অবশেষে ছয় লাখের বেশি শিক্ষার্থী বৃত্তি ও উপবৃত্তির ‘বকেয়া’ টাকা ছাড় করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। চলতি মাসের মধ্যে বৃত্তি ও উপবৃত্তির বকেয়া অর্থ শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ ব্যাংক একাউন্টে পাঠানোর অনুমতি পেয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)।
তবে চার বছর আটকে থাকা বৃত্তি ও উপবৃত্তির বকেয়া টাকা দেয়ার অনুমতি মিললেও অনেক শিক্ষার্থীর ‘খোঁজ’ বা হদিস নিয়ে ‘উদ্বিগ্ন’ মাউশির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। ব্যাংক একাউন্টের ‘ডিজিটাল সমস্যার’ কারণে বৃত্তি ও উপবৃত্তির টাকা ছাড়ে জটিলতা হয়েছিল; যা এখনও পুরোপুরি নিরসন হয়নি।
মাউশির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইএফটি (ইলেক্ট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার) কার্যক্রম শুরু হওয়ায় ২০১৯-২০ অর্থবছরে বৃত্তি ও উপবৃত্তির কোনো বকেয়া দেয়া হয়নি। ওই অর্থবছরে কতজন শিক্ষার্থীর বৃত্তি ও উপবৃত্তির টাকা বকেয়া ছিল সেই তথ্য প্রতিবেদনে উঠে আসেনি।
মাউশির দু’জন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংবাদকে জানিয়েছেন, অনেক শিক্ষার্থী বৃত্তির বকেয়া টাকার জন্য বিভিন্ন সময়ে মাউশিতে নানাভাবে চেষ্টা, তদবির ও আবেদন করেছে। কিন্তু সংস্থার সাবেক শীর্ষ কর্মকর্তার ‘গাফিলতি’ ও ‘স্বেচ্ছাচারিতার’ কারণে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এ সংক্রান্ত প্রশাসনিক কার্যক্রম সম্পন্ন করতে পারেননি। তবে সম্প্রতি একটি বিশেষ সংস্থার এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার ‘সন্তানের’ তদবিরে বৃত্তির বকেয়া টাকা দেয়ার প্রক্রিয়া দ্রƒত নিস্পত্তি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
মাউশি জানিয়েছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে পাঁচ লাখ ৬৫ হাজার ৮৮১ জন শিক্ষার্থীর (ইএফটি) ১১৩ কোটি ১১ লাখ ১৫ হাজার ৩৬০ টাকা বকেয়া ছিল। ওই টাকা আর শিক্ষার্থীদের দেয়া হয়নি।
২০২১-২২ অর্থবছরেও বকেয়া প্রদান করা হয়নি। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৩৬ হাজার ২২১ জন শিক্ষার্র্থীর বকেয়া বৃত্তি (সাধারণ শিক্ষা) ছিল ১৯ কোটি ১৫ লাখ ২৯ হাজার ৮৩০ টাকা এবং ২০২৩-২৪ অর্থবছরে চার হাজার ৫৯ জন শিক্ষার্থীর বকেয়া (মাদ্রাসা) ছিল চার কোটি আট লাখ ৬২ হাজার ৭৯৫ টাকা। সর্বমোট ১৩৬ কোটি ৩৫ লাখ সাত হাজার ৯৮৫ টাকা বৃত্তির বকেয়া রয়েছে।
বৃত্তি ও উপবৃত্তির টাকা বিতরণ না হওয়ার কারণ সর্ম্পকে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অষ্টম শ্রেণীর জেএসসি (জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট) ও পঞ্চম শ্রেণীর প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা না হওয়া, করোনা মহামারী এবং প্রতিষ্ঠান কর্তৃক এন্ট্রিকৃত তথ্যে গড়মিল ও সাধারণ শিক্ষার বকেয়া প্রদানের অনুমতি না পাওয়ায় বিতরণ কম হয়েছে।
