ঢাকার সাভারের আশুলিয়ার বাইপাইল মোড়ে নবীনগর থেকে চন্দ্রা মহাসড়ক অবরোধ করা শ্রমিকদের সরিয়ে দেয়া হয়েছে। মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে জলকামান দিয়ে পানি ছিটিয়ে মহাসড়ক থেকে শ্রমিকদের সরিয়ে দেন পুলিশ সদস্যরা। এতে প্রায় ৩১ ঘণ্টা পর মহাসড়কটিতে যান চলাচল শুরু হয়। ২১ অক্টেবার সোমবার সকাল ১০টা থেকে জেনারেশন নেক্সট ফ্যাশন লিমিটেড নামের তৈরি পোশাক কারখানা চালু ও বকেয়া বেতনের দাবিতে শ্রমিকরা এ অবরোধ কর্মসূচি শুরু করেছিলেন।
আন্দোলনকারী শ্রমিকরা জানান, এক মাসের বেতন-ভাতা বকেয়া রেখে দুই মাস আগে কারখানাটি বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। এতে টানা তিন মাস ধরে বেতন-ভাতা না পাওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন শ্রমিকরা। এর জেরে বন্ধ কারখানা খুলে দেয়া ও বকেয়া বেতনের দাবিতে সোমবার সকাল ১০টার দিকে শ্রমিকরা আশুলিয়ার বাইপাইল এলাকায় জড়ো হয়ে নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। রাতেও তারা সড়ক অবরোধ কর্মসূচি অব্যাহত রাখেন। মঙ্গলবার সকালে আরও অনেক শ্রমিক আন্দোলনে যোগ দেন। পরে বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে পুলিশ জলকামান দিয়ে পানি ছিটিয়ে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
প্রত্যক্ষদর্শী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, সেনাবাহিনী, বিজিবি, র্যাব, আশুলিয়ার শিল্পাঞ্চল পুলিশ-১ ও আশুলিয়া থানা-পুলিশের সদস্যরা বিভিন্ন সময় বিক্ষোভকারী শ্রমিকদের মহাসড়ক ছেড়ে দেয়ার অনুরোধ জানান। তবে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত শ্রমিকরা সড়ক ছাড়বেন না বলে জানান। এতে নবীনগর থেকে চন্দ্রা মহাসড়কে তীব্র যানজট সৃষ্টি হওয়ায় দুর্ভোগে পড়েন বিভিন্ন পরিবহনের চালক ও যাত্রীরা।
মঙ্গলবার শ্রমিকদের জানানো হয়, কারখানার মালিকের বোন, কারখানার ডিএমডিকে আইনের আওতায় এনেছে যৌথ বাহিনী। এছাড়া বাকিদের আইনের আওতায় এনে প্রয়োজনে কারখানা বিক্রি করে বকেয়া পরিশোধের ব্যবস্থা করা হবে বলে জানানো হয়। এ সময় শ্রমিকদের একটি পক্ষ সড়ক ছেড়ে কারখানার সামনে অবস্থান নিতে রাজি হলেও অপর একটি পক্ষ সড়ক ছেড়ে দিতে অস্বীকৃতি জানায়। পরে পুলিশ জলকামান ব্যবহার করে শ্রমিকদের সড়ক থেকে সরিয়ে দেয়। শ্রমিকরা এ সময় বেশ কয়েকটি গাড়ির কাচ ভাঙচুর করেন।
এক শ্রমিক বলেন, ‘চার মাস ধরে বেতন না পেয়ে পরিবার নিয়ে খুব কষ্টে দিন কাটাতে হচ্ছে। বাসা ভাড়া ও দোকান বাকি থাকায় অনেকটাই না খেয়ে দিন পার করছি। অন্য কোথাও চাকরি নিতেও পারছি না। ‘বকেয়া পরিশোধ না করেই গত মাসে কারখানা বন্ধ ঘোষণা করে নোটিশ ঝুলিয়ে দেয় কর্তৃপক্ষ। বিজিএমইএ ও শ্রম মন্ত্রণালয় কারখানা খুলে দেয়ার আশ্বাস দিলেও কার্যকর হয়নি। তাই বাধ্য হয়ে মহাসড়কে এসেছি। বেতন না পাওয়া পর্যন্ত আমাদের অবস্থান কর্মসূচি চলতে থাকবে।’
বাংলাদেশ গার্মেন্টস ও সোয়েটার্স শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের আইন বিষয়ক সম্পাদক খায়রুল মামুন মিন্টু বলেন, ‘জেনারেশন নেক্সট ফ্যাশন কারখানাটি ভারতীয় ও বাংলাদেশি নাগরিক মিলে সাতজন মালিক। কারখানাটিতে প্রায় চার হাজার শ্রমিক রয়েছে। শ্রমিকদের বকেয়া পরিশোধের জন্য বিজিএমইএর সঙ্গে দফায় দফায় মিটিং করেও কোনো সুরাহা হয়নি। ‘এই মালিকদের অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ঠিকই চলছে শুধু এই কারখানার শ্রমিকদের বকেয়া দিচ্ছে না।’
শ্রমিকদের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর আশুলিয়ার ইয়ারপুরে অবস্থিত জেনারেশন নেক্সট ফ্যাশন লিমিটেড কারখানার শীর্ষ কর্মকর্তাদের একটি অংশ ভারতে চলে যান। এরপর আর্থিক সংকট ও রপ্তানি আদেশ কমতে থাকায় সংকটে পড়ে কারখানাটি। অনিয়মিত হয়ে পড়ে বেতন-ভাতা। পরে ১৪ সেপ্টেম্বর কারখানাটি বন্ধ ঘোষণা করে নোটিশ লাগিয়ে দেয় কর্তৃপক্ষ। আশুলিয়া শিল্প পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার মো. সারোয়ার আলম বলেন, ‘কারখানার কয়েকজন উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তার সঙ্গে কথা হচ্ছে। আশা করছি, দ্রুতই সমাধান হয়ে যাবে।’
আশুলিয়া থানার ওসি আবু বকর সিদ্দিক বলেন, সড়ক অবরোধকারী শ্রমিকদের যৌক্তিক দাবির প্রতি সবাই সহানুভূতিশীল। তাদের দাবি পূরণের পদক্ষেপ হিসেবে কারখানার মালিকের বোন, কারখানার ডিএমডিকে আইনের আওতায় এনেছে যৌথ বাহিনী। এছাড়া প্রয়োজনে নিয়মতান্ত্রিকভাবে কারখানার মালামাল ও কারখানা বিক্রি করে বকেয়া আদায়ের ব্যবস্থা করার বিষয়টি শ্রমিকদের জানানো হয়। একটি পক্ষ বিষয়টি মেনে নিলেও অপর একটি পক্ষ সড়ক ছাড়তে অস্বীকৃতি জানায়।
ওসি বলেন, নিরীহ শ্রমিকদের আবেগকে কাজে লাগিয়ে একটি পক্ষ অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে চাইছে। এছাড়া জনদুর্ভোগের বিষয়টি চিন্তা করে একপর্যায়ে জলকামান ব্যবহার করে শ্রমিকদের সড়ক থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। সাভার হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আইয়ুব বলেন, শ্রমিকদের সড়ক থেকে সরিয়ে দেয়ার পর নবীনগর থেকে চন্দ্রাগামী সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে।
বুধবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৪
ঢাকার সাভারের আশুলিয়ার বাইপাইল মোড়ে নবীনগর থেকে চন্দ্রা মহাসড়ক অবরোধ করা শ্রমিকদের সরিয়ে দেয়া হয়েছে। মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে জলকামান দিয়ে পানি ছিটিয়ে মহাসড়ক থেকে শ্রমিকদের সরিয়ে দেন পুলিশ সদস্যরা। এতে প্রায় ৩১ ঘণ্টা পর মহাসড়কটিতে যান চলাচল শুরু হয়। ২১ অক্টেবার সোমবার সকাল ১০টা থেকে জেনারেশন নেক্সট ফ্যাশন লিমিটেড নামের তৈরি পোশাক কারখানা চালু ও বকেয়া বেতনের দাবিতে শ্রমিকরা এ অবরোধ কর্মসূচি শুরু করেছিলেন।
আন্দোলনকারী শ্রমিকরা জানান, এক মাসের বেতন-ভাতা বকেয়া রেখে দুই মাস আগে কারখানাটি বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। এতে টানা তিন মাস ধরে বেতন-ভাতা না পাওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন শ্রমিকরা। এর জেরে বন্ধ কারখানা খুলে দেয়া ও বকেয়া বেতনের দাবিতে সোমবার সকাল ১০টার দিকে শ্রমিকরা আশুলিয়ার বাইপাইল এলাকায় জড়ো হয়ে নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। রাতেও তারা সড়ক অবরোধ কর্মসূচি অব্যাহত রাখেন। মঙ্গলবার সকালে আরও অনেক শ্রমিক আন্দোলনে যোগ দেন। পরে বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে পুলিশ জলকামান দিয়ে পানি ছিটিয়ে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
প্রত্যক্ষদর্শী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, সেনাবাহিনী, বিজিবি, র্যাব, আশুলিয়ার শিল্পাঞ্চল পুলিশ-১ ও আশুলিয়া থানা-পুলিশের সদস্যরা বিভিন্ন সময় বিক্ষোভকারী শ্রমিকদের মহাসড়ক ছেড়ে দেয়ার অনুরোধ জানান। তবে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত শ্রমিকরা সড়ক ছাড়বেন না বলে জানান। এতে নবীনগর থেকে চন্দ্রা মহাসড়কে তীব্র যানজট সৃষ্টি হওয়ায় দুর্ভোগে পড়েন বিভিন্ন পরিবহনের চালক ও যাত্রীরা।
মঙ্গলবার শ্রমিকদের জানানো হয়, কারখানার মালিকের বোন, কারখানার ডিএমডিকে আইনের আওতায় এনেছে যৌথ বাহিনী। এছাড়া বাকিদের আইনের আওতায় এনে প্রয়োজনে কারখানা বিক্রি করে বকেয়া পরিশোধের ব্যবস্থা করা হবে বলে জানানো হয়। এ সময় শ্রমিকদের একটি পক্ষ সড়ক ছেড়ে কারখানার সামনে অবস্থান নিতে রাজি হলেও অপর একটি পক্ষ সড়ক ছেড়ে দিতে অস্বীকৃতি জানায়। পরে পুলিশ জলকামান ব্যবহার করে শ্রমিকদের সড়ক থেকে সরিয়ে দেয়। শ্রমিকরা এ সময় বেশ কয়েকটি গাড়ির কাচ ভাঙচুর করেন।
এক শ্রমিক বলেন, ‘চার মাস ধরে বেতন না পেয়ে পরিবার নিয়ে খুব কষ্টে দিন কাটাতে হচ্ছে। বাসা ভাড়া ও দোকান বাকি থাকায় অনেকটাই না খেয়ে দিন পার করছি। অন্য কোথাও চাকরি নিতেও পারছি না। ‘বকেয়া পরিশোধ না করেই গত মাসে কারখানা বন্ধ ঘোষণা করে নোটিশ ঝুলিয়ে দেয় কর্তৃপক্ষ। বিজিএমইএ ও শ্রম মন্ত্রণালয় কারখানা খুলে দেয়ার আশ্বাস দিলেও কার্যকর হয়নি। তাই বাধ্য হয়ে মহাসড়কে এসেছি। বেতন না পাওয়া পর্যন্ত আমাদের অবস্থান কর্মসূচি চলতে থাকবে।’
বাংলাদেশ গার্মেন্টস ও সোয়েটার্স শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের আইন বিষয়ক সম্পাদক খায়রুল মামুন মিন্টু বলেন, ‘জেনারেশন নেক্সট ফ্যাশন কারখানাটি ভারতীয় ও বাংলাদেশি নাগরিক মিলে সাতজন মালিক। কারখানাটিতে প্রায় চার হাজার শ্রমিক রয়েছে। শ্রমিকদের বকেয়া পরিশোধের জন্য বিজিএমইএর সঙ্গে দফায় দফায় মিটিং করেও কোনো সুরাহা হয়নি। ‘এই মালিকদের অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ঠিকই চলছে শুধু এই কারখানার শ্রমিকদের বকেয়া দিচ্ছে না।’
শ্রমিকদের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর আশুলিয়ার ইয়ারপুরে অবস্থিত জেনারেশন নেক্সট ফ্যাশন লিমিটেড কারখানার শীর্ষ কর্মকর্তাদের একটি অংশ ভারতে চলে যান। এরপর আর্থিক সংকট ও রপ্তানি আদেশ কমতে থাকায় সংকটে পড়ে কারখানাটি। অনিয়মিত হয়ে পড়ে বেতন-ভাতা। পরে ১৪ সেপ্টেম্বর কারখানাটি বন্ধ ঘোষণা করে নোটিশ লাগিয়ে দেয় কর্তৃপক্ষ। আশুলিয়া শিল্প পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার মো. সারোয়ার আলম বলেন, ‘কারখানার কয়েকজন উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তার সঙ্গে কথা হচ্ছে। আশা করছি, দ্রুতই সমাধান হয়ে যাবে।’
আশুলিয়া থানার ওসি আবু বকর সিদ্দিক বলেন, সড়ক অবরোধকারী শ্রমিকদের যৌক্তিক দাবির প্রতি সবাই সহানুভূতিশীল। তাদের দাবি পূরণের পদক্ষেপ হিসেবে কারখানার মালিকের বোন, কারখানার ডিএমডিকে আইনের আওতায় এনেছে যৌথ বাহিনী। এছাড়া প্রয়োজনে নিয়মতান্ত্রিকভাবে কারখানার মালামাল ও কারখানা বিক্রি করে বকেয়া আদায়ের ব্যবস্থা করার বিষয়টি শ্রমিকদের জানানো হয়। একটি পক্ষ বিষয়টি মেনে নিলেও অপর একটি পক্ষ সড়ক ছাড়তে অস্বীকৃতি জানায়।
ওসি বলেন, নিরীহ শ্রমিকদের আবেগকে কাজে লাগিয়ে একটি পক্ষ অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে চাইছে। এছাড়া জনদুর্ভোগের বিষয়টি চিন্তা করে একপর্যায়ে জলকামান ব্যবহার করে শ্রমিকদের সড়ক থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। সাভার হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আইয়ুব বলেন, শ্রমিকদের সড়ক থেকে সরিয়ে দেয়ার পর নবীনগর থেকে চন্দ্রাগামী সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে।