alt

জাতীয়

দানা ‘আসছে না’ ঝরছে বৃষ্টি, জলোচ্ছ্বাসের আভাস উপকূলে

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : শুক্রবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৪

‘বৃষ্টি আসলে আর কী করার আছে? আমাদের ঝড়ই কী আর বৃষ্টিই বা কী। কাজ করেই খেতে হবে। কাজ না করলে পেটে ভাত জুটবে না। তাই বৃষ্টিতে ভিজেই রিকসা চালালাম। এখন বাড়ি যাচ্ছি’ বলেন যশোরের রিকশা চালক আলেক মিয়া।

ওই শহরের কোর্ট মোড়ে এক মার্কেটে আশ্রয় নেয়া এক অভিভাবক বলেন, ‘আমার মেয়ে যশোর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়ে। স্কুল ছুটির সময় হওয়ায় মেয়েকে আনতে যাচ্ছিলাম। এমন সময়ে বৃষ্টিতে আটকে গেলাম।’

বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) সকাল ১০টার দিকে পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার লতাচাপলী ইউনিয়নের তাহেরপুর গ্রামের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া টর্নেডোতে অন্তত সাত-আটটি বসতঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া এ উপজেলায় টর্নেডোর আঘাতে শতাধিক গাছপালা উপড়ে পড়েছে। এদিকে মির্জাগঞ্জে টর্নেডোতে সাতটি বাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। এ সময় ঘরচাপায় তিনজন আহত হয়েছেন।

শুধু যশোর ও উপকূলীয় জেলাগুলোতে নয় রাজধানীসহ সারাদেশে দানা’র প্রভাবে মানুষ আতঙ্কিত ও বৃষ্টির জন্য স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যহত হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে উপকূলীয় অঞ্চলে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। স্বাভাবিকের চেয়ে জোয়ারের পানি বেড়ে যাওয়ায় ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় রয়েছেন উপকূলের মানুষ।

এমন অবস্থায় প্রবল ঘূর্ণিঝড় দানা নিয়ে সুখবর দিয়েছে বাংলাদেশের আবহাওয়া অফিস। ঘূর্ণিঝড়টি বাংলাদেশের সমতলে প্রবেশ করার কোনো ‘শঙ্কা’ নেই বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ। বৃহস্পতিবার তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘সাগর উত্তাল থাকলেও ঘূর্ণিঝড় দানা সরাসরি বাংলাদেশে আঘাত হানার সম্ভাবনা নেই। ইতোমধ্যে খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম এর মাঝামাঝি এলাকাগুলোয় দমকা ঝড়ো হাওয়া বইছে। এর ফলে কোনো কোনো এলাকায় ভারী বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভবনা থাকলেও অতিভারী বর্ষণ হওয়ার সম্ভবনা নেই।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৩০-৪০ কিলোমিটার হতে পারে, যা সর্বোচ্চ ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। বাংলাদেশে দানা’র প্রভাব তেমন একটা পড়বে না। দেশের দক্ষিণ অঞ্চলের নদী বন্দরগুলোকে ২ নম্বর নৌ হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। এর বেশি সংকেত আর বাড়ানোর সম্ভবনা নেই।’

জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’ কারণে দেশের সব সমুদ্র বন্দরকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্কসংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার ভারতের আবহাওয়া বিভাগের মহাপরিচালক মৃত্যুঞ্জয় মহাপাত্র দিল্লি থেকে বার্তাসংস্থা এএনআইকে মৃত্যুঞ্জয় বলেন, ‘গত বুধবার মধ্যরাতে ঘূর্ণিঝড় দানা প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেয় এবং উত্তর-উত্তরপশ্চিমাঞ্চলের দিকে সরে আসে। দুপুরে ঘূর্ণিঝড়টি উপকূল থেকে ২০০ কিলোমিটার দক্ষিণপূর্ব দিকে অবস্থান করছিল।’ তিনি আরও বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়ের সবচেয়ে খারাপ প্রভাবটি পড়বে ওড়িশায়। এরপর যাবে পশ্চিমবঙ্গের উপকূলীয় বিভাগগুলোতে। কিন্তু উপকূলে আঘাত হানার পর এটি পশ্চিম-উত্তরপশ্চিমাঞ্চলের দিকে সরে যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এতে করে দক্ষিণ ঝাড়খ-ে বৃষ্টির পরিমাণ বাড়তে পারে। আমরা সেখানে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দিচ্ছি।’

