alt

জাতীয়

রাষ্ট্রপতির থাকা না থাকা : রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : শুক্রবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৪

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগ দাবিতে ছাত্র বিক্ষোভে উদ্ভুত পরিস্থিতিতে বঙ্গভবনের নিরাপত্তায় ‘কংক্রিট’ ব্লক বসানো হয়েছে-সংবাদ

রাষ্ট্রপতি পদে মো. সাহাবুদ্দিনের থাকা বা না থাকার বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেবে অন্তর্বর্তী সরকার।

বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এ সিন্ধান্ত হয়েছে। বৈঠক শেষে অন্তর্বর্তী সরকারের বন, পরিবেশ ও জলবায়ুবিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান সাংবাদিকদের এ কথা জানান।

রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের প্রশ্নে সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে জানিয়ে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘এ মুহূর্তে রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের যে দাবিটা উঠেছে এটা নিয়ে আমরা কীভাবে ডিল করব? আমরা বলছি এটি একটি রাজনৈতিক বিষয়। যেহেতু দাবিটা জনগণের থেকে এসেছে; আর এটা আমাদের সরকারটা গণঅভ্যুত্থানের ফসল হিসেবে এসেছে। কাজেই সংবিধানের প্রত্যেকটি বিষয় আক্ষরিত অর্থে মানা সম্ভব হবে কি না, রাজনৈতিক ঐকমত্য হলে সেটা মানতে সেখানে ব্যারিয়ার বিষয়গুলো আমাদের ইজি হয়ে যায় কিনা আমাদের কথা হয়েছে। এটা যেহেতু রাজনৈতিক আলোচনা। এটাকে আমরা লিগ্যাল বা কনস্টিটিউশনাল ইস্যু হিসাবে দেখছি না।’

রাষ্ট্রপতির বিষয়ে সিন্ধান্ত আসতে কতদিন লাগতে পারে জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, ‘এ সিদ্ধান্ত নিতে সময়টা আসলে এ রকম করে বলা যায় না। এখন রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর নির্ভর করবে। তারা কোন অবস্থানে যাবে, তাদের সঙ্গে আমাদের কী কথা হয়, তাদের আশঙ্কার জায়গা কোথায়, সে আশঙ্কাগুলো বাস্তবসম্মত কিনা।’

দ্রƒতসময়ের মধ্যে এ বিষয়ে সিন্ধান্ত আসতে পারে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এটা খুব তাড়াহুড়োর মধ্যে আমরা আছি তাও না; আবার বিলম্বিত করাও যাচ্ছে না। কারণ একটা পথে দীর্ঘদিন ধরে একটা অনিশ্চয়তা কেউ আশা করবে না। বিশেষ করে যেখানে গণদাবি উঠছে সেখানে বিষয়টিতে বিলম্বিত করার হয়তো সুযোগ নেই। কতদিন এটা বলা যায় না।’

বর্তমানে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি বিরাজ করছে মন্তব্য করে উপদেষ্টা রিজওয়ানা বলেন, ‘আমরা তো একটা স্বাভাবিক পরিবেশে নেই; একটা অস্বাভাবিক পরিবেশে আছি। এখন সব কিছু সংবিধান মেনে করতে হবে সেটা সম্ভব হবে কি না, এটা আমাদের ভাবতে হচ্ছে।’

রাষ্ট্রপতিকে অভিসংশন বা অপসারণের জন্য সংসদের দুই তৃতীয়াংশ সদস্যের সমর্থন প্রয়োজন। কিন্তু বর্তমানে সংসদ নেই; তা ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে। ফলে এই পথ আর খোলা নেই।

আইনজীবীরা জানিয়েছেন, দেশে কেবল যুদ্ধাবস্থা তৈরি হলে রাষ্ট্রপতি ভেঙ্গে দেয়া সংসদ রাষ্ট্রপতি ফেরাতে পারেন। আবার এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের মতামত চাওয়ারও সুযোগ নেই। কারণ, সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি নিজেই এই ব্যাখ্যা চাইবেন, যখন আইনে অস্পষ্টতা তৈরি হয়।

এসব বিষয় সামনে আসার পর বঙ্গভবনে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে, পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবির উপস্থিতি। পাশাপাশি মোতায়েন হয়েছে বাড়তি সেনা সদস্য, বসানো হয়েছে কয়েক ধাপের ব্যারিকেড।

রাষ্ট্রপতি ইস্যুতে সরকার চাপে রয়েছে জানিয়ে উপদেষ্টা রিজওয়ানা আরও বলেন, ‘সরকারের তো পুরোটাই চাপ। আপনি যদি চিস্তা করেন যে, আমাকে এখন বাজেট ম্যানেজ করা, আমাদের ইকোনমি রান করা, বহুমুখী আন্দোলন। কেউ এত বছর অনেকে কথা বলতে পারেননি। সব বিষয়ে আমাদের সবার কথা শুনতে হয়। কজেই সরকার পরিচালনার অনেকটাই চাপ-এটা অস্বীকার করা যায় না। কিন্তু এটাতে অস্বস্তিতে থাকার তো কিছু নেই।’

এর সমাধান হবে মন্তব্য করে রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘সমাধানটা যেহেতু আমরা বলছি-ঐকমত্যের ভিত্তিতে হবে। কাজেই রাজনৈতিক প্রক্রিয়া হিসেবে দেখছি। কাজেই এখানে অস্বস্তিতে ভোগার কিছু নেই।’

রাষ্ট্রপতিকে নিয়ে দেশজুড়ে নানা আলোচনার মধ্যে ২৩ অক্টোবর বুধবার বিএনপির শীর্ষপর্যায়ের তিনজন নেতা প্রধান উপদেষ্টা ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাদের অবস্থান জানিয়েছেন। বিএনপি এ মুহূর্তে রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ চায় না। রাষ্ট্রপতি পদে শূন্যতা হলে দেশে সাংবিধানিক ও রাজনৈতিক সংকট তৈরি হবে বলে বিএনপি মনে করছে।

রাষ্ট্রপতির বিষয়ে বৃহস্পতিবারই প্রথম সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে আলোচনা হয়েছে। একাধিক উপদেষ্টা জানিয়েছেন, রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের ব্যাপারে ছাত্রদের দাবি রয়েছে। অন্যদিকে কোনো কোনো রাজনৈতিক দল বলছে, রাষ্ট্রপতি পদত্যাগ করলে সাংবিধানিক সংকট সৃষ্টি হবে এবং সেটা তারা চায় না। সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করেই রাষ্ট্রপতির বিষয়ে সমাধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, একটি পক্ষ মো. সাহাবুদ্দিনকে সরিয়ে রাষ্ট্রপতি পদে নতুন কাউকে বসাতে নানা রকম তৎপরতা চালাচ্ছে। তারা মুহাম্মদ ইউনূসকে রাষ্ট্রপতি পদে আনতে চাইছে; পাশাপাশি সরকারের পক্ষ থেকে বিকল্প ব্যক্তিরও সন্ধান করা হয়। এমনকি প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদকে রাষ্ট্রপতি হওয়ার প্রস্তাব দেয়া হলে তিনি রাজি হননি বলে খবর বেরিয়েছে। এ ছাড়া রাষ্ট্রপতির পদের জন্য একাধিক গ্রহণযোগ্য সাবেক প্রধান বিচারপতির নাম নিয়েও রাজনৈতিক মহলে আলোচনা রয়েছে।

সরকারের অন্য একটি সূত্র জানিয়েছে, সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা সফরে রয়েছে। আজ তার দেশে ফেরার কথা রয়েছে। তিনি দেশে ফেরার পর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে রাষ্ট্রপতির বিষয়ে আবারও আলোচনা হতে পারে।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশত্যাগ করে ভারতে চলে যাওয়ার পর রাতে জাতির উদ্দেশে ভাষণে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, তিনি (শেখ হাসিনার) পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছেন। এরপর ৮ আগস্ট মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার তার কাছেই শপথ নেয়।

