কোভিড-১৯ মহামারীর প্রভাবে লকডাউনের প্রথম দেড় মাসে কৃষকের ৫৬ হাজার ৫৩৬ কোটি টাকার বেশি লোকসান হয়েছে বলে উঠে এসেছে ব্র্যাকের এক গবেষণায়।
বৃহস্পতিবার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে মার্চের শেষ সপ্তাহ থেকে মে মাসের প্রথম দিক পর্যন্ত সময়ে করা গবেষণায় ওই ক্ষতির হিসাব তুলে ধরে বেসরকারি এ সংস্থা।
সংবাদ সম্মেলনে গবেষণার ফলাফল তুলে ধরে গবেষক দলের সদস্য নাহরীন রহমান স্বর্ণা বলেন, এই দেড় মাসে পণ্যের ক্ষতি ও কম দামের কারণে প্রত্যেক কৃষকের লোকসান হয়েছে গড়ে প্রায় ২ লাখ ৭ হাজার ৯৭৬ টাকা।
‘সেই হিসেবে সারাদেশে কৃষির প্রতিটি উপখাতের সকল কৃষকের সংখ্যার উপর ভিত্তি করে লোকসান হয়েছে কমেছে ৫৬ হাজার ৫৩৬ কোটি ৬৮ লাখ টাকার সমান।’
কৃষি খাতে এবং সামগ্রিক খাদ্য নিরাপত্তার উপর কোভিড-১৯-এর প্রভাব সম্পর্কে জানতে উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের মতামতের ভিত্তিতে করা দুটি সমীক্ষার উপর ভিত্তি করে ওই ফলাফল প্রকাশ করে ব্র্যাক।
সমীক্ষায় সারাদেশের ১ হাজার ৫৮১ জন কৃষক (ফসল, শাকসবজি, হাঁস-মুরগি, মাছ এবং দুগ্ধ উৎপাদনকারী) অংশ নেন।
ওই গবেষণায় দেখা যায়, মহামারী শুরুর দিকে ত্রাণ বিতরণকারী সংস্থাগুলোর ব্যাপক চাহিদা এবং ভোক্তাদের আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পণ্য কেনার কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য, বিশেষ করে মোটা চাল, মসুরের ডাল ইত্যাদির দাম ও বিক্রি বেড়ে যায়।
‘চাল ও মসুরের ডালের দাম ৩০-৩২ শতাংশ এবং ব্যবসায়ীদের এই পণ্যগুলোর বিক্রি ৩০০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। বাজারে চাহিদা বাড়লেও তা কৃষকদের কোনও উপকারে আসেনি, কারণ মহামারীর আগেই তারা তাদের মজুদ বিক্রি করে দিয়েছিলেন।’
অন্যদিকে ত্রাণ-বহির্ভূত এবং পচনশীল পণ্যগুলোর উৎপাদন অব্যাহত রাখা এবং বিক্রি করা কঠিন হয়ে দাঁড়ানোর কথা তুলে ধরে গবেষক নাহরীন বলেন, এই কারণে ৮৮ শতাংশ কৃষক (মাছ চাষিদের শতভাগ) আর্থিক ক্ষতির কথা জানিয়েছেন।
কৃষকরা যেসব সমস্যার কথা বলেছেন তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-ন্যায্যমূল্য না পাওয়া (৬৬%), সীমিত সময়ের জন্য বাজার খোলা থাকা (৫২%), উৎপাদনের উপকরণসমূহের উচ্চমূল্য (৪৫%) এবং শ্রমিক সংকট (২৮%)।
সরকার ঘোষিত প্রণোদনা সম্পর্কে কৃষকের জ্ঞান ও মনোভাব জরিপে গবেষণায় তুলে ধরার চেষ্টাও করেছে ব্র্যাক।