ভারতের আলিপুর আবহাওয়া অফিসের বরাত দিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যম আনন্দবাজার বলেছে, শক্তি বাড়িয়ে ক্রমশ উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’। বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার (২৫ অক্টোবর) সকালের মধ্যে এটি উপকূলে আছড়ে পড়তে পারে। এ সময় ঢেউয়ের উচ্চতা হতে পারে সর্বোচ্চ ১৪ ফুটেরও বেশি।

#দানার প্রভাবে ১৪ জেলায় জলোচ্ছ্বাস#
বৃহস্পতিবার দুপুরে দেয়া আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’র প্রভাবে দেশের উপকূলীয় ১৪ জেলায় জলোচ্ছ্বাস হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। ঘূর্ণিঝড়টি মধ্যরাতে ভারতের ওডিশা রাজ্যের উপকূলে আঘাত হানতে পারে। এর প্রভাবেই বাংলাদেশের উপকূলীয় জেলাগুলোতে বৃষ্টি ও ঝোড়ো হাওয়ার পাশাপাশি জলোচ্ছ্বাসের ‘আশঙ্কা’ আছে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদেরা।

বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, প্রবল ঘূর্ণিঝড়টির সামনের অংশের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, বরগুনা, বরিশাল, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, পটুয়াখালী, ভোলা, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এবং এসব এলাকার কাছের দ্বীপ ও চরগুলোর নিম্নঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ২ থেকে ৩ ফুট বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পশ্চিম মধ্য বঙ্গোপসাগর ও এর কাছাকাছি উত্তর পশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় থাকা প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’ আরও উত্তর-উত্তর পশ্চিম দিকে এগিয়ে গেছে। যা বৃহস্পতিবার বেলা ১২টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৫৭০ কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৫৩৫ কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ৪৩৫ কিলোমিটার দক্ষিণ- দক্ষিণপশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৪৩৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থান করছিল।

#ঢাকাসহ পাঁচ বিভাগে ভারী বৃষ্টির আভাস#
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট প্রবল ঘূর্ণিঝড় দানার প্রভাবে উপকূলীয় অঞ্চলে বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। বৃহস্পতিবার আবহাওয়া অধিদপ্তরের এক বার্তায় জানানো হয়েছে, রাজধানী ঢাকাসহ পাঁচ বিভাগে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে। বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।

অধিদপ্তর জানায়, প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’র প্রভাবে রাজশাহী, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের কোথাও কোথাও ২৪ অক্টোবর বিকেল ৩টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে।

দানার প্রভাবে উপকূলীয় অঞ্চলে স্বাভাবিকের চেয়ে জোয়ারের পানি বেড়েছে। এছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন উপকূলের মানুষ।

#টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌযান চলাচল বন্ধ
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশীদ বলেন, এখন পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড়ের যে গতিপ্রকৃতি তাতে এটি ভারতের ওডিশা ও পশ্চিমবঙ্গ উপকূল অতিক্রম করতে পারে মধ্যরাতে। তবে এর প্রভাবে ইতোমধ্যে দেশের উপকূলের বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে। আগামীকালও রাজধানীসহ বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টি থাকতে পারে। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার জন্য উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।

#যশোরে সবজি ক্ষেতে পানি, হেলে পড়েছে আমনের ক্ষেত#
‘দানা’র প্রভাবে যশোরে দু’দিন ধরে গুড়িগুড়ি বৃষ্টিপাত হচ্ছে। গুড়িগুড়ি বৃষ্টিপাত আর মাঝে মধ্যে দমকা হাওয়ায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আমন ধান ও সবজি খেত। অসময়ের এই বৃষ্টিপাতে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন শ্রমজীবী মানুষ।

