প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিনে দেয়া হবে ৮০ লাখ ডোজ
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগে রবিবারও টিকা নিতে প্রখর রোদে অপেক্ষমাণদের দীর্ঘ লাইন -সংবাদ
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষে আগামীকাল থেকে আবারও গণটিকা কর্মসূচি শুরু হচ্ছে। যারা ইতোমধ্যে টিকার জন্য নিবন্ধন করেছেন, তাদের এই কার্যক্রমে প্রাধান্য দেয়া হবে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানিয়েছেন, ২৮ তারিখ সকাল থেকে গণটিকাদান কর্মসূচি চলবে। এবারে গণটিকাদান কর্মসূচির ওই দিন ৮০ লাখ ডোজ টিকা দেয়ার টার্গেট ধরা হয়েছে। এই টার্গেট পূরণ না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চলবে। প্রয়োজনে একাধিক শিফটে টিকা দেয়া হবে।
রবিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘২৮ তারিখ সকাল ৯টা থেকে বিশেষ টিকা কার্যক্রম শুরু হবে। যারা গ্রামে থাকে, দরিদ্র জনগোষ্ঠী, বয়স্ক তারা এই কার্যক্রমে টিকা নিতে পারবে। যারা নিবন্ধন করে খুদে বার্তা পাননি, তারা এই কার্যক্রমে অগ্রাধিকার পাবেন। এই কার্যক্রমে শুধু প্রথম ডোজের টিকার দেয়া হবে। কার্যক্রমে অধিকাংশ টিকা দেয়া হবে সিনোফার্মের।’
মন্ত্রী আরও বলেন, ‘৪ হাজার ৬০০টি ইউনিয়ন, ১ হাজার ৫৪টি পৌরসভা এবং সিটি করপোরেশন এলাকায় ৪৩৩টি ওয়ার্ডে স্থাপন করা টিকাকেন্দ্র থেকে এই টিকা দেয়া হবে। ইউনিয়ন পর্যায়ে তিনটি, পৌরসভায় একটি এবং সিটি করপোরেশন এলাকার কেন্দ্রে তিনটি করে বুথ থাকবে।’
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এখন পর্যন্ত সাড়ে ৫ কোটি ডোজ টিকা হাতে পাওয়া গেছে। এর মধ্যে দেয়া হয়েছে ৪ কোটি ডোজ। হাতে রয়েছে দেড় কোটি ডোজ টিকা। গর্ভবতী নারী ও দুগ্ধ দানকারী মায়েরা এই কার্যক্রমে টিকা পাবেন না। টিকা নিবন্ধন কার্ড, জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে এলেও টিকা নেয়া যাবে।’ স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ডিসেম্বরের মধ্যে দেয়া হবে ৪ কোটি ডোজ টিকা।
এ ছাড়া দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে যে নিয়মিত টিকাদান কর্মসূচি চলমান রয়েছে, তা চলমান থাকবে বলেও জানান জাহিদ মালেক। তিনি বলেন, ‘বর্তমানে নিয়মিত কর্মসূচিতেও প্রতিদিন ছয় লাখ ডোজ ভ্যাকসিন দেয়া হচ্ছে।’ বিশেষ এই কর্মসূচির আওতায় কারা টিকা পাবেন, জানতে চাইলে জাহিদ মালেক বলেন, ‘২৫ বছরের ঊর্ধ্বে যারা টিকার জন্য নিবন্ধন করেছেন তারা। তবে ৪০ বছরের ঊর্ধ্বে নারী-পুরুষ, শারীরিক প্রতিবন্ধী ও দুর্গম এলাকার বাসিন্দারা অগ্রাধিকার পাবেন।’
