alt

জাতীয়

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে পরোয়ানা, সঙ্গে আরও ৪৫

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ‘জুলাই ও আগস্টে সংঘটিত গণহত্যার’ বিচার কার্যক্রম শুরু করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। প্রথম দিনই আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। ১৮ নভেম্বরের মধ্যে তাকে গ্রেপ্তার করে আদালতে হাজির করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

https://sangbad.net.bd/images/2024/October/18Oct24/news/arrest.jpg

একইদিন ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ আরও ৪৫ জনের নামেও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এতে শিক্ষাবিদ অধ্যাপক জাফর ইকবাল ও সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের নামও রয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) দুপুরে পৃথক দুটি আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ আদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদার নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ। ট্রাইব্যুনালের সদস্যরা হলেন- বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মহিতুল হক এনাম চৌধুরী।

ট্রাইব্যুনালে আসা ৫৬টি অভিযোগের মধ্যে ৫৪টিতেই প্রধান আসামি করা হয়েছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে।

এর আগে, বিচারের অংশ হিসেবে ‘গণহত্যা ঘিরে’ শেখ হাসিনাসহ ৫০ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা চায় ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন টিম। পরোয়ানা জারির আবেদনের সময় আওয়ামী লীগ সরকারের আমল এবং জুলাই-আগস্টে তাদের ভূমিকা তুলে ধরা হয়।

‘সিসটেমেটিকভাবে অপরাধী আ’লীগ
চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম আদলতে বলেন, ‘সিসটেমেটিকভাবে জুলাই-আগস্টের গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে আওয়ামী লীগ।’ আওয়ামী লীগ সরকারের সময় গুম, খুন, অপহরণের বিবরণ তুলে ধরে ‘কীভাবে এই সরকার ফ্যাস্টিস্টে রূপ নিল’- তা ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করেন তিনি।

এই অপরাধগুলো বিস্তৃত মাত্রায়, সারা বাংলাদেশ জুড়ে সংঘটিত হয়েছে- মন্তব্য করে সাংবাদিকদের তাজুল ইসলাম বলেন, ‘আদালতের কাছে আবেদন জানিয়েছিলাম এই অপরাধের আসামি যারা, তারা অসম্ভব রকমের প্রভাবশালী, তাদের গ্রেপ্তার করা না হলে তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করাটা অসম্ভব কঠিন। তাদের ভয়ে সাধারণ মানুষ, এমনকি শহীদ পরিবারের সদস্যরা কথা বলতে সাহসী হচ্ছেন না। সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে আমরা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন জানিয়েছিলাম।’

ট্রাইব্যুনাল আবেদন মঞ্জুর করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তার করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানান তাজুল ইসলাম। দ্বিতীয় আবেদনটিতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং সাবেক মন্ত্রিপরিষদের সদস্যসহ ৪৫ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন জানানো হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, সেটিও মঞ্জুর করেছে ট্রাইব্যুনাল।

তাজুল ইসলাম জানান, ১৮ নভেম্বরের মধ্যে শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তার করে ট্রাইব্যুনালে হাজিরের নির্দেশ দিয়েছে আদালত।

**পরোয়ানা যাদের নামে**
গ্রেপ্তারি পরোয়ানার তালিকায় আরও রয়েছেন- সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত, সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী দীপু মনি, সাবেক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানা, আওয়ামী লীগ নেতা শেখ সেলিম, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস, যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ পরশ, ডিবির সাবেক প্রধান হারুন অর রশীদ, পুলিশ কর্মকর্তা বিপ্লব কুমার সরকার, প্রলয় কুমার জোয়ারদার, ডিমপি কমিশনার (সাবেক) হাবিবুর রহমান, র‌্যাবের সাবেক ডিজি হারুন উর রশিদ, সাবেক সেনা কর্মকর্তা জিয়াউল আহসান, তারেক সিদ্দিকি, বিচারপতি মানিক (সাবেক), অধ্যাপক জাফর ইকবাল, সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, সাবেক এসবি প্রধান মনিরুল ইসলাম, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।

প্রসিকিউশন টিমের সদস্যরা জানান, তাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রমাণ মিলেছে।

চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, ‘অপরাধীদের অনেকে এখনও রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে রয়েছেন। সে কারণে তাদের সবার নাম প্রকাশ করা হচ্ছে না।’

**মোবাইল নিষেধাজ্ঞা**
বৃহস্পতিবার বিচারকাজ শুরুর আগে রেজিস্ট্রার দপ্তরের নিষেধাজ্ঞা থাকায় মোবাইল ডিভাইস নিয়ে ট্রাইব্যুনালে প্রবেশে বারণ করা হয় গণমাধ্যমকর্মীদের।

এ নিয়ে পরে চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, ‘ট্রাইব্যুনালে একটা নিরাপত্তাজনিত বিষয় আছে। একটা টিনশেড বিল্ডিংয়ে এই বিচারকার্যক্রম চালানো হচ্ছে। নিরাপত্তার প্রয়োজনে যেসব বাধ্যবাধকতা দেয়া হয়েছে সেসব সাময়িক।’ পরবর্তী সময়ে এটির সমাধান হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।

**প্রসিকিউশনে আগেই প্রস্তুতি**
বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা ২০ মিনিটে ‘জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গণহত্যার ঘটনায়’ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের (আইসিটি) বিচারের কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়। প্রথম দিনই ‘জুলাই-আগস্ট গণহত্যায়’ সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৫০ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা চাওয়া হবে- প্রসিকিউশনে সেটা আগে থেকেই ঠিক করা ছিল।

**ভারতেই আছেন শেখ হাসিনা**
এদিকে বৃহস্পতিবার ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সোয়াল সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতেই আছেন। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ভারতে চলে আসার বিষয়ে আগেই জানানো হয়েছিল, নিরাপত্তার কারণে অল্প সময়ের নোটিশে তিনি ভারতে চলে এসেছিলেন। এখনও আছেন, থাকবেন (কন্টিনিউজ টু বি)।’

**এক মাসের মধ্যে ফেরানোর চেষ্টা**
একই দিন ঢাকায় অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, ‘আদালতের নির্দেশ পত্রিকা মারফত এইমাত্র জানলাম। এক মাস সময় দিয়েছেন কিন্তু আদালত; এই সময়ের মধ্যে আমরা তাকে ফেরত আনার চেষ্টা... অবশ্যই আমাদের জন্য যা যা করা প্রয়োজন সেটা করব।’

**আইসিটি**
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে চলে যান শেখ হাসিনা। এই গণঅভ্যুত্থানে অন্তত ৭৫৩ জন নিহত ও কয়েক হাজার মানুষ আহত হন। এরপর, মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার ‘জুলাই ও আগস্টে সংঘটিত গণহত্যার ঘটনায়’ দায়ের করা মামলার বিচার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে (আইসিটি) করার সিদ্ধান্ত নেয়।

এরই অংশ হিসেবে নতুন প্রসিকিউশন টিম ও তদন্ত সংস্থা গঠিত হয়। গণ-অভ্যুত্থানের পর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের নেতা এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাবেক শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত গুম, হত্যা, গণহত্যাসহ ৭০টির বেশি অভিযোগ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জমা পড়েছে।

স্বাধীনতার দীর্ঘ ৩৯ বছর পর একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্তদের বিচারের মুখোমুখি করতে ২০১০ সালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে। ওই বছরের ২৫ মার্চ ট্রাইব্যুনালের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। এই ট্রাইব্যুনালে ইতোমধ্যে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে অনেকের বিচার ও সর্বোচ্চ শাস্তি কার্যকর হয়েছে।

পরে ২০১২ সালের ২২ মার্চ ট্রাইব্যুনাল-২ নামে আরেকটি ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। তবে ২০১৫ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর দুটি ট্রাইব্যুনালকে একীভূত করা হয়। ফলে একটি ট্রাইব্যুনালে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারকাজ চলমান ছিল। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর ট্রাইব্যুনাল নতুন চেয়াম্যান ও সদস্য নিয়োগ করে এই পুনর্গঠন করা হয়।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফিরিয়ে আনতে রিভিউ আবেদনে ১০ যুক্তি

ছবি

হাসিনাকে এক মাসের মধ্যে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেয়া হবে : পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

ছবি

রাষ্ট্র সংস্কারে গঠিত হলো আরও ৪ কমিশন, নেতৃত্বে যারা

ছবি

শেখ হাসিনা ভারতে আছেন, ভারতেই থাকবেন: ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

ছবি

রাষ্ট্রীয় সম্মান ছাড়াই মতিয়া চৌধুরীর শেষ বিদায়

ছবি

ডেঙ্গুতে আরও ৮ জনের মৃত্যু

ছবি

২০২৫ সালের ছুটির তালিকা অনুমোদন দিলো সরকার

ছবি

পদত্যাগ করলেন বাংলা একাডেমির সভাপতি সেলিনা হোসেন

ছবি

সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদ ও তাঁর স্ত্রীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

ছবি

জামিন নামঞ্জুর, সাবেক মন্ত্রী রাজ্জাক ও ফারুক কারাগারে

ছবি

সেপ্টেম্বরে সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৯৮ জনের মৃত্যু : যাত্রী কল্যাণ সমিতি

ছবি

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি

ছবি

আমরা সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য ভাঙার কাজ করছি : আসিফ মাহমুদ

ছবি

জুলাই-আগস্ট গণহত্যার আনুষ্ঠানিক বিচারকাজ শুরু ট্রাইব্যুনালে

ছবি

নতুন সিআইডি প্রধান মতিউর রহমান শেখ

ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞায় পর্যটক-শূন্য খাগড়াছড়ি তিন সপ্তাহে লোকসান ১২ কোটি টাকা

