alt

আন্তর্জাতিক

ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির ভবিষ্যৎ কী

বিদেশী সংবাদ মাধ্যম : শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫

ইরানের পারমাণবিক কেন্দ্রে কাজ করছেন দেশটির বিজ্ঞানীরা -এএফপি

ইরানে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের বিমান হামলা চালানোর ৭২ ঘণ্টা না যেতেই দেশটির ফর্দো ও নাতাঞ্জ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্রগুলোর ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়। দ্য নিউইয়র্ক টাইমস ও সিএনএন মার্কিন প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থার (ডিআইএ) একটি প্রাথমিক গোপন মূল্যায়ন প্রতিবেদন ফাঁস করে জানিয়েছে, হামলায় ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা মাঝারি থেকে গুরুতর হতে পারে। যদিও এটি প্রাথমিক মূল্যায়ন হওয়ায় প্রতিবেদনটিতে ‘কম আত্মবিশ্বাস’-এর কথা বলা হয়।

অন্যদিকে ট্রাম্প দাবি করেছেন, ওই কেন্দ্রগুলো ‘সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস’ করে দেওয়া হয়েছে। এ মতভেদ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এর কেন্দ্রে রয়েছে ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির উপযোগী মাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার সক্ষমতা অন্তত কয়েক বছরের জন্য হলেও যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল নষ্ট করতে পেরেছে কি না, সেই বিষয়টি।

ইসরায়েল বহু বছর ধরে প্রমাণ ছাড়াই দাবি করে আসছে, ইরান পারমাণবিক বোমা তৈরির পরিকল্পনা করছে। কিন্তু ইরান বরাবরই বলে এসেছে, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি পুরোপুরি শান্তিপূর্ণ ও বেসামরিক উদ্দেশ্যে পরিচালিত। যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যেও এ বিষয়ে মতভেদ রয়েছে। চলতি বছর মার্চে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা জানায়, তেহরান পারমাণবিক বোমা বানাচ্ছে না। তবে জুনের শুরুতে ট্রাম্প দাবি করেন, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির খুব কাছাকাছি পৌঁছে গেছে।

তবে, যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় ক্ষয়ক্ষতি এবং ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে চায় কি না, সেসব নিয়ে সাংঘর্ষিক দাবি ও মূল্যায়নের মধ্যেও একটি বিষয় স্পষ্ট—তেহরান বলছে, তারা পারমাণবিক কর্মসূচি থেকে পিছু হটবে না। তাহলে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির ভবিষ্যৎ কী? এ পর্যন্ত কতটা ক্ষতি হয়েছে? যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল কি ইরানকে আবারও কর্মসূচিটি শুরু করতে দেবে? আর ২০১৫ সালের যে চুক্তিটি ট্রাম্প বাতিল করার আগপর্যন্ত কার্যকর ছিল, সেটি কি পুনরুজ্জীবিত হতে পারে? উঠে আসছে এমন নানা প্রশ্ন।

ইরানে মার্কিন হামলার পর প্রথমবার প্রকাশ্যে মুখ খুলেছেন দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি। তিনি বলেছেন, হামলায় ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ‘গুরুতর কিছু হয়নি’। তেহরান থেকে আল–জাজিরার সংবাদদাতা রেসুল সেরদার জানান, খামেনি বলেন, ‘বেশির ভাগ পারমাণবিক স্থাপনাই অক্ষত রয়েছে এবং ইরান তার কর্মসূচি চালিয়ে যাবে।’ যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় ক্ষয়ক্ষতি এবং ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে চায় কি না, তা নিয়ে সাংঘর্ষিক দাবি ও মূল্যায়নের মধ্যেও একটি বিষয় স্পষ্ট তেহরান বলছে, তারা পারমাণবিক কর্মসূচি থেকে পিছু হটবে না।

ইরানের পারমাণবিক শক্তি সংস্থার প্রধান মোহাম্মদ এসলামি গত মঙ্গলবার বলেন, ‘পারমাণবিক কর্মসূচি) পুনরুদ্ধারের প্রস্তুতি আগেই নেওয়া হয়েছিল এবং আমাদের পরিকল্পনা হলো, উৎপাদন বা সেবায় যেন কোনো বিঘ্ন না ঘটে।’ নাতাঞ্জ ও ফর্দো ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র পুরোপুরি ধ্বংস না হলেও, স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা গেছে, স্থাপনাগুলোতে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে ১৩ জুন শুরু করা একাধিক হামলায় ইসরায়েল ইরানের বেশ কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় পরমাণু বিজ্ঞানীকেও হত্যা করেছে।

তবে, ডিআইএর প্রাথমিক প্রতিবেদনকে ট্রাম্প প্রশাসন গুরুত্ব না দেওয়ার চেষ্টা করলেও তাতে বলা হয়, এ হামলায় ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি কয়েক মাসের জন্য পিছিয়ে পড়েছে মাত্র। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ইরান আগেই ওই সব কেন্দ্র থেকে ইউরেনিয়াম সরিয়ে ফেলেছিল। একই দাবি করেছেন ইরানি কর্মকর্তারাও। জাতিসংঘের পারমাণবিক পর্যবেক্ষক সংস্থা আইএইএ অভিযোগ করেছে, ইরান ৪০০ কেজি ইউরেনিয়াম ৬০ শতাংশ পর্যন্ত মাত্রায় সমৃদ্ধ করেছে। এই মাত্রা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় ৯০ শতাংশ থেকে বেশি দূরে নয়।

গত বুধবার ট্রাম্পকে জিজ্ঞাসা করা হয়, তিনি কি মনে করেন, হামলার আগে ইরান ইউরেনিয়াম সরিয়ে নিয়েছিল? জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি, সবকিছু ওখানেই ছিল, ওরা সরাতে পারেনি।’ পরে আবার জিজ্ঞাসা করা হলে ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা এত দ্রুত ও জোরালোভাবে আঘাত করেছি যে সরানোর সময়ই পায়নি।’

ঘটনাস্থল পরিদর্শন করার সুযোগ না থাকায় কেউই এ বিষয়ে নিশ্চিতভাবে কিছু বলতে পারছে না। মার্কিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সির (সিআইএ)’ পরিচালক জন রযাটক্লিফ বুধবার এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘ইরানের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনা ধ্বংস হয়ে গেছে এবং সেগুলো পুনর্গঠনে কয়েক বছর লেগে যাবে।’

অথচ এর আগে মার্কিন প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থা ডিআইএর প্রাথমিক মূল্যায়নে ভিন্ন সময়রেখা তুলে ধরা হয়েছে।

তবে মনে রাখা জরুরি, ২০০৩ সালে ইরাকের নেতা সাদ্দাম হোসেনের কাছে গণবিধ্বংসী অস্ত্র আছে কি না, তা নিয়েও ডিআইএ ও সিআইএর মূল্যায়ন এক রকম ছিল না। ডিআইএ জাতিসংঘের সঙ্গে একমত হয়ে বলেছিল, পরিদর্শনের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে, সাদ্দামের কাছে এমন অস্ত্র নেই। অন্যদিকে, সিআইএ এমন গোয়েন্দা তথ্য দিয়েছিল যা তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের ইরাক আক্রমণের অবস্থানকে সমর্থন করেছিল। এ তথ্য পরে ভুল প্রমাণিত হয়। সেই সময় সিআইএকে ডিআইএর চেয়ে রাজনৈতিকভাবে আরও নমনীয় মনে হয়েছিল।

বেশির ভাগ পারমাণবিক স্থাপনাই অক্ষত রয়েছে এবং ইরান তার কর্মসূচি চালিয়ে যাবে। ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে চলমান বিতর্কের মধ্যে, ট্রাম্পের জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক তুলসি গ্যাবার্ডও প্রেসিডেন্টের দৃষ্টিভঙ্গিকে সমর্থন করেছেন।

ছবি

ইসরায়েল চেয়েছিল খামেনিকে হত্যা করতে, কিন্তু সুযোগ মেলেনি: প্রতিরক্ষামন্ত্রী কাৎজ

জঙ্গি সম্পৃক্ততার অভিযোগে মালয়েশিয়ায় ৩৬ বাংলাদেশি আটক

ছবি

‘সন্ত্রাসবাদ’ নিয়ে ঐকমত্যের অভাবে যৌথ বিবৃতিতে ভারতের অস্বীকৃতি

যুক্তরাষ্ট্রে সাবেক ইরানি সেনাসহ গ্রেপ্তার ১৩০

ছবি

মধ্যপ্রাচ্যে কীভাবে সংঘাত ছড়িয়ে দিচ্ছে ইসরায়েল

গাজায় মানবিক পরিস্থিতি ‘বিপর্যয়কর’: ইউরোপীয় কাউন্সিল প্রেসিডেন্ট

চীন-রাশিয়ার কাছ থেকে আধুনিক অস্ত্র কিনবে ইরান?

নেটোর প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় বৃদ্ধিতে তুরস্কের সমর্থন

যুদ্ধবিরতির পর ইরানে চলছে ব্যাপক ধরপাকড়

ছবি

এবার গাজায় যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা জোরদার

নিউইয়র্কে ইতিহাস গড়লেন জোহরান মামদানি

ইরানের ওপর তেল নিষেধাজ্ঞা শিথিলের ইঙ্গিত ট্রাম্পের

ছবি

ইরানে যে কারণে ব্যর্থ ইসরায়েল

ছবি

ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় ‘গুরুতর ক্ষতি’: সিআইএ পরিচালক

ছবি

ইরানকে সতর্ক করলেন ট্রাম্প, বললেন “আবার করলে অবশ্যই হামলা”

ছবি

চার দশক পর মহাকাশ অভিযানে ভারত

ছবি

পুরোপুরি ধ্বংস হয়নি ইরানি পরমাণু কর্মসূচি, কয়েক মাস পিছিয়েছে

গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে ইরানে তিনজনের ফাঁসি কার্যকর

ছবি

মধ্যপ্রাচ্য ও আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধে খরচ কত

গাজায় ইসরায়েলের ৭ সেনা সদস্য নিহত

আইএইএ’র সঙ্গে সম্পর্ক স্থগিতে সম্মতি ইরানের পার্লামেন্টের

ছবি

মোসাদের সঙ্গে যোগসাজশ: ইরানে আরও তিনজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর

ছবি

১২ দিনের সংঘাতে অন্তত ১৪ ইরানি বিজ্ঞানীকে হত্যার দাবি ইসরায়েলের

ছবি

ইরানে পরমাণু স্থাপনা ধ্বংস হয়নি—এমন খবর ‘ভুয়া’: দাবি ট্রাম্পের

ছবি

মার্কিন আক্রমণে ধ্বংস হয়নি ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা: গোয়েন্দা প্রতিবেদন

ছবি

আমরা প্রতিদ্বন্দ্বী নই বরং অংশীদার, ভারত প্রসঙ্গে চীন

রুশ হামলায় কিয়েভ অঞ্চলে নিহত ১০

ছবি

ক্ষয়ক্ষতির মূল্যায়ন চলছে, পরমাণু কর্মসূচি শিগগিরই চালু করবে ইরান

ত্রাণ নিতে গিয়ে ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে প্রাণ গেল ২১ ফিলিস্তিনির

ইসরায়েলের ক্রমবর্ধমান আগ্রাসনই আঞ্চলিক সঙ্কটের জন্য দায়ী: কাতার

ছবি

নজিরবিহীন লগ্নে বিশ্ব, সেটাও ছাপিয়ে যেতে পারে

ছবি

কংগ্রেস ছাড়াই ইরানে হামলা: প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা কি যথাযথভাবে প্রয়োগ হয়েছে?

