আগামীতে বিশ্বের বাণিজ্যে রাজনীতিকরণের কারণে বড় দেশ এবং তাদের বাণিজ্য অংশীদারদের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক প্রাধান্য পাবে বলে মন্তব্য করেছেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন থেকে ভারত পর্যন্ত সব দেশের সঙ্গে আলাদা দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কে প্রবেশ করতে হবে।’
সোমবার রাজধানীর মহাখালীর ব্র্যাক ইন সেন্টারে এক সেমিনারে এসব কথা বলেন রেহমান সোবহান। সেমিনারের আয়োজন করে সিপিডি। দুই দিনব্যাপী কনফারেন্সের প্রথম সেশনে সভাপতিত্ব করেন অর্থনীতির পুনঃকৌশলীকরণ টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান ড. কে এ এস মুর্শিদ। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্য উপদেষ্টা সেখ বশির উদ্দিন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন টাস্কফোর্সের সদস্য সেলিম রায়হান এবং ড. মোহাম্মদ এ রাজ্জাক।
রেহমান সোবহান বলেন, ‘ট্রাম্প চীনের ওপর ৩০ শতাংশ শুল্ক চাপাতে পারেন, কিন্তু যদি তিনি অন্য কোথাও কোনো রাজনৈতিক চুক্তি করেন, তবে তিনি এটিকে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনতে পারেন। কিন্তু আপনি ৩০ শতাংশ অ্যাক্সেসের সুবিধা নিয়েছেন। তাই এটিও একটি সমস্যা যা আপনাকে সমাধান করতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা জিভ বের করে বসে আছি যে চীনা রপ্তানির ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক বাড়ানো হবে বলে আমরা স্বয়ংক্রিয়ভাবে সেই শূন্যস্থান পূরণ করতে সক্ষম হব। তবে আমি মনে করি না যে খেলাটি এভাবে হবে। উচ্চ শুল্ক আরোপের পাশাপাশি অন্যান্য বিভিন্ন অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা শক্তিশালী দেশগুলো রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। প্রথমে যুক্তরাষ্ট্র, তারপর ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধীরে ধীরে সেই বাজারে প্রবেশ করছে। ভারত ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রকে অনুসরণ করছে। চীনের নিজস্ব কিছু নীতি রয়েছে।’ সিপিডির চেয়ারম্যান বলেন, ‘সবাই মূলত স্বীকার করছে,
নিয়ম ভিত্তিক বাণিজ্যের পুরো বিশ্ব, যার ওপর তাত্ত্বিকভাবে ডব্লিউটিও প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এটি আসলে কখনোই নিয়ম ভিত্তিক ব্যবস্থা ছিল না। এটি ছিল পশ্চিমা দেশগুলোর তৈরি করা কল্পনার একটি অংশ।’
রপ্তানি বহুমুখীকরণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বাজারকে উপেক্ষা করা উচিত নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি। তিনি বলেন, ‘আপনি যদি চীনের মতো দেশগুলো দেখেন, চীন মূলত তার শিল্পায়ন প্রক্রিয়া শুরু করেছিল কারণ তাদের বিলিয়ন ডলারের একটি অভ্যন্তরীণ বাজার ছিল। চীনে আসা এফডিআইয়ের প্রধান প্রাথমিক আকর্ষণ ছিল চীনা বাজারে প্রবেশ করা।’
রেহমান সোবহান বলেন, ‘অটোমোবাইল নির্মাতাদের সবাই চীনে এসেছিল এবং যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে চীনকে অটোমোবাইলের বৃহত্তম প্রস্তুতকারক বানিয়েছিল। চীনের অভ্যন্তরীণ বাজার এর প্রধান আকর্ষণ ছিল। ইলেকট্রনিক গাড়ির ক্ষেত্রে চীন বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম রপ্তানিকারক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘সর্বোপরি, আপনার যদি ১৭৫ মিলিয়ন মানুষ থাকে এবং এই অভ্যন্তরীণ বাজার প্রতি বছর ৬ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পায়, এটি অবশ্যই একটি খুব আকর্ষণীয় বাজার। যারা বাংলাদেশে এফডিআই নিয়ে এসেছে তারাও সেই বাজারকে লক্ষ্য করে এসেছে। তাই এই বাজার পর্যাপ্তভাবে কাজে লাগানো হয়েছে কি না, কোনো গুণগত উন্নতি করা যেতে পারে কি না এ বিষয়ে ভাবতে হবে। অভ্যন্তরীণ বাজারে পরিপক্ব হওয়ার পর সেগুলো রপ্তানিতে পাঠানো যেতে পারে। যেমন: বাইসাইকেল, ইলেকট্রনিক এবং এ ধরনের পণ্যসহ এমন অনেক শিল্প রয়েছে যা পরিপক্বতা অর্জন করেছে এবং রপ্তানিতে পরিপক্বতা পাচ্ছে।’
