প্রতীকি ছবি (এআই দিয়ে তৈরি)
চলতি বছরের শুরু থেকে ১০ আগস্ট পর্যন্ত ‘মব সন্ত্রাসে’ ১১১ জন হত্যার শিকার হয়েছেন বলে জানিয়েছে বেসরকারি মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। সংস্থাটি বলছে, এ ধরনের বিচারহীনতার সংস্কৃতি সামাজিক সম্প্রীতি ও আইনের শাসনের জন্য গভীর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
গত বছর আগস্টে গণঅভ্যুত্থানে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ‘মব সন্ত্রাসের’ উপদ্রব বেড়ে যায়। উচ্ছৃঙ্খল লোক জড়ো করে বিভিন্ন অজুহাতে পিটুনি দিয়ে মানুষ হত্যার পরিমাণও বেড়েছে আশঙ্কাজনক হারে।
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্যানুযায়ী, গত বছর (২০২৪) আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে সারাদেশে কথিত গণপিটুনিতে প্রাণ গেছে ৪৯ জনের।
আসকের পরিসংখ্যান বলছে, গত বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই ৯ মাসে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ৮১ জনকে ‘গণপিটুনিতে’ বা পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এর মধ্যে আগস্টে ২১ জনকে, আর সেপ্টেম্বরে ২৮ জনকে হত্যা করা হয়েছে। অর্থাৎ, এই দুই মাসেই ৪৯ জনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। ২০২৪ সালে আগের সাত মাসে (জানুয়ারি থেকে জুলাই) ৩১ জনের মৃত্যু হয় ‘গণপিটুনিতে’।
সাম্প্রতিক ঘটনা
গত শনিবার রংপুরের তারাগঞ্জে চোর আখ্যা দিয়ে দুই হিন্দু ধর্মাবলম্বীকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। নিহতরা হলেন- রুপলাল দাস (৪০) এবং প্রদীপ দাস (৩৫)। রুপলাল জুতা সেলাইয়ের কাজ করতেন এবং প্রদীপ ছিলেন ভ্যানচালক। এই ঘটনায় গতকাল রোববার রাতে চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
গত ৩০ জুন গাজীপুরে চুরির অপবাদ দিয়ে কারখানায় এক শ্রমিককে রশি দিয়ে বেঁধে পিটিয়ে হত্যা করার অভিযোগ ওঠে। হত্যার শিকার শ্রমিক হৃদয় (১৯) টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার শুকতার বাইদ গ্রামের আবুল কালামের ছেলে। তিনি কারখানাটিতে মেকানিক্যাল মিস্ত্রি হিসেবে কাজ করতেন।
হৃদয়কে মারধরের ১ মিনিট ১৬ সেকেন্ডের ভিডিও ফেইসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। এতে দেখা যায়, তাকে কারখানার একটি কক্ষের জানালার সঙ্গে রশি দিয়ে হাত-পা বেঁধে খালি গায়ে একটি সোফার ওপর বসিয়ে রাখা হয়েছে। তিনি যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিলেন। একপর্যায়ে হৃদয়ের মুখ ও নাক দিয়ে রক্ত ঝরতে দেখা যায়। এ সময় আশপাশের কয়েকজনকে বলতে শোনা যায়, ‘এত করে পিটানো হইছে, (তারপরও) কিছুই হয় নাই, মরে নাই।’ ভিডিওর আরেকটি অংশে দেখা যায়, হৃদয়কে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় একটি কক্ষ থেকে টেনেহিঁচড়ে বের করছেন কয়েকজন।
গত বছর যে ঘটনায় আলোড়ন
গতবছর সেপ্টেম্বেরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তোফাজ্জল হোসেন নামের এক মানসিক ভারসাম্যহীন যুবককে চোর অপবাদ দিয়ে রীতিমতো পরিকল্পনা করে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। একই সময় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক নেতা শামীম আহমেদ ওরফে শামীম মোল্লাকে। এর আগে ৮ সেপ্টেম্বর রাজশাহীতে পিটিয়ে হত্যা করা হয় সাবেক ছাত্রলীগ নেতা পঙ্গু আবদুল্লাহ আল মাসুদকে। আর চট্টগ্রামে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে নাচ-গান করে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যার এক মাস পর সেই হত্যাকাণ্ডের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
বিভিন্নজনের উদ্বেগ
গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলছেন, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার দুই মাস পর ‘মব সন্ত্রাসের’ বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানানো হলেও পরবর্তী ১০ মাসেও এ বিষয়ে সন্তোষজনক অগ্রগতি হয়নি। বরং সরকারের কোনো কোনো উপদেষ্টা ‘মব (উচ্ছৃঙ্খল জনতা) সন্ত্রাসকে’ প্রেশার গ্রুপ’ বলে যৌক্তিকতা দেয়ার চেষ্টা করেছেন। গত শনিবার রাজধানীতে ‘অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছর, দায়িত্ব ও ভূমিকা পর্যালোচনা’ শীর্ষক এক সভায় তিনি এ কথা বলেন।
আর আসক বলেছে, এ ধরনের ঘটনা প্রচলিত আইন, সংবিধান ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদণ্ডের দৃষ্টিতে বিপজ্জনক ও অগ্রহণযোগ্য। সংস্থাটি মনে করে, বিচারহীনতার সংস্কৃতি এ ধরনের সহিংসতা বাড়িয়ে দিচ্ছে।
আসক জানিয়েছে, যে কোনো সংঘবদ্ধ প্ররোচনামূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে শনাক্ত করে কঠোর জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। সংস্থার ভাষ্যে, এ ধরনের নির্মম ঘটনা মানবাধিকারের ভিত্তিকে সরাসরি আঘাত করে।
প্রতীকি ছবি (এআই দিয়ে তৈরি)
সোমবার, ১১ আগস্ট ২০২৫
চলতি বছরের শুরু থেকে ১০ আগস্ট পর্যন্ত ‘মব সন্ত্রাসে’ ১১১ জন হত্যার শিকার হয়েছেন বলে জানিয়েছে বেসরকারি মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। সংস্থাটি বলছে, এ ধরনের বিচারহীনতার সংস্কৃতি সামাজিক সম্প্রীতি ও আইনের শাসনের জন্য গভীর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
গত বছর আগস্টে গণঅভ্যুত্থানে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ‘মব সন্ত্রাসের’ উপদ্রব বেড়ে যায়। উচ্ছৃঙ্খল লোক জড়ো করে বিভিন্ন অজুহাতে পিটুনি দিয়ে মানুষ হত্যার পরিমাণও বেড়েছে আশঙ্কাজনক হারে।
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্যানুযায়ী, গত বছর (২০২৪) আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে সারাদেশে কথিত গণপিটুনিতে প্রাণ গেছে ৪৯ জনের।
আসকের পরিসংখ্যান বলছে, গত বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই ৯ মাসে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ৮১ জনকে ‘গণপিটুনিতে’ বা পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এর মধ্যে আগস্টে ২১ জনকে, আর সেপ্টেম্বরে ২৮ জনকে হত্যা করা হয়েছে। অর্থাৎ, এই দুই মাসেই ৪৯ জনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। ২০২৪ সালে আগের সাত মাসে (জানুয়ারি থেকে জুলাই) ৩১ জনের মৃত্যু হয় ‘গণপিটুনিতে’।
সাম্প্রতিক ঘটনা
গত শনিবার রংপুরের তারাগঞ্জে চোর আখ্যা দিয়ে দুই হিন্দু ধর্মাবলম্বীকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। নিহতরা হলেন- রুপলাল দাস (৪০) এবং প্রদীপ দাস (৩৫)। রুপলাল জুতা সেলাইয়ের কাজ করতেন এবং প্রদীপ ছিলেন ভ্যানচালক। এই ঘটনায় গতকাল রোববার রাতে চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
গত ৩০ জুন গাজীপুরে চুরির অপবাদ দিয়ে কারখানায় এক শ্রমিককে রশি দিয়ে বেঁধে পিটিয়ে হত্যা করার অভিযোগ ওঠে। হত্যার শিকার শ্রমিক হৃদয় (১৯) টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার শুকতার বাইদ গ্রামের আবুল কালামের ছেলে। তিনি কারখানাটিতে মেকানিক্যাল মিস্ত্রি হিসেবে কাজ করতেন।
হৃদয়কে মারধরের ১ মিনিট ১৬ সেকেন্ডের ভিডিও ফেইসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। এতে দেখা যায়, তাকে কারখানার একটি কক্ষের জানালার সঙ্গে রশি দিয়ে হাত-পা বেঁধে খালি গায়ে একটি সোফার ওপর বসিয়ে রাখা হয়েছে। তিনি যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিলেন। একপর্যায়ে হৃদয়ের মুখ ও নাক দিয়ে রক্ত ঝরতে দেখা যায়। এ সময় আশপাশের কয়েকজনকে বলতে শোনা যায়, ‘এত করে পিটানো হইছে, (তারপরও) কিছুই হয় নাই, মরে নাই।’ ভিডিওর আরেকটি অংশে দেখা যায়, হৃদয়কে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় একটি কক্ষ থেকে টেনেহিঁচড়ে বের করছেন কয়েকজন।
গত বছর যে ঘটনায় আলোড়ন
গতবছর সেপ্টেম্বেরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তোফাজ্জল হোসেন নামের এক মানসিক ভারসাম্যহীন যুবককে চোর অপবাদ দিয়ে রীতিমতো পরিকল্পনা করে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। একই সময় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক নেতা শামীম আহমেদ ওরফে শামীম মোল্লাকে। এর আগে ৮ সেপ্টেম্বর রাজশাহীতে পিটিয়ে হত্যা করা হয় সাবেক ছাত্রলীগ নেতা পঙ্গু আবদুল্লাহ আল মাসুদকে। আর চট্টগ্রামে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে নাচ-গান করে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যার এক মাস পর সেই হত্যাকাণ্ডের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
বিভিন্নজনের উদ্বেগ
গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলছেন, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার দুই মাস পর ‘মব সন্ত্রাসের’ বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানানো হলেও পরবর্তী ১০ মাসেও এ বিষয়ে সন্তোষজনক অগ্রগতি হয়নি। বরং সরকারের কোনো কোনো উপদেষ্টা ‘মব (উচ্ছৃঙ্খল জনতা) সন্ত্রাসকে’ প্রেশার গ্রুপ’ বলে যৌক্তিকতা দেয়ার চেষ্টা করেছেন। গত শনিবার রাজধানীতে ‘অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছর, দায়িত্ব ও ভূমিকা পর্যালোচনা’ শীর্ষক এক সভায় তিনি এ কথা বলেন।
আর আসক বলেছে, এ ধরনের ঘটনা প্রচলিত আইন, সংবিধান ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদণ্ডের দৃষ্টিতে বিপজ্জনক ও অগ্রহণযোগ্য। সংস্থাটি মনে করে, বিচারহীনতার সংস্কৃতি এ ধরনের সহিংসতা বাড়িয়ে দিচ্ছে।
আসক জানিয়েছে, যে কোনো সংঘবদ্ধ প্ররোচনামূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে শনাক্ত করে কঠোর জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। সংস্থার ভাষ্যে, এ ধরনের নির্মম ঘটনা মানবাধিকারের ভিত্তিকে সরাসরি আঘাত করে।