নেই আতরের গন্ধমাখা কোলাকুলি
ঈদ মানে আনন্দ, ঈদ মানে খুশি। আজ নেই আনন্দ, নেই হাসিমুখ, নেই আতরের গন্ধমাখা হাসিমুখের কোলাকুলি। এ যেন এক অন্যরকম ঈদ। করোনাভাইরাসের কারণে আতঙ্ক নিয়ে আজ আমরা এমন ঈদ উদযাপন করছি । যা আগে কেউ দেখেনি।
মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতর। ঈদে আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশীদের নিয়ে খাওয়াদাওয়া, আড্ডা দেওয়া আরো কতো কিছু হয় । নাড়ির টানে গ্রামে গিয়ে মা-বাবা, ভাই-বোনদের সঙ্গে একত্র হওয়া । নতুন জামাকাপড় পরা।
ছেলে-মেয়ে নিয়ে অনেকেই যায় বিনোদনকেন্দ্রে । এবার সেটাও বন্ধ । প্রকৃতির সৌন্দর্যের সঙ্গে নিজেকে মেলে ধরতে অনেকে ছুটে যায় পর্যটনকেন্দ্রে। কিন্তু এবার দেশের পর্যটনকেন্দ্রগুলোও বন্ধ রয়েছে।
তাই এবার ঈদে অনাবিল আনন্দের আবহ নেই। খুশির জোয়ারও নেই। করোনাভাইরাস মহামারির কারণে সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও থমকে গেছে স্বাভাবিক জীবনযাপন। সব কিছু লন্ডভণ্ড হয়ে গেছে।
ঈদ গাহে নয়; দেশের মসজিদগুলোতে অনুষ্ঠিত হয় ঈদের নামাজ। বায়তুল মোকাররম মসজিদে এবার ঈদের প্রধান নামাজ অনুষ্ঠিত হয়েছে । কিশোরগঞ্জের সোলাকিয়া ময়দান ছিল জনশূন্য । করোনার কারণে এবার সেখানে ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হয়নি।
কারণ করোনায় কারণে মাঠে ময়দানে, উন্মুক্ত স্থানেও ঈদের জামাত করা যাবে না এমন সরকারি নির্দেশনা আগেই জারি করা হয়। বলা হয় ঈদের জামাত হবে মসজিদে মসজিদে। জায়গা না হলে প্রয়োজনে একই মসজিদে একাধিক জামাত করা যাবে।
ইসলামি ফাউন্ডেশনের নির্দেশনায় বলা হয়- মাস্ক পরে, বাসা বা বাড়ি থেকে ওজু করে, সামাজিক দূরত্ব মেনে, মসজিদের মেঝে জীবানুমুক্ত ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে এবং প্রয়োজনে ব্যক্তিগত জায়নামাজ ব্যবহার করে এবার নিজ এলাকার মসজিদে ঈদের নামাজ আদায় করতে হবে।
নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশ অ্যান্ড লিবারেশন ওয়ার স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী মালিহা মেহজাবীন পাপড়ী বলেন, ঈদের আনন্দের চেয়ে বেশি ভাবনা করোনা নিয়ে। ২২ বছরের জীবনে ৪৪ ঈদ শেষ। একটা ঈদে আনন্দ নেই তাতে কী? কিন্তু চিন্তার বিষয় হলো- আমরা করোনা থেকে কবে মুক্তি পাবো? আবার কবে একটা সুস্থ পৃথিবী খুঁজে পাবো? একটা ঈদের বিনিময়ে যদি আবার আমরা আমাদের স্বাভাবিক সুস্থ জীবনে ফিরে যেতে পারি তবে আমাদের অবশ্যই সচেতন হওয়া উচিত সবার আগে। ঘরে থাকি, সুস্থ থাকি এটাই বড় কথা।
বাড্ডার আব্দুল হাকিম বলেন, আমার ৬৫ বছর বয়সে এমন ঈদ কখনো দেখিনি । করোনামুক্ত দেশের জন্য দোয়া করেছি।
ডিবি ঢাকা দক্ষিণের ডিসি রাজিব আল মাসুদ বলছেন, এ এক অন্যরকম ঈদ। নেই আতরের গন্ধমাখা কোলাকুলি, নেই আনন্দ । আল্লাহ আমাদের কবুল করুন।
বড্ডা সাতারকুল বড় মসজিদে ঈদের নামাজ আদায় করা রনি বলেন, এমন হবে কোনোদিন ভাবিনি। রোজার শেষে ঈদ এসেছে, কিন্তু ঈদের সেই আমেজ কোথাও নেই। ঈদের নামাজ পড়েছি আতঙ্ক আর দুশ্চিন্তা নিয়ে।
তিনি বলেন, মহামারি করোনাভাইরাস আমাদের সব আনন্দ কেড়ে নিয়েছে। কবে এই অবস্থা থেকে মুক্তি পাব তার কোনো ঠিক নেই।
আতিক নামের এক তরুণ বলেন, অন্যবার ঈদের দিন বন্ধুরা মিলে কত হইহুল্লোড় করে বেড়িয়েছি। এবার আর কোনো কিছু নেই। একবন্ধু আরেক বন্ধুর বাসায় দাওয়াত খেতে যাব তার সুযোগ নেই। এমন পরিস্থিতির ঈদ খুশির বদলে বেদনা দিয়ে যাচ্ছে।
পচাত্তর বছর বয়সী হাজী আব্দুর রহমান বলেন, বয়স আমার কম হয়নি। যুদ্ধ, দুর্ভিক্ষ সবই দেখেছি। কিন্তু এমন দৃশ্য কখনো দেখিনি। কোনো যুদ্ধ নেই, হানাহানি নেই তারপরও মানুষের মনে কোনো আনন্দ নেই। এক কঠিন মুহূর্ত।
গৃহিনী সালেহা খাতুন বৃষ্টি বলেন, প্রতি বছর ঈদে সাংসারিক দায়িত্ব শেষে, বিকালে পরিবারের সবাই মিলে ঘুরতে বের হতাম, বেশ আনন্দ হতো। এবার সে সুযোগ নেই। আর এ পরিস্থিতিতে আনন্দ কিভাবে আসবে । আজ ঈদের দিনেও করোনায় ২১ জন মৃত্যুবরণ করেছেন আর শনাক্ত হয়েছেন ১৯৭৫ জন। আল্লাহর যেন আমাদের এ পরিস্থিতি থেকে দ্রুত মুক্তি দেন।
নেই আতরের গন্ধমাখা কোলাকুলি
সোমবার, ২৫ মে ২০২০
ঈদ মানে আনন্দ, ঈদ মানে খুশি। আজ নেই আনন্দ, নেই হাসিমুখ, নেই আতরের গন্ধমাখা হাসিমুখের কোলাকুলি। এ যেন এক অন্যরকম ঈদ। করোনাভাইরাসের কারণে আতঙ্ক নিয়ে আজ আমরা এমন ঈদ উদযাপন করছি । যা আগে কেউ দেখেনি।
মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতর। ঈদে আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশীদের নিয়ে খাওয়াদাওয়া, আড্ডা দেওয়া আরো কতো কিছু হয় । নাড়ির টানে গ্রামে গিয়ে মা-বাবা, ভাই-বোনদের সঙ্গে একত্র হওয়া । নতুন জামাকাপড় পরা।
ছেলে-মেয়ে নিয়ে অনেকেই যায় বিনোদনকেন্দ্রে । এবার সেটাও বন্ধ । প্রকৃতির সৌন্দর্যের সঙ্গে নিজেকে মেলে ধরতে অনেকে ছুটে যায় পর্যটনকেন্দ্রে। কিন্তু এবার দেশের পর্যটনকেন্দ্রগুলোও বন্ধ রয়েছে।
তাই এবার ঈদে অনাবিল আনন্দের আবহ নেই। খুশির জোয়ারও নেই। করোনাভাইরাস মহামারির কারণে সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও থমকে গেছে স্বাভাবিক জীবনযাপন। সব কিছু লন্ডভণ্ড হয়ে গেছে।
ঈদ গাহে নয়; দেশের মসজিদগুলোতে অনুষ্ঠিত হয় ঈদের নামাজ। বায়তুল মোকাররম মসজিদে এবার ঈদের প্রধান নামাজ অনুষ্ঠিত হয়েছে । কিশোরগঞ্জের সোলাকিয়া ময়দান ছিল জনশূন্য । করোনার কারণে এবার সেখানে ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হয়নি।
