মিয়ানমারে আগামী ৯ নভেম্বর অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় নির্বাচনে ১৫ লাখের বেশি মানুষ ভোট দিতে পারবেন না। সহিংসতাপূর্ণ এলাকাগুলোতে ভোট বাতিল করায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের এ সিদ্ধান্তে ভোটের সুষ্ঠুতা নিয়েও সংশয় বেড়েছে বলে জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম আল জাজিরা। বাতিল হওয়া ভোটকেন্দ্রগুলোর প্রায় সবই দেশটির পশ্চিমাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্যে। সেখানে ২০১৮ সাল থেকে স্বায়ত্তশাসনকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সঙ্গে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘাত বাড়ছে। এখানে ভোটারের সংখ্যা ১২ লাখ।
বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, ভোট দিতে না পারায় এখানকার মানুষের সঙ্গে দেশের বাকি অংশের আরো বিচ্ছিন্নতা তৈরি হবে, যার ফলে এখানকার সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো আরো সমর্থন পাবে। সর্বশেষ ২০১৫ সালের নির্বাচনে অং সান সুচির নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) ভূমিধ্বস বিজয় লাভ করে।
মিয়ানমারের ইনস্টিটিউট অব পীস এন্ড সিকিউরিটির নির্বাহী পরিচালন মিন জ ও বলেন, “কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের ভোট বাতিলের এই সিদ্ধান্তে স্বচ্ছতা যেমন নেই, তা সঙ্গতিপূর্ণও না।” তিনি বলেন এই সিদ্ধান্তের ফলে ৭৩ শতাংশ রাখাইন ভোটাধিকার বঞ্চিত হবে। এর ফলে জাতীয় পুনর্গঠন প্রক্রিয়া ঝুঁকির মধ্যে পড়বে।
গত ১৬ অক্টোবর নির্বাচন কমিশন নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণ দেখিয়ে এসব এলাকায় নির্বাচন বাতিল করে। নির্বাচন কমিশনের ভাষ্য, সহিংস পরিস্থিতির কারণে এসব এলাকায় নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হওয়ার নিশ্চয়তা তারা দিতে পারবে না। ২০১৫ নির্বাচনেও এসব জায়গায় নির্বাচন বাতিল করা হয়। তবে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে তখন থেকেই প্রশ্ন আছে।
আসন্ন নির্বাচনে ৯২টি রাজনৈতিক দল অংশ নিচ্ছে। এর মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে মূলত সুচির নেতৃত্বাধীন এনএলডি এবং সেনা-ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ইউনিয়ন সলিডারিটি এন্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টির মধ্যে। অং সান সুচির দলের জনপ্রিয়তা মূলত সংখ্যাগরিষ্ঠ নৃগোষ্ঠীর মধ্যে। তাদের সমর্থনেই তার বৈতরণী পেরোনোর কথা। আগে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলোর কাছ থেকেও সমর্থন পেতেন তিনি। ২০১৫ নির্বাচনের আগেও তার প্রতিশ্রুতি ছিল - শান্তি নিশ্চিত করা। কিন্তু গত পাঁচ বছরে সংখ্যালঘু নৃগোষ্ঠীর মানুষের ওপর নিপীড়ন, তাদের ব্যাপক বাস্তুচ্যুতি ও প্রান্তিকীকরণ সুচির ব্যাপারে তাদের মোহভঙ্গের কারণ হয়েছে।
তবে ২০১৫ সালের নির্বাচনেও পশ্চিমাঞ্চলীয় রাখাইনেই সুচি বড় ধরাটা খেয়েছিল রাখাইনভিত্তিক আরাকান ন্যাশনাল পার্টি বা এএনপির কাছে। এবার সেসব জায়গাতেই নির্বাচন বাতিল করা হয়েছে যেখানে সুচির সমর্থন তুলনামূলক ভাবে কম। পাঁচটি আঞ্চলিক দল তাই নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা, স্বচ্ছতা ও সততা প্রশ্ন তুলেছেন। সবচেয়ে বড় বিষয় রাখাইনের এমন সব জায়গাতেও নির্বাচন বাতিল হয়েছে যেখানে কোনো ধরনের সহিংসতাই নেই। যেমন রাখাইনের পকতাও শহরে নির্বাচন বাতিল হয়েছে, যেখানে কোনো ধরনের সহিংসতা নেই। গত নির্বাচনে সেখানে এএনপি জিতেছিল। এদিকে পলেতোয়া শহরে যেখানে সহিংসতা লেগেই থাকে সেখানে নির্বাচন হবে। আগের নির্বাচনে এখানে সুচির এনএলডি জিতেছিল।
নির্বাচন কমিশন গত সপ্তাহে সংবাদ মাধ্যমকে জানান, তারা সরকার, প্রতিরক্ষা ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, সেনাবাহিনী ও পুলিশের সুপারিশের ভিত্তিতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পকতাউয়ের এএনপির মনোনীত প্রার্থী অং কিয়াউ হতোয়ি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, প্রতিনিধিত্ব না থাকা নিয়ে মানুষের ক্ষোভের বিষয় যদি সমাধান না হয়, তাহলে পরিস্থিতি আরো খারাপ হবে।
তিনি আরো বলেন, রাখাইন অঞ্চলের বেশিরভাগ জায়গায় নির্বাচন বাতিলের ফল হবে আরো তীব্র সংঘাত। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের এই সিদ্ধান্ত রাজ্যের স্থিতিশীলতা ও পুনর্গঠন প্রক্রিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তবে নির্বাচন বাদেও আমি রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতির সম্ভাব্য অবনতির কথা ভাবছি, বলেন তিনি।
প্রসঙ্গত, গত সেপ্টেম্বর থেকে এ পর্যন্ত সরকারবিরোধী বিক্ষোভ করায় বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৬ অক্টোবর নির্বাচন বাতিলের ঘোষণা আসার পর তার বিরুদ্ধে বিক্ষোভের কারণে চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে যার মধ্যে তিনজনই ছাত্র।
বৃহস্পতিবার, ২৯ অক্টোবর ২০২০
মিয়ানমারে আগামী ৯ নভেম্বর অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় নির্বাচনে ১৫ লাখের বেশি মানুষ ভোট দিতে পারবেন না। সহিংসতাপূর্ণ এলাকাগুলোতে ভোট বাতিল করায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের এ সিদ্ধান্তে ভোটের সুষ্ঠুতা নিয়েও সংশয় বেড়েছে বলে জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম আল জাজিরা। বাতিল হওয়া ভোটকেন্দ্রগুলোর প্রায় সবই দেশটির পশ্চিমাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্যে। সেখানে ২০১৮ সাল থেকে স্বায়ত্তশাসনকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সঙ্গে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘাত বাড়ছে। এখানে ভোটারের সংখ্যা ১২ লাখ।
বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, ভোট দিতে না পারায় এখানকার মানুষের সঙ্গে দেশের বাকি অংশের আরো বিচ্ছিন্নতা তৈরি হবে, যার ফলে এখানকার সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো আরো সমর্থন পাবে। সর্বশেষ ২০১৫ সালের নির্বাচনে অং সান সুচির নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) ভূমিধ্বস বিজয় লাভ করে।
মিয়ানমারের ইনস্টিটিউট অব পীস এন্ড সিকিউরিটির নির্বাহী পরিচালন মিন জ ও বলেন, “কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের ভোট বাতিলের এই সিদ্ধান্তে স্বচ্ছতা যেমন নেই, তা সঙ্গতিপূর্ণও না।” তিনি বলেন এই সিদ্ধান্তের ফলে ৭৩ শতাংশ রাখাইন ভোটাধিকার বঞ্চিত হবে। এর ফলে জাতীয় পুনর্গঠন প্রক্রিয়া ঝুঁকির মধ্যে পড়বে।
গত ১৬ অক্টোবর নির্বাচন কমিশন নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণ দেখিয়ে এসব এলাকায় নির্বাচন বাতিল করে। নির্বাচন কমিশনের ভাষ্য, সহিংস পরিস্থিতির কারণে এসব এলাকায় নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হওয়ার নিশ্চয়তা তারা দিতে পারবে না। ২০১৫ নির্বাচনেও এসব জায়গায় নির্বাচন বাতিল করা হয়। তবে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে তখন থেকেই প্রশ্ন আছে।
আসন্ন নির্বাচনে ৯২টি রাজনৈতিক দল অংশ নিচ্ছে। এর মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে মূলত সুচির নেতৃত্বাধীন এনএলডি এবং সেনা-ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ইউনিয়ন সলিডারিটি এন্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টির মধ্যে। অং সান সুচির দলের জনপ্রিয়তা মূলত সংখ্যাগরিষ্ঠ নৃগোষ্ঠীর মধ্যে। তাদের সমর্থনেই তার বৈতরণী পেরোনোর কথা। আগে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলোর কাছ থেকেও সমর্থন পেতেন তিনি। ২০১৫ নির্বাচনের আগেও তার প্রতিশ্রুতি ছিল - শান্তি নিশ্চিত করা। কিন্তু গত পাঁচ বছরে সংখ্যালঘু নৃগোষ্ঠীর মানুষের ওপর নিপীড়ন, তাদের ব্যাপক বাস্তুচ্যুতি ও প্রান্তিকীকরণ সুচির ব্যাপারে তাদের মোহভঙ্গের কারণ হয়েছে।
তবে ২০১৫ সালের নির্বাচনেও পশ্চিমাঞ্চলীয় রাখাইনেই সুচি বড় ধরাটা খেয়েছিল রাখাইনভিত্তিক আরাকান ন্যাশনাল পার্টি বা এএনপির কাছে। এবার সেসব জায়গাতেই নির্বাচন বাতিল করা হয়েছে যেখানে সুচির সমর্থন তুলনামূলক ভাবে কম। পাঁচটি আঞ্চলিক দল তাই নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা, স্বচ্ছতা ও সততা প্রশ্ন তুলেছেন। সবচেয়ে বড় বিষয় রাখাইনের এমন সব জায়গাতেও নির্বাচন বাতিল হয়েছে যেখানে কোনো ধরনের সহিংসতাই নেই। যেমন রাখাইনের পকতাও শহরে নির্বাচন বাতিল হয়েছে, যেখানে কোনো ধরনের সহিংসতা নেই। গত নির্বাচনে সেখানে এএনপি জিতেছিল। এদিকে পলেতোয়া শহরে যেখানে সহিংসতা লেগেই থাকে সেখানে নির্বাচন হবে। আগের নির্বাচনে এখানে সুচির এনএলডি জিতেছিল।
নির্বাচন কমিশন গত সপ্তাহে সংবাদ মাধ্যমকে জানান, তারা সরকার, প্রতিরক্ষা ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, সেনাবাহিনী ও পুলিশের সুপারিশের ভিত্তিতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পকতাউয়ের এএনপির মনোনীত প্রার্থী অং কিয়াউ হতোয়ি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, প্রতিনিধিত্ব না থাকা নিয়ে মানুষের ক্ষোভের বিষয় যদি সমাধান না হয়, তাহলে পরিস্থিতি আরো খারাপ হবে।
তিনি আরো বলেন, রাখাইন অঞ্চলের বেশিরভাগ জায়গায় নির্বাচন বাতিলের ফল হবে আরো তীব্র সংঘাত। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের এই সিদ্ধান্ত রাজ্যের স্থিতিশীলতা ও পুনর্গঠন প্রক্রিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তবে নির্বাচন বাদেও আমি রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতির সম্ভাব্য অবনতির কথা ভাবছি, বলেন তিনি।
প্রসঙ্গত, গত সেপ্টেম্বর থেকে এ পর্যন্ত সরকারবিরোধী বিক্ষোভ করায় বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৬ অক্টোবর নির্বাচন বাতিলের ঘোষণা আসার পর তার বিরুদ্ধে বিক্ষোভের কারণে চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে যার মধ্যে তিনজনই ছাত্র।