করোনার পাশাপাশি এ বছর ডেঙ্গুর ভয়াবহতাও বাড়ছে। বুধবার (৪ আগস্ট) দুপুরে মহাখালী স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে কোভিড-১৯ পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত ভার্চুয়াল বুলেটিনে অধিদপ্তরের মুখপাত্র প্রফেসর ডা. নাজমুল ইসলাম এ কথা বলেছেন। তার মতে, গত কয়েক বছর ধরেই ডেঙ্গু পরিস্থিতি আশঙ্কাজনক রূপ নিয়েছে।
তিনি বলেন, ২০১৯ সালে ডেঙ্গু মহামারি আমাদের আক্রান্ত করেছিল। ২০২১ সালে এসে একই রকম পরিস্থিতির মুখে আমরা দাঁড়িয়েছি। প্রতিরোধ দ্রুত ব্যবস্থা নিলে এটি মোকাবিলা করতে পারব বলে তিনি আশাবাদী।
অপর দিকে মহাখালী স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ্ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ডা. কামরুল কিবরিয়া জানান, ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু জ্বরে নতুন আরও ২৩৭ জন আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকায় বিভিন্ন হাসপাতালে ২২১ জন ও ঢাকার বাহিরে হাসপাতালে ১৬ জন ভর্তি হয়েছে। এখন দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আছে ১ হাজার ৫৮ জন। ভর্তিকৃতদের মধ্যে ১০৪ জন ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ও ৫৪জন ঢাকার বাহিরে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে বলা হয়েছে, চলতি বছরের পহেলা জানুয়ারি থেকে বুধবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মোট ৩ হাজার ৬৮৩ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। বুধবার সকাল পর্যন্ত হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা শেষে ছাড়পত্র নিয়েছে ২ হাজার ৬১৭ জন। অন্যরা এখনও চিকিৎসাধীন আছে।
ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত এমন উপসর্গ নিয়ে মোট আট জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মৃত্যুর তথ্য হাসপাতাল থেকে মহাখালী রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে (আইইডিসিঅরে) পাঠানো হয়েছে। সেখানে মৃত্যুর পর্যালোচনা করে ডেঙ্গুজনিত কি না, তা নিশ্চিত করা হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ভর্তিকৃতদের মধ্যে ৪২ জন মিটফোর্ড হাসপাতালে, ঢাকা শিশু হাসপাতালে ৬ জন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪ জন, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ৬ জন ভর্তি হয়েছে। এ ছাড়াও ঢাকার আশপাশের বিভিন্ন জেলায় ৫ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৭ জন, রাজশাহী বিভাগে ১ জন, খুলনা বিভাগে ১ জন, বরিশাল বিভাগে ২ জন ভর্তি হয়েছে।
মহাখালী রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মোস্তাক হোসেন বলেন, ডেঙ্গু মশা ভোরে ও সন্ধ্যায় বেশি কামড়ায়। ডেঙ্গু ভাইরাস চার ধরনের। এর মধ্যে টাইপ-১, টাইপ-২, টাইপ-৩ ও টাইপ-৪। এ বছর ৩ নম্বর ভাইরাসের প্রভাব বেশি। গত ১৭, ১৮, ১৯ ও ২০ সালে একই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। এ ভাইরাসে ডেঙ্গু ছড়াচ্ছে। তবে ক্ষয় ক্ষতির আশঙ্কা কম। অন্য টাইপের ভাইরাসে আক্রান্ত হলে ক্ষতির পরিমাণ আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ত।
তার মতে, ডেঙ্গু জ্বরের বাহক এডিস মশা এখন শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত বিস্তৃত। আগে শুধু শহরে দালাল ও পাকা রাস্তা ছিল। এখন উপজেলা থেকে ইউনিয়নে তার বিস্তার ঘটছে। পাকা ভবনের ওপরে, রাস্তায় পরিষ্কার পানি জমে। ওই পানিতে ডেঙ্গু জ্বরের বাহক এডিস মশার প্রজনন হচ্ছে। ডেঙ্গু মশা রাতে উজ্জ্বল আলোতেও কামড়ায়। তাই যাদের পক্ষে সম্ভব তারা বাসা বাড়িতে নেট দিয়ে আটকে রাখতে পারেন। এর ফলে মশা বাসাবাড়িতে ঢুকতে না পারলে আক্রান্তের সংখ্যা কম হবে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি (একাডেমি) এ কে এম মোশারফ হোসেন সংবাদকে জানান, মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেঙ্গু কর্নারে প্রতিদিন রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। বুধবার ২১ জন প্রাপ্তবয়স্ক রোগী এখন ভর্তি আছে। আক্রান্ত রোগীদের অনুচক্রিকা কমে যাচ্ছে। এই বছর নতুন ধরন হলো, ডেঙ্গু রোগীদের বমি ও পাতলা পায়খানা বেশি হচ্ছে। তাদের শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি হচ্ছে। চিকিৎসকরা সবাত্মক চেষ্টা করছেন বলে তিনি জানান।
