কক্সবাজার : জমি অধিগ্রহণ নিয়ে সংঘর্ষে প্রতিপক্ষকে লক্ষ্য করে বিমানবাহিনীর সদস্যের গুলি -সংবাদ
কক্সবাজারে বিমানবাহিনীর অধিগ্রহণ করা জায়গায় স্থানীয়দের ‘দখল’ নিয়ে সংঘর্ষে একজন নিহত ও অন্তত দশজন আহত হয়েছে। সোমবার কক্সবাজার শহরের ১নং ওয়ার্ড এ ঘটনা ঘটে। বেলা ১১টা থেকে দুপুর পর্যন্ত থেমে থেমে এ সংঘর্ষ চলে।
আইএসপিআর এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, ‘সমিতিপাড়ার কিছু ‘দুর্বৃত্ত’ বিমানবাহিনী ঘাঁটি কক্সবাজারের ওপর অতর্কিত হামলা চালিয়েছে। এ ব্যাপারে বিমানবাহিনী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছে।’
জানা যায়, কক্সবাজারে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর তৈরির জন্য পৌরসভার ১নং ওযার্ডের সরকারি খাস জমি অধিগ্রহণ করে বিমানবাহিনী। সেই লক্ষ্যে ১৫ বছর আগে প্রায় সাড়ে চার হাজার পরিবারের পুনর্বাসনের তালিকা তৈরি করা হয়। এরইমধ্যে প্রায় দেড় হাজার পরিবারকে সদর উপজেলার খুরুশকুলের আশ্রয়ণ প্রকল্পে ফ্ল্যাট হস্তান্তর করেছে বিমানবাহিনী। কিন্তু ৫ আগস্টের পর ১নং ওয়ার্ডে বসবাসকারী প্রায় ৩০ হাজার লোক ভিটেমাটি ছেড়ে না যাওয়ার ঘোষণা দেন। তারা ১নং ওয়ার্ডে স্থায়ীভাবে বসবাসের দাবি তুলে মানববন্ধনসহ প্রধান উপদেষ্টার বরাবরে স্মারকলিপিও দেন।
উচ্ছেদরোধে কুতুবদিয়াপাড়ার সাবের হোসেনের ছেলে জাহেদুল ইসলাম, দিদারুল ইসলাম রুবেল, সমিতিপাড়ার সাইফুল ইসলাম, মোস্তফাসহ আরও কয়েকজন নেতৃত্ব দেন। এরই ধারাবাহিকতায় শনিবার বিমানবাহিনী একটি ঘর উচ্ছেদ করতে গেলে জাহেদুল ইসলামের নেতৃত্বে এলাকার লোকজন বাধা দেন। এরই জের ধরে সোমবার বেলা ১১টায় জাহেদ শহরে আসার পথে তাকে চেকপোস্টে ‘আটক’ করে বিমানবাহিনী। খবর পেয়ে এলাকাবাসী এগিয়ে আসার চেষ্টা করলে বিমানবাহিনীর সঙ্গে সমিতিপাড়া ও কুতুবদিয়াপাড়ার লোকজনের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়।
একপর্যায়ে উত্তেজিত জনতা ইটপাটকেল ছোড়া শুরু করলে সংঘর্ষ বাধে। সংঘর্ষের সময় বিমানবাহিনীর সদস্যরা স্থানীয় লোকজনকে ‘লক্ষ্য
করে গুলি ছোড়ে’ বলে অভিযোগ করেন এলাকাবাসী। এ ঘটনায় শহরের বাহারছাড়ার পিটিআই স্কুলের সাবেক সুপার নাসির উদ্দিনের ছেলে শিহাব কবির নাহিদ নিহত হন। এ ছাড়া ওই সময়ে আরও ১০ জন গুলিবিদ্ধ হন। যাদের মধ্যে তিনজন কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক সালাহউদ্দিন জানিয়েছেন, গুলিবিদ্ধ একজনের হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে। বর্তমানে ১নং ওয়ার্ডের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। সেখানে পুলিশ ও সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।
যা বলেছে আইএসপিআর
কক্সবাজারের সংঘর্ষের ঘটনা সম্পর্কে ব্যাখ্যা দিয়েছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর বা আইএসপিআর। তাদের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘কক্সবাজারে অবস্থিত বিমানবাহিনী ঘাঁটিসংলগ্ন সমিতিপাড়ার কিছু স্থানীয় দুর্বৃত্ত সোমবার বিমানবাহিনী ঘাঁটির উপর অতর্কিত হামলা চালিয়েছে।’
আইএসপিআর-এর বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘বিয়াম স্কুলের পাশে বিমানবাহিনীর চেকপোস্ট থেকে মোটরসাইকেলের কাগজপত্র না থাকায় একজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ঘাঁটির অভ্যন্তরে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় সমিতি পাড়ার আনুমানিক দুই শতাধিক স্থানীয় লোকজন বিমানবাহিনীর ঘাঁটির দিকে অগ্রসর হলে তাদের বাধা দেয় বাহিনীর সদস্যরা। পরবর্তীতে স্থানীয় লোকজনের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে বিমানবাহিনীর চেকপোস্ট এলাকায় বিমানবাহিনীর সদস্য ও সমিতিপাড়ার কতিপয় দুষ্কৃতকারী লোকজনের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। ঘটনাস্থলে কতিপয় কুচক্রী মহলের ইন্ধনে দুর্বৃত্তরা বিমানবাহিনীর সদস্যদের উপর ইটপাটকেল ছোড়ে।
এই সময় বিমানবাহিনীর চারজন সদস্য আঘাতপ্রাপ্ত হন ও শিহাব কবির নাহিদ নামের একজন যুবককে গুরুতর আহতাবস্থায় গাড়িতে করে স্থানীয় হাসপাতালে নেয়ার পর মৃত্যুবরণ করেন।’
আইএসপিআরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রক্ষার্থে বিমানবাহিনীর সদস্যগণ কর্তৃক বিমানবাহিনীর বিধান অনুয়ায়ী ফাঁকা গুলি ছোড়া হয়, তবে স্থানীয় জনসাধারণের ওপর কোনো ধরনের তাজা গুলি ছোড়া হয়নি। বিমানবাহিনীর সদস্যরা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। উল্লেখ্য যে, স্থানীয় জনগণের ইটপাটকেলের আঘাতে বিমানবাহিনীর গাড়ির কাচ ভেঙে যায়। এছাড়াও স্থানীয় জনগণ ঝোপঝাড়ে আগুন দেয়ার চেষ্টা করেছিল, যা পরবর্তীতে বেশি সম্প্রসারিত হয়নি।’
ওই বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ‘একটি কুচক্রী মহল বিমানবাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ করার লক্ষ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিমানবাহিনীর গুলিতে ওই যুবক নিহত হয়েছে বলে বিভিন্ন অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে, যা সত্যি নয়। এক্ষেত্রে প্রচারিত গুলির খোসার ছবিটি পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায় যে, ওই খোসাটি ফাঁকা গুলির; যা প্রাণঘাতী নয় এবং শুধু শব্দ তৈরি করে। যুবক নিহতের ঘটনায় বাংলাদেশ বিমানবাহিনী গভীর শোক ও পরিবারের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করছে।’
সেখানে আরও বলা হয়েছে, ‘কিছু অনলাইন নিউজ পোর্টাল ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অসৎ উদ্দেশ্যে বিমানবাহিনী ঘাঁটি কক্সবাজার এর নাম বিমানবাহিনী ঘাঁটি শেখ হাসিনা হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছে যা সত্য নয়। উল্লেখ্য যে, উক্ত ঘাঁটির নাম ০২ ডিসেম্বর ২০২১ সালে সরকারি প্রজ্ঞাপনে পরিবর্তন করে বিমানবাহিনী ঘাঁটি কক্সবাজার রাখা হয় যা বর্তমানেও বহাল রয়েছে।’
কক্সবাজার : জমি অধিগ্রহণ নিয়ে সংঘর্ষে প্রতিপক্ষকে লক্ষ্য করে বিমানবাহিনীর সদস্যের গুলি -সংবাদ
সোমবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
কক্সবাজারে বিমানবাহিনীর অধিগ্রহণ করা জায়গায় স্থানীয়দের ‘দখল’ নিয়ে সংঘর্ষে একজন নিহত ও অন্তত দশজন আহত হয়েছে। সোমবার কক্সবাজার শহরের ১নং ওয়ার্ড এ ঘটনা ঘটে। বেলা ১১টা থেকে দুপুর পর্যন্ত থেমে থেমে এ সংঘর্ষ চলে।
আইএসপিআর এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, ‘সমিতিপাড়ার কিছু ‘দুর্বৃত্ত’ বিমানবাহিনী ঘাঁটি কক্সবাজারের ওপর অতর্কিত হামলা চালিয়েছে। এ ব্যাপারে বিমানবাহিনী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছে।’
জানা যায়, কক্সবাজারে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর তৈরির জন্য পৌরসভার ১নং ওযার্ডের সরকারি খাস জমি অধিগ্রহণ করে বিমানবাহিনী। সেই লক্ষ্যে ১৫ বছর আগে প্রায় সাড়ে চার হাজার পরিবারের পুনর্বাসনের তালিকা তৈরি করা হয়। এরইমধ্যে প্রায় দেড় হাজার পরিবারকে সদর উপজেলার খুরুশকুলের আশ্রয়ণ প্রকল্পে ফ্ল্যাট হস্তান্তর করেছে বিমানবাহিনী। কিন্তু ৫ আগস্টের পর ১নং ওয়ার্ডে বসবাসকারী প্রায় ৩০ হাজার লোক ভিটেমাটি ছেড়ে না যাওয়ার ঘোষণা দেন। তারা ১নং ওয়ার্ডে স্থায়ীভাবে বসবাসের দাবি তুলে মানববন্ধনসহ প্রধান উপদেষ্টার বরাবরে স্মারকলিপিও দেন।
উচ্ছেদরোধে কুতুবদিয়াপাড়ার সাবের হোসেনের ছেলে জাহেদুল ইসলাম, দিদারুল ইসলাম রুবেল, সমিতিপাড়ার সাইফুল ইসলাম, মোস্তফাসহ আরও কয়েকজন নেতৃত্ব দেন। এরই ধারাবাহিকতায় শনিবার বিমানবাহিনী একটি ঘর উচ্ছেদ করতে গেলে জাহেদুল ইসলামের নেতৃত্বে এলাকার লোকজন বাধা দেন। এরই জের ধরে সোমবার বেলা ১১টায় জাহেদ শহরে আসার পথে তাকে চেকপোস্টে ‘আটক’ করে বিমানবাহিনী। খবর পেয়ে এলাকাবাসী এগিয়ে আসার চেষ্টা করলে বিমানবাহিনীর সঙ্গে সমিতিপাড়া ও কুতুবদিয়াপাড়ার লোকজনের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়।
একপর্যায়ে উত্তেজিত জনতা ইটপাটকেল ছোড়া শুরু করলে সংঘর্ষ বাধে। সংঘর্ষের সময় বিমানবাহিনীর সদস্যরা স্থানীয় লোকজনকে ‘লক্ষ্য
করে গুলি ছোড়ে’ বলে অভিযোগ করেন এলাকাবাসী। এ ঘটনায় শহরের বাহারছাড়ার পিটিআই স্কুলের সাবেক সুপার নাসির উদ্দিনের ছেলে শিহাব কবির নাহিদ নিহত হন। এ ছাড়া ওই সময়ে আরও ১০ জন গুলিবিদ্ধ হন। যাদের মধ্যে তিনজন কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক সালাহউদ্দিন জানিয়েছেন, গুলিবিদ্ধ একজনের হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে। বর্তমানে ১নং ওয়ার্ডের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। সেখানে পুলিশ ও সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।
যা বলেছে আইএসপিআর
কক্সবাজারের সংঘর্ষের ঘটনা সম্পর্কে ব্যাখ্যা দিয়েছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর বা আইএসপিআর। তাদের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘কক্সবাজারে অবস্থিত বিমানবাহিনী ঘাঁটিসংলগ্ন সমিতিপাড়ার কিছু স্থানীয় দুর্বৃত্ত সোমবার বিমানবাহিনী ঘাঁটির উপর অতর্কিত হামলা চালিয়েছে।’
আইএসপিআর-এর বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘বিয়াম স্কুলের পাশে বিমানবাহিনীর চেকপোস্ট থেকে মোটরসাইকেলের কাগজপত্র না থাকায় একজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ঘাঁটির অভ্যন্তরে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় সমিতি পাড়ার আনুমানিক দুই শতাধিক স্থানীয় লোকজন বিমানবাহিনীর ঘাঁটির দিকে অগ্রসর হলে তাদের বাধা দেয় বাহিনীর সদস্যরা। পরবর্তীতে স্থানীয় লোকজনের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে বিমানবাহিনীর চেকপোস্ট এলাকায় বিমানবাহিনীর সদস্য ও সমিতিপাড়ার কতিপয় দুষ্কৃতকারী লোকজনের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। ঘটনাস্থলে কতিপয় কুচক্রী মহলের ইন্ধনে দুর্বৃত্তরা বিমানবাহিনীর সদস্যদের উপর ইটপাটকেল ছোড়ে।
এই সময় বিমানবাহিনীর চারজন সদস্য আঘাতপ্রাপ্ত হন ও শিহাব কবির নাহিদ নামের একজন যুবককে গুরুতর আহতাবস্থায় গাড়িতে করে স্থানীয় হাসপাতালে নেয়ার পর মৃত্যুবরণ করেন।’
আইএসপিআরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রক্ষার্থে বিমানবাহিনীর সদস্যগণ কর্তৃক বিমানবাহিনীর বিধান অনুয়ায়ী ফাঁকা গুলি ছোড়া হয়, তবে স্থানীয় জনসাধারণের ওপর কোনো ধরনের তাজা গুলি ছোড়া হয়নি। বিমানবাহিনীর সদস্যরা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। উল্লেখ্য যে, স্থানীয় জনগণের ইটপাটকেলের আঘাতে বিমানবাহিনীর গাড়ির কাচ ভেঙে যায়। এছাড়াও স্থানীয় জনগণ ঝোপঝাড়ে আগুন দেয়ার চেষ্টা করেছিল, যা পরবর্তীতে বেশি সম্প্রসারিত হয়নি।’
ওই বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ‘একটি কুচক্রী মহল বিমানবাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ করার লক্ষ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিমানবাহিনীর গুলিতে ওই যুবক নিহত হয়েছে বলে বিভিন্ন অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে, যা সত্যি নয়। এক্ষেত্রে প্রচারিত গুলির খোসার ছবিটি পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায় যে, ওই খোসাটি ফাঁকা গুলির; যা প্রাণঘাতী নয় এবং শুধু শব্দ তৈরি করে। যুবক নিহতের ঘটনায় বাংলাদেশ বিমানবাহিনী গভীর শোক ও পরিবারের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করছে।’
সেখানে আরও বলা হয়েছে, ‘কিছু অনলাইন নিউজ পোর্টাল ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অসৎ উদ্দেশ্যে বিমানবাহিনী ঘাঁটি কক্সবাজার এর নাম বিমানবাহিনী ঘাঁটি শেখ হাসিনা হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছে যা সত্য নয়। উল্লেখ্য যে, উক্ত ঘাঁটির নাম ০২ ডিসেম্বর ২০২১ সালে সরকারি প্রজ্ঞাপনে পরিবর্তন করে বিমানবাহিনী ঘাঁটি কক্সবাজার রাখা হয় যা বর্তমানেও বহাল রয়েছে।’