২০১৮ সালে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু ৩৫৯ জন, বজ্রপাত থেকে নিরাপদ রাখতে ১৮ দফা নির্দেশনা
বজ্রপাতে সারা দেশে গত ১০ বছরে ২ হাজার ১৬৪ জন মারা গেছেন। ২০১১ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত বজ্রপাতের এই মৃত্যুর সংখ্যা উল্লেখ করেছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বার্তায়। এর মধ্যে সর্বাধিক ৩৫৯ জন মারা গেছে ২০১৮ সালে। দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, সাধারণত বছরের এপ্রিল, মে ও জুন-এই তিন মাসে বজ্রবৃষ্টি হয়। তবে এ বছর বুধবারই (৪ আগস্ট) চাঁপাইনবাবগঞ্জে বজ্রপাতে সবচেয়ে বেশি হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। বজ্রপাত থেকে নিরাপদ রাখতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় ১৮ দফা নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এতে বজ্রপাতের সময় টিনের চালা যথাসম্ভব এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। কিন্তু চাঁপাইনবাবগঞ্জের ঘটনায় বজ্রপাতের সময় নিহত সবাই টিনের চালার নিচেই অবস্থান নিয়েছিল। তাই হতাহতের সংখ্যা বেশি হয়েছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় ১৮ দফা নির্দেশনায় উল্লেখ করা হয়েছে- ১. এপ্রিল-জুন মাসে বজ্রবৃষ্টি বেশি হয়; বজ্রপাতের সময়সীমা সাধারণত ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট স্থায়ী হয়। এ সময়টুকু ঘরে অবস্থান করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। ২. ঘন কালো মেঘ দেখা দিলে ঘরের বাহির না হওয়া। অতি জরুরি প্রয়োজনে রবারের জুতা পড়ে বাইরে বের হওয়া।
৩. বজ্রপাতের সময় খোলা জায়গা, খোলা মাঠ অথবা উঁচু স্থানে না থাকা। ৪. বজ্রপাতের সময় ধান খেত বা খোলা মাঠে থাকলে তাড়াতাড়ি পায়ের আঙুলের ওপর ভর দিয়ে এবং কানে আঙুল দিয়ে মাথা নিচু করে বসে থাকা। ৫. যত দ্রুত সম্ভব দালান বা ছাদের নিচে আশ্রয় নেয়া। টিনের চালা যথাসম্ভব এড়িয়ে চলা। ৬. উঁচু গাছপালা ও বৈদ্যুতিক খুঁটি ও তার বা ধাতব খুঁটি, মোবাইল টাওয়ার ইত্যাদি থেকে দূরে থাকা। ৭. কালো মেঘ দেখা দিলে নদী, পুকুর, ডোবা বা জলাশয় থেকে দূরে থাকা। ৮. বজ্রপাতের সময় গাড়ির ভেতর অবস্থান করলে, গাড়ির ধাতব অংশের সঙ্গে শরীরের সংযোগ না থাকা। সম্ভব হলে গাড়িটি নিয়ে কোনো কংক্রিটের ছাউনির নিচে আশ্রয় নেয়া। ৯. বজ্রপাতের সময় বাড়িতে থাকলে জানালার কাছাকাছি ও বারান্দায় না থাকা। জানালা বন্ধ রাখা এবং ঘরের ভিতরে বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম থেকে দূরে থাকা। ১০. বজ্রপাতের সময় মোবাইল, ল্যাপটপ, কম্পিউটার, ল্যান্ডফোন, টিভি, ফ্রিজসহ সব বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ব্যবহার থেকে বিরত থাকা এবং এগুলো বন্ধ রাখা। ১১. বজ্রপাতের সময় ধাতব হাতলযুক্ত ছাতা ব্যবহার না করা। জরুরি প্রয়োজনে প্লাস্টিক বা কাঠের হাতলযুক্ত ছাতা ব্যবহার করা। ১২. বজ্রপাতের সময় শিশুদের খোলা মাঠে খেলাধুলা থেকে বিরত রাখা এবং নিজেরাও বিরত থাকা। ১৩. বজ্রপাতের সময় ছাউনিবিহীন নৌকায় মাছ ধরা নিষেধ, তবে এ সময় সমুদ্র বা নদীতে থাকলে মাছ ধরা বন্ধ রেখে নৌকার ছাউনির নিচে অবস্থান করা। ১৪. বজ্রপাত ও ঝড়ের সময় বাড়ির ধাতব কল, সিঁড়ির ধাতব রেলিং, পাইপ ইত্যাদি স্পর্শ না করা। ১৫. প্রতিটি বিল্ডিংয়ে বজ্রনিরোধক দ- স্থাপন নিশ্চিত করা। ১৬. খোলা স্থানে অনেকে একত্রে থাকাকালে বজ্রপাত শুরু হলে প্রত্যেকে ৫০ থেকে ১০০ ফুট দূরে দূরে সরে যেতে বলা হয়েছে। ১৭. কোন বাড়িতে যদি পর্যাপ্ত নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা না থাকে, তাহলে সবাই এক কক্ষে না থেকে আলাদা আলাদা থাকার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। ১৮. বজ্রপাতে কেউ আহত হলে বৈদ্যুতিক শকে আহতদের মতো করেই চিকিৎসা করতে হবে। প্রয়োজনে দ্রুত চিকিৎসক ডাকতে হবে বা হাসপাতালে নিতে হবে। বজ্র আহত ব্যক্তির শাস-প্রশ্বাস ও হ্রদ স্পন্দন ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চালিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব এস এম ফেরদৌস সংবাদকে বলেন, ‘সারা দেশের বজ্রপাতের হতাহতের বিষয়ে দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এ ছাড়া বজ্রপাত থেকে মানুষদের নিরাপদ রাখতে বিভিন্ন নির্দেশনা দেয়া হয়।’ এ নিয়ে একটি প্রকল্পের নেয়ার কাজ চলছে বলে জানান তিনি।
দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, বজ্রপাতের গত বছরে ২ হাজার ১৬৪ জন মুত্যুবরণ করেন। এর মধ্যে ২০১১ সালে ১৭৯ জন, ২০১২ সালে ২০১ জন, ২০১৩ সালে ১৮৫ জন, ২০১৪ সালে ১৭০ জন, ২০১৫ সালে ১৬০ জন, ২০১৭ সালে ৩০১ জন, ২০১৮ সালে ৩৫৯ জন, ২০১৯ সালে ১৬৮ জন ও ২০২০ সালে ২৩৬ জন মারা গেছেন।
২০১৮ সালে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু ৩৫৯ জন, বজ্রপাত থেকে নিরাপদ রাখতে ১৮ দফা নির্দেশনা
বুধবার, ০৪ আগস্ট ২০২১
বজ্রপাতে সারা দেশে গত ১০ বছরে ২ হাজার ১৬৪ জন মারা গেছেন। ২০১১ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত বজ্রপাতের এই মৃত্যুর সংখ্যা উল্লেখ করেছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বার্তায়। এর মধ্যে সর্বাধিক ৩৫৯ জন মারা গেছে ২০১৮ সালে। দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, সাধারণত বছরের এপ্রিল, মে ও জুন-এই তিন মাসে বজ্রবৃষ্টি হয়। তবে এ বছর বুধবারই (৪ আগস্ট) চাঁপাইনবাবগঞ্জে বজ্রপাতে সবচেয়ে বেশি হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। বজ্রপাত থেকে নিরাপদ রাখতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় ১৮ দফা নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এতে বজ্রপাতের সময় টিনের চালা যথাসম্ভব এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। কিন্তু চাঁপাইনবাবগঞ্জের ঘটনায় বজ্রপাতের সময় নিহত সবাই টিনের চালার নিচেই অবস্থান নিয়েছিল। তাই হতাহতের সংখ্যা বেশি হয়েছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় ১৮ দফা নির্দেশনায় উল্লেখ করা হয়েছে- ১. এপ্রিল-জুন মাসে বজ্রবৃষ্টি বেশি হয়; বজ্রপাতের সময়সীমা সাধারণত ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট স্থায়ী হয়। এ সময়টুকু ঘরে অবস্থান করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। ২. ঘন কালো মেঘ দেখা দিলে ঘরের বাহির না হওয়া। অতি জরুরি প্রয়োজনে রবারের জুতা পড়ে বাইরে বের হওয়া।
