alt

সারাদেশ

মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে প্রভাবশালী ও ধনাঢ্যরা

সাইফ বাবলু : শুক্রবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২১

বিশেষ অভিযান শুরুর পর দেশে মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে না এলেও বেড়েছে মাদক কারবারির সংখ্যা। মাদক ব্যবসায় জড়িত রয়েছে প্রভাবশালী, নারী এবং অনেক ধনাঢ্য ব্যবসায়ীও। শুধু ঢাকাতেই মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে সাড়ে ৩ হাজার মাদক কারবারি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মাদক কারবারিদের সিন্ডিকেট রাজধানীকেন্দ্রীক সক্রিয়। এসব মাদক কারবারিদের হাত ধরে দেশে যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন মাদক। বিশেষ অভিযানে যেসব মাদক কারবারিদের তালিকা হয়েছিল তাদের বিরুদ্ধে জোরালো ব্যবস্থা না নেয়ায় মাদক কারবার বেড়েছে বলে মনে করছেন মাদকবিরোধী কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত বিশেষজ্ঞ মহলও।

ফেনসিডিল, ইয়াবার পর এখন মাদক সেবীদের কাছে সবচেয়ে বেশি চাহিদা আইস মাদক। দেশজুড়ে মাদক কারবারিদের শক্তিশালী নেটওয়ার্কে যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন মাদক চোরাকারবারিরা। এসব মাদক কারবারিদের নেটওয়ার্ক সারাদেশেই রয়েছে। সীমান্ত পথ থেকে শুরু করে নদীপথ, আকাশ পথেও এসব মাদক কারবারিদের নিয়ন্ত্রণে মাদক ব্যবসা। সূত্র বলছে, দেশে ১ কোটির বেশি মাদকসেবী রয়েছে। এখন দিনে দিনে মাদকসেবীর সংখ্যা আরও বাড়ছে। মাদকসেবীর সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে বাড়ছে মাদক কারবারিদের সংখ্যা। রাতারাতি কোটিপতি হওয়ার স্বপ্নে এখন অনেকেই মাদক ব্যবসায় বিনিয়োগ করছেন। অন্য ব্যবসার অন্তরালে মাদক ব্যবসায় বিনিয়োগ করার কারণে অনেক কারবারি থেকে যান ধরাছোঁয়ার বাইরে।

মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ঢাকা ডিভিশনের অতিরিক্ত পরিচালক মো. ফজলুর রহমান টেলিফোনে সংবাদকে বলেন, মাদক নির্মূলে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর আগের চেয়ে অনেক বেশি সক্রিয় হয়ে কাজ করছে। সম্প্রতি আমরা ঢাকা ডিভিশনে মাদক কারবারি হিসেবে সাড়ে ৩ হাজার ব্যক্তির সংশ্লিষ্টতা পেয়েছি। যারা রাজধানীসহ ঢাকা ডিভিশনের বিভিন্ন জেলায় মাদক কারবারে সক্রিয় রয়েছে। এদের মধ্যে অনেকের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে, অনেকেই আছেন যাদের বিরুদ্ধে কোন মামলা নেই।

অতিরিক্ত পরিচালক ফজলুর রহমান জানান. ঢাকা ডিভিশনে সবচেয়ে বেশি মাদক কারবারি রাজধানীতে। তালিকা মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ছাড়াও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিটের কাছেও রয়েছে। তালিকা একটি নিয়মিত প্রসেস। তালিকায় নতুন নতুন মাদক কারবারিদের নাম যুক্ত হচ্ছে। আমরা মাঠ পর্যায়ে অভিযানে মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিত্বে এসব তালিকা করেছি।

মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের এক কর্মকতা বলছেন, সম্প্রতি তারা ঢাকা বিভাগে সাড়ে ৩ হাজার মাদক কারবারির যে তালিকা তৈরি হয়েছে সেই তালিকায় রাজনৈতিক দলের নেতা থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মাদক কারবারি রয়েছে। মাদক নিমূলে ও নিয়ন্ত্রণে মাঠপর্যায়ে দায়িত্ব পালন করা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোন কোন অসাধু কর্মকর্তারা জড়িয়ে পড়ছে মাদকের চোরাচালানের নেটওয়ার্কের সঙ্গে। ওই কর্মকর্তা বলছেন, প্রতিদিন তালিকায় নতুন নতুন কারবারিদের নাম যুক্ত হচ্ছে। এমন অনেক ব্যক্তি আছেন যাদের দেখে বুঝার কোন উপায় নেই তারা মাদক কারবারে জড়িত। যখন মাদকসহ ধরা পড়ে তখন তার মাদক ব্যবসার বিষয়টি সামনে চলে আসে।

মাদকের বিরুদ্ধে জনমত তৈরি ও জনসচেতনতা তৈরিতে কাজ করা বেসরকারি সংস্থা মানসের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও জাতীয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কমিটির উপদেষ্টা কমিটির সদস্য অধ্যাপক ড. অরুপরতন চৌধুরী টেলিফোনে সংবাদকে বলেন, ঢাকায় যে সাড়ে ৩ হাজার মাদক কারবারির তালিকার কথা বলছে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সেটি তো আরও আগেই ছিল। সারাদেশে কারা মাদক ব্যবসা করছে তার সঠিক পরিসংখ্যান এখনও আমরা পাচ্ছি না। ২০১৮ সালে মাদকের বিরুদ্ধে যে বিশেষ অভিযান পরিচালনা শুরু হয়েছিল তখন সারাদেশের মাদককারবারিদের একটি তালিকা তৈরি হয়েছিল। সেই তালিকা ধরে অভিযানও শুরু হয়। তখন অনেক মাদক ব্যবসায়ী গ্রেপ্তার হয়েছিল। কিন্তু অজানা কারণে বিশেষ অভিযান বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর ফের মাদক কারবারিরা সক্রিয় হয়ে উঠেছে। বেড়েছে মাদকের চোরাচালান এবং মাদক সেবনের চাহিদাও।

ড. অরুপরতন বলেন, এখন সারাদেশেই মাদকের ভয়াবহ বিস্তার ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষ করে করোনাকালীন সংকট শুরু হওয়ার পর দেশে মাদকের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় মাদক কারবারিরাও বিপুল পরিমাণ অর্থ মাদকের জন্য বিনিয়োগ শুরু করেছে। এখন অলনাইনে মাদকের সরবরাহ বেড়েছে। ঘরে বসেই মাদক পাওয়া যাচ্ছে। যার কারণে সমাজের প্রভাবশালী ব্যবসায়ী, রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, এমনকি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকজনও মাদকের কারবারে যুক্ত হওয়ার খবর আমরা দেখতে পাচ্ছি। সম্প্রতি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বেশ কয়েকজন সদস্যকে মাদক বিক্রির সময় ধরা পড়ার খবর আমরা জানতে পেরেছি। ড. অরুপরতন বলেন, এখন নারীদেরও মাদক কারবারে যুক্ত করা হচ্ছে। নারীদের দিয়ে মাদক পাচার নিরাপদ বলে এখন তাদের মাদক ব্যবসায় যুক্ত করা হচ্ছে। আকাশ পথ, কুরিয়ার সার্ভিস, নদী পথ, সীমান্তসহ এমন কোন মাধ্যম নেই যে মাদকের চোরাচালান হচ্ছে না।