চলমান টিকাদান কার্যক্রমে অংশ নেবেন ৩২ হাজার ১০৬ জন স্বাস্থ্যকর্মী। পাশাপাশি ৪৮ হাজারের বেশি স্বেচ্ছাসেবী টিকাদান কর্মসূচিতে সহায়তা করবেন বলেও জানা গেছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের থেকে পাঠানো টিকাদানবিষয়ক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি থেকে জানা গেছে, শনিবার পর্যন্ত দেশে ৪ কোটি ২ লাখ ৩১ হাজার ৫৬৯ ডোজ টিকা দেয়া হয়েছে। দেশে এখন পর্যন্ত টিকা এসেছে ৫ কোটি ৪৫ লাখ ৮৫ হাজার ৮০ ডোজ। অর্থাৎ এই মুহূর্তে ১ কোটি ৪৩ লাখ ৫৩ হাজার ৫১১ ডোজ টিকা মজুত আছে। এখন পর্যন্ত প্রথম ডোজ দেয়া হয়েছে ২ কোটি ৪১ লাখ ৯৭ হাজার ৫৯৮ জনকে এবং দ্বিতীয় ডোজ পেয়েছেন ১ কোটি ৬০ লাখ ৩৩ হাজার ৯৭১ জন। মূলত, অক্সফোর্ডের অ্যাস্ট্রাজেনেকা, চীনের তৈরি সিনোফার্ম, ফাইজার এবং মডার্নার টিকা দেয়া হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, রবিবার অ্যাস্ট্রাজেনেকার প্রথম ডোজ দেয়া হয়েছে ৬৬ হাজার ৯৭০ জনকে এবং দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হয়েছে ৭৬৫ জনকে। পাশাপাশি ফাইজারের প্রথম ডোজ দেয়া হয়েছে ১৩ হাজার ৩৫৮ জনকে এবং দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হয়েছে ৩৩৪ জনকে। এ ছাড়া সিনোফার্মের টিকা প্রথম ডোজ নিয়েছেন দুই লাখ ৪৫ হাজার ২৩৭ জন এবং দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ২ লাখ ৪১ হাজার ৩১৩ জন। এদিকে মডার্নার টিকা প্রথম ডোজ নিয়েছেন ১ হাজার ৭১৬ জন এবং দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হয়েছে ১০ হাজার ৩০৭ জনকে। দেশে এখন পর্যন্ত নিবন্ধন করেছেন ৪ কোটি ৪১ লাখ ১৫ হাজার ১৪৫ জন বলে জানিয়েছে অধিদপ্তর।
এর আগে, দেশজুড়ে গত ৭ আগস্ট থেকে ছয় দিনব্যাপী গণটিকাদান কার্যক্রম শুরু হয়। সেইসময় সরকারের ছয় দিনে ৩২ লাখ মানুষকে টিকাদানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও প্রথম দিনেই টিকা নেন ৩০ লাখ ৭০ হাজার ২৬৮ জন। সর্বমোট গণটিকার আওতায় ৫০ লাখ ৭৩ হাজার ৪০ জন টিকা নেন। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ১৮ লাখ ৭৩ হাজার ৪০ জন বেশি মানুষ নেন। পরবর্তীতে তাদের গত ৭ সেপ্টেম্বর থেকে গণটিকার আওতায় দ্বিতীয় ডোজের টিকা তিন দিনের মধ্যে দেয়া হয়।
গণটিকা দেয়ার সময় সারাদেশের টিকাদান কেন্দ্রগুলোতে উপচেপড়া ভিড় ছিল। গণটিকা কার্যক্রমের আওতায় টিকা গ্রহণকারীদের মোবাইল ফোনে কোন বার্তা পাঠানো হয়নি। পাড়া-মহল্লায় গভীর রাত পর্যন্ত টিকা গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে মাইকিং করা হয়। মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে টিকা নিতে আসার কারণে সকাল ৮টার আগেই আগেই কানায় কানায় পূর্ণ ছিল টিকাদান কেন্দ্রগুলো।
আজ রাতে ফাইজারের আরও ২৫ লাখ ডোজ টিকা আসবে
কোভ্যাক্স ফ্যাসিলিটিজের আওতায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফাইজারের আরও ২৫ লাখ ডোজ টিকা আসবে। ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্য থেকে এই ভ্যাকসিন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল এয়ারলাইনসের একটি কার্গো বিমান আজ রাত ১০টা ১৫ মিনিটে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছাবে।
রবিবার দুপুরে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়। ভ্যাকসিনগুলো বুঝে নিতে বিমানবন্দরে বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মি. আর্ল আর মিলার, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলমসহ স্বাস্থ্য খাতের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।
এর আগে কোভ্যাক্স ফ্যাসিলিটিজের আওতায় যুক্তরাষ্ট্রের মাধ্যমে প্রথম দফায় ১ লাখ ৬২০ ডোজ এবং দ্বিতীয় দফায় ১০ লাখ ৩ হাজার ৮৬০ ডোজ ভ্যাকসিন দেশে পৌঁছেছে। আজ তৃতীয় দফায় আরও ২৫ লাখ ডোজ এলে এ নিয়ে ফাইজারের মোট ৩৬ লাখ ৪ হাজার ৪৮০ ডোজ ভ্যাকসিন দেশে পৌঁছাবে। অ্যাস্ট্রেজেনেকা, সিনোফার্মা, মডার্নার ভ্যাকসিনসহ ক্রয়কৃত ও কোভ্যাক্স ফ্যাসিলিটিজের আওতায় এ পর্যন্ত দেশে মোট ৪ কোটি ৯৪ লাখ ২৯ হাজার ৯৪০ ডোজ ভ্যাকসিন পৌঁছেছে। এর মধ্যে প্রথম ডোজ মোট ২ কোটি ৪১ লাখ ৯৭ হাজার ৫৯৮ জনকে এবং ১ কোটি ৬০ লাখ ৩৩ হাজার ৯৭১ জনকে ২য় ডোজ ভ্যাকসিন দেয়া হয়েছে (২৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত)।
এ ছাড়াও চীনের সিনোফার্ম থেকে কেনা ৬ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন চুক্তি অনুযায়ী প্রতি মাসে ২ কোটি ডোজ করে আসবে এ মাস থেকেই। পাশাপাশি, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মাধ্যমে আরও সাড়ে ১০ কোটি ডোজ ভ্যাকসিনসহ মোট ২৪ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন ক্রয়ের প্রক্রিয়াও চলমান রয়েছে।
আটকে আছে ভারতীয় টিকা
ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ৩ কোটি ডোজ টিকা কিনেছে বাংলাদেশ। সেই ৩ কোটি ডোজ টিকা আনতে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে গত বছরের পাঁচ নভেম্বর চুক্তি করে সরকার। সেখানে বলা হয়, প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশে তিন কোটি ডোজ টিকা রপ্তানি করবে। সে অনুযায়ী প্রতি মাসে ৫০ লাখ ডোজ পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু, ভারত তাদের টিকা রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয়ার কারণে ২ কোটি ৩০ লাখ ডোজ টিকা পায়নি বাংলাদেশ।
সম্প্রতি সময়ে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী জানিয়েছেন, করোনা ভ্যাকসিনের সংকট কাটাতে ভারত উৎপাদন বাড়াচ্ছে। তিনি বলেন, ‘ভ্যাকসিনের জন্য বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কে ভাটা পড়বে না। এই মুহূর্তে ভারতই ভ্যাকসিন সংকটে আছে। তবে উৎপাদন বাড়ানো হচ্ছে। শীঘ্রই বাংলাদেশে ভ্যাকসিন রপ্তানি করা হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। এ কারণে অন্যান্য দেশের চেয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে বেশি ভ্যাকসিন সরবরাহের চুক্তি আছে। সেই চুক্তি অনুযায়ী ৭০ লাখ টিকা সরবরাহ করা হয়েছে। বাকি টিকাগুলো ক্রমান্বয়ে সরবরাহ করা হবে।’