রাষ্ট্রপতিকে নিয়ে নতুন আলোচনা শুরু হয় গত ১৯ অক্টোবর মানবজমিন পত্রিকার রাজনৈতিক ম্যাগাজিন ‘জনতার চোখ’ এর প্রচ্ছদ প্রতিবেদন ‘উনি তো কিছুই বলে গেলেন না...’ শিরোনামে সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীর একটি লেখা প্রকাশ হওয়ার পর।

সেখানে মানবজমিন সম্পাদকের সঙ্গে আলাপচারিতায় রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, ‘আমি শুনেছি তিনি পদত্যাগ করেছেন। কিন্তু আমার কাছে কোনো দালিলিক প্রমাণ নেই। বহু চেষ্টা করেও আমি ব্যর্থ হয়েছি। তিনি হয়তো সময় পাননি।’

রাষ্ট্রপতির সেই মন্তব্যকে ঘিরে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ রাষ্ট্রপতিকে অপসারণের দাবি তুলে গত মঙ্গলবার ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ করে। ‘ইনকিলাব মঞ্চ’ নামের একটি সংগঠনের ব্যানারে গত মঙ্গলবার রাতে বঙ্গভবনের সামনেও বিক্ষোভ হয়।

এর আগে গত সোমবার আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘রাষ্ট্রপতি যে বলেছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র পাননি, এটা হচ্ছে মিথ্যাচার এবং এটা হচ্ছে ওনার শপথ লঙ্ঘনের শামিল। কারণ তিনি নিজেই ৫ আগস্ট রাত ১১টা ২০ মিনিটে পেছনে তিন বাহিনীর প্রধানকে নিয়ে জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে বলেছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ওনার কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন এবং উনি তা গ্রহণ করেছেন।’

ছবি

দানা ‘আসছে না’ ঝরছে বৃষ্টি, জলোচ্ছ্বাসের আভাস উপকূলে

সন্ত্রাসবিরোধী আইনে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ, যে কারণ বলা হলো প্রজ্ঞাপনে

সরকারি নিয়োগে বয়স বাড়লো ২ বছর তিনবারের বেশি বিসিএস নয়

ছবি

ছাত্র-গণ আন্দোলনে জড়িতদের গ্রেপ্তার এবং দ্রুত বিচারের আশ্বাস সরকারের

ছবি

সরকারি চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫ না করার সিদ্ধান্তে আন্দোলন

ছবি

সাংবিধানিক পথে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন: আসিফ নজরুলের ব্যাখ্যা

ছবি

ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ: সন্ত্রাসী কার্যক্রমে জড়িত থাকার অভিযোগে সরকারের কঠোর পদক্ষেপ

ছবি

এসবি’র নতুন প্রধান খোন্দকার রফিকুল, পুলিশে ব্যাপক রদবদল

ছবি

গণমাধ্যমকে হুমকি ও ঘেরাওয়ের ঘোষণায় সরকারের কঠোর অবস্থান

ছবি

রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে: রিজওয়ানা

গণ–অভ্যুত্থান ঘিরে সহিংসতায় ৯৮৬ জনের মৃত্যু

১ টাকা ৩০ পয়সায় ঢাকায় আসবে কৃষিপণ্য, রাজশাহী থেকে কৃষিপণ্য স্পেশাল ট্রেন আগামী শনিবার থেকে চালু

ছবি

একজন চাকরিপ্রত্যাশী সর্বোচ্চ তিন বার বসতে পারবে বিসিএস পরীক্ষায়, উপদেষ্টা পরিষদে সিদ্ধান্ত

ছবি

খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ৪২ জনকে পুড়িয়ে মারার মামলা খারিজ

ছবি

ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’: ১৪ জেলায় জলোচ্ছ্বাসের সম্ভাবনা

ছবি

সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২ বছর অনুমোদন

ছবি

ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’ : ঢাকা থেকে ৫ রুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ

ছবি

শেখ হাসিনার পরিবারসহ অন্যদের বরাদ্দ প্লট বাতিলে হাইকোর্টের রুল

ছবি

সাবেক সিনিয়র সচিব মোস্তাফা কামাল গ্রেপ্তার

ছবি

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফেরাতে তিন আবেদনের শুনানি ১৭ নভেম্বর

ছবি

প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেওয়া দানা’র প্রভাবে উপকূলে অতি ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস

ছবি

গণ–অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের রাজনীতি করার অধিকার নেই: নাহিদ ইসলাম

৮ বছরের সাজা থেকে খালাস পেলেন বাবর

ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি

ছবি

বঙ্গভবন এলাকা থমথমে, কড়া নিরাপত্তা

রাষ্ট্রপতির ভবিষ্যৎ, সিদ্ধান্ত সাংবিধানিক না রাজনৈতিক

ছবি

বাংলাদেশের জলবায়ু সহনশীলতা বৃদ্ধিতে ১৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অনুদান দিচ্ছে ইউএসএআইডি

ছবি

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বিচারিক প্রক্রিয়া নিয়ে আইন সংশোধনের আহ্বান হিউম্যান রাইটস ওয়াচের

ছবি

ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আনন্দ মিছিল

ছবি

ছাত্রলীগ ‘নিষিদ্ধ ’, প্রজ্ঞাপন জারি করল সরকার

ছবি

ডেঙ্গু: অক্টোবরের ২৩ দিনেই মৃত্যু শতাধিক

ছবি

সাবেক নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ আটক

ছবি

বিটিআরসির নতুন কমিশনার ইকবাল আহমেদ

ছবি

ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’ আসছে, দেশের চার বন্দরে ৩ নম্বর সংকেত

ছবি

এইচএসসির ফল বাতিলের দাবিতে সচিবালয়ে ঢুকে বিক্ষোভ: নিরাপত্তা বাহিনীর লাঠিপেটা, গ্রেপ্তার ৫৪

ছবি

রাষ্ট্রপতি ইস্যুতে আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত আসবে: উপদেষ্টা নাহিদ

tab

জাতীয়

রাষ্ট্রপতির থাকা না থাকা : রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগ দাবিতে ছাত্র বিক্ষোভে উদ্ভুত পরিস্থিতিতে বঙ্গভবনের নিরাপত্তায় ‘কংক্রিট’ ব্লক বসানো হয়েছে-সংবাদ

শুক্রবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৪

রাষ্ট্রপতি পদে মো. সাহাবুদ্দিনের থাকা বা না থাকার বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেবে অন্তর্বর্তী সরকার।

বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এ সিন্ধান্ত হয়েছে। বৈঠক শেষে অন্তর্বর্তী সরকারের বন, পরিবেশ ও জলবায়ুবিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান সাংবাদিকদের এ কথা জানান।

রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের প্রশ্নে সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে জানিয়ে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘এ মুহূর্তে রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের যে দাবিটা উঠেছে এটা নিয়ে আমরা কীভাবে ডিল করব? আমরা বলছি এটি একটি রাজনৈতিক বিষয়। যেহেতু দাবিটা জনগণের থেকে এসেছে; আর এটা আমাদের সরকারটা গণঅভ্যুত্থানের ফসল হিসেবে এসেছে। কাজেই সংবিধানের প্রত্যেকটি বিষয় আক্ষরিত অর্থে মানা সম্ভব হবে কি না, রাজনৈতিক ঐকমত্য হলে সেটা মানতে সেখানে ব্যারিয়ার বিষয়গুলো আমাদের ইজি হয়ে যায় কিনা আমাদের কথা হয়েছে। এটা যেহেতু রাজনৈতিক আলোচনা। এটাকে আমরা লিগ্যাল বা কনস্টিটিউশনাল ইস্যু হিসাবে দেখছি না।’

রাষ্ট্রপতির বিষয়ে সিন্ধান্ত আসতে কতদিন লাগতে পারে জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, ‘এ সিদ্ধান্ত নিতে সময়টা আসলে এ রকম করে বলা যায় না। এখন রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর নির্ভর করবে। তারা কোন অবস্থানে যাবে, তাদের সঙ্গে আমাদের কী কথা হয়, তাদের আশঙ্কার জায়গা কোথায়, সে আশঙ্কাগুলো বাস্তবসম্মত কিনা।’

দ্রƒতসময়ের মধ্যে এ বিষয়ে সিন্ধান্ত আসতে পারে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এটা খুব তাড়াহুড়োর মধ্যে আমরা আছি তাও না; আবার বিলম্বিত করাও যাচ্ছে না। কারণ একটা পথে দীর্ঘদিন ধরে একটা অনিশ্চয়তা কেউ আশা করবে না। বিশেষ করে যেখানে গণদাবি উঠছে সেখানে বিষয়টিতে বিলম্বিত করার হয়তো সুযোগ নেই। কতদিন এটা বলা যায় না।’

বর্তমানে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি বিরাজ করছে মন্তব্য করে উপদেষ্টা রিজওয়ানা বলেন, ‘আমরা তো একটা স্বাভাবিক পরিবেশে নেই; একটা অস্বাভাবিক পরিবেশে আছি। এখন সব কিছু সংবিধান মেনে করতে হবে সেটা সম্ভব হবে কি না, এটা আমাদের ভাবতে হচ্ছে।’

রাষ্ট্রপতিকে অভিসংশন বা অপসারণের জন্য সংসদের দুই তৃতীয়াংশ সদস্যের সমর্থন প্রয়োজন। কিন্তু বর্তমানে সংসদ নেই; তা ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে। ফলে এই পথ আর খোলা নেই।

আইনজীবীরা জানিয়েছেন, দেশে কেবল যুদ্ধাবস্থা তৈরি হলে রাষ্ট্রপতি ভেঙ্গে দেয়া সংসদ রাষ্ট্রপতি ফেরাতে পারেন। আবার এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের মতামত চাওয়ারও সুযোগ নেই। কারণ, সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি নিজেই এই ব্যাখ্যা চাইবেন, যখন আইনে অস্পষ্টতা তৈরি হয়।

এসব বিষয় সামনে আসার পর বঙ্গভবনে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে, পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবির উপস্থিতি। পাশাপাশি মোতায়েন হয়েছে বাড়তি সেনা সদস্য, বসানো হয়েছে কয়েক ধাপের ব্যারিকেড।

রাষ্ট্রপতি ইস্যুতে সরকার চাপে রয়েছে জানিয়ে উপদেষ্টা রিজওয়ানা আরও বলেন, ‘সরকারের তো পুরোটাই চাপ। আপনি যদি চিস্তা করেন যে, আমাকে এখন বাজেট ম্যানেজ করা, আমাদের ইকোনমি রান করা, বহুমুখী আন্দোলন। কেউ এত বছর অনেকে কথা বলতে পারেননি। সব বিষয়ে আমাদের সবার কথা শুনতে হয়। কজেই সরকার পরিচালনার অনেকটাই চাপ-এটা অস্বীকার করা যায় না। কিন্তু এটাতে অস্বস্তিতে থাকার তো কিছু নেই।’

এর সমাধান হবে মন্তব্য করে রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘সমাধানটা যেহেতু আমরা বলছি-ঐকমত্যের ভিত্তিতে হবে। কাজেই রাজনৈতিক প্রক্রিয়া হিসেবে দেখছি। কাজেই এখানে অস্বস্তিতে ভোগার কিছু নেই।’

রাষ্ট্রপতিকে নিয়ে দেশজুড়ে নানা আলোচনার মধ্যে ২৩ অক্টোবর বুধবার বিএনপির শীর্ষপর্যায়ের তিনজন নেতা প্রধান উপদেষ্টা ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাদের অবস্থান জানিয়েছেন। বিএনপি এ মুহূর্তে রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ চায় না। রাষ্ট্রপতি পদে শূন্যতা হলে দেশে সাংবিধানিক ও রাজনৈতিক সংকট তৈরি হবে বলে বিএনপি মনে করছে।

রাষ্ট্রপতির বিষয়ে বৃহস্পতিবারই প্রথম সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে আলোচনা হয়েছে। একাধিক উপদেষ্টা জানিয়েছেন, রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের ব্যাপারে ছাত্রদের দাবি রয়েছে। অন্যদিকে কোনো কোনো রাজনৈতিক দল বলছে, রাষ্ট্রপতি পদত্যাগ করলে সাংবিধানিক সংকট সৃষ্টি হবে এবং সেটা তারা চায় না। সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করেই রাষ্ট্রপতির বিষয়ে সমাধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, একটি পক্ষ মো. সাহাবুদ্দিনকে সরিয়ে রাষ্ট্রপতি পদে নতুন কাউকে বসাতে নানা রকম তৎপরতা চালাচ্ছে। তারা মুহাম্মদ ইউনূসকে রাষ্ট্রপতি পদে আনতে চাইছে; পাশাপাশি সরকারের পক্ষ থেকে বিকল্প ব্যক্তিরও সন্ধান করা হয়। এমনকি প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদকে রাষ্ট্রপতি হওয়ার প্রস্তাব দেয়া হলে তিনি রাজি হননি বলে খবর বেরিয়েছে। এ ছাড়া রাষ্ট্রপতির পদের জন্য একাধিক গ্রহণযোগ্য সাবেক প্রধান বিচারপতির নাম নিয়েও রাজনৈতিক মহলে আলোচনা রয়েছে।

সরকারের অন্য একটি সূত্র জানিয়েছে, সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা সফরে রয়েছে। আজ তার দেশে ফেরার কথা রয়েছে। তিনি দেশে ফেরার পর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে রাষ্ট্রপতির বিষয়ে আবারও আলোচনা হতে পারে।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশত্যাগ করে ভারতে চলে যাওয়ার পর রাতে জাতির উদ্দেশে ভাষণে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, তিনি (শেখ হাসিনার) পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছেন। এরপর ৮ আগস্ট মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার তার কাছেই শপথ নেয়।

রাষ্ট্রপতিকে নিয়ে নতুন আলোচনা শুরু হয় গত ১৯ অক্টোবর মানবজমিন পত্রিকার রাজনৈতিক ম্যাগাজিন ‘জনতার চোখ’ এর প্রচ্ছদ প্রতিবেদন ‘উনি তো কিছুই বলে গেলেন না...’ শিরোনামে সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীর একটি লেখা প্রকাশ হওয়ার পর।

সেখানে মানবজমিন সম্পাদকের সঙ্গে আলাপচারিতায় রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, ‘আমি শুনেছি তিনি পদত্যাগ করেছেন। কিন্তু আমার কাছে কোনো দালিলিক প্রমাণ নেই। বহু চেষ্টা করেও আমি ব্যর্থ হয়েছি। তিনি হয়তো সময় পাননি।’

রাষ্ট্রপতির সেই মন্তব্যকে ঘিরে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ রাষ্ট্রপতিকে অপসারণের দাবি তুলে গত মঙ্গলবার ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ করে। ‘ইনকিলাব মঞ্চ’ নামের একটি সংগঠনের ব্যানারে গত মঙ্গলবার রাতে বঙ্গভবনের সামনেও বিক্ষোভ হয়।

এর আগে গত সোমবার আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘রাষ্ট্রপতি যে বলেছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র পাননি, এটা হচ্ছে মিথ্যাচার এবং এটা হচ্ছে ওনার শপথ লঙ্ঘনের শামিল। কারণ তিনি নিজেই ৫ আগস্ট রাত ১১টা ২০ মিনিটে পেছনে তিন বাহিনীর প্রধানকে নিয়ে জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে বলেছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ওনার কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন এবং উনি তা গ্রহণ করেছেন।’

back to top