ছবি

মধ্যপ্রাচ্যে যেসব দেশে আছে মার্কিন সামরিক ঘাঁটি

কাতারে মার্কিন ঘাঁটিতে ইরানের হামলার পর যুদ্ধ থামানোর বার্তা ট্রাম্পের

ছবি

কাতার-ইরাকের মার্কিন ঘাঁটিতে হামলার পর ভ্রমণ বিঘ্নিত, মাস্কাটে অবতরণ বিমানের

ছবি

ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি ঘোষণা ট্রাম্পের: কত ঘণ্টায় কীভাবে কার্যকর

tab

আন্তর্জাতিক

ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির ভবিষ্যৎ কী

বিদেশী সংবাদ মাধ্যম

ইরানের পারমাণবিক কেন্দ্রে কাজ করছেন দেশটির বিজ্ঞানীরা -এএফপি

শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫

ইরানে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের বিমান হামলা চালানোর ৭২ ঘণ্টা না যেতেই দেশটির ফর্দো ও নাতাঞ্জ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্রগুলোর ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়। দ্য নিউইয়র্ক টাইমস ও সিএনএন মার্কিন প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থার (ডিআইএ) একটি প্রাথমিক গোপন মূল্যায়ন প্রতিবেদন ফাঁস করে জানিয়েছে, হামলায় ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা মাঝারি থেকে গুরুতর হতে পারে। যদিও এটি প্রাথমিক মূল্যায়ন হওয়ায় প্রতিবেদনটিতে ‘কম আত্মবিশ্বাস’-এর কথা বলা হয়।

অন্যদিকে ট্রাম্প দাবি করেছেন, ওই কেন্দ্রগুলো ‘সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস’ করে দেওয়া হয়েছে। এ মতভেদ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এর কেন্দ্রে রয়েছে ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির উপযোগী মাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার সক্ষমতা অন্তত কয়েক বছরের জন্য হলেও যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল নষ্ট করতে পেরেছে কি না, সেই বিষয়টি।

ইসরায়েল বহু বছর ধরে প্রমাণ ছাড়াই দাবি করে আসছে, ইরান পারমাণবিক বোমা তৈরির পরিকল্পনা করছে। কিন্তু ইরান বরাবরই বলে এসেছে, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি পুরোপুরি শান্তিপূর্ণ ও বেসামরিক উদ্দেশ্যে পরিচালিত। যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যেও এ বিষয়ে মতভেদ রয়েছে। চলতি বছর মার্চে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা জানায়, তেহরান পারমাণবিক বোমা বানাচ্ছে না। তবে জুনের শুরুতে ট্রাম্প দাবি করেন, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির খুব কাছাকাছি পৌঁছে গেছে।

তবে, যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় ক্ষয়ক্ষতি এবং ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে চায় কি না, সেসব নিয়ে সাংঘর্ষিক দাবি ও মূল্যায়নের মধ্যেও একটি বিষয় স্পষ্ট—তেহরান বলছে, তারা পারমাণবিক কর্মসূচি থেকে পিছু হটবে না। তাহলে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির ভবিষ্যৎ কী? এ পর্যন্ত কতটা ক্ষতি হয়েছে? যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল কি ইরানকে আবারও কর্মসূচিটি শুরু করতে দেবে? আর ২০১৫ সালের যে চুক্তিটি ট্রাম্প বাতিল করার আগপর্যন্ত কার্যকর ছিল, সেটি কি পুনরুজ্জীবিত হতে পারে? উঠে আসছে এমন নানা প্রশ্ন।

ইরানে মার্কিন হামলার পর প্রথমবার প্রকাশ্যে মুখ খুলেছেন দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি। তিনি বলেছেন, হামলায় ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ‘গুরুতর কিছু হয়নি’। তেহরান থেকে আল–জাজিরার সংবাদদাতা রেসুল সেরদার জানান, খামেনি বলেন, ‘বেশির ভাগ পারমাণবিক স্থাপনাই অক্ষত রয়েছে এবং ইরান তার কর্মসূচি চালিয়ে যাবে।’ যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় ক্ষয়ক্ষতি এবং ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে চায় কি না, তা নিয়ে সাংঘর্ষিক দাবি ও মূল্যায়নের মধ্যেও একটি বিষয় স্পষ্ট তেহরান বলছে, তারা পারমাণবিক কর্মসূচি থেকে পিছু হটবে না।

ইরানের পারমাণবিক শক্তি সংস্থার প্রধান মোহাম্মদ এসলামি গত মঙ্গলবার বলেন, ‘পারমাণবিক কর্মসূচি) পুনরুদ্ধারের প্রস্তুতি আগেই নেওয়া হয়েছিল এবং আমাদের পরিকল্পনা হলো, উৎপাদন বা সেবায় যেন কোনো বিঘ্ন না ঘটে।’ নাতাঞ্জ ও ফর্দো ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র পুরোপুরি ধ্বংস না হলেও, স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা গেছে, স্থাপনাগুলোতে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে ১৩ জুন শুরু করা একাধিক হামলায় ইসরায়েল ইরানের বেশ কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় পরমাণু বিজ্ঞানীকেও হত্যা করেছে।

তবে, ডিআইএর প্রাথমিক প্রতিবেদনকে ট্রাম্প প্রশাসন গুরুত্ব না দেওয়ার চেষ্টা করলেও তাতে বলা হয়, এ হামলায় ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি কয়েক মাসের জন্য পিছিয়ে পড়েছে মাত্র। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ইরান আগেই ওই সব কেন্দ্র থেকে ইউরেনিয়াম সরিয়ে ফেলেছিল। একই দাবি করেছেন ইরানি কর্মকর্তারাও। জাতিসংঘের পারমাণবিক পর্যবেক্ষক সংস্থা আইএইএ অভিযোগ করেছে, ইরান ৪০০ কেজি ইউরেনিয়াম ৬০ শতাংশ পর্যন্ত মাত্রায় সমৃদ্ধ করেছে। এই মাত্রা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় ৯০ শতাংশ থেকে বেশি দূরে নয়।

গত বুধবার ট্রাম্পকে জিজ্ঞাসা করা হয়, তিনি কি মনে করেন, হামলার আগে ইরান ইউরেনিয়াম সরিয়ে নিয়েছিল? জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি, সবকিছু ওখানেই ছিল, ওরা সরাতে পারেনি।’ পরে আবার জিজ্ঞাসা করা হলে ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা এত দ্রুত ও জোরালোভাবে আঘাত করেছি যে সরানোর সময়ই পায়নি।’

ঘটনাস্থল পরিদর্শন করার সুযোগ না থাকায় কেউই এ বিষয়ে নিশ্চিতভাবে কিছু বলতে পারছে না। মার্কিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সির (সিআইএ)’ পরিচালক জন রযাটক্লিফ বুধবার এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘ইরানের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনা ধ্বংস হয়ে গেছে এবং সেগুলো পুনর্গঠনে কয়েক বছর লেগে যাবে।’

অথচ এর আগে মার্কিন প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থা ডিআইএর প্রাথমিক মূল্যায়নে ভিন্ন সময়রেখা তুলে ধরা হয়েছে।

তবে মনে রাখা জরুরি, ২০০৩ সালে ইরাকের নেতা সাদ্দাম হোসেনের কাছে গণবিধ্বংসী অস্ত্র আছে কি না, তা নিয়েও ডিআইএ ও সিআইএর মূল্যায়ন এক রকম ছিল না। ডিআইএ জাতিসংঘের সঙ্গে একমত হয়ে বলেছিল, পরিদর্শনের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে, সাদ্দামের কাছে এমন অস্ত্র নেই। অন্যদিকে, সিআইএ এমন গোয়েন্দা তথ্য দিয়েছিল যা তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের ইরাক আক্রমণের অবস্থানকে সমর্থন করেছিল। এ তথ্য পরে ভুল প্রমাণিত হয়। সেই সময় সিআইএকে ডিআইএর চেয়ে রাজনৈতিকভাবে আরও নমনীয় মনে হয়েছিল।

বেশির ভাগ পারমাণবিক স্থাপনাই অক্ষত রয়েছে এবং ইরান তার কর্মসূচি চালিয়ে যাবে। ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে চলমান বিতর্কের মধ্যে, ট্রাম্পের জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক তুলসি গ্যাবার্ডও প্রেসিডেন্টের দৃষ্টিভঙ্গিকে সমর্থন করেছেন।

back to top