সিপিডি চেয়ারম্যান বলেন, ‘রপ্তানি বহুমুখীকরণের ক্ষেত্রে গত ৩০ বছরে যে বিষয়গুলো বিকল্প হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল, এখনো তার সমাধান হয়নি। যতক্ষণ না আপনি সঠিকভাবে এটি নির্ণয় করতে পারবেন, ততক্ষণ আপনি ভবিষ্যতের জন্য সত্যিকারের নীতি সংস্কারের পরামর্শ দিতে পারবেন না। তাই এটি একটি বড় অমীমাংসিত সমস্যা। একাডেমিক গবেষণা এবং সরকারি নীতি প্রণয়ন উভয় স্তরেই প্রয়োজন।’
উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ‘উদাহরণস্বরূপ, চামড়া শিল্পের সমস্যা, আরএমজির বহুমুখীকরণ এবং ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ সম্পর্কিত সমস্যা। এই সমস্যাগুলো শুধু সাধারণভাবে আলোচিত হয়নি, বিশেষ টাস্ক ফোর্স গভীরভাবে এই সমস্যাগুলোর ওপর বিশেষভাবে লক্ষ্য রেখে কাজ করেছে।’
রেহমান সোবহান বলেন, ‘তাই রপ্তানির পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ বাজারের দিকে ফোকাস কারা উচিত। একদা আমাদের শুধু একটি সরকারি ইস্পাত কারখানা ছিল, চট্টগ্রাম ইস্পাত কারখানা, যা ১ লাখ টন খুব মৌলিক ইস্পাত সামগ্রী উৎপাদন করতো। এখন বিএসআরএমের মতো যেকোনো বড় কারখানা ১ মিলিয়ন টন ইস্পাত উৎপাদন করবে এবং তারা আরও বৈচিত্র্যময় এবং অত্যাধুনিক পণ্য উৎপাদন করবে।’
সিপিডি চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমি খুশি যে টাস্ক ফোর্সের প্রতিবেদনে মাঝারি এবং ক্ষুদ্র পরিসরের এমএসএমইগুলো কীভাবে তাদের পণ্যের মান উন্নয়ন করতে পারে, রপ্তানি খাতের সঙ্গে যুক্ত করতে পারে এবং সাপ্লাই চেইনে ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ তৈরির মাধ্যমে পণ্যগুলোর উৎপাদনশীলতা এবং গুণমান যোগ করতে পারে- এ সংক্রান্ত সুপারিশ আছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি বলবো যে আমরা সবাই দীর্ঘকাল ধরে এফডিআই নিয়ে কথা বলি এবং আমরা সত্যিই এফডিআই আকর্ষণ করতে সক্ষম হইনি। বাংলাদেশে থাকা এফডিআই বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে নিবিড় কথোপকথনের মাধ্যমে তাদের সমস্যা শুনে তা সমাধানে অগ্রসর হওয়া উচিত।’
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, ‘বিগত সময়ে দেশের সমগ্র অর্থনীতিতে দুর্বৃত্তায়ন হয়েছিল। অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প ও অর্থ পাচার এদেশের অর্থনীতির ব্যাপক ক্ষতি করেছে। ব্যাংকিং সেক্টর ও নানা অবকাঠামো নির্মাণে দুর্বৃত্তায়ন হয়েছে। অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে আমাদের রপ্তানি পণ্যের বহুমুখীকরণ ও শ্রমিকদের দক্ষতা বাড়াতে হবে। আমাদের বেশিরভাগ কাঁচামাল বিদেশ থেকে আসে। শ্রম উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, পণ্যের উৎপাদন ব্যয় কমানো ও দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে রপ্তানি বাড়াতে উদ্যোগ নিতে হবে।’
অনুষ্ঠানে সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘বিগত সময়ে যাদের পেট্রোনাইজ করা হয়েছে তারা মার্কেটে টিকে ছিল। আমাদের সার্বিকভাবে ম্যাইক্রে ইকোনিমি নিয়ে কাজ করতে হবে। দেশের অর্থনীতি সংশোধন করতে হয়েছে। অর্থনীতিকে পুনঃশোধন (রিসেট) করতে হবে। সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। বাজারকে তার গতিতে চলতে দিতে হবে। মেজর ডিরেগুলেশন প্রয়োজন।’
