উপজেলা পর্যায়ে আদালত স্থাপনের বিষয়ে সব রাজনৈতিক দল একমত হয়েছে বলে জানিয়েছেন জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি আলী রীয়াজ। সোমবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় ধাপের দশম দিনের আলোচনায় এ ঐকমত্যের কথা জানান তিনি।
আলী রীয়াজ বলেন, “নাগরিকের কাছে সুবিচার পৌঁছে দিতে উপজেলা পর্যায়ে অধস্তন আদালত সম্প্রসারণের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য সৃষ্টি হয়েছে।” তবে দল ও জোটগুলো এ বিষয়ে কিছু শর্ত ও সুপারিশও দিয়েছে। তিনি জানান, সদর উপজেলাগুলো জেলা জজ কোর্টের অধীনে রাখতে হবে, বিদ্যমান চৌকি আদালত ও ইতোমধ্যে স্থাপিত উপজেলা আদালত বহাল রেখে নতুন অবকাঠামো গড়ে তুলতে হবে।
বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, উপজেলা সদরগুলোর ভৌগোলিক অবস্থান, জেলা সদর থেকে দূরত্ব, যাতায়াত ব্যবস্থা, জনসংখ্যার ঘনত্ব ও মামলার চাপ বিবেচনা করে কোন কোন উপজেলায় স্থায়ী আদালত স্থাপন করা হবে তা নির্ধারণ করতে হবে। যেসব উপজেলায় চৌকি আদালত রয়েছে সেগুলোকে স্থায়ী আদালতে রূপান্তর করা হবে কিনা তা যাচাই করতে হবে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে একাধিক উপজেলা মিলে একটি আদালতের অধিক্ষেত্র নির্ধারণের কথাও বলা হয়েছে।
প্রস্তাবে সিনিয়র সহকারী জজ ও প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট পর্যায়ের বিচারক পদায়ন, সিনিয়র সহকারী জজের আর্থিক এখতিয়ার বাড়ানো, আইনগত সহায়তা উপজেলা পর্যায়ে সম্প্রসারণের কথা বলা হয়েছে। কয়েকটি দলের পক্ষ থেকে নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে আদালত সম্প্রসারণের পরামর্শও এসেছে।
আলী রীয়াজ বলেন, “অধস্তন আদালতের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ, অর্থ বরাদ্দ ও আইনগত সহায়তা উপজেলা পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো আশা প্রকাশ করেছে, যা ভবিষ্যতে বাস্তবায়ন হবে।”
১৯৯১ সালে ক্ষমতায় গিয়ে উপজেলা আদালত বাতিল করা বিএনপিও এখন আদালত স্থাপনের পক্ষে মত দিয়েছে। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, “জেলা আদালত বিকেন্দ্রীকরণের বিষয়ে একমত হয়েছি। জেলা সদর থেকে কাছাকাছি উপজেলায় আদালত প্রয়োজন নেই। তবে দূরের ও জনবহুল উপজেলায় আদালত করা যেতে পারে।”
১৯৯১ সালে বিএনপি কেন আদালত তুলে দিয়েছিল—এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “তখনকার জাতীয় প্রেক্ষাপটে সেভাবেই সিদ্ধান্ত হয়েছিল। এখন পরিস্থিতি ও প্রজন্ম বদলেছে, জনগণের স্বার্থে নতুন করে ভাবতে হচ্ছে।”
বর্তমানে দেশের ২৩টি জেলায় ৪০টি চৌকি আদালত রয়েছে, যেগুলোকে স্থায়ী আদালতে রূপান্তরের প্রস্তাব দিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, “অবকাঠামো ও সরঞ্জামাদি সরবরাহ করে চৌকিগুলো স্থায়ী করতে হবে। জনগণকে সুবিচার দিতে হলে বিচারব্যবস্থাকে দোরগোড়ায় নিয়ে যেতে হবে।” উপজেলা পর্যায়ে আদালত সম্প্রসারণে দুর্নীতি বাড়ার আশঙ্কা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “জনসচেতনতা ও নৈতিকতা দিয়ে এ সমস্যা মোকাবিলা সম্ভব।”
এদিনের বৈঠকে জরুরি অবস্থার বিধান নিয়েও আলোচনা হয়। আলী রীয়াজ বলেন, “১৪১ অনুচ্ছেদের ধারা পরিবর্তন ও বাতিলের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য হয়েছে। জরুরি অবস্থা যেন রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার না হয় সে বিষয়েও একমত হয়েছি। তবে ১৪১ অনুচ্ছেদ নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি, বৃহস্পতিবার আলোচনা হবে।”
সোমবার নারী আসন ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা থাকলেও তা শেষ হয়নি। আলী রীয়াজ জানান, এ বিষয়গুলোও বৃহস্পতিবার আলোচনা হবে।
বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী ছাড়াও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), ইসলামী আন্দোলন, সিপিবি, এবি পার্টিসহ ৩০টি রাজনৈতিক দল আলোচনায় অংশ নেয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন আলী রীয়াজ। সঞ্চালনা করেন মনির হায়দার। উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদার, ইফতেখারুজ্জামান ও মো. আইয়ুব মিয়া।
সোমবার, ০৭ জুলাই ২০২৫
উপজেলা পর্যায়ে আদালত স্থাপনের বিষয়ে সব রাজনৈতিক দল একমত হয়েছে বলে জানিয়েছেন জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি আলী রীয়াজ। সোমবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় ধাপের দশম দিনের আলোচনায় এ ঐকমত্যের কথা জানান তিনি।
আলী রীয়াজ বলেন, “নাগরিকের কাছে সুবিচার পৌঁছে দিতে উপজেলা পর্যায়ে অধস্তন আদালত সম্প্রসারণের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য সৃষ্টি হয়েছে।” তবে দল ও জোটগুলো এ বিষয়ে কিছু শর্ত ও সুপারিশও দিয়েছে। তিনি জানান, সদর উপজেলাগুলো জেলা জজ কোর্টের অধীনে রাখতে হবে, বিদ্যমান চৌকি আদালত ও ইতোমধ্যে স্থাপিত উপজেলা আদালত বহাল রেখে নতুন অবকাঠামো গড়ে তুলতে হবে।
বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, উপজেলা সদরগুলোর ভৌগোলিক অবস্থান, জেলা সদর থেকে দূরত্ব, যাতায়াত ব্যবস্থা, জনসংখ্যার ঘনত্ব ও মামলার চাপ বিবেচনা করে কোন কোন উপজেলায় স্থায়ী আদালত স্থাপন করা হবে তা নির্ধারণ করতে হবে। যেসব উপজেলায় চৌকি আদালত রয়েছে সেগুলোকে স্থায়ী আদালতে রূপান্তর করা হবে কিনা তা যাচাই করতে হবে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে একাধিক উপজেলা মিলে একটি আদালতের অধিক্ষেত্র নির্ধারণের কথাও বলা হয়েছে।
প্রস্তাবে সিনিয়র সহকারী জজ ও প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট পর্যায়ের বিচারক পদায়ন, সিনিয়র সহকারী জজের আর্থিক এখতিয়ার বাড়ানো, আইনগত সহায়তা উপজেলা পর্যায়ে সম্প্রসারণের কথা বলা হয়েছে। কয়েকটি দলের পক্ষ থেকে নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে আদালত সম্প্রসারণের পরামর্শও এসেছে।
আলী রীয়াজ বলেন, “অধস্তন আদালতের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ, অর্থ বরাদ্দ ও আইনগত সহায়তা উপজেলা পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো আশা প্রকাশ করেছে, যা ভবিষ্যতে বাস্তবায়ন হবে।”
১৯৯১ সালে ক্ষমতায় গিয়ে উপজেলা আদালত বাতিল করা বিএনপিও এখন আদালত স্থাপনের পক্ষে মত দিয়েছে। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, “জেলা আদালত বিকেন্দ্রীকরণের বিষয়ে একমত হয়েছি। জেলা সদর থেকে কাছাকাছি উপজেলায় আদালত প্রয়োজন নেই। তবে দূরের ও জনবহুল উপজেলায় আদালত করা যেতে পারে।”
১৯৯১ সালে বিএনপি কেন আদালত তুলে দিয়েছিল—এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “তখনকার জাতীয় প্রেক্ষাপটে সেভাবেই সিদ্ধান্ত হয়েছিল। এখন পরিস্থিতি ও প্রজন্ম বদলেছে, জনগণের স্বার্থে নতুন করে ভাবতে হচ্ছে।”
বর্তমানে দেশের ২৩টি জেলায় ৪০টি চৌকি আদালত রয়েছে, যেগুলোকে স্থায়ী আদালতে রূপান্তরের প্রস্তাব দিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, “অবকাঠামো ও সরঞ্জামাদি সরবরাহ করে চৌকিগুলো স্থায়ী করতে হবে। জনগণকে সুবিচার দিতে হলে বিচারব্যবস্থাকে দোরগোড়ায় নিয়ে যেতে হবে।” উপজেলা পর্যায়ে আদালত সম্প্রসারণে দুর্নীতি বাড়ার আশঙ্কা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “জনসচেতনতা ও নৈতিকতা দিয়ে এ সমস্যা মোকাবিলা সম্ভব।”
এদিনের বৈঠকে জরুরি অবস্থার বিধান নিয়েও আলোচনা হয়। আলী রীয়াজ বলেন, “১৪১ অনুচ্ছেদের ধারা পরিবর্তন ও বাতিলের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য হয়েছে। জরুরি অবস্থা যেন রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার না হয় সে বিষয়েও একমত হয়েছি। তবে ১৪১ অনুচ্ছেদ নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি, বৃহস্পতিবার আলোচনা হবে।”
সোমবার নারী আসন ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা থাকলেও তা শেষ হয়নি। আলী রীয়াজ জানান, এ বিষয়গুলোও বৃহস্পতিবার আলোচনা হবে।
বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী ছাড়াও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), ইসলামী আন্দোলন, সিপিবি, এবি পার্টিসহ ৩০টি রাজনৈতিক দল আলোচনায় অংশ নেয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন আলী রীয়াজ। সঞ্চালনা করেন মনির হায়দার। উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদার, ইফতেখারুজ্জামান ও মো. আইয়ুব মিয়া।