এতে দেখা যায়, সরকারের কাছ থেকে ৬৬ শতাংশ কৃষক সহজ শর্তে ঋণ পেতে চান। ৫৬ শতাংশ কৃষক উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য দাম এবং কম খরচে উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ চান ৪৮ শতাংশ কৃষক।
সমীক্ষায় অংশ নেওয়া ৬৪ শতাংশ কৃষক বলেছেন, সরকারের ঘোষিত প্রণোদনা সম্পর্কে জানেন। তবে তাদের ৭৯ শতাংশের এই সুবিধা কীভাবে পাওয়া যায় সে সম্পর্কে কোনও ধারণা নেই বা ভুল ধারণা আছে। ব্যাংক থেকে আনুষ্ঠানিক ঋণ নেওয়ার অভিজ্ঞতা রয়েছে মাত্র ২০ ভাগ কৃষকের।
গবেষণার বিভিন্ন দিক তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনা কমিশনের সাবেক সদস্য অধ্যাপক এম এ সাত্তার মণ্ডল বলেন, এই সঙ্কট সামাল দিতে আড়তদার, পাইকার, ফড়িয়া এদেরকেও গুরুত্ব দিতে হবে, সবাইকে কাজে লাগাতে হবে। কেননা, বাজারে এদের বিরাট ভূমিকা থাকে।”
ভূমিহীন ও বর্গাচাষীদের প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণপ্রাপ্তির স্বার্থে কৃষি, মৎস্য এবং প্রাণী সম্পদ বিভাগের স্থানীয় কর্মীদের কাজে লাগানোর পরামর্শ দেন তিনি।
কৃষকের স্বার্থে সরবরাহ ব্যবস্থা চালুর রাখার সুপারিশ করে সংবাদ সম্মেলনে প্রাণের ব্যবস্থাপনা
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ব্র্যাকের অ্যাডভোকেসি ফর সোশ্যাল চেঞ্জ কর্মসূচির ঊর্ধ্বতন পরিচালক কেএএম মোর্শেদ।
শুক্রবার, ০৫ জুন ২০২০
কোভিড-১৯ মহামারীর প্রভাবে লকডাউনের প্রথম দেড় মাসে কৃষকের ৫৬ হাজার ৫৩৬ কোটি টাকার বেশি লোকসান হয়েছে বলে উঠে এসেছে ব্র্যাকের এক গবেষণায়।
বৃহস্পতিবার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে মার্চের শেষ সপ্তাহ থেকে মে মাসের প্রথম দিক পর্যন্ত সময়ে করা গবেষণায় ওই ক্ষতির হিসাব তুলে ধরে বেসরকারি এ সংস্থা।
সংবাদ সম্মেলনে গবেষণার ফলাফল তুলে ধরে গবেষক দলের সদস্য নাহরীন রহমান স্বর্ণা বলেন, এই দেড় মাসে পণ্যের ক্ষতি ও কম দামের কারণে প্রত্যেক কৃষকের লোকসান হয়েছে গড়ে প্রায় ২ লাখ ৭ হাজার ৯৭৬ টাকা।
‘সেই হিসেবে সারাদেশে কৃষির প্রতিটি উপখাতের সকল কৃষকের সংখ্যার উপর ভিত্তি করে লোকসান হয়েছে কমেছে ৫৬ হাজার ৫৩৬ কোটি ৬৮ লাখ টাকার সমান।’
কৃষি খাতে এবং সামগ্রিক খাদ্য নিরাপত্তার উপর কোভিড-১৯-এর প্রভাব সম্পর্কে জানতে উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের মতামতের ভিত্তিতে করা দুটি সমীক্ষার উপর ভিত্তি করে ওই ফলাফল প্রকাশ করে ব্র্যাক।
সমীক্ষায় সারাদেশের ১ হাজার ৫৮১ জন কৃষক (ফসল, শাকসবজি, হাঁস-মুরগি, মাছ এবং দুগ্ধ উৎপাদনকারী) অংশ নেন।
ওই গবেষণায় দেখা যায়, মহামারী শুরুর দিকে ত্রাণ বিতরণকারী সংস্থাগুলোর ব্যাপক চাহিদা এবং ভোক্তাদের আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পণ্য কেনার কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য, বিশেষ করে মোটা চাল, মসুরের ডাল ইত্যাদির দাম ও বিক্রি বেড়ে যায়।
‘চাল ও মসুরের ডালের দাম ৩০-৩২ শতাংশ এবং ব্যবসায়ীদের এই পণ্যগুলোর বিক্রি ৩০০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। বাজারে চাহিদা বাড়লেও তা কৃষকদের কোনও উপকারে আসেনি, কারণ মহামারীর আগেই তারা তাদের মজুদ বিক্রি করে দিয়েছিলেন।’
অন্যদিকে ত্রাণ-বহির্ভূত এবং পচনশীল পণ্যগুলোর উৎপাদন অব্যাহত রাখা এবং বিক্রি করা কঠিন হয়ে দাঁড়ানোর কথা তুলে ধরে গবেষক নাহরীন বলেন, এই কারণে ৮৮ শতাংশ কৃষক (মাছ চাষিদের শতভাগ) আর্থিক ক্ষতির কথা জানিয়েছেন।
কৃষকরা যেসব সমস্যার কথা বলেছেন তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-ন্যায্যমূল্য না পাওয়া (৬৬%), সীমিত সময়ের জন্য বাজার খোলা থাকা (৫২%), উৎপাদনের উপকরণসমূহের উচ্চমূল্য (৪৫%) এবং শ্রমিক সংকট (২৮%)।
সরকার ঘোষিত প্রণোদনা সম্পর্কে কৃষকের জ্ঞান ও মনোভাব জরিপে গবেষণায় তুলে ধরার চেষ্টাও করেছে ব্র্যাক।
এতে দেখা যায়, সরকারের কাছ থেকে ৬৬ শতাংশ কৃষক সহজ শর্তে ঋণ পেতে চান। ৫৬ শতাংশ কৃষক উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য দাম এবং কম খরচে উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ চান ৪৮ শতাংশ কৃষক।
সমীক্ষায় অংশ নেওয়া ৬৪ শতাংশ কৃষক বলেছেন, সরকারের ঘোষিত প্রণোদনা সম্পর্কে জানেন। তবে তাদের ৭৯ শতাংশের এই সুবিধা কীভাবে পাওয়া যায় সে সম্পর্কে কোনও ধারণা নেই বা ভুল ধারণা আছে। ব্যাংক থেকে আনুষ্ঠানিক ঋণ নেওয়ার অভিজ্ঞতা রয়েছে মাত্র ২০ ভাগ কৃষকের।
গবেষণার বিভিন্ন দিক তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনা কমিশনের সাবেক সদস্য অধ্যাপক এম এ সাত্তার মণ্ডল বলেন, এই সঙ্কট সামাল দিতে আড়তদার, পাইকার, ফড়িয়া এদেরকেও গুরুত্ব দিতে হবে, সবাইকে কাজে লাগাতে হবে। কেননা, বাজারে এদের বিরাট ভূমিকা থাকে।”
ভূমিহীন ও বর্গাচাষীদের প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণপ্রাপ্তির স্বার্থে কৃষি, মৎস্য এবং প্রাণী সম্পদ বিভাগের স্থানীয় কর্মীদের কাজে লাগানোর পরামর্শ দেন তিনি।
কৃষকের স্বার্থে সরবরাহ ব্যবস্থা চালুর রাখার সুপারিশ করে সংবাদ সম্মেলনে প্রাণের ব্যবস্থাপনা
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ব্র্যাকের অ্যাডভোকেসি ফর সোশ্যাল চেঞ্জ কর্মসূচির ঊর্ধ্বতন পরিচালক কেএএম মোর্শেদ।