জীবন ঝুঁকি নিয়ে পাহাড়ে বসবাসকারীদের সকল ধরনের নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশিদ। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে পাহাড়ের বসতি থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। জীবন ঝুঁকি নিয়ে যারা পাহাড়ে বসবাস করছেন তাদের বিরুদ্ধে শিগগিরই অভিযান শুরু হবে।
রোববার (১আগস্ট) বিকালে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মামুনুর রশীদের নেতৃত্বে প্রশাসনের পক্ষ থেকে শহরতলীতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ৮টি টিম মাঠে নেমেছে। এ সময় জেলা প্রশাসক বলেন, জীবন ঝুঁকি নিয়ে যারা পাহাড়ে বসবাস করছেন তাদের সকল ধরনের নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা হবে। ইতোমধ্যে পাহাড়ের বসতি থেকে বিদ্যুৎ সংযোগও বিচ্ছিন্ন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ সময় পাহাড়ের পাদদেশে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বসবাসকারীদের জীবন রক্ষায় সাইক্লোন শেল্টার অথবা আত্মীয়-স্বজনের বাসা বাড়িতে চলে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেন জেলা প্রশাসক। অন্যথায় কঠোর ব্যবস্থার হুঁশিয়ারি দেন। পাহাড়ে বসবাসকারীদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, টানা বর্ষণে পাহাড় ধসের ঘটনা আমাদের ভাবিয়ে তুলছে। ইতোমধ্যে অনেকের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। বিধ্বস্ত হয়েছে বসতবাড়ি। আমরা কাউকে ঝুঁকিপূর্ণস্থানে বসবাস করতে দেব না। জীবনের নিরাপত্তার বিষয়টি আপনাদেরও বুঝতে হবে। অভিযানকালে জেলা প্রশাসক সেখানকার বাসিন্দাদের বোঝানোর চেষ্টা করেন এবং তাদেরকে বসতঘর তালাবদ্ধ করে আশ্রয়কেন্দ্রে চলে যাওয়ার জন্য বিশেষ অনুরোধ জানান। অন্যথায় প্রশাসনের টিম গিয়ে ঘরগুলো সিলগালা করে দেবে বলেও ঘোষণা দেন। এ সময় প্রায় ১ হাজার ঝুঁকিপূর্ণ মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে এনেছেন কক্সবাজার জেলা প্রশাসন।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আমিন আল পারভেজ বলেন, খানিকটা বিরতি দিয়ে গতরাত থেকে আবারও বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে। আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী বৃষ্টিপাত আরও কয়েক দিন চলতে পারে৷ এই মুহুর্তে কক্সবাজার শহরসহ জেলার বিভিন্ন পাহাড়ের পাদদেশে থাকা মানুষের জানমালের নিরাপত্তার স্বার্থে নিরাপদ স্থানে চলে যাওয়ার জন্য পরামর্শ দিয়ে মাইকিং করা হচ্ছে। যাদের অন্য কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই তারা নিকটস্থ আশ্রয় কেন্দ্রে আসতে পারবেন।
তিনি আরও বলেন, এসব টিমে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সরকারি কর্মচারি, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং স্বেচ্ছাসেবকরা কাজ করছেন। এ সময় কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. হাসানুজ্জামান, স্থানীয় কাউন্সিলর হেলাল উদ্দিন কবিরসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, কক্সবাজারে পাহাড়ের ঝুঁকিতে বসবাস করছে প্রায় আড়াই লাখ মানুষ। এসব মানুষের দখলে রয়েছে প্রায় ১৫ হাজার হেক্টর পাহাড়। সাধারণ মানুষকে ঢাল বানিয়ে মূলত এসব পাহাড় দখলে রেখেছে ক্ষমতাসীন প্রভাবশালীরা। কক্সবাজার অঞ্চলে পাহাড় কাটার যেনো ধুম লেগেছে। এ অঞ্চলে জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতা, সন্ত্রাসী তথা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অনেক সদস্য পাহাড় দখল করে বসতি গড়ছে। শুধু তাই নয়, তারা বিক্রি করছে সরকারি পাহাড়ের দখলস্বত্বও। বর্ষা এলেই পাহাড়কাটা শুরু হয় সমতল ভূমি করার চেষ্টায়। এতে ঘটে পাহাড় ধসের ঘটনা। কক্সবাজারের বহুল আলোচিত ৫১ একর পাহাড় কেটে প্লট তৈরি করেছে খোদ প্রশাসনের লোকজন।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের পরিসংখ্যান মতে, বিগত এক যুগে পাহাড় ধসে ৩ শতাধিক মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ পাহাড় ধস হয় ২০১০ সালের ১৫ জুন। এদিন রামু উপজেলার হিমছড়ি এলাকার ১৭ ইসিবি সেনা ক্যাম্পের ৬ সেনাসদস্যসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধসে প্রায় ৬২ জন প্রাণ হারায়। ২০০৮ সালের ৪ ও ৬ জুলাই টেকনাফে ফকিরামুরা ও টুন্যার পাহাড় ধসের একই পরিবারের চারজনসহ ১৩ জন, ২০১২ সালে ২৬ ও ২৭ জুন পাহাড় ধসের ঘটনায় ২৯ জন, ২০০৯ সালে চকরিয়া, উখিয়া ও রামুতে ৫ জন, ২০১১-১৩ সালে পাহাড় ধসে মারা যায় ১৯ জন, ২০১৫ সালে কক্সবাজার শহরের রাডারের পাহাড় ধসে মা-মেয়েসহ ৫ জন, ২০১৬ সালে পাহাড় ধসে মারা যায় ১৭ জন, ২০১৭ সালে ২৬ জন, ২০১৮ সালের ২৫ জুলাই শহরের দক্ষিণ রুমালিয়ারছড়ার বাঁচামিয়ার ঘোনা এলাকায় প্রবাসী জামাল হোসেনের এক পরিবারের ৫ জনসহ ২৮ জন, ২০১৯ সালে ২২ জন, ২০২০ সালে ১৫ জন এবং সর্বশেষ গত ২ দিনে মারা গেল ১৪ জন।
রোববার, ০১ আগস্ট ২০২১
জীবন ঝুঁকি নিয়ে পাহাড়ে বসবাসকারীদের সকল ধরনের নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশিদ। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে পাহাড়ের বসতি থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। জীবন ঝুঁকি নিয়ে যারা পাহাড়ে বসবাস করছেন তাদের বিরুদ্ধে শিগগিরই অভিযান শুরু হবে।
রোববার (১আগস্ট) বিকালে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মামুনুর রশীদের নেতৃত্বে প্রশাসনের পক্ষ থেকে শহরতলীতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ৮টি টিম মাঠে নেমেছে। এ সময় জেলা প্রশাসক বলেন, জীবন ঝুঁকি নিয়ে যারা পাহাড়ে বসবাস করছেন তাদের সকল ধরনের নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা হবে। ইতোমধ্যে পাহাড়ের বসতি থেকে বিদ্যুৎ সংযোগও বিচ্ছিন্ন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ সময় পাহাড়ের পাদদেশে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বসবাসকারীদের জীবন রক্ষায় সাইক্লোন শেল্টার অথবা আত্মীয়-স্বজনের বাসা বাড়িতে চলে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেন জেলা প্রশাসক। অন্যথায় কঠোর ব্যবস্থার হুঁশিয়ারি দেন। পাহাড়ে বসবাসকারীদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, টানা বর্ষণে পাহাড় ধসের ঘটনা আমাদের ভাবিয়ে তুলছে। ইতোমধ্যে অনেকের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। বিধ্বস্ত হয়েছে বসতবাড়ি। আমরা কাউকে ঝুঁকিপূর্ণস্থানে বসবাস করতে দেব না। জীবনের নিরাপত্তার বিষয়টি আপনাদেরও বুঝতে হবে। অভিযানকালে জেলা প্রশাসক সেখানকার বাসিন্দাদের বোঝানোর চেষ্টা করেন এবং তাদেরকে বসতঘর তালাবদ্ধ করে আশ্রয়কেন্দ্রে চলে যাওয়ার জন্য বিশেষ অনুরোধ জানান। অন্যথায় প্রশাসনের টিম গিয়ে ঘরগুলো সিলগালা করে দেবে বলেও ঘোষণা দেন। এ সময় প্রায় ১ হাজার ঝুঁকিপূর্ণ মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে এনেছেন কক্সবাজার জেলা প্রশাসন।