সব জল্পনাকল্পনা উড়িয়ে দিয়ে বড় ধরনের জয় পেলো তৃণমূল। নির্বাচনী প্রচারণায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আর পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মধ্যকার তিক্ত লড়াই শেষে বিজেপির শক্তিকে পরাস্ত করে এই জয়।
রবিবার সন্ধ্যের মধ্যেই নির্বাচনী ফলাফল একরকম পরিস্কার। প্রাথমিক হিসেব বলছে রাজ্যের প্রায় ৪৮ শতাংশ ভোট গিয়েছে তৃণমূলের ঝুলিতে। ‘এ বিজয় বাঙালির জয়’, নির্বাচনী ফলের প্রেক্ষিতে অভিমত মমতার। যদিও নন্দীগ্রামে তার নিজের জয় নিয়ে সন্দেহ দেখা দেয়ার পর ঘোষণা করা হলো তিনি হেরে গেছেন।
তবে বলা যায় তৃতীয়বারের মতো মুখ্যমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন মমতা। তার কর্মীদের স্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছেন তার সবচেয়ে বড় অগ্রাধিকার করোনার বিরুদ্ধে লড়াই। সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গে করোনা পরিস্থিতি মারাত্মক আকার ধারণ করেছে।
এদিকে এই নির্বাচনে তৃণমূলের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠা বিজেপির পশ্চিমবঙ্গ জয়ের স্বপ্ন মাত্র ৭০ এর কোঠায় ঠেকে গেছে। এ পর্যন্ত তাদের পক্ষে ভোটের যে হিসেব তা ২০১৯ এর লোকসভা নির্বাচনে তাদের পাওয়া ভোটের তুলনায় কম।
তবে এই নির্বাচনের ফলাফল বিজেপির জন্য আরো বড় ধাক্কা হয়েছে কেননা প্রধানমন্ত্রী মোদী নিজে নির্বাচন শুরুর পর বলেছিলেন এই রাজ্য নির্বাচনে বিজেপি ২০০টির ওপর আসন পাবে। এবারই প্রথম আটদফায় ভোট গ্রহণ হয় পশ্চিমবঙ্গে।
পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলের দুর্গ ভাঙতে মোদী এবং ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ দুজনই পালা করে দেড়মাস পুরোরাজ্যে দীর্ঘ, কষ্টকর নির্বাচনী প্রচারণা চালান।
এছাড়াও আরো কয়েকজন মুখ্যমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকেও মাঠে নামানো হয়। এর বিপরীতে তৃণমূলের ছিল শুধু মমতা। আর তার স্লোগান - বাংলা নিজের মেয়েকেই চায়।
নির্বাচনী প্রচারণার শুরুতে নেতাদের বিরুদ্ধে ঘুষ, দুর্নীতির অভিযোগ তুললে রক্ষণাত্নক অবস্থান নেয় তৃণমূল। তবে ধর্ম, বর্ণের উর্ধ্বে বাঙালিয়ানাকে সামনে রাখায় ভোটাররা তাদের ওপর আস্থা রেখেছে বলে মনে করা হচ্ছে।
তাদের সামনে যে দৃশ্যটি ছিল সেটি হচ্ছে একজন নারী একাই লড়ে যাচ্ছেন একদল নেতার বিরুদ্ধে, যারা তার দুর্গ ভাঙতে চাইছে।
এছাড়া মোদির ‘দিদি, ও দিদি’ সম্বোধনটাও ভালোভাবে নেয়নি মানুষ। ভারতের অপরাপর রাজ্য থেকে পশ্চিমবঙ্গে নারীদের অবস্থান সামাজিক, অর্থনৈতিকভাবে অন্য রাজ্যের তুলনায় ভালো। তাছাড়া নারীরা তৃণমূলের বড় ভোটব্যাংক।
তাছাড়া হিন্দির পুনরাবৃত্ত ব্যবহারও পছন্দ করেনি বাঙালিরা, বিশেষ করে যখন গত কয়েক বছর ধরে সেখানে আত্মপরিচয় রাজনীতিতে গুরুত্ব পেতে শুরু করেছে।
তবে তৃণমূলের নির্বাচনী পালে হাওয়া লাগে তৃতীয় দফা ভোট গ্রহণের পর, যখন মমতা নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে কোভিড-১৯ অব্যবস্থাপনার অভিযোগ তুলে হাওয়া ঘুরিয়ে দেন। হঠাৎ করেই বিজেপি নেতাদের দেখা যায় কোভিড-১৯ অব্যবস্থাপনার অভিযোগ থেকে নিজেদের রক্ষা করার চেষ্টা করছেন।
বামফ্রন্টের ৩৪ বছরের শাসনামলের আগে দুই যুগ ক্ষমতায় ছিল কংগ্রেস। এই নির্বাচনে দুই পক্ষই কার্যত শূন্য হয়ে গেছে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, নির্বাচনটা দ্বিমেরুকেন্দ্রিক লড়াইয়ে পর্যবসিত হওয়ায় তৃণমূল ও বিজেপির বাইরে বাকিরা আর গুরুত্ব পায়নি।
এখন তৃণমূল নেতাদের ভাবনায় আগামী ২০২৪ এর জাতীয় নির্বাচন। ইতোমধ্যেই মমতা বিভিন্ন রাজ্যের বিজেপি বিরোধীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। তারা আশা করছেন, সেই নির্বাচনে তারা এক হয়েই বিজেপি হঠাতে লড়বেন।
লেখক ভারতের সাংবাদিক
সোমবার, ০৩ মে ২০২১
সব জল্পনাকল্পনা উড়িয়ে দিয়ে বড় ধরনের জয় পেলো তৃণমূল। নির্বাচনী প্রচারণায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আর পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মধ্যকার তিক্ত লড়াই শেষে বিজেপির শক্তিকে পরাস্ত করে এই জয়।
রবিবার সন্ধ্যের মধ্যেই নির্বাচনী ফলাফল একরকম পরিস্কার। প্রাথমিক হিসেব বলছে রাজ্যের প্রায় ৪৮ শতাংশ ভোট গিয়েছে তৃণমূলের ঝুলিতে। ‘এ বিজয় বাঙালির জয়’, নির্বাচনী ফলের প্রেক্ষিতে অভিমত মমতার। যদিও নন্দীগ্রামে তার নিজের জয় নিয়ে সন্দেহ দেখা দেয়ার পর ঘোষণা করা হলো তিনি হেরে গেছেন।
তবে বলা যায় তৃতীয়বারের মতো মুখ্যমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন মমতা। তার কর্মীদের স্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছেন তার সবচেয়ে বড় অগ্রাধিকার করোনার বিরুদ্ধে লড়াই। সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গে করোনা পরিস্থিতি মারাত্মক আকার ধারণ করেছে।
এদিকে এই নির্বাচনে তৃণমূলের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠা বিজেপির পশ্চিমবঙ্গ জয়ের স্বপ্ন মাত্র ৭০ এর কোঠায় ঠেকে গেছে। এ পর্যন্ত তাদের পক্ষে ভোটের যে হিসেব তা ২০১৯ এর লোকসভা নির্বাচনে তাদের পাওয়া ভোটের তুলনায় কম।
তবে এই নির্বাচনের ফলাফল বিজেপির জন্য আরো বড় ধাক্কা হয়েছে কেননা প্রধানমন্ত্রী মোদী নিজে নির্বাচন শুরুর পর বলেছিলেন এই রাজ্য নির্বাচনে বিজেপি ২০০টির ওপর আসন পাবে। এবারই প্রথম আটদফায় ভোট গ্রহণ হয় পশ্চিমবঙ্গে।
পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলের দুর্গ ভাঙতে মোদী এবং ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ দুজনই পালা করে দেড়মাস পুরোরাজ্যে দীর্ঘ, কষ্টকর নির্বাচনী প্রচারণা চালান।
এছাড়াও আরো কয়েকজন মুখ্যমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকেও মাঠে নামানো হয়। এর বিপরীতে তৃণমূলের ছিল শুধু মমতা। আর তার স্লোগান - বাংলা নিজের মেয়েকেই চায়।
নির্বাচনী প্রচারণার শুরুতে নেতাদের বিরুদ্ধে ঘুষ, দুর্নীতির অভিযোগ তুললে রক্ষণাত্নক অবস্থান নেয় তৃণমূল। তবে ধর্ম, বর্ণের উর্ধ্বে বাঙালিয়ানাকে সামনে রাখায় ভোটাররা তাদের ওপর আস্থা রেখেছে বলে মনে করা হচ্ছে।
তাদের সামনে যে দৃশ্যটি ছিল সেটি হচ্ছে একজন নারী একাই লড়ে যাচ্ছেন একদল নেতার বিরুদ্ধে, যারা তার দুর্গ ভাঙতে চাইছে।
এছাড়া মোদির ‘দিদি, ও দিদি’ সম্বোধনটাও ভালোভাবে নেয়নি মানুষ। ভারতের অপরাপর রাজ্য থেকে পশ্চিমবঙ্গে নারীদের অবস্থান সামাজিক, অর্থনৈতিকভাবে অন্য রাজ্যের তুলনায় ভালো। তাছাড়া নারীরা তৃণমূলের বড় ভোটব্যাংক।
তাছাড়া হিন্দির পুনরাবৃত্ত ব্যবহারও পছন্দ করেনি বাঙালিরা, বিশেষ করে যখন গত কয়েক বছর ধরে সেখানে আত্মপরিচয় রাজনীতিতে গুরুত্ব পেতে শুরু করেছে।
তবে তৃণমূলের নির্বাচনী পালে হাওয়া লাগে তৃতীয় দফা ভোট গ্রহণের পর, যখন মমতা নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে কোভিড-১৯ অব্যবস্থাপনার অভিযোগ তুলে হাওয়া ঘুরিয়ে দেন। হঠাৎ করেই বিজেপি নেতাদের দেখা যায় কোভিড-১৯ অব্যবস্থাপনার অভিযোগ থেকে নিজেদের রক্ষা করার চেষ্টা করছেন।
বামফ্রন্টের ৩৪ বছরের শাসনামলের আগে দুই যুগ ক্ষমতায় ছিল কংগ্রেস। এই নির্বাচনে দুই পক্ষই কার্যত শূন্য হয়ে গেছে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, নির্বাচনটা দ্বিমেরুকেন্দ্রিক লড়াইয়ে পর্যবসিত হওয়ায় তৃণমূল ও বিজেপির বাইরে বাকিরা আর গুরুত্ব পায়নি।
এখন তৃণমূল নেতাদের ভাবনায় আগামী ২০২৪ এর জাতীয় নির্বাচন। ইতোমধ্যেই মমতা বিভিন্ন রাজ্যের বিজেপি বিরোধীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। তারা আশা করছেন, সেই নির্বাচনে তারা এক হয়েই বিজেপি হঠাতে লড়বেন।
লেখক ভারতের সাংবাদিক