alt

আন্তর্জাতিক

থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া পুরোনো বিরোধ নতুন সংঘাতে রূপ নিল কেন

বিদেশী সংবাদ মাধ্যম : শুক্রবার, ২৫ জুলাই ২০২৫

যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছেন কম্বোডিয়ার সৈন্যরা -এএফপি

থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার শতবর্ষ পুরোনো সীমান্ত বিরোধ আবারও সহিংস রূপ নিয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) কম্বোডিয়ার বিরুদ্ধে রকেট ও কামান হামলার অভিযোগ করেছে থাইল্যান্ড। এরপর কম্বোডিয়ার সামরিক স্থাপনাগুলো লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালায় থাইল্যান্ড।

থাইল্যান্ডের সামরিক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, উভয় দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত ১২ জন নিহত হয়েছে। এর মধ্যে থাইল্যান্ডের ১১ জন বেসামরিক নাগরিক, যাদের মধ্যে আট বছর বয়সী এক শিশু ও ১৫ বছর বয়সী এক কিশোরও রয়েছে। এ ছাড়া একজন থাই সেনাও নিহত হয়েছেন। কম্বোডিয়ার হতাহতের সংখ্যা এখনো নিশ্চিত নয়। উভয় দেশই একে অপরের বিরুদ্ধে সংঘর্ষ শুরু করার অভিযোগ করেছে।

থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যকার এই সীমান্ত বিরোধের সূচনা হয় উনবিংশ শতাব্দীতে, যখন ফ্রান্স উপনিবেশ হিসেবে কম্বোডিয়া শাসন করছিল। ঔপনিবেশিক মানচিত্র নিয়ে তৈরি হওয়া বিরোধিতার কারণে ৮১৭ কিলোমিটার সীমান্তজুড়ে বারবার উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। আনুষ্ঠানিকভাবে এই বিরোধ তীব্র হয় ২০০৮ সালে। কম্বোডিয়া বিতর্কিত এলাকার ১১ শতকের একটি মন্দিরকে ইউনেসকো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে নিবন্ধন করার চেষ্টা করলে থাইল্যান্ডের তীব্র প্রতিবাদের মুখে পড়ে। এর পর থেকে দুই দেশের মধ্যে বিচ্ছিন্নভাবে অনেকবার সংঘর্ষ হয়েছে, যেখানে উভয় পক্ষের সৈনিক ও বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে।

সর্বশেষ সংঘর্ষের সূচনা হয় ২০২৪ সালের মে মাসে। সীমান্তের কাছাকাছি একটি বিতর্কিত অঞ্চলে সেনাদের মধ্যে গোলাগুলি হলে একজন কম্বোডিয়ার সৈনিক নিহত হন। এরপর শুরু হয় পাল্টাপাল্টি ব্যবস্থা থাইল্যান্ড সীমান্তে কড়াকড়ি আরোপ করে, আর কম্বোডিয়া থাই চলচ্চিত্র, ফলমূল আমদানি নিষিদ্ধ করে এবং থাইল্যান্ড থেকে ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ কমিয়ে দেয়। বুধবার সীমান্তে টহল চলাকালে ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণে পাঁচজন থাই সেনা আহত হন। থাই সরকারের দাবি, এগুলো সাম্প্রতিক সময়ে পুঁতে রাখা হয়েছিল। এর পরপরই থাইল্যান্ড উত্তর-পূর্ব সীমান্ত বন্ধ করে দেয় এবং কম্বোডিয়ার রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কার করে। কম্বোডিয়া এর প্রতিবাদে কূটনৈতিক সম্পর্ক সর্বনিম্ন পর্যায়ে নামিয়ে আনে ও ব্যাংকক থেকে নিজ দেশের সব কর্মকর্তা ফিরিয়ে নেয়।

দুই দেশেই রয়েছে রাজনৈতিক অস্থিরতা : প্রায় চার দশক ধরে কম্বোডিয়া শাসনকারী স্বৈরশাসক হুন সেন ২০২৩ সালে ক্ষমতা ছেড়ে দেন তার ছেলে হুন মানেতের কাছে। তবে হুন সেন এখনো সিনেটের সভাপতি এবং দেশের রাজনীতিতে যথেষ্ট প্রভাবশালী। বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, পিতার ছায়া থেকে বের হতে হুন মানেত জাতীয়তাবাদী আবেগ উসকে দিচ্ছেন।