যশোর বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান বিমান ঘাঁটির আবহাওয়া দপ্তরের তথ্যমতে, গত বুধবার সকাল ৬টা থেকে বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত যশোরে ২৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। এর মধ্যে গত বুধবার ১২ মিলিমিটার এবং বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত ১৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এদিকে, দুদিন ধরে মেঘাচ্ছন্ন আকাশ ও বৃষ্টির কারণে বাইরে বের হওয়া সাধারণ মানুষ পড়েন বিপাকে। তারা বিভিন্ন স্থানে আটকে যান। ফলে দৈনন্দিন কাজে ব্যাঘাত ঘটে। কেউবা ছাতা নিয়ে বা রিকসায় চড়ে জরুরি কাজে বাড়ির বাইরে হতেও দেখা গেছে।

শহরের মুজিব সড়কস্থ এলাকায় দেখা যায়, বৃষ্টি তে আটকা পড়ে অনেকেই বিভিন্ন দোকানের বারান্দায় আশ্রয় নিয়েছেন। স্কুল কলেজের অনেক শিক্ষার্থীকে বৃষ্টিতে ভিজে বাড়ি ফিরতে দেখা গেছে। রিকশাচালকরা পলিথিন জড়িয়ে রিকশা চালাচ্ছেন। বৃষ্টি ও বাতাসে ক্ষতির মুখে পড়েছেন যশোরের কৃষকরা।

চলতি মৌসুমে সবজি চাষ নিয়ে চাষিদের চিন্তার শেষ নেই। আবাদ করতে গিয়ে শুধু খরচ আর খরচ। বারবার চারা রোপন করতে গিয়ে একদিকে যেমন খরচ বাড়ছে কয়েকগুণ। অন্যদিকে শীতের সবজির চারা রোপনের মৌসুম শেষের দিকে। এবার যোগ হয়েছে ঘূর্ণিঝড় দানার। এর প্রভাবে ঝড়ো বাতাস ও বৃষ্টির কারণে সবজির জোন যশোরে মাঠের সবজি ক্ষেত ক্ষতি সম্মুখীন হচ্ছে। এর পাশাপাশি মাঠের পর মাঠ আমনের ক্ষেত হেলে পড়েছে। চাষিরা জানিয়েছেন, যেসব ধানের শিষ বের হয়নি ও দানা নরম সেই ধানের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হবে।

যশোর সদর উপজেলার চুড়ামনকাঠি ইউনিয়নের আব্দুলপুরের কৃষক শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এবার সবজি চাষিদের দুর্ভোগের শেষ নেই। গত তিন মাস ধরে চাষিরা সবজি চাষ নিয়ে বিপাকের মধ্যেই রয়েছে। শীতকালীন সবজির চারা রোপন করলেই কিছুদিন পরপর হওয়া বৃষ্টিতে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এতে সবজি উৎপাদন ব্যহত হচ্ছে।

ঝিকরগাছা উপজেলার নিচিন্তপুর গ্রামের কৃষক সুমন কবির বলেন, ‘গত কয়েক মাস ধরে যে অতিবৃষ্টি হলো এতে অনেক নিচু অঞ্চলের জমিতে ধানের চারা ডুবে যেয়ে পঁচে গেছে। উচু জমিতে ধান ভালো হলেও ঘূর্ণিঝড় দানার কারণে ঝড়ে ধান গাছগুলো হেলে পড়েছে। আমার দেড় বিঘার ধান হেলে পড়েছে। ধানের শিষে যে দানা রয়েছে, তা এখনও শক্ত হয়নি। অনেক ধান চিটা হয়ে যাবে। আর যে ফলন হওয়ার কথা ছিল তাও কমে যাবে। বিঘাপ্রতি ১৮-২০ মণ ফলন হয়। কিন্তু হেলে পড়ায় ৫ মণ কমে যাবে।’

যশোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক ড. সুশান্ত কুমার তরফদার বলেন, ‘এবার অতিবৃষ্টিতে কৃষকের ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন আগাম শীতকালীন সবজি চাষিরা। বারবার ক্ষতির শিকার হওয়ায় আগাম শীতকালীন সবজি বাজারে আসতে বিলম্ব হচ্ছে। বাজারে সবজি সরবরাহ কমে যাওয়ায় দামে এর প্রভাব পড়ছে। আর শুনেছি ঝড়ে কিছু জায়গায় ধান গাছ হেলে পড়েছে। ঝড়ের প্রভাবে সৃষ্ট দমকা হাওয়ায় পড়ে যাওয়া যেসব ধানের দানা শক্ত হয়ে গেছে, সে ধানের ক্ষতি হবে না। তবে যে সব ধানের শিষ বের হচ্ছে এবং দানা এখনও শক্ত হয়নি সেই ধানের একটু ক্ষতি হয়ে যাবে।’

#যেভাবে নাম হলো ‘দানা’#
সাইক্লোন সংক্রান্ত আঞ্চলিক সংস্থা এসকাপের তালিকা অনুযায়ী এ অঞ্চলের ঘূর্ণিঝড়ের নাম দেয়া হয়েছে ‘দানা’। কাতারের দেয়া এই নামের অর্থ, অতি সুন্দর ও মূল্যবান মুক্তা। আন্তর্জাতিক আবহাওয়া সংস্থা ওয়ার্ল্ড মেটিওরোলজিক্যাল অর্গানাইজেশন (ডব্লিউএমও) আরএসএমসির সঙ্গে সমন্বয় করে ২০০৪ সাল থেকে ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ করছে।

ইংরেজি বর্ণমালা কিউ, এক্স, ওয়াই ও জেড-এই ৫টি অক্ষর বাদ দিয়ে ইংরেজি বর্ণমালার ২১টি অক্ষর ব্যবহার করে ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ করা হয়। এগুলো সাধারণত এক বছরের জন্য পর্যায়ক্রমিকভাবে করা হয়। তবে কোনো বছর ২১টির বেশি ঘূর্ণিঝড় দেখা দিলে নামগুলোর সঙ্গে গ্রিক বর্ণমালা যুক্ত করা হয়।

সন্ত্রাসবিরোধী আইনে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ, যে কারণ বলা হলো প্রজ্ঞাপনে

সরকারি নিয়োগে বয়স বাড়লো ২ বছর তিনবারের বেশি বিসিএস নয়

ছবি

রাষ্ট্রপতির থাকা না থাকা : রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত

ছবি

ছাত্র-গণ আন্দোলনে জড়িতদের গ্রেপ্তার এবং দ্রুত বিচারের আশ্বাস সরকারের

ছবি

সরকারি চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫ না করার সিদ্ধান্তে আন্দোলন

ছবি

সাংবিধানিক পথে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন: আসিফ নজরুলের ব্যাখ্যা

ছবি

ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ: সন্ত্রাসী কার্যক্রমে জড়িত থাকার অভিযোগে সরকারের কঠোর পদক্ষেপ

ছবি

এসবি’র নতুন প্রধান খোন্দকার রফিকুল, পুলিশে ব্যাপক রদবদল

ছবি

গণমাধ্যমকে হুমকি ও ঘেরাওয়ের ঘোষণায় সরকারের কঠোর অবস্থান

ছবি

রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে: রিজওয়ানা

গণ–অভ্যুত্থান ঘিরে সহিংসতায় ৯৮৬ জনের মৃত্যু

১ টাকা ৩০ পয়সায় ঢাকায় আসবে কৃষিপণ্য, রাজশাহী থেকে কৃষিপণ্য স্পেশাল ট্রেন আগামী শনিবার থেকে চালু

ছবি

একজন চাকরিপ্রত্যাশী সর্বোচ্চ তিন বার বসতে পারবে বিসিএস পরীক্ষায়, উপদেষ্টা পরিষদে সিদ্ধান্ত

ছবি

খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ৪২ জনকে পুড়িয়ে মারার মামলা খারিজ

ছবি

ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’: ১৪ জেলায় জলোচ্ছ্বাসের সম্ভাবনা

ছবি

সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২ বছর অনুমোদন

ছবি

ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’ : ঢাকা থেকে ৫ রুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ

ছবি

শেখ হাসিনার পরিবারসহ অন্যদের বরাদ্দ প্লট বাতিলে হাইকোর্টের রুল

ছবি

সাবেক সিনিয়র সচিব মোস্তাফা কামাল গ্রেপ্তার

ছবি

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফেরাতে তিন আবেদনের শুনানি ১৭ নভেম্বর

ছবি

প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেওয়া দানা’র প্রভাবে উপকূলে অতি ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস

ছবি

গণ–অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের রাজনীতি করার অধিকার নেই: নাহিদ ইসলাম

৮ বছরের সাজা থেকে খালাস পেলেন বাবর

ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি

ছবি

বঙ্গভবন এলাকা থমথমে, কড়া নিরাপত্তা

রাষ্ট্রপতির ভবিষ্যৎ, সিদ্ধান্ত সাংবিধানিক না রাজনৈতিক

ছবি

বাংলাদেশের জলবায়ু সহনশীলতা বৃদ্ধিতে ১৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অনুদান দিচ্ছে ইউএসএআইডি

ছবি

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বিচারিক প্রক্রিয়া নিয়ে আইন সংশোধনের আহ্বান হিউম্যান রাইটস ওয়াচের

ছবি

ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আনন্দ মিছিল

ছবি

ছাত্রলীগ ‘নিষিদ্ধ ’, প্রজ্ঞাপন জারি করল সরকার

ছবি

ডেঙ্গু: অক্টোবরের ২৩ দিনেই মৃত্যু শতাধিক

ছবি

সাবেক নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ আটক

ছবি

বিটিআরসির নতুন কমিশনার ইকবাল আহমেদ

ছবি

ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’ আসছে, দেশের চার বন্দরে ৩ নম্বর সংকেত

ছবি

এইচএসসির ফল বাতিলের দাবিতে সচিবালয়ে ঢুকে বিক্ষোভ: নিরাপত্তা বাহিনীর লাঠিপেটা, গ্রেপ্তার ৫৪

ছবি

রাষ্ট্রপতি ইস্যুতে আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত আসবে: উপদেষ্টা নাহিদ

tab

জাতীয়

দানা ‘আসছে না’ ঝরছে বৃষ্টি, জলোচ্ছ্বাসের আভাস উপকূলে

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

শুক্রবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৪

‘বৃষ্টি আসলে আর কী করার আছে? আমাদের ঝড়ই কী আর বৃষ্টিই বা কী। কাজ করেই খেতে হবে। কাজ না করলে পেটে ভাত জুটবে না। তাই বৃষ্টিতে ভিজেই রিকসা চালালাম। এখন বাড়ি যাচ্ছি’ বলেন যশোরের রিকশা চালক আলেক মিয়া।

ওই শহরের কোর্ট মোড়ে এক মার্কেটে আশ্রয় নেয়া এক অভিভাবক বলেন, ‘আমার মেয়ে যশোর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়ে। স্কুল ছুটির সময় হওয়ায় মেয়েকে আনতে যাচ্ছিলাম। এমন সময়ে বৃষ্টিতে আটকে গেলাম।’

বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) সকাল ১০টার দিকে পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার লতাচাপলী ইউনিয়নের তাহেরপুর গ্রামের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া টর্নেডোতে অন্তত সাত-আটটি বসতঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া এ উপজেলায় টর্নেডোর আঘাতে শতাধিক গাছপালা উপড়ে পড়েছে। এদিকে মির্জাগঞ্জে টর্নেডোতে সাতটি বাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। এ সময় ঘরচাপায় তিনজন আহত হয়েছেন।

শুধু যশোর ও উপকূলীয় জেলাগুলোতে নয় রাজধানীসহ সারাদেশে দানা’র প্রভাবে মানুষ আতঙ্কিত ও বৃষ্টির জন্য স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যহত হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে উপকূলীয় অঞ্চলে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। স্বাভাবিকের চেয়ে জোয়ারের পানি বেড়ে যাওয়ায় ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় রয়েছেন উপকূলের মানুষ।

এমন অবস্থায় প্রবল ঘূর্ণিঝড় দানা নিয়ে সুখবর দিয়েছে বাংলাদেশের আবহাওয়া অফিস। ঘূর্ণিঝড়টি বাংলাদেশের সমতলে প্রবেশ করার কোনো ‘শঙ্কা’ নেই বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ। বৃহস্পতিবার তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘সাগর উত্তাল থাকলেও ঘূর্ণিঝড় দানা সরাসরি বাংলাদেশে আঘাত হানার সম্ভাবনা নেই। ইতোমধ্যে খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম এর মাঝামাঝি এলাকাগুলোয় দমকা ঝড়ো হাওয়া বইছে। এর ফলে কোনো কোনো এলাকায় ভারী বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভবনা থাকলেও অতিভারী বর্ষণ হওয়ার সম্ভবনা নেই।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৩০-৪০ কিলোমিটার হতে পারে, যা সর্বোচ্চ ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। বাংলাদেশে দানা’র প্রভাব তেমন একটা পড়বে না। দেশের দক্ষিণ অঞ্চলের নদী বন্দরগুলোকে ২ নম্বর নৌ হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। এর বেশি সংকেত আর বাড়ানোর সম্ভবনা নেই।’

জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’ কারণে দেশের সব সমুদ্র বন্দরকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্কসংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার ভারতের আবহাওয়া বিভাগের মহাপরিচালক মৃত্যুঞ্জয় মহাপাত্র দিল্লি থেকে বার্তাসংস্থা এএনআইকে মৃত্যুঞ্জয় বলেন, ‘গত বুধবার মধ্যরাতে ঘূর্ণিঝড় দানা প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেয় এবং উত্তর-উত্তরপশ্চিমাঞ্চলের দিকে সরে আসে। দুপুরে ঘূর্ণিঝড়টি উপকূল থেকে ২০০ কিলোমিটার দক্ষিণপূর্ব দিকে অবস্থান করছিল।’ তিনি আরও বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়ের সবচেয়ে খারাপ প্রভাবটি পড়বে ওড়িশায়। এরপর যাবে পশ্চিমবঙ্গের উপকূলীয় বিভাগগুলোতে। কিন্তু উপকূলে আঘাত হানার পর এটি পশ্চিম-উত্তরপশ্চিমাঞ্চলের দিকে সরে যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এতে করে দক্ষিণ ঝাড়খ-ে বৃষ্টির পরিমাণ বাড়তে পারে। আমরা সেখানে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দিচ্ছি।’

ভারতের আলিপুর আবহাওয়া অফিসের বরাত দিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যম আনন্দবাজার বলেছে, শক্তি বাড়িয়ে ক্রমশ উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’। বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার (২৫ অক্টোবর) সকালের মধ্যে এটি উপকূলে আছড়ে পড়তে পারে। এ সময় ঢেউয়ের উচ্চতা হতে পারে সর্বোচ্চ ১৪ ফুটেরও বেশি।

#দানার প্রভাবে ১৪ জেলায় জলোচ্ছ্বাস#
বৃহস্পতিবার দুপুরে দেয়া আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’র প্রভাবে দেশের উপকূলীয় ১৪ জেলায় জলোচ্ছ্বাস হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। ঘূর্ণিঝড়টি মধ্যরাতে ভারতের ওডিশা রাজ্যের উপকূলে আঘাত হানতে পারে। এর প্রভাবেই বাংলাদেশের উপকূলীয় জেলাগুলোতে বৃষ্টি ও ঝোড়ো হাওয়ার পাশাপাশি জলোচ্ছ্বাসের ‘আশঙ্কা’ আছে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদেরা।

বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, প্রবল ঘূর্ণিঝড়টির সামনের অংশের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, বরগুনা, বরিশাল, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, পটুয়াখালী, ভোলা, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এবং এসব এলাকার কাছের দ্বীপ ও চরগুলোর নিম্নঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ২ থেকে ৩ ফুট বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পশ্চিম মধ্য বঙ্গোপসাগর ও এর কাছাকাছি উত্তর পশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় থাকা প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’ আরও উত্তর-উত্তর পশ্চিম দিকে এগিয়ে গেছে। যা বৃহস্পতিবার বেলা ১২টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৫৭০ কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৫৩৫ কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ৪৩৫ কিলোমিটার দক্ষিণ- দক্ষিণপশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৪৩৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থান করছিল।

#ঢাকাসহ পাঁচ বিভাগে ভারী বৃষ্টির আভাস#
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট প্রবল ঘূর্ণিঝড় দানার প্রভাবে উপকূলীয় অঞ্চলে বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। বৃহস্পতিবার আবহাওয়া অধিদপ্তরের এক বার্তায় জানানো হয়েছে, রাজধানী ঢাকাসহ পাঁচ বিভাগে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে। বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।

অধিদপ্তর জানায়, প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’র প্রভাবে রাজশাহী, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের কোথাও কোথাও ২৪ অক্টোবর বিকেল ৩টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে।

দানার প্রভাবে উপকূলীয় অঞ্চলে স্বাভাবিকের চেয়ে জোয়ারের পানি বেড়েছে। এছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন উপকূলের মানুষ।

#টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌযান চলাচল বন্ধ
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশীদ বলেন, এখন পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড়ের যে গতিপ্রকৃতি তাতে এটি ভারতের ওডিশা ও পশ্চিমবঙ্গ উপকূল অতিক্রম করতে পারে মধ্যরাতে। তবে এর প্রভাবে ইতোমধ্যে দেশের উপকূলের বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে। আগামীকালও রাজধানীসহ বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টি থাকতে পারে। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার জন্য উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।

#যশোরে সবজি ক্ষেতে পানি, হেলে পড়েছে আমনের ক্ষেত#
‘দানা’র প্রভাবে যশোরে দু’দিন ধরে গুড়িগুড়ি বৃষ্টিপাত হচ্ছে। গুড়িগুড়ি বৃষ্টিপাত আর মাঝে মধ্যে দমকা হাওয়ায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আমন ধান ও সবজি খেত। অসময়ের এই বৃষ্টিপাতে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন শ্রমজীবী মানুষ।

যশোর বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান বিমান ঘাঁটির আবহাওয়া দপ্তরের তথ্যমতে, গত বুধবার সকাল ৬টা থেকে বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত যশোরে ২৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। এর মধ্যে গত বুধবার ১২ মিলিমিটার এবং বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত ১৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এদিকে, দুদিন ধরে মেঘাচ্ছন্ন আকাশ ও বৃষ্টির কারণে বাইরে বের হওয়া সাধারণ মানুষ পড়েন বিপাকে। তারা বিভিন্ন স্থানে আটকে যান। ফলে দৈনন্দিন কাজে ব্যাঘাত ঘটে। কেউবা ছাতা নিয়ে বা রিকসায় চড়ে জরুরি কাজে বাড়ির বাইরে হতেও দেখা গেছে।

শহরের মুজিব সড়কস্থ এলাকায় দেখা যায়, বৃষ্টি তে আটকা পড়ে অনেকেই বিভিন্ন দোকানের বারান্দায় আশ্রয় নিয়েছেন। স্কুল কলেজের অনেক শিক্ষার্থীকে বৃষ্টিতে ভিজে বাড়ি ফিরতে দেখা গেছে। রিকশাচালকরা পলিথিন জড়িয়ে রিকশা চালাচ্ছেন। বৃষ্টি ও বাতাসে ক্ষতির মুখে পড়েছেন যশোরের কৃষকরা।

চলতি মৌসুমে সবজি চাষ নিয়ে চাষিদের চিন্তার শেষ নেই। আবাদ করতে গিয়ে শুধু খরচ আর খরচ। বারবার চারা রোপন করতে গিয়ে একদিকে যেমন খরচ বাড়ছে কয়েকগুণ। অন্যদিকে শীতের সবজির চারা রোপনের মৌসুম শেষের দিকে। এবার যোগ হয়েছে ঘূর্ণিঝড় দানার। এর প্রভাবে ঝড়ো বাতাস ও বৃষ্টির কারণে সবজির জোন যশোরে মাঠের সবজি ক্ষেত ক্ষতি সম্মুখীন হচ্ছে। এর পাশাপাশি মাঠের পর মাঠ আমনের ক্ষেত হেলে পড়েছে। চাষিরা জানিয়েছেন, যেসব ধানের শিষ বের হয়নি ও দানা নরম সেই ধানের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হবে।

যশোর সদর উপজেলার চুড়ামনকাঠি ইউনিয়নের আব্দুলপুরের কৃষক শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এবার সবজি চাষিদের দুর্ভোগের শেষ নেই। গত তিন মাস ধরে চাষিরা সবজি চাষ নিয়ে বিপাকের মধ্যেই রয়েছে। শীতকালীন সবজির চারা রোপন করলেই কিছুদিন পরপর হওয়া বৃষ্টিতে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এতে সবজি উৎপাদন ব্যহত হচ্ছে।

ঝিকরগাছা উপজেলার নিচিন্তপুর গ্রামের কৃষক সুমন কবির বলেন, ‘গত কয়েক মাস ধরে যে অতিবৃষ্টি হলো এতে অনেক নিচু অঞ্চলের জমিতে ধানের চারা ডুবে যেয়ে পঁচে গেছে। উচু জমিতে ধান ভালো হলেও ঘূর্ণিঝড় দানার কারণে ঝড়ে ধান গাছগুলো হেলে পড়েছে। আমার দেড় বিঘার ধান হেলে পড়েছে। ধানের শিষে যে দানা রয়েছে, তা এখনও শক্ত হয়নি। অনেক ধান চিটা হয়ে যাবে। আর যে ফলন হওয়ার কথা ছিল তাও কমে যাবে। বিঘাপ্রতি ১৮-২০ মণ ফলন হয়। কিন্তু হেলে পড়ায় ৫ মণ কমে যাবে।’

যশোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক ড. সুশান্ত কুমার তরফদার বলেন, ‘এবার অতিবৃষ্টিতে কৃষকের ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন আগাম শীতকালীন সবজি চাষিরা। বারবার ক্ষতির শিকার হওয়ায় আগাম শীতকালীন সবজি বাজারে আসতে বিলম্ব হচ্ছে। বাজারে সবজি সরবরাহ কমে যাওয়ায় দামে এর প্রভাব পড়ছে। আর শুনেছি ঝড়ে কিছু জায়গায় ধান গাছ হেলে পড়েছে। ঝড়ের প্রভাবে সৃষ্ট দমকা হাওয়ায় পড়ে যাওয়া যেসব ধানের দানা শক্ত হয়ে গেছে, সে ধানের ক্ষতি হবে না। তবে যে সব ধানের শিষ বের হচ্ছে এবং দানা এখনও শক্ত হয়নি সেই ধানের একটু ক্ষতি হয়ে যাবে।’

#যেভাবে নাম হলো ‘দানা’#
সাইক্লোন সংক্রান্ত আঞ্চলিক সংস্থা এসকাপের তালিকা অনুযায়ী এ অঞ্চলের ঘূর্ণিঝড়ের নাম দেয়া হয়েছে ‘দানা’। কাতারের দেয়া এই নামের অর্থ, অতি সুন্দর ও মূল্যবান মুক্তা। আন্তর্জাতিক আবহাওয়া সংস্থা ওয়ার্ল্ড মেটিওরোলজিক্যাল অর্গানাইজেশন (ডব্লিউএমও) আরএসএমসির সঙ্গে সমন্বয় করে ২০০৪ সাল থেকে ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ করছে।

ইংরেজি বর্ণমালা কিউ, এক্স, ওয়াই ও জেড-এই ৫টি অক্ষর বাদ দিয়ে ইংরেজি বর্ণমালার ২১টি অক্ষর ব্যবহার করে ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ করা হয়। এগুলো সাধারণত এক বছরের জন্য পর্যায়ক্রমিকভাবে করা হয়। তবে কোনো বছর ২১টির বেশি ঘূর্ণিঝড় দেখা দিলে নামগুলোর সঙ্গে গ্রিক বর্ণমালা যুক্ত করা হয়।

back to top