প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিনে দেয়া হবে ৮০ লাখ ডোজ
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগে রবিবারও টিকা নিতে প্রখর রোদে অপেক্ষমাণদের দীর্ঘ লাইন -সংবাদ
রোববার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২১
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষে আগামীকাল থেকে আবারও গণটিকা কর্মসূচি শুরু হচ্ছে। যারা ইতোমধ্যে টিকার জন্য নিবন্ধন করেছেন, তাদের এই কার্যক্রমে প্রাধান্য দেয়া হবে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানিয়েছেন, ২৮ তারিখ সকাল থেকে গণটিকাদান কর্মসূচি চলবে। এবারে গণটিকাদান কর্মসূচির ওই দিন ৮০ লাখ ডোজ টিকা দেয়ার টার্গেট ধরা হয়েছে। এই টার্গেট পূরণ না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চলবে। প্রয়োজনে একাধিক শিফটে টিকা দেয়া হবে।
রবিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘২৮ তারিখ সকাল ৯টা থেকে বিশেষ টিকা কার্যক্রম শুরু হবে। যারা গ্রামে থাকে, দরিদ্র জনগোষ্ঠী, বয়স্ক তারা এই কার্যক্রমে টিকা নিতে পারবে। যারা নিবন্ধন করে খুদে বার্তা পাননি, তারা এই কার্যক্রমে অগ্রাধিকার পাবেন। এই কার্যক্রমে শুধু প্রথম ডোজের টিকার দেয়া হবে। কার্যক্রমে অধিকাংশ টিকা দেয়া হবে সিনোফার্মের।’
মন্ত্রী আরও বলেন, ‘৪ হাজার ৬০০টি ইউনিয়ন, ১ হাজার ৫৪টি পৌরসভা এবং সিটি করপোরেশন এলাকায় ৪৩৩টি ওয়ার্ডে স্থাপন করা টিকাকেন্দ্র থেকে এই টিকা দেয়া হবে। ইউনিয়ন পর্যায়ে তিনটি, পৌরসভায় একটি এবং সিটি করপোরেশন এলাকার কেন্দ্রে তিনটি করে বুথ থাকবে।’
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এখন পর্যন্ত সাড়ে ৫ কোটি ডোজ টিকা হাতে পাওয়া গেছে। এর মধ্যে দেয়া হয়েছে ৪ কোটি ডোজ। হাতে রয়েছে দেড় কোটি ডোজ টিকা। গর্ভবতী নারী ও দুগ্ধ দানকারী মায়েরা এই কার্যক্রমে টিকা পাবেন না। টিকা নিবন্ধন কার্ড, জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে এলেও টিকা নেয়া যাবে।’ স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ডিসেম্বরের মধ্যে দেয়া হবে ৪ কোটি ডোজ টিকা।
এ ছাড়া দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে যে নিয়মিত টিকাদান কর্মসূচি চলমান রয়েছে, তা চলমান থাকবে বলেও জানান জাহিদ মালেক। তিনি বলেন, ‘বর্তমানে নিয়মিত কর্মসূচিতেও প্রতিদিন ছয় লাখ ডোজ ভ্যাকসিন দেয়া হচ্ছে।’ বিশেষ এই কর্মসূচির আওতায় কারা টিকা পাবেন, জানতে চাইলে জাহিদ মালেক বলেন, ‘২৫ বছরের ঊর্ধ্বে যারা টিকার জন্য নিবন্ধন করেছেন তারা। তবে ৪০ বছরের ঊর্ধ্বে নারী-পুরুষ, শারীরিক প্রতিবন্ধী ও দুর্গম এলাকার বাসিন্দারা অগ্রাধিকার পাবেন।’
চলমান টিকাদান কার্যক্রমে অংশ নেবেন ৩২ হাজার ১০৬ জন স্বাস্থ্যকর্মী। পাশাপাশি ৪৮ হাজারের বেশি স্বেচ্ছাসেবী টিকাদান কর্মসূচিতে সহায়তা করবেন বলেও জানা গেছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের থেকে পাঠানো টিকাদানবিষয়ক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি থেকে জানা গেছে, শনিবার পর্যন্ত দেশে ৪ কোটি ২ লাখ ৩১ হাজার ৫৬৯ ডোজ টিকা দেয়া হয়েছে। দেশে এখন পর্যন্ত টিকা এসেছে ৫ কোটি ৪৫ লাখ ৮৫ হাজার ৮০ ডোজ। অর্থাৎ এই মুহূর্তে ১ কোটি ৪৩ লাখ ৫৩ হাজার ৫১১ ডোজ টিকা মজুত আছে। এখন পর্যন্ত প্রথম ডোজ দেয়া হয়েছে ২ কোটি ৪১ লাখ ৯৭ হাজার ৫৯৮ জনকে এবং দ্বিতীয় ডোজ পেয়েছেন ১ কোটি ৬০ লাখ ৩৩ হাজার ৯৭১ জন। মূলত, অক্সফোর্ডের অ্যাস্ট্রাজেনেকা, চীনের তৈরি সিনোফার্ম, ফাইজার এবং মডার্নার টিকা দেয়া হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, রবিবার অ্যাস্ট্রাজেনেকার প্রথম ডোজ দেয়া হয়েছে ৬৬ হাজার ৯৭০ জনকে এবং দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হয়েছে ৭৬৫ জনকে। পাশাপাশি ফাইজারের প্রথম ডোজ দেয়া হয়েছে ১৩ হাজার ৩৫৮ জনকে এবং দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হয়েছে ৩৩৪ জনকে। এ ছাড়া সিনোফার্মের টিকা প্রথম ডোজ নিয়েছেন দুই লাখ ৪৫ হাজার ২৩৭ জন এবং দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ২ লাখ ৪১ হাজার ৩১৩ জন। এদিকে মডার্নার টিকা প্রথম ডোজ নিয়েছেন ১ হাজার ৭১৬ জন এবং দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হয়েছে ১০ হাজার ৩০৭ জনকে। দেশে এখন পর্যন্ত নিবন্ধন করেছেন ৪ কোটি ৪১ লাখ ১৫ হাজার ১৪৫ জন বলে জানিয়েছে অধিদপ্তর।
এর আগে, দেশজুড়ে গত ৭ আগস্ট থেকে ছয় দিনব্যাপী গণটিকাদান কার্যক্রম শুরু হয়। সেইসময় সরকারের ছয় দিনে ৩২ লাখ মানুষকে টিকাদানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও প্রথম দিনেই টিকা নেন ৩০ লাখ ৭০ হাজার ২৬৮ জন। সর্বমোট গণটিকার আওতায় ৫০ লাখ ৭৩ হাজার ৪০ জন টিকা নেন। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ১৮ লাখ ৭৩ হাজার ৪০ জন বেশি মানুষ নেন। পরবর্তীতে তাদের গত ৭ সেপ্টেম্বর থেকে গণটিকার আওতায় দ্বিতীয় ডোজের টিকা তিন দিনের মধ্যে দেয়া হয়।
গণটিকা দেয়ার সময় সারাদেশের টিকাদান কেন্দ্রগুলোতে উপচেপড়া ভিড় ছিল। গণটিকা কার্যক্রমের আওতায় টিকা গ্রহণকারীদের মোবাইল ফোনে কোন বার্তা পাঠানো হয়নি। পাড়া-মহল্লায় গভীর রাত পর্যন্ত টিকা গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে মাইকিং করা হয়। মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে টিকা নিতে আসার কারণে সকাল ৮টার আগেই আগেই কানায় কানায় পূর্ণ ছিল টিকাদান কেন্দ্রগুলো।
আজ রাতে ফাইজারের আরও ২৫ লাখ ডোজ টিকা আসবে
কোভ্যাক্স ফ্যাসিলিটিজের আওতায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফাইজারের আরও ২৫ লাখ ডোজ টিকা আসবে। ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্য থেকে এই ভ্যাকসিন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল এয়ারলাইনসের একটি কার্গো বিমান আজ রাত ১০টা ১৫ মিনিটে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছাবে।
