alt

আন্তর্জাতিক

‘হামলার তথ্য আগেই ছিল, তবে পেহেলগামে নয় শ্রীনগরে,’ বলছে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা

সংবাদ ডেস্ক : রোববার, ০৪ মে ২০২৫

জম্মু ও কাশ্মীরে পর্যটকদের নিশানা করে ১৯ এপ্রিলের কাছাকাছি সময়ে হামলা হতে পারে বলে স্থানীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের সতর্ক করেছির ভারতের গোয়েন্দা ব্যুরো (আইবি) এবং অন্যান্য সংস্থা ।

এসব সংস্থার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান ভারতের কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল (ইউটি) ও শ্রীনগরে ১৯ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নির্ধারিত সফরসূচি ছিল। এ উপলক্ষে শ্রীনগর শহর ও এর আশপাশে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছিল। পর্যটকদের মধ্যে জনপ্রিয় কয়েকটি হোটেল ছাড়াও শ্রীনগরের দাচিগাম ন্যাশনাল পার্কের মতো পর্যটনস্থলগুলোতেও নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছিল। পার্কটি শ্রীনগর শহর থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।

কিন্তু আবহাওয়ার কারণে নির্ধারিত সফরের চার দিন আগে মোদির সফর বাতিল করা হয়। এই অবস্থায় ২২ এপ্রিল ভারতের কাশ্মীরের পেহেলগাম শহরের বাইসারান উপত্যকায় বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন পর্যটক নিহত হন। শ্রীনগর থেকে পেহেলগামের দূরত্ব প্রায় ৯০ কিলোমিটার।

এক জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘১০ বারের মধ্যে এমন সতর্কবার্তা নয়বারই সঠিক হয় না। কিন্তু এবার পর্যটকদের নিয়ে দেওয়া সতর্কতা সঠিক প্রমাণিত হয়েছে। তবে স্থান ঠিক হয়নি। এখন সেটা বুঝতে পারাটাই কঠিন বিষয়।’ এই কর্মকর্তা স্বীকার করেছেন, এটা ঠিক যে প্রধানমন্ত্রীর সফরকে কেন্দ্র করে জম্মু ও কাশ্মীরের সেনাবাহিনী ও বেসামরিক নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের শ্রীনগরের কাছাকাছি পর্যটন এলাকায় হামলা হতে পারে বলে সতর্ক করা হয়েছিল। তাঁদের প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছিল।

মোদির নির্ধারিত সফরের চার দিন আগে আবহাওয়া বিভাগের পূর্বাভাসে বলা হয়েছিল, ১৮-১৯ এপ্রিলের আশপাশে জম্মু ও কাশ্মীরের আবহাওয়া খারাপ থাকতে পারে। পূর্বাভাস আমলে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর (পিএমও) সফরটি বাতিল করে। এই সফরে মোদিকে জম্মু ও কাশ্মীরের প্রায় তিনটি সেক্টরের ওপর দিয়ে হেলিকপ্টারে করে যেতে হতো। খারাপ আবহাওয়ার কারণে তাঁর যাত্রা ব্যাহত হতে পারত। তবে মোদির সফর বাতিল করা হলেও নিরাপত্তা কর্মকর্তারা কিন্তুতাঁদের সতর্কতা ও প্রস্তুতি কমাননি।

হিন্দুস্তান টাইমস জানতে পেরেছে, পুলিশের মহাপরিদর্শক নলিন প্রভাত শ্রীনগরে চার দিন অবস্থান করেছিলেন এবং শহরটির চারপাশের সব এলাকার খোঁজখবর নিয়েছিলেন। ২২ এপ্রিল পেহেলগামে বন্দুকধারীরা হামলা চালানোর দিন সকালে তিনি জম্মুতে পৌঁছান। কিন্তু হামলার পরপরই তিনি আবার সেখানে ফিরে যান।

হিন্দুস্তান টাইমস যেসব কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছেন, তাঁরা সবাই নিশ্চিত করেছেন, তাঁদের কোনো গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্টভাবে পেহেলগামের কথা বলা হয়নি।

কিন্তু এখন জানা গেছে, বন্দুকধারীরা আগে থেকেই পেহেলগামে অবস্থান করছিলেন। তাই স্থানীয় গোয়েন্দা তথ্যের ব্যর্থতার বিষয়টি বড় হয়ে দেখা দিয়েছে।

কর্মকর্তারা বলেছেন, যেহেতু এখন জানা গেছে যে সন্ত্রাসীরা ওই এলাকায় বসবাস করছিলেন এবং এখনো ওই অঞ্চলে রয়েছেন, তাই সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা ছিল স্থানীয় গোয়েন্দা তথ্যের।

মাঠপর্যায়ের সেনা কর্মকর্তারা হিন্দুস্তান টাইমসকে বলেছেন, তাঁরা এসব তথ্য সম্পর্কে অবগত ছিলেন না।

বাংকার নির্মাণ ও সংস্কারে ব্যস্ত কাশ্মীরের মানুষ
ভারত ও পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণরেখার দুই পাশের কাশ্মীরি মানুষের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ বেধে গেলে তাঁরাই সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন। এ জন্য আগেভাগেই দুই পাশের আতঙ্কে থাকা মানুষ বাংকার সংস্কার করছেন।

কাশ্মীরের পেহেলগামে সশস্ত্র গোষ্ঠীর হামলাকে কেন্দ্র করে ভারত ও পাকিস্তান একে অপরের বিরুদ্ধে বেসামরিক নানা বিধিনিষেধ ঘোষণার পরও কাশ্মীরের মানুষ কিছুটা স্বস্তি পেয়েছিলেন। তাঁরা ভেবেছিলেন, পরিস্থিতি হয়তো এর চেয়ে খারাপ হবে না।

কয়েক দিন ধরে দুই দেশের নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে নিয়ন্ত্রণরেখা (এলওসি) বরাবর গোলাগুলির কারণে বিনিদ্র রাত কাটাচ্ছেন সীমান্তের দুই পাশে বসবাসরত মানুষ।

গত সপ্তাহে ভারত–নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের উরি সেক্টরের তুতমার গলি পোস্ট এবং পাকিস্তান–নিয়ন্ত্রিত লিপা সেক্টরের নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর দুই দেশের নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে। তবে এখন পর্যন্ত ওই ঘটনায় কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।

এহসান-উল-হক শামি পাকিস্তান–নিয়ন্ত্রিত লিপা উপত্যকার বাসিন্দা। ওই অঞ্চলের জনসংখ্যা প্রায় ৪০ হাজার এবং সেখানকার বেশির ভাগ মানুষই আইন মেনে চলেন।

নিয়ন্ত্রণরেখা থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে শামির বাড়ি। ২০১৯ সালে ভারত ও পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর মধ্যে ব্যাপক গোলাগুলিতে তাঁর বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তিনি জানিয়েছেন, একইভাবে ২০০২ ও ১৯৯৮ সালে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল তাঁর বাড়ি।

পেশায় আইনজীবী শামি বলেন, ভারত–নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামের ঘটনার পর গত শুক্র ও শনিবার পাকিস্তান–ভারতের সেনাবাহিনীর মধ্যে গোলাগুলি হয়েছে। শুক্র ও শনিবার মধ্যরাত সাড়ে ১২টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত দুই দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে গোলাগুলি চলে। এরপর শনিবার রাতে আবার গুলিবর্ষণ শুরু হয়। ওই দিন রাত ১০টায় গোলাগুলি শুরু হয়ে ভোর ৫টা পর্যন্ত চললেও সাধারণ মানুষকে অবশ্য নিশানা হতে হয়নি।

ভারত–নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর সবচেয়ে স্পর্শকাতর এলাকা উত্তর কাশ্মীরের কুপওয়ারা ও বারামুল্লা জেলায় অবস্থিত। শুক্রবার কুপওয়ারার জেলা ম্যাজিস্ট্রেট একটা নির্দেশ জারি করে জানিয়েছিলেন, কুপওয়ারার নিয়ন্ত্রণরেখা–সংলগ্ন অঞ্চলে যেতে হলে আগাম অনুমতি নিতে হবে।

কুপওয়ারা সীমান্তে এখনো গুলিবর্ষণের কোনো ঘটনা ঘটেনি। তবে নিয়ন্ত্রণরেখার খুব কাছাকাছি যাঁরা বসবাস করেন, তাঁদের মধ্যে একটা আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে।

কুপওয়ারার কারনাহ সেক্টরের বাসিন্দারা ব্যক্তিগত ব্যয়ে ভূগর্ভস্থ বাংকার তৈরির কাজ শুরু করেছেন বা সেগুলো পুনর্র্নিমাণ করছেন।

পেহেলগামের ঘটনার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সামরিক উত্তেজনা সৃষ্টির সঙ্গে সঙ্গেই বাড়ির নিচে বাংকার তৈরির কাজ যাঁরা শুরু করেছেন, এমনই একজন পীরজাদা সৈয়দ।

পীরজাদা বলেন, ‘সীমান্তে গোলাগুলির পরিণতি আমরা ইতিমধ্যে দেখেছি। জীবনহানি হয়েছে, অতীতে কৃষিকাজের অভাবে মানুষও অনাহারে মারা গেছে।’

পীরজাদা সৈয়দ বলেন, ‘আল্লাহ করুন, যেন কিছু না হয়। কিন্তু দেখে মনে হচ্ছে, যেকোনো সময় কিছু একটা ঘটে যেতে পারে। সে কারণেই আমরা ভূগর্ভস্থ বাংকার বানাচ্ছি, যাতে কিছু হলে আমরা সেখানে আশ্রয় নিতে পারি।’

কুপওয়ারার একাধিক বাসিন্দা বিবিসিকে বলেন, ‘অতিরিক্ত সামরিক তৎপরতা’ এবং রাতের আকাশে জেট বোমারু বিমানের আওয়াজ তাঁদের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে।

কুপওয়ারার নিয়ন্ত্রণরেখার জিরো লাইনে অবস্থিত টোড গ্রামের এক বাসিন্দা বলেন, ‘২০১৭ সালে যখন গোলাবর্ষণ হচ্ছিল, তখন আমাদের এক আত্মীয়ের বাড়িতে একটা শেল এসে পড়ে ছিল এবং তাঁর মৃত্যু হয়।’

ওই বাসিন্দা বলেন, ২০২১ সালে ভারত ও পাকিস্তানের সেনাবাহিনী যুদ্ধবিরতি কঠোরভাবে মেনে চলতে রাজি হলে চার বছর ধরে জীবন শান্তিপূর্ণ ছিল। এখানে কৃষিকাজ হয়েছে, বাচ্চারা স্কুলে গেছে, ব্যবসা হয়েছে। কিন্তু এখন আশঙ্কা হচ্ছে, আগের মতো পরিস্থিতি হয়তো ফিরে আসতে পারে।

পীরজাদা সৈয়দ বলেন, ‘দুদিন আগে কর্তৃপক্ষের লোকজন এসে এখানকার বাসিন্দাদের বাংকার পরিষ্কার করতে এবং তার চারপাশের আগাছা বা কাঠের জিনিসপত্র সরিয়ে ফেলতে বলেছিলেন। এই ঘোষণার কারণে সবাই হতবাক হয়েছেন। কিন্তু বাঁচতে হবে, তাই সবাই বাংকার পরিষ্কার বা পুনর্র্নিমাণ করতে শুরু করে দিয়েছেন।

আমি বাংকার পরিষ্কার করেছি
এহসান-উল-হক শামি বলেছেন, যখনই পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়, তখনই নিয়ন্ত্রণরেখার কাছে বসবাসকারী মানুষের মনে আশঙ্কা তৈরি হয়, দুই দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে গোলাগুলি চলতে পারে। এতে সাধারণত নিশানা হতে হয় সাধারণ মানুষকে।