এদিকে থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রা সাময়িকভাবে দায়িত্ব থেকে বরখাস্ত। তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে সীমান্ত সংকটে সমাধানে ধীর প্রতিক্রিয়ার অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি ফাঁস হওয়া একটি ফোনালাপে তাকে কম্বোডিয়ার সাবেক নেতা হুন সেনকে ‘আংকেল’ বলে সম্বোধন করতে শোনা যায় এবং তিনি বলেন, ‘আপনার যা দরকার, আমি দেখে নেব।’

পেতংতার্ন এই ফোনালাপে কম্বোডিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী হুন সেনের সঙ্গে সীমান্ত সংকট মোকাবিলায় আপসমূলক প্রতিশ্রুতি দেন, যা তার পদে থাকার উপযুক্ততাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। এ ঘটনার পর দেশজুড়ে বিক্ষোভ শুরু হয় এবং তার বরখাস্তের দাবি ওঠে। এই মন্তব্য থাই সেনাবাহিনীর কাছেও অসম্মানজনক হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।

সমাধানের সম্ভাবনা কোথায় : কম্বোডিয়া ইতিমধ্যেই আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের (আইসিজি) দ্বারস্থ হয়েছে, তবে থাইল্যান্ড সেই আদালতের এখতিয়ার মানে না। তাই এটি কার্যকর সমাধান হবে না বলেই আশঙ্কা। মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম দুই দেশকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। তবে আসিয়ান সাধারণত অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে না।

বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, এই দুই দেশের সংঘাতে চীন একমাত্র মধ্যস্থতাকারী দেশ হতে পারে। কারণ, উভয় দেশের ওপরই চীনের প্রভাব রয়েছে। তবে চীন সাধারণত কম্বোডিয়ার প্রতি বেশি অনুকূল, যা থাইল্যান্ডসহ অঞ্চলের অন্য দেশগুলোর মধ্যে উদ্বেগ তৈরি করতে পারে।

থাইল্যান্ডের অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী ফুমথাম ওয়েচায়াচাই আজ বলেছেন, যুদ্ধ ঘোষণা করা হয়নি, সংঘর্ষ এখনো বিস্তৃত নয়। আগে লড়াই বন্ধ হোক, তারপর সংলাপ হতে পারে।

এদিকে কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন মানেত জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদকে জরুরি বৈঠক ডাকতে অনুরোধ করেছেন এবং থাইল্যান্ডের বিরুদ্ধে ‘অযৌক্তিক সামরিক আগ্রাসন’ চালানোর অভিযোগ তুলেছেন।

উল্লেখ্য, থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার সীমান্তসংক্রান্ত বিরোধের কেন্দ্রে রয়েছে প্রাচীন প্রেহা ভিহিয়ার মন্দির এবং এর আশপাশের একটি সীমান্ত অঞ্চল। দুই দেশই এটি নিজেদের ভূখণ্ড বলে দাবি করে। ১৯৬২ সালে আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) এই বিতর্কের নিষ্পত্তি করতে রায় দেন যে, ঐতিহাসিক প্রমাণ ও মানচিত্রের ভিত্তিতে প্রেহা ভিহিয়ার মন্দিরটি কম্বোডিয়ার ভূখণ্ডে অবস্থিত। এই রায় কম্বোডিয়া স্বাগত জানালেও থাইল্যান্ডে তা ব্যাপক অসন্তোষ ও রাজনৈতিক বিতর্কের জন্ম দেয়।

এর প্রায় অর্ধশতাব্দী পর, ২০১১ সালে এই সীমান্ত এলাকায় দুই দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে বেশ কয়েকবার সংঘর্ষ হয়, ঘটে প্রাণহানিও। পরে ২০১৩ সালে জাতিসংঘসংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক বিচার আদালত আবারও স্পষ্ট করে জানিয়ে দেন, শুধু মন্দিরটিই নয়, এর চারপাশের বিতর্কিত ভূখণ্ড ও কম্বোডিয়ার। তবে দ্বন্দ্বের নিষ্পত্তি এখনো হয়নি।

ছবি

থাই-কম্বোডিয়া সংঘাত: কম্বোডিয়ার ‘অবিলম্বে অস্ত্রবিরতির’ আহ্বান

ছবি

গাজা খাদ্য সংকট, অনাহারে প্রতি তিনজনের একজন: বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি

ছবি

‘বন্ধু’ এপস্টিনকে শুভেচ্ছা জানিয়ে চিঠি দিয়েছিলেন ট্রাম্প-ক্লিনটন

ছবি

সীমান্তে গোলাবর্ষণ ও ভারী অস্ত্রের সংঘাতে উত্তপ্ত থাই-কম্বোডিয়া সম্পর্ক

অনাহারের ঝুঁকিতে গাজার সাংবাদিকরা, সংবাদ সংস্থাগুলোর সতর্কতা

ছবি

ম্যাখোঁর সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ ইসরায়েল-যুক্তরাষ্ট্র

প্রয়োজনে আবার ভাষা আন্দোলন হবে, মাতৃভাষাকে রক্ষা করতেই হবে : মমতা

ছবি

খেতে না পেয়ে অজ্ঞান হচ্ছেন গাজাবাসী

বিশ্বজুড়ে বড় ধরনের ইন্টারনেট বিভ্রাট, আড়াই ঘণ্টা অচল স্টারলিংক

যুদ্ধে নজরদারি ও তথ্য সংগ্রহে ‘সাইবার তেলাপোকা’ উদ্ভাবন জার্মানির

ছবি

শান্তি আলোচনা শেষ হতেই রাশিয়া-ইউক্রেন পাল্টাপাল্টি ড্রোন হামলা

৪৯ আরোহীসহ রুশ বিমান বিধ্বস্ত, সব যাত্রী নিহত!

ছবি

কেন সংঘর্ষে জড়িয়েছে থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া?

শুল্ক হার ১৫ শতাংশের নিচে নয়, ঘোষণা ট্রাম্পের

ছবি

গাজায় অন্তহীন দুঃস্বপ্ন, ক্ষুধায় পথে পথে পড়ে আছে মানুষ

ছবি

থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া সীমান্তে সংঘর্ষ, কূটনৈতিক সম্পর্ক অবনমিত

ছবি

জলবায়ু পরিবর্তনে দায়ী দেশের বিরুদ্ধে মামলার সুযোগ দিলো জাতিসংঘ আদালত

ছবি

ভারতে আল-কায়েদার চার সদস্য গ্রেপ্তার, ফোনে ‘অটো-ডিলিট অ্যাপ’ ব্যবহার

আইন ভাঙলে বাতিল হবে ভিসা, কড়া হুঁশিয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের

ছবি

পশ্চিমাদের ঠেকাতে ত্রিপক্ষীয় ঐক্য, তেহরানে রাশিয়া-চীন-ইরান বৈঠক

যুদ্ধবিরতি টেকসই নয়, ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধের জন্য ইরান প্রস্তুত : পেজেশকিয়ান

ছবি

যুক্তরাষ্ট্র-জাপান ‘বিশাল’ বাণিজ্য চুক্তির ঘোষণা ট্রাম্পের

ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ এখনো শেষ হয়নি : ইসরায়েলি সেনাপ্রধান

ছবি

গাজায় নিরুপায় মায়ের চোখের সামনেই মরছে ক্ষুধার্ত শিশু

ছবি

ট্রাম্পের তহবিল বন্ধ, অর্ধসমাপ্ত পানির প্রকল্পে ঝুঁকিতে লাখো মানুষ

পারমাণবিক কর্মসূচি পরিত্যাগের পরিকল্পনা নেই : ইরান

ছবি

ইসরায়েল দ্বিতীয়বারের মতো ইয়েমেনের হুথি-নিয়ন্ত্রিত হুদাইদা বন্দরেবিমান হামলা

বুধবার তুরস্কে শান্তি আলোচনায় বসবে ইউক্রেন ও রাশিয়া : জেলেনস্কি

ছবি

গাজায় ‘এখনই যুদ্ধ থামাতে’ যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সসহ ২৮ দেশের আহ্বান

নির্বাচনে হেরেও ক্ষমতা ছাড়তে নারাজ জাপানের প্রধানমন্ত্রী

স্থল ও আকাশপথে আবারও হামলা শুরু করেছে ইসরায়েল

ছবি

পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানির সঙ্গে আলোচনায় বসবে ইরান

মুম্বাইয়ে ট্রেন বিস্ফোরণ মামলা: ১৯ বছর পর সাজাপ্রাপ্ত সবাই খালাস

ছবি

নারী-পুরুষকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার ১১

গাজায় ত্রাণপ্রত্যাশী ৯৩ জনকে গুলি করে হত্যা, যুদ্ধের নৃশংসতার নিন্দা জানালেন পোপ

ছবি

ইসরায়েলি হামলার ধাক্কা সামলে আকাশ প্রতিরক্ষা মজবুত করল তেহরান

tab

আন্তর্জাতিক

থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া পুরোনো বিরোধ নতুন সংঘাতে রূপ নিল কেন

বিদেশী সংবাদ মাধ্যম

যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছেন কম্বোডিয়ার সৈন্যরা -এএফপি

শুক্রবার, ২৫ জুলাই ২০২৫

থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার শতবর্ষ পুরোনো সীমান্ত বিরোধ আবারও সহিংস রূপ নিয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) কম্বোডিয়ার বিরুদ্ধে রকেট ও কামান হামলার অভিযোগ করেছে থাইল্যান্ড। এরপর কম্বোডিয়ার সামরিক স্থাপনাগুলো লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালায় থাইল্যান্ড।

থাইল্যান্ডের সামরিক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, উভয় দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত ১২ জন নিহত হয়েছে। এর মধ্যে থাইল্যান্ডের ১১ জন বেসামরিক নাগরিক, যাদের মধ্যে আট বছর বয়সী এক শিশু ও ১৫ বছর বয়সী এক কিশোরও রয়েছে। এ ছাড়া একজন থাই সেনাও নিহত হয়েছেন। কম্বোডিয়ার হতাহতের সংখ্যা এখনো নিশ্চিত নয়। উভয় দেশই একে অপরের বিরুদ্ধে সংঘর্ষ শুরু করার অভিযোগ করেছে।

থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যকার এই সীমান্ত বিরোধের সূচনা হয় উনবিংশ শতাব্দীতে, যখন ফ্রান্স উপনিবেশ হিসেবে কম্বোডিয়া শাসন করছিল। ঔপনিবেশিক মানচিত্র নিয়ে তৈরি হওয়া বিরোধিতার কারণে ৮১৭ কিলোমিটার সীমান্তজুড়ে বারবার উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। আনুষ্ঠানিকভাবে এই বিরোধ তীব্র হয় ২০০৮ সালে। কম্বোডিয়া বিতর্কিত এলাকার ১১ শতকের একটি মন্দিরকে ইউনেসকো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে নিবন্ধন করার চেষ্টা করলে থাইল্যান্ডের তীব্র প্রতিবাদের মুখে পড়ে। এর পর থেকে দুই দেশের মধ্যে বিচ্ছিন্নভাবে অনেকবার সংঘর্ষ হয়েছে, যেখানে উভয় পক্ষের সৈনিক ও বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে।

সর্বশেষ সংঘর্ষের সূচনা হয় ২০২৪ সালের মে মাসে। সীমান্তের কাছাকাছি একটি বিতর্কিত অঞ্চলে সেনাদের মধ্যে গোলাগুলি হলে একজন কম্বোডিয়ার সৈনিক নিহত হন। এরপর শুরু হয় পাল্টাপাল্টি ব্যবস্থা থাইল্যান্ড সীমান্তে কড়াকড়ি আরোপ করে, আর কম্বোডিয়া থাই চলচ্চিত্র, ফলমূল আমদানি নিষিদ্ধ করে এবং থাইল্যান্ড থেকে ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ কমিয়ে দেয়। বুধবার সীমান্তে টহল চলাকালে ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণে পাঁচজন থাই সেনা আহত হন। থাই সরকারের দাবি, এগুলো সাম্প্রতিক সময়ে পুঁতে রাখা হয়েছিল। এর পরপরই থাইল্যান্ড উত্তর-পূর্ব সীমান্ত বন্ধ করে দেয় এবং কম্বোডিয়ার রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কার করে। কম্বোডিয়া এর প্রতিবাদে কূটনৈতিক সম্পর্ক সর্বনিম্ন পর্যায়ে নামিয়ে আনে ও ব্যাংকক থেকে নিজ দেশের সব কর্মকর্তা ফিরিয়ে নেয়।

দুই দেশেই রয়েছে রাজনৈতিক অস্থিরতা : প্রায় চার দশক ধরে কম্বোডিয়া শাসনকারী স্বৈরশাসক হুন সেন ২০২৩ সালে ক্ষমতা ছেড়ে দেন তার ছেলে হুন মানেতের কাছে। তবে হুন সেন এখনো সিনেটের সভাপতি এবং দেশের রাজনীতিতে যথেষ্ট প্রভাবশালী। বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, পিতার ছায়া থেকে বের হতে হুন মানেত জাতীয়তাবাদী আবেগ উসকে দিচ্ছেন।

এদিকে থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রা সাময়িকভাবে দায়িত্ব থেকে বরখাস্ত। তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে সীমান্ত সংকটে সমাধানে ধীর প্রতিক্রিয়ার অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি ফাঁস হওয়া একটি ফোনালাপে তাকে কম্বোডিয়ার সাবেক নেতা হুন সেনকে ‘আংকেল’ বলে সম্বোধন করতে শোনা যায় এবং তিনি বলেন, ‘আপনার যা দরকার, আমি দেখে নেব।’

পেতংতার্ন এই ফোনালাপে কম্বোডিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী হুন সেনের সঙ্গে সীমান্ত সংকট মোকাবিলায় আপসমূলক প্রতিশ্রুতি দেন, যা তার পদে থাকার উপযুক্ততাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। এ ঘটনার পর দেশজুড়ে বিক্ষোভ শুরু হয় এবং তার বরখাস্তের দাবি ওঠে। এই মন্তব্য থাই সেনাবাহিনীর কাছেও অসম্মানজনক হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।

সমাধানের সম্ভাবনা কোথায় : কম্বোডিয়া ইতিমধ্যেই আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের (আইসিজি) দ্বারস্থ হয়েছে, তবে থাইল্যান্ড সেই আদালতের এখতিয়ার মানে না। তাই এটি কার্যকর সমাধান হবে না বলেই আশঙ্কা। মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম দুই দেশকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। তবে আসিয়ান সাধারণত অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে না।

বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, এই দুই দেশের সংঘাতে চীন একমাত্র মধ্যস্থতাকারী দেশ হতে পারে। কারণ, উভয় দেশের ওপরই চীনের প্রভাব রয়েছে। তবে চীন সাধারণত কম্বোডিয়ার প্রতি বেশি অনুকূল, যা থাইল্যান্ডসহ অঞ্চলের অন্য দেশগুলোর মধ্যে উদ্বেগ তৈরি করতে পারে।

থাইল্যান্ডের অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী ফুমথাম ওয়েচায়াচাই আজ বলেছেন, যুদ্ধ ঘোষণা করা হয়নি, সংঘর্ষ এখনো বিস্তৃত নয়। আগে লড়াই বন্ধ হোক, তারপর সংলাপ হতে পারে।

এদিকে কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন মানেত জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদকে জরুরি বৈঠক ডাকতে অনুরোধ করেছেন এবং থাইল্যান্ডের বিরুদ্ধে ‘অযৌক্তিক সামরিক আগ্রাসন’ চালানোর অভিযোগ তুলেছেন।

উল্লেখ্য, থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার সীমান্তসংক্রান্ত বিরোধের কেন্দ্রে রয়েছে প্রাচীন প্রেহা ভিহিয়ার মন্দির এবং এর আশপাশের একটি সীমান্ত অঞ্চল। দুই দেশই এটি নিজেদের ভূখণ্ড বলে দাবি করে। ১৯৬২ সালে আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) এই বিতর্কের নিষ্পত্তি করতে রায় দেন যে, ঐতিহাসিক প্রমাণ ও মানচিত্রের ভিত্তিতে প্রেহা ভিহিয়ার মন্দিরটি কম্বোডিয়ার ভূখণ্ডে অবস্থিত। এই রায় কম্বোডিয়া স্বাগত জানালেও থাইল্যান্ডে তা ব্যাপক অসন্তোষ ও রাজনৈতিক বিতর্কের জন্ম দেয়।

এর প্রায় অর্ধশতাব্দী পর, ২০১১ সালে এই সীমান্ত এলাকায় দুই দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে বেশ কয়েকবার সংঘর্ষ হয়, ঘটে প্রাণহানিও। পরে ২০১৩ সালে জাতিসংঘসংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক বিচার আদালত আবারও স্পষ্ট করে জানিয়ে দেন, শুধু মন্দিরটিই নয়, এর চারপাশের বিতর্কিত ভূখণ্ড ও কম্বোডিয়ার। তবে দ্বন্দ্বের নিষ্পত্তি এখনো হয়নি।

back to top