এ দিকে ঢাকা শিশু হাসপাতালের পরিচালক প্রফেসর ডা. সৈয়দ সফি আহমেদ সংবাদকে জানান, ঢাকা শিশু হাসপাতালে এখনো ৩৫ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশু ভর্তি আছে। তার মধ্যে ছয়জন আইসিইউতে আছে। এ পর্যন্ত ডেঙ্গু জ্বরের ১৩৬ জন শিশু আক্রান্ত হয়ে শিশু হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। তাদের মধ্যে চারজন শিশু মারা গেছে।
এ বছর আক্রান্ত শিশুদের লক্ষণ জ্বর, মাথা ব্যথা, বমি, পেটে ব্যাথাসহ নানা সমস্যা দেখা দিচ্ছে।
তার মতে, ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হলে শিশুদের প্রথমে প্যারাসিটামল। এরপর তরল খাবার ও শরীরর মুচে দেয়ার পরামর্শ দেনস। আর তিন দিনের মধ্যে ডেঙ্গু টেস্ট করতে বলেন এ বিশেষজ্ঞ। দিনে শিশুদের মশারি টানিয়ে ঘুমাতে দেয়া দরকার বলে তিনি জানান।
বুধবার ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন থেকে জানা গেছে, ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধে ঢাকা চিরুনি অভিযান চালাচ্ছেন। বুধবার রাজধানীর মোহাম্মদপুর শেরেশাহ সুরি রোড, শাহাজান রোড, আজম রোডসহ আশপাশ এলাকায় চিরুনি অভিযান ও জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম চালানো হয়েছে। তারা ডেঙ্গু জ্বরের বাহক এডিস মশার লার্ভা যাতে না জমে, সেদিকে জন্য সবাইকে সচেতন হওয়ার গাইডলাইন দেয়া হয়েছে। এ ছাড়াও বাড়ির আঙিনাসহ আশপাশ এলাকা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য নগরবাসীর সহযোগিতা চেয়েছেন। আর সহযোগিতার দরকার হলে সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ প্রস্তুত বলে জানান।
বুধবার, ০৪ আগস্ট ২০২১
করোনার পাশাপাশি এ বছর ডেঙ্গুর ভয়াবহতাও বাড়ছে। বুধবার (৪ আগস্ট) দুপুরে মহাখালী স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে কোভিড-১৯ পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত ভার্চুয়াল বুলেটিনে অধিদপ্তরের মুখপাত্র প্রফেসর ডা. নাজমুল ইসলাম এ কথা বলেছেন। তার মতে, গত কয়েক বছর ধরেই ডেঙ্গু পরিস্থিতি আশঙ্কাজনক রূপ নিয়েছে।
তিনি বলেন, ২০১৯ সালে ডেঙ্গু মহামারি আমাদের আক্রান্ত করেছিল। ২০২১ সালে এসে একই রকম পরিস্থিতির মুখে আমরা দাঁড়িয়েছি। প্রতিরোধ দ্রুত ব্যবস্থা নিলে এটি মোকাবিলা করতে পারব বলে তিনি আশাবাদী।
অপর দিকে মহাখালী স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ্ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ডা. কামরুল কিবরিয়া জানান, ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু জ্বরে নতুন আরও ২৩৭ জন আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকায় বিভিন্ন হাসপাতালে ২২১ জন ও ঢাকার বাহিরে হাসপাতালে ১৬ জন ভর্তি হয়েছে। এখন দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আছে ১ হাজার ৫৮ জন। ভর্তিকৃতদের মধ্যে ১০৪ জন ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ও ৫৪জন ঢাকার বাহিরে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে বলা হয়েছে, চলতি বছরের পহেলা জানুয়ারি থেকে বুধবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মোট ৩ হাজার ৬৮৩ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। বুধবার সকাল পর্যন্ত হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা শেষে ছাড়পত্র নিয়েছে ২ হাজার ৬১৭ জন। অন্যরা এখনও চিকিৎসাধীন আছে।
ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত এমন উপসর্গ নিয়ে মোট আট জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মৃত্যুর তথ্য হাসপাতাল থেকে মহাখালী রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে (আইইডিসিঅরে) পাঠানো হয়েছে। সেখানে মৃত্যুর পর্যালোচনা করে ডেঙ্গুজনিত কি না, তা নিশ্চিত করা হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ভর্তিকৃতদের মধ্যে ৪২ জন মিটফোর্ড হাসপাতালে, ঢাকা শিশু হাসপাতালে ৬ জন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪ জন, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ৬ জন ভর্তি হয়েছে। এ ছাড়াও ঢাকার আশপাশের বিভিন্ন জেলায় ৫ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৭ জন, রাজশাহী বিভাগে ১ জন, খুলনা বিভাগে ১ জন, বরিশাল বিভাগে ২ জন ভর্তি হয়েছে।
মহাখালী রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মোস্তাক হোসেন বলেন, ডেঙ্গু মশা ভোরে ও সন্ধ্যায় বেশি কামড়ায়। ডেঙ্গু ভাইরাস চার ধরনের। এর মধ্যে টাইপ-১, টাইপ-২, টাইপ-৩ ও টাইপ-৪। এ বছর ৩ নম্বর ভাইরাসের প্রভাব বেশি। গত ১৭, ১৮, ১৯ ও ২০ সালে একই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। এ ভাইরাসে ডেঙ্গু ছড়াচ্ছে। তবে ক্ষয় ক্ষতির আশঙ্কা কম। অন্য টাইপের ভাইরাসে আক্রান্ত হলে ক্ষতির পরিমাণ আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ত।
তার মতে, ডেঙ্গু জ্বরের বাহক এডিস মশা এখন শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত বিস্তৃত। আগে শুধু শহরে দালাল ও পাকা রাস্তা ছিল। এখন উপজেলা থেকে ইউনিয়নে তার বিস্তার ঘটছে। পাকা ভবনের ওপরে, রাস্তায় পরিষ্কার পানি জমে। ওই পানিতে ডেঙ্গু জ্বরের বাহক এডিস মশার প্রজনন হচ্ছে। ডেঙ্গু মশা রাতে উজ্জ্বল আলোতেও কামড়ায়। তাই যাদের পক্ষে সম্ভব তারা বাসা বাড়িতে নেট দিয়ে আটকে রাখতে পারেন। এর ফলে মশা বাসাবাড়িতে ঢুকতে না পারলে আক্রান্তের সংখ্যা কম হবে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি (একাডেমি) এ কে এম মোশারফ হোসেন সংবাদকে জানান, মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেঙ্গু কর্নারে প্রতিদিন রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। বুধবার ২১ জন প্রাপ্তবয়স্ক রোগী এখন ভর্তি আছে। আক্রান্ত রোগীদের অনুচক্রিকা কমে যাচ্ছে। এই বছর নতুন ধরন হলো, ডেঙ্গু রোগীদের বমি ও পাতলা পায়খানা বেশি হচ্ছে। তাদের শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি হচ্ছে। চিকিৎসকরা সবাত্মক চেষ্টা করছেন বলে তিনি জানান।
এ দিকে ঢাকা শিশু হাসপাতালের পরিচালক প্রফেসর ডা. সৈয়দ সফি আহমেদ সংবাদকে জানান, ঢাকা শিশু হাসপাতালে এখনো ৩৫ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশু ভর্তি আছে। তার মধ্যে ছয়জন আইসিইউতে আছে। এ পর্যন্ত ডেঙ্গু জ্বরের ১৩৬ জন শিশু আক্রান্ত হয়ে শিশু হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। তাদের মধ্যে চারজন শিশু মারা গেছে।
এ বছর আক্রান্ত শিশুদের লক্ষণ জ্বর, মাথা ব্যথা, বমি, পেটে ব্যাথাসহ নানা সমস্যা দেখা দিচ্ছে।
তার মতে, ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হলে শিশুদের প্রথমে প্যারাসিটামল। এরপর তরল খাবার ও শরীরর মুচে দেয়ার পরামর্শ দেনস। আর তিন দিনের মধ্যে ডেঙ্গু টেস্ট করতে বলেন এ বিশেষজ্ঞ। দিনে শিশুদের মশারি টানিয়ে ঘুমাতে দেয়া দরকার বলে তিনি জানান।
বুধবার ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন থেকে জানা গেছে, ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধে ঢাকা চিরুনি অভিযান চালাচ্ছেন। বুধবার রাজধানীর মোহাম্মদপুর শেরেশাহ সুরি রোড, শাহাজান রোড, আজম রোডসহ আশপাশ এলাকায় চিরুনি অভিযান ও জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম চালানো হয়েছে। তারা ডেঙ্গু জ্বরের বাহক এডিস মশার লার্ভা যাতে না জমে, সেদিকে জন্য সবাইকে সচেতন হওয়ার গাইডলাইন দেয়া হয়েছে। এ ছাড়াও বাড়ির আঙিনাসহ আশপাশ এলাকা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য নগরবাসীর সহযোগিতা চেয়েছেন। আর সহযোগিতার দরকার হলে সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ প্রস্তুত বলে জানান।