মাদক নির্মূলে ২০১৮ সালের মে মাস থেকে দেশজুড়ে বিশেষ অভিযান শুরু করে র‌্যাব। ওই অভিযান চলাকালে সারাদেশে এখন পর্যন্ত কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন ২৭২ জন মাদক কারবারি। এর মধ্যে সচেয়ে বেশি নিহত হয়েছে কক্সবাজার জেলায়। বিশেষ অভিযানের উদ্দেশ্য ছিল দেশব্যাপী ইয়াবার কারবার নিয়ন্ত্রণ করা। কিন্তু বিশেষ অভিযানেও নিয়ন্ত্রণে আসেনি ইয়াবা। বরং ইয়াবার পাশাপাশি ক্রিস্টাল ম্যাথ বা আইস এবং এলএসডি নামের মাদক যুক্ত হয়েছে। ইয়াবার পাশাপাশি সম্প্রতি দেশে আইস এবং এলএসডি নামের মাদক আসতে শুরু করেছে। মায়ানমার ও ভারত সীমান্ত দিয়ে সবচেয়ে বেশি ইয়াবা ও আইস প্রবেশ করছে বলে জানিয়েছে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা।

মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা টেলিফোনে সংবাদকে বলেন, প্রতি তিন মাস পর পর মাদক কারবারিদের একটি তালিকা হালনাগাদ হয়ে থাকে। অনেক সময় দেখা যায় মাদক ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত আছেন কিন্তু তার বিষয়ে কেউ কিছুই জানেন না। যখন মাদকসহ ধরা পড়েন তখন তার নামও তালিকায় যুক্ত হয়। এভাবে প্রতি ৩ মাস অন্তর অন্তর তালিকা হওয়ায় নতুন নতুন ব্যক্তিদের নাম তালিকায় যুক্ত হচ্ছে। ২০১৮ সালে যে তালিকা হয়েছিল সেখানে অনেক শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীদের নাম আসেনি। পরে তালিকা হালনাগাদ করতে গিয়ে তাদের নাম এসেছে।

হিটস্ট্রোকে ৪ জনের মৃত্যু

ছবি

ঈদযাত্রা : মোটরসাইকেলের দুর্ঘটনা ৫১ শতাংশ, সাড়ে ৪২ শতাংশ নিহত

ছবি

১৫ শ্রমিক নিয়ে সাজেকের খাদে ট্রাক, নিহত ৯

ছবি

রাজধানীতে প্রাইভেটকারের ধাক্কায় ভ্যানচালক নিহত

ছবি

থানচি, রুমা ও রোয়াংছড়ি উপজেলায় নির্বাচন স্থগিত

ছবি

বাসের ধাক্কায় চুয়েট শিক্ষার্থীর মৃত্যু নরসিংদীর বাড়িতে কান্নার রোল

ছবি

অপহরণ ও মারধরের শিকার দেলোয়ার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সিংড়া উপজেলার চেয়ারম্যান

ছবি

রাজশাহীতে বৃষ্টি নামাতে বিয়ের পিঁড়িতে দুই ব্যঙ

ছবি

রংপুরে সাজাপ্রাপ্ত দুই যুবদল নেতাকে কারাগাওে পাঠানোর নির্দেশে বিক্ষোভ

ছবি

আনসার সদস্যের ‘আত্মহত্যা’র কারণ অনুসন্ধানে পুলিশ

ছবি

পরিবার পাবে ১০ লাখ টাকা চুয়েটের দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ, আল্টিমেটাম

তিস্তাসহ ৫৪ অভিন্ন নদীর ন্যায্য হিস্যা দাবিতে বাসদের লং মার্চ

ছবি

লালমনিরহাটে বৃষ্টির জন্য কাঁদলেন হাজার হাজার মুসল্লি

ছবি

অসহায় পরিবারের নিরুপায় নির্মমতা! চুরি ঠেকাতে ৩ বছর শেকল বন্দি কিশোর

ছবি

ছাত্র হত্যায় যুবকের ১০ বছর সশ্রম কারাদণ্ড

হোটেলে আটকে রেখে কিশোর ধর্ষণ যাবজ্জীবন কারাদণ্ড

ছবি

ক্যাসিনোকাণ্ডের সেই সেলিম প্রধানের মনোনয়নপত্র বাতিল

ভৌতিক বিলের খপ্পর চট্টগ্রামে মিটার-সংযোগবিহীন গ্রাহকের বিদ্যুৎ বিল প্রায় ৭ লাখ টাকা

