ডিসেম্বরে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজন করাই নির্বাচন কমিশনের মূল্য লক্ষ্য বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিন। তিনি বলেছেন, লক্ষ্য বাস্তবায়নে কমিশন ‘জোরেশোরে প্রস্তুতি’ শুরু করে দিয়েছে।
এদিকে চলতি বছরের জুন মাসে স্থানীয় সরকারের সব প্রতিষ্ঠানের নির্বাচন করা যেতে পারে বলে স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন যে পর্যবেক্ষণ দিয়েছে, তা কমিশনের ‘একান্ত ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গি’ বলে মন্তব্য করেছেন সিইসি।
সোমবার ঢাকার আগারগাঁওয়ে নির্বাচনী প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে আরএফইডি আয়োজিত অনুষ্ঠানে সিইসি এ মন্তব্য করেন। অনুষ্ঠানে ‘রিপোর্টার্স ফোরাম ফর ইলেকশন অ্যান্ড ডেমোক্রেসির (আরএফইডি)’ নতুন কমিটির সভাপতি কাজী জেবেল ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর কাছে বিদায়ী কমিটি দায়িত্ব হস্তান্তর করে।
নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ, নির্বাচন কমিশনার তাহমিদা আহমদ, নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার, নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ (অব.), ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
জাতীয় নির্বাচনের তারিখ
জাতীয় নির্বাচনের তারিখ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সিইসি এএমএম নাসির উদ্দিন বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচনের জন্য মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা দুটো ডেট ঘোষণা করেছেন। উইথ মিনিমাম রিফর্মস ডিসেম্বর, আর যদি ম্যাক্সিমাম রিফর্মস হয় আরর্লি নেক্সট ইয়ার বাই জুন। মে-জুন মাসে সাধারণত যদি হয় এপ্রিলের দিকে। আবার সংস্কার কমিশনের রিপোর্ট নিয়ে ঐকমত্য কমিশন হয়েছে, যেটির মেয়াদ ছয় মাস।’
এরইমধ্যে ইসির প্রস্তুতির কথা তুলে ধরে সিইসি বলেন, ‘ছয় মাসকে মাথায় রেখে আমাদের চিন্তা করতে
হবে যে, ক্যান উই রিয়েলি ওয়েট সিক্স মান্থস? আমাদের যদি বলা হয় মিনিমাম রিফর্ম করে ডিসেম্বরে ইলেকশন করতে চাই তাহলে আমাদের তো ছয় মাস বসে থাকার সুযোগ নেই। ডিসেম্বর হোক আর আগামী বছর হোক আমরা আর্লিয়েস্ট ধরে নিয়ে আমাদের প্রস্তুতির দরকার আছে। আমরা জোরেশোরে প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছি।’
বিদ্যমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে জাতীয় নির্বাচন করা সম্ভব কিনা, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, ‘ডিসেম্বর আসতে আসতে এই পরিস্থিতি স্থিতিশীল হবে। সবার সহযোগিতা নিয়ে এমন একটি নির্বাচনী পরিবেশ করা হবে যেখানে ভোট ছাড়া মানুষের আর কোনো চিন্তা থাকবে না।’
স্থানীয় সরকার নির্বাচন
রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার যেসব সংস্কার কমিশন গঠন করেছে তার মধ্যে স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন তাদের সুপারিশে (পর্যবেক্ষণ) বলেছে, ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা পরিষদ এবং পৌরসভা ও সিটি করপোরেশন; স্থানীয় সরকারের এই পাঁচটি প্রতিষ্ঠানে চলতি বছর জুনের মধ্যে নির্বাচন করা যেতে পারে।
এর আগে সেবা পেতে জনগণের ভোগান্তি লাঘবের জন্য হলেও জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকারের নির্বাচন করার পক্ষে মত দিয়েছিলেন স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। তবে এটা একান্তই তার ‘ব্যক্তিগত’ মত জানিয়ে উপদেষ্টা বলেছিলেন, ‘সরকারই এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।’
জুনে স্থানীয় সরকারের নির্বাচন আয়োজনের বিষয়ে সংস্কার কমিশনের পর্যবেক্ষণ প্রসঙ্গে সিইসি বলেন, ‘সংস্কার কমিশন পরামর্শ দিয়েছে জুনে সম্ভব। সেটি সম্ভব হবে যদি ১৬ লক্ষ মৃত ভোটারকে বাদ দেয়া না হয় এবং নতুন ৩৫ লাখ ভোটারদের বাদ দিয়ে নির্বাচন অনুষ্ঠান করা হয়। ভোটার তালিকা হালনাগাদের কার্যক্রম শেষ হবে আগামী জুন মাসে। সুতরাং চূড়ান্ত ভোটার তালিকা না হলে আমরা নির্বাচনের জন্য তো প্রস্তুত হতে পারছি না।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের টার্গেট ডিসেম্বর এবং জাতীয় নির্বাচন। ডিসেম্বরে নির্বাচন করতে গেলে অক্টোবরে তফসিল ঘোষণা করতে হবে।’ এমন পরিস্থিতির মধ্যে স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের সুপারিশ একান্ত তাদের ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গি বলে মন্তব্য করেন সিইসি।
এএমএম নাসির উদ্দিন বলেন, ‘তারা (সংস্কার কমিশন) বিজ্ঞ এবং জ্ঞানী লোকজন, এ বিষয়ে আমার কোনো মন্তব্য নেই। রাজনৈতিক এ বিষয়ে একটি রাজনৈতিক বিতর্ক চলছে। নির্বাচন কমিশন তাতে জড়িত হতে চায় না। আগে ভোটার তালিকা হোক, এখনও ভোটার তালিকা করা সম্ভব হয়নি।’
ভোটা তালিকার চলমান হালনাগাদ কাজের তথ্য তুলে ধরে সিইসি বলেন, এরইমধ্যে বাড়ি বাড়ি গিয়ে হালনাগাদের সময় প্রায় ১৭ লাখ মৃত ভোটার তালিকায় পাওয়া গেছে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাদের নাম কাটা হয়েছে। ৩৫-৩৬ লাখ বাদ পড়া ভোটার রয়েছে। নতুন ভোটার রয়েছে প্রায় ২০ লাখ। (হালনাগাদ না হলে) সব মিলিয়ে ৫৪ লাখের মতো বাদ পড়ে যেত।’
*সমঝোতার আশা*
জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে শেষ পর্যন্ত সমঝোতা হবে এমন প্রত্যাশা ব্যক্ত করে সিইসি বলেন, ‘সবাই রাজনৈতিক সমঝোতার প্রত্যাশায় রয়েছে। ঐকমত্য কমিশন নির্বাচনের তারিখ নিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাবে এমন কোথাও দেখিনি। ছয়টি রিপোর্ট কমিশন দিয়েছে, বিভিন্ন দলের কাছে পাঠিয়েছে দেখলাম। একটা নির্বাচন যখন হয় রাজনৈতিক সমঝোতা হলে ভালো। সবাই প্রত্যাশা করে একটা রাজনৈতিক সমঝোতা।’
অন্য কারও এজেন্ডায় না চললে গ-গোল থাকার কথা নয় বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘প্রস্তুতি থেমে থাকবে না, প্রস্তুতি চলবে... আমাদের ব্যক্তিগত এজেন্ডাও নেই, অন্য কারও এজেন্ডা বাস্তবায়নের নিয়েও ওয়ার্ক করছি না। এজেন্ডা নিয়েছি ১৮ কোটি দেশের মানুষের স্বার্থের দিকে তাকিয়ে, গণতন্ত্রের দিকে তাকিয়ে, যাতে শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তর যাতে হতে পারে।’
*ত্রাণের আশায় রোহিঙ্গা তালিকায় নাম*
সম্প্রতি কক্সবাজারের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘উখিয়া-টেকনাফে অনেক বাংলাদেশি নাগরিক ত্রাণের আশায় রোহিঙ্গা হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছেন। রিলিফ কমে গেছে, এদিকে এনআইডি করতে পারে না। আমাদের এখানে ওদের সঙ্গে ক্রসম্যাচিং হচ্ছে তখন আটকে যাচ্ছে। তারা এখন আর বাংলাদেশি হতে পারছে না।’
কত ধরনের চ্যালেঞ্জ যে রয়েছে মাঠে না গেলে জানা যায় না, এমন মন্তব্য করে সিইসি বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের সঙ্গে বিয়ে হচ্ছে। অনেক সময় স্বামী রোহিঙ্গা, স্ত্রী বাংলাদেশি, আবার স্ত্রী বাংলাদেশি, স্বামী রোহিঙ্গা। এমন তথ্য আমরা পাচ্ছি। ছেলে-মেয়ের মধ্যে বিয়ে হয়ে যাচ্ছে...। এসব জটিলতায় আমরা আছি। আমরা চেষ্টা করছি সমাধানের। কীভাবে সমাধান, কমিশনে আলাপ করে করতে হবে। স্থানীয় অফিসাররা দিন-রাত পরিশ্রম করছেন।’
*সোশ্যাল মিডিয়া*
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একজনের পক্ষে-বিপক্ষে প্রচারণা নিয়ে সংবাদমাধ্যমের সহযোগিতা চেয়ে সিইসি বলেন, ‘ইসির কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই সোশ্যাল মিডিয়ায়। এখন থেকে বলা শুরু হয়েছে পক্ষে-বিপক্ষে।’
তিনি বলেন, ‘আচরণবিধি যেটা করব, আমরা অ্যালাউ করার আগে শুরু হয়ে গেছে। শুধু পক্ষে নয়, প্রতিপক্ষের চরিত্র হননও শুরু হয়ে যাচ্ছে। এটা যাতে প্রার্থীর পক্ষে-বিপক্ষে না করে সেজন্য মিডিয়ার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব রয়েছে।’
সরকার কিছু করতে গেলে মুশকিল, এমন মন্তব্য করেন এএমএম নাসির উদ্দিন বলেন, ‘সোশ্যাল মিডিয়ায় গুজব ছড়িয়ে গেলে মুশকিল। রিউমার মকারিং কীভাবে অ্যাড্রেস করব, এটা মাথাব্যথা শুরু হয়েছে। এটা বিরাট চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে, কীভাবে আচরণবিধি দিয়ে কন্ট্রোল করব।’
*সীমানা নির্ধারণ*
ভোটার তালিকা প্রস্তুতের পাশাপাশি সীমানা পুনর্নির্ধারণ নিয়ে প্রস্তুতিও শুরু করতে চায় কমিশন, জানিয়ে এএমএম নাসির উদ্দিন বলেন, ‘আইনি জটিলতায় কাজ শুরু করতে পারছি না। ইতোমধ্যে আমরা সরকারের কাছে আইন মন্ত্রণালয়ে সংশোধন প্রস্তাব পাঠিয়েছি। আরও কিছু প্রস্তাব যাবে। সংস্কার কমিশন না হলেও এসব কাজ করতে হতো। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য মিনিমাম যে সংস্কার দরকার সেটুকু করার উদ্যোগ আমরা নিচ্ছি।’
সিইসি বলেন, ‘পার্টি রেজিস্ট্রেশন, ডিলিমিটেশন হোক, যেখানে যেখানে কিছুটা সংশোধন দরকার সরকারের কাছে দেব। তা হয়ে গেলে বিধি সংশোধন করে ফেলব। আমাদের চেষ্টার ত্রুটি নেই। সর্বশক্তি দিয়ে প্রস্তুতি এগিয়ে নেব।’
সোমবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
ডিসেম্বরে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজন করাই নির্বাচন কমিশনের মূল্য লক্ষ্য বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিন। তিনি বলেছেন, লক্ষ্য বাস্তবায়নে কমিশন ‘জোরেশোরে প্রস্তুতি’ শুরু করে দিয়েছে।
এদিকে চলতি বছরের জুন মাসে স্থানীয় সরকারের সব প্রতিষ্ঠানের নির্বাচন করা যেতে পারে বলে স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন যে পর্যবেক্ষণ দিয়েছে, তা কমিশনের ‘একান্ত ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গি’ বলে মন্তব্য করেছেন সিইসি।
সোমবার ঢাকার আগারগাঁওয়ে নির্বাচনী প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে আরএফইডি আয়োজিত অনুষ্ঠানে সিইসি এ মন্তব্য করেন। অনুষ্ঠানে ‘রিপোর্টার্স ফোরাম ফর ইলেকশন অ্যান্ড ডেমোক্রেসির (আরএফইডি)’ নতুন কমিটির সভাপতি কাজী জেবেল ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর কাছে বিদায়ী কমিটি দায়িত্ব হস্তান্তর করে।
নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ, নির্বাচন কমিশনার তাহমিদা আহমদ, নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার, নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ (অব.), ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
জাতীয় নির্বাচনের তারিখ
জাতীয় নির্বাচনের তারিখ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সিইসি এএমএম নাসির উদ্দিন বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচনের জন্য মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা দুটো ডেট ঘোষণা করেছেন। উইথ মিনিমাম রিফর্মস ডিসেম্বর, আর যদি ম্যাক্সিমাম রিফর্মস হয় আরর্লি নেক্সট ইয়ার বাই জুন। মে-জুন মাসে সাধারণত যদি হয় এপ্রিলের দিকে। আবার সংস্কার কমিশনের রিপোর্ট নিয়ে ঐকমত্য কমিশন হয়েছে, যেটির মেয়াদ ছয় মাস।’
এরইমধ্যে ইসির প্রস্তুতির কথা তুলে ধরে সিইসি বলেন, ‘ছয় মাসকে মাথায় রেখে আমাদের চিন্তা করতে
হবে যে, ক্যান উই রিয়েলি ওয়েট সিক্স মান্থস? আমাদের যদি বলা হয় মিনিমাম রিফর্ম করে ডিসেম্বরে ইলেকশন করতে চাই তাহলে আমাদের তো ছয় মাস বসে থাকার সুযোগ নেই। ডিসেম্বর হোক আর আগামী বছর হোক আমরা আর্লিয়েস্ট ধরে নিয়ে আমাদের প্রস্তুতির দরকার আছে। আমরা জোরেশোরে প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছি।’
বিদ্যমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে জাতীয় নির্বাচন করা সম্ভব কিনা, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, ‘ডিসেম্বর আসতে আসতে এই পরিস্থিতি স্থিতিশীল হবে। সবার সহযোগিতা নিয়ে এমন একটি নির্বাচনী পরিবেশ করা হবে যেখানে ভোট ছাড়া মানুষের আর কোনো চিন্তা থাকবে না।’
স্থানীয় সরকার নির্বাচন
রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার যেসব সংস্কার কমিশন গঠন করেছে তার মধ্যে স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন তাদের সুপারিশে (পর্যবেক্ষণ) বলেছে, ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা পরিষদ এবং পৌরসভা ও সিটি করপোরেশন; স্থানীয় সরকারের এই পাঁচটি প্রতিষ্ঠানে চলতি বছর জুনের মধ্যে নির্বাচন করা যেতে পারে।
এর আগে সেবা পেতে জনগণের ভোগান্তি লাঘবের জন্য হলেও জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকারের নির্বাচন করার পক্ষে মত দিয়েছিলেন স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। তবে এটা একান্তই তার ‘ব্যক্তিগত’ মত জানিয়ে উপদেষ্টা বলেছিলেন, ‘সরকারই এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।’
জুনে স্থানীয় সরকারের নির্বাচন আয়োজনের বিষয়ে সংস্কার কমিশনের পর্যবেক্ষণ প্রসঙ্গে সিইসি বলেন, ‘সংস্কার কমিশন পরামর্শ দিয়েছে জুনে সম্ভব। সেটি সম্ভব হবে যদি ১৬ লক্ষ মৃত ভোটারকে বাদ দেয়া না হয় এবং নতুন ৩৫ লাখ ভোটারদের বাদ দিয়ে নির্বাচন অনুষ্ঠান করা হয়। ভোটার তালিকা হালনাগাদের কার্যক্রম শেষ হবে আগামী জুন মাসে। সুতরাং চূড়ান্ত ভোটার তালিকা না হলে আমরা নির্বাচনের জন্য তো প্রস্তুত হতে পারছি না।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের টার্গেট ডিসেম্বর এবং জাতীয় নির্বাচন। ডিসেম্বরে নির্বাচন করতে গেলে অক্টোবরে তফসিল ঘোষণা করতে হবে।’ এমন পরিস্থিতির মধ্যে স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের সুপারিশ একান্ত তাদের ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গি বলে মন্তব্য করেন সিইসি।
এএমএম নাসির উদ্দিন বলেন, ‘তারা (সংস্কার কমিশন) বিজ্ঞ এবং জ্ঞানী লোকজন, এ বিষয়ে আমার কোনো মন্তব্য নেই। রাজনৈতিক এ বিষয়ে একটি রাজনৈতিক বিতর্ক চলছে। নির্বাচন কমিশন তাতে জড়িত হতে চায় না। আগে ভোটার তালিকা হোক, এখনও ভোটার তালিকা করা সম্ভব হয়নি।’
ভোটা তালিকার চলমান হালনাগাদ কাজের তথ্য তুলে ধরে সিইসি বলেন, এরইমধ্যে বাড়ি বাড়ি গিয়ে হালনাগাদের সময় প্রায় ১৭ লাখ মৃত ভোটার তালিকায় পাওয়া গেছে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাদের নাম কাটা হয়েছে। ৩৫-৩৬ লাখ বাদ পড়া ভোটার রয়েছে। নতুন ভোটার রয়েছে প্রায় ২০ লাখ। (হালনাগাদ না হলে) সব মিলিয়ে ৫৪ লাখের মতো বাদ পড়ে যেত।’
*সমঝোতার আশা*
জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে শেষ পর্যন্ত সমঝোতা হবে এমন প্রত্যাশা ব্যক্ত করে সিইসি বলেন, ‘সবাই রাজনৈতিক সমঝোতার প্রত্যাশায় রয়েছে। ঐকমত্য কমিশন নির্বাচনের তারিখ নিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাবে এমন কোথাও দেখিনি। ছয়টি রিপোর্ট কমিশন দিয়েছে, বিভিন্ন দলের কাছে পাঠিয়েছে দেখলাম। একটা নির্বাচন যখন হয় রাজনৈতিক সমঝোতা হলে ভালো। সবাই প্রত্যাশা করে একটা রাজনৈতিক সমঝোতা।’
অন্য কারও এজেন্ডায় না চললে গ-গোল থাকার কথা নয় বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘প্রস্তুতি থেমে থাকবে না, প্রস্তুতি চলবে... আমাদের ব্যক্তিগত এজেন্ডাও নেই, অন্য কারও এজেন্ডা বাস্তবায়নের নিয়েও ওয়ার্ক করছি না। এজেন্ডা নিয়েছি ১৮ কোটি দেশের মানুষের স্বার্থের দিকে তাকিয়ে, গণতন্ত্রের দিকে তাকিয়ে, যাতে শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তর যাতে হতে পারে।’
*ত্রাণের আশায় রোহিঙ্গা তালিকায় নাম*
সম্প্রতি কক্সবাজারের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘উখিয়া-টেকনাফে অনেক বাংলাদেশি নাগরিক ত্রাণের আশায় রোহিঙ্গা হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছেন। রিলিফ কমে গেছে, এদিকে এনআইডি করতে পারে না। আমাদের এখানে ওদের সঙ্গে ক্রসম্যাচিং হচ্ছে তখন আটকে যাচ্ছে। তারা এখন আর বাংলাদেশি হতে পারছে না।’
কত ধরনের চ্যালেঞ্জ যে রয়েছে মাঠে না গেলে জানা যায় না, এমন মন্তব্য করে সিইসি বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের সঙ্গে বিয়ে হচ্ছে। অনেক সময় স্বামী রোহিঙ্গা, স্ত্রী বাংলাদেশি, আবার স্ত্রী বাংলাদেশি, স্বামী রোহিঙ্গা। এমন তথ্য আমরা পাচ্ছি। ছেলে-মেয়ের মধ্যে বিয়ে হয়ে যাচ্ছে...। এসব জটিলতায় আমরা আছি। আমরা চেষ্টা করছি সমাধানের। কীভাবে সমাধান, কমিশনে আলাপ করে করতে হবে। স্থানীয় অফিসাররা দিন-রাত পরিশ্রম করছেন।’
*সোশ্যাল মিডিয়া*
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একজনের পক্ষে-বিপক্ষে প্রচারণা নিয়ে সংবাদমাধ্যমের সহযোগিতা চেয়ে সিইসি বলেন, ‘ইসির কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই সোশ্যাল মিডিয়ায়। এখন থেকে বলা শুরু হয়েছে পক্ষে-বিপক্ষে।’
তিনি বলেন, ‘আচরণবিধি যেটা করব, আমরা অ্যালাউ করার আগে শুরু হয়ে গেছে। শুধু পক্ষে নয়, প্রতিপক্ষের চরিত্র হননও শুরু হয়ে যাচ্ছে। এটা যাতে প্রার্থীর পক্ষে-বিপক্ষে না করে সেজন্য মিডিয়ার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব রয়েছে।’
সরকার কিছু করতে গেলে মুশকিল, এমন মন্তব্য করেন এএমএম নাসির উদ্দিন বলেন, ‘সোশ্যাল মিডিয়ায় গুজব ছড়িয়ে গেলে মুশকিল। রিউমার মকারিং কীভাবে অ্যাড্রেস করব, এটা মাথাব্যথা শুরু হয়েছে। এটা বিরাট চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে, কীভাবে আচরণবিধি দিয়ে কন্ট্রোল করব।’
*সীমানা নির্ধারণ*
ভোটার তালিকা প্রস্তুতের পাশাপাশি সীমানা পুনর্নির্ধারণ নিয়ে প্রস্তুতিও শুরু করতে চায় কমিশন, জানিয়ে এএমএম নাসির উদ্দিন বলেন, ‘আইনি জটিলতায় কাজ শুরু করতে পারছি না। ইতোমধ্যে আমরা সরকারের কাছে আইন মন্ত্রণালয়ে সংশোধন প্রস্তাব পাঠিয়েছি। আরও কিছু প্রস্তাব যাবে। সংস্কার কমিশন না হলেও এসব কাজ করতে হতো। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য মিনিমাম যে সংস্কার দরকার সেটুকু করার উদ্যোগ আমরা নিচ্ছি।’
সিইসি বলেন, ‘পার্টি রেজিস্ট্রেশন, ডিলিমিটেশন হোক, যেখানে যেখানে কিছুটা সংশোধন দরকার সরকারের কাছে দেব। তা হয়ে গেলে বিধি সংশোধন করে ফেলব। আমাদের চেষ্টার ত্রুটি নেই। সর্বশক্তি দিয়ে প্রস্তুতি এগিয়ে নেব।’