কারণ করোনায় কারণে মাঠে ময়দানে, উন্মুক্ত স্থানেও ঈদের জামাত করা যাবে না এমন সরকারি নির্দেশনা আগেই জারি করা হয়। বলা হয় ঈদের জামাত হবে মসজিদে মসজিদে। জায়গা না হলে প্রয়োজনে একই মসজিদে একাধিক জামাত করা যাবে।
ইসলামি ফাউন্ডেশনের নির্দেশনায় বলা হয়- মাস্ক পরে, বাসা বা বাড়ি থেকে ওজু করে, সামাজিক দূরত্ব মেনে, মসজিদের মেঝে জীবানুমুক্ত ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে এবং প্রয়োজনে ব্যক্তিগত জায়নামাজ ব্যবহার করে এবার নিজ এলাকার মসজিদে ঈদের নামাজ আদায় করতে হবে।
নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশ অ্যান্ড লিবারেশন ওয়ার স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী মালিহা মেহজাবীন পাপড়ী বলেন, ঈদের আনন্দের চেয়ে বেশি ভাবনা করোনা নিয়ে। ২২ বছরের জীবনে ৪৪ ঈদ শেষ। একটা ঈদে আনন্দ নেই তাতে কী? কিন্তু চিন্তার বিষয় হলো- আমরা করোনা থেকে কবে মুক্তি পাবো? আবার কবে একটা সুস্থ পৃথিবী খুঁজে পাবো? একটা ঈদের বিনিময়ে যদি আবার আমরা আমাদের স্বাভাবিক সুস্থ জীবনে ফিরে যেতে পারি তবে আমাদের অবশ্যই সচেতন হওয়া উচিত সবার আগে। ঘরে থাকি, সুস্থ থাকি এটাই বড় কথা।
বাড্ডার আব্দুল হাকিম বলেন, আমার ৬৫ বছর বয়সে এমন ঈদ কখনো দেখিনি । করোনামুক্ত দেশের জন্য দোয়া করেছি।
ডিবি ঢাকা দক্ষিণের ডিসি রাজিব আল মাসুদ বলছেন, এ এক অন্যরকম ঈদ। নেই আতরের গন্ধমাখা কোলাকুলি, নেই আনন্দ । আল্লাহ আমাদের কবুল করুন।
বড্ডা সাতারকুল বড় মসজিদে ঈদের নামাজ আদায় করা রনি বলেন, এমন হবে কোনোদিন ভাবিনি। রোজার শেষে ঈদ এসেছে, কিন্তু ঈদের সেই আমেজ কোথাও নেই। ঈদের নামাজ পড়েছি আতঙ্ক আর দুশ্চিন্তা নিয়ে।
তিনি বলেন, মহামারি করোনাভাইরাস আমাদের সব আনন্দ কেড়ে নিয়েছে। কবে এই অবস্থা থেকে মুক্তি পাব তার কোনো ঠিক নেই।
আতিক নামের এক তরুণ বলেন, অন্যবার ঈদের দিন বন্ধুরা মিলে কত হইহুল্লোড় করে বেড়িয়েছি। এবার আর কোনো কিছু নেই। একবন্ধু আরেক বন্ধুর বাসায় দাওয়াত খেতে যাব তার সুযোগ নেই। এমন পরিস্থিতির ঈদ খুশির বদলে বেদনা দিয়ে যাচ্ছে।
পচাত্তর বছর বয়সী হাজী আব্দুর রহমান বলেন, বয়স আমার কম হয়নি। যুদ্ধ, দুর্ভিক্ষ সবই দেখেছি। কিন্তু এমন দৃশ্য কখনো দেখিনি। কোনো যুদ্ধ নেই, হানাহানি নেই তারপরও মানুষের মনে কোনো আনন্দ নেই। এক কঠিন মুহূর্ত।
গৃহিনী সালেহা খাতুন বৃষ্টি বলেন, প্রতি বছর ঈদে সাংসারিক দায়িত্ব শেষে, বিকালে পরিবারের সবাই মিলে ঘুরতে বের হতাম, বেশ আনন্দ হতো। এবার সে সুযোগ নেই। আর এ পরিস্থিতিতে আনন্দ কিভাবে আসবে । আজ ঈদের দিনেও করোনায় ২১ জন মৃত্যুবরণ করেছেন আর শনাক্ত হয়েছেন ১৯৭৫ জন। আল্লাহর যেন আমাদের এ পরিস্থিতি থেকে দ্রুত মুক্তি দেন।