alt

সারাদেশ

শ্রমিক পরিবহনের নামে হযবরল অবস্থা

নির্দেশনাহীনভাবে রাস্তায় গণপরিবহন

ইবরাহীম মাহমুদ আকাশ : রোববার, ০১ আগস্ট ২০২১

পোশাকশ্রমিকরা দলে দলে যাচ্ছেন কর্মস্থলে। স্বাস্থ্যবিধি মানার কোন লক্ষণই নেই। হঠাৎ রোববার থেকে কারখানা খোলার ঘোষণায় চরম দুর্ভোগ মাথায় নিয়ে ঢাকায় আসেন তারা। রোববার মিরপুর শিল্প এলাকা থেকে তোলা ছবি-সংবাদ

গার্মেন্টস ও রপ্তানিমুখী শিল্প-কারখানার শ্রমিকদের পরিবহনের নামে একটি হ-জ-ব-র-ল অবস্থা তৈরি হয়েছে গণপরিবহনে। বাস-মিনিবাস চালুর বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে লিখিত কোন নির্দেশনা দেয়া হয়নি। কার নির্দেশে গণপরিবহন চালু হয়েছে এবং কতক্ষণ চলবে তা নিয়ে তৈরি হয়েছে একটি ধোঁয়াশা।

ঢাকার বাইরে থেকে পোশাক কারখানার শ্রমিক পরিবহনের জন্য রোববার (১ আগস্ট) দুপুর ১২টা পর্যন্ত সীমিত পরিসরে বাস চালুর কথা বলা হয়েছে সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)’র পক্ষ থেকে।

এ বিষয়ে বিআরটিএ চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার সংবাদকে বলেন, ‘শুধুমাত্র গার্মেন্টস ও শিল্প-কারখানার শ্রমিকদের ঢাকায় আনার জন্য সীমিত পরিসরে কিছু বাস চালু করা হয়েছে। রোববার দুপুর ১২টা পর্যন্ত সময় দেয়া হয়েছে। তবে যানজট ও অন্যান্য কারণে ২ ঘণ্টা সময় বেশি লাগতে পারে। সেটা বিবেচনা করতে বলা হয়েছে। গণপরিবহন চালুর বিষয়ে বিআরটিএ’র পক্ষ থেকে লিখিত কোন নির্দেশনা দেয়া হয় নি।’ তবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে দেয়া হতে পারে বলে জানান তিনি।

কিন্তু গতকাল শনিবার রাত থেকে যাত্রী নিয়ে বিভিন্ন জেলার উদ্দেশে ছেড়ে যেতে দেখা গেছে দূরপাল্লার বাসকে। যা রোববার রাতেও চলতে দেখা গেছে। হঠাৎ করে যানবাহনের চাপের কারণে দীর্ঘ যানজট তৈরি হয় ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা-সিরাজগঞ্জ মহাসড়কে। এছাড়া রোববার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রাজধানীর অভ্যন্তরীণ রুটেও যাত্রী বাস-মিনিবাস চলাচল করতে দেখা গেছে। তবে রাতের দিকে তা বন্ধ হয়ে যায়।

মূলত ঢাকার বাইরে থেকে গার্মেন্টস শ্রমিক পরিবহনের বাস যাতে ভ্রাম্যমাণ আদালত না করে সে বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে মৌখিকভাবে একটি নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল বলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে জানায়। এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের উপসচিব (মাঠ প্রশাসন সমন্বয় অধিশাখা) মো. রেজাউল ইসলাম সংবাদকে বলেন, ‘আমার জানা মতে গণপরিবহন চালুর বিষয়ে লিখিত কোন নির্দেশনা দেয়া হয়নি। শুধুমাত্র গার্মেন্টস শ্রমিক পরিবহনের ক্ষেত্রে মোবাইল কোর্ডের কার্যক্রম শিথিল করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে মৌখিকভাবে বলা হয়েছে। এছাড়া নৌ-যান চলাচলের বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএ’র পক্ষ থেকে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। কিন্তু গণপরিবহন চালু বিষয়ে কোন নির্দেশনা দেয়া হয় নি।’

রোববার সীমিত সময়ের চালু করা হয় গণপরিবহন। এই সীমিত সময় কতক্ষণ তা কোন উল্লেখ ছিল না। এছাড়া গণপরিবহন চালু বিষয়ে সরকারের লিখিত কোন নির্দেশনা ছিল না। কার নির্দেশে গণপরিবহন চালু হলো এই দায়িত্ব নিতে চায়নি কোন সরকারের কোন সংস্থা।

এ বিষয়ে রোববার সচিবালয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক সভায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘গার্মেন্টস শ্রমিকদের ঢাকা ফেরার চাপ সামলাতে সাময়িক ব্যবস্থা হিসেবে গণপরিবহন চালু করা হয়েছে। এ বিষয়টি কেবিনেট বিভাগ থেকে জানানো হয়েছে। তবে আমাদের কাছে যে খবর সেটা হলো আমরা জানি রাতে প্রচণ্ড চাপ পড়েছিল গার্মেন্টস শ্রমিকদের। এটা দেখে তাদের যেন ঢাকায় নিয়ে আসা যায় সেজন্য একটা সাময়িক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তবে এটা অব্যাহত থাকবে কিনা সেটা কেবিনেট বিভাগ জানে। বিধি-নিষেধের সিদ্ধান্ত যেখান থেকে আসে এবং শিথিল করে এ বিষয়ে সেখানকার কর্মকর্তারাই বলতে পারবেন। আমাদের (স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের) ওপরে দায়িত্ব ভ্যাকসিন দেওয়া নিশ্চিতের। সেটা আমরা করছি।’

রোববার দুপুর ১২টা পর্যন্ত নৌ-যান চলাচলের বিষয়ে অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)’র পক্ষ থেকে একটি নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে তা আজ সোমবার সকাল ৬টা পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়।

এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএ’র ঢাকা নদী বন্দরের যুগ্ম পরিচালক (নৌ-নিরাপত্তা) জয়নাল আবেদীন সংবাদকে বলেন, ‘গার্মেন্টস শ্রমিকসহ দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীদের চাপ থাকায় সারাদেশের নৌ-যান চলাচল সোমবার সকাল ৬টা পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে। প্রথমে দুপুর ১২টা ছিল। কিন্তু যাত্রীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় তা বৃদ্ধি করা হয়।’ রোববার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সদরঘাটে ১৫টি লঞ্চ বিভিন্ন জেলার উদ্দেশে ছেড়ে গেছে। এছাড়া ১৮টি লঞ্চ ঢাকায় প্রবেশ করেছে বলে জানান তিনি।

গণপরিহনে ছিল না স্বাস্থ্যবিধি ও ভাড়াও বেশি:
গার্মেন্টস ও কারখানার শ্রমিক পরিবহনের ক্ষেত্রে কোন স্বাস্থ্যবিধি মানা হয় নি। দুই সিটে একজন যাত্রী বসা ও মুখে মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধির কোন নির্দেশনাই মানা হয়নি গণপরিবহনে। ঢাকা থেকে বের হওয়া ও ঢাকায় প্রবেশ করা প্রতিটি বাস-মিনিবাসের স্বাস্থ্যবিধির নির্দেশ অমান্য করা হয়েছে। কিন্তু ভাড়া কয়েকগুন বেশি নেয়া হয়েছে বলে যাত্রীরা জানান।

রাজধানীর সায়েদাবাদ এলাকায় মোবারক হোসেন নামের কুমিল্লার এক যাত্রী বলেন, ‘ঢাকা-কুমিল্লা রুটের তিশা পরিবহনে ঢাকায় আসলাম। ভাড়া নেয়া হয়ে ৫০০ টাকা। কোন স্বাস্থ্যবিধি মানা হয়নি। দুই সিটে পাশাপাশি যাত্রী বসানো হয়েছে। দাঁড়িয়েও যাত্রী আনা হয়েছে। প্রতিবাদ করা হলে বলে বিশেষ ব্যবস্থা গাড়ি চালু হয়েছে সেজন্য ভাড়া বেশি দিতে হবে।’

যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা এলাকায় রোববার বিকেল ৪টার দিকে কুমিল্লাসহ বিভিন্ন জেলার বাস যাত্রী বোঝাই করে ঢাকা ছেড়ে যেতে দেখা গেছে। ঢাকা বের হওয়ার সময় যাত্রীদের কাছ স্বাভাবিক ভাড়া নেয়া হচ্ছে বলে জানান ঢাকা-কুমিল্লা রুটের তিশা পরিবহনের হেলপার (চালকের সহযোগী) কামাল। তিনি সংবাদকে বলেন,‘গার্মেন্টস পরিবহনের জন্য বাস চালু হয়েছে। কিন্তু কোন যাত্রী শ্রমিক এটা আমরা কেমনে বুঝব? তাই সব যাত্রী নেয়া হচ্ছে। কোন টাইম দেয়া হয়নি। যাত্রী যতক্ষণ থাকবে ততক্ষণ গাড়ি চলবে মহাজন বলেছেন। ঢাকা থেকে যাত্রী কম পাওয়া যায়। তাই স্বাভাবিক ভাড়া নেয়া হচ্ছে। কিন্তু ঢাকার আসার যাত্রীদের চাপ বেশি। তাই ভাড়াও বেশি নেয়া হচ্ছে।’

চলাচল করতে দেখা গেছে রাজধানীর বিভিন্ন রুটের সিটি সার্ভিস বাস। এ বাসেও ছিল না স্বাস্থ্যবিধি। বাস-মিনিবাসের পাশাপাশি অটোরিকশা ও মোটরবাইক চলাচল ছিল স্বাভাবিক সময়ের মতো। প্রাইভেট কার, পণ্যবাহী যানবাহন আর রিকশার দখলে ছিল রাজধানীর সড়কগুলো। রোববার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত রাজধানীতে গণপরিবহন ছিল। কিন্তু সন্ধ্যার পর তা বন্ধ হয়ে যায়। এতে যাত্রীরা ভোগান্তিতে পড়ে বলে অনেকেই জানান।

মহাসড়কে যানজট ও ভোগান্তি :
হঠাৎ করে যানবাহনের চাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় রোববার সকাল থেকে ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা-সিরাজগঞ্জ মহাসড়কে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম সংযোগ মহাসড়কের ১৪ কিলোমিটারসহ সিরাজগঞ্জের বিভিন্ন রুটে ছিল যানবাহনের ধীরগতি। যানবাহনের চাপে ঢাকা ও উত্তরবঙ্গগামী উভয় লেনেই কখনও যানজট আবার কখনও ধীরগতি গাড়ি চলাচল করছে। এতে উত্তরাঞ্চল থেকে ঢাকাগামী যাত্রীদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে বলে স্থানীয়রা জানান।

এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জ ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক আবদুল কাদের বলেন, ‘ঢাকামুখী লেনে যাত্রীবাহী ও উত্তরবঙ্গগামী লেনে ফিরতি গাড়ির প্রচুর চাপ রয়েছে। রোববার সকাল থেকেই কখনও ধীরগতি, কখনও যানজট ছিল। তবে জরাজীর্ণ নলকা সেতুকে কেন্দ্র করেই এমন দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে। নলকা সেতুর পূর্বপাশে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত ঢাকামুখী লেনে হাজার হাজার পরিবহন দাঁড়িয়ে বা মন্থর গতিতে চলাচল করছে। অপরদিকে, নলকা সেতুর পশ্চিম দিকে হাটিকুমরুল গোলচত্বর পর্যন্ত উত্তরবঙ্গগামী লেনে একই অবস্থা বিরাজ করছে।’