রবিবার দুপুরে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়। ভ্যাকসিনগুলো বুঝে নিতে বিমানবন্দরে বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মি. আর্ল আর মিলার, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলমসহ স্বাস্থ্য খাতের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।
এর আগে কোভ্যাক্স ফ্যাসিলিটিজের আওতায় যুক্তরাষ্ট্রের মাধ্যমে প্রথম দফায় ১ লাখ ৬২০ ডোজ এবং দ্বিতীয় দফায় ১০ লাখ ৩ হাজার ৮৬০ ডোজ ভ্যাকসিন দেশে পৌঁছেছে। আজ তৃতীয় দফায় আরও ২৫ লাখ ডোজ এলে এ নিয়ে ফাইজারের মোট ৩৬ লাখ ৪ হাজার ৪৮০ ডোজ ভ্যাকসিন দেশে পৌঁছাবে। অ্যাস্ট্রেজেনেকা, সিনোফার্মা, মডার্নার ভ্যাকসিনসহ ক্রয়কৃত ও কোভ্যাক্স ফ্যাসিলিটিজের আওতায় এ পর্যন্ত দেশে মোট ৪ কোটি ৯৪ লাখ ২৯ হাজার ৯৪০ ডোজ ভ্যাকসিন পৌঁছেছে। এর মধ্যে প্রথম ডোজ মোট ২ কোটি ৪১ লাখ ৯৭ হাজার ৫৯৮ জনকে এবং ১ কোটি ৬০ লাখ ৩৩ হাজার ৯৭১ জনকে ২য় ডোজ ভ্যাকসিন দেয়া হয়েছে (২৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত)।
এ ছাড়াও চীনের সিনোফার্ম থেকে কেনা ৬ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন চুক্তি অনুযায়ী প্রতি মাসে ২ কোটি ডোজ করে আসবে এ মাস থেকেই। পাশাপাশি, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মাধ্যমে আরও সাড়ে ১০ কোটি ডোজ ভ্যাকসিনসহ মোট ২৪ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন ক্রয়ের প্রক্রিয়াও চলমান রয়েছে।
আটকে আছে ভারতীয় টিকা
ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ৩ কোটি ডোজ টিকা কিনেছে বাংলাদেশ। সেই ৩ কোটি ডোজ টিকা আনতে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে গত বছরের পাঁচ নভেম্বর চুক্তি করে সরকার। সেখানে বলা হয়, প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশে তিন কোটি ডোজ টিকা রপ্তানি করবে। সে অনুযায়ী প্রতি মাসে ৫০ লাখ ডোজ পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু, ভারত তাদের টিকা রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয়ার কারণে ২ কোটি ৩০ লাখ ডোজ টিকা পায়নি বাংলাদেশ।
সম্প্রতি সময়ে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী জানিয়েছেন, করোনা ভ্যাকসিনের সংকট কাটাতে ভারত উৎপাদন বাড়াচ্ছে। তিনি বলেন, ‘ভ্যাকসিনের জন্য বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কে ভাটা পড়বে না। এই মুহূর্তে ভারতই ভ্যাকসিন সংকটে আছে। তবে উৎপাদন বাড়ানো হচ্ছে। শীঘ্রই বাংলাদেশে ভ্যাকসিন রপ্তানি করা হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। এ কারণে অন্যান্য দেশের চেয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে বেশি ভ্যাকসিন সরবরাহের চুক্তি আছে। সেই চুক্তি অনুযায়ী ৭০ লাখ টিকা সরবরাহ করা হয়েছে। বাকি টিকাগুলো ক্রমান্বয়ে সরবরাহ করা হবে।’