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আমিন আল পারভেজ বলেন, খানিকটা বিরতি দিয়ে গতরাত থেকে আবারও বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে। আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী বৃষ্টিপাত আরও কয়েক দিন চলতে পারে৷ এই মুহুর্তে কক্সবাজার শহরসহ জেলার বিভিন্ন পাহাড়ের পাদদেশে থাকা মানুষের জানমালের নিরাপত্তার স্বার্থে নিরাপদ স্থানে চলে যাওয়ার জন্য পরামর্শ দিয়ে মাইকিং করা হচ্ছে। যাদের অন্য কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই তারা নিকটস্থ আশ্রয় কেন্দ্রে আসতে পারবেন।
তিনি আরও বলেন, এসব টিমে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সরকারি কর্মচারি, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং স্বেচ্ছাসেবকরা কাজ করছেন। এ সময় কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. হাসানুজ্জামান, স্থানীয় কাউন্সিলর হেলাল উদ্দিন কবিরসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, কক্সবাজারে পাহাড়ের ঝুঁকিতে বসবাস করছে প্রায় আড়াই লাখ মানুষ। এসব মানুষের দখলে রয়েছে প্রায় ১৫ হাজার হেক্টর পাহাড়। সাধারণ মানুষকে ঢাল বানিয়ে মূলত এসব পাহাড় দখলে রেখেছে ক্ষমতাসীন প্রভাবশালীরা। কক্সবাজার অঞ্চলে পাহাড় কাটার যেনো ধুম লেগেছে। এ অঞ্চলে জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতা, সন্ত্রাসী তথা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অনেক সদস্য পাহাড় দখল করে বসতি গড়ছে। শুধু তাই নয়, তারা বিক্রি করছে সরকারি পাহাড়ের দখলস্বত্বও। বর্ষা এলেই পাহাড়কাটা শুরু হয় সমতল ভূমি করার চেষ্টায়। এতে ঘটে পাহাড় ধসের ঘটনা। কক্সবাজারের বহুল আলোচিত ৫১ একর পাহাড় কেটে প্লট তৈরি করেছে খোদ প্রশাসনের লোকজন।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের পরিসংখ্যান মতে, বিগত এক যুগে পাহাড় ধসে ৩ শতাধিক মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ পাহাড় ধস হয় ২০১০ সালের ১৫ জুন। এদিন রামু উপজেলার হিমছড়ি এলাকার ১৭ ইসিবি সেনা ক্যাম্পের ৬ সেনাসদস্যসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধসে প্রায় ৬২ জন প্রাণ হারায়। ২০০৮ সালের ৪ ও ৬ জুলাই টেকনাফে ফকিরামুরা ও টুন্যার পাহাড় ধসের একই পরিবারের চারজনসহ ১৩ জন, ২০১২ সালে ২৬ ও ২৭ জুন পাহাড় ধসের ঘটনায় ২৯ জন, ২০০৯ সালে চকরিয়া, উখিয়া ও রামুতে ৫ জন, ২০১১-১৩ সালে পাহাড় ধসে মারা যায় ১৯ জন, ২০১৫ সালে কক্সবাজার শহরের রাডারের পাহাড় ধসে মা-মেয়েসহ ৫ জন, ২০১৬ সালে পাহাড় ধসে মারা যায় ১৭ জন, ২০১৭ সালে ২৬ জন, ২০১৮ সালের ২৫ জুলাই শহরের দক্ষিণ রুমালিয়ারছড়ার বাঁচামিয়ার ঘোনা এলাকায় প্রবাসী জামাল হোসেনের এক পরিবারের ৫ জনসহ ২৮ জন, ২০১৯ সালে ২২ জন, ২০২০ সালে ১৫ জন এবং সর্বশেষ গত ২ দিনে মারা গেল ১৪ জন।