ছবি

সারজিস-হাসনাতের নেতৃত্বে হাইকোর্ট ঘেরাও

ছবি

ঢাকা উত্তরের সাবেক মেয়র আতিক গ্রেফতার

ছবি

১২ বিচারপতি ‘বিচারিক দায়িত্ব’ পালন করতে পারবেন না

ছবি

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ভুটানের রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাৎ

ছবি

১০ অতিরিক্ত আইজিপি’র বদল

ছবি

৭ মার্চ, ১৫ আগস্টসহ জাতীয় আট দিবস বাতিল হচ্ছে

ছবি

মাইনাস টু’ নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি: প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং

ছবি

সাগরে নিম্নচাপ, বন্দরে দূরবর্তী সতর্ক সংকেত

শনিবার আরও কয়েকটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপে বসছেন প্রধান উপদেষ্টা

ছবি

রাষ্ট্র সংস্কার নিয়ে ফের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে বসছেন প্রধান উপদেষ্টা

ছবি

পার্বত্য চট্টগ্রামের সহিংসতায় নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জাতিসংঘের

ছবি

সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ: আইনি প্রক্রিয়া মেনে পদক্ষেপ নেবে প্রসিকিউশন টিম

হাইকোর্ট ঘেরাওয়ের ঘোষণা সারজিস-হাসনাতের

ছবি

বেসিসের সাবেক সভাপতি আলমাস কবীর গ্রেপ্তারের পর জামিন পেলেন

ছবি

বিচারকের অসৌজন্যমূলক আচরণ : বেঞ্চ ভেঙে দিলেন প্রধান বিচারপতি

ছবি

জুলাই বিপ্লবে আহতদের চিকিৎসা-পুনর্বাসনে সরকার বদ্ধপরিকর: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

ছবি

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যোগ দিলেন চেয়ারম্যানসহ বিচারিক প্যানেল

ছবি

আব্দুর রাজ্জাক ও ফারুক খান ২ দিনের রিমান্ডে

ছবি

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ট্রাকচাপায় শিশুসহ নিহত ৩

ছবি

বেসিসের সাবেক সভাপতি আলমাস কবীর গুলশান থেকে গ্রেপ্তার

tab

জাতীয়

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে পরোয়ানা, সঙ্গে আরও ৪৫

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ‘জুলাই ও আগস্টে সংঘটিত গণহত্যার’ বিচার কার্যক্রম শুরু করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। প্রথম দিনই আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। ১৮ নভেম্বরের মধ্যে তাকে গ্রেপ্তার করে আদালতে হাজির করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

https://sangbad.net.bd/images/2024/October/18Oct24/news/arrest.jpg

একইদিন ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ আরও ৪৫ জনের নামেও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এতে শিক্ষাবিদ অধ্যাপক জাফর ইকবাল ও সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের নামও রয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) দুপুরে পৃথক দুটি আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ আদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদার নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ। ট্রাইব্যুনালের সদস্যরা হলেন- বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মহিতুল হক এনাম চৌধুরী।

ট্রাইব্যুনালে আসা ৫৬টি অভিযোগের মধ্যে ৫৪টিতেই প্রধান আসামি করা হয়েছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে।

এর আগে, বিচারের অংশ হিসেবে ‘গণহত্যা ঘিরে’ শেখ হাসিনাসহ ৫০ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা চায় ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন টিম। পরোয়ানা জারির আবেদনের সময় আওয়ামী লীগ সরকারের আমল এবং জুলাই-আগস্টে তাদের ভূমিকা তুলে ধরা হয়।

‘সিসটেমেটিকভাবে অপরাধী আ’লীগ
চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম আদলতে বলেন, ‘সিসটেমেটিকভাবে জুলাই-আগস্টের গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে আওয়ামী লীগ।’ আওয়ামী লীগ সরকারের সময় গুম, খুন, অপহরণের বিবরণ তুলে ধরে ‘কীভাবে এই সরকার ফ্যাস্টিস্টে রূপ নিল’- তা ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করেন তিনি।

এই অপরাধগুলো বিস্তৃত মাত্রায়, সারা বাংলাদেশ জুড়ে সংঘটিত হয়েছে- মন্তব্য করে সাংবাদিকদের তাজুল ইসলাম বলেন, ‘আদালতের কাছে আবেদন জানিয়েছিলাম এই অপরাধের আসামি যারা, তারা অসম্ভব রকমের প্রভাবশালী, তাদের গ্রেপ্তার করা না হলে তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করাটা অসম্ভব কঠিন। তাদের ভয়ে সাধারণ মানুষ, এমনকি শহীদ পরিবারের সদস্যরা কথা বলতে সাহসী হচ্ছেন না। সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে আমরা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন জানিয়েছিলাম।’

ট্রাইব্যুনাল আবেদন মঞ্জুর করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তার করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানান তাজুল ইসলাম। দ্বিতীয় আবেদনটিতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং সাবেক মন্ত্রিপরিষদের সদস্যসহ ৪৫ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন জানানো হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, সেটিও মঞ্জুর করেছে ট্রাইব্যুনাল।

তাজুল ইসলাম জানান, ১৮ নভেম্বরের মধ্যে শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তার করে ট্রাইব্যুনালে হাজিরের নির্দেশ দিয়েছে আদালত।

**পরোয়ানা যাদের নামে**
গ্রেপ্তারি পরোয়ানার তালিকায় আরও রয়েছেন- সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত, সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী দীপু মনি, সাবেক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানা, আওয়ামী লীগ নেতা শেখ সেলিম, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস, যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ পরশ, ডিবির সাবেক প্রধান হারুন অর রশীদ, পুলিশ কর্মকর্তা বিপ্লব কুমার সরকার, প্রলয় কুমার জোয়ারদার, ডিমপি কমিশনার (সাবেক) হাবিবুর রহমান, র‌্যাবের সাবেক ডিজি হারুন উর রশিদ, সাবেক সেনা কর্মকর্তা জিয়াউল আহসান, তারেক সিদ্দিকি, বিচারপতি মানিক (সাবেক), অধ্যাপক জাফর ইকবাল, সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, সাবেক এসবি প্রধান মনিরুল ইসলাম, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।

প্রসিকিউশন টিমের সদস্যরা জানান, তাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রমাণ মিলেছে।

চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, ‘অপরাধীদের অনেকে এখনও রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে রয়েছেন। সে কারণে তাদের সবার নাম প্রকাশ করা হচ্ছে না।’

**মোবাইল নিষেধাজ্ঞা**
বৃহস্পতিবার বিচারকাজ শুরুর আগে রেজিস্ট্রার দপ্তরের নিষেধাজ্ঞা থাকায় মোবাইল ডিভাইস নিয়ে ট্রাইব্যুনালে প্রবেশে বারণ করা হয় গণমাধ্যমকর্মীদের।

এ নিয়ে পরে চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, ‘ট্রাইব্যুনালে একটা নিরাপত্তাজনিত বিষয় আছে। একটা টিনশেড বিল্ডিংয়ে এই বিচারকার্যক্রম চালানো হচ্ছে। নিরাপত্তার প্রয়োজনে যেসব বাধ্যবাধকতা দেয়া হয়েছে সেসব সাময়িক।’ পরবর্তী সময়ে এটির সমাধান হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।

**প্রসিকিউশনে আগেই প্রস্তুতি**
বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা ২০ মিনিটে ‘জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গণহত্যার ঘটনায়’ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের (আইসিটি) বিচারের কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়। প্রথম দিনই ‘জুলাই-আগস্ট গণহত্যায়’ সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৫০ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা চাওয়া হবে- প্রসিকিউশনে সেটা আগে থেকেই ঠিক করা ছিল।

**ভারতেই আছেন শেখ হাসিনা**
এদিকে বৃহস্পতিবার ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সোয়াল সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতেই আছেন। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ভারতে চলে আসার বিষয়ে আগেই জানানো হয়েছিল, নিরাপত্তার কারণে অল্প সময়ের নোটিশে তিনি ভারতে চলে এসেছিলেন। এখনও আছেন, থাকবেন (কন্টিনিউজ টু বি)।’

**এক মাসের মধ্যে ফেরানোর চেষ্টা**
একই দিন ঢাকায় অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, ‘আদালতের নির্দেশ পত্রিকা মারফত এইমাত্র জানলাম। এক মাস সময় দিয়েছেন কিন্তু আদালত; এই সময়ের মধ্যে আমরা তাকে ফেরত আনার চেষ্টা... অবশ্যই আমাদের জন্য যা যা করা প্রয়োজন সেটা করব।’

**আইসিটি**
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে চলে যান শেখ হাসিনা। এই গণঅভ্যুত্থানে অন্তত ৭৫৩ জন নিহত ও কয়েক হাজার মানুষ আহত হন। এরপর, মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার ‘জুলাই ও আগস্টে সংঘটিত গণহত্যার ঘটনায়’ দায়ের করা মামলার বিচার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে (আইসিটি) করার সিদ্ধান্ত নেয়।

এরই অংশ হিসেবে নতুন প্রসিকিউশন টিম ও তদন্ত সংস্থা গঠিত হয়। গণ-অভ্যুত্থানের পর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের নেতা এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাবেক শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত গুম, হত্যা, গণহত্যাসহ ৭০টির বেশি অভিযোগ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জমা পড়েছে।

স্বাