জলবায়ু পরিবর্তনের দায়ে একটি দেশের বিরুদ্ধে আরেক দেশ মামলা করতে পারবে—এমন ঐতিহাসিক রায় দিয়েছে জাতিসংঘের সর্বোচ্চ বিচারিক প্রতিষ্ঠান, ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস (আইসিজে)। এই রায়ের মধ্য দিয়ে জলবায়ু ইস্যুতে আন্তর্জাতিক আইন প্রয়োগের নতুন দ্বার খুলে গেল বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বুধবার দেওয়া রায়ে আইসিজে জানিয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে যে ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে, তার জন্য দায়ী দেশগুলোর বিরুদ্ধে মামলা করা বৈধ। এমনকি যুগ যুগ ধরে যেসব দেশ উচ্চমাত্রায় কার্বন নিঃসরণ করে আসছে, তাদের বিরুদ্ধেও অভিযোগ আনা যেতে পারে। যদিও আদালত এটাও বলেছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কোন অংশের জন্য কে দায়ী, তা নির্ধারণ করা জটিল হতে পারে।
আইসিজের এই রায়ের কোনো বাধ্যতামূলক প্রয়োগ না থাকলেও এর আন্তর্জাতিক প্রভাব বড় পরিসরে ছড়িয়ে পড়বে বলেই ধারণা। বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো এটি একটি বিজয় হিসেবে দেখছে। যারা দীর্ঘদিন ধরেই জলবায়ু সংকট সমাধানে আন্তর্জাতিক পদক্ষেপে অগ্রগতি না দেখে হতাশায় ছিল, তারা এই রায়কে নতুন আশার আলো হিসেবে দেখছেন।
এই উদ্যোগটির শুরু হয়েছিল ২০১৯ সালে, প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জের একদল তরুণ আইন শিক্ষার্থীর হাতে। তারাই প্রথম আইসিজেতে জলবায়ু ইস্যুতে মামলা করার ধারণা সামনে আনেন। এই প্রেক্ষাপটে ভানুয়াতুর পরিবেশকর্মী ফ্লোরা ভ্যানো রায়ের প্রতিক্রিয়ায় বলেন, “আজ রাতে শান্তিতে ঘুমাতে পারব। আইসিজে আমাদের ভোগান্তি, সহনশীলতা ও ভবিষ্যতের অধিকারকে স্বীকৃতি দিয়েছে।”
ভানুয়াতু জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর একটি। ফ্লোরা ভ্যানো বলেন, “এই রায় শুধু আমাদের জন্য নয়, বরং পৃথিবীর প্রতিটি ক্ষতিগ্রস্ত গোষ্ঠীর জন্য একটি জয়।”
বিশ্বের সর্বোচ্চ আদালত হিসেবে আইসিজের বিচারিক এখতিয়ার সারা পৃথিবীজুড়ে বিস্তৃত। জলবায়ু ইস্যুতে দীর্ঘদিন ধরে সোচ্চার আইনজীবীরা বলছেন, বহু বছর ধরে জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার করে যারা বৈশ্বিক উষ্ণতা বাড়িয়েছে, তাদের কাছ থেকে এখন ক্ষতিপূরণ আদায়ের পথ অনেকটা সহজ হলো।
বেশ কয়েকটি দরিদ্র ও জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ দেশ এই মামলায় সমর্থন জানিয়েছে। তাদের অভিযোগ, ধনী রাষ্ট্রগুলো জলবায়ু বিষয়ে দেওয়া প্রতিশ্রুতি যথাযথভাবে পালন করছে না। যদিও উন্নত দেশগুলো, যেমন যুক্তরাজ্য, দাবি করছে—২০১৫ সালের প্যারিস চুক্তি ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সমঝোতাই যথেষ্ট, নতুন করে আইনি বাধ্যবাধকতার প্রয়োজন নেই। কিন্তু আইসিজে বুধবারের রায়ে এই যুক্তি খারিজ করে দিয়েছে।
রায়ে বিচারক আওয়াসা ওয়াইউজি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকাতে ধনী দেশগুলো যদি যথাযথ পরিকল্পনা গ্রহণ না করে, তাহলে সেটিকে প্যারিস চুক্তির লঙ্ঘন হিসেবে বিবেচনা করা হবে।
তিনি আরও বলেন, এমনকি যারা প্যারিস চুক্তিতে স্বাক্ষর করেনি, বা যুক্তরাষ্ট্রের মতো যারা তা থেকে সরে যেতে চায়, তাদেরও পরিবেশ রক্ষায় ভূমিকা রাখতে হবে।
এই রায় পরামর্শমূলক হলেও অতীতে দেখা গেছে, অনেক দেশ আইসিজের এমন রায় বাস্তবায়ন করেছে। যেমন—গত বছর যুক্তরাজ্য আইসিজের রায় মেনে মরিশাসকে দ্বীপপুঞ্জ ফিরিয়ে দেয়।
‘সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল এনভায়রনমেন্টাল ল’র (সিআইইএল) জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়ী চৌধুরী বলেন, “এই রায় ঐতিহাসিক। প্রচলিত ধারা থেকে বেরিয়ে এসে আন্তর্জাতিক বিচার আদালত আজ একটি যুগান্তকারী রায় দিয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে যারা ক্ষতিগ্রস্ত, তাদের ক্ষতিপূরণসহ প্রতিকার পাওয়ার অধিকার রয়েছে—আদালত এটি স্পষ্ট করে বলে দিয়েছে।”
বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই ২০২৫
জলবায়ু পরিবর্তনের দায়ে একটি দেশের বিরুদ্ধে আরেক দেশ মামলা করতে পারবে—এমন ঐতিহাসিক রায় দিয়েছে জাতিসংঘের সর্বোচ্চ বিচারিক প্রতিষ্ঠান, ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস (আইসিজে)। এই রায়ের মধ্য দিয়ে জলবায়ু ইস্যুতে আন্তর্জাতিক আইন প্রয়োগের নতুন দ্বার খুলে গেল বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বুধবার দেওয়া রায়ে আইসিজে জানিয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে যে ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে, তার জন্য দায়ী দেশগুলোর বিরুদ্ধে মামলা করা বৈধ। এমনকি যুগ যুগ ধরে যেসব দেশ উচ্চমাত্রায় কার্বন নিঃসরণ করে আসছে, তাদের বিরুদ্ধেও অভিযোগ আনা যেতে পারে। যদিও আদালত এটাও বলেছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কোন অংশের জন্য কে দায়ী, তা নির্ধারণ করা জটিল হতে পারে।
আইসিজের এই রায়ের কোনো বাধ্যতামূলক প্রয়োগ না থাকলেও এর আন্তর্জাতিক প্রভাব বড় পরিসরে ছড়িয়ে পড়বে বলেই ধারণা। বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো এটি একটি বিজয় হিসেবে দেখছে। যারা দীর্ঘদিন ধরেই জলবায়ু সংকট সমাধানে আন্তর্জাতিক পদক্ষেপে অগ্রগতি না দেখে হতাশায় ছিল, তারা এই রায়কে নতুন আশার আলো হিসেবে দেখছেন।
এই উদ্যোগটির শুরু হয়েছিল ২০১৯ সালে, প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জের একদল তরুণ আইন শিক্ষার্থীর হাতে। তারাই প্রথম আইসিজেতে জলবায়ু ইস্যুতে মামলা করার ধারণা সামনে আনেন। এই প্রেক্ষাপটে ভানুয়াতুর পরিবেশকর্মী ফ্লোরা ভ্যানো রায়ের প্রতিক্রিয়ায় বলেন, “আজ রাতে শান্তিতে ঘুমাতে পারব। আইসিজে আমাদের ভোগান্তি, সহনশীলতা ও ভবিষ্যতের অধিকারকে স্বীকৃতি দিয়েছে।”
ভানুয়াতু জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর একটি। ফ্লোরা ভ্যানো বলেন, “এই রায় শুধু আমাদের জন্য নয়, বরং পৃথিবীর প্রতিটি ক্ষতিগ্রস্ত গোষ্ঠীর জন্য একটি জয়।”
বিশ্বের সর্বোচ্চ আদালত হিসেবে আইসিজের বিচারিক এখতিয়ার সারা পৃথিবীজুড়ে বিস্তৃত। জলবায়ু ইস্যুতে দীর্ঘদিন ধরে সোচ্চার আইনজীবীরা বলছেন, বহু বছর ধরে জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার করে যারা বৈশ্বিক উষ্ণতা বাড়িয়েছে, তাদের কাছ থেকে এখন ক্ষতিপূরণ আদায়ের পথ অনেকটা সহজ হলো।
বেশ কয়েকটি দরিদ্র ও জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ দেশ এই মামলায় সমর্থন জানিয়েছে। তাদের অভিযোগ, ধনী রাষ্ট্রগুলো জলবায়ু বিষয়ে দেওয়া প্রতিশ্রুতি যথাযথভাবে পালন করছে না। যদিও উন্নত দেশগুলো, যেমন যুক্তরাজ্য, দাবি করছে—২০১৫ সালের প্যারিস চুক্তি ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সমঝোতাই যথেষ্ট, নতুন করে আইনি বাধ্যবাধকতার প্রয়োজন নেই। কিন্তু আইসিজে বুধবারের রায়ে এই যুক্তি খারিজ করে দিয়েছে।
রায়ে বিচারক আওয়াসা ওয়াইউজি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকাতে ধনী দেশগুলো যদি যথাযথ পরিকল্পনা গ্রহণ না করে, তাহলে সেটিকে প্যারিস চুক্তির লঙ্ঘন হিসেবে বিবেচনা করা হবে।
তিনি আরও বলেন, এমনকি যারা প্যারিস চুক্তিতে স্বাক্ষর করেনি, বা যুক্তরাষ্ট্রের মতো যারা তা থেকে সরে যেতে চায়, তাদেরও পরিবেশ রক্ষায় ভূমিকা রাখতে হবে।
এই রায় পরামর্শমূলক হলেও অতীতে দেখা গেছে, অনেক দেশ আইসিজের এমন রায় বাস্তবায়ন করেছে। যেমন—গত বছর যুক্তরাজ্য আইসিজের রায় মেনে মরিশাসকে দ্বীপপুঞ্জ ফিরিয়ে দেয়।
‘সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল এনভায়রনমেন্টাল ল’র (সিআইইএল) জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়ী চৌধুরী বলেন, “এই রায় ঐতিহাসিক। প্রচলিত ধারা থেকে বেরিয়ে এসে আন্তর্জাতিক বিচার আদালত আজ একটি যুগান্তকারী রায় দিয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে যারা ক্ষতিগ্রস্ত, তাদের ক্ষতিপূরণসহ প্রতিকার পাওয়ার অধিকার রয়েছে—আদালত এটি স্পষ্ট করে বলে দিয়েছে।”