সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে কক্সবাজারের রামু বৌদ্ধবিহার ও পল্লীতে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের পরিচয় ১২ বছরেও মেলেনি। দীর্ঘ ১ যুগ ধরে ১৮টি মামলার একটিরও বিচার কাজ শেষ হয়নি। বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের লোকজন সাক্ষ্য দিতে না আসা এবং মামলার তদন্তে ত্রুটি থাকার কারণে বিচার কাজে দেরি হচ্ছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
এসময় ১৩টি বৌদ্ধ বিহার ও ৩০টি বসতবাড়ি ভাঙচুর এবং লুটপাট করা হয়। এ ঘটনায় রামু, উখিয়া ও টেকনাফে ১৯টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে রামু থানায় আটটি, উখিয়ায় সাতটি, টেকনাফে দুটি ও কক্সবাজার সদর থানায় দুটি মামলা রেকর্ড হয়। তবে সাক্ষীর অভাবে এখনও এসব মামলার বিচার কাজ শেষ হয়নি। এর মধ্যে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের এক ব্যক্তি একটি মামলা প্রত্যাহার করে নেন। বাকি ১৮টি মামলার বাদী পুলিশ।
হামলার ঘটনায় ৩৭৫ জনকে এজাহারভুক্ত এবং ১৫ থেকে ১৬ হাজার জনকে অজ্ঞাত আসামি করে ১৮টি মামলা দায়ের করেছিল পুলিশ। পরবর্তীতে এসব মামলায় এক হাজারের বেশিজনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দেয়। কিন্তু ১২ বছরেও একটি মামলার বিচার কাজ শেষ হয়নি।
বিচার কাজ শেষ না হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সাবেক পাবলিক প্রসিকিউটর ফরিদুল আলম বলেন, ওই ঘটনায় মামলা হয়েছিল ১৯টি। এর মধ্যে পুলিশ বাদী হয়ে ১৮টি মামলা দায়ের করেছে। বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের এক ব্যক্তি বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করলেও পরে বিবাদীদের সঙ্গে আপোষ করে প্রত্যাহার করে নেন। অপর ১৮টি মামলার সাক্ষী না পাওয়ায় বিচার নিয়ে দীর্ঘসূত্রতা সৃষ্টি হয়। সাক্ষীরা আদালতে এসে সাক্ষ্য দিতে রাজি হচ্ছেন না। ফলে বিচার কাজ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের নেতারাও সাক্ষ্য দিতে আদালতে হাজির হওয়ার ক্ষেত্রে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। এসব কারণে বিচারর কাজ শেষ হচ্ছে না।
এদিকে, বিচার শেষ না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের নেতারা। তারা বলেছেন, বিচারের নামে নিরপরাধ কোনও ব্যক্তিকে যেনো হয়রানি করা না হয়। তারা শান্তি ও সম্প্রীতিতে বসবাস করতে চান।
রামু কেন্দ্রীয় সীমা বিহারের অধ্যক্ষ শীল প্রিয় মহাথের বলেন, ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে ২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা থেকে রামুতে মিটিং-মিছিল হয়েছিল। ওই সময়ে ছবি-ভিডিওতে অনেক ব্যক্তিকে চেনা গেছে। তাদের ইন্ধনে হামলা হয়েছিল। কিন্তু মামলার পর চিহ্নিত অনেক ব্যক্তি বাদ পড়েছেন। পাশাপাশি নিরপরাধ অনেকে হয়রানির শিকার হয়েছেন। বৌদ্ধ ধর্ম শান্তির কথা বলে। আমরা শান্তি চাই। শান্তি ও সম্প্রীতির সঙ্গে এখানে বসবাস করতে চাই।
রামুর কেন্দ্রীয় সীমা বিহারের অধ্যক্ষ প্রজ্ঞানন্দ মহাথেরো বলেন, রামুর ধর্মীয় সম্প্রীতি শত বছরের। এই সম্প্রীতিতে যারা আঘাত হেনেছিল তারা সফল হয়নি। যে ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছিল, ১২ বছরে আমরা সবাই মিলে তা অনেকটাই কাটিয়ে উঠেছি। তবে দুঃখের বিষয় হলো, এ হামলার ১২ বছরেও জড়িতদের পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি।
আমাদের রামু প্রতিনিধি কায়ূম উদ্দিন জানান, দিনটি উপলক্ষে আজকে দিনব্যাপী রামু কেন্দ্রীয় সীমা বিহারসহ বিভিন্ন বৌদ্ধ মন্দিরে মৈত্রী ও শান্তি শোভাযাত্রা, আলোচনা সভা, সংঘদান, অষ্ট পরিষ্কার দান, ধর্ম সভায় দেশ-জাতির মঙ্গল ও সমৃদ্ধি এবং জগতের সব প্রাণীর সুখ-শান্তি কামনায় সমবেত প্রার্থনা করা হবে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় সীমা বিহারের সহকারী পরিচালক ও কেন্দ্রীয় বৌদ্ধ সুরক্ষা পরিষদের সভাপতি উপাধ্যক্ষ প্রজ্ঞানন্দ ভিক্ষু।
সেই যুবকের খোঁজ নেই : রামু উপজেলার ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের হাইটুপি গ্রামের উত্তম বড়ুয়ার ফেসবুক থেকে পবিত্র কোরআন অবমাননার অভিযোগ তুলে বৌদ্ধবিহার ও পল্লিতে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। ১২ বছর পার হলেও উত্তম কোথায় আছেন তা পরিবার বা এলাকাবাসী কেউ জানেন না। উত্তমের বাবা সুদত্ত বড়ুয়া ও মা মাধু বড়ুয়া বলেন, ঘটনার পর থেকে উত্তম কোথায় আছেন তা তাঁরা জানেন না। অপেক্ষায় আছেন ছেলে একদিন ফিরে আসবেন। উত্তমের স্ত্রী রিতা বড়ুয়া ও ছেলে আদিত্য বড়ুয়াও তাঁর ফেরার অপেক্ষায়।
রোববার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে কক্সবাজারের রামু বৌদ্ধবিহার ও পল্লীতে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের পরিচয় ১২ বছরেও মেলেনি। দীর্ঘ ১ যুগ ধরে ১৮টি মামলার একটিরও বিচার কাজ শেষ হয়নি। বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের লোকজন সাক্ষ্য দিতে না আসা এবং মামলার তদন্তে ত্রুটি থাকার কারণে বিচার কাজে দেরি হচ্ছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
এসময় ১৩টি বৌদ্ধ বিহার ও ৩০টি বসতবাড়ি ভাঙচুর এবং লুটপাট করা হয়। এ ঘটনায় রামু, উখিয়া ও টেকনাফে ১৯টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে রামু থানায় আটটি, উখিয়ায় সাতটি, টেকনাফে দুটি ও কক্সবাজার সদর থানায় দুটি মামলা রেকর্ড হয়। তবে সাক্ষীর অভাবে এখনও এসব মামলার বিচার কাজ শেষ হয়নি। এর মধ্যে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের এক ব্যক্তি একটি মামলা প্রত্যাহার করে নেন। বাকি ১৮টি মামলার বাদী পুলিশ।
হামলার ঘটনায় ৩৭৫ জনকে এজাহারভুক্ত এবং ১৫ থেকে ১৬ হাজার জনকে অজ্ঞাত আসামি করে ১৮টি মামলা দায়ের করেছিল পুলিশ। পরবর্তীতে এসব মামলায় এক হাজারের বেশিজনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দেয়। কিন্তু ১২ বছরেও একটি মামলার বিচার কাজ শেষ হয়নি।
বিচার কাজ শেষ না হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সাবেক পাবলিক প্রসিকিউটর ফরিদুল আলম বলেন, ওই ঘটনায় মামলা হয়েছিল ১৯টি। এর মধ্যে পুলিশ বাদী হয়ে ১৮টি মামলা দায়ের করেছে। বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের এক ব্যক্তি বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করলেও পরে বিবাদীদের সঙ্গে আপোষ করে প্রত্যাহার করে নেন। অপর ১৮টি মামলার সাক্ষী না পাওয়ায় বিচার নিয়ে দীর্ঘসূত্রতা সৃষ্টি হয়। সাক্ষীরা আদালতে এসে সাক্ষ্য দিতে রাজি হচ্ছেন না। ফলে বিচার কাজ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের নেতারাও সাক্ষ্য দিতে আদালতে হাজির হওয়ার ক্ষেত্রে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। এসব কারণে বিচারর কাজ শেষ হচ্ছে না।
এদিকে, বিচার শেষ না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের নেতারা। তারা বলেছেন, বিচারের নামে নিরপরাধ কোনও ব্যক্তিকে যেনো হয়রানি করা না হয়। তারা শান্তি ও সম্প্রীতিতে বসবাস করতে চান।
রামু কেন্দ্রীয় সীমা বিহারের অধ্যক্ষ শীল প্রিয় মহাথের বলেন, ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে ২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা থেকে রামুতে মিটিং-মিছিল হয়েছিল। ওই সময়ে ছবি-ভিডিওতে অনেক ব্যক্তিকে চেনা গেছে। তাদের ইন্ধনে হামলা হয়েছিল। কিন্তু মামলার পর চিহ্নিত অনেক ব্যক্তি বাদ পড়েছেন। পাশাপাশি নিরপরাধ অনেকে হয়রানির শিকার হয়েছেন। বৌদ্ধ ধর্ম শান্তির কথা বলে। আমরা শান্তি চাই। শান্তি ও সম্প্রীতির সঙ্গে এখানে বসবাস করতে চাই।
রামুর কেন্দ্রীয় সীমা বিহারের অধ্যক্ষ প্রজ্ঞানন্দ মহাথেরো বলেন, রামুর ধর্মীয় সম্প্রীতি শত বছরের। এই সম্প্রীতিতে যারা আঘাত হেনেছিল তারা সফল হয়নি। যে ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছিল, ১২ বছরে আমরা সবাই মিলে তা অনেকটাই কাটিয়ে উঠেছি। তবে দুঃখের বিষয় হলো, এ হামলার ১২ বছরেও জড়িতদের পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি।
আমাদের রামু প্রতিনিধি কায়ূম উদ্দিন জানান, দিনটি উপলক্ষে আজকে দিনব্যাপী রামু কেন্দ্রীয় সীমা বিহারসহ বিভিন্ন বৌদ্ধ মন্দিরে মৈত্রী ও শান্তি শোভাযাত্রা, আলোচনা সভা, সংঘদান, অষ্ট পরিষ্কার দান, ধর্ম সভায় দেশ-জাতির মঙ্গল ও সমৃদ্ধি এবং জগতের সব প্রাণীর সুখ-শান্তি কামনায় সমবেত প্রার্থনা করা হবে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় সীমা বিহারের সহকারী পরিচালক ও কেন্দ্রীয় বৌদ্ধ সুরক্ষা পরিষদের সভাপতি উপাধ্যক্ষ প্রজ্ঞানন্দ ভিক্ষু।
সেই যুবকের খোঁজ নেই : রামু উপজেলার ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের হাইটুপি গ্রামের উত্তম বড়ুয়ার ফেসবুক থেকে পবিত্র কোরআন অবমাননার অভিযোগ তুলে বৌদ্ধবিহার ও পল্লিতে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। ১২ বছর পার হলেও উত্তম কোথায় আছেন তা পরিবার বা এলাকাবাসী কেউ জানেন না। উত্তমের বাবা সুদত্ত বড়ুয়া ও মা মাধু বড়ুয়া বলেন, ঘটনার পর থেকে উত্তম কোথায় আছেন তা তাঁরা জানেন না। অপেক্ষায় আছেন ছেলে একদিন ফিরে আসবেন। উত্তমের স্ত্রী রিতা বড়ুয়া ও ছেলে আদিত্য বড়ুয়াও তাঁর ফেরার অপেক্ষায়।