alt

জাতীয়

বিদেশে অপরাধ করলেও শাস্তি, ট্রাইব্যুনাল আইনের সংশোধনী অনুমোদন

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪

‘আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) (সংশোধনী) অধ্যাদেশ, ২০২৪’-এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ। এতে রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনাল শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ রাখা হয়নি। তবে কেউ বিদেশে মানবতাবিরোধী অপরাধ করলেও এই আইনের অধীনে শাস্তি পাবে। আইনে মোট ২০টি সংশোধনী আনা হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে বুধবার (২০ নভেম্বর) সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এ অনুমোদন দেয়া হয়।

বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব শেখ আবদুর রশিদ প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানিয়ে বলেন, গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ, যুদ্ধাপরাধ এবং আন্তর্জাতিক আইনের আওতাধীন অন্যান্য অপরাধে অভিযুক্তদের বিচারের লক্ষ্যে ১৯৭৩ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) অধ্যাদেশ প্রণয়ন করা হয়।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘রোম স্ট্যাচু অব দ্যা ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্ট-এর সঙ্গে সামঞ্জস্যতা আনয়ন, আন্তর্জাতিক আইনের প্রচলিত বিধানের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ এবং এই আইনের বিচারকাজ নিয়ে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠণ উত্থাপিত বিভিন্ন সুপারিশের আলোকে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) অধ্যাদেশ, ১৯৭৩-এর আরও সংশোধন সমীচীন ও আবশ্যক।’

তিনি আরও বলেন, আইন ও বিচার বিভাগ কর্তৃক আন্তর্জাতিক অপরাধগুলোর সংজ্ঞা যুগোপযোগীকরণ, অপরাধের দায় নির্ধারণ, অডিও ও ভিডিওর মাধ্যমে বিচারকাজ ধারণ ও সম্প্রচার, বিদেশি কাউন্সেল-এর বিধান, বিচারকালে অভিযুক্তের অধিকার, অন্তর্বর্তীকালীন আপিল, সাক্ষ্যের গ্রহণযোগ্যতা ও প্রাসঙ্গিকতা সংক্রান্ত বিধান, তদন্তকারী কর্মকর্তা কর্তৃক তল্লাশি ও জব্দ করার বিধান, পর্যবেক্ষক, সাক্ষীর সুরক্ষা, ভিকটিমের অংশগ্রহণ ও সুরক্ষার বিধান সংযোজন করে ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) (সংশোধনী) অধ্যাদেশ, ২০২৪’-এর খসড়া প্রণয়ন করা হয়।

খসড়াটি নিয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিভাগ, দপ্তর, বিশ্ববিদ্যালয়, মানবাধিকার কর্মী, মানবাধিকার সংস্থা, আন্তর্জাতিক সংস্থা, আন্তর্জাতিক আইনে বিশেষজ্ঞ এবং অংশীজনের সঙ্গে বিভিন্ন সভা অনুষ্ঠিত হয় এবং তাদের মতামত ও পরামর্শ পর্যালোচনা করে আইন ও বিচার বিভাগ কর্তৃক প্রণীত খসড়ায় সংযোজন ও পরিমার্জন করা হয়েছে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

শেখ আবদুর রশিদ বলেন, যেহেতু সংসদ ভেঙে যাওয়া অবস্থায় রয়েছে এবং গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ, যুদ্ধাপরাধ এবং আন্তর্জাতিক আইনের আওতাধীন অন্যান্য অপরাধে অভিযুক্তদের বিচারের লক্ষ্যে বিদ্যমান আইন যুগোপযোগীকরণের বিষয়ে আশু ব্যবস্থা নেয়ার জন্য প্রয়োজনীয় পরিস্থিতি বিদ্যমান রয়েছে, সেহেতু ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) (সংশোধনী) অধ্যাদেশ, ২০২৪’ শীর্ষক অধ্যাদেশের খসড়া উপদেষ্টা পরিষদের নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হয়।

বিদেশে অপরাধ করলেও ট্রাইব্যুনালে বিচারের সুযোগ:

বিদেশে বসে কেউ মানবতাবিরোধী অপরাধ করলেও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তা আমলে নেয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে সংশোধিত অধ্যাদেশে। এই অধ্যাদেশ জারি হলে এ ট্রাইব্যুনাল চাইলে শুনানির সময় অডিও ও ভিডিও রেকর্ডও রাখতে পারবে।

এখন রাষ্ট্রপতি সই করলে এটি অধ্যাদেশ আকারে জারি হবে। এর আগে মঙ্গলবার আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল সাংবাদিকদের বলেছিলেন, উপদেষ্টা পরিষদে অধ্যাদেশের সংশোধনী অনুমোদন হলে বৃহস্পতিবারই (আজ) এটি অধ্যাদেশ আকারে জারি হতে পারে।

বিদেশে অপরাধের শাস্তির বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব আরও বলেন, ‘ট্রাইব্যুনাল চাইলে শুনানির অডিও ও ভিডিও রেকর্ড রাখতে পারবে। তবে গণমাধ্যমের জন্য সম্প্রচারের কোনো ব্যবস্থা থাকবে না। বাংলাদেশের বাইরে অপরাধ করলে ট্রাইব্যুনালে আমলে নেয়া যাবে। এতদিন শুধু বাংলাদেশের ভেতরে সংঘটিত অপরাধকে আমলে নিতে পারত ট্রাইব্যুনাল।’ সেরকম ক্ষেত্রে আসামি চাইলে বিদেশ থেকে আইনজীবী নিয়োগ করতে পারবে বলে জানান শেখ আবদুর রশিদ।

১৯৭১ সালের যুদ্ধাপরাধের বিচারের জন্য ২০১০ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করেছিল আওয়ামী লীগ সরকার।

এবার ছাত্র-জনতার গণঅভ্যত্থানের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ সরকারের চালানো দমন পীড়নকে ‘গণহত্যা’ বিবেচনা করে এ আদালতে বিচারের উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।

সেই অনুযায়ী, নতুন তিন বিচারপতিকে দায়িত্ব দিয়ে ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হয়েছে। গত ৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সময়ে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মধ্যে সারা দেশে ‘গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের’ ৫৬টি অভিযোগ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা ও প্রসিকিউশন অফিসে জমা পড়েছে।

এর মধ্যে দুইটি মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার পরিবারের সদস্য ও দলের শীর্ষ নেতাসহ ৪৬ জনের বিরুদ্ধে সম্প্রতি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে চলে গেছেন শেখ হাসিনা।

রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে শাস্তির বিধান নেই:

‘আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) সংশোধন অধ্যাদেশ ২০২৪’ এর খসড়ায় সংগঠন বা রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশের যে বিধান প্রস্তাব করা হয়েছিল, তা বাদ দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ।

বৈঠক শেষে সন্ধ্যায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূইয়া, উপদেষ্টা মাহফুজ আলম, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।

এর আগে ১৯ নভেম্বর মঙ্গলবার উপদেষ্টা আসিফ নজরুল আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) সংশোধন অধ্যাদেশের খসড়ার বিষয়ে বলেছিলেন, কোনো রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ প্রমাণিত হলে আদালত চাইলে প্রয়োজনীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করতে পারবে। সেখানে আদালতকে সেভাবে সরাসরি ক্ষমতা দেয়া হয়নি। বলা হয়েছে, আদালত যদি মনে করেন, তাহলে প্রয়োজনীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশ করতে পারবে।

বুধবার আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) সংশোধন অধ্যাদেশ ২০২৪’ এর খসড়াটি উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে উপস্থাপন করা হয়েছিল এবং এটি গৃহীত হয়েছে। তিনি বলেন, ‘তবে খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়েছে উপদেষ্টা পরিষদে। উপদেষ্টা পরিষদ মনে করেছে আমরা যে অধ্যাদেশের সংশোধনী করেছিলাম, সেখানে সংগঠণকে শাস্তি দেয়ার বিধান ছিল। প্রস্তাবিত সংশোধনীতে বলা হয়েছিল, কোনো সংগঠনকে শাস্তি দেয়ার যদি প্রয়োজন মনে করে, যদি মনে করে শাস্তি দেয়া দরকার, তাহলে ট্রাইব্যুনাল শাস্তি ওেয়ার সুপারিশ করতে পারবে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের কাছে।’

আইন উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘উপদেষ্টা পরিষদের আলোচনায় বলা হয়েছে, আমরা এই বিচারকে অন্য কোনো বিষয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত করতে চাই না। রাজনৈতিক দল বা কোনো সংগঠণকে নিষিদ্ধ করার প্রশ্ন আসলে এই আইনকে অযথা প্রশ্নবিদ্ধ করার সুযোগ সৃষ্টি হবে। আমরা সেই সুযোগ দিতে চাই না। আমরা একদম স্বচ্ছতার সঙ্গে বিচারটি করতে চাই। সে জন্য এই বিধান বাতিল করা হয়েছে।’

এক প্রশ্নের জবাবে আসিফ নজরুল বলেন, কোনো রাজনৈতিক দল বা সংগঠনের অপরাধমূলক কার্যক্রমের জন্য যদি নিষিদ্ধ করার প্রয়োজন হয়, যদি নিষিদ্ধ করার দাবি ওঠে সমাজে, তাহলে অন্যান্য আইন রয়েছে। সেসব আইনে নিষিদ্ধ করার বিধান আছে। সন্ত্রাস দমন আইনে রয়েছে, নির্বাচনী আইনে রয়েছে, ‘দ্য পলিটিক্যাল পার্টিস অর্ডিন্যান্স, ১৯৭৮’ রয়েছে। রাজনৈতিক ঐকমত্য হলে সেটা পরে বিবেচনা করা হবে বলে জানান উপদেষ্টা।

আগামী নির্বাচনের সময় জানালেন উপদেষ্টা সাখাওয়াত

ঢাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকদের অবরোধ

ছবি

জলবায়ু পরিবর্তনে মারাত্মক ঝুঁকিতে বাঁশখালী উপকূল

সাবেক আইজিপি, জে. জিয়াসহ ৮ জনের তদন্ত প্রতিবেদন ১ মাসের মধ্যে দাখিলের নির্দেশ ট্রাইব্যুনালের

নির্বাচনের সময় ‘পূর্ণাঙ্গ ক্ষমতা’ চান ইসি কর্মকর্তারা

ছবি

শিল্পকলায় আবারও হবে বন্ধ হওয়া ‘নিত্যপুরাণ’

ছবি

দ্বৈত প্রশাসন ব্যবস্থা বিলুপ্তির দাবি হিউম্যানিটি ফাউন্ডেশনের

ছবি

ট্রাইব্যুনাল চাইলে বিচারকার্য অডিও ভিজ্যুয়াল প্রচার করতে পারবে : আইন উপদেষ্টা

পুলিশের নতুন আইজিপি হলেন বাহারুল আলম

ছবি

মূল্যস্ফীতি মোকাবিলায় সরকারের উদ্যোগ

ছবি

স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব পদে রদবদল: নতুন দায়িত্বে আকমল হোসেন আজাদ

ছবি

ইসিকে অগাধ ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, সমস্যা ছিল প্রয়োগে : বদিউল আলম

ছবি

আমদানির ক্ষেত্রে কোনো দেশের সঙ্গে সিন্ডিকেট হলে সমস্যা: বাণিজ্য উপদেষ্টা

ছবি

প্রথমবার সচিবালয়ে ড. ইউনূস, যোগ দিলেন উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে

ছবি

যুদ্ধে মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার, রাশিয়ার হুঁশিয়ারি

নির্বাচনে আ’লীগের অংশগ্রহণে আপত্তি নেই : ভারতীয় পত্রিকাকে মুহাম্মদ ইউনূস

কপ২৯ : জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় সাহসী ও সম্মিলিত পদক্ষেপের প্রয়োজন

