দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ও বিশিষ্ট নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রণীত ‘প্ররক্ষা নির্দেশিকা ২০২৫’ জারির এক সপ্তাহের মধ্যেই বাতিল করা হয়েছে। আইনি চ্যালেঞ্জের মুখে গত ৯ মার্চ এই নির্দেশিকাটি বাতিল করে সরকার। ফলে এখন থেকে ২০০১ সালের পুরোনো নির্দেশিকা অনুসারেই গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে।
এর আগে ২ মার্চ এই বিশেষ নিরাপত্তা নির্দেশিকা জারি করেছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তবে ৬ মার্চ হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ এই নির্দেশিকার বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনিকে তলব করে এবং ১৮ মার্চ আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেয়। তার আগেই সরকার নির্দেশিকাটি বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়।
গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ও সরকারি পদাধিকারীদের নিরাপত্তা দিতে ২০০১ সালে প্রথম ‘প্ররক্ষা নির্দেশিকা’ জারি করা হয়, যা গত দুই দশকে বেশ কয়েকবার সংশোধিত হয়েছে। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার নতুন নির্দেশিকা প্রণয়ন করে, যেখানে পূর্ববর্তী নির্দেশিকার তুলনায় বেশ কিছু পরিবর্তন আনা হয়।
নতুন নির্দেশিকায় রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী এবং প্রধান উপদেষ্টার দৈহিক নিরাপত্তা সংক্রান্ত আইন, বিধিমালা ও নির্দেশনাবলির মাধ্যমে প্রতিপালিত হবে বলে উল্লেখ করা হয়। জাতীয় সংসদের স্পিকার, মন্ত্রিসভার সদস্য এবং উপদেষ্টাদের নিরাপত্তাও নির্দিষ্ট বিধির আলোকে দেওয়ার কথা বলা হয়।
৪ নম্বর পদক্রম তালিকায় প্রধান বিচারপতি, আপিল বিভাগের বিচারপতি, প্রধান নির্বাচন কমিশনার, দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি), র্যাবের মহাপরিচালক, বিশেষ শাখার অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক, বিভাগীয় কমিশনার, রেঞ্জ ডিআইজি এবং মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তারা তিনটি সুবিধা পেতেন—আবাসিক প্রহরী, দেহরক্ষী/গানম্যান ও গাড়ি প্রটেকশন স্কট।
৫ নম্বর তালিকায় হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি, সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি, নির্বাচন কমিশনার, দুর্নীতি দমন কমিশনার, অ্যাটর্নি জেনারেল, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক, সরকারি কর্ম কমিশনের চেয়ারম্যান, সরকারের সচিবদের রাখা হয়। এরা শুধু দেহরক্ষী/গানম্যান সুবিধা পেতেন।
৬ নম্বর তালিকায় জেলা প্রশাসক, জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, জেলা ও দায়রা জজ এবং জেলা পুলিশ সুপারদের রাখা হয়। তাদের জন্য নির্ধারিত ছিল আবাসিক প্রহরী ও দেহরক্ষী/গানম্যান। তবে কেউ বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) হলে এই সুবিধা পেতেন না।
নির্দেশিকা জারির পর আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির বিষয়টি হাইকোর্টের নজরে আনেন। ৬ মার্চ বিচারপতি ফাতেমা নজীব ও বিচারপতি শিকদার মাহমুদুর রাজীর বেঞ্চ এ বিষয়ে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রুলসহ আদেশ দেন এবং নির্দেশিকার কার্যক্রম তিন মাসের জন্য স্থগিত করেন।
আইনজীবী শিশির মনির আদালতে বলেন, নতুন নির্দেশিকায় প্রধান বিচারপতিকে পুলিশের রেঞ্জ ডিআইজি ও আইজিপির সঙ্গে একই তালিকায় রাখা হয়েছে, যা সংবিধানের পরিপন্থী। হাইকোর্ট বিভাগের বিচারকদেরও সচিবদের সমপর্যায়ে রাখা হয়েছে। তিনি আরও উল্লেখ করেন, ২০২০ সালের ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স এবং আপিল বিভাগের একটি রায়ের পরিপন্থীভাবে এই নির্দেশিকা জারি করা হয়েছিল।
আদালত এই নির্দেশিকা অবৈধ ও অসাংবিধানিক ঘোষণা করতে রুল জারি করে এবং সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনিকে ১৮ মার্চ আদালতে হাজির হয়ে ব্যাখ্যা দেওয়ার নির্দেশ দেয়।
আদালতে হাজির হওয়ার আগেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ৯ মার্চ নির্দেশিকাটি বাতিল করে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আমিনুল ইসলামের সই করা এক আদেশে বলা হয়, ‘গুরুত্বপূর্ণ/বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গকে বিশেষ নিরাপত্তা প্রদান বিষয়ে প্রণীত “প্ররক্ষা নির্দেশিকা ২০২৫”-এর কার্যকারিতা বাতিল করা হলো।’
সরকারের এই সিদ্ধান্তের ফলে বর্তমানে পুরনো ২০০১ সালের নির্দেশিকা অনুসারেই গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা চলবে।
নির্দেশিকা বাতিল হওয়ায় এখন পুরনো ব্যবস্থার মাধ্যমেই গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। তবে আইনি চ্যালেঞ্জের কারণে ভবিষ্যতে নতুন নির্দেশিকা সংশোধন করে আবারও কার্যকর করার উদ্যোগ নেওয়া হতে পারে।
আইন বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সংবিধান ও বিদ্যমান আইনি কাঠামোকে উপেক্ষা করে যে কোনো নির্দেশিকা জারি করলে তা আদালতের কাছে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। ফলে ভবিষ্যতে সরকারের উচিত হবে আরও সুস্পষ্ট ও আইনি কাঠামোর মধ্যে থেকে যে কোনো নিরাপত্তা নির্দেশিকা তৈরি করা।
এদিকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সরকারের হঠাৎ এই পিছু হটার পেছনে আদালতের রুল ও সম্ভাব্য আইনি বাধার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। তবে সংশোধিত নির্দেশিকা আবারও আনার চেষ্টা করা হতে পারে বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বুধবার, ১২ মার্চ ২০২৫
দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ও বিশিষ্ট নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রণীত ‘প্ররক্ষা নির্দেশিকা ২০২৫’ জারির এক সপ্তাহের মধ্যেই বাতিল করা হয়েছে। আইনি চ্যালেঞ্জের মুখে গত ৯ মার্চ এই নির্দেশিকাটি বাতিল করে সরকার। ফলে এখন থেকে ২০০১ সালের পুরোনো নির্দেশিকা অনুসারেই গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে।
এর আগে ২ মার্চ এই বিশেষ নিরাপত্তা নির্দেশিকা জারি করেছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তবে ৬ মার্চ হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ এই নির্দেশিকার বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনিকে তলব করে এবং ১৮ মার্চ আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেয়। তার আগেই সরকার নির্দেশিকাটি বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়।
গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ও সরকারি পদাধিকারীদের নিরাপত্তা দিতে ২০০১ সালে প্রথম ‘প্ররক্ষা নির্দেশিকা’ জারি করা হয়, যা গত দুই দশকে বেশ কয়েকবার সংশোধিত হয়েছে। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার নতুন নির্দেশিকা প্রণয়ন করে, যেখানে পূর্ববর্তী নির্দেশিকার তুলনায় বেশ কিছু পরিবর্তন আনা হয়।
নতুন নির্দেশিকায় রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী এবং প্রধান উপদেষ্টার দৈহিক নিরাপত্তা সংক্রান্ত আইন, বিধিমালা ও নির্দেশনাবলির মাধ্যমে প্রতিপালিত হবে বলে উল্লেখ করা হয়। জাতীয় সংসদের স্পিকার, মন্ত্রিসভার সদস্য এবং উপদেষ্টাদের নিরাপত্তাও নির্দিষ্ট বিধির আলোকে দেওয়ার কথা বলা হয়।
৪ নম্বর পদক্রম তালিকায় প্রধান বিচারপতি, আপিল বিভাগের বিচারপতি, প্রধান নির্বাচন কমিশনার, দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি), র্যাবের মহাপরিচালক, বিশেষ শাখার অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক, বিভাগীয় কমিশনার, রেঞ্জ ডিআইজি এবং মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তারা তিনটি সুবিধা পেতেন—আবাসিক প্রহরী, দেহরক্ষী/গানম্যান ও গাড়ি প্রটেকশন স্কট।
৫ নম্বর তালিকায় হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি, সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি, নির্বাচন কমিশনার, দুর্নীতি দমন কমিশনার, অ্যাটর্নি জেনারেল, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক, সরকারি কর্ম কমিশনের চেয়ারম্যান, সরকারের সচিবদের রাখা হয়। এরা শুধু দেহরক্ষী/গানম্যান সুবিধা পেতেন।
৬ নম্বর তালিকায় জেলা প্রশাসক, জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, জেলা ও দায়রা জজ এবং জেলা পুলিশ সুপারদের রাখা হয়। তাদের জন্য নির্ধারিত ছিল আবাসিক প্রহরী ও দেহরক্ষী/গানম্যান। তবে কেউ বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) হলে এই সুবিধা পেতেন না।
নির্দেশিকা জারির পর আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির বিষয়টি হাইকোর্টের নজরে আনেন। ৬ মার্চ বিচারপতি ফাতেমা নজীব ও বিচারপতি শিকদার মাহমুদুর রাজীর বেঞ্চ এ বিষয়ে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রুলসহ আদেশ দেন এবং নির্দেশিকার কার্যক্রম তিন মাসের জন্য স্থগিত করেন।
আইনজীবী শিশির মনির আদালতে বলেন, নতুন নির্দেশিকায় প্রধান বিচারপতিকে পুলিশের রেঞ্জ ডিআইজি ও আইজিপির সঙ্গে একই তালিকায় রাখা হয়েছে, যা সংবিধানের পরিপন্থী। হাইকোর্ট বিভাগের বিচারকদেরও সচিবদের সমপর্যায়ে রাখা হয়েছে। তিনি আরও উল্লেখ করেন, ২০২০ সালের ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স এবং আপিল বিভাগের একটি রায়ের পরিপন্থীভাবে এই নির্দেশিকা জারি করা হয়েছিল।
আদালত এই নির্দেশিকা অবৈধ ও অসাংবিধানিক ঘোষণা করতে রুল জারি করে এবং সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনিকে ১৮ মার্চ আদালতে হাজির হয়ে ব্যাখ্যা দেওয়ার নির্দেশ দেয়।
আদালতে হাজির হওয়ার আগেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ৯ মার্চ নির্দেশিকাটি বাতিল করে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আমিনুল ইসলামের সই করা এক আদেশে বলা হয়, ‘গুরুত্বপূর্ণ/বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গকে বিশেষ নিরাপত্তা প্রদান বিষয়ে প্রণীত “প্ররক্ষা নির্দেশিকা ২০২৫”-এর কার্যকারিতা বাতিল করা হলো।’
সরকারের এই সিদ্ধান্তের ফলে বর্তমানে পুরনো ২০০১ সালের নির্দেশিকা অনুসারেই গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা চলবে।
নির্দেশিকা বাতিল হওয়ায় এখন পুরনো ব্যবস্থার মাধ্যমেই গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। তবে আইনি চ্যালেঞ্জের কারণে ভবিষ্যতে নতুন নির্দেশিকা সংশোধন করে আবারও কার্যকর করার উদ্যোগ নেওয়া হতে পারে।
আইন বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সংবিধান ও বিদ্যমান আইনি কাঠামোকে উপেক্ষা করে যে কোনো নির্দেশিকা জারি করলে তা আদালতের কাছে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। ফলে ভবিষ্যতে সরকারের উচিত হবে আরও সুস্পষ্ট ও আইনি কাঠামোর মধ্যে থেকে যে কোনো নিরাপত্তা নির্দেশিকা তৈরি করা।
এদিকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সরকারের হঠাৎ এই পিছু হটার পেছনে আদালতের রুল ও সম্ভাব্য আইনি বাধার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। তবে সংশোধিত নির্দেশিকা আবারও আনার চেষ্টা করা হতে পারে বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা।