অপরাধ কমাতে পুলিশের কাছে ওইভাবে কোনো ‘ম্যাজিক’ নেই বলে মন্তব্য করেছেন পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম। তিনি বলেন, অপরাধ কমাতে ব্যবস্থা নিচ্ছি। শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সের আয়োজিত বাংলাদেশ অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসার্স কল্যাণ সমিতির (বিআরপিওয়া) অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
ঢাকাসহ সারাদেশে চুরি, ছিনতাই ও হত্যাকা- বেড়েছে। এসব অপরাধ কমাতে পুলিশ কি ভূমিকা নিচ্ছে। সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে আইজিপি বলেন, আপনারা দেখছেন আমরা কি কি ব্যবস্থা নিচ্ছি, এসব অপরাধ কমাতে। তিনি বলেন, ঢাকাসহ সারাদেশের পুলিশ সুপারকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আপনারা জানেন কি অবস্থা এবং কোথা থেকে উঠে এসে আমাদের কাজ করতে হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, পুলিশ বাহিনীকে জাগিয়ে তোলা, আস্থা ও মনোবল ফিরিয়ে আনতে কাজ করে যাচ্ছি। আমরা চাই মানুষের আরও কাছে যেতে। মানুষ আমাদের আরেকটু সহযোগিতা করুক, গ্রহণ করুক। এছাড়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে প্রতিনিধিদেরও সাহায্য চাচ্ছি। তারা যেন আমাদের কমিউনিটির কাছে নিয়ে যেতে আরেকটু প্রচেষ্টা চালান। আমি মনে করি এটা ছাড়া পুলিশ এককভাবে ক্রাইম (অপরাধ), উই ক্যান নট ফাইট ইট, তবে আমরা চেষ্টা করছি।
আইজিপি আরও বলেন, পুলিশের যেসব কর্মকর্তার চাকরি ১০-১২ দিন আছে তাদের পদোন্নতির ব্যবস্থা করা হচ্ছে। পুলিশ প্রধান আরও বলেন, আমি নিজে অবসরে গিয়েছিলাম। আবার দায়িত্ব পেয়েছি। কতটুকু দায়িত্ব পালন করতে পারবো জানি না। তবে চেষ্টা করবো, আপনাদের সাহায্য ও পরামর্শ চাই। বিদায়ের সময় যেন সম্মানটা নিয়ে যেতে পারি।
বিভিন্ন জেলার ছাত্র সমন্বয়কদের হত্যার হুমকির প্রশ্নে আইজিপি বলেন, প্রতিটি ঘটনা এনালাইসিস করেছি এবং সুরাহা করেছি। কালিয়াকৈরের ঘটনা ছিনতাইয়ের। নারায়ণগঞ্জের ঘটনা মোবাইল ছিনতাইয়ের। ছাত্র সমন্বয়কদের নারায়ণগঞ্জ নিয়ে গেছি। তারা দেখেছেন, ভুক্তভোগীর পরিবারের সঙ্গে কথাও বলেছেন। তারাও সন্তুষ্ট। এটা টার্গেট কিলিং নয়। এছাড়া দুটি হুমকির ঘটনা আছে। একটা ময়মনসিংহের। সেই স্কুল ছাত্রকে অ্যারেস্ট করেছিলাম। সে দশম শ্রেণীর ছাত্র। আমরা তার বাবা-মায়ের জিম্মায় ফেরত দিয়েছি।
তিনি বলেন, ব্র্যাকের মেহের নামের একজন ছাত্রকে হুমকি দেয়া হয়েছিল। সেটি সত্য। এ ঘটনায় সিরাজগঞ্জ থেকে জাহিদ হাসান নামের একজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। প্রতিটি ঘটনার সুরাহার জন্য চেষ্টা করছি। তবে প্রতিটি ঘটনা একইসূত্রে গাঁথা তা নয়। সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে আইজিপি বলেন, এটা কমিটি বলবে, আমি বলতে পারবো না।
এদিকে জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে পুলিশের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে থাকবে বলে উল্লেখ করে ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী বলেছেন, এখনও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গিয়ে নিজেদের পুলিশ অফিসার পরিচয় দিতে লজ্জাবোধ করছি।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে পুলিশের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে থাকবে। স্বাধীনতার ৫২ বছর পরে এমন পুলিশ এদেশের মানুষ দেখতে চাননি। আন্দোলনে হাজার জন ছাত্র-জনতার মৃত্যু দুঃখের কাহিনী রচনা করেছে। আমরা স্বাধীন দেশের পুলিশ। কী কারণে মানুষের এত ক্ষোভ পুলিশের উপরে? জুলাই-আগস্টের ঘটনা আমাদের সামাজিকভাবে অনেক নিগৃহীত করেছে। এখন পর্যন্ত সমাজের বিভিন্ন স্তরের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গিয়ে নিজেদেরকে পুলিশ অফিসার পরিচয় দিতে লজ্জাবোধ করছি। এই ট্রমা থেকে আমাদের বের হয়ে আসতে হবে। বের হয়ে আসার জন্য একটিই উপায়, মানুষকে আমাদের সেবা দিতে হবে। সেবাদানের মাধ্যমেই একমাত্র পুলিশের হারানো ইমেজ বা গৌরবকে পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হবো, ইনশাআল্লাহ্।
৫ আগস্টের ঘটনা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ৭২ ঘণ্টা আগেও যদি তখনকার নেতৃতে থাকা পুলিশ অফিসাররা সঠিক সিদ্ধান্ত নিতেন তাহলে অনেকের জীবন রক্ষা হতো। পাশাপাশি পুলিশ সদস্যদেরও জীবন রক্ষা হতো। কিন্তু এরূপ সিদ্ধান্ত তখন নেয়া হয়নি।
ডিএমপি কমিশনার আরও বলেন, বিশেষ করে পুলিশে গত ১৫ বছরে যারা নেতৃত্বে ছিলেন তারা কী ভূমিকা রেখেছিলেন? তারা কী কর্মকা- করলেন যে এদেশের মানুষ পুলিশের প্রতি এত বিরক্ত হলো? যার বহিঃপ্রকাশ ৪৪ জন পুলিশ সদস্যকে জীবন দিতে হলো, শত-শত সহকর্মীকে নানাভাবে ক্ষত-বিক্ষত হতে হলো। সঙ্গে পুলিশের থানা, ফাঁড়ি, অস্ত্র লুট হয়ে গেলো। পুলিশের যারা নেতৃত্বে ছিলেন তারা সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কিনা বা নিতে পেরেছেন কিনা, সেই বিচারের বিবেচনা আপনাদের হাতে ছেড়ে দিলাম।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে অনেক অ্যাসোসিয়েশন আছে, আমাদের দুইটি আছে। একটি সার্ভিং অফিসারদের, আরেকটি রিটায়ার্ড অফিসারদের। সব অ্যাসোসিয়েশনেই প্রতিযোগিতা, মতপার্থক্য থাকবে। কিন্তু আমি আশা করি সার্ভিং এবং অবসরপ্রাপ্ত অ্যাসোসিয়েশনের মতপার্থক্য কমিয়ে এনে নিজেদের ঐক্যবদ্ধ রেখে এগিয়ে যেতে হবে। ডিএমপি কমিশনার বলেন, পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত অ্যাসোসিয়েশন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সেই ভূমিকা পালন করতে পারেনি। বিভিন্ন সামাজিক ও বিভিন্ন বিষয়ে এই সংগঠন যেন আরও জোরালো ভূমিকা পালন করে। বাংলাদেশ অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসার্স কল্যাণ সমিতির (বিআরপিওয়া) সভাপতি এম আকবর আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম।
রোববার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪
অপরাধ কমাতে পুলিশের কাছে ওইভাবে কোনো ‘ম্যাজিক’ নেই বলে মন্তব্য করেছেন পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম। তিনি বলেন, অপরাধ কমাতে ব্যবস্থা নিচ্ছি। শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সের আয়োজিত বাংলাদেশ অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসার্স কল্যাণ সমিতির (বিআরপিওয়া) অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
ঢাকাসহ সারাদেশে চুরি, ছিনতাই ও হত্যাকা- বেড়েছে। এসব অপরাধ কমাতে পুলিশ কি ভূমিকা নিচ্ছে। সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে আইজিপি বলেন, আপনারা দেখছেন আমরা কি কি ব্যবস্থা নিচ্ছি, এসব অপরাধ কমাতে। তিনি বলেন, ঢাকাসহ সারাদেশের পুলিশ সুপারকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আপনারা জানেন কি অবস্থা এবং কোথা থেকে উঠে এসে আমাদের কাজ করতে হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, পুলিশ বাহিনীকে জাগিয়ে তোলা, আস্থা ও মনোবল ফিরিয়ে আনতে কাজ করে যাচ্ছি। আমরা চাই মানুষের আরও কাছে যেতে। মানুষ আমাদের আরেকটু সহযোগিতা করুক, গ্রহণ করুক। এছাড়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে প্রতিনিধিদেরও সাহায্য চাচ্ছি। তারা যেন আমাদের কমিউনিটির কাছে নিয়ে যেতে আরেকটু প্রচেষ্টা চালান। আমি মনে করি এটা ছাড়া পুলিশ এককভাবে ক্রাইম (অপরাধ), উই ক্যান নট ফাইট ইট, তবে আমরা চেষ্টা করছি।
আইজিপি আরও বলেন, পুলিশের যেসব কর্মকর্তার চাকরি ১০-১২ দিন আছে তাদের পদোন্নতির ব্যবস্থা করা হচ্ছে। পুলিশ প্রধান আরও বলেন, আমি নিজে অবসরে গিয়েছিলাম। আবার দায়িত্ব পেয়েছি। কতটুকু দায়িত্ব পালন করতে পারবো জানি না। তবে চেষ্টা করবো, আপনাদের সাহায্য ও পরামর্শ চাই। বিদায়ের সময় যেন সম্মানটা নিয়ে যেতে পারি।
বিভিন্ন জেলার ছাত্র সমন্বয়কদের হত্যার হুমকির প্রশ্নে আইজিপি বলেন, প্রতিটি ঘটনা এনালাইসিস করেছি এবং সুরাহা করেছি। কালিয়াকৈরের ঘটনা ছিনতাইয়ের। নারায়ণগঞ্জের ঘটনা মোবাইল ছিনতাইয়ের। ছাত্র সমন্বয়কদের নারায়ণগঞ্জ নিয়ে গেছি। তারা দেখেছেন, ভুক্তভোগীর পরিবারের সঙ্গে কথাও বলেছেন। তারাও সন্তুষ্ট। এটা টার্গেট কিলিং নয়। এছাড়া দুটি হুমকির ঘটনা আছে। একটা ময়মনসিংহের। সেই স্কুল ছাত্রকে অ্যারেস্ট করেছিলাম। সে দশম শ্রেণীর ছাত্র। আমরা তার বাবা-মায়ের জিম্মায় ফেরত দিয়েছি।
তিনি বলেন, ব্র্যাকের মেহের নামের একজন ছাত্রকে হুমকি দেয়া হয়েছিল। সেটি সত্য। এ ঘটনায় সিরাজগঞ্জ থেকে জাহিদ হাসান নামের একজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। প্রতিটি ঘটনার সুরাহার জন্য চেষ্টা করছি। তবে প্রতিটি ঘটনা একইসূত্রে গাঁথা তা নয়। সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে আইজিপি বলেন, এটা কমিটি বলবে, আমি বলতে পারবো না।
এদিকে জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে পুলিশের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে থাকবে বলে উল্লেখ করে ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী বলেছেন, এখনও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গিয়ে নিজেদের পুলিশ অফিসার পরিচয় দিতে লজ্জাবোধ করছি।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে পুলিশের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে থাকবে। স্বাধীনতার ৫২ বছর পরে এমন পুলিশ এদেশের মানুষ দেখতে চাননি। আন্দোলনে হাজার জন ছাত্র-জনতার মৃত্যু দুঃখের কাহিনী রচনা করেছে। আমরা স্বাধীন দেশের পুলিশ। কী কারণে মানুষের এত ক্ষোভ পুলিশের উপরে? জুলাই-আগস্টের ঘটনা আমাদের সামাজিকভাবে অনেক নিগৃহীত করেছে। এখন পর্যন্ত সমাজের বিভিন্ন স্তরের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গিয়ে নিজেদেরকে পুলিশ অফিসার পরিচয় দিতে লজ্জাবোধ করছি। এই ট্রমা থেকে আমাদের বের হয়ে আসতে হবে। বের হয়ে আসার জন্য একটিই উপায়, মানুষকে আমাদের সেবা দিতে হবে। সেবাদানের মাধ্যমেই একমাত্র পুলিশের হারানো ইমেজ বা গৌরবকে পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হবো, ইনশাআল্লাহ্।
৫ আগস্টের ঘটনা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ৭২ ঘণ্টা আগেও যদি তখনকার নেতৃতে থাকা পুলিশ অফিসাররা সঠিক সিদ্ধান্ত নিতেন তাহলে অনেকের জীবন রক্ষা হতো। পাশাপাশি পুলিশ সদস্যদেরও জীবন রক্ষা হতো। কিন্তু এরূপ সিদ্ধান্ত তখন নেয়া হয়নি।
ডিএমপি কমিশনার আরও বলেন, বিশেষ করে পুলিশে গত ১৫ বছরে যারা নেতৃত্বে ছিলেন তারা কী ভূমিকা রেখেছিলেন? তারা কী কর্মকা- করলেন যে এদেশের মানুষ পুলিশের প্রতি এত বিরক্ত হলো? যার বহিঃপ্রকাশ ৪৪ জন পুলিশ সদস্যকে জীবন দিতে হলো, শত-শত সহকর্মীকে নানাভাবে ক্ষত-বিক্ষত হতে হলো। সঙ্গে পুলিশের থানা, ফাঁড়ি, অস্ত্র লুট হয়ে গেলো। পুলিশের যারা নেতৃত্বে ছিলেন তারা সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কিনা বা নিতে পেরেছেন কিনা, সেই বিচারের বিবেচনা আপনাদের হাতে ছেড়ে দিলাম।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে অনেক অ্যাসোসিয়েশন আছে, আমাদের দুইটি আছে। একটি সার্ভিং অফিসারদের, আরেকটি রিটায়ার্ড অফিসারদের। সব অ্যাসোসিয়েশনেই প্রতিযোগিতা, মতপার্থক্য থাকবে। কিন্তু আমি আশা করি সার্ভিং এবং অবসরপ্রাপ্ত অ্যাসোসিয়েশনের মতপার্থক্য কমিয়ে এনে নিজেদের ঐক্যবদ্ধ রেখে এগিয়ে যেতে হবে। ডিএমপি কমিশনার বলেন, পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত অ্যাসোসিয়েশন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সেই ভূমিকা পালন করতে পারেনি। বিভিন্ন সামাজিক ও বিভিন্ন বিষয়ে এই সংগঠন যেন আরও জোরালো ভূমিকা পালন করে। বাংলাদেশ অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসার্স কল্যাণ সমিতির (বিআরপিওয়া) সভাপতি এম আকবর আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম।