alt

জাতীয়

নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ছাড়লেন উমামা

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫

জুলাই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেয়া সংগঠন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন সংগঠনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা। গতকাল শুক্রবার রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেইসবুক পেইজে দেয়া এক পোস্টে সংগঠন থেকে সরে দাঁড়ানোর বিষয়টি জানান তিনি।

অনেকের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ হুমকির মুখে পড়তে পারে শঙ্কায় চাপ সৃষ্টি করা হয়েছে

কথিত সহযোদ্ধারা মানুষকে টিস্যু পেপারের মতো ব্যবহার করেছে

যাদের সঙ্গে কাজ করতে চাচ্ছিলাম, তারা একদিকে আমার কথার সঙ্গে তাল মিলিয়েছে, রাতের বেলায় ‘হেয়ার রোডে’ গিয়ে

পদ-পদবি নিয়ে দর কষাকষি করছে

নোংরামি যারা করেছে, অভ্যুত্থানকে বাজারদরে কেনাবেচা করেছে, তাদের কখনও ক্ষমা করব না

গত বছর জুলাইয়ে শুরু হওয়া শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা অন্যতম এই সমন্বয়ক তার দীর্ঘ পোস্টে সংগঠনের কমিটি দেয়া নিয়ে নানা ‘অনিয়ম’, জেলা-উপজেলা পর্যায়ে ‘অনিয়ম’, সবশেষ দলের কাউন্সিলেও ‘অনিয়মের’ অভিযোগ তোলেন।

পোস্টে উমামা ফাতেমা লিখেছেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একটি কেন্দ্রীয় কাউন্সিল হয়েছে গত পরশু (বুধবার)। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এর সঙ্গে আমার আনুষ্ঠানিক যাত্রা এখানেই শেষ হলো।’

এই প্ল্যাটফর্মে কাজ না করার জন্য তার ওপর ‘চাপ সৃষ্টি করার’ অভিযোগ এনে তিনি বলেন, ‘এনসিপি (জাতীয় নাগরিক পার্টি) নামক রাজনৈতিক দলটি গঠনের পর আমি জুলাইয়ের অসমাপ্ত কাজগুলো করার দায়বদ্ধতা থেকে এই ব্যানার নিয়ে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিই। কিন্তু দলীয় লেজুড় ও প্রেসক্রিপশনের বাইরে এই ব্যানারটি স্বাধীনভাবে কাজ করলে অনেকের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ হুমকির মুখে পড়ত। তাই আমার ওপর অনলাইন, অফলাইনে ভয়াবহ চাপ সৃষ্টি করা হয়, যাতে আমি এই ব্যানার নিয়ে কাজ না করি।’

এরপরও কাজ চালিয়ে যেতে নিজের ইচ্ছের কথা তুলে ধরে উমামা ফাতেমা বলেন, ‘আমি পুরো বিষয়টাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েই একটা সুনাম থেকে ব্যানারকে সচল করার চেষ্টা করেছিলাম। পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে আমার আলাদা করে বলার কিছু নেই। যে মানুষগুলোর সঙ্গে আমি পাশে দাঁড়ায়ে মিটিং করছি, মিছিল করছি তারাই পরিকল্পতিভাবে জুনিয়রদের দিয়ে আমার বিরুদ্ধে ঘৃণামূলক প্রচারণা চালায়। মানুষ বাইরে যত ভালো সাজার চেষ্টা করুক ভিতর থেকে কতটা ছোটলোক হতে পারে আমি হাড়ে হাড়ে টের পাই ওই সময়গুলাতে।’

নিজের সহযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে উমামা লিখেছেন, ‘এই কথিত সহযোদ্ধারা মানুষকে টিস্যু পেপারের মতো ব্যবহার করে, প্রয়োজন শেষ হলে ছুড়ে ফেলতে এক মুহূর্তও লাগে না। আমি মার্চ-এপ্রিল মাসে এই প্ল্যাটফর্ম নিয়ে কাজ করতে গিয়ে দেখেছি পোকার মতো ভিতর থেকে প্ল্যাটফর্মকে সুবিধাবাদীরা খেয়ে ফেলেছে।’

সুবিধাবাদীদের ভিড়ে ভালোরা চাপে পড়ে গেছে মন্তব্য করে তিনি লিখেছেন, ‘হ্যাঁ, আমি বলব বিভিন্ন শাখা কমিটিতে অনেক সুনামের মানুষ ছিল, যারা পরিবর্তনের স্বপ্ন নিয়ে কমিটিতে আসছিল। চেষ্টা করছে কাজ করার। কিন্তু তারাও এই সুবিধাবাদীদের কাছে জায়গা করতে পারেনি।’ উমামা লিখেছেন, ‘আমার সঙ্গে অনেকের কথা হয় এখনও। ব্যক্তিগত জায়গা থেকে চেষ্টা করি সাজেশন দেয়ার, সাহায্য করার।’ কিন্তু জুলাই অভ্যুত্থানের মতো এত বড় ঘটনা দেখার পর চোখের সামনে সবকিছু ভেঙে পড়তে দেখাটা অনেক অনেক কঠিন বলে মন্তব্য করেন এই নেত্রী।

এরপরই পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা তুলে ধরে জুলাই আন্দোলনের অন্যতম এই সমন্বয়ক বলেন, ‘পরবর্তীতে আমার বন্ধু, শুভানুধ্যায়ীদের সঙ্গে পরামর্শ করে এই ব্যানার থেকে নিজেকে সরিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিই। বৈষম্যবিরোধী ব্যানারের থেকে সরাসরি পদত্যাগ না করলেও এই ব্যানারের সঙ্গে কার্যত সম্পর্ক ছিন্ন করি গত এপ্রিল-মে মাসে।’

তিনি লিখেছেন, ‘প্ল্যাটফর্ম থেকে আমাদের যোদ্ধাদের ক্ষমতায়নের কাজে মনোযোগ দিই। বিজ্ঞান নিয়ে কাজ করার ইচ্ছা ছিল, সেসবে মনোযোগ দিই। অনেকবার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম পদত্যাগ করব। একটা পদত্যাগপত্র লিখে আর জমা দিইনি। পারি নাই আসলে।’

এক সময় ছাত্র ফেডারেশনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার রাজনীতিতে যুক্ত থাকা উমামা আক্ষেপ করে লিখেছেন, ‘রাজনৈতিকভাবে ভাবলে পদত্যাগ করে আসাটা সব থেকে সহজ। কিন্তু আমি তো মানুষ, অনেক কঠিন, অভ্যুত্থানের কারণে পারি নাই। আমি এই প্ল্যাটফর্মে তো দেশ সংস্কার করতে আসছিলাম। কাদা ছোড়াছুড়ি করতে তো আসি নাই এখানে।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা-উপজেলা থেকে ব্যাপক ‘অনিয়মের’ খবর আসত দাবি করে তিনি লিখেছেন, ‘জেলা, উপজেলার অনিয়মের খবর আসত শুধু, সাংবাদিকদের কল আসত। আমি পরিষ্কার করে বলেছি, যারা এই কমিটিগুলো দিয়েছে তাদের আপনারা কেন জিজ্ঞেস করেন না? যাদের সইয়ে কমিটি হচ্ছে তাদের মুখের সামনে মাইক ধরেন না কেন?’ উমামা লিখেছেন, ‘মুখপাত্র হিসেবে বৈষম্যবিরোধীর পেইজ ব্যবহারের অধিকার থাকার কথা আমার কাছে, আমার দায়িত্ব হওয়ার কথা সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কাজ করা। পেইজ ব্যবহার করতে দেয়া তো দূরের কথা এই পেইজ থেকে মার্চ মাসে আমার বিরুদ্ধে পর্যন্ত পোস্ট হয়েছে। আমি ব্যবস্থা নিতে চাইলে পেইজকে আমার বিরুদ্ধে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয় আর না হলে নীরব যন্ত্রণা সহ্য করতে হয়।’

এসব পরিস্থিতি তাকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে তোলে দাবি করে পোস্টে উমামা লিখেছেন, ‘দিনের পর দিন হেন কোনো নোংরামি নাই যা এরা করেনি। জুলাইয়ের পরে এই পরিস্থিতিগুলো মোকাবিলা করতে গিয়ে মার্চ, এপ্রিল মাসে আমি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে যাই। যাদের সঙ্গে কাজ করতে চাচ্ছিলাম তারাও ‘হেয়ার রোডের’ আশায় তাকিয়ে থাকত। একদিকে আমার কথার সঙ্গে তাল মেলাতো, অন্যদিকে রাতের বেলা ‘হেয়ার রোডে’ গিয়ে পদ-পদবি নিয়ে দর কষাকষি করত, সব খবর আমি পেতাম।’ কাজ করতে চাইলেও করতে দেয়া হতো না দাবি করে তিনি বলেন, ‘কাজ করতে চাইলে আমাকে করতে দিবে না। বরং পেছনে কথা ছড়ানো হতো আমি প্ল্যাটফর্মের কাউকে কাজ করতে দিচ্ছি না, কাউন্সিল আটকে রেখেছি। নেতারা তাদের জুনিয়রদের দিয়ে অপপ্রচার করে বিভিন্ন ফোরামে। পরবর্তীতে আমি সিদ্ধান্ত নিই এভাবে হয় না।’

সংগঠনের সর্বশেষ কাউন্সিলে কারচুপির অভিযোগ তুলে উমামা বলেন, ‘আমি শেষ দিন পর্যন্ত কাউন্সিলে ভোট না দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। যারা কাজ করতে চায়, তারা বেশিরভাগ এই কাউন্সিলে প্রার্থীই হওয়ারই সুযোগ পায়নি। ভোটার খুব সীমিত, যার মধ্যে একটি রাজনৈতিক দলের লোকজন সব। আমি ভিতর থেকে চাচ্ছিলাম এই প্ল্যাটফর্মটার অন্তত ভালো কিছু হোক। কিন্তু বুঝতে পারছিলাম যেভাবে সাপের মতো আষ্টেপৃষ্ঠে প্ল্যাটফর্মকে জড়িয়ে ফেলা হয়েছে, এখান থেকে ভালো কিছু অসম্ভব।’ তিনি লিখেছেন, ‘এই নির্বাচনে রাতের বেলা ফলাফলের পর দেখলাম নির্বাচনে অংশ না নেয়া একজন এসে সদস্য হয়ে গেছে কাউন্সিলের। এসব দেখে আমি অত্যন্ত লজ্জিত। সেই একই স্বেচ্ছাচারিতা, স্ট্যান্টবাজি, ভাই-ব্রাদার কোরামের খেলা। এখন বোধ করি এই প্ল্যাটফর্মের ভবিষ্যৎ অন্ধকার।’

উমামা লিখেছেন, ‘অভ্যুত্থানের কথা চিন্তা করে আমি এই প্ল্যাটফর্ম থেকে সব ধরনের সমর্থন ও কাউন্সিলে প্রদত্ত ভোট প্রত্যাহার করলাম। আমি অত্যন্ত অশান্তিতে আছি। অভ্যুত্থান যেমন স্বপ্ন দেখিয়েছে, গোষ্ঠীস্বার্থে এই প্ল্যাটফর্ম একইভাবে বহু মানুষের স্বপ্ন ও সময় নষ্ট করেছে। আমি অভ্যুত্থানের স্বপ্নকে রক্ষার জন্য এই প্ল্যাটফর্মে গিয়েছিলাম।’ তিনি লিখেছেন, ‘প্ল্যাটফর্মে যাওয়ার আগে আমাকে প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল, আমি স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারব। কিন্তু প্ল্যাটফর্মের মুখপাত্র হিসেবে যাওয়ার পরেই টের পাই সংস্কার, জুলাই, শহীদ, আহত এসব মুখের বুলিমাত্র। শুধু আমি না, অনেক ছাত্রই পরিবর্তনের স্বপ্ন নিয়ে প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল। সবার সঙ্গে শুধু ছলনা হয়েছে। যারা আমাকে কষ্ট দিয়েছে, আমার সঙ্গে নোংরামি করেছে এতগুলো মাস, অভ্যুত্থানকে বাজারদরে কেনাবেচা করেছে তাদের আমি কখনও ক্ষমা করব না।’

গত বছর ২২ সেপ্টেম্বর বামপন্থি ছাত্র সংগঠন ‘ছাত্র ফেডারেশন’র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শাখা থেকে অব্যাহতি নেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক উমামা ফাতেমা। ওই সময় তিনি ফেডারেশনের ঢাবি শাখার সদস্য সচিব ছিলেন।

দেশের বিভিন্নস্থানে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৫

বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা, চরম দুর্ভোগে টেকনাফের ৩০০ পরিবার

১০ বছরের শিশুকে বস্তায় ভরে রোদের মধ্যে ফেলে রাখলেন মাদ্রাসা প্রধান

বিশেষ অভিযানে সারাদেশে গ্রেপ্তার আরও ১৫৪০

ছবি

ঋণ নয়, জলবায়ু খাতে অর্থায়ন দাবিতে দেশব্যাপী কর্মসূচি

চীন সফর ‘সফল’ হয়েছে: দেশে ফিরে ফখরুল

ছবি

ইসরায়েলের হামলায় গাজায় নিহত প্রায় ১ লাখ

ছবি

১০ শতাংশ বেড়েছে বজ্রপাত, বছরে ৩৫০ মৃত্যু

ট্রাম্পের অতিরিক্ত শুল্কারোপ নিয়ে আলোচনা অব্যাহত: প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর

ছবি

শেষ হলো রোড মার্চ, ‘দেশবিরোধী’ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার আহ্বান

করোনায় আরও ২ জনের মৃত্যু, ডেঙ্গুতে ১

মব দিয়ে জুতার মালা কিন্তু ‘ফেরত আসবে’: সাকি

বিজয় সরণিতে ভেঙে ফেলা ‘মৃত্যুজয়’র স্থলে ‘গণমিনার’ হচ্ছে

ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অস্তিত্ব ‘বিপন্ন হচ্ছে’: পূজা উদ্যাপন পরিষদ

নির্বাচনের প্রস্তুতি নিন, সরকারি কর্মকর্তাদের প্রতি পরিকল্পনা উপদেষ্টা

ছবি

মহাসমাবেশ থেকে ১৬ দফা ঘোষণা দিলো ইসলামী আন্দোলন

এনবিআরের শাটডাউন চলছে, বন্ধ শুল্ক-কর, আমদানি-রপ্তানি

ছবি

ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ২৬২ জন, মোট আক্রান্ত ৯ হাজার ৪৮৪

বাংলাদেশে বজ্রপাত বেড়েছে ১০ শতাংশ, মৃত্যু এড়াতে সচেতনতা বাড়ানোর তাগিদ

ছবি

এনবিআরে শাটডাউন: সারা দেশে বন্ধ শুল্ক ও রাজস্ব কার্যক্রম

ছবি

‘মার্চ টু এনবিআর’ শুরু, নিরাপত্তা জোরদার

ছবি

‘হুমকি’ ও ‘আহ্বান’ প্রত্যাখ্যান, ‘মার্চ টু এনবিআর’ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা ঐক্য পরিষদের

ওয়াক্ফ মামলা শুনানির জন্য হাইকোর্টে পৃথক বেঞ্চ গঠন

ছবি

বর্ণিল রথযাত্রায় ভক্তের ঢল, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারি

মিরপুরে ‘নিয়ন্ত্রণহীন’ বাস সড়কদ্বীপে, দাঁড়িয়ে থাকা পথচারীর মৃত্যু

রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করবে সরকার, ব্যক্তি করার ঘটনা ‘বিরল’: নূরুল হুদার আইনজীবী

পি কে হালদারের বিরুদ্ধে দুদকের আরও দুই মামলা

সিলেট সীমান্ত দিয়ে ১৪ রোহিঙ্গাসহ ৩১ জনকে ঠেলে দিয়েছে বিএসএফ

সাবেক গভর্নর আতিউরের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে দুদক

সামাজিক ব্যবসা পুরো বিশ্বকে বদলে দিতে পারে: প্রধান উপদেষ্টা

বন্দর ব্যবস্থাপনা বিদেশিদের হাতে না দেয়ার দাবিতে রোডমার্চ শুরু

জঙ্গি সম্পৃক্ততার অভিযোগে মালয়েশিয়ায় ৩৬ বাংলাদেশি গ্রেপ্তার

চালের পর এবার বাড়লো মুরগি ও সবজির দাম

প্রধান উপদেষ্টা ও সিইসির বৈঠকের বিষয়গুলো স্পষ্ট করার দাবি বিএনপির

‘অনুকূল পরিবেশে’ বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনায় আগ্রহী ভারত: জয়সোয়াল

ছবি

পারমাণবিক স্থাপনায় মারাত্মক ক্ষতি কথা স্বীকার করলো ইরান

tab

জাতীয়

নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ছাড়লেন উমামা

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫

জুলাই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেয়া সংগঠন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন সংগঠনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা। গতকাল শুক্রবার রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেইসবুক পেইজে দেয়া এক পোস্টে সংগঠন থেকে সরে দাঁড়ানোর বিষয়টি জানান তিনি।

অনেকের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ হুমকির মুখে পড়তে পারে শঙ্কায় চাপ সৃষ্টি করা হয়েছে

কথিত সহযোদ্ধারা মানুষকে টিস্যু পেপারের মতো ব্যবহার করেছে

যাদের সঙ্গে কাজ করতে চাচ্ছিলাম, তারা একদিকে আমার কথার সঙ্গে তাল মিলিয়েছে, রাতের বেলায় ‘হেয়ার রোডে’ গিয়ে

পদ-পদবি নিয়ে দর কষাকষি করছে

নোংরামি যারা করেছে, অভ্যুত্থানকে বাজারদরে কেনাবেচা করেছে, তাদের কখনও ক্ষমা করব না

গত বছর জুলাইয়ে শুরু হওয়া শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা অন্যতম এই সমন্বয়ক তার দীর্ঘ পোস্টে সংগঠনের কমিটি দেয়া নিয়ে নানা ‘অনিয়ম’, জেলা-উপজেলা পর্যায়ে ‘অনিয়ম’, সবশেষ দলের কাউন্সিলেও ‘অনিয়মের’ অভিযোগ তোলেন।

পোস্টে উমামা ফাতেমা লিখেছেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একটি কেন্দ্রীয় কাউন্সিল হয়েছে গত পরশু (বুধবার)। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এর সঙ্গে আমার আনুষ্ঠানিক যাত্রা এখানেই শেষ হলো।’

এই প্ল্যাটফর্মে কাজ না করার জন্য তার ওপর ‘চাপ সৃষ্টি করার’ অভিযোগ এনে তিনি বলেন, ‘এনসিপি (জাতীয় নাগরিক পার্টি) নামক রাজনৈতিক দলটি গঠনের পর আমি জুলাইয়ের অসমাপ্ত কাজগুলো করার দায়বদ্ধতা থেকে এই ব্যানার নিয়ে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিই। কিন্তু দলীয় লেজুড় ও প্রেসক্রিপশনের বাইরে এই ব্যানারটি স্বাধীনভাবে কাজ করলে অনেকের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ হুমকির মুখে পড়ত। তাই আমার ওপর অনলাইন, অফলাইনে ভয়াবহ চাপ সৃষ্টি করা হয়, যাতে আমি এই ব্যানার নিয়ে কাজ না করি।’

এরপরও কাজ চালিয়ে যেতে নিজের ইচ্ছের কথা তুলে ধরে উমামা ফাতেমা বলেন, ‘আমি পুরো বিষয়টাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েই একটা সুনাম থেকে ব্যানারকে সচল করার চেষ্টা করেছিলাম। পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে আমার আলাদা করে বলার কিছু নেই। যে মানুষগুলোর সঙ্গে আমি পাশে দাঁড়ায়ে মিটিং করছি, মিছিল করছি তারাই পরিকল্পতিভাবে জুনিয়রদের দিয়ে আমার বিরুদ্ধে ঘৃণামূলক প্রচারণা চালায়। মানুষ বাইরে যত ভালো সাজার চেষ্টা করুক ভিতর থেকে কতটা ছোটলোক হতে পারে আমি হাড়ে হাড়ে টের পাই ওই সময়গুলাতে।’

নিজের সহযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে উমামা লিখেছেন, ‘এই কথিত সহযোদ্ধারা মানুষকে টিস্যু পেপারের মতো ব্যবহার করে, প্রয়োজন শেষ হলে ছুড়ে ফেলতে এক মুহূর্তও লাগে না। আমি মার্চ-এপ্রিল মাসে এই প্ল্যাটফর্ম নিয়ে কাজ করতে গিয়ে দেখেছি পোকার মতো ভিতর থেকে প্ল্যাটফর্মকে সুবিধাবাদীরা খেয়ে ফেলেছে।’

সুবিধাবাদীদের ভিড়ে ভালোরা চাপে পড়ে গেছে মন্তব্য করে তিনি লিখেছেন, ‘হ্যাঁ, আমি বলব বিভিন্ন শাখা কমিটিতে অনেক সুনামের মানুষ ছিল, যারা পরিবর্তনের স্বপ্ন নিয়ে কমিটিতে আসছিল। চেষ্টা করছে কাজ করার। কিন্তু তারাও এই সুবিধাবাদীদের কাছে জায়গা করতে পারেনি।’ উমামা লিখেছেন, ‘আমার সঙ্গে অনেকের কথা হয় এখনও। ব্যক্তিগত জায়গা থেকে চেষ্টা করি সাজেশন দেয়ার, সাহায্য করার।’ কিন্তু জুলাই অভ্যুত্থানের মতো এত বড় ঘটনা দেখার পর চোখের সামনে সবকিছু ভেঙে পড়তে দেখাটা অনেক অনেক কঠিন বলে মন্তব্য করেন এই নেত্রী।

এরপরই পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা তুলে ধরে জুলাই আন্দোলনের অন্যতম এই সমন্বয়ক বলেন, ‘পরবর্তীতে আমার বন্ধু, শুভানুধ্যায়ীদের সঙ্গে পরামর্শ করে এই ব্যানার থেকে নিজেকে সরিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিই। বৈষম্যবিরোধী ব্যানারের থেকে সরাসরি পদত্যাগ না করলেও এই ব্যানারের সঙ্গে কার্যত সম্পর্ক ছিন্ন করি গত এপ্রিল-মে মাসে।’

তিনি লিখেছেন, ‘প্ল্যাটফর্ম থেকে আমাদের যোদ্ধাদের ক্ষমতায়নের কাজে মনোযোগ দিই। বিজ্ঞান নিয়ে কাজ করার ইচ্ছা ছিল, সেসবে মনোযোগ দিই। অনেকবার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম পদত্যাগ করব। একটা পদত্যাগপত্র লিখে আর জমা দিইনি। পারি নাই আসলে।’

এক সময় ছাত্র ফেডারেশনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার রাজনীতিতে যুক্ত থাকা উমামা আক্ষেপ করে লিখেছেন, ‘রাজনৈতিকভাবে ভাবলে পদত্যাগ করে আসাটা সব থেকে সহজ। কিন্তু আমি তো মানুষ, অনেক কঠিন, অভ্যুত্থানের কারণে পারি নাই। আমি এই প্ল্যাটফর্মে তো দেশ সংস্কার করতে আসছিলাম। কাদা ছোড়াছুড়ি করতে তো আসি নাই এখানে।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা-উপজেলা থেকে ব্যাপক ‘অনিয়মের’ খবর আসত দাবি করে তিনি লিখেছেন, ‘জেলা, উপজেলার অনিয়মের খবর আসত শুধু, সাংবাদিকদের কল আসত। আমি পরিষ্কার করে বলেছি, যারা এই কমিটিগুলো দিয়েছে তাদের আপনারা কেন জিজ্ঞেস করেন না? যাদের সইয়ে কমিটি হচ্ছে তাদের মুখের সামনে মাইক ধরেন না কেন?’ উমামা লিখেছেন, ‘মুখপাত্র হিসেবে বৈষম্যবিরোধীর পেইজ ব্যবহারের অধিকার থাকার কথা আমার কাছে, আমার দায়িত্ব হওয়ার কথা সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কাজ করা। পেইজ ব্যবহার করতে দেয়া তো দূরের কথা এই পেইজ থেকে মার্চ মাসে আমার বিরুদ্ধে পর্যন্ত পোস্ট হয়েছে। আমি ব্যবস্থা নিতে চাইলে পেইজকে আমার বিরুদ্ধে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয় আর না হলে নীরব যন্ত্রণা সহ্য করতে হয়।’

এসব পরিস্থিতি তাকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে তোলে দাবি করে পোস্টে উমামা লিখেছেন, ‘দিনের পর দিন হেন কোনো নোংরামি নাই যা এরা করেনি। জুলাইয়ের পরে এই পরিস্থিতিগুলো মোকাবিলা করতে গিয়ে মার্চ, এপ্রিল মাসে আমি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে যাই। যাদের সঙ্গে কাজ করতে চাচ্ছিলাম তারাও ‘হেয়ার রোডের’ আশায় তাকিয়ে থাকত। একদিকে আমার কথার সঙ্গে তাল মেলাতো, অন্যদিকে রাতের বেলা ‘হেয়ার রোডে’ গিয়ে পদ-পদবি নিয়ে দর কষাকষি করত, সব খবর আমি পেতাম।’ কাজ করতে চাইলেও করতে দেয়া হতো না দাবি করে তিনি বলেন, ‘কাজ করতে চাইলে আমাকে করতে দিবে না। বরং পেছনে কথা ছড়ানো হতো আমি প্ল্যাটফর্মের কাউকে কাজ করতে দিচ্ছি না, কাউন্সিল আটকে রেখেছি। নেতারা তাদের জুনিয়রদের দিয়ে অপপ্রচার করে বিভিন্ন ফোরামে। পরবর্তীতে আমি সিদ্ধান্ত নিই এভাবে হয় না।’

সংগঠনের সর্বশেষ কাউন্সিলে কারচুপির অভিযোগ তুলে উমামা বলেন, ‘আমি শেষ দিন পর্যন্ত কাউন্সিলে ভোট না দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। যারা কাজ করতে চায়, তারা বেশিরভাগ এই কাউন্সিলে প্রার্থীই হওয়ারই সুযোগ পায়নি। ভোটার খুব সীমিত, যার মধ্যে একটি রাজনৈতিক দলের লোকজন সব। আমি ভিতর থেকে চাচ্ছিলাম এই প্ল্যাটফর্মটার অন্তত ভালো কিছু হোক। কিন্তু বুঝতে পারছিলাম যেভাবে সাপের মতো আষ্টেপৃষ্ঠে প্ল্যাটফর্মকে জড়িয়ে ফেলা হয়েছে, এখান থেকে ভালো কিছু অসম্ভব।’ তিনি লিখেছেন, ‘এই নির্বাচনে রাতের বেলা ফলাফলের পর দেখলাম নির্বাচনে অংশ না নেয়া একজন এসে সদস্য হয়ে গেছে কাউন্সিলের। এসব দেখে আমি অত্যন্ত লজ্জিত। সেই একই স্বেচ্ছাচারিতা, স্ট্যান্টবাজি, ভাই-ব্রাদার কোরামের খেলা। এখন বোধ করি এই প্ল্যাটফর্মের ভবিষ্যৎ অন্ধকার।’

উমামা লিখেছেন, ‘অভ্যুত্থানের কথা চিন্তা করে আমি এই প্ল্যাটফর্ম থেকে সব ধরনের সমর্থন ও কাউন্সিলে প্রদত্ত ভোট প্রত্যাহার করলাম। আমি অত্যন্ত অশান্তিতে আছি। অভ্যুত্থান যেমন স্বপ্ন দেখিয়েছে, গোষ্ঠীস্বার্থে এই প্ল্যাটফর্ম একইভাবে বহু মানুষের স্বপ্ন ও সময় নষ্ট করেছে। আমি অভ্যুত্থানের স্বপ্নকে রক্ষার জন্য এই প্ল্যাটফর্মে গিয়েছিলাম।’ তিনি লিখেছেন, ‘প্ল্যাটফর্মে যাওয়ার আগে আমাকে প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল, আমি স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারব। কিন্তু প্ল্যাটফর্মের মুখপাত্র হিসেবে যাওয়ার পরেই টের পাই সংস্কার, জুলাই, শহীদ, আহত এসব মুখের বুলিমাত্র। শুধু আমি না, অনেক ছাত্রই পরিবর্তনের স্বপ্ন নিয়ে প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল। সবার সঙ্গে শুধু ছলনা হয়েছে। যারা আমাকে কষ্ট দিয়েছে, আমার সঙ্গে নোংরামি করেছে এতগুলো মাস, অভ্যুত্থানকে বাজারদরে কেনাবেচা করেছে তাদের আমি কখনও ক্ষমা করব না।’

গত বছর ২২ সেপ্টেম্বর বামপন্থি ছাত্র সংগঠন ‘ছাত্র ফেডারেশন’র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শাখা থেকে অব্যাহতি নেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক উমামা ফাতেমা। ওই সময় তিনি ফেডারেশনের ঢাবি শাখার সদস্য সচিব ছিলেন।

back to top