alt

জাতীয়

জলবায়ু পরিবর্তনে মারাত্মক ঝুঁকিতে বাঁশখালী উপকূল

মুহাম্মদ মুহিব্বুল্লাহ ছানুবী, বাঁশখালী (চট্টগ্রাম) : বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪

জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে বাঁশখালী সমুদ্র উপকূলের ৩৩ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ-সংবাদ

জলবায়ু পরিবর্তনে মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে বাঁশখালী সমুদ্র উপকূল। উপকূলবর্তী এ উপজেলায় জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতির আশংকা বেশি হলেও জলবায়ু তহবিলের প্রকল্পে গুরুত্ব পায়নি মোটেও। উল্টো জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার নামে এই তহবিলের টাকা দিয়ে হচ্ছে কম ঝুঁকিতে থাকা উপজেলায় সৌরবাতি স্থাপন, সড়ক নির্মাণ, সংস্কার, মেরামত ও নানা উন্নয়নকাজ।

ক্লাইমেট চেন্জ ট্রাস্ট ফান্ডের (সিসিটিএফ) নথি ঘেঁটে দেখা গেছে, জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড তৈরি হওয়ার পর এ পর্যন্ত চট্টগ্রাম জেলায় ৬২টি প্রকল্প নেয়া হয়েছে। এসব প্রকল্পের অনুকূলে বরাদ্দ ছিল ৩৫৩ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে বর্তমানে ১১ প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। তবে চট্টগ্রামের উপকূলবর্তী পাঁচ উপজেলার (মিরসরাই, সীতাকু-, আনোয়ারা, বাঁশখালী ও সন্দ্বীপ) জন্য প্রকল্প ছিল মাত্র হাতেগোনা দুইয়েকটি। তাও আবার জলবায়ু ফান্ড গঠনের পরপরই তা বাস্তবায়ন করা হয়। বাস্তবে সেই প্রকল্প কতটুকু কার্যকর সেটাও বিবেচনায় নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

প্রকল্প পর্যালোচনায় দেখা যায়, জলবায়ু পরিবর্তনে নারী ও শিশুরা বেশি ঝুঁকিতে থাকলেও চট্টগ্রামের উপকূলবর্তী বাঁশখালী উপজেলার নারী-শিশুদের জন্য নেই কোনো প্রকল্প। এমনকি প্রকল্প বাছাইয়ে স্বাস্থ্য সর্বোচ্চ গুরুত্ব পাওয়ার কথা থাকলেও স্বাস্থ্যখাতেও নেয়া হয়নি কোনো প্রকল্প। অপরদিকে ঝুঁকি মোকাবেলার নামে এই তহবিলের প্রায় পুরো অংশ ব্যবহার হয়েছে অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রকল্পের পেছনে। এছাড়া, জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবেলায় গবেষণাকে অগ্রাধিকার দেয়ার কথা থাকলেও গত ১৩ বছরে গবেষণা প্রকল্প নেয়া হয়েছে মাত্র ৫টি।

জানা গেছে, জলবায়ু তহবিলের প্রকল্পে বরাদ্দ আসে স্থানীয় সংসদ সদস্য বা রাজনৈতিক ব্যক্তিদের প্রভাবের কারণে। তাই নিজেদের ইচ্ছে মতো বরাদ্দ হয়েছে ইতোপূর্বে। এমনকি উপজেলাগুলোতে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে শিক্ষা থেকে ঝরে পড়া শিশুর সংখ্যা, ঘরবাড়ি হারানো মানুষের হিসাব, কোনো কোনো রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়েছে সে হিসাবও রাখেনি সরকারি কোনো কর্তৃপক্ষ।

বাঁশখালী উপকূলে ‘আগে হয়তো জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ডের অর্থায়নে ছোটখাটো কিছু কাজ হয়েছে। বর্তমানে কোনো প্রকল্প নেই। অথচ বাঁশখালী অনেক বড় একটা জায়গা। এখানের সমুদ্রতীরবর্তী ইউনিয়ন গুলোতে জরিপ চালিয়ে দ্রুত অন্তর্ভূক্ত করে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো উচিত। বর্তমান নতুন সরকার এগুলো প্রকল্প আকারে পাঠালে হয়তো একনেকে অনুমোদন হওয়ার সম্ভাবনা আছে।’

জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডের বর্তমান কার্যক্রমকে ন্যায়বিচারের পরিপন্থী বলে মন্তব্য করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বন ও পরিবেশ বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের ড. মোহাম্মদ আল আমিন বলেন, ‘এখন উন্নয়ন প্রকল্পকে জলবায়ু অভিযোজন নামে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এটার মূল কারণ হল স্থানীয়ভাবে সুনির্দিষ্ট তথ্য বা গবেষণার অভাব। সুতরাং যে প্রকল্পগুলো যাচ্ছে সেগুলো আদৌ জলবায়ু অভিযোজনের প্রকল্প কিনা তারা জানেন না। প্রশ্নটা থেকেই যাচ্ছে যে ট্রাস্ট ফান্ডের টাকায় নেয়া প্রকল্পগুলো ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য কতটা নেয়া হয়েছে বা আদৌ ক্ষতিগ্রস্তরা এর অংশীদার হচ্ছে কিনা।’

তিনি আরও বলেন, ‘যারা জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে যারা আসলেই কাজ করছে তাদেরকে কিন্তু এই ধরনের কাজের সঙ্গে যুক্ত করা হয় না। অথবা তাদের পরামর্শও নেয়া হয় না। যে গত কয়েক দশকে এই অঞ্চলের আবহাওয়া এতখানি পরিবর্তন হয়েছে, আমাদের আরও ২০-৩০ বছরের জন্য একটা মেগা প্রকল্প নিতে হবে যেটা আসলেই উপকূলের মানুষের জন্য ভূমিকা রাখবে।’

জলবায়ু অর্থায়ন বিশেষজ্ঞ ও ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) জলবায়ুর অর্থায়নে সুশাসন সেলের সাবেক সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার জাকির হোসেন খান বলেন, ‘বাংলাদেশে জলবায়ু তহবিল ব্যবস্থাপনার সবচেয় বড় চ্যালেঞ্জ হলো আমাদের কোনো জাতীয় জলবায়ু তহবিল কৌশলপত্র নেই। এমনকি জলবায়ু পরিবর্তন নীতিমালাও নেই। যার কারণে জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ড অথবা সরকারের উন্নয়ন তহবিল থেকে জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত বরাদ্দ হচ্ছে সেটা কিসের ভিত্তিতে হচ্ছে কাকে দেওয়া হচ্ছে বা কোথায় অগ্রাধিকার থাকবে এ ব্যাপারে কোনো ধরনের সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন নেই। এ কারণে ডিও লেটার বা রাজনৈতিক প্রভাব যাই বলি না কেনো, যে যেভাবে পারবে, প্রভাব খাটিয়ে বরাদ্দ নেয়ার চেষ্টা করবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এজন্য প্রয়োজন স্থানীয়ভাবে প্রত্যেক এলাকার জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি ম্যাপিং তৈরি করা। কোনো এলাকা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে, কোনো কারণে ঝুঁকি, সেখানে কী সম্পদ আছে, কারণ এখন বলা হচ্ছে নেচার বেজড সলিউশন। প্যারিস চুক্তির ৭ দশমিক ৫ অনুচ্ছেদে বলা আছে অভিযোজন কীভাবে করতে হবে, স্থানীয় অভিজ্ঞতার জ্ঞানকে কাজে লাগাতে হবে। এগুলো যতক্ষণ পর্যন্ত সিস্টেমের ভেতর আসবে না এবং সেটার জবাবদিহিতা না থাকবে তখন এই ধরনের ঘটনা একটার পর একটা ঘটবে।’

তিনি বলেন, ‘উন্নয়ন তহবিল আর জলবায়ু তহবিলের মধ্যে পার্থক্য হলো উন্নয়ন তহবিলের মাধ্যমে যে রাস্তাঘাট করা হয় তার ঝুঁকিটা কাটিয়ে ওঠার সুযোগ আছে কিন্তু জলবায়ু তহবিলের প্রকল্পে যদি দুর্নীতি হয় তাহলে মানুষের জীবনকে সরাসরি হুমকির মুখে ফেলবে।’

বাঁশখালী উপজেলার সমুদ্রতীরবর্তি খানখানাবাদ, কদমরসুল, বাহারছড়া, কাথারিয়া, সরল, গ-ামারা, বড়ঘোনা, খুদুকখালী, ছনুয়া ও ছোট ছনুয়া এলাকা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। সমুদ্র উপকূলের ৩৩ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ অরক্ষিত থাকায় এ ঝুঁকি আরও বেড়েছে। জোয়ারের পানি একটু বৃদ্ধি পেলেই পুরো গ্রাম তলিয়ে যায়। এছাড়াও ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস সৃষ্টি হলে উপকূলীয় এলাকার জনসাধারণকে নির্ঘুম রাত কাটাতে হয়। গ্রাম গুলো সাগরের লবণ পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় কৃষকদের নানা ফসল নষ্ট হয়। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পানির উচ্চতা ও তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় প্রতিনিয়ত আতংকের মধ্যে থাকতে হয় সাগর পাড়ের বাসিন্দাদের।

আগামী নির্বাচনের সময় জানালেন উপদেষ্টা সাখাওয়াত

ঢাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকদের অবরোধ

সাবেক আইজিপি, জে. জিয়াসহ ৮ জনের তদন্ত প্রতিবেদন ১ মাসের মধ্যে দাখিলের নির্দেশ ট্রাইব্যুনালের

নির্বাচনের সময় ‘পূর্ণাঙ্গ ক্ষমতা’ চান ইসি কর্মকর্তারা

বিদেশে অপরাধ করলেও শাস্তি, ট্রাইব্যুনাল আইনের সংশোধনী অনুমোদন

ছবি

শিল্পকলায় আবারও হবে বন্ধ হওয়া ‘নিত্যপুরাণ’

ছবি

দ্বৈত প্রশাসন ব্যবস্থা বিলুপ্তির দাবি হিউম্যানিটি ফাউন্ডেশনের

ছবি

ট্রাইব্যুনাল চাইলে বিচারকার্য অডিও ভিজ্যুয়াল প্রচার করতে পারবে : আইন উপদেষ্টা

পুলিশের নতুন আইজিপি হলেন বাহারুল আলম

ছবি

মূল্যস্ফীতি মোকাবিলায় সরকারের উদ্যোগ

ছবি

স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব পদে রদবদল: নতুন দায়িত্বে আকমল হোসেন আজাদ

ছবি

ইসিকে অগাধ ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, সমস্যা ছিল প্রয়োগে : বদিউল আলম

ছবি

আমদানির ক্ষেত্রে কোনো দেশের সঙ্গে সিন্ডিকেট হলে সমস্যা: বাণিজ্য উপদেষ্টা

ছবি

প্রথমবার সচিবালয়ে ড. ইউনূস, যোগ দিলেন উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে

ছবি

যুদ্ধে মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার, রাশিয়ার হুঁশিয়ারি

নির্বাচনে আ’লীগের অংশগ্রহণে আপত্তি নেই : ভারতীয় পত্রিকাকে মুহাম্মদ ইউনূস

কপ২৯ : জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় সাহসী ও সম্মিলিত পদক্ষেপের প্রয়োজন

ছবি

গার্মেন্ট শ্রমিকদের মহাসড়ক অবরোধের চতুর্থ দিন

ভুয়া মামলা, আগে করতো পুলিশ, এখন করছে পাবলিক : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

ছবি

আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধনের খসড়া উঠছে আজ উপদেষ্টা পরিষদে

ছবি

বিশ্ব টয়লেট দিবস ২০২৪ উদযাপন করলো হারপিক

ছবি

বাল্যবিবাহ নিরসনে রংপুরে কর্মশালা অনুষ্ঠিত

ছবি

আগে পুলিশ ভুয়া মামলা করত, এখন করছে ‘জনগণ’: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

ছবি

হয়রানিমূলক মামলা ঠেকাতে নতুন চিন্তার কথা জানালেন আইন উপদেষ্টা

ছবি

কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর: সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে আগামী সপ্তাহে কমিটি

ছবি

নির্বাচনে আ.লীগের অংশগ্রহণে সরকারের আপত্তি নেই: দ্য হিন্দুকে মুহাম্মদ ইউনূস

ছবি

বিচারের আগে আ. লীগকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে দেব না, প্রয়োজনে ২য় অভ্যুত্থান : সারজিস

ছবি

বৈঠক করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে তিতুমীরের ১৪ শিক্ষার্থী

ছবি

ঢাকা মহানগরে তিন দিনের মধ্যে ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধের নির্দেশ

ছবি

খুব প্রয়োজনীয় কিছু সংস্কার করে যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন: আইন উপদেষ্টা

ছবি

আমাদের সাফল্যের সূর্য উদয় হয়েছে : অর্থ উপদেষ্টা

ছবি

তিতুমীর কলেজে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন

ছবি

সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩২ বছর নির্ধারণ

ছবি

সংসদ সচিবালয়ের দায়িত্ব পেলেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল

ট্রাম্পের ক্ষমতায় আসায় যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ সম্পর্ক বদলাবে না: ড. ইউনূস

ছবি

সরকারি চাকরির পুলিশ ভেরিফিকেশনে রাজনৈতিক পরিচয় বিবেচিত হবে না

tab

জাতীয়

জলবায়ু পরিবর্তনে মারাত্মক ঝুঁকিতে বাঁশখালী উপকূল

মুহাম্মদ মুহিব্বুল্লাহ ছানুবী, বাঁশখালী (চট্টগ্রাম)

জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে বাঁশখালী সমুদ্র উপকূলের ৩৩ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ-সংবাদ

বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪

জলবায়ু পরিবর্তনে মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে বাঁশখালী সমুদ্র উপকূল। উপকূলবর্তী এ উপজেলায় জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতির আশংকা বেশি হলেও জলবায়ু তহবিলের প্রকল্পে গুরুত্ব পায়নি মোটেও। উল্টো জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার নামে এই তহবিলের টাকা দিয়ে হচ্ছে কম ঝুঁকিতে থাকা উপজেলায় সৌরবাতি স্থাপন, সড়ক নির্মাণ, সংস্কার, মেরামত ও নানা উন্নয়নকাজ।

ক্লাইমেট চেন্জ ট্রাস্ট ফান্ডের (সিসিটিএফ) নথি ঘেঁটে দেখা গেছে, জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড তৈরি হওয়ার পর এ পর্যন্ত চট্টগ্রাম জেলায় ৬২টি প্রকল্প নেয়া হয়েছে। এসব প্রকল্পের অনুকূলে বরাদ্দ ছিল ৩৫৩ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে বর্তমানে ১১ প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। তবে চট্টগ্রামের উপকূলবর্তী পাঁচ উপজেলার (মিরসরাই, সীতাকু-, আনোয়ারা, বাঁশখালী ও সন্দ্বীপ) জন্য প্রকল্প ছিল মাত্র হাতেগোনা দুইয়েকটি। তাও আবার জলবায়ু ফান্ড গঠনের পরপরই তা বাস্তবায়ন করা হয়। বাস্তবে সেই প্রকল্প কতটুকু কার্যকর সেটাও বিবেচনায় নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

প্রকল্প পর্যালোচনায় দেখা যায়, জলবায়ু পরিবর্তনে নারী ও শিশুরা বেশি ঝুঁকিতে থাকলেও চট্টগ্রামের উপকূলবর্তী বাঁশখালী উপজেলার নারী-শিশুদের জন্য নেই কোনো প্রকল্প। এমনকি প্রকল্প বাছাইয়ে স্বাস্থ্য সর্বোচ্চ গুরুত্ব পাওয়ার কথা থাকলেও স্বাস্থ্যখাতেও নেয়া হয়নি কোনো প্রকল্প। অপরদিকে ঝুঁকি মোকাবেলার নামে এই তহবিলের প্রায় পুরো অংশ ব্যবহার হয়েছে অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রকল্পের পেছনে। এছাড়া, জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবেলায় গবেষণাকে অগ্রাধিকার দেয়ার কথা থাকলেও গত ১৩ বছরে গবেষণা প্রকল্প নেয়া হয়েছে মাত্র ৫টি।

জানা গেছে, জলবায়ু তহবিলের প্রকল্পে বরাদ্দ আসে স্থানীয় সংসদ সদস্য বা রাজনৈতিক ব্যক্তিদের প্রভাবের কারণে। তাই নিজেদের ইচ্ছে মতো বরাদ্দ হয়েছে ইতোপূর্বে। এমনকি উপজেলাগুলোতে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে শিক্ষা থেকে ঝরে পড়া শিশুর সংখ্যা, ঘরবাড়ি হারানো মানুষের হিসাব, কোনো কোনো রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়েছে সে হিসাবও রাখেনি সরকারি কোনো কর্তৃপক্ষ।

বাঁশখালী উপকূলে ‘আগে হয়তো জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ডের অর্থায়নে ছোটখাটো কিছু কাজ হয়েছে। বর্তমানে কোনো প্রকল্প নেই। অথচ বাঁশখালী অনেক বড় একটা জায়গা। এখানের সমুদ্রতীরবর্তী ইউনিয়ন গুলোতে জরিপ চালিয়ে দ্রুত অন্তর্ভূক্ত করে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো উচিত। বর্তমান নতুন সরকার এগুলো প্রকল্প আকারে পাঠালে হয়তো একনেকে অনুমোদন হওয়ার সম্ভাবনা আছে।’

জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডের বর্তমান কার্যক্রমকে ন্যায়বিচারের পরিপন্থী বলে মন্তব্য করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বন ও পরিবেশ বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের ড. মোহাম্মদ আল আমিন বলেন, ‘এখন উন্নয়ন প্রকল্পকে জলবায়ু অভিযোজন নামে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এটার মূল কারণ হল স্থানীয়ভাবে সুনির্দিষ্ট তথ্য বা গবেষণার অভাব। সুতরাং যে প্রকল্পগুলো যাচ্ছে সেগুলো আদৌ জলবায়ু অভিযোজনের প্রকল্প কিনা তারা জানেন না। প্রশ্নটা থেকেই যাচ্ছে যে ট্রাস্ট ফান্ডের টাকায় নেয়া প্রকল্পগুলো ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য কতটা নেয়া হয়েছে বা আদৌ ক্ষতিগ্রস্তরা এর অংশীদার হচ্ছে কিনা।’

তিনি আরও বলেন, ‘যারা জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে যারা আসলেই কাজ করছে তাদেরকে কিন্তু এই ধরনের কাজের সঙ্গে যুক্ত করা হয় না। অথবা তাদের পরামর্শও নেয়া হয় না। যে গত কয়েক দশকে এই অঞ্চলের আবহাওয়া এতখানি পরিবর্তন হয়েছে, আমাদের আরও ২০-৩০ বছরের জন্য একটা মেগা প্রকল্প নিতে হবে যেটা আসলেই উপকূলের মানুষের জন্য ভূমিকা রাখবে।’

জলবায়ু অর্থায়ন বিশেষজ্ঞ ও ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) জলবায়ুর অর্থায়নে সুশাসন সেলের সাবেক সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার জাকির হোসেন খান বলেন, ‘বাংলাদেশে জলবায়ু তহবিল ব্যবস্থাপনার সবচেয় বড় চ্যালেঞ্জ হলো আমাদের কোনো জাতীয় জলবায়ু তহবিল কৌশলপত্র নেই। এমনকি জলবায়ু পরিবর্তন নীতিমালাও নেই। যার কারণে জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ড অথবা সরকারের উন্নয়ন তহবিল থেকে জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত বরাদ্দ হচ্ছে সেটা কিসের ভিত্তিতে হচ্ছে কাকে দেওয়া হচ্ছে বা কোথায় অগ্রাধিকার থাকবে এ ব্যাপারে কোনো ধরনের সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন নেই। এ কারণে ডিও লেটার বা রাজনৈতিক প্রভাব যাই বলি না কেনো, যে যেভাবে পারবে, প্রভাব খাটিয়ে বরাদ্দ নেয়ার চেষ্টা করবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এজন্য প্রয়োজন স্থানীয়ভাবে প্রত্যেক এলাকার জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি ম্যাপিং তৈরি করা। কোনো এলাকা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে, কোনো কারণে ঝুঁকি, সেখানে কী সম্পদ আছে, কারণ এখন বলা হচ্ছে নেচার বেজড সলিউশন। প্যারিস চুক্তির ৭ দশমিক ৫ অনুচ্ছেদে বলা আছে অভিযোজন কীভাবে করতে হবে, স্থানীয় অভিজ্ঞতার জ্ঞানকে কাজে লাগাতে হবে। এগুলো যতক্ষণ পর্যন্ত সিস্টেমের ভেতর আসবে না এবং সেটার জবাবদিহিতা না থাকবে তখন এই ধরনের ঘটনা একটার পর একটা ঘটবে।’

তিনি বলেন, ‘উন্নয়ন তহবিল আর জলবায়ু তহবিলের মধ্যে পার্থক্য হলো উন্নয়ন তহবিলের মাধ্যমে যে রাস্তাঘাট করা হয় তার ঝুঁকিটা কাটিয়ে ওঠার সুযোগ আছে কিন্তু জলবায়ু তহবিলের প্রকল্পে যদি দুর্নীতি হয় তাহলে মানুষের জীবনকে সরাসরি হুমকির মুখে ফেলবে।’

বাঁশখালী উপজেলার সমুদ্রতীরবর্তি খানখানাবাদ, কদমরসুল, বাহারছড়া, কাথারিয়া, সরল, গ-ামারা, বড়ঘোনা, খুদুকখালী, ছনুয়া ও ছোট ছনুয়া এলাকা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। সমুদ্র উপকূলের ৩৩ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ অরক্ষিত থাকায় এ ঝুঁকি আরও বেড়েছে। জোয়ারের পানি একটু বৃদ্ধি পেলেই পুরো গ্রাম তলিয়ে যায়। এছাড়াও ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস সৃষ্টি হলে উপকূলীয় এলাকার জনসাধারণকে নির্ঘুম রাত কাটাতে হয়। গ্রাম গুলো সাগরের লবণ পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় কৃষকদের নানা ফসল নষ্ট হয়। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পানির উচ্চতা ও তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় প্রতিনিয়ত আতংকের মধ্যে থাকতে হয় সাগর পাড়ের বাসিন্দাদের।

back to top