ছবি

এবারের ঈদযাত্রায় সড়কে ঝরেছে ৩৬৭ জনের প্রাণ

ছবি

চুয়েটের ২ শিক্ষার্থীকে চাপা দেওয়া বাসের চালক গ্রেপ্তার

ছবি

মাদারীপুরে এক্সপ্রেসওয়েতে বাস উল্টে নিহত ১, আহত ১০

ছবি

মায়ানমার নৌবাহিনীর জাহাজে দেশে ফিরছেন ১৫৩ বাংলাদেশি

ছবি

কক্সবাজারে স্পেশাল ট্রেনের ইঞ্জিন লাইনচ্যুত

ছবি

ট্রেন লাইনচ্যুত, কক্সবাজার-চট্টগ্রাম রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন

ছবি

উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যুবককে কুপিয়ে হত্যা

ছবি

নড়াইলে মাদক মামলায় ২ জনের যাবতজ্জীবন

আনসার সদস্যের ‘আত্মহত্যা’র কারণ খুঁজছে পুলিশ

ছবি

বাগেরহাটে যাত্রীবাহি বাস নিয়ন্ত্রন হারিয়ে খাদে, নিহত ১

ছবি

৫ জুন চতুর্থ ধাপে ৫৫ উপজেলায় ভোট

ছবি

ফরিদপুরে দুই ভাইকে হত্যার প্রতিবাদে মহাসড়ক অবরোধ

ছবি

নন্দীগ্রামে মসজিদের মিটিংয়ে হুমকি, নামাজ শেষে হামলা

ছবি

কক্সবাজারের তিন উপজেলায় কে কোন প্রতীক পেলেন

ছবি

গাজীপুরে মহাসড়কের পাশ থেকে হাতী মরদেহ উদ্ধার

ছবি

মোরেলগঞ্জে বৃষ্টির জন্য ইসতেস্কার নামাজ আদায়

ছবি

তীব্র গরম ও তাপদাহে অতিষ্ঠ মধুপুরবাসী বাড়ছে নানা রোগ

ছবি

মধুপুরে জৈব কৃষি ব্যবস্থাপনা বিষয়ক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত

tab

সারাদেশ

মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে প্রভাবশালী ও ধনাঢ্যরা

সাইফ বাবলু

শুক্রবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২১

বিশেষ অভিযান শুরুর পর দেশে মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে না এলেও বেড়েছে মাদক কারবারির সংখ্যা। মাদক ব্যবসায় জড়িত রয়েছে প্রভাবশালী, নারী এবং অনেক ধনাঢ্য ব্যবসায়ীও। শুধু ঢাকাতেই মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে সাড়ে ৩ হাজার মাদক কারবারি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মাদক কারবারিদের সিন্ডিকেট রাজধানীকেন্দ্রীক সক্রিয়। এসব মাদক কারবারিদের হাত ধরে দেশে যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন মাদক। বিশেষ অভিযানে যেসব মাদক কারবারিদের তালিকা হয়েছিল তাদের বিরুদ্ধে জোরালো ব্যবস্থা না নেয়ায় মাদক কারবার বেড়েছে বলে মনে করছেন মাদকবিরোধী কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত বিশেষজ্ঞ মহলও।