ব্যবসা বাণিজ্যের নিয়ন্ত্রণ ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর ওপরে দেয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘রপ্তানি ও অর্থনীতির জন্য সবচেয়ে বড় বাধা রেগুলেশন। ফ্রি মার্কেটের কথা বলে ব্যবসায় বাধা সৃষ্টি করা হয়েছে। বাজারকে উদার করতে হবে। বেসরকারি খাত থেকে রাজস্ব আসবে। ইজ অব ডুয়িং বিজনেস বাড়াতে হলে ডিরেগুলেশন করতে হবে।’
খসরু আরও বলেন, ‘আমি যখন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ছিলাম পোশাকে ইউডি এটা ইপিবিতে ছিল। ইপিবিতে থাকলে যা হয়, ওইখানে আমলাতন্ত্র আছে-দুর্নীতি হয়। রপ্তানিকারকরা আমার কাছে এলেন। তাদের বললাম, এটা যদি ইপিবি থেকে নিয়ে বিজিএমইএতে দিয়ে দেই, আপনারা কী নিজেরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন? তখন ব্যবসায়ীরা রাজি হলেন। আমি এটা ইপিবি থেকে বিজিএমইকে দিলাম। আজ পর্যন্ত এটা ভালোভাবে চলছে। অনেকগুলো কাজ সরকার যেগুলো করছে তার কিছু বের করে এনে ট্রেড বডিকে দিয়ে দিতে হবে।’
মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘এখনই সরকারের উচিত চিফ ট্রেড নেগোসিয়েটর অফিস তৈরি করা। যাতে ট্রেড পলিসিকে ওয়েল কর্ডিনেট করা যায়। প্রত্যেক যায়গায় যাতে সমন্বয় করা যায়।’
সেলিম রায়হান বলেন, ‘পোশাকের বাইরে শ্রমঘন শিল্পে আমাদের যেতে হবে। দক্ষতা ভিত্তিক পণ্য ও সেবার দিকে আমাদের যেতে হবে। পোশাক খাতেও বৈচিত্র্য আনতে হবে। আমাদের নীতিমালাগুলোর মধ্যে সমন্বয় আনতে হবে। আমরা দেখি একটি নীতি রপ্তানিকে উৎসাহিত করে, আবার আরেকটা নীতি রপ্তানিকে বাধাগ্রস্ত করছে।’
সোমবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
আগামীতে বিশ্বের বাণিজ্যে রাজনীতিকরণের কারণে বড় দেশ এবং তাদের বাণিজ্য অংশীদারদের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক প্রাধান্য পাবে বলে মন্তব্য করেছেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন থেকে ভারত পর্যন্ত সব দেশের সঙ্গে আলাদা দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কে প্রবেশ করতে হবে।’
সোমবার রাজধানীর মহাখালীর ব্র্যাক ইন সেন্টারে এক সেমিনারে এসব কথা বলেন রেহমান সোবহান। সেমিনারের আয়োজন করে সিপিডি। দুই দিনব্যাপী কনফারেন্সের প্রথম সেশনে সভাপতিত্ব করেন অর্থনীতির পুনঃকৌশলীকরণ টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান ড. কে এ এস মুর্শিদ। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্য উপদেষ্টা সেখ বশির উদ্দিন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন টাস্কফোর্সের সদস্য সেলিম রায়হান এবং ড. মোহাম্মদ এ রাজ্জাক।
রেহমান সোবহান বলেন, ‘ট্রাম্প চীনের ওপর ৩০ শতাংশ শুল্ক চাপাতে পারেন, কিন্তু যদি তিনি অন্য কোথাও কোনো রাজনৈতিক চুক্তি করেন, তবে তিনি এটিকে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনতে পারেন। কিন্তু আপনি ৩০ শতাংশ অ্যাক্সেসের সুবিধা নিয়েছেন। তাই এটিও একটি সমস্যা যা আপনাকে সমাধান করতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা জিভ বের করে বসে আছি যে চীনা রপ্তানির ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক বাড়ানো হবে বলে আমরা স্বয়ংক্রিয়ভাবে সেই শূন্যস্থান পূরণ করতে সক্ষম হব। তবে আমি মনে করি না যে খেলাটি এভাবে হবে। উচ্চ শুল্ক আরোপের পাশাপাশি অন্যান্য বিভিন্ন অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা শক্তিশালী দেশগুলো রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। প্রথমে যুক্তরাষ্ট্র, তারপর ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধীরে ধীরে সেই বাজারে প্রবেশ করছে। ভারত ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রকে অনুসরণ করছে। চীনের নিজস্ব কিছু নীতি রয়েছে।’ সিপিডির চেয়ারম্যান বলেন, ‘সবাই মূলত স্বীকার করছে,
নিয়ম ভিত্তিক বাণিজ্যের পুরো বিশ্ব, যার ওপর তাত্ত্বিকভাবে ডব্লিউটিও প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এটি আসলে কখনোই নিয়ম ভিত্তিক ব্যবস্থা ছিল না। এটি ছিল পশ্চিমা দেশগুলোর তৈরি করা কল্পনার একটি অংশ।’
রপ্তানি বহুমুখীকরণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বাজারকে উপেক্ষা করা উচিত নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি। তিনি বলেন, ‘আপনি যদি চীনের মতো দেশগুলো দেখেন, চীন মূলত তার শিল্পায়ন প্রক্রিয়া শুরু করেছিল কারণ তাদের বিলিয়ন ডলারের একটি অভ্যন্তরীণ বাজার ছিল। চীনে আসা এফডিআইয়ের প্রধান প্রাথমিক আকর্ষণ ছিল চীনা বাজারে প্রবেশ করা।’
রেহমান সোবহান বলেন, ‘অটোমোবাইল নির্মাতাদের সবাই চীনে এসেছিল এবং যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে চীনকে অটোমোবাইলের বৃহত্তম প্রস্তুতকারক বানিয়েছিল। চীনের অভ্যন্তরীণ বাজার এর প্রধান আকর্ষণ ছিল। ইলেকট্রনিক গাড়ির ক্ষেত্রে চীন বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম রপ্তানিকারক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘সর্বোপরি, আপনার যদি ১৭৫ মিলিয়ন মানুষ থাকে এবং এই অভ্যন্তরীণ বাজার প্রতি বছর ৬ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পায়, এটি অবশ্যই একটি খুব আকর্ষণীয় বাজার। যারা বাংলাদেশে এফডিআই নিয়ে এসেছে তারাও সেই বাজারকে লক্ষ্য করে এসেছে। তাই এই বাজার পর্যাপ্তভাবে কাজে লাগানো হয়েছে কি না, কোনো গুণগত উন্নতি করা যেতে পারে কি না এ বিষয়ে ভাবতে হবে। অভ্যন্তরীণ বাজারে পরিপক্ব হওয়ার পর সেগুলো রপ্তানিতে পাঠানো যেতে পারে। যেমন: বাইসাইকেল, ইলেকট্রনিক এবং এ ধরনের পণ্যসহ এমন অনেক শিল্প রয়েছে যা পরিপক্বতা অর্জন করেছে এবং রপ্তানিতে পরিপক্বতা পাচ্ছে।’
সিপিডি চেয়ারম্যান বলেন, ‘রপ্তানি বহুমুখীকরণের ক্ষেত্রে গত ৩০ বছরে যে বিষয়গুলো বিকল্প হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল, এখনো তার সমাধান হয়নি। যতক্ষণ না আপনি সঠিকভাবে এটি নির্ণয় করতে পারবেন, ততক্ষণ আপনি ভবিষ্যতের জন্য সত্যিকারের নীতি সংস্কারের পরামর্শ দিতে পারবেন না। তাই এটি একটি বড় অমীমাংসিত সমস্যা। একাডেমিক গবেষণা এবং সরকারি নীতি প্রণয়ন উভয় স্তরেই প্রয়োজন।’
উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ‘উদাহরণস্বরূপ, চামড়া শিল্পের সমস্যা, আরএমজির বহুমুখীকরণ এবং ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ সম্পর্কিত সমস্যা। এই সমস্যাগুলো শুধু সাধারণভাবে আলোচিত হয়নি, বিশেষ টাস্ক ফোর্স গভীরভাবে এই সমস্যাগুলোর ওপর বিশেষভাবে লক্ষ্য রেখে কাজ করেছে।’
রেহমান সোবহান বলেন, ‘তাই রপ্তানির পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ বাজারের দিকে ফোকাস কারা উচিত। একদা আমাদের শুধু একটি সরকারি ইস্পাত কারখানা ছিল, চট্টগ্রাম ইস্পাত কারখানা, যা ১ লাখ টন খুব মৌলিক ইস্পাত সামগ্রী উৎপাদন করতো। এখন বিএসআরএমের মতো যেকোনো বড় কারখানা ১ মিলিয়ন টন ইস্পাত উৎপাদন করবে এবং তারা আরও বৈচিত্র্যময় এবং অত্যাধুনিক পণ্য উৎপাদন করবে।’
সিপিডি চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমি খুশি যে টাস্ক ফোর্সের প্রতিবেদনে মাঝারি এবং ক্ষুদ্র পরিসরের এমএসএমইগুলো কীভাবে তাদের পণ্যের মান উন্নয়ন করতে পারে, রপ্তানি খাতের সঙ্গে যুক্ত করতে পারে এবং সাপ্লাই চেইনে ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ তৈরির মাধ্যমে পণ্যগুলোর উৎপাদনশীলতা এবং গুণমান যোগ করতে পারে- এ সংক্রান্ত সুপারিশ আছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি বলবো যে আমরা সবাই দীর্ঘকাল ধরে এফডিআই নিয়ে কথা বলি এবং আমরা সত্যিই এফডিআই আকর্ষণ করতে সক্ষম হইনি। বাংলাদেশে থাকা এফডিআই বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে নিবিড় কথোপকথনের মাধ্যমে তাদের সমস্যা শুনে তা সমাধানে অগ্রসর হওয়া উচিত।’
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, ‘বিগত সময়ে দেশের সমগ্র অর্থনীতিতে দুর্বৃত্তায়ন হয়েছিল। অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প ও অর্থ পাচার এদেশের অর্থনীতির ব্যাপক ক্ষতি করেছে। ব্যাংকিং সেক্টর ও নানা অবকাঠামো নির্মাণে দুর্বৃত্তায়ন হয়েছে। অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে আমাদের রপ্তানি পণ্যের বহুমুখীকরণ ও শ্রমিকদের দক্ষতা বাড়াতে হবে। আমাদের বেশিরভাগ কাঁচামাল বিদেশ থেকে আসে। শ্রম উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, পণ্যের উৎপাদন ব্যয় কমানো ও দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে রপ্তানি বাড়াতে উদ্যোগ নিতে হবে।’
অনুষ্ঠানে সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘বিগত সময়ে যাদের পেট্রোনাইজ করা হয়েছে তারা মার্কেটে টিকে ছিল। আমাদের সার্বিকভাবে ম্যাইক্রে ইকোনিমি নিয়ে কাজ করতে হবে। দেশের অর্থনীতি সংশোধন করতে হয়েছে। অর্থনীতিকে পুনঃশোধন (রিসেট) করতে হবে। সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। বাজারকে তার গতিতে চলতে দিতে হবে। মেজর ডিরেগুলেশন প্রয়োজন।’
ব্যবসা বাণিজ্যের নিয়ন্ত্রণ ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর ওপরে দেয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘রপ্তানি ও অর্থনীতির জন্য সবচেয়ে বড় বাধা রেগুলেশন। ফ্রি মার্কেটের কথা বলে ব্যবসায় বাধা সৃষ্টি করা হয়েছে। বাজারকে উদার করতে হবে। বেসরকারি খাত থেকে রাজস্ব আসবে। ইজ অব ডুয়িং বিজনেস বাড়াতে হলে ডিরেগুলেশন করতে হবে।’
খসরু আরও বলেন, ‘আমি যখন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ছিলাম পোশাকে ইউডি এটা ইপিবিতে ছিল। ইপিবিতে থাকলে যা হয়, ওইখানে আমলাতন্ত্র আছে-দুর্নীতি হয়। রপ্তানিকারকরা আমার কাছে এলেন। তাদের বললাম, এটা যদি ইপিবি থেকে নিয়ে বিজিএমইএতে দিয়ে দেই, আপনারা কী নিজেরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন? তখন ব্যবসায়ীরা রাজি হলেন। আমি এটা ইপিবি থেকে বিজিএমইকে দিলাম। আজ পর্যন্ত এটা ভালোভাবে চলছে। অনেকগুলো কাজ সরকার যেগুলো করছে তার কিছু বের করে এনে ট্রেড বডিকে দিয়ে দিতে হবে।’
মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘এখনই সরকারের উচিত চিফ ট্রেড নেগোসিয়েটর অফিস তৈরি করা। যাতে ট্রেড পলিসিকে ওয়েল কর্ডিনেট করা যায়। প্রত্যেক যায়গায় যাতে সমন্বয় করা যায়।’
সেলিম রায়হান বলেন, ‘পোশাকের বাইরে শ্রমঘন শিল্পে আমাদের যেতে হবে। দক্ষতা ভিত্তিক পণ্য ও সেবার দিকে আমাদের যেতে হবে। পোশাক খাতেও বৈচিত্র্য আনতে হবে। আমাদের নীতিমালাগুলোর মধ্যে সমন্বয় আনতে হবে। আমরা দেখি একটি নীতি রপ্তানিকে উৎসাহিত করে, আবার আরেকটা নীতি রপ্তানিকে বাধাগ্রস্ত করছে।’