ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবারসহ দেশের ১০ প্রভাবশালী শিল্পগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অর্থ পাচার, ব্যাংক ঋণে অনিয়ম, কর ফাঁকি ও দুর্নীতির বিস্তৃত চিত্র উঠে এসেছে সরকার গঠিত ১১টি তদন্ত দলের প্রতিবেদনে। পাচারকৃত অর্থ উদ্ধারে আজ রোববার অনুষ্ঠিত হচ্ছে বিশেষ টাস্কফোর্সের সভা। সভার সভাপতিত্ব করবেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর।
এর আগে আগামী ১৬ এপ্রিল মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ–সংক্রান্ত উচ্চপর্যায়ের সভা আহ্বান করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
তদন্তে যেসব গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অনিয়মের প্রমাণ মিলেছে, তাদের মধ্যে রয়েছে—এস আলম, বেক্সিমকো, নাবিল, সামিট, ওরিয়ন, জেমকন, নাসা, বসুন্ধরা, সিকদার ও আরামিট গ্রুপ। এই ১০টি শিল্পগোষ্ঠীর পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ব্যক্তিগত সম্পদ ও নাগরিকত্ব বিষয়েও তদন্ত চলছে। জানা গেছে, অনেকেই ইতোমধ্যে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ত্যাগ করেছেন।
সবচেয়ে বেশি অনিয়ম ও অর্থ পাচারের তথ্য পাওয়া গেছে এস আলম গ্রুপের বিরুদ্ধে। প্রতিষ্ঠানটি ইসলামী, ফার্স্ট সিকিউরিটি, এসআইবিএল, গ্লোবাল, এক্সিম, জনতাসহ ১১ ব্যাংক থেকে ২ লাখ কোটি টাকার বেশি অর্থ নামে-বেনামে সরিয়েছে বলে দাবি তদন্ত সংস্থার। এই অর্থের বড় অংশই বিদেশে পাচার হয়েছে। এখন পর্যন্ত ৬টি দেশে এস আলমের হোটেল, জমি ও সম্পদের তথ্য মিলেছে।
বেক্সিমকো গ্রুপের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের ঋণের পরিমাণ ৫০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। এই অর্থের বড় অংশ লন্ডন ও সিঙ্গাপুরে পাচার হয়েছে বলে জানিয়েছে তদন্ত দল। বসুন্ধরা গ্রুপের বিরুদ্ধে দেশে ৩৫ হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণ এবং বিদেশে মালিক পক্ষের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের তথ্য মিলেছে। ইতোমধ্যে তাদের আট সদস্যের বিদেশি সম্পদ জব্দে আদালতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
রাজউক প্রকল্পে প্লট বণ্টনে অনিয়মের অভিযোগে শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা, টিউলিপ সিদ্দিকসহ শেখ পরিবারের ছয় সদস্যের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) মামলা করেছে। যুক্তরাজ্যে টিউলিপের একাধিক ফ্ল্যাটের খোঁজও মিলেছে।
সিকদার গ্রুপ নামে বেনামে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ৩০ হাজার কোটি টাকার বেশি সরিয়েছে। সিকদার পরিবারের সম্পদ রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেস ও নিউইয়র্ক, প্রমোদনগরী হিসেবে খ্যাত লাসভেগাস, সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাজধানী আবুধাবি ও থাইল্যান্ডের ব্যাংককে। যুক্তরাজ্য, সিঙ্গাপুর ও সুইজারল্যান্ডে রয়েছে সিকদার পরিবারের একাধিক কোম্পানি।
ওরিয়ন গ্রুপের চেয়ারম্যান ওবায়দুল করিমের ৩১টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ ও একটি ফ্ল্যাটসহ ৪৩ একর জমি জব্দের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
নাসা গ্রুপের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদারের যুক্তরাজ্যে পাঁচটি বাড়ি, আইলে অফ ম্যানে একটি ও জার্সিতে একটি বাড়ির খোঁজ মিলেছে। এসব সম্পদ অবরুদ্ধ করার আদেশ দিয়েছেন আদালত। নাবিল গ্রুপ নামে-বেনামে বিভিন্ন ব্যাংক ১৫ হাজার কোটি টাকার বেশি সরিয়েছে। সামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান আজিজ খানসহ তাঁর পরিবারের ১১ জন সদস্যের ১৯১টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করার আদেশ দিয়েছেন আদালত।
পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে সরকারি প্লট বেআইনিভাবে নিজেদের নামে করিয়ে নেওয়ার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তাঁর বোন শেখ রেহানা, টিউলিপ সিদ্দিকসহ শেখ পরিবারের ছয় সদস্য ও একাধিক রাজউক কর্মকর্তাসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুদক। যুক্তরাজ্যে টিউলিপের একাধিক ফ্ল্যাটের খোঁজ মিলেছে। তবে জেমকন গ্রুপের বড় কোনো অনিয়মের খুঁজ পাননি তদন্তসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
সরকার পাচার হওয়া অর্থ ফেরতের লক্ষ্যে একটি বিশেষ অধ্যাদেশ তৈরির কাজ করছে। বিদেশি আইনি প্রতিষ্ঠান ও ফার্ম নিয়োগের বিষয়েও আলোচনা চলছে। বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় গঠিত বিশেষজ্ঞ দল এসব প্রক্রিয়ায় যুক্ত রয়েছে। কাজ এগিয়ে নিতে বিএফআইইউ, সিআইডি, এনবিআর ও দুদক যৌথভাবে কাজ করছে।
গভর্নর আহসান এইচ মনসুর জানিয়েছেন, "আড়াই থেকে তিন লাখ কোটি টাকা পাচার হয়েছে। এই অর্থ ফেরতের লক্ষ্যে কাজ চলছে। ছয় মাসের মধ্যেই বড় অগ্রগতি আশা করা হচ্ছে।"
তিনি আরও বলেন, যারা অর্থ পাচার করেছে, তাদের জীবন কঠিন করে তোলা হবে; যাতে ভবিষ্যতে কেউ আর অর্থ পাচারে উৎসাহিত না হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ মুস্তফা কে মুজেরী বলেন, “দৃশ্যমান পদক্ষেপ না নিলে জনগণের আস্থা ফিরবে না। পাচার রোধে কার্যকর উদ্যোগ এখন সময়ের দাবি।”
রোববার, ১৩ এপ্রিল ২০২৫
ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবারসহ দেশের ১০ প্রভাবশালী শিল্পগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অর্থ পাচার, ব্যাংক ঋণে অনিয়ম, কর ফাঁকি ও দুর্নীতির বিস্তৃত চিত্র উঠে এসেছে সরকার গঠিত ১১টি তদন্ত দলের প্রতিবেদনে। পাচারকৃত অর্থ উদ্ধারে আজ রোববার অনুষ্ঠিত হচ্ছে বিশেষ টাস্কফোর্সের সভা। সভার সভাপতিত্ব করবেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর।
এর আগে আগামী ১৬ এপ্রিল মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ–সংক্রান্ত উচ্চপর্যায়ের সভা আহ্বান করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
তদন্তে যেসব গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অনিয়মের প্রমাণ মিলেছে, তাদের মধ্যে রয়েছে—এস আলম, বেক্সিমকো, নাবিল, সামিট, ওরিয়ন, জেমকন, নাসা, বসুন্ধরা, সিকদার ও আরামিট গ্রুপ। এই ১০টি শিল্পগোষ্ঠীর পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ব্যক্তিগত সম্পদ ও নাগরিকত্ব বিষয়েও তদন্ত চলছে। জানা গেছে, অনেকেই ইতোমধ্যে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ত্যাগ করেছেন।
সবচেয়ে বেশি অনিয়ম ও অর্থ পাচারের তথ্য পাওয়া গেছে এস আলম গ্রুপের বিরুদ্ধে। প্রতিষ্ঠানটি ইসলামী, ফার্স্ট সিকিউরিটি, এসআইবিএল, গ্লোবাল, এক্সিম, জনতাসহ ১১ ব্যাংক থেকে ২ লাখ কোটি টাকার বেশি অর্থ নামে-বেনামে সরিয়েছে বলে দাবি তদন্ত সংস্থার। এই অর্থের বড় অংশই বিদেশে পাচার হয়েছে। এখন পর্যন্ত ৬টি দেশে এস আলমের হোটেল, জমি ও সম্পদের তথ্য মিলেছে।
বেক্সিমকো গ্রুপের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের ঋণের পরিমাণ ৫০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। এই অর্থের বড় অংশ লন্ডন ও সিঙ্গাপুরে পাচার হয়েছে বলে জানিয়েছে তদন্ত দল। বসুন্ধরা গ্রুপের বিরুদ্ধে দেশে ৩৫ হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণ এবং বিদেশে মালিক পক্ষের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের তথ্য মিলেছে। ইতোমধ্যে তাদের আট সদস্যের বিদেশি সম্পদ জব্দে আদালতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
রাজউক প্রকল্পে প্লট বণ্টনে অনিয়মের অভিযোগে শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা, টিউলিপ সিদ্দিকসহ শেখ পরিবারের ছয় সদস্যের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) মামলা করেছে। যুক্তরাজ্যে টিউলিপের একাধিক ফ্ল্যাটের খোঁজও মিলেছে।
সিকদার গ্রুপ নামে বেনামে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ৩০ হাজার কোটি টাকার বেশি সরিয়েছে। সিকদার পরিবারের সম্পদ রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেস ও নিউইয়র্ক, প্রমোদনগরী হিসেবে খ্যাত লাসভেগাস, সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাজধানী আবুধাবি ও থাইল্যান্ডের ব্যাংককে। যুক্তরাজ্য, সিঙ্গাপুর ও সুইজারল্যান্ডে রয়েছে সিকদার পরিবারের একাধিক কোম্পানি।
ওরিয়ন গ্রুপের চেয়ারম্যান ওবায়দুল করিমের ৩১টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ ও একটি ফ্ল্যাটসহ ৪৩ একর জমি জব্দের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
নাসা গ্রুপের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদারের যুক্তরাজ্যে পাঁচটি বাড়ি, আইলে অফ ম্যানে একটি ও জার্সিতে একটি বাড়ির খোঁজ মিলেছে। এসব সম্পদ অবরুদ্ধ করার আদেশ দিয়েছেন আদালত। নাবিল গ্রুপ নামে-বেনামে বিভিন্ন ব্যাংক ১৫ হাজার কোটি টাকার বেশি সরিয়েছে। সামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান আজিজ খানসহ তাঁর পরিবারের ১১ জন সদস্যের ১৯১টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করার আদেশ দিয়েছেন আদালত।
পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে সরকারি প্লট বেআইনিভাবে নিজেদের নামে করিয়ে নেওয়ার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তাঁর বোন শেখ রেহানা, টিউলিপ সিদ্দিকসহ শেখ পরিবারের ছয় সদস্য ও একাধিক রাজউক কর্মকর্তাসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুদক। যুক্তরাজ্যে টিউলিপের একাধিক ফ্ল্যাটের খোঁজ মিলেছে। তবে জেমকন গ্রুপের বড় কোনো অনিয়মের খুঁজ পাননি তদন্তসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
সরকার পাচার হওয়া অর্থ ফেরতের লক্ষ্যে একটি বিশেষ অধ্যাদেশ তৈরির কাজ করছে। বিদেশি আইনি প্রতিষ্ঠান ও ফার্ম নিয়োগের বিষয়েও আলোচনা চলছে। বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় গঠিত বিশেষজ্ঞ দল এসব প্রক্রিয়ায় যুক্ত রয়েছে। কাজ এগিয়ে নিতে বিএফআইইউ, সিআইডি, এনবিআর ও দুদক যৌথভাবে কাজ করছে।
গভর্নর আহসান এইচ মনসুর জানিয়েছেন, "আড়াই থেকে তিন লাখ কোটি টাকা পাচার হয়েছে। এই অর্থ ফেরতের লক্ষ্যে কাজ চলছে। ছয় মাসের মধ্যেই বড় অগ্রগতি আশা করা হচ্ছে।"
তিনি আরও বলেন, যারা অর্থ পাচার করেছে, তাদের জীবন কঠিন করে তোলা হবে; যাতে ভবিষ্যতে কেউ আর অর্থ পাচারে উৎসাহিত না হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ মুস্তফা কে মুজেরী বলেন, “দৃশ্যমান পদক্ষেপ না নিলে জনগণের আস্থা ফিরবে না। পাচার রোধে কার্যকর উদ্যোগ এখন সময়ের দাবি।”