ফেনসিডিল, ইয়াবার পর এখন মাদক সেবীদের কাছে সবচেয়ে বেশি চাহিদা আইস মাদক। দেশজুড়ে মাদক কারবারিদের শক্তিশালী নেটওয়ার্কে যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন মাদক চোরাকারবারিরা। এসব মাদক কারবারিদের নেটওয়ার্ক সারাদেশেই রয়েছে। সীমান্ত পথ থেকে শুরু করে নদীপথ, আকাশ পথেও এসব মাদক কারবারিদের নিয়ন্ত্রণে মাদক ব্যবসা। সূত্র বলছে, দেশে ১ কোটির বেশি মাদকসেবী রয়েছে। এখন দিনে দিনে মাদকসেবীর সংখ্যা আরও বাড়ছে। মাদকসেবীর সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে বাড়ছে মাদক কারবারিদের সংখ্যা। রাতারাতি কোটিপতি হওয়ার স্বপ্নে এখন অনেকেই মাদক ব্যবসায় বিনিয়োগ করছেন। অন্য ব্যবসার অন্তরালে মাদক ব্যবসায় বিনিয়োগ করার কারণে অনেক কারবারি থেকে যান ধরাছোঁয়ার বাইরে।

মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ঢাকা ডিভিশনের অতিরিক্ত পরিচালক মো. ফজলুর রহমান টেলিফোনে সংবাদকে বলেন, মাদক নির্মূলে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর আগের চেয়ে অনেক বেশি সক্রিয় হয়ে কাজ করছে। সম্প্রতি আমরা ঢাকা ডিভিশনে মাদক কারবারি হিসেবে সাড়ে ৩ হাজার ব্যক্তির সংশ্লিষ্টতা পেয়েছি। যারা রাজধানীসহ ঢাকা ডিভিশনের বিভিন্ন জেলায় মাদক কারবারে সক্রিয় রয়েছে। এদের মধ্যে অনেকের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে, অনেকেই আছেন যাদের বিরুদ্ধে কোন মামলা নেই।

অতিরিক্ত পরিচালক ফজলুর রহমান জানান. ঢাকা ডিভিশনে সবচেয়ে বেশি মাদক কারবারি রাজধানীতে। তালিকা মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ছাড়াও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিটের কাছেও রয়েছে। তালিকা একটি নিয়মিত প্রসেস। তালিকায় নতুন নতুন মাদক কারবারিদের নাম যুক্ত হচ্ছে। আমরা মাঠ পর্যায়ে অভিযানে মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিত্বে এসব তালিকা করেছি।

মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের এক কর্মকতা বলছেন, সম্প্রতি তারা ঢাকা বিভাগে সাড়ে ৩ হাজার মাদক কারবারির যে তালিকা তৈরি হয়েছে সেই তালিকায় রাজনৈতিক দলের নেতা থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মাদক কারবারি রয়েছে। মাদক নিমূলে ও নিয়ন্ত্রণে মাঠপর্যায়ে দায়িত্ব পালন করা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোন কোন অসাধু কর্মকর্তারা জড়িয়ে পড়ছে মাদকের চোরাচালানের নেটওয়ার্কের সঙ্গে। ওই কর্মকর্তা বলছেন, প্রতিদিন তালিকায় নতুন নতুন কারবারিদের নাম যুক্ত হচ্ছে। এমন অনেক ব্যক্তি আছেন যাদের দেখে বুঝার কোন উপায় নেই তারা মাদক কারবারে জড়িত। যখন মাদকসহ ধরা পড়ে তখন তার মাদক ব্যবসার বিষয়টি সামনে চলে আসে।

মাদকের বিরুদ্ধে জনমত তৈরি ও জনসচেতনতা তৈরিতে কাজ করা বেসরকারি সংস্থা মানসের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও জাতীয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কমিটির উপদেষ্টা কমিটির সদস্য অধ্যাপক ড. অরুপরতন চৌধুরী টেলিফোনে সংবাদকে বলেন, ঢাকায় যে সাড়ে ৩ হাজার মাদক কারবারির তালিকার কথা বলছে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সেটি তো আরও আগেই ছিল। সারাদেশে কারা মাদক ব্যবসা করছে তার সঠিক পরিসংখ্যান এখনও আমরা পাচ্ছি না। ২০১৮ সালে মাদকের বিরুদ্ধে যে বিশেষ অভিযান পরিচালনা শুরু হয়েছিল তখন সারাদেশের মাদককারবারিদের একটি তালিকা তৈরি হয়েছিল। সেই তালিকা ধরে অভিযানও শুরু হয়। তখন অনেক মাদক ব্যবসায়ী গ্রেপ্তার হয়েছিল। কিন্তু অজানা কারণে বিশেষ অভিযান বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর ফের মাদক কারবারিরা সক্রিয় হয়ে উঠেছে। বেড়েছে মাদকের চোরাচালান এবং মাদক সেবনের চাহিদাও।

ড. অরুপরতন বলেন, এখন সারাদেশেই মাদকের ভয়াবহ বিস্তার ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষ করে করোনাকালীন সংকট শুরু হওয়ার পর দেশে মাদকের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় মাদক কারবারিরাও বিপুল পরিমাণ অর্থ মাদকের জন্য বিনিয়োগ শুরু করেছে। এখন অলনাইনে মাদকের সরবরাহ বেড়েছে। ঘরে বসেই মাদক পাওয়া যাচ্ছে। যার কারণে সমাজের প্রভাবশালী ব্যবসায়ী, রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, এমনকি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকজনও মাদকের কারবারে যুক্ত হওয়ার খবর আমরা দেখতে পাচ্ছি। সম্প্রতি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বেশ কয়েকজন সদস্যকে মাদক বিক্রির সময় ধরা পড়ার খবর আমরা জানতে পেরেছি। ড. অরুপরতন বলেন, এখন নারীদেরও মাদক কারবারে যুক্ত করা হচ্ছে। নারীদের দিয়ে মাদক পাচার নিরাপদ বলে এখন তাদের মাদক ব্যবসায় যুক্ত করা হচ্ছে। আকাশ পথ, কুরিয়ার সার্ভিস, নদী পথ, সীমান্তসহ এমন কোন মাধ্যম নেই যে মাদকের চোরাচালান হচ্ছে না।

মাদক নির্মূলে ২০১৮ সালের মে মাস থেকে দেশজুড়ে বিশেষ অভিযান শুরু করে র‌্যাব। ওই অভিযান চলাকালে সারাদেশে এখন পর্যন্ত কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন ২৭২ জন মাদক কারবারি। এর মধ্যে সচেয়ে বেশি নিহত হয়েছে কক্সবাজার জেলায়। বিশেষ অভিযানের উদ্দেশ্য ছিল দেশব্যাপী ইয়াবার কারবার নিয়ন্ত্রণ করা। কিন্তু বিশেষ অভিযানেও নিয়ন্ত্রণে আসেনি ইয়াবা। বরং ইয়াবার পাশাপাশি ক্রিস্টাল ম্যাথ বা আইস এবং এলএসডি নামের মাদক যুক্ত হয়েছে। ইয়াবার পাশাপাশি সম্প্রতি দেশে আইস এবং এলএসডি নামের মাদক আসতে শুরু করেছে। মায়ানমার ও ভারত সীমান্ত দিয়ে সবচেয়ে বেশি ইয়াবা ও আইস প্রবেশ করছে বলে জানিয়েছে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা।

মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা টেলিফোনে সংবাদকে বলেন, প্রতি তিন মাস পর পর মাদক কারবারিদের একটি তালিকা হালনাগাদ হয়ে থাকে। অনেক সময় দেখা যায় মাদক ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত আছেন কিন্তু তার বিষয়ে কেউ কিছুই জানেন না। যখন মাদকসহ ধরা পড়েন তখন তার নামও তালিকায় যুক্ত হয়। এভাবে প্রতি ৩ মাস অন্তর অন্তর তালিকা হওয়ায় নতুন নতুন ব্যক্তিদের নাম তালিকায় যুক্ত হচ্ছে। ২০১৮ সালে যে তালিকা হয়েছিল সেখানে অনেক শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীদের নাম আসেনি। পরে তালিকা হালনাগাদ করতে গিয়ে তাদের নাম এসেছে।

back to top