এছাড়া বৃত্তির কার্যক্রম ম্যানুয়াল সিস্টেমের পরিবর্তে অনলাইনে বৃত্তির অর্থ ইএফটি কার্যক্রম শুরু হওয়ায় বিতরণ কম হয়েছে বলে প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে। মাউশির গত ২ অক্টোবর মাউশির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘বিভিন্ন পরীক্ষায় বৃত্তি/উপবৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের তথ্য এন্ট্রি/সংশোধনের কাজ চলমান রয়েছে। ফলে বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বৃদ্ধিসহ বকেয়ার পরিমাণ পরিবর্তিত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে।
ইতোপূর্বে গত ৫ সেপ্টেম্বর প্রেরিত প্রস্তাবের পরে তথ্যগত পরিবর্তন হওয়ায় চলমান ২০২৪-২৫ অর্থবছর মাউশি অধিদপ্তরের বৃত্তি/উপবৃত্তি কোডে বরাদ্দকৃত টাকার উদ্বৃত্ত অর্থ হতে ২০১৯-২০ তেকে ২০২৩-২৪ অর্থবছর পর্যন্ত বিভিন্ন পরীক্ষা/ক্যাটাগরির বৃত্তি/উপবৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের অনুকূলে প্রায় ৩০ কোটি টাকা বকেয়া পরিশোধের অনুমতি প্রয়োজন।’
বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের বৃত্তি ও ব্যাংক সংক্রান্ত তথ্য অধ্যায়নরত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে এন্ট্রি সম্পাদন করা হয় উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘এক্ষেত্রে যথাসময়ে এন্ট্রি না হওয়া, এন্ট্রিকৃত তথ্যের বৃত্তি সংক্রান্ত তথ্যে ভুল, ব্যাংক সংক্রান্ত তথ্যে ভুল থাকা, একই বৃত্তির বিপরীতে একজন শিক্ষার্থীর একাধিক এন্ট্রিসহ মাউশি প্রদত্ত নির্দেশনা যথাযথভাবে অনুসরণ না করার কারণে অনেক শিক্ষার্থীর বৃত্তির অর্থ যথাসময়ে তাদের ব্যাংক হিসাবে প্রেরণ করা সম্ভব হয় না।
পরবর্তীতে তথ্য সঠিকভাবে এন্ট্রি/সংশোধন করা হলে সেসব শিক্ষার্থীর পূর্ববর্তী অর্থবছরসমূহের প্রাপ্যতা বকেয়া হিসাবে গণ্য হয়। অর্থ না পাওয়া কতজন শিক্ষার্থীর তথ্য এন্ট্রি/সংশোধন হবে এবং বকেয়া হিসাবে প্রাপ্যতা তৈরি হবে তা জানা যায় না বিধায় অর্থবছরের শেষদিকে স্কিমের (প্রকল্প অফিস) মাধ্যমে বকেয়ার হিসাব না করা পর্যন্ত চূড়ান্ত চাহিদা প্রস্তুত করা সম্ভব হয় না।’
গত ১১ ডিসেম্বর মাউশি মহাপরিচালক অধ্যাপক এবিএম রেজাউল করীম মাঠ পর্র্যায়ের শিক্ষা কর্মকর্তা এবং প্রতিষ্ঠান প্রধানকের কাছে পাঠানো এক নির্দেশনায় বলেন, ‘প্রতিষ্ঠান প্রধান বা দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাগণকে বৃত্তি সংক্রান্ত নির্দেশনা অনুসরণপূর্বক সফটওয়্যারে তথ্য এন্ট্রি/সংশোধন করার জন্য বলা হলেও প্রতিষ্ঠান থেকে এন্ট্রিকৃত তথ্যে ব্যাংক সংক্রান্ত বিভিন্ন ভুলের কারণে অনেক শিক্ষার্থীর বৃত্তির অর্থ ইএফটিতে ‘বাউন্সড’ বা ফেরত আসছে। ফলে সকল শিক্ষার্থীর বৃত্তির অর্থ তাদের ব্যাংক হিসাবে জমা হয়নি।’ নির্দেশনায় আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে এই তথ্য সংশোধনের কথা বলা হয়েছে।
সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
অবশেষে ছয় লাখের বেশি শিক্ষার্থী বৃত্তি ও উপবৃত্তির ‘বকেয়া’ টাকা ছাড় করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। চলতি মাসের মধ্যে বৃত্তি ও উপবৃত্তির বকেয়া অর্থ শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ ব্যাংক একাউন্টে পাঠানোর অনুমতি পেয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)।
তবে চার বছর আটকে থাকা বৃত্তি ও উপবৃত্তির বকেয়া টাকা দেয়ার অনুমতি মিললেও অনেক শিক্ষার্থীর ‘খোঁজ’ বা হদিস নিয়ে ‘উদ্বিগ্ন’ মাউশির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। ব্যাংক একাউন্টের ‘ডিজিটাল সমস্যার’ কারণে বৃত্তি ও উপবৃত্তির টাকা ছাড়ে জটিলতা হয়েছিল; যা এখনও পুরোপুরি নিরসন হয়নি।
মাউশির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইএফটি (ইলেক্ট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার) কার্যক্রম শুরু হওয়ায় ২০১৯-২০ অর্থবছরে বৃত্তি ও উপবৃত্তির কোনো বকেয়া দেয়া হয়নি। ওই অর্থবছরে কতজন শিক্ষার্থীর বৃত্তি ও উপবৃত্তির টাকা বকেয়া ছিল সেই তথ্য প্রতিবেদনে উঠে আসেনি।
মাউশির দু’জন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংবাদকে জানিয়েছেন, অনেক শিক্ষার্থী বৃত্তির বকেয়া টাকার জন্য বিভিন্ন সময়ে মাউশিতে নানাভাবে চেষ্টা, তদবির ও আবেদন করেছে। কিন্তু সংস্থার সাবেক শীর্ষ কর্মকর্তার ‘গাফিলতি’ ও ‘স্বেচ্ছাচারিতার’ কারণে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এ সংক্রান্ত প্রশাসনিক কার্যক্রম সম্পন্ন করতে পারেননি। তবে সম্প্রতি একটি বিশেষ সংস্থার এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার ‘সন্তানের’ তদবিরে বৃত্তির বকেয়া টাকা দেয়ার প্রক্রিয়া দ্রƒত নিস্পত্তি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
মাউশি জানিয়েছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে পাঁচ লাখ ৬৫ হাজার ৮৮১ জন শিক্ষার্থীর (ইএফটি) ১১৩ কোটি ১১ লাখ ১৫ হাজার ৩৬০ টাকা বকেয়া ছিল। ওই টাকা আর শিক্ষার্থীদের দেয়া হয়নি।
২০২১-২২ অর্থবছরেও বকেয়া প্রদান করা হয়নি। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৩৬ হাজার ২২১ জন শিক্ষার্র্থীর বকেয়া বৃত্তি (সাধারণ শিক্ষা) ছিল ১৯ কোটি ১৫ লাখ ২৯ হাজার ৮৩০ টাকা এবং ২০২৩-২৪ অর্থবছরে চার হাজার ৫৯ জন শিক্ষার্থীর বকেয়া (মাদ্রাসা) ছিল চার কোটি আট লাখ ৬২ হাজার ৭৯৫ টাকা। সর্বমোট ১৩৬ কোটি ৩৫ লাখ সাত হাজার ৯৮৫ টাকা বৃত্তির বকেয়া রয়েছে।
বৃত্তি ও উপবৃত্তির টাকা বিতরণ না হওয়ার কারণ সর্ম্পকে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অষ্টম শ্রেণীর জেএসসি (জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট) ও পঞ্চম শ্রেণীর প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা না হওয়া, করোনা মহামারী এবং প্রতিষ্ঠান কর্তৃক এন্ট্রিকৃত তথ্যে গড়মিল ও সাধারণ শিক্ষার বকেয়া প্রদানের অনুমতি না পাওয়ায় বিতরণ কম হয়েছে।
এছাড়া বৃত্তির কার্যক্রম ম্যানুয়াল সিস্টেমের পরিবর্তে অনলাইনে বৃত্তির অর্থ ইএফটি কার্যক্রম শুরু হওয়ায় বিতরণ কম হয়েছে বলে প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে। মাউশির গত ২ অক্টোবর মাউশির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘বিভিন্ন পরীক্ষায় বৃত্তি/উপবৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের তথ্য এন্ট্রি/সংশোধনের কাজ চলমান রয়েছে। ফলে বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বৃদ্ধিসহ বকেয়ার পরিমাণ পরিবর্তিত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে।
ইতোপূর্বে গত ৫ সেপ্টেম্বর প্রেরিত প্রস্তাবের পরে তথ্যগত পরিবর্তন হওয়ায় চলমান ২০২৪-২৫ অর্থবছর মাউশি অধিদপ্তরের বৃত্তি/উপবৃত্তি কোডে বরাদ্দকৃত টাকার উদ্বৃত্ত অর্থ হতে ২০১৯-২০ তেকে ২০২৩-২৪ অর্থবছর পর্যন্ত বিভিন্ন পরীক্ষা/ক্যাটাগরির বৃত্তি/উপবৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের অনুকূলে প্রায় ৩০ কোটি টাকা বকেয়া পরিশোধের অনুমতি প্রয়োজন।’
বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের বৃত্তি ও ব্যাংক সংক্রান্ত তথ্য অধ্যায়নরত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে এন্ট্রি সম্পাদন করা হয় উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘এক্ষেত্রে যথাসময়ে এন্ট্রি না হওয়া, এন্ট্রিকৃত তথ্যের বৃত্তি সংক্রান্ত তথ্যে ভুল, ব্যাংক সংক্রান্ত তথ্যে ভুল থাকা, একই বৃত্তির বিপরীতে একজন শিক্ষার্থীর একাধিক এন্ট্রিসহ মাউশি প্রদত্ত নির্দেশনা যথাযথভাবে অনুসরণ না করার কারণে অনেক শিক্ষার্থীর বৃত্তির অর্থ যথাসময়ে তাদের ব্যাংক হিসাবে প্রেরণ করা সম্ভব হয় না।
পরবর্তীতে তথ্য সঠিকভাবে এন্ট্রি/সংশোধন করা হলে সেসব শিক্ষার্থীর পূর্ববর্তী অর্থবছরসমূহের প্রাপ্যতা বকেয়া হিসাবে গণ্য হয়। অর্থ না পাওয়া কতজন শিক্ষার্থীর তথ্য এন্ট্রি/সংশোধন হবে এবং বকেয়া হিসাবে প্রাপ্যতা তৈরি হবে তা জানা যায় না বিধায় অর্থবছরের শেষদিকে স্কিমের (প্রকল্প অফিস) মাধ্যমে বকেয়ার হিসাব না করা পর্যন্ত চূড়ান্ত চাহিদা প্রস্তুত করা সম্ভব হয় না।’
গত ১১ ডিসেম্বর মাউশি মহাপরিচালক অধ্যাপক এবিএম রেজাউল করীম মাঠ পর্র্যায়ের শিক্ষা কর্মকর্তা এবং প্রতিষ্ঠান প্রধানকের কাছে পাঠানো এক নির্দেশনায় বলেন, ‘প্রতিষ্ঠান প্রধান বা দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাগণকে বৃত্তি সংক্রান্ত নির্দেশনা অনুসরণপূর্বক সফটওয়্যারে তথ্য এন্ট্রি/সংশোধন করার জন্য বলা হলেও প্রতিষ্ঠান থেকে এন্ট্রিকৃত তথ্যে ব্যাংক সংক্রান্ত বিভিন্ন ভুলের কারণে অনেক শিক্ষার্থীর বৃত্তির অর্থ ইএফটিতে ‘বাউন্সড’ বা ফেরত আসছে। ফলে সকল শিক্ষার্থীর বৃত্তির অর্থ তাদের ব্যাংক হিসাবে জমা হয়নি।’ নির্দেশনায় আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে এই তথ্য সংশোধনের কথা বলা হয়েছে।