ছবি

টাঙ্গাইলে সংঘ‌র্ষ থামাতে গিয়ে হামলার শিকার এসআই, ১৬ জন আটক

ছবি

কক্সবাজারে জলকেলি উৎসবের সমাপনীতে আলোকিত জীবনের প্রত্যাশা

ছবি

মায়ানমারের বিজিপির আরও ২৪ সদস্য বাংলাদেশে

ছবি

রাজশাহীতে মোটরসাইকেলে ট্রাকের ধাক্কায় নিহত ৩

ছবি

ইউএসএআইডি এবং সিমিট প্রতিনিধি দলের বারি পরিদর্শন

ছবি

পঞ্চগড় এক্সপ্রেসের ইঞ্জিনে নারীর ঝুলন্ত মরদেহ

ছবি

‘আনন্দে’ শুরুর পর সড়কের ঈদযাত্রা কেন ‘বিষাদে’

ছবি

ঘটনা চাপা দিতে ১৫০ বস্তা সিমেন্ট সরিয়ে ফেলার অভিযোগ

মীরসরাইয়ে শিলাবৃষ্টিতে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি, ঘরের চাল ছিদ্র হয়ে গেছে

ছবি

মাধবপুরে বিরল প্রজাতির লজ্জাবতী বানর উদ্ধার

ছবি

টঙ্গীতে আগুনে পুড়ল ১২টি খাদ্য গুদাম

ছবি

জলকেলি উৎসবে মুখরিত কক্সবাজরের রাখাইন পল্লী

শেরপুরে বিনামূল্যে সার বীজ বিতরণ উদ্বোধন

কেশবপুরে সকাল-সন্ধ্যা বাজারের দখল নিয়ে দু’পক্ষ মুখোমুখি উচ্ছেদ আতঙ্কে অর্ধশতাধিক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী

ছবি

ভালুকায় বোরো ধানে চিটা কৃষকের মাথায় হাত

ছবি

ভালুকায় বোরো ধানে চিটা কৃষকের মাথায় হাত

ছবি

গোবিন্দগঞ্জে সরকারি রাস্তার ১২০টি গাছ কর্তনের অভিযোগ প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে

পুঠিয়ায় শাশুড়িকে হত্যা করেন পুত্রবধূ

ছবি

মির্জাগঞ্জে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে যুবকের মৃত্যু

ছবি

নড়াইলের শ্রীনগর গ্রামে ভ্যানচালককে পুলিশি হয়রানির প্রতিবাদে মানববন্ধন

ছবি

প্রচণ্ড তাপদাহে পুড়ছে বাগান, ঝরছে আম, শঙ্কায় চাষীরা

ছবি

প্রেমিকার ওপর অভিমান প্রেমিকের আত্মহত্যা

ছবি

শ্যামনগর পদ্মপুকুরের প্রধান সড়কের একাংশ যেন বালুর স্তুপে পরিণত

আমার চেয়ে খারাপ লোক এ জেলায় নাই : তাহেরপুত্র বিপ্লব

ছবি

কক্সবাজারে রিসোর্টে পযটক তরুণীকে ধর্ষণের অভিযোগ, অভিযুক্ত গ্রেপ্তার

ছবি

ঝালকাঠিতে ট্রাকচাপায় নিহতের পরিবার পাবে ৫ লাখ টাকা

ছবি

সুনামগঞ্জে বাস-অটোরিকশার সংঘর্ষে নিহত ২

ছবি

টোলপ্লাজায় ট্রাকের ধাক্কা, নিহত ১৪

ছবি

গরমে অতিষ্ঠ জনজীবন, বেশিরভাগ অঞ্চলে বইছে তাপপ্রবাহ

কোম্পানীগঞ্জে পর্যটকের সঙ্গে এএসপির মারামারি

ছবি

গ্রাহকের টাকা আত্মসাৎ গোপালগঞ্জে গ্রামীণ ব্যাংকের ৩ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা

ছবি

শার্শায় সাংবাদিকের উপর হামলা

ছবি

চুয়াডাঙ্গায় রেললাইনের পাশ থেকে যুবকের মরদেহ উদ্ধার

ছবি

সালথায় স্বামীর উপর অভিমান করে গৃহবধূর আত্মহত্যা

ছবি

শিবগঞ্জে পরিবারের উপর অভিমান করে কিশোরের আত্মহত্যা

ছবি

ভালুকায় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে ছাত্রলীগ নেতা নিহত

tab

সারাদেশ

শ্রমিক পরিবহনের নামে হযবরল অবস্থা

নির্দেশনাহীনভাবে রাস্তায় গণপরিবহন

ইবরাহীম মাহমুদ আকাশ

পোশাকশ্রমিকরা দলে দলে যাচ্ছেন কর্মস্থলে। স্বাস্থ্যবিধি মানার কোন লক্ষণই নেই। হঠাৎ রোববার থেকে কারখানা খোলার ঘোষণায় চরম দুর্ভোগ মাথায় নিয়ে ঢাকায় আসেন তারা। রোববার মিরপুর শিল্প এলাকা থেকে তোলা ছবি-সংবাদ

রোববার, ০১ আগস্ট ২০২১

গার্মেন্টস ও রপ্তানিমুখী শিল্প-কারখানার শ্রমিকদের পরিবহনের নামে একটি হ-জ-ব-র-ল অবস্থা তৈরি হয়েছে গণপরিবহনে। বাস-মিনিবাস চালুর বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে লিখিত কোন নির্দেশনা দেয়া হয়নি। কার নির্দেশে গণপরিবহন চালু হয়েছে এবং কতক্ষণ চলবে তা নিয়ে তৈরি হয়েছে একটি ধোঁয়াশা।

ঢাকার বাইরে থেকে পোশাক কারখানার শ্রমিক পরিবহনের জন্য রোববার (১ আগস্ট) দুপুর ১২টা পর্যন্ত সীমিত পরিসরে বাস চালুর কথা বলা হয়েছে সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)’র পক্ষ থেকে।

এ বিষয়ে বিআরটিএ চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার সংবাদকে বলেন, ‘শুধুমাত্র গার্মেন্টস ও শিল্প-কারখানার শ্রমিকদের ঢাকায় আনার জন্য সীমিত পরিসরে কিছু বাস চালু করা হয়েছে। রোববার দুপুর ১২টা পর্যন্ত সময় দেয়া হয়েছে। তবে যানজট ও অন্যান্য কারণে ২ ঘণ্টা সময় বেশি লাগতে পারে। সেটা বিবেচনা করতে বলা হয়েছে। গণপরিবহন চালুর বিষয়ে বিআরটিএ’র পক্ষ থেকে লিখিত কোন নির্দেশনা দেয়া হয় নি।’ তবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে দেয়া হতে পারে বলে জানান তিনি।

কিন্তু গতকাল শনিবার রাত থেকে যাত্রী নিয়ে বিভিন্ন জেলার উদ্দেশে ছেড়ে যেতে দেখা গেছে দূরপাল্লার বাসকে। যা রোববার রাতেও চলতে দেখা গেছে। হঠাৎ করে যানবাহনের চাপের কারণে দীর্ঘ যানজট তৈরি হয় ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা-সিরাজগঞ্জ মহাসড়কে। এছাড়া রোববার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রাজধানীর অভ্যন্তরীণ রুটেও যাত্রী বাস-মিনিবাস চলাচল করতে দেখা গেছে। তবে রাতের দিকে তা বন্ধ হয়ে যায়।

মূলত ঢাকার বাইরে থেকে গার্মেন্টস শ্রমিক পরিবহনের বাস যাতে ভ্রাম্যমাণ আদালত না করে সে বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে মৌখিকভাবে একটি নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল বলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে জানায়। এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের উপসচিব (মাঠ প্রশাসন সমন্বয় অধিশাখা) মো. রেজাউল ইসলাম সংবাদকে বলেন, ‘আমার জানা মতে গণপরিবহন চালুর বিষয়ে লিখিত কোন নির্দেশনা দেয়া হয়নি। শুধুমাত্র গার্মেন্টস শ্রমিক পরিবহনের ক্ষেত্রে মোবাইল কোর্ডের কার্যক্রম শিথিল করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে মৌখিকভাবে বলা হয়েছে। এছাড়া নৌ-যান চলাচলের বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএ’র পক্ষ থেকে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। কিন্তু গণপরিবহন চালু বিষয়ে কোন নির্দেশনা দেয়া হয় নি।’

