স এসে থামে মহাখালী ডিএনসিসি কোভিড-১৯ হাসপাতালের সামনে। এর মধ্যে ঢাকা মেডিকেলসহ একাধিক হাসপাতাল ঘুরে এখানে এসেছেন বেশ কয়েকজন রোগী। যাদের প্রত্যেকেই করোনা আক্রান্ত। তাদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অক্সিজেন সংকট ও বেড খালি না থাকায় ঘুরতে হয়েছে একাধিক হাসপাতাল। এদিকে সময় যত যাচ্ছে রোগীর অবস্থাও তত আশঙ্কাজনক হচ্ছে। এমতাবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করতে পারবেন নাকি অ্যাম্বুলেন্সেই স্বজনকে হারাবেন, সেই শঙ্কায় আছেন তারা।

মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া থেকে শ্বাসকষ্ট ও জ্বর নিয়ে ঢাকা মেডিকেলে করোনা ইউনিটে ভর্তি হতে এসেছেন সুমাইয়া (১৮)। চিকিৎসা না পেয়ে মেয়েকে নিয়ে ফিরে যান মা মাজেদা বেগম। সংবাদকে তিনি বলেন, ‘শ্বাষকষ্ট দেইখা মাইয়ারে বালা করনের লইগা ঢাকা মেডিকেল করোনা ইউনিটে নিয়া আইছিলাম। মেডিকেল-২ এর নিচতালা, যেহানে করোনা রোগী ভর্তির রুম, সেখানে ডাক্তার আমার মাইয়ারে ভর্তি করে নাই। ডাক্তার কইছে, আপনার মাইয়ারে বাইত নিয়া যান, কিছু ওষুধ খাওয়ান, তাইলে বালা অইয়া যাইবো। বাবা অহন আমরা কই যামু, আমরা গরিব মানুষ, সুমাইয়ার বাবা মিস্ত্রি কাম করে। বাইরে হাসপাতালালে অসুস্থ মেয়েকে চিকিৎসা করাতে তো মেলা টাহা লাগবো’ বলে কান্না করেন তিনি।

শ্বাসকষ্ট নিয়ে ভর্তি হতে এসেছেন আরেক রোগী জাহানারা (৫৫)। মুগদা এলাকা থেকে ঢামেকে করোনা ইউনিটে এসেছেন ভর্তি হওয়ার জন্য। কিন্তু অনেকক্ষণ অপেক্ষা করেও ঢামেকে ভর্তি হতে না পেরে অবশেষে স্বজনরা রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে তাকে ভর্তি করান।

রাজধানীর একাধিক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে সংবাদ। তারা জানান, সাধারণ বেডে ভর্তি রোগীর ছুটি হলে নতুন রোগী ভর্তি করাতে হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে অপেক্ষমাণ রোগীদের চাপ এত বেশি যে, বেশিরভাগ রোগীকেই ফেরত দিতে বাধ্য হচ্ছেন তারা।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজমুল হক সংবাদকে জানান, প্রতিদিন গ্রাম থেকে প্রচুর করোনা রোগী ঢাকা মেডিকেলে আসছে। রীতিমত আমরা হিমশিম খাচ্ছি। একটা অক্সিজেন পোর্ট তিন থেকে চারজন করোনা রোগীকে ভাগ করে দিতে হয়। অক্সিজেন পোর্ট বেশি পরিমাণে দরকার।

তিনি জানান, ঢাকা মেডিকেলে করোনা ইউনিটে নতুন ১৩টি আইসিউ বেড সংযোজন করা হয়েছে। সেগুলোর কয়েকটি রোগীদের দেয়া যাচ্ছে। অল্প সময়ের মধ্যে আরও বেড চালু হবে। তখন সংকট আরেকটু কমবে।

ঢাকার হাসপাতালে শয্যা সংকট তৈরি হয়েছে জানিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, রাজধানীর মুগদা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল এবং কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে পরিদর্শনে গিয়ে রোগী ও তাদের স্বজনদের সঙ্গে তিনি কথা বলেছেন। তাদের প্রতি ১০ জনের মধ্যে আটজনই গ্রাম থেকে এসেছেন।

তিনি জানান, পরে ঢাকার অন্যান্য হাসপাতালে খোঁজ নিয়েও দেখা গেছে, ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ গ্রাম থেকে আসা। একই সঙ্গে ভর্তি থাকা রোগীদের ৯০ শতাংশই টিকা নেননি। এর মধ্য দিয়ে প্রমাণ হয়, গ্রামে সংক্রমণ পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। সুতরাং গ্রামে ব্যাপকভিত্তিক টিকাদান শুরু করতে হবে। একই সঙ্গে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। অন্যথায় পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, রাজধানীতে সরকারি ও বেসরকারি করোনা হাসপাতালের সংখ্যা ৪৩টি। এসব হাসপাতালের ৫ হাজার ৭৯৯টি বেড আছে। এসব বেডের মধ্যে গত কয়েক দিন ধরে সর্বোচ্চ দেড় হাজারের মতো খালি হচ্ছে, যা মোট বেডের ২৫ শতাংশ। বাকি সাড়ে চার হাজার অর্থাৎ ৭৫ শতাংশই রোগী ভর্তি।

অন্যদিকে এসব হাসপাতালে আইসিইউ বেডের সংখ্যা ৮৮৬টি। এর মধ্যে ঈদের পর থেকে সর্বোচ্চ ১০০ সিট খালি থাকছে। যা মোট আইসিইউয়ের মাত্র ১০ শতাংশ। বাকি ৭৮৬টি, অর্থাৎ ৯০ শতাংশ আইসিইউতে রোগী।

রোগী বাড়লে হাসপাতালে শয্যা সংকট তৈরি হবে বলে মনে করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকও। এর আগে তিনি বলেছেন, ইতোমধ্যে রাজধানীর কভিড-১৯ ডেডিকেটেড হাসপাতালে শয্যার ওপর চাপ তৈরি হয়েছে। অনেক হাসপাতালে আইসিইউর পাশাপাশি সাধারণ শয্যাও ফাঁকা পাওয়া যাচ্ছে না। একটি শয্যা ফাঁকা হলে ১০ থেকে ১৫ জন রোগী সিরিয়ালে থাকছেন। কার আগে কে ভর্তি হবেন- এমন প্রতিযোগিতা চলছে। ঢাকায় বেশি রোগী শনাক্ত হচ্ছে। এর মধ্যে গ্রাম থেকে আক্রান্তরা ঢাকায় ভিড় করছেন। সব মিলিয়ে ঢাকার হাসপাতালে শয্যা সংকট তৈরি হয়েছে। এভাবে রোগী বাড়তে থাকলে কোন চিকিৎসা ব্যবস্থাপনাই কাজে আসবে না। সুতরাং সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এজন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।

back to top