৩. বজ্রপাতের সময় খোলা জায়গা, খোলা মাঠ অথবা উঁচু স্থানে না থাকা। ৪. বজ্রপাতের সময় ধান খেত বা খোলা মাঠে থাকলে তাড়াতাড়ি পায়ের আঙুলের ওপর ভর দিয়ে এবং কানে আঙুল দিয়ে মাথা নিচু করে বসে থাকা। ৫. যত দ্রুত সম্ভব দালান বা ছাদের নিচে আশ্রয় নেয়া। টিনের চালা যথাসম্ভব এড়িয়ে চলা। ৬. উঁচু গাছপালা ও বৈদ্যুতিক খুঁটি ও তার বা ধাতব খুঁটি, মোবাইল টাওয়ার ইত্যাদি থেকে দূরে থাকা। ৭. কালো মেঘ দেখা দিলে নদী, পুকুর, ডোবা বা জলাশয় থেকে দূরে থাকা। ৮. বজ্রপাতের সময় গাড়ির ভেতর অবস্থান করলে, গাড়ির ধাতব অংশের সঙ্গে শরীরের সংযোগ না থাকা। সম্ভব হলে গাড়িটি নিয়ে কোনো কংক্রিটের ছাউনির নিচে আশ্রয় নেয়া। ৯. বজ্রপাতের সময় বাড়িতে থাকলে জানালার কাছাকাছি ও বারান্দায় না থাকা। জানালা বন্ধ রাখা এবং ঘরের ভিতরে বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম থেকে দূরে থাকা। ১০. বজ্রপাতের সময় মোবাইল, ল্যাপটপ, কম্পিউটার, ল্যান্ডফোন, টিভি, ফ্রিজসহ সব বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ব্যবহার থেকে বিরত থাকা এবং এগুলো বন্ধ রাখা। ১১. বজ্রপাতের সময় ধাতব হাতলযুক্ত ছাতা ব্যবহার না করা। জরুরি প্রয়োজনে প্লাস্টিক বা কাঠের হাতলযুক্ত ছাতা ব্যবহার করা। ১২. বজ্রপাতের সময় শিশুদের খোলা মাঠে খেলাধুলা থেকে বিরত রাখা এবং নিজেরাও বিরত থাকা। ১৩. বজ্রপাতের সময় ছাউনিবিহীন নৌকায় মাছ ধরা নিষেধ, তবে এ সময় সমুদ্র বা নদীতে থাকলে মাছ ধরা বন্ধ রেখে নৌকার ছাউনির নিচে অবস্থান করা। ১৪. বজ্রপাত ও ঝড়ের সময় বাড়ির ধাতব কল, সিঁড়ির ধাতব রেলিং, পাইপ ইত্যাদি স্পর্শ না করা। ১৫. প্রতিটি বিল্ডিংয়ে বজ্রনিরোধক দ- স্থাপন নিশ্চিত করা। ১৬. খোলা স্থানে অনেকে একত্রে থাকাকালে বজ্রপাত শুরু হলে প্রত্যেকে ৫০ থেকে ১০০ ফুট দূরে দূরে সরে যেতে বলা হয়েছে। ১৭. কোন বাড়িতে যদি পর্যাপ্ত নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা না থাকে, তাহলে সবাই এক কক্ষে না থেকে আলাদা আলাদা থাকার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। ১৮. বজ্রপাতে কেউ আহত হলে বৈদ্যুতিক শকে আহতদের মতো করেই চিকিৎসা করতে হবে। প্রয়োজনে দ্রুত চিকিৎসক ডাকতে হবে বা হাসপাতালে নিতে হবে। বজ্র আহত ব্যক্তির শাস-প্রশ্বাস ও হ্রদ স্পন্দন ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চালিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব এস এম ফেরদৌস সংবাদকে বলেন, ‘সারা দেশের বজ্রপাতের হতাহতের বিষয়ে দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এ ছাড়া বজ্রপাত থেকে মানুষদের নিরাপদ রাখতে বিভিন্ন নির্দেশনা দেয়া হয়।’ এ নিয়ে একটি প্রকল্পের নেয়ার কাজ চলছে বলে জানান তিনি।
দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, বজ্রপাতের গত বছরে ২ হাজার ১৬৪ জন মুত্যুবরণ করেন। এর মধ্যে ২০১১ সালে ১৭৯ জন, ২০১২ সালে ২০১ জন, ২০১৩ সালে ১৮৫ জন, ২০১৪ সালে ১৭০ জন, ২০১৫ সালে ১৬০ জন, ২০১৭ সালে ৩০১ জন, ২০১৮ সালে ৩৫৯ জন, ২০১৯ সালে ১৬৮ জন ও ২০২০ সালে ২৩৬ জন মারা গেছেন।