রোববার সীমিত সময়ের চালু করা হয় গণপরিবহন। এই সীমিত সময় কতক্ষণ তা কোন উল্লেখ ছিল না। এছাড়া গণপরিবহন চালু বিষয়ে সরকারের লিখিত কোন নির্দেশনা ছিল না। কার নির্দেশে গণপরিবহন চালু হলো এই দায়িত্ব নিতে চায়নি কোন সরকারের কোন সংস্থা।

এ বিষয়ে রোববার সচিবালয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক সভায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘গার্মেন্টস শ্রমিকদের ঢাকা ফেরার চাপ সামলাতে সাময়িক ব্যবস্থা হিসেবে গণপরিবহন চালু করা হয়েছে। এ বিষয়টি কেবিনেট বিভাগ থেকে জানানো হয়েছে। তবে আমাদের কাছে যে খবর সেটা হলো আমরা জানি রাতে প্রচণ্ড চাপ পড়েছিল গার্মেন্টস শ্রমিকদের। এটা দেখে তাদের যেন ঢাকায় নিয়ে আসা যায় সেজন্য একটা সাময়িক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তবে এটা অব্যাহত থাকবে কিনা সেটা কেবিনেট বিভাগ জানে। বিধি-নিষেধের সিদ্ধান্ত যেখান থেকে আসে এবং শিথিল করে এ বিষয়ে সেখানকার কর্মকর্তারাই বলতে পারবেন। আমাদের (স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের) ওপরে দায়িত্ব ভ্যাকসিন দেওয়া নিশ্চিতের। সেটা আমরা করছি।’

রোববার দুপুর ১২টা পর্যন্ত নৌ-যান চলাচলের বিষয়ে অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)’র পক্ষ থেকে একটি নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে তা আজ সোমবার সকাল ৬টা পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়।

এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএ’র ঢাকা নদী বন্দরের যুগ্ম পরিচালক (নৌ-নিরাপত্তা) জয়নাল আবেদীন সংবাদকে বলেন, ‘গার্মেন্টস শ্রমিকসহ দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীদের চাপ থাকায় সারাদেশের নৌ-যান চলাচল সোমবার সকাল ৬টা পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে। প্রথমে দুপুর ১২টা ছিল। কিন্তু যাত্রীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় তা বৃদ্ধি করা হয়।’ রোববার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সদরঘাটে ১৫টি লঞ্চ বিভিন্ন জেলার উদ্দেশে ছেড়ে গেছে। এছাড়া ১৮টি লঞ্চ ঢাকায় প্রবেশ করেছে বলে জানান তিনি।

গণপরিহনে ছিল না স্বাস্থ্যবিধি ও ভাড়াও বেশি:
গার্মেন্টস ও কারখানার শ্রমিক পরিবহনের ক্ষেত্রে কোন স্বাস্থ্যবিধি মানা হয় নি। দুই সিটে একজন যাত্রী বসা ও মুখে মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধির কোন নির্দেশনাই মানা হয়নি গণপরিবহনে। ঢাকা থেকে বের হওয়া ও ঢাকায় প্রবেশ করা প্রতিটি বাস-মিনিবাসের স্বাস্থ্যবিধির নির্দেশ অমান্য করা হয়েছে। কিন্তু ভাড়া কয়েকগুন বেশি নেয়া হয়েছে বলে যাত্রীরা জানান।