শামি বলেন, ‘সাম্প্রতিক উত্তেজনার পরও প্রতি রাতেই আমরা ভাবতাম, এই হয়তো গোলাগুলি শুরু হবে। যেমনটা শুক্র ও শনিবার রাতে দেখা গেছে।’

সেই রাতের ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে শামি বলেন, ‘শুক্র ও শনিবার মধ্যরাতে শুরু হওয়া গোলাগুলিকে আমরা আকস্মিকই বলতে পারি। তখন রাত ১২টা বেজে গেছে, বাড়িতে ছেলেমেয়েরা ঘুমিয়ে ছিল। প্রথমে আমি আমার বৃদ্ধ মাকে বাংকারে সরিয়ে নিয়ে যাই। তাঁর বয়স হয়েছে এবং তিনি হাঁটাচলা করতে অক্ষম।’

শামি জানিয়েছেন, ওই এলাকায় প্রায় প্রতিটা বাড়িতেই ভূগর্ভস্থ বাংকার রয়েছে। বাড়ির কাজে এই বাংকার ব্যবহার করা হয়।

শামি বলছিলেন, ‘সাম্প্রতিক উত্তেজনার পর আমি বিশেষ মনোযোগ দিয়ে বাংকার পরিষ্কার করেছি, যাতে গোলাগুলি চললে বাংকার ব্যবহারের উপযোগী থাকে।’

ভারত–নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে একটি বাংকার দেখতে এসেছেন এক গ্রামবাসী। ২ মে, চুরুন্দা গ্রামছবি: এএফপি

গোটা রাত ঘুমাতে পারিনি
শামি জানিয়েছেন, ‘এই বাংকারগুলো বেশ মজবুত। তবে অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, এটা বুলেট বা গোলা থেকে রক্ষা করতে পারলেও ভারী অস্ত্রের শেল সরাসরি বাংকারে পড়লে সেটা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।’

শামি বলেন, ‘আমরা যে বাড়িতে থাকি, সেটা ২০০২ এবং ১৯৯৯ সালেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। আমরা নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর আছি। এ কারণে আশঙ্কা থেকে যায়, আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হতেই পারি। অবশ্য এমনিতেই গুলি চললে কারও পক্ষে ঘুমানো সম্ভব নয়।’

শামির মতো ওই অঞ্চলের অন্য বাসিন্দাও বিনিদ্র রাতই কাটিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘প্রায় পুরো এলাকার মানুষই গোটা রাত জেগে ছিলেন। তাঁরা একে অপরের মঙ্গল কামনা করেছেন। তবে আমাদের কাছে তথ্য আছে, এখন পর্যন্ত এই গোলাগুলিতে বেসামরিক জনগণের কোনো ক্ষতি হয়নি।’

বাংকারগুলো থাকার যোগ্য নয়
উরি সেক্টরেও নিরাপত্তা নিয়ে আশঙ্কায় ভুগছেন মানুষ। ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে এই সেক্টরের ভাটগ্রান ও চরন্দা এলাকায় ১৬টি বাংকার নির্মাণ করা হলেও স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, সেখানে বিদ্যুৎ–সংযোগ ও পানির ব্যবস্থা নেই।

ভাটগ্রানের বাসিন্দা মুহাম্মদ কুদ্দুস বলেন, ‘কেউ কেউ নিজের খরচে বাংকার তৈরি করেছেন, কিন্তু দরিদ্র মানুষেরা যাবেন কোথায়। এখন আমরা এই একই বাংকারগুলোই পরিষ্কার করব।’

মুহাম্মদ কুদ্দুস বলেন, ‘আল্লাহ দয়া করুন, যাতে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সবকিছু ঠিক থাকে এবং গোলাগুলি বন্ধ হওয়ার পর জীবনযাত্রা আবার স্বাভাবিক হয়ে যায়।’

২০০৩ সালের নভেম্বরে নিয়ন্ত্রণরেখায় যুদ্ধবিরতি–সংক্রান্ত একটা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। কিন্তু দুই পক্ষের সেনাবাহিনী তা পুরোপুরিভাবে বাস্তবায়ন করতে পারেনি বলে অভিযোগ রয়েছে।

এরপর ২০২০ সালে লাদাখ সীমান্তে চীন ও ভারতীয় সেনাবাহিনীর মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিলে কাশ্মীর উপত্যকা থেকে বিপুলসংখ্যক সেনা সরিয়ে লাদাখে স্থানান্তর করে ভারত।

এর কয়েক মাস পর ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে ভারত ও পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর মধ্যে পূর্বসম্মত যুদ্ধবিরতি চুক্তি কঠোরভাবে মেনে চলতে আরও একটি চুক্তি হয়।

পেহেলগামের ঘটনার পর ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সেই চুক্তি আবার ভাঙা হয়েছে বলে অভিযোগ।

ভারত–নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে সড়কে আধা সামরিক বাহিনীর এক সদস্যের টহল। ২ মে, শ্রীনগরছবি: এএফপি

এলাকা ছাড়েননি লিপা সেক্টরের বাসিন্দারা

বশির আলম আওয়ান ঝিলাম জেলা পরিষদের সদস্য। তিনি জানিয়েছেন, ওই সেক্টরে ভালো কৃষিকাজ হওয়ার কারণে সেখানে শস্য মজুত রয়েছে এবং বাকি প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের জোগানও রয়েছে। তাই চূড়ান্ত খারাপ পরিস্থিতিতেও তাঁদের খাদ্যশস্যের অভাব দেখা যায়নি।

বশির আলমের দাবি, ‘অতীতে গোলাগুলির কারণে লিপা সেক্টরে প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সর্বশেষ গোলাগুলি হয়েছিল ২০১৯ সালে। সেই সময় ব্যাপক গোলাগুলি চলেছিল, বেসামরিক নাগরিকেরা নিশানা হয়েছিলেন। তবে গত সপ্তাহে দুই রাতে যে গুলিবর্ষণ হয়েছে, সেখানে সাধারণ মানুষ নিশানা হননি।’

বশির আলম বলেন, অতীতে প্রাণহানির পাশাপাশি অন্যান্য ক্ষয়ক্ষতিও হয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও ওই এলাকা থেকে অভিবাসন হয়নি। নারী ও বাড়ির অসুস্থ সদস্যদের অন্যত্র স্থানান্তরিত করা হলেও পুরুষেরা এখানে থেকে গেছেন।

বশির আলম আরও বলেন, লিপা উপত্যকায় সরকারি প্রকল্পের আওতায় প্রায় প্রতিটি বাড়িতে বা দু-তিনটি বাড়ি মিলিয়ে একটা বাংকার বানানো হয়েছে। লিপা উপত্যকার বাসিন্দাদের অনেকেরই আত্মীয় ভারত–নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের কুপওয়ারা সেক্টরে বসবাস করেন।

বশির আলমের মতে, দুই দেশের মধ্যে গুলিবর্ষণে ঘটনা না ঘটলে লিপা সেক্টরে পরিস্থিতি সাধারণত শান্তই থাকে। লিপা উপত্যকার রাস্তাঘাট আগে ভালো ছিল না। কিন্তু ২০২২ সালে রাস্তা মেরামতের পর ওই এলাকায় পর্যটন বেড়েছে

স্থানীয় ব্যক্তিরাও পর্যটন ব্যবসায় বিনিয়োগ করেছেন। ওই এলাকায় অন্তত ৩০টি নতুন হোটেল, রেস্তোরাঁ ও গেস্টহাউস তৈরি করা হয়েছে। বিপুল পরিমাণে পর্যটক আসাও শুরু হয়েছিল।

বশির আলম বলেন, বহু মানুষ পর্যটনকে তাঁদের কর্মসংস্থানের উৎস বানিয়েছেন। এখন গোলাগুলির ঘটনা ঘটায় পর্যটকেরা ওই এলাকায় বেড়াতে যাবেন না বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। মানুষের কর্মসংস্থানের ওপর এর খুব খারাপ প্রভাব পড়বে।

সিমলা চুক্তির অধীনে এসেছে নিয়ন্ত্রণরেখা
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সীমান্ত ৩ হাজার ৩২৩ কিলোমিটার বিস্তৃত। এর মধ্যে জম্মু ও কাশ্মীরের সীমান্ত ৭৪৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং ৩৪ কিলোমিটার প্রশস্ত রয়েছে, যাকে সবচেয়ে ‘বিপজ্জনক সীমান্ত’ বলে মনে করা হয়।

১৯৪৯ সালে জাতিসংঘের তরফে একে ‘যুদ্ধবিরতি রেখা’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু দুই দেশই সিমলা চুক্তির অধীনে একে নিয়ন্ত্রণরেখা বা এলওসি বলে।

জম্মু, সাম্বা, কাঠুয়া–সংলগ্ন সীমান্তকে ভারত ‘আন্তর্জাতিক সীমান্ত’ বলে আখ্যা দেয় আর পাকিস্তান সেটাকে ‘ওয়ার্কিং বাউন্ডারি’ বলে।

সাম্প্রতিক সময়ে দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তির আগে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে সাম্বা, কাঠুয়া, জম্মু, আরএস পুরা, রাজৌরি এবং জম্মুর পুঞ্চে নিয়ন্ত্রণরেখার কাছে অবস্থিত বসতি অঞ্চলে ১৯ হাজারের বেশি পাকা ভূগর্ভস্থ বাংকার নির্মাণ করা হয়েছিল।

আরএস পুরার বাসিন্দা কাট্টু মহারাজ বলেন, এখন এতটাই উত্তেজনা রয়েছে যে এখানকার মানুষ সব কাজ ছেড়ে এখন বাংকার পরিষ্কার করছেন।

ছবি

সিঙ্গাপুরে নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের নিরঙ্কুশ জয়, একচেটিয়া শাসনের মেয়াদ বাড়ল

ছবি

ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা: এবার নিষিদ্ধ হলো জাহাজ

ছবি

ভারতের সঙ্গে উত্তেজনার মধ্যে ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা পাকিস্তানের, বাড়ছে উদ্বেগ

অস্ট্রেলিয়ার নির্বাচনে ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির জয়

ছবি

স্বল্পপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ‘আবদালি’ পরীক্ষামূলকভাবে উৎক্ষেপণ করল পাকিস্তান

ছবি

সৌদির কাছে ৩৫০ কোটি ডলারের ক্ষেপণাস্ত্র বিক্রি করছে যুক্তরাষ্ট্র

ছবি

অস্ট্রেলিয়ায় নির্বাচন, আলোচনায় যেসব ইস্যু

পাকিস্তান থেকে সব ধরনের আমদানি নিষিদ্ধ করল ভারত

নেতানিয়াহুর অনুমোদন নিয়ে সিরিয়ার হামলা, উত্তেজনা তুঙ্গে

সিন্ধু নদে বাঁধ দিলে হামলা করবে পাকিস্তান

ছবি

যুদ্ধ এড়িয়ে ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা প্রশমন, ঐতিহাসিক নজির কেমন

ছবি

দ্রুজদের সুরক্ষায় সিরিয়ায় ইসরায়েলের বোমা হামলা, শাসকগোষ্ঠীকে ‘বার্তা’

ছবি

উগ্রবাদীদের তালিকায় জার্মানির প্রধান বিরোধী দল এএফডি

ছবি

পাকিস্তান থেকে পণ্য আমদানি সম্পূর্ণ বন্ধ করলো ভারত

ছবি

ইউক্রেইন-রাশিয়া শান্তি আলোচনায় ‘আর মধ্যস্থতা নয়’: যুক্তরাষ্ট্র

ছবি

ভারতে ধর্মীয় উৎসবে পদদলিত হয়ে ৬ জনের মৃত্যু, আহত অন্তত ৬০

ছবি

মাল্টা উপকূলে গাজাগামী ত্রাণবাহী জাহাজে ড্রোন হামলা

১২০০ মাইল পথ পাড়ি দিল চালকবিহীন ট্রাক

ওয়াল্টজকে নতুন পদে বসাতে চান ট্রাম্প

পেহেলগামে হামলায় ‘লস্কর-আইএসআই চক্র’, ছক ‘পাকিস্তানে লস্কর সদরদপ্তরে’: এনআইএ

যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের মধ্যে খনিজ সম্পদ নিয়ে চুক্তি সই

ছবি

খনিজ চুক্তিকে জেলেনস্কি ‘সমতাভিত্তিক’ বলার পরপরই রাশিয়ার ড্রোন হামলা

ছবি

সামরিক উত্তেজনায় পাকিস্তাননিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে এক হাজারের বেশি মাদ্রাসা বন্ধ

ছবি

সীমান্তে উত্তেজনার মধ্যে এলওসি এলাকায় পূর্ণমাত্রার সামরিক মহড়া চালাল পাকিস্তান

ছবি

মাইক ওয়াল্টজের পদত্যাগ, ট্রাম্প প্রশাসনের প্রথম শীর্ষ কর্মকর্তা সরে দাঁড়ালেন

ছবি

পাকিস্তানে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার দায়িত্ব পেলেন আইএসআই প্রধান

ছবি

ভারত-পাকিস্তানকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের

ছবি

খনিজ সম্পদ: যুক্তরাষ্ট্র-ইউক্রেনের মধ্যে চুক্তি সই

ছবি

পাকিস্তানের জন্য আকাশসীমা বন্ধ করল ভারত

ছবি

অস্ট্রেলিয়ার মোট জনসংখ্যার ৮৬ লাখেরই জন্ম বিদেশে

ছবি

দ্বিতীয় মেয়াদের শততম দিন উৎযাপন ট্রাম্পের

জয়শঙ্কর ও শাহবাজের সঙ্গে কথা বললেন জাতিসংঘের মহাসচিব

‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’ স্লোগান, কর্ণাটকে এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যা

তেলের দাম গত সাড়ে ৩ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন

ছবি

ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ কি আসন্ন?

ছবি

এলওসি এলাকায় রাফায়েল টহলের অভিযোগ পাকিস্তানের, উত্তেজনা চরমে

tab

আন্তর্জাতিক

‘হামলার তথ্য আগেই ছিল, তবে পেহেলগামে নয় শ্রীনগরে,’ বলছে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা

সংবাদ ডেস্ক

রোববার, ০৪ মে ২০২৫

জম্মু ও কাশ্মীরে পর্যটকদের নিশানা করে ১৯ এপ্রিলের কাছাকাছি সময়ে হামলা হতে পারে বলে স্থানীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের সতর্ক করেছির ভারতের গোয়েন্দা ব্যুরো (আইবি) এবং অন্যান্য সংস্থা ।

এসব সংস্থার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান ভারতের কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল (ইউটি) ও শ্রীনগরে ১৯ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নির্ধারিত সফরসূচি ছিল। এ উপলক্ষে শ্রীনগর শহর ও এর আশপাশে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছিল। পর্যটকদের মধ্যে জনপ্রিয় কয়েকটি হোটেল ছাড়াও শ্রীনগরের দাচিগাম ন্যাশনাল পার্কের মতো পর্যটনস্থলগুলোতেও নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছিল। পার্কটি শ্রীনগর শহর থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।

কিন্তু আবহাওয়ার কারণে নির্ধারিত সফরের চার দিন আগে মোদির সফর বাতিল করা হয়। এই অবস্থায় ২২ এপ্রিল ভারতের কাশ্মীরের পেহেলগাম শহরের বাইসারান উপত্যকায় বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন পর্যটক নিহত হন। শ্রীনগর থেকে পেহেলগামের দূরত্ব প্রায় ৯০ কিলোমিটার।

এক জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘১০ বারের মধ্যে এমন সতর্কবার্তা নয়বারই সঠিক হয় না। কিন্তু এবার পর্যটকদের নিয়ে দেওয়া সতর্কতা সঠিক প্রমাণিত হয়েছে। তবে স্থান ঠিক হয়নি। এখন সেটা বুঝতে পারাটাই কঠিন বিষয়।’ এই কর্মকর্তা স্বীকার করেছেন, এটা ঠিক যে প্রধানমন্ত্রীর সফরকে কেন্দ্র করে জম্মু ও কাশ্মীরের সেনাবাহিনী ও বেসামরিক নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের শ্রীনগরের কাছাকাছি পর্যটন এলাকায় হামলা হতে পারে বলে সতর্ক করা হয়েছিল। তাঁদের প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছিল।

মোদির নির্ধারিত সফরের চার দিন আগে আবহাওয়া বিভাগের পূর্বাভাসে বলা হয়েছিল, ১৮-১৯ এপ্রিলের আশপাশে জম্মু ও কাশ্মীরের আবহাওয়া খারাপ থাকতে পারে। পূর্বাভাস আমলে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর (পিএমও) সফরটি বাতিল করে। এই সফরে মোদিকে জম্মু ও কাশ্মীরের প্রায় তিনটি সেক্টরের ওপর দিয়ে হেলিকপ্টারে করে যেতে হতো। খারাপ আবহাওয়ার কারণে তাঁর যাত্রা ব্যাহত হতে পারত। তবে মোদির সফর বাতিল করা হলেও নিরাপত্তা কর্মকর্তারা কিন্তুতাঁদের সতর্কতা ও প্রস্তুতি কমাননি।

হিন্দুস্তান টাইমস জানতে পেরেছে, পুলিশের মহাপরিদর্শক নলিন প্রভাত শ্রীনগরে চার দিন অবস্থান করেছিলেন এবং শহরটির চারপাশের সব এলাকার খোঁজখবর নিয়েছিলেন। ২২ এপ্রিল পেহেলগামে বন্দুকধারীরা হামলা চালানোর দিন সকালে তিনি জম্মুতে পৌঁছান। কিন্তু হামলার পরপরই তিনি আবার সেখানে ফিরে যান।

হিন্দুস্তান টাইমস যেসব কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছেন, তাঁরা সবাই নিশ্চিত করেছেন, তাঁদের কোনো গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্টভাবে পেহেলগামের কথা বলা হয়নি।

কিন্তু এখন জানা গেছে, বন্দুকধারীরা আগে থেকেই পেহেলগামে অবস্থান করছিলেন। তাই স্থানীয় গোয়েন্দা তথ্যের ব্যর্থতার বিষয়টি বড় হয়ে দেখা দিয়েছে।

কর্মকর্তারা বলেছেন, যেহেতু এখন জানা গেছে যে সন্ত্রাসীরা ওই এলাকায় বসবাস করছিলেন এবং এখনো ওই অঞ্চলে রয়েছেন, তাই সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা ছিল স্থানীয় গোয়েন্দা তথ্যের।

মাঠপর্যায়ের সেনা কর্মকর্তারা হিন্দুস্তান টাইমসকে বলেছেন, তাঁরা এসব তথ্য সম্পর্কে অবগত ছিলেন না।

বাংকার নির্মাণ ও সংস্কারে ব্যস্ত কাশ্মীরের মানুষ
ভারত ও পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণরেখার দুই পাশের কাশ্মীরি মানুষের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ বেধে গেলে তাঁরাই সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন। এ জন্য আগেভাগেই দুই পাশের আতঙ্কে থাকা মানুষ বাংকার সংস্কার করছেন।

কাশ্মীরের পেহেলগামে সশস্ত্র গোষ্ঠীর হামলাকে কেন্দ্র করে ভারত ও পাকিস্তান একে অপরের বিরুদ্ধে বেসামরিক নানা বিধিনিষেধ ঘোষণার পরও কাশ্মীরের মানুষ কিছুটা স্বস্তি পেয়েছিলেন। তাঁরা ভেবেছিলেন, পরিস্থিতি হয়তো এর চেয়ে খারাপ হবে না।

কয়েক দিন ধরে দুই দেশের নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে নিয়ন্ত্রণরেখা (এলওসি) বরাবর গোলাগুলির কারণে বিনিদ্র রাত কাটাচ্ছেন সীমান্তের দুই পাশে বসবাসরত মানুষ।

গত সপ্তাহে ভারত–নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের উরি সেক্টরের তুতমার গলি পোস্ট এবং পাকিস্তান–নিয়ন্ত্রিত লিপা সেক্টরের নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর দুই দেশের নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে। তবে এখন পর্যন্ত ওই ঘটনায় কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।

এহসান-উল-হক শামি পাকিস্তান–নিয়ন্ত্রিত লিপা উপত্যকার বাসিন্দা। ওই অঞ্চলের জনসংখ্যা প্রায় ৪০ হাজার এবং সেখানকার বেশির ভাগ মানুষই আইন মেনে চলেন।

নিয়ন্ত্রণরেখা থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে শামির বাড়ি। ২০১৯ সালে ভারত ও পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর মধ্যে ব্যাপক গোলাগুলিতে তাঁর বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তিনি জানিয়েছেন, একইভাবে ২০০২ ও ১৯৯৮ সালে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল তাঁর বাড়ি।

পেশায় আইনজীবী শামি বলেন, ভারত–নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামের ঘটনার পর গত শুক্র ও শনিবার পাকিস্তান–ভারতের সেনাবাহিনীর মধ্যে গোলাগুলি হয়েছে। শুক্র ও শনিবার মধ্যরাত সাড়ে ১২টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত দুই দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে গোলাগুলি চলে। এরপর শনিবার রাতে আবার গুলিবর্ষণ শুরু হয়। ওই দিন রাত ১০টায় গোলাগুলি শুরু হয়ে ভোর ৫টা পর্যন্ত চললেও সাধারণ মানুষকে অবশ্য নিশানা হতে হয়নি।

ভারত–নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর সবচেয়ে স্পর্শকাতর এলাকা উত্তর কাশ্মীরের কুপওয়ারা ও বারামুল্লা জেলায় অবস্থিত। শুক্রবার কুপওয়ারার জেলা ম্যাজিস্ট্রেট একটা নির্দেশ জারি করে জানিয়েছিলেন, কুপওয়ারার নিয়ন্ত্রণরেখা–সংলগ্ন অঞ্চলে যেতে হলে আগাম অনুমতি নিতে হবে।

কুপওয়ারা সীমান্তে এখনো গুলিবর্ষণের কোনো ঘটনা ঘটেনি। তবে নিয়ন্ত্রণরেখার খুব কাছাকাছি যাঁরা বসবাস করেন, তাঁদের মধ্যে একটা আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে।

কুপওয়ারার কারনাহ সেক্টরের বাসিন্দারা ব্যক্তিগত ব্যয়ে ভূগর্ভস্থ বাংকার তৈরির কাজ শুরু করেছেন বা সেগুলো পুনর্র্নিমাণ করছেন।

পেহেলগামের ঘটনার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সামরিক উত্তেজনা সৃষ্টির সঙ্গে সঙ্গেই বাড়ির নিচে বাংকার তৈরির কাজ যাঁরা শুরু করেছেন, এমনই একজন পীরজাদা সৈয়দ।

পীরজাদা বলেন, ‘সীমান্তে গোলাগুলির পরিণতি আমরা ইতিমধ্যে দেখেছি। জীবনহানি হয়েছে, অতীতে কৃষিকাজের অভাবে মানুষও অনাহারে মারা গেছে।’

পীরজাদা সৈয়দ বলেন, ‘আল্লাহ করুন, যেন কিছু না হয়। কিন্তু দেখে মনে হচ্ছে, যেকোনো সময় কিছু একটা ঘটে যেতে পারে। সে কারণেই আমরা ভূগর্ভস্থ বাংকার বানাচ্ছি, যাতে কিছু হলে আমরা সেখানে আশ্রয় নিতে পারি।’

কুপওয়ারার একাধিক বাসিন্দা বিবিসিকে বলেন, ‘অতিরিক্ত সামরিক তৎপরতা’ এবং রাতের আকাশে জেট বোমারু বিমানের আওয়াজ তাঁদের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে।

কুপওয়ারার নিয়ন্ত্রণরেখার জিরো লাইনে অবস্থিত টোড গ্রামের এক বাসিন্দা বলেন, ‘২০১৭ সালে যখন গোলাবর্ষণ হচ্ছিল, তখন আমাদের এক আত্মীয়ের বাড়িতে একটা শেল এসে পড়ে ছিল এবং তাঁর মৃত্যু হয়।’

ওই বাসিন্দা বলেন, ২০২১ সালে ভারত ও পাকিস্তানের সেনাবাহিনী যুদ্ধবিরতি কঠোরভাবে মেনে চলতে রাজি হলে চার বছর ধরে জীবন শান্তিপূর্ণ ছিল। এখানে কৃষিকাজ হয়েছে, বাচ্চারা স্কুলে গেছে, ব্যবসা হয়েছে। কিন্তু এখন আশঙ্কা হচ্ছে, আগের মতো পরিস্থিতি হয়তো ফিরে আসতে পারে।

পীরজাদা সৈয়দ বলেন, ‘দুদিন আগে কর্তৃপক্ষের লোকজন এসে এখানকার বাসিন্দাদের বাংকার পরিষ্কার করতে এবং তার চারপাশের আগাছা বা কাঠের জিনিসপত্র সরিয়ে ফেলতে বলেছিলেন। এই ঘোষণার কারণে সবাই হতবাক হয়েছেন। কিন্তু বাঁচতে হবে, তাই সবাই বাংকার পরিষ্কার বা পুনর্র্নিমাণ করতে শুরু করে দিয়েছেন।

আমি বাংকার পরিষ্কার করেছি
এহসান-উল-হক শামি বলেছেন, যখনই পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়, তখনই নিয়ন্ত্রণরেখার কাছে বসবাসকারী মানুষের মনে আশঙ্কা তৈরি হয়, দুই দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে গোলাগুলি চলতে পারে। এতে সাধারণত নিশানা হতে হয় সাধারণ মানুষকে।

শামি বলেন, ‘সাম্প্রতিক উত্তেজনার পরও প্রতি রাতেই আমরা ভাবতাম, এই হয়তো গোলাগুলি শুরু হবে। যেমনটা শুক্র ও শনিবার রাতে দেখা গেছে।’

সেই রাতের ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে শামি বলেন, ‘শুক্র ও শনিবার মধ্যরাতে শুরু হওয়া গোলাগুলিকে আমরা আকস্মিকই বলতে পারি। তখন রাত ১২টা বেজে গেছে, বাড়িতে ছেলেমেয়েরা ঘুমিয়ে ছিল। প্রথমে আমি আমার বৃদ্ধ মাকে বাংকারে সরিয়ে নিয়ে যাই। তাঁর বয়স হয়েছে এবং তিনি হাঁটাচলা করতে অক্ষম।’

শামি জানিয়েছেন, ওই এলাকায় প্রায় প্রতিটা বাড়িতেই ভূগর্ভস্থ বাংকার রয়েছে। বাড়ির কাজে এই বাংকার ব্যবহার করা হয়।

শামি বলছিলেন, ‘সাম্প্রতিক উত্তেজনার পর আমি বিশেষ মনোযোগ দিয়ে বাংকার পরিষ্কার করেছি, যাতে গোলাগুলি চললে বাংকার ব্যবহারের উপযোগী থাকে।’

ভারত–নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে একটি বাংকার দেখতে এসেছেন এক গ্রামবাসী। ২ মে, চুরুন্দা গ্রামছবি: এএফপি

গোটা রাত ঘুমাতে পারিনি
শামি জানিয়েছেন, ‘এই বাংকারগুলো বেশ মজবুত। তবে অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, এটা বুলেট বা গোলা থেকে রক্ষা করতে পারলেও ভারী অস্ত্রের শেল সরাসরি বাংকারে পড়লে সেটা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।’

শামি বলেন, ‘আমরা যে বাড়িতে থাকি, সেটা ২০০২ এবং ১৯৯৯ সালেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। আমরা নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর আছি। এ কারণে আশঙ্কা থেকে যায়, আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হতেই পারি। অবশ্য এমনিতেই গুলি চললে কারও পক্ষে ঘুমানো সম্ভব নয়।’

শামির মতো ওই অঞ্চলের অন্য বাসিন্দাও বিনিদ্র রাতই কাটিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘প্রায় পুরো এলাকার মানুষই গোটা রাত জেগে ছিলেন। তাঁরা একে অপরের মঙ্গল কামনা করেছেন। তবে আমাদের কাছে তথ্য আছে, এখন পর্যন্ত এই গোলাগুলিতে বেসামরিক জনগণের কোনো ক্ষতি হয়নি।’

বাংকারগুলো থাকার যোগ্য নয়
উরি সেক্টরেও নিরাপত্তা নিয়ে আশঙ্কায় ভুগছেন মানুষ। ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে এই সেক্টরের ভাটগ্রান ও চরন্দা এলাকায় ১৬টি বাংকার নির্মাণ করা হলেও স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, সেখানে বিদ্যুৎ–সংযোগ ও পানির ব্যবস্থা নেই।

ভাটগ্রানের বাসিন্দা মুহাম্মদ কুদ্দুস বলেন, ‘কেউ কেউ নিজের খরচে বাংকার তৈরি করেছেন, কিন্তু দরিদ্র মানুষেরা যাবেন কোথায়। এখন আমরা এই একই বাংকারগুলোই পরিষ্কার করব।’

মুহাম্মদ কুদ্দুস বলেন, ‘আল্লাহ দয়া করুন, যাতে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সবকিছু ঠিক থাকে এবং গোলাগুলি বন্ধ হওয়ার পর জীবনযাত্রা আবার স্বাভাবিক হয়ে যায়।’

২০০৩ সালের নভেম্বরে নিয়ন্ত্রণরেখায় যুদ্ধবিরতি–সংক্রান্ত একটা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। কিন্তু দুই পক্ষের সেনাবাহিনী তা পুরোপুরিভাবে বাস্তবায়ন করতে পারেনি বলে অভিযোগ রয়েছে।

এরপর ২০২০ সালে লাদাখ সীমান্তে চীন ও ভারতীয় সেনাবাহিনীর মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিলে কাশ্মীর উপত্যকা থেকে বিপুলসংখ্যক সেনা সরিয়ে লাদাখে স্থানান্তর করে ভারত।

এর কয়েক মাস পর ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে ভারত ও পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর মধ্যে পূর্বসম্মত যুদ্ধবিরতি চুক্তি কঠোরভাবে মেনে চলতে আরও একটি চুক্তি হয়।

পেহেলগামের ঘটনার পর ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সেই চুক্তি আবার ভাঙা হয়েছে বলে অভিযোগ।

ভারত–নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে সড়কে আধা সামরিক বাহিনীর এক সদস্যের টহল। ২ মে, শ্রীনগরছবি: এএফপি

এলাকা ছাড়েননি লিপা সেক্টরের বাসিন্দারা

বশির আলম আওয়ান ঝিলাম জেলা পরিষদের সদস্য। তিনি জানিয়েছেন, ওই সেক্টরে ভালো কৃষিকাজ হওয়ার কারণে সেখানে শস্য মজুত রয়েছে এবং বাকি প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের জোগানও রয়েছে। তাই চূড়ান্ত খারাপ পরিস্থিতিতেও তাঁদের খাদ্যশস্যের অভাব দেখা যায়নি।

বশির আলমের দাবি, ‘অতীতে গোলাগুলির কারণে লিপা সেক্টরে প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সর্বশেষ গোলাগুলি হয়েছিল ২০১৯ সালে। সেই সময় ব্যাপক গোলাগুলি চলেছিল, বেসামরিক নাগরিকেরা নিশানা হয়েছিলেন। তবে গত সপ্তাহে দুই রাতে যে গুলিবর্ষণ হয়েছে, সেখানে সাধারণ মানুষ নিশানা হননি।’

বশির আলম বলেন, অতীতে প্রাণহানির পাশাপাশি অন্যান্য ক্ষয়ক্ষতিও হয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও ওই এলাকা থেকে অভিবাসন হয়নি। নারী ও বাড়ির অসুস্থ সদস্যদের অন্যত্র স্থানান্তরিত করা হলেও পুরুষেরা এখানে থেকে গেছেন।

বশির আলম আরও বলেন, লিপা উপত্যকায় সরকারি প্রকল্পের আওতায় প্রায় প্রতিটি বাড়িতে বা দু-তিনটি বাড়ি মিলিয়ে একটা বাংকার বানানো হয়েছে। লিপা উপত্যকার বাসিন্দাদের অনেকেরই আত্মীয় ভারত–নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের কুপওয়ারা সেক্টরে বসবাস করেন।

বশির আলমের মতে, দুই দেশের মধ্যে গুলিবর্ষণে ঘটনা না ঘটলে লিপা সেক্টরে পরিস্থিতি সাধারণত শান্তই থাকে। লিপা উপত্যকার রাস্তাঘাট আগে ভালো ছিল না। কিন্তু ২০২২ সালে রাস্তা মেরামতের পর ওই এলাকায় পর্যটন বেড়েছে

স্থানীয় ব্যক্তিরাও পর্যটন ব্যবসায় বিনিয়োগ করেছেন। ওই এলাকায় অন্তত ৩০টি নতুন হোটেল, রেস্তোরাঁ ও গেস্টহাউস তৈরি করা হয়েছে। বিপুল পরিমাণে পর্যটক আসাও শুরু হয়েছিল।

বশির আলম বলেন, বহু মানুষ পর্যটনকে তাঁদের কর্মসংস্থানের উৎস বানিয়েছেন। এখন গোলাগুলির ঘটনা ঘটায় পর্যটকেরা ওই এলাকায় বেড়াতে যাবেন না বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। মানুষের কর্মসংস্থানের ওপর এর খুব খারাপ প্রভাব পড়বে।

সিমলা চুক্তির অধীনে এসেছে নিয়ন্ত্রণরেখা
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সীমান্ত ৩ হাজার ৩২৩ কিলোমিটার বিস্তৃত। এর মধ্যে জম্মু ও কাশ্মীরের সীমান্ত ৭৪৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং ৩৪ কিলোমিটার প্রশস্ত রয়েছে, যাকে সবচেয়ে ‘বিপজ্জনক সীমান্ত’ বলে মনে করা হয়।

১৯৪৯ সালে জাতিসংঘের তরফে একে ‘যুদ্ধবিরতি রেখা’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু দুই দেশই সিমলা চুক্তির অধীনে একে নিয়ন্ত্রণরেখা বা এলওসি বলে।

জম্মু, সাম্বা, কাঠুয়া–সংলগ্ন সীমান্তকে ভারত ‘আন্তর্জাতিক সীমান্ত’ বলে আখ্যা দেয় আর পাকিস্তান সেটাকে ‘ওয়ার্কিং বাউন্ডারি’ বলে।

সাম্প্রতিক সময়ে দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তির আগে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে সাম্বা, কাঠুয়া, জম্মু, আরএস পুরা, রাজৌরি এবং জম্মুর পুঞ্চে নিয়ন্ত্রণরেখার কাছে অবস্থিত বসতি অঞ্চলে ১৯ হাজারের বেশি পাকা ভূগর্ভস্থ বাংকার নির্মাণ করা হয়েছিল।

আরএস পুরার বাসিন্দা কাট্টু মহারাজ বলেন, এখন এতটাই উত্তেজনা রয়েছে যে এখানকার মানুষ সব কাজ ছেড়ে এখন বাংকার পরিষ্কার করছেন।

back to top