রমনা বটমূলে বোমা হামলা
এখন সাক্ষ্য পর্যায়ে আছে : পিপি
রাজধানীর রমনা বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলার ২০ বছর পূর্তি হচ্ছে আজ। ২০০১ সালে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে এ ভয়াবহ বোমা হামলায় ১০ জন নিহত ও ২০ জন গুরুতর আহত হন। এ ঘটনায় দায়ের করা দুটি মামলার মধ্যে হত্যা মামলা নিষ্পত্তি হলেও বিষ্ফোরক আইনের মামলাটি ২০ বছরেও শেষ হয়নি। বিস্ফোরক মামলাটি ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন। এই মামলায় ৮৪ জন সাক্ষীর মধ্যে এ পর্যন্ত ৫৫ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে। নানা কারণে মামলাটি সাক্ষ্য এখনো শেষ হয়নি। কবে শেষ হবে তা এখনো অনিশ্চিত।
অন্যদিকে হত্যা মামলায় নিম্ন আদালতের রায়ের ডেথ রেফারেন্স ও আপিল আবেদন হাইকোর্টে শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। এ মামলার আসামিদের একজন মুফতি হান্নানের অন্য মামলায় মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে। মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত তিনজন কারাগারে রয়েছেন। ৪ জন পলাতক রয়েছে।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আবু আবদুল্লাহ ভূইয়া জানান, মামলাটি এখন সাক্ষ্য পর্যায়ে আছে। ৫৫ জনের সাক্ষ্য শেষ হয়েছে। গত ৫ এপ্রিল তদন্তকারী কর্মকর্তা আবু হেনা মো. ইউসুফের সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য ছিল। কিন্তু তিনি গত এক বছর ধরে অসুস্থ। এ কারণে তারিখ পেছানো হয়েছে। সাক্ষ্য শেষে আত্মপক্ষ সমর্থন ও যুক্তিতর্ক শেষে মামলার রায় ঘোষণা করা হবে। এ মামলার অনেক আসামি ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা, রমনা বটমূলে হত্যা মামলা, কোটালীপাড়া বোমা মামলাসহ বিভিন্ন মামলার আসামি। অনেকের অন্য মামলায় ইতোমধ্যে সাজা হয়ে গেছে।
অন্যদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহম্মেদ বলেন, মামলাটি সাক্ষী পর্যায়ে আছে। কিন্তু সাক্ষী তো আদালতে হাজির হচ্ছে না। এ কারণে মামলাটি নিষ্পত্তিতে বিলম্ব হচ্ছে।
এদিকে রমনা বটমূলে বোমা হামলায় দায়ের করা দুটি পৃথক মামলার মধ্যে হত্যা মামলার রায় হয় প্রায় ১৩ বছর পর ২০১৪ সালের ২৩ জুন। রায়ে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশের শীর্ষ নেতা মুফতি আবদুল হান্নানসহ ৮ জনের মৃত্যুদণ্ড ও ৬ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেন আদালত। মামলায় সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর ভাই মাওলানা তাজউদ্দিনসহ চার আসামি এখনও পলাতক।
জানা গেছে, ২০১৪ সালের বিচারিক আদালতের রায় ঘোষণার পর হত্যা মামলাটি ডেথ রেফারেন্স হিসেবে হাইকোর্টে আসে। একই সঙ্গে আসামিদের পক্ষ থেকেও জেল আপিল হয়। পরে পেপারবুক প্রস্তুত করে মামলাটি হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চে শুনারি অপেক্ষায় ছিল। ওই বেঞ্চের এখতিয়ার পরিবর্তন হওয়ায় বর্তমান অন্য একটি বেঞ্চে কার্যতালিকায় আসে।
বিস্ফোরক আইনে করা মামলায় ২০১৪ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন মামলার অন্যতম আসামি মুফতি হান্নানসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। মামলাটিতে ৮৪ সাক্ষীর মধ্যে পর্যন্ত মোট ৫৫ সাক্ষীর জবানবন্দি গ্রহণ করে ট্রাইব্যুনাল।
এদিকে ২০১৪ সালের ২৩ জুন হত্যা মামলাটির রায় ঘোষণা করেন ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক রুহুল আমিন। রায়ে নিষিদ্ধ ঘোষিত হরকাতুল জিহাদের (হুজি) শীর্ষ নেতা মুফতি আবদুল হান্নান, বিএনপি নেতা ও সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর ভাই মাওলানা তাজউদ্দিনসহ ৮ জনের মৃত্যুদণ্ড ও ৬ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলো মুফতি আবদুল হান্নান, মাওলানা আকবর হোসেন, মুফতি আবদুল হাই, হাফেজ জাহাঙ্গীর আলম বদর, মাওলানা আবু বকর ওরফে হাফেজ সেলিম হাওলাদার, মুফতি শফিকুর রহমান, মাওলানা আরিফ হাসান সুমন ও মাওলানা মো. তাজউদ্দিন। যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্তরা হলো হাফেজ মাওলানা আবু তাহের, মাওলানা সাব্বির ওরফে আবদুল হান্নান সাব্বির, হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া, মাওলানা শওকত ওসমান ওরফে শেখ ফরিদ, মাওলানা আবদুর রউফ ও শাহাদত উল্লাহ ওরফে জুয়েল। তবে এ মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর ভাই মাওলানা তাজউদ্দিনসহ চার আসামি এখনও পলাতক।
২০০১ সালের ১৪ এপ্রিল রমনা বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলার পর নীলক্ষেত পুলিশ ফাঁড়ির সার্জেন্ট অমল চন্দ্র চন্দ ওই দিনই রমনা থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা করেন।
বিস্ফোরক দ্রব্য মামলা চলমান থাকায় মুফতি হান্নানসহ তিনজনের ফাঁসি কার্যকর করা হলেও এখনো আনেকেই ফাঁসির রায় কার্যকর হয়নি। এছাড়া হত্যা মামলায় ৮ আসামির মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন (ডেথ রেফারেন্স) এবং আপিলের শুনানি হাইকোর্টে থমকে থাকায় জন্য বিচার প্রার্থীদের অপেক্ষা দীর্ঘায়িত হচ্ছে। হত্যা মামলায় রায়ের পর ২০১৭ সালের ১৭ জানুয়ারি মামলাটি আসামিদের ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানির জন্য হাইকোর্টে উঠে। এছাড়া বিস্ফোরক আইনের মামলায় ২০০৯ সালে অভিযোগ গঠনের পর প্রথম ৭ জনের সাক্ষ্য নেয়া হলেও এরপর বিচার কার্যক্রম গতি হারায় সাক্ষী না আসায়। ২০১৫ সালের ২২ মার্চ থেকে সাক্ষীদের প্রতি সমনের পাশাপাশি গ্রেপ্তারি পরোয়না জারি করা হচ্ছে। গত দুই বছরে মাত্র ২ জনের সাক্ষ্য নেয়া হয়েছে এ মামলায়। এ মামলার ৮৪ জন সাক্ষীর মধ্যে এ পর্যন্ত ২৬ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ হয়েছে। ঢাকার এক নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে মামলাটি বিচারধীন রয়েছে।
রমনা বটমূলে বোমা হামলা
এখন সাক্ষ্য পর্যায়ে আছে : পিপি
বুধবার, ১৪ এপ্রিল ২০২১
রাজধানীর রমনা বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলার ২০ বছর পূর্তি হচ্ছে আজ। ২০০১ সালে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে এ ভয়াবহ বোমা হামলায় ১০ জন নিহত ও ২০ জন গুরুতর আহত হন। এ ঘটনায় দায়ের করা দুটি মামলার মধ্যে হত্যা মামলা নিষ্পত্তি হলেও বিষ্ফোরক আইনের মামলাটি ২০ বছরেও শেষ হয়নি। বিস্ফোরক মামলাটি ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন। এই মামলায় ৮৪ জন সাক্ষীর মধ্যে এ পর্যন্ত ৫৫ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে। নানা কারণে মামলাটি সাক্ষ্য এখনো শেষ হয়নি। কবে শেষ হবে তা এখনো অনিশ্চিত।
অন্যদিকে হত্যা মামলায় নিম্ন আদালতের রায়ের ডেথ রেফারেন্স ও আপিল আবেদন হাইকোর্টে শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। এ মামলার আসামিদের একজন মুফতি হান্নানের অন্য মামলায় মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে। মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত তিনজন কারাগারে রয়েছেন। ৪ জন পলাতক রয়েছে।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আবু আবদুল্লাহ ভূইয়া জানান, মামলাটি এখন সাক্ষ্য পর্যায়ে আছে। ৫৫ জনের সাক্ষ্য শেষ হয়েছে। গত ৫ এপ্রিল তদন্তকারী কর্মকর্তা আবু হেনা মো. ইউসুফের সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য ছিল। কিন্তু তিনি গত এক বছর ধরে অসুস্থ। এ কারণে তারিখ পেছানো হয়েছে। সাক্ষ্য শেষে আত্মপক্ষ সমর্থন ও যুক্তিতর্ক শেষে মামলার রায় ঘোষণা করা হবে। এ মামলার অনেক আসামি ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা, রমনা বটমূলে হত্যা মামলা, কোটালীপাড়া বোমা মামলাসহ বিভিন্ন মামলার আসামি। অনেকের অন্য মামলায় ইতোমধ্যে সাজা হয়ে গেছে।
অন্যদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহম্মেদ বলেন, মামলাটি সাক্ষী পর্যায়ে আছে। কিন্তু সাক্ষী তো আদালতে হাজির হচ্ছে না। এ কারণে মামলাটি নিষ্পত্তিতে বিলম্ব হচ্ছে।
এদিকে রমনা বটমূলে বোমা হামলায় দায়ের করা দুটি পৃথক মামলার মধ্যে হত্যা মামলার রায় হয় প্রায় ১৩ বছর পর ২০১৪ সালের ২৩ জুন। রায়ে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশের শীর্ষ নেতা মুফতি আবদুল হান্নানসহ ৮ জনের মৃত্যুদণ্ড ও ৬ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেন আদালত। মামলায় সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর ভাই মাওলানা তাজউদ্দিনসহ চার আসামি এখনও পলাতক।
জানা গেছে, ২০১৪ সালের বিচারিক আদালতের রায় ঘোষণার পর হত্যা মামলাটি ডেথ রেফারেন্স হিসেবে হাইকোর্টে আসে। একই সঙ্গে আসামিদের পক্ষ থেকেও জেল আপিল হয়। পরে পেপারবুক প্রস্তুত করে মামলাটি হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চে শুনারি অপেক্ষায় ছিল। ওই বেঞ্চের এখতিয়ার পরিবর্তন হওয়ায় বর্তমান অন্য একটি বেঞ্চে কার্যতালিকায় আসে।
বিস্ফোরক আইনে করা মামলায় ২০১৪ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন মামলার অন্যতম আসামি মুফতি হান্নানসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। মামলাটিতে ৮৪ সাক্ষীর মধ্যে পর্যন্ত মোট ৫৫ সাক্ষীর জবানবন্দি গ্রহণ করে ট্রাইব্যুনাল।
এদিকে ২০১৪ সালের ২৩ জুন হত্যা মামলাটির রায় ঘোষণা করেন ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক রুহুল আমিন। রায়ে নিষিদ্ধ ঘোষিত হরকাতুল জিহাদের (হুজি) শীর্ষ নেতা মুফতি আবদুল হান্নান, বিএনপি নেতা ও সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর ভাই মাওলানা তাজউদ্দিনসহ ৮ জনের মৃত্যুদণ্ড ও ৬ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলো মুফতি আবদুল হান্নান, মাওলানা আকবর হোসেন, মুফতি আবদুল হাই, হাফেজ জাহাঙ্গীর আলম বদর, মাওলানা আবু বকর ওরফে হাফেজ সেলিম হাওলাদার, মুফতি শফিকুর রহমান, মাওলানা আরিফ হাসান সুমন ও মাওলানা মো. তাজউদ্দিন। যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্তরা হলো হাফেজ মাওলানা আবু তাহের, মাওলানা সাব্বির ওরফে আবদুল হান্নান সাব্বির, হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া, মাওলানা শওকত ওসমান ওরফে শেখ ফরিদ, মাওলানা আবদুর রউফ ও শাহাদত উল্লাহ ওরফে জুয়েল। তবে এ মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর ভাই মাওলানা তাজউদ্দিনসহ চার আসামি এখনও পলাতক।
২০০১ সালের ১৪ এপ্রিল রমনা বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলার পর নীলক্ষেত পুলিশ ফাঁড়ির সার্জেন্ট অমল চন্দ্র চন্দ ওই দিনই রমনা থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা করেন।
বিস্ফোরক দ্রব্য মামলা চলমান থাকায় মুফতি হান্নানসহ তিনজনের ফাঁসি কার্যকর করা হলেও এখনো আনেকেই ফাঁসির রায় কার্যকর হয়নি। এছাড়া হত্যা মামলায় ৮ আসামির মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন (ডেথ রেফারেন্স) এবং আপিলের শুনানি হাইকোর্টে থমকে থাকায় জন্য বিচার প্রার্থীদের অপেক্ষা দীর্ঘায়িত হচ্ছে। হত্যা মামলায় রায়ের পর ২০১৭ সালের ১৭ জানুয়ারি মামলাটি আসামিদের ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানির জন্য হাইকোর্টে উঠে। এছাড়া বিস্ফোরক আইনের মামলায় ২০০৯ সালে অভিযোগ গঠনের পর প্রথম ৭ জনের সাক্ষ্য নেয়া হলেও এরপর বিচার কার্যক্রম গতি হারায় সাক্ষী না আসায়। ২০১৫ সালের ২২ মার্চ থেকে সাক্ষীদের প্রতি সমনের পাশাপাশি গ্রেপ্তারি পরোয়না জারি করা হচ্ছে। গত দুই বছরে মাত্র ২ জনের সাক্ষ্য নেয়া হয়েছে এ মামলায়। এ মামলার ৮৪ জন সাক্ষীর মধ্যে এ পর্যন্ত ২৬ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ হয়েছে। ঢাকার এক নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে মামলাটি বিচারধীন রয়েছে।