রাজধানীর সায়েদাবাদ এলাকায় মোবারক হোসেন নামের কুমিল্লার এক যাত্রী বলেন, ‘ঢাকা-কুমিল্লা রুটের তিশা পরিবহনে ঢাকায় আসলাম। ভাড়া নেয়া হয়ে ৫০০ টাকা। কোন স্বাস্থ্যবিধি মানা হয়নি। দুই সিটে পাশাপাশি যাত্রী বসানো হয়েছে। দাঁড়িয়েও যাত্রী আনা হয়েছে। প্রতিবাদ করা হলে বলে বিশেষ ব্যবস্থা গাড়ি চালু হয়েছে সেজন্য ভাড়া বেশি দিতে হবে।’

যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা এলাকায় রোববার বিকেল ৪টার দিকে কুমিল্লাসহ বিভিন্ন জেলার বাস যাত্রী বোঝাই করে ঢাকা ছেড়ে যেতে দেখা গেছে। ঢাকা বের হওয়ার সময় যাত্রীদের কাছ স্বাভাবিক ভাড়া নেয়া হচ্ছে বলে জানান ঢাকা-কুমিল্লা রুটের তিশা পরিবহনের হেলপার (চালকের সহযোগী) কামাল। তিনি সংবাদকে বলেন,‘গার্মেন্টস পরিবহনের জন্য বাস চালু হয়েছে। কিন্তু কোন যাত্রী শ্রমিক এটা আমরা কেমনে বুঝব? তাই সব যাত্রী নেয়া হচ্ছে। কোন টাইম দেয়া হয়নি। যাত্রী যতক্ষণ থাকবে ততক্ষণ গাড়ি চলবে মহাজন বলেছেন। ঢাকা থেকে যাত্রী কম পাওয়া যায়। তাই স্বাভাবিক ভাড়া নেয়া হচ্ছে। কিন্তু ঢাকার আসার যাত্রীদের চাপ বেশি। তাই ভাড়াও বেশি নেয়া হচ্ছে।’

চলাচল করতে দেখা গেছে রাজধানীর বিভিন্ন রুটের সিটি সার্ভিস বাস। এ বাসেও ছিল না স্বাস্থ্যবিধি। বাস-মিনিবাসের পাশাপাশি অটোরিকশা ও মোটরবাইক চলাচল ছিল স্বাভাবিক সময়ের মতো। প্রাইভেট কার, পণ্যবাহী যানবাহন আর রিকশার দখলে ছিল রাজধানীর সড়কগুলো। রোববার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত রাজধানীতে গণপরিবহন ছিল। কিন্তু সন্ধ্যার পর তা বন্ধ হয়ে যায়। এতে যাত্রীরা ভোগান্তিতে পড়ে বলে অনেকেই জানান।

মহাসড়কে যানজট ও ভোগান্তি :
হঠাৎ করে যানবাহনের চাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় রোববার সকাল থেকে ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা-সিরাজগঞ্জ মহাসড়কে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম সংযোগ মহাসড়কের ১৪ কিলোমিটারসহ সিরাজগঞ্জের বিভিন্ন রুটে ছিল যানবাহনের ধীরগতি। যানবাহনের চাপে ঢাকা ও উত্তরবঙ্গগামী উভয় লেনেই কখনও যানজট আবার কখনও ধীরগতি গাড়ি চলাচল করছে। এতে উত্তরাঞ্চল থেকে ঢাকাগামী যাত্রীদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে বলে স্থানীয়রা জানান।

এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জ ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক আবদুল কাদের বলেন, ‘ঢাকামুখী লেনে যাত্রীবাহী ও উত্তরবঙ্গগামী লেনে ফিরতি গাড়ির প্রচুর চাপ রয়েছে। রোববার সকাল থেকেই কখনও ধীরগতি, কখনও যানজট ছিল। তবে জরাজীর্ণ নলকা সেতুকে কেন্দ্র করেই এমন দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে। নলকা সেতুর পূর্বপাশে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত ঢাকামুখী লেনে হাজার হাজার পরিবহন দাঁড়িয়ে বা মন্থর গতিতে চলাচল করছে। অপরদিকে, নলকা সেতুর পশ্চিম দিকে হাটিকুমরুল গোলচত্বর পর্যন্ত উত্তরবঙ্গগামী লেনে একই অবস্থা বিরাজ করছে।’

back to top