ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমাতে গত জুলাই-আগস্টের ‘গণহত্যার’ মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে তদন্ত শেষ করতে দুই মাস সময় দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজার নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল এই সময় বেঁধে দিয়ে আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছে। ট্রাইব্যুনালের অন্য সদস্যরা হলেন, বিচারপতি শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গণহত্যা এবং গুম সংক্রান্ত যে অপরাধ, সেগুলো মিলিয়ে তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করতে হবে। সেই ব্যাপারে আমরা সময় চেয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আদালত দুইমাস সময় দিয়েছে। আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারি এই মামলার পরবর্তী তারিখ ধার্য থাকে। আমরা চেষ্টা করব, এরমধ্যে যাতে একটা অগ্রগতি প্রতিবেদন অথবা সম্ভব হলে তদন্ত প্রতিবেদন যাতে আমাদের তদন্ত দল দিতে পারে, তারজন্য আমরা দিনরাত কাজ করব। আমরা সচেষ্ট আছি।’
শেখ হাসিনা বিগত ১৬ বছর ‘গোপন কারাগারের নিউক্লিয়াস’ ছিলেন মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘গুম কমিশনের তদন্ত প্রতিবেদন ধরে সব অপরাধের যে তথ্য-উপাত্ত পেয়েছি, সেগুলোর ব্যাপারেও ট্রাইব্যুনাল অপরাধ তদন্তের জন্য আমলে নিয়েছে। এ ব্যাপারেও আমরা রিপোর্ট দেব।’
চিফ প্রসিকিউটর বলেন, ‘একইভাবে (বিগত সরকারের) মন্ত্রী পরিষদের সদস্য যারা আছেন, ওবায়দুল কাদেরসহ বাকিদের ব্যাপারে, যারা গ্রেপ্তার আছেন, আবদুর রাজ্জাক, যিনি আগের দিন পর্যন্ত এখানে ওয়ারেন্টভুক্ত ছিলেন, তাকে আজ গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে তাদের ব্যাপারেও তদন্ত কাজ চলমান।’
গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পরও ওবায়দুল কাদের কীভাবে তিনমাস দেশে ছিলেন এবং পরে কীভাবে বিদেশে চলে গেলেন সে বিষয়ে আদালতের মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে বলে জানান তাজুল।
তিনি বলেন, ‘১৫ দিনের মধ্যে এ ব্যাপারে ব্যাখ্যা দিবে আদালত নির্দেশনা দিয়েছে।’
‘যদি কেউ আদালতের নির্দেশনা থাকার পরও কাউকে পালাতে সাহায্য করেন, তাহলে আইন অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ রয়েছে,’ বলে যোগ করেন তিনি।
আদালতের আদেশে মঙ্গলবার সাবেক মন্ত্রী, আমলা, বিচারপতি ও রাজনীতিবিদসহ ১৬ জনকে গণহত্যার মামলায় ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত করা হয়।
তাদের মধ্যে আছেন সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী আনিসুল হক, ফারুক খান, দীপু মনি, আবদুর রাজ্জাক, শহাজাহান খান, কামাল আহমেদ মজুমদার, গোলাম দস্তগীর গাজী, আমির হোসেন আমু ও কামরুল ইসলাম।
আরও আছেন সাবেক উপদেষ্টা তৌফিক-ই ইলাহী চৌধুরী ও সালমান এফ রহমান এবং সাবেক প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক এবং সাবেক স্বরাষ্ট্র সচিব জাহাঙ্গীর আলম।
একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের বিচারের জন্য ২০১০ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুবনাল গঠন করেছিল আওয়ামী লীগ সরকার। এখন ছাত্র-জনতার আন্দোলনের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ সরকারের চালানো দমন পীড়নকে ‘গণহত্যা’ বিবেচনা করে এ আদালতে বিচারের উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।
গত ৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সময়ে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মধ্যে সারাদেশে ‘গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের’ অর্ধশতাধিক অভিযোগ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা ও প্রসিকিউশন অফিসে জমা পড়েছে।
এরমধ্যে একটি মামলায় গত ১৭ অক্টোবর শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এবং আরেক মামলায় তার পরিবারের সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতাসহ ৪৫ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে ট্রাইব্যুনাল।
গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে সেখানেই আছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তার দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের কয়েকজন গ্রেপ্তার হলেও অধিকাংশই এখনও আত্মগোপনে রয়েছেন।
যাদের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনাল পরোয়ানা জারি করেছে, তাদের মধ্যে শেখ হাসিনা ছাড়াও তার বোন শেখ রেহানা, শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, শেখ হাসিনার ফুপাতো ভাই সাবেক এমপি শেখ ফজলুল করিম সেলিম, তার দুই ভাতিজা ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ফজলে নূর তাপস, যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ রয়েছেন।
পরোয়ানা জারি হয়েছে সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাতের বিরুদ্ধেও।
শেখ হাসিনাসহ পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারির বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে ইতোমধ্যে পুলিশ মহাপরিদর্শককে চিঠি দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান কৌঁসুলি মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।
ট্রাইব্যুনালের প্রধান কৌঁসুলির বিশেষ পরামর্শক টবি ক্যাডম্যান বলেছেন, জুলাই ‘গণহত্যার’ প্রধান আসামি শেখ হাসিনাকে ভারত ফেরত পাঠাবে বলেই তিনি প্রত্যাশা করেন।
বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪
ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমাতে গত জুলাই-আগস্টের ‘গণহত্যার’ মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে তদন্ত শেষ করতে দুই মাস সময় দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজার নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল এই সময় বেঁধে দিয়ে আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছে। ট্রাইব্যুনালের অন্য সদস্যরা হলেন, বিচারপতি শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গণহত্যা এবং গুম সংক্রান্ত যে অপরাধ, সেগুলো মিলিয়ে তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করতে হবে। সেই ব্যাপারে আমরা সময় চেয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আদালত দুইমাস সময় দিয়েছে। আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারি এই মামলার পরবর্তী তারিখ ধার্য থাকে। আমরা চেষ্টা করব, এরমধ্যে যাতে একটা অগ্রগতি প্রতিবেদন অথবা সম্ভব হলে তদন্ত প্রতিবেদন যাতে আমাদের তদন্ত দল দিতে পারে, তারজন্য আমরা দিনরাত কাজ করব। আমরা সচেষ্ট আছি।’
শেখ হাসিনা বিগত ১৬ বছর ‘গোপন কারাগারের নিউক্লিয়াস’ ছিলেন মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘গুম কমিশনের তদন্ত প্রতিবেদন ধরে সব অপরাধের যে তথ্য-উপাত্ত পেয়েছি, সেগুলোর ব্যাপারেও ট্রাইব্যুনাল অপরাধ তদন্তের জন্য আমলে নিয়েছে। এ ব্যাপারেও আমরা রিপোর্ট দেব।’
চিফ প্রসিকিউটর বলেন, ‘একইভাবে (বিগত সরকারের) মন্ত্রী পরিষদের সদস্য যারা আছেন, ওবায়দুল কাদেরসহ বাকিদের ব্যাপারে, যারা গ্রেপ্তার আছেন, আবদুর রাজ্জাক, যিনি আগের দিন পর্যন্ত এখানে ওয়ারেন্টভুক্ত ছিলেন, তাকে আজ গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে তাদের ব্যাপারেও তদন্ত কাজ চলমান।’
গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পরও ওবায়দুল কাদের কীভাবে তিনমাস দেশে ছিলেন এবং পরে কীভাবে বিদেশে চলে গেলেন সে বিষয়ে আদালতের মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে বলে জানান তাজুল।
তিনি বলেন, ‘১৫ দিনের মধ্যে এ ব্যাপারে ব্যাখ্যা দিবে আদালত নির্দেশনা দিয়েছে।’
‘যদি কেউ আদালতের নির্দেশনা থাকার পরও কাউকে পালাতে সাহায্য করেন, তাহলে আইন অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ রয়েছে,’ বলে যোগ করেন তিনি।
আদালতের আদেশে মঙ্গলবার সাবেক মন্ত্রী, আমলা, বিচারপতি ও রাজনীতিবিদসহ ১৬ জনকে গণহত্যার মামলায় ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত করা হয়।
তাদের মধ্যে আছেন সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী আনিসুল হক, ফারুক খান, দীপু মনি, আবদুর রাজ্জাক, শহাজাহান খান, কামাল আহমেদ মজুমদার, গোলাম দস্তগীর গাজী, আমির হোসেন আমু ও কামরুল ইসলাম।
আরও আছেন সাবেক উপদেষ্টা তৌফিক-ই ইলাহী চৌধুরী ও সালমান এফ রহমান এবং সাবেক প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক এবং সাবেক স্বরাষ্ট্র সচিব জাহাঙ্গীর আলম।
একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের বিচারের জন্য ২০১০ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুবনাল গঠন করেছিল আওয়ামী লীগ সরকার। এখন ছাত্র-জনতার আন্দোলনের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ সরকারের চালানো দমন পীড়নকে ‘গণহত্যা’ বিবেচনা করে এ আদালতে বিচারের উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।
গত ৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সময়ে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মধ্যে সারাদেশে ‘গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের’ অর্ধশতাধিক অভিযোগ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা ও প্রসিকিউশন অফিসে জমা পড়েছে।
এরমধ্যে একটি মামলায় গত ১৭ অক্টোবর শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এবং আরেক মামলায় তার পরিবারের সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতাসহ ৪৫ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে ট্রাইব্যুনাল।
গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে সেখানেই আছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তার দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের কয়েকজন গ্রেপ্তার হলেও অধিকাংশই এখনও আত্মগোপনে রয়েছেন।
যাদের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনাল পরোয়ানা জারি করেছে, তাদের মধ্যে শেখ হাসিনা ছাড়াও তার বোন শেখ রেহানা, শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, শেখ হাসিনার ফুপাতো ভাই সাবেক এমপি শেখ ফজলুল করিম সেলিম, তার দুই ভাতিজা ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ফজলে নূর তাপস, যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ রয়েছেন।
পরোয়ানা জারি হয়েছে সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাতের বিরুদ্ধেও।
শেখ হাসিনাসহ পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারির বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে ইতোমধ্যে পুলিশ মহাপরিদর্শককে চিঠি দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান কৌঁসুলি মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।
ট্রাইব্যুনালের প্রধান কৌঁসুলির বিশেষ পরামর্শক টবি ক্যাডম্যান বলেছেন, জুলাই ‘গণহত্যার’ প্রধান আসামি শেখ হাসিনাকে ভারত ফেরত পাঠাবে বলেই তিনি প্রত্যাশা করেন।