মহামারী করোনা সংক্রমণে চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের ব্যক্তিগত সুরক্ষার জন্য মাস্ক, পিপিইসহ কেনা চিকিৎসা সুরক্ষাসামগ্রী নিয়ে দুর্নীতিসহ বিভিন্ন দুর্নীতিতে জড়িত রাঘোব বোয়ালদের ধরতে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
এদিকে দুদকের অনুসন্ধান টিমের সদস্যরা করোনাকালীন চিকিৎসা ও সুরক্ষা সামগ্রী ক্রয়ে দুর্নীতি এবং এর সঙ্গে লাভবান হওয়া ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে তথ্য সংগ্রহ ছাড়াও এ সময়ে বিভিন্ন চিকিৎসকদের বদলির বিষয়েও তথ্য চেয়েছে। অনুসন্ধান টিমের প্রধান দুদকের গোয়েন্দা ইউনিটের প্রধান পরিচালক মীর জয়নুল আবেদীন শিবলী স্বাক্ষরিত চিঠি ২১ জুন রোববার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদফতর এবং কেন্দ্রীয় ঔষধাগারের কাছে পাঠানো হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেন, স্বাস্থ্যখাতের দুর্নীতি দমনে দুদক কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছে। মাস্ক-পিপিইসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্যসামগ্রী ক্রয়ে দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ তিনটি প্রতিষ্ঠানে বিশেষ বাহক মারফত তথ্য-উপাত্ত চেয়ে অতীব জরুরি পত্র দেয়া হয়েছে। দুদক আইন-২০০৪ ও দুদক বিধিমালা-২০০৭ অনুসারে এসব চিঠি দেয়া হয়েছে। আমরা আশা করছি সবাই নির্রারিত সময়ের মধ্যে এসব তথ্য ও রেকর্ডপত্র দিয়ে দুদককে সহায়তা করবেন। দুদক একটি পূর্ণাঙ্গ অনুসন্ধানের মাধ্যমে অপরাধ এবং অপরাধীদের চিহ্নিত করতে চায়। অপরাধী যেই হোন না কেন তাকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। আমি আগেও বলেছি আজও বলছি এসব ক্ষেত্রে অপরাধীদের সামাজিক, পেশাগত বা অন্য কোন পরিচয় কমিশন ন্যূনতম গুরুত্ব দিবে না। অপরাধীদের আইনের মুখোমুখি করা হবেই। দুদক চেয়ারম্যান বলেন, মহামারী করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ব্যবহৃত এন-৯৫ মাস্ক ও পিপিইসহ বিভিন্ন সুরক্ষামূলক সামগ্রী ক্রয় দুর্নীতির হোতাদের ধরতে দুদক পরিচালক মীর জয়নুল আবেদীন শিবলীর নেতৃত্বে চার সদস্যের টিম গঠন করা হয়েছে গত ১৫ জুন।
দুদকের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, মাস্ক-পিপিই ক্রয় দুর্নীতির অনুসন্ধানে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ তিন সংস্থায় তথ্য চেয়ে দুদকের অনুসন্ধান টিম একটি চিঠি পাঠিয়েছে। রোববার টিমের প্রধান মীর মো. জয়নুল আবেদীন শিবলীর স্বাক্ষরে তথ্য ও রেকর্ডপত্র চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদফতর ও কেন্দ্রীয় ঔষধাগারের সচিব, মহাপরিচালক ও পরিচালক বরাবরে। এসব চিঠিতে আগামী ৩০ জুনের মধ্যে চাহিত তথ্য ও রেকর্ডপত্র সরবরাহের অনুরোধ জানানো হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে বলা হয়েছে কোভিড-১৯ মোকাবিলায় স্বাস্থ্য সরঞ্জামাদি-যন্ত্রপাতি (মাস্ক, পিপিই, স্যানিটাইজার, আইসিইউ যন্ত্রপাতি, ভেন্টিলেটর, পিসিআর মেশিন, কোভিড টেস্ট কিট ও অন্যান্য) ক্রয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আওতায় শুরু হতে বর্তমান সময় পর্যন্ত গৃহীত প্রকল্পসমূহের নাম, বরাদ্দকৃত ও ব্যয়িত অর্থের পরিমাণ এবং বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠানের (স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়/স্বাস্থ্য অধিদফতর/সিএমএসডি) বিষয়ে জানানোর অনুরোধ করা হয়েছে। এছাড়া নকল এন-৯৫ মাস্কসহ নিম্নমানের সুরক্ষাসামগ্রী সবররাহকারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স জেএমআই হসপিটাল রিক্যুইজিট ম্যানুফ্যাকচারিং লি., ঢাকাসহ অন্য কোন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়ে থাকলে সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্রের সত্যায়িত ফটোকপি। এবং গত ২৬ মার্চ থেকে এ পর্যন্ত বিভিন্ন কারণে যেসব ডাক্তারকে বদলি করা হয়েছে তাদের নাম, পদবী, বর্তমান কর্মস্থল, পূর্ববর্তী কমস্থল, মোবাইল নম্বরসহ বিস্তারিত তথ্যাদি চাওয়া হয়েছে চিঠিতে। এছাড়া স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক ও কে›ত্রীয় ঔষধাগারের পরিচালকের কাছেও বিভিন্ন প্রাসঙ্গিক রেকর্ড-পত্র চাওয়া হয়েছে।
দুদক সূত্র জানায়, এর আগে দদুক অভিযোগটি অনুসন্ধানের জন্য দুদক পরিচালক মীর মো. জয়নুল আবেদীন শিবলীর নেতৃত্বে চার সদস্যের একটি টিম গঠন করে। গঠিত টিমের অন্য সদস্যরা হলেন, উপপরিচালক নুরুল হুদা, সহকারী পরিচালক মো. সাইদুজ্জামান ও আতাউর রহমান। গত ১০ জুন দুদকের প্রধান কার্যালয়ে থেকে এক জরুরি বৈঠকে করোনাকালে এন-৯৫ মাস্ক, পিপিইসহ বিভিন্ন সুরক্ষাসামগ্রী ক্রয়ে অনিয়ম, দুর্নীতি, প্রতারণা বা জাল জালিয়াতির অভিযোগটি অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক।
দুদ সূত্রে জানা যায়, এন-৯৫ মাস্ক কেলেঙ্কারি নিয়ে প্রথমে স্বাস্থ্য খাতের কেনাকাটার দুর্নীতির বিষয়টি সামনে আসে। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এন-৯৫ এর মোড়কে করে সাধারণ মাস্ক সরবরাহ করে কেন্দ্রীয় ওষুধাগার (সিএমএসডি) কর্তৃপক্ষ। সিএমএসডি কর্তৃপক্ষ দাবি করে, তারা এন-৯৫ মাস্কের কোন কার্যাদেশ জেএমআইকে দেয়নি। পরবর্তীতে করোনা পরিস্থিতি নিয়ে ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এ দুর্নীতির প্রসঙ্গ তুলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। মুগদা জেনারেল হাসপাতালসহ কয়েকটি সরকারি হাসপাতালে কেন্দ্রীয় ঔষধাগারের মাধ্যমে এন-৯৫ ব্র্যান্ডের মোড়কে সাধারণ ও নিম্নমানের মাস্ক সরবরাহ করেছিল জেএমআই গ্রুপ। কেলেঙ্কারির এই ঘটনায় তদন্ত এবং জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়। পরে এ ঘটনায় তদন্ত কমিটিও গঠন করেছিল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এসব নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে অনিয়মের ঘটনা তুলে ধরে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হলে দুদক স্বপ্রণোদিত হয়ে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয়।
দুদকের দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ কয়েকটি হাসপাতালে নকল ও নিম্নমানের ব্যক্তিগত সুরক্ষাসামগ্রী পাঠানো হয়। এসব নিয়ে প্রতিবাদ করায় কয়েকজন চিকিৎসককে সরিয়ে দেয়া হয়। দুদক ইতোমধ্যে বিভিন্ন মাধ্যমে অনেক তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেছে। দুদক মনে করছে এখানে শত শত কোটি টাকার তছরুপ হয়েছে। এর সঙ্গে দায়িত্বশীলরা মিলেমিশে দুর্নীতি করেছে। বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত চাওয়া হয়েছে। এসব তথ্য এক্সপার্ট দ্বারা যাচাই-বাছাই করা হবে। কত টাকা বরাদ্ধ হয়েছে কোন মালামাল কেনায় কত টাকা ব্যয় হয়েছে, সেগুলোর বাজারদর কি আছে এবং সেগুলোর মান বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক ঠিক আছে কিনা এসব যাচাই বাচাই করা হবে।
দুদক সূত্র জানায়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে দুর্নীতি নতুন কিছু নয়। এর আগেও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনস্ত প্রতিষ্ঠান স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা সামগ্রী থেকে শুরু করে বিভিন্ন মালামাল কেনাকাটায় হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে। বেশ কয়েকটি হাসপাতালের কেনাকাটায় দুর্নীতির প্রমাণ পেয়ে মামলাও করেছে দুদক। বর্তমানে স্বাস্থ্য অধিদফতরের কেনাকাটায় দুর্নীতি ও সরকারি অর্থ লুটসহ নানা অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগে ১৫টির বেশি মামলা তদন্তাধীন রয়েছে। এর সঙ্গে জড়ি অনেক আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অনেকেই আত্মগোপনে আছে। মূলত স্বাস্থ্য সেক্টরের দুর্নীতির সঙ্গে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট জড়িত। এসব সিন্ডিকেটের সদস্যদের রাজিনৈতকভাবেও প্রভাবশালী।
গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। ২৫ মার্চ সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য। করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসাসেবায় নিয়োজিত চিকিৎসক, নার্সসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের ব্যক্তিগত সুরক্ষার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে এন-৯৫ মাস্ক, পিপিইসহ স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী ক্রয়ের জন্য দরপত্র আহ্বান করে। এরপর কেন্দ্রীয় ঔষধাগার থেকে কয়েকটি হাসপাতালে এন-৯৫ মাস্ক পিপিইসহ বেশকিছু স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী পাঠানো হয়। কিন্তু নকল এন-৯৫ মাস্ক পাঠানো নিয়ে চিকিৎসকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। সেই নি¤œ মানের পিপিই নিয়েও প্রশ্ন তোলেন চিকিৎসকরা। ক্ষোভ প্রকাশ করে চিঠি পাঠায় মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনায় দুই মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালকদের অন্যত্র বদলি করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
রোববার, ২১ জুন ২০২০
মহামারী করোনা সংক্রমণে চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের ব্যক্তিগত সুরক্ষার জন্য মাস্ক, পিপিইসহ কেনা চিকিৎসা সুরক্ষাসামগ্রী নিয়ে দুর্নীতিসহ বিভিন্ন দুর্নীতিতে জড়িত রাঘোব বোয়ালদের ধরতে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
এদিকে দুদকের অনুসন্ধান টিমের সদস্যরা করোনাকালীন চিকিৎসা ও সুরক্ষা সামগ্রী ক্রয়ে দুর্নীতি এবং এর সঙ্গে লাভবান হওয়া ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে তথ্য সংগ্রহ ছাড়াও এ সময়ে বিভিন্ন চিকিৎসকদের বদলির বিষয়েও তথ্য চেয়েছে। অনুসন্ধান টিমের প্রধান দুদকের গোয়েন্দা ইউনিটের প্রধান পরিচালক মীর জয়নুল আবেদীন শিবলী স্বাক্ষরিত চিঠি ২১ জুন রোববার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদফতর এবং কেন্দ্রীয় ঔষধাগারের কাছে পাঠানো হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেন, স্বাস্থ্যখাতের দুর্নীতি দমনে দুদক কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছে। মাস্ক-পিপিইসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্যসামগ্রী ক্রয়ে দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ তিনটি প্রতিষ্ঠানে বিশেষ বাহক মারফত তথ্য-উপাত্ত চেয়ে অতীব জরুরি পত্র দেয়া হয়েছে। দুদক আইন-২০০৪ ও দুদক বিধিমালা-২০০৭ অনুসারে এসব চিঠি দেয়া হয়েছে। আমরা আশা করছি সবাই নির্রারিত সময়ের মধ্যে এসব তথ্য ও রেকর্ডপত্র দিয়ে দুদককে সহায়তা করবেন। দুদক একটি পূর্ণাঙ্গ অনুসন্ধানের মাধ্যমে অপরাধ এবং অপরাধীদের চিহ্নিত করতে চায়। অপরাধী যেই হোন না কেন তাকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। আমি আগেও বলেছি আজও বলছি এসব ক্ষেত্রে অপরাধীদের সামাজিক, পেশাগত বা অন্য কোন পরিচয় কমিশন ন্যূনতম গুরুত্ব দিবে না। অপরাধীদের আইনের মুখোমুখি করা হবেই। দুদক চেয়ারম্যান বলেন, মহামারী করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ব্যবহৃত এন-৯৫ মাস্ক ও পিপিইসহ বিভিন্ন সুরক্ষামূলক সামগ্রী ক্রয় দুর্নীতির হোতাদের ধরতে দুদক পরিচালক মীর জয়নুল আবেদীন শিবলীর নেতৃত্বে চার সদস্যের টিম গঠন করা হয়েছে গত ১৫ জুন।
দুদকের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, মাস্ক-পিপিই ক্রয় দুর্নীতির অনুসন্ধানে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ তিন সংস্থায় তথ্য চেয়ে দুদকের অনুসন্ধান টিম একটি চিঠি পাঠিয়েছে। রোববার টিমের প্রধান মীর মো. জয়নুল আবেদীন শিবলীর স্বাক্ষরে তথ্য ও রেকর্ডপত্র চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদফতর ও কেন্দ্রীয় ঔষধাগারের সচিব, মহাপরিচালক ও পরিচালক বরাবরে। এসব চিঠিতে আগামী ৩০ জুনের মধ্যে চাহিত তথ্য ও রেকর্ডপত্র সরবরাহের অনুরোধ জানানো হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে বলা হয়েছে কোভিড-১৯ মোকাবিলায় স্বাস্থ্য সরঞ্জামাদি-যন্ত্রপাতি (মাস্ক, পিপিই, স্যানিটাইজার, আইসিইউ যন্ত্রপাতি, ভেন্টিলেটর, পিসিআর মেশিন, কোভিড টেস্ট কিট ও অন্যান্য) ক্রয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আওতায় শুরু হতে বর্তমান সময় পর্যন্ত গৃহীত প্রকল্পসমূহের নাম, বরাদ্দকৃত ও ব্যয়িত অর্থের পরিমাণ এবং বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠানের (স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়/স্বাস্থ্য অধিদফতর/সিএমএসডি) বিষয়ে জানানোর অনুরোধ করা হয়েছে। এছাড়া নকল এন-৯৫ মাস্কসহ নিম্নমানের সুরক্ষাসামগ্রী সবররাহকারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স জেএমআই হসপিটাল রিক্যুইজিট ম্যানুফ্যাকচারিং লি., ঢাকাসহ অন্য কোন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়ে থাকলে সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্রের সত্যায়িত ফটোকপি। এবং গত ২৬ মার্চ থেকে এ পর্যন্ত বিভিন্ন কারণে যেসব ডাক্তারকে বদলি করা হয়েছে তাদের নাম, পদবী, বর্তমান কর্মস্থল, পূর্ববর্তী কমস্থল, মোবাইল নম্বরসহ বিস্তারিত তথ্যাদি চাওয়া হয়েছে চিঠিতে। এছাড়া স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক ও কে›ত্রীয় ঔষধাগারের পরিচালকের কাছেও বিভিন্ন প্রাসঙ্গিক রেকর্ড-পত্র চাওয়া হয়েছে।
দুদক সূত্র জানায়, এর আগে দদুক অভিযোগটি অনুসন্ধানের জন্য দুদক পরিচালক মীর মো. জয়নুল আবেদীন শিবলীর নেতৃত্বে চার সদস্যের একটি টিম গঠন করে। গঠিত টিমের অন্য সদস্যরা হলেন, উপপরিচালক নুরুল হুদা, সহকারী পরিচালক মো. সাইদুজ্জামান ও আতাউর রহমান। গত ১০ জুন দুদকের প্রধান কার্যালয়ে থেকে এক জরুরি বৈঠকে করোনাকালে এন-৯৫ মাস্ক, পিপিইসহ বিভিন্ন সুরক্ষাসামগ্রী ক্রয়ে অনিয়ম, দুর্নীতি, প্রতারণা বা জাল জালিয়াতির অভিযোগটি অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক।
দুদ সূত্রে জানা যায়, এন-৯৫ মাস্ক কেলেঙ্কারি নিয়ে প্রথমে স্বাস্থ্য খাতের কেনাকাটার দুর্নীতির বিষয়টি সামনে আসে। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এন-৯৫ এর মোড়কে করে সাধারণ মাস্ক সরবরাহ করে কেন্দ্রীয় ওষুধাগার (সিএমএসডি) কর্তৃপক্ষ। সিএমএসডি কর্তৃপক্ষ দাবি করে, তারা এন-৯৫ মাস্কের কোন কার্যাদেশ জেএমআইকে দেয়নি। পরবর্তীতে করোনা পরিস্থিতি নিয়ে ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এ দুর্নীতির প্রসঙ্গ তুলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। মুগদা জেনারেল হাসপাতালসহ কয়েকটি সরকারি হাসপাতালে কেন্দ্রীয় ঔষধাগারের মাধ্যমে এন-৯৫ ব্র্যান্ডের মোড়কে সাধারণ ও নিম্নমানের মাস্ক সরবরাহ করেছিল জেএমআই গ্রুপ। কেলেঙ্কারির এই ঘটনায় তদন্ত এবং জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়। পরে এ ঘটনায় তদন্ত কমিটিও গঠন করেছিল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এসব নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে অনিয়মের ঘটনা তুলে ধরে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হলে দুদক স্বপ্রণোদিত হয়ে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয়।
দুদকের দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ কয়েকটি হাসপাতালে নকল ও নিম্নমানের ব্যক্তিগত সুরক্ষাসামগ্রী পাঠানো হয়। এসব নিয়ে প্রতিবাদ করায় কয়েকজন চিকিৎসককে সরিয়ে দেয়া হয়। দুদক ইতোমধ্যে বিভিন্ন মাধ্যমে অনেক তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেছে। দুদক মনে করছে এখানে শত শত কোটি টাকার তছরুপ হয়েছে। এর সঙ্গে দায়িত্বশীলরা মিলেমিশে দুর্নীতি করেছে। বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত চাওয়া হয়েছে। এসব তথ্য এক্সপার্ট দ্বারা যাচাই-বাছাই করা হবে। কত টাকা বরাদ্ধ হয়েছে কোন মালামাল কেনায় কত টাকা ব্যয় হয়েছে, সেগুলোর বাজারদর কি আছে এবং সেগুলোর মান বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক ঠিক আছে কিনা এসব যাচাই বাচাই করা হবে।
দুদক সূত্র জানায়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে দুর্নীতি নতুন কিছু নয়। এর আগেও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনস্ত প্রতিষ্ঠান স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা সামগ্রী থেকে শুরু করে বিভিন্ন মালামাল কেনাকাটায় হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে। বেশ কয়েকটি হাসপাতালের কেনাকাটায় দুর্নীতির প্রমাণ পেয়ে মামলাও করেছে দুদক। বর্তমানে স্বাস্থ্য অধিদফতরের কেনাকাটায় দুর্নীতি ও সরকারি অর্থ লুটসহ নানা অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগে ১৫টির বেশি মামলা তদন্তাধীন রয়েছে। এর সঙ্গে জড়ি অনেক আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অনেকেই আত্মগোপনে আছে। মূলত স্বাস্থ্য সেক্টরের দুর্নীতির সঙ্গে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট জড়িত। এসব সিন্ডিকেটের সদস্যদের রাজিনৈতকভাবেও প্রভাবশালী।
গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। ২৫ মার্চ সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য। করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসাসেবায় নিয়োজিত চিকিৎসক, নার্সসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের ব্যক্তিগত সুরক্ষার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে এন-৯৫ মাস্ক, পিপিইসহ স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী ক্রয়ের জন্য দরপত্র আহ্বান করে। এরপর কেন্দ্রীয় ঔষধাগার থেকে কয়েকটি হাসপাতালে এন-৯৫ মাস্ক পিপিইসহ বেশকিছু স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী পাঠানো হয়। কিন্তু নকল এন-৯৫ মাস্ক পাঠানো নিয়ে চিকিৎসকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। সেই নি¤œ মানের পিপিই নিয়েও প্রশ্ন তোলেন চিকিৎসকরা। ক্ষোভ প্রকাশ করে চিঠি পাঠায় মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনায় দুই মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালকদের অন্যত্র বদলি করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।