ছবি

গার্মেন্ট শ্রমিকদের মহাসড়ক অবরোধের চতুর্থ দিন

ভুয়া মামলা, আগে করতো পুলিশ, এখন করছে পাবলিক : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

ছবি

আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধনের খসড়া উঠছে আজ উপদেষ্টা পরিষদে

ছবি

বিশ্ব টয়লেট দিবস ২০২৪ উদযাপন করলো হারপিক

ছবি

বাল্যবিবাহ নিরসনে রংপুরে কর্মশালা অনুষ্ঠিত

ছবি

আগে পুলিশ ভুয়া মামলা করত, এখন করছে ‘জনগণ’: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

ছবি

হয়রানিমূলক মামলা ঠেকাতে নতুন চিন্তার কথা জানালেন আইন উপদেষ্টা

ছবি

কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর: সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে আগামী সপ্তাহে কমিটি

ছবি

নির্বাচনে আ.লীগের অংশগ্রহণে সরকারের আপত্তি নেই: দ্য হিন্দুকে মুহাম্মদ ইউনূস

ছবি

বিচারের আগে আ. লীগকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে দেব না, প্রয়োজনে ২য় অভ্যুত্থান : সারজিস

ছবি

বৈঠক করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে তিতুমীরের ১৪ শিক্ষার্থী

ছবি

ঢাকা মহানগরে তিন দিনের মধ্যে ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধের নির্দেশ

ছবি

খুব প্রয়োজনীয় কিছু সংস্কার করে যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন: আইন উপদেষ্টা

ছবি

আমাদের সাফল্যের সূর্য উদয় হয়েছে : অর্থ উপদেষ্টা

ছবি

তিতুমীর কলেজে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন

ছবি

সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩২ বছর নির্ধারণ

ছবি

সংসদ সচিবালয়ের দায়িত্ব পেলেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল

ট্রাম্পের ক্ষমতায় আসায় যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ সম্পর্ক বদলাবে না: ড. ইউনূস

ছবি

সরকারি চাকরির পুলিশ ভেরিফিকেশনে রাজনৈতিক পরিচয় বিবেচিত হবে না

tab

জাতীয়

বিদেশে অপরাধ করলেও শাস্তি, ট্রাইব্যুনাল আইনের সংশোধনী অনুমোদন

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪

‘আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) (সংশোধনী) অধ্যাদেশ, ২০২৪’-এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ। এতে রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনাল শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ রাখা হয়নি। তবে কেউ বিদেশে মানবতাবিরোধী অপরাধ করলেও এই আইনের অধীনে শাস্তি পাবে। আইনে মোট ২০টি সংশোধনী আনা হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে বুধবার (২০ নভেম্বর) সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এ অনুমোদন দেয়া হয়।

বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব শেখ আবদুর রশিদ প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানিয়ে বলেন, গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ, যুদ্ধাপরাধ এবং আন্তর্জাতিক আইনের আওতাধীন অন্যান্য অপরাধে অভিযুক্তদের বিচারের লক্ষ্যে ১৯৭৩ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) অধ্যাদেশ প্রণয়ন করা হয়।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘রোম স্ট্যাচু অব দ্যা ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্ট-এর সঙ্গে সামঞ্জস্যতা আনয়ন, আন্তর্জাতিক আইনের প্রচলিত বিধানের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ এবং এই আইনের বিচারকাজ নিয়ে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠণ উত্থাপিত বিভিন্ন সুপারিশের আলোকে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) অধ্যাদেশ, ১৯৭৩-এর আরও সংশোধন সমীচীন ও আবশ্যক।’

তিনি আরও বলেন, আইন ও বিচার বিভাগ কর্তৃক আন্তর্জাতিক অপরাধগুলোর সংজ্ঞা যুগোপযোগীকরণ, অপরাধের দায় নির্ধারণ, অডিও ও ভিডিওর মাধ্যমে বিচারকাজ ধারণ ও সম্প্রচার, বিদেশি কাউন্সেল-এর বিধান, বিচারকালে অভিযুক্তের অধিকার, অন্তর্বর্তীকালীন আপিল, সাক্ষ্যের গ্রহণযোগ্যতা ও প্রাসঙ্গিকতা সংক্রান্ত বিধান, তদন্তকারী কর্মকর্তা কর্তৃক তল্লাশি ও জব্দ করার বিধান, পর্যবেক্ষক, সাক্ষীর সুরক্ষা, ভিকটিমের অংশগ্রহণ ও সুরক্ষার বিধান সংযোজন করে ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) (সংশোধনী) অধ্যাদেশ, ২০২৪’-এর খসড়া প্রণয়ন করা হয়।

খসড়াটি নিয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিভাগ, দপ্তর, বিশ্ববিদ্যালয়, মানবাধিকার কর্মী, মানবাধিকার সংস্থা, আন্তর্জাতিক সংস্থা, আন্তর্জাতিক আইনে বিশেষজ্ঞ এবং অংশীজনের সঙ্গে বিভিন্ন সভা অনুষ্ঠিত হয় এবং তাদের মতামত ও পরামর্শ পর্যালোচনা করে আইন ও বিচার বিভাগ কর্তৃক প্রণীত খসড়ায় সংযোজন ও পরিমার্জন করা হয়েছে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

শেখ আবদুর রশিদ বলেন, যেহেতু সংসদ ভেঙে যাওয়া অবস্থায় রয়েছে এবং গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ, যুদ্ধাপরাধ এবং আন্তর্জাতিক আইনের আওতাধীন অন্যান্য অপরাধে অভিযুক্তদের বিচারের লক্ষ্যে বিদ্যমান আইন যুগোপযোগীকরণের বিষয়ে আশু ব্যবস্থা নেয়ার জন্য প্রয়োজনীয় পরিস্থিতি বিদ্যমান রয়েছে, সেহেতু ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) (সংশোধনী) অধ্যাদেশ, ২০২৪’ শীর্ষক অধ্যাদেশের খসড়া উপদেষ্টা পরিষদের নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হয়।

বিদেশে অপরাধ করলেও ট্রাইব্যুনালে বিচারের সুযোগ:

বিদেশে বসে কেউ মানবতাবিরোধী অপরাধ করলেও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তা আমলে নেয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে সংশোধিত অধ্যাদেশে। এই অধ্যাদেশ জারি হলে এ ট্রাইব্যুনাল চাইলে শুনানির সময় অডিও ও ভিডিও রেকর্ডও রাখতে পারবে।

এখন রাষ্ট্রপতি সই করলে এটি অধ্যাদেশ আকারে জারি হবে। এর আগে মঙ্গলবার আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল সাংবাদিকদের বলেছিলেন, উপদেষ্টা পরিষদে অধ্যাদেশের সংশোধনী অনুমোদন হলে বৃহস্পতিবারই (আজ) এটি অধ্যাদেশ আকারে জারি হতে পারে।

বিদেশে অপরাধের শাস্তির বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব আরও বলেন, ‘ট্রাইব্যুনাল চাইলে শুনানির অডিও ও ভিডিও রেকর্ড রাখতে পারবে। তবে গণমাধ্যমের জন্য সম্প্রচারের কোনো ব্যবস্থা থাকবে না। বাংলাদেশের বাইরে অপরাধ করলে ট্রাইব্যুনালে আমলে নেয়া যাবে। এতদিন শুধু বাংলাদেশের ভেতরে সংঘটিত অপরাধকে আমলে নিতে পারত ট্রাইব্যুনাল।’ সেরকম ক্ষেত্রে আসামি চাইলে বিদেশ থেকে আইনজীবী নিয়োগ করতে পারবে বলে জানান শেখ আবদুর রশিদ।

১৯৭১ সালের যুদ্ধাপরাধের বিচারের জন্য ২০১০ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করেছিল আওয়ামী লীগ সরকার।

এবার ছাত্র-জনতার গণঅভ্যত্থানের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ সরকারের চালানো দমন পীড়নকে ‘গণহত্যা’ বিবেচনা করে এ আদালতে বিচারের উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।

সেই অনুযায়ী, নতুন তিন বিচারপতিকে দায়িত্ব দিয়ে ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হয়েছে। গত ৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সময়ে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মধ্যে সারা দেশে ‘গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের’ ৫৬টি অভিযোগ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা ও প্রসিকিউশন অফিসে জমা পড়েছে।

এর মধ্যে দুইটি মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার পরিবারের সদস্য ও দলের শীর্ষ নেতাসহ ৪৬ জনের বিরুদ্ধে সম্প্রতি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে চলে গেছেন শেখ হাসিনা।

রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে শাস্তির বিধান নেই:

‘আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) সংশোধন অধ্যাদেশ ২০২৪’ এর খসড়ায় সংগঠন বা রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশের যে বিধান প্রস্তাব করা হয়েছিল, তা বাদ দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ।

বৈঠক শেষে সন্ধ্যায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূইয়া, উপদেষ্টা মাহফুজ আলম, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।

এর আগে ১৯ নভেম্বর মঙ্গলবার উপদেষ্টা আসিফ নজরুল আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) সংশোধন অধ্যাদেশের খসড়ার বিষয়ে বলেছিলেন, কোনো রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ প্রমাণিত হলে আদালত চাইলে প্রয়োজনীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করতে পারবে। সেখানে আদালতকে সেভাবে সরাসরি ক্ষমতা দেয়া হয়নি। বলা হয়েছে, আদালত যদি মনে করেন, তাহলে প্রয়োজনীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশ করতে পারবে।

বুধবার আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) সংশোধন অধ্যাদেশ ২০২৪’ এর খসড়াটি উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে উপস্থাপন করা হয়েছিল এবং এটি গৃহীত হয়েছে। তিনি বলেন, ‘তবে খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়েছে উপদেষ্টা পরিষদে। উপদেষ্টা পরিষদ মনে করেছে আমরা যে অধ্যাদেশের সংশোধনী করেছিলাম, সেখানে সংগঠণকে শাস্তি দেয়ার বিধান ছিল। প্রস্তাবিত সংশোধনীতে বলা হয়েছিল, কোনো সংগঠনকে শাস্তি দেয়ার যদি প্রয়োজন মনে করে, যদি মনে করে শাস্তি দেয়া দরকার, তাহলে ট্রাইব্যুনাল শাস্তি ওেয়ার সুপারিশ করতে পারবে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের কাছে।’

আইন উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘উপদেষ্টা পরিষদের আলোচনায় বলা হয়েছে, আমরা এই বিচারকে অন্য কোনো বিষয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত করতে চাই না। রাজনৈতিক দল বা কোনো সংগঠণকে নিষিদ্ধ করার প্রশ্ন আসলে এই আইনকে অযথা প্রশ্নবিদ্ধ করার সুযোগ সৃষ্টি হবে। আমরা সেই সুযোগ দিতে চাই না। আমরা একদম স্বচ্ছতার সঙ্গে বিচারটি করতে চাই। সে জন্য এই বিধান বাতিল করা হয়েছে।’

এক প্রশ্নের জবাবে আসিফ নজরুল বলেন, কোনো রাজনৈতিক দল বা সংগঠনের অপরাধমূলক কার্যক্রমের জন্য যদি নিষিদ্ধ করার প্রয়োজন হয়, যদি নিষিদ্ধ করার দাবি ওঠে সমাজে, তাহলে অন্যান্য আইন রয়েছে। সেসব আইনে নিষিদ্ধ করার বিধান আছে। সন্ত্রাস দমন আইনে রয়েছে, নির্বাচনী আইনে রয়েছে, ‘দ্য পলিটিক্যাল পার্টিস অর্ডিন্যান্স, ১৯৭৮’ রয়েছে। রাজনৈতিক ঐকমত্য হলে সেটা পরে বিবেচনা করা হবে বলে জানান উপদেষ্টা।

back to top