যা বললেন আইন উপদেষ্টা
রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে ‘শাস্তিমূলক ব্যবস্থা’ নেয়ার বিধান থাকছে
‘অতি প্রয়োজনীয়’ সংস্কার শেষে দ্রুত নির্বাচন
সরকারের বৈধতায় অধ্যাদেশ নিয়ে চিন্তা
বন্দী বিনিময় চুক্তির আওতায় হাসিনাকে ফেরানোর চেষ্টা
আন্দোলনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান
রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে ‘শাস্তিমূলক ব্যবস্থা’ নেয়ার বিধান রেখে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) অধ্যাদেশ সংশোধনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এ সংক্রান্ত প্রস্তাবের খসড়া অনুমোদনের জন্য আজ উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে উপস্থাপন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল।
এই সংশোধনী কার্যকর হলে- কোনো রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ থাকলে এবং আদালত মনে করলে প্রয়োজনীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশ করতে পারবে।
এ ছাড়া ‘অতি প্রয়োজনীয়’ কিছু সংস্কার শেষে যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন দেয়া হবে বলেও জানিয়েছেন উপদেষ্টা।
আইন উপদেষ্টা মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানিয়েছেন। তিনি ‘অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ দিন : আইন মন্ত্রণালয়ের কৈফিয়ত’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে আইন মন্ত্রণালয়ের বিগত ১০০ দিনের কর্মকাণ্ড তুলে ধরেন।
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩’-এ কিছু মারাত্মক বিচ্যুতির কথা দেশি-বিদেশি মানবাধিকার সংগঠন বলেছিল। সুশীল সমাজও বিভিন্ন সময় বলেছিল। সরকার যখন এটিকে সংস্কারের উদ্যোগ নিল, তখন সরকার চেয়েছে বিচারটি যেন দেশীয় ও বৈশ্বিক পর্যায়ে গ্রহণযোগ্য হয়। একই সঙ্গে এর মাধ্যমে যেন সুবিচার সুনিশ্চিত করা হয়।’
এ জন্য ‘ব্যাপক পরামর্শ’ করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘একটি অসাধারণ সংশোধনী করার জন্য চেষ্টা হয়েছে; যেটি এর বিচারের গুরুত্ব, যৌক্তিকতা ও গ্রহণযোগ্যতা অনেক বাড়িয়ে দেবে।’
আগামীকাল (আজ) উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সেই সংশোধনীর খসড়া তোলা হবে জানিয়ে আসিফ নজরুল বলেন, ‘উপদেষ্টা পরিষদ এটি গ্রহণ করলে আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যেই এটি আইনে পরিণত হবে। তারপর প্রক্রিয়াগত কারণে যত দিন লাগে।’
আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) অধ্যাদেশের সংশোধনী প্রস্তাবের খসড়ায় রাজনৈতিক দলের বিচারের ধারা যুক্ত হচ্ছে কি না-জানতে চাইলে আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘এ বিষয়ে একটি দিন অপেক্ষা করেন, দেখবেন।’
এ বিষয়ে সাংবাদিকেরা আবার প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘সংশোধনী তো উপদেষ্টা পরিষদকে গ্রহণ করতে হবে।’
খসড়ায় কী কী আছে জানতে চাইলে আসিফ নজরুল বলেন, ‘প্রস্তাবে যেটি আছে, সেখানে আদালতকে সেভাবে সরাসরি ক্ষমতা দেয়া হয়নি। বলা হয়েছে, আদালত যদি মনে করেন, তাহলে প্রয়োজনীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য তারা সুপারিশ করতে পারবেন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশ করবেন।’
এ বিষয়ের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘সংশ্লিষ্ট যেসব কর্তৃপক্ষ রাজনৈতিক দলের বিষয়ে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার অনুমোদন রয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আছে, নির্বাচন কমিশন আছে..... এগুলোর কথা খসড়ায় উল্লেখ করা নেই; কিন্তু যদি মনে করে, তাহলে করতে পারে। এটা এমন নয় যে আদালত শাস্তি দেবেই। আদালত যদি মনে করেন, শাস্তি দেয়ার সুপারিশ করবেন শুধু। এটা খসড়ায় রাখা হয়েছে। তবে এটি উপদেষ্টা পরিষদের ওপর নির্ভর করে, পরিষদ এটি রাখবে কি না বা কী ফর্মে রাখবে।’
এ সময় সাংবাদিকরা আবারও জানতে চান, ‘এটি তো রাজনৈতিক দলের বিচারের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে?’ জবাবে আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘হ্যাঁ।’
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। এরপর গত ৮ আগস্ট মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেন।
অতি প্রয়োজনীয় সংস্কারে দ্রুত নির্বাচন
‘অতি প্রয়োজনীয়’ কিছু সংস্কার করে যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারে যারা আছেন, তাদের অধিকাংশই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নিজের পেশায় ফিরে যাওয়ার জন্য আগ্রহী।
একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের বিষয়ে সর্বত্রই একটি প্রশ্ন শোনা যায়, সেটি হলো তারা কত দিন থাকবে, তাদের মেয়াদ কত দিন হবে, নির্বাচন কবে হবে?’
এ বিষয়ে আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘এটি আইন মন্ত্রণালয়ের বিষয় নয়। তবে আপনাকে একটি বিষয় বলি, আমরা মোস্ট এসেনশিয়াল কিছু সংস্কার করে যত দ্রত সম্ভব নির্বাচন দেব। আমরা জাস্ট এই জিনিসটা চাই না যে আগের মতো কোনো ভুয়া নির্বাচন হোক। আর এটা চাই না- নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে কেউ আবার ভুয়া নির্বাচন করার সুযোগ পাক। এটা ছাড়া আর কোনো স্বার্থ নাই।’
সরকারের বৈধতায় অধ?্যাদেশ নিয়ে চিন্তা
অন্তর্বর্তী সরকারকে বৈধতা দিতে একটি অধ্যাদেশ হচ্ছে- কী না জানতে চাইলে আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘এ ধরনের কোনো অধ্যাদেশ চূড়ান্ত হয়নি। এ বিষয়ে কথাবার্তা চলছে। তবে পত্রিকা এমনভাবে লিখে দিয়েছে যে, চূড়ান্ত হয়ে গেছে। কথাবার্তা চলছে, চিন্তা চলছে। এটি উপদেষ্টা পরিষদের সিদ্ধান্তে ওপর নির্ভর করছে।’
সংসদ সচিবালয় নিয়ে এক অধ্যাদেশ হয়েছে- এ বিষয়ে আসিফ নজরুল বলেন, ‘এটা হওয়ার পর তো আপনারা আমাকে স্পিকার বানিয়ে দিয়েছেন। অদ্ভুত ব্যাপার। কেউ কেউ তো আবার, যাই হোক আর বলতে চাই না। পরিষ্কার করে বলি- সংসদের প্রশাসনিক ও আর্থিক কার্যক্রম রয়েছে। ?এই আইনের মাধ্যমে সেটা কাউকে অর্পণ করার ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। ?এই আইনের মাধ্যমে কাউকে স্পিকার বানানো হয়নি।’
দাবি-দাওয়ার আন্দোলনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান
বিভিন্ন দাবি-দাওয়ার আন্দোলনের বিষয়ে আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘রাস্তা ব্লক করে সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে অসহনীয় জ?্যাম সৃষ্টি করে আন্দোলন করলে, আমি মনে করি সাধারণ মানুষের পক্ষ থেকে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা উচিত। আন্দোলন করলে কিছুটা নর্মস থাকা দরকার। সাধারণ মানুষকে জিম্মি করতে পারেন না। কালকে আমি শুনেছি ট্রেনে ইট ছুড়ে সাধারণ মানুষকে আহত করা হয়েছে। এটা কী ধরনের আন্দোলন?’
রাষ্ট্র ব্যবস্থা নিচ্ছে না কেন- জানতে চাইলে আসিফ নজরুল বলেন, ‘রাষ্ট্র যদি শক্ত হয়, দু’য়েকজন যদি আহত হয়, গ্রেপ্তার হয়- এটা সাধারণ মানুষের মধ্যে এক ধরনের কষ্ট তৈরি করবে না? আপনারা আবার দমন-নিপীড়নের মধ্যে যাচ্ছেন, এটা তো আমাদের মাথায় রাখতে হয়। শক্ত যখন হবো ভালোভাবে হবো।’
বন্দী বিনিময় চুক্তির আওতায় হাসিনাকে ফেরানোর চেষ্টা
এক প্রশ্নের জবাবে আসিফ নজরুল বলেন, ‘শেখ হাসিনাকে ফেরাতে ট্রাইব্যুনালের মতামতের ভিত্তিতে বন্দী বিনিময় চুক্তির আওতায় তাকে চাইবো। মামলার যে কোনো পর্যায়ে যে কোনো বন্দীকে ফেরানোর জন?্য অনুরোধ করা যাবে।’
শেখ হাসিনার কল রেকর্ড ফাঁস করার বিষয়ে আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘এগুলো যদি সত্যিই উনার কনভারসেশন হয়ে থাকে তাহলে দেশকে অস্থিতিশীল করা, ষড়যন্ত্র করা, মানুষকে প্ররোচিত করা, উত্তেজিত করা ও বিভ্রান্ত করার উদ্দেশে করা হয়।’
তিনি বলেন, ‘অনেস্টলি বলছি, সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে নয়, সাধারণ মানুষ হিসেবে বলছি- আওয়ামী লীগের নেতাদের জিজ্ঞেস করা উচিত আপনি আপনার পরিবার নিয়ে কাউকে না জানিয়ে যেভাবে পালিয়ে গেলেন, আর আমাদের প্রতিনিয়ত উসকান বিক্ষোভ করার জন্য, উসকানিমূলক ও সন্ত্রাসমূলক কাজ করার জন্য, এ ব্যাপারে আপনার নিজের ব্যাখ?্যা কী? উনি (শেখ হাসিনা) ওনার ভাগ্নে-টাগ্নেদের সরকার পতনের দুই-তিনদিন আগে নিরাপদে পাঠিয়ে দিয়েছেন। উনার যারা নেতাকর্মী আছেন তাদের উচিত উনার পারসোনাল জবাবদিহি চাওয়া। আজ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে যদি কোনো নিরীহ কর্মী থেকে থাকেন তারা প্রত্যেকে বিপদে পড়ছেন। তাদের উচিত শেখ হাসিনাকে প্রশ্ন করা আমাদের কাউকে না জানিয়ে পালিয়ে গেলেন কেন?’
বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪
যা বললেন আইন উপদেষ্টা
রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে ‘শাস্তিমূলক ব্যবস্থা’ নেয়ার বিধান থাকছে
‘অতি প্রয়োজনীয়’ সংস্কার শেষে দ্রুত নির্বাচন
সরকারের বৈধতায় অধ্যাদেশ নিয়ে চিন্তা
বন্দী বিনিময় চুক্তির আওতায় হাসিনাকে ফেরানোর চেষ্টা
আন্দোলনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান
রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে ‘শাস্তিমূলক ব্যবস্থা’ নেয়ার বিধান রেখে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) অধ্যাদেশ সংশোধনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এ সংক্রান্ত প্রস্তাবের খসড়া অনুমোদনের জন্য আজ উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে উপস্থাপন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল।
এই সংশোধনী কার্যকর হলে- কোনো রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ থাকলে এবং আদালত মনে করলে প্রয়োজনীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশ করতে পারবে।
এ ছাড়া ‘অতি প্রয়োজনীয়’ কিছু সংস্কার শেষে যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন দেয়া হবে বলেও জানিয়েছেন উপদেষ্টা।
আইন উপদেষ্টা মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানিয়েছেন। তিনি ‘অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ দিন : আইন মন্ত্রণালয়ের কৈফিয়ত’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে আইন মন্ত্রণালয়ের বিগত ১০০ দিনের কর্মকাণ্ড তুলে ধরেন।
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩’-এ কিছু মারাত্মক বিচ্যুতির কথা দেশি-বিদেশি মানবাধিকার সংগঠন বলেছিল। সুশীল সমাজও বিভিন্ন সময় বলেছিল। সরকার যখন এটিকে সংস্কারের উদ্যোগ নিল, তখন সরকার চেয়েছে বিচারটি যেন দেশীয় ও বৈশ্বিক পর্যায়ে গ্রহণযোগ্য হয়। একই সঙ্গে এর মাধ্যমে যেন সুবিচার সুনিশ্চিত করা হয়।’
এ জন্য ‘ব্যাপক পরামর্শ’ করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘একটি অসাধারণ সংশোধনী করার জন্য চেষ্টা হয়েছে; যেটি এর বিচারের গুরুত্ব, যৌক্তিকতা ও গ্রহণযোগ্যতা অনেক বাড়িয়ে দেবে।’
আগামীকাল (আজ) উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সেই সংশোধনীর খসড়া তোলা হবে জানিয়ে আসিফ নজরুল বলেন, ‘উপদেষ্টা পরিষদ এটি গ্রহণ করলে আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যেই এটি আইনে পরিণত হবে। তারপর প্রক্রিয়াগত কারণে যত দিন লাগে।’
আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) অধ্যাদেশের সংশোধনী প্রস্তাবের খসড়ায় রাজনৈতিক দলের বিচারের ধারা যুক্ত হচ্ছে কি না-জানতে চাইলে আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘এ বিষয়ে একটি দিন অপেক্ষা করেন, দেখবেন।’
এ বিষয়ে সাংবাদিকেরা আবার প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘সংশোধনী তো উপদেষ্টা পরিষদকে গ্রহণ করতে হবে।’
খসড়ায় কী কী আছে জানতে চাইলে আসিফ নজরুল বলেন, ‘প্রস্তাবে যেটি আছে, সেখানে আদালতকে সেভাবে সরাসরি ক্ষমতা দেয়া হয়নি। বলা হয়েছে, আদালত যদি মনে করেন, তাহলে প্রয়োজনীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য তারা সুপারিশ করতে পারবেন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশ করবেন।’
এ বিষয়ের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘সংশ্লিষ্ট যেসব কর্তৃপক্ষ রাজনৈতিক দলের বিষয়ে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার অনুমোদন রয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আছে, নির্বাচন কমিশন আছে..... এগুলোর কথা খসড়ায় উল্লেখ করা নেই; কিন্তু যদি মনে করে, তাহলে করতে পারে। এটা এমন নয় যে আদালত শাস্তি দেবেই। আদালত যদি মনে করেন, শাস্তি দেয়ার সুপারিশ করবেন শুধু। এটা খসড়ায় রাখা হয়েছে। তবে এটি উপদেষ্টা পরিষদের ওপর নির্ভর করে, পরিষদ এটি রাখবে কি না বা কী ফর্মে রাখবে।’
এ সময় সাংবাদিকরা আবারও জানতে চান, ‘এটি তো রাজনৈতিক দলের বিচারের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে?’ জবাবে আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘হ্যাঁ।’
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। এরপর গত ৮ আগস্ট মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেন।
অতি প্রয়োজনীয় সংস্কারে দ্রুত নির্বাচন
‘অতি প্রয়োজনীয়’ কিছু সংস্কার করে যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারে যারা আছেন, তাদের অধিকাংশই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নিজের পেশায় ফিরে যাওয়ার জন্য আগ্রহী।
একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের বিষয়ে সর্বত্রই একটি প্রশ্ন শোনা যায়, সেটি হলো তারা কত দিন থাকবে, তাদের মেয়াদ কত দিন হবে, নির্বাচন কবে হবে?’
এ বিষয়ে আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘এটি আইন মন্ত্রণালয়ের বিষয় নয়। তবে আপনাকে একটি বিষয় বলি, আমরা মোস্ট এসেনশিয়াল কিছু সংস্কার করে যত দ্রত সম্ভব নির্বাচন দেব। আমরা জাস্ট এই জিনিসটা চাই না যে আগের মতো কোনো ভুয়া নির্বাচন হোক। আর এটা চাই না- নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে কেউ আবার ভুয়া নির্বাচন করার সুযোগ পাক। এটা ছাড়া আর কোনো স্বার্থ নাই।’
সরকারের বৈধতায় অধ?্যাদেশ নিয়ে চিন্তা
অন্তর্বর্তী সরকারকে বৈধতা দিতে একটি অধ্যাদেশ হচ্ছে- কী না জানতে চাইলে আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘এ ধরনের কোনো অধ্যাদেশ চূড়ান্ত হয়নি। এ বিষয়ে কথাবার্তা চলছে। তবে পত্রিকা এমনভাবে লিখে দিয়েছে যে, চূড়ান্ত হয়ে গেছে। কথাবার্তা চলছে, চিন্তা চলছে। এটি উপদেষ্টা পরিষদের সিদ্ধান্তে ওপর নির্ভর করছে।’
সংসদ সচিবালয় নিয়ে এক অধ্যাদেশ হয়েছে- এ বিষয়ে আসিফ নজরুল বলেন, ‘এটা হওয়ার পর তো আপনারা আমাকে স্পিকার বানিয়ে দিয়েছেন। অদ্ভুত ব্যাপার। কেউ কেউ তো আবার, যাই হোক আর বলতে চাই না। পরিষ্কার করে বলি- সংসদের প্রশাসনিক ও আর্থিক কার্যক্রম রয়েছে। ?এই আইনের মাধ্যমে সেটা কাউকে অর্পণ করার ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। ?এই আইনের মাধ্যমে কাউকে স্পিকার বানানো হয়নি।’
দাবি-দাওয়ার আন্দোলনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান
বিভিন্ন দাবি-দাওয়ার আন্দোলনের বিষয়ে আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘রাস্তা ব্লক করে সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে অসহনীয় জ?্যাম সৃষ্টি করে আন্দোলন করলে, আমি মনে করি সাধারণ মানুষের পক্ষ থেকে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা উচিত। আন্দোলন করলে কিছুটা নর্মস থাকা দরকার। সাধারণ মানুষকে জিম্মি করতে পারেন না। কালকে আমি শুনেছি ট্রেনে ইট ছুড়ে সাধারণ মানুষকে আহত করা হয়েছে। এটা কী ধরনের আন্দোলন?’
রাষ্ট্র ব্যবস্থা নিচ্ছে না কেন- জানতে চাইলে আসিফ নজরুল বলেন, ‘রাষ্ট্র যদি শক্ত হয়, দু’য়েকজন যদি আহত হয়, গ্রেপ্তার হয়- এটা সাধারণ মানুষের মধ্যে এক ধরনের কষ্ট তৈরি করবে না? আপনারা আবার দমন-নিপীড়নের মধ্যে যাচ্ছেন, এটা তো আমাদের মাথায় রাখতে হয়। শক্ত যখন হবো ভালোভাবে হবো।’
বন্দী বিনিময় চুক্তির আওতায় হাসিনাকে ফেরানোর চেষ্টা
এক প্রশ্নের জবাবে আসিফ নজরুল বলেন, ‘শেখ হাসিনাকে ফেরাতে ট্রাইব্যুনালের মতামতের ভিত্তিতে বন্দী বিনিময় চুক্তির আওতায় তাকে চাইবো। মামলার যে কোনো পর্যায়ে যে কোনো বন্দীকে ফেরানোর জন?্য অনুরোধ করা যাবে।’
শেখ হাসিনার কল রেকর্ড ফাঁস করার বিষয়ে আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘এগুলো যদি সত্যিই উনার কনভারসেশন হয়ে থাকে তাহলে দেশকে অস্থিতিশীল করা, ষড়যন্ত্র করা, মানুষকে প্ররোচিত করা, উত্তেজিত করা ও বিভ্রান্ত করার উদ্দেশে করা হয়।’
তিনি বলেন, ‘অনেস্টলি বলছি, সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে নয়, সাধারণ মানুষ হিসেবে বলছি- আওয়ামী লীগের নেতাদের জিজ্ঞেস করা উচিত আপনি আপনার পরিবার নিয়ে কাউকে না জানিয়ে যেভাবে পালিয়ে গেলেন, আর আমাদের প্রতিনিয়ত উসকান বিক্ষোভ করার জন্য, উসকানিমূলক ও সন্ত্রাসমূলক কাজ করার জন্য, এ ব্যাপারে আপনার নিজের ব্যাখ?্যা কী? উনি (শেখ হাসিনা) ওনার ভাগ্নে-টাগ্নেদের সরকার পতনের দুই-তিনদিন আগে নিরাপদে পাঠিয়ে দিয়েছেন। উনার যারা নেতাকর্মী আছেন তাদের উচিত উনার পারসোনাল জবাবদিহি চাওয়া। আজ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে যদি কোনো নিরীহ কর্মী থেকে থাকেন তারা প্রত্যেকে বিপদে পড়ছেন। তাদের উচিত শেখ হাসিনাকে প্রশ্ন করা আমাদের কাউকে না জানিয়ে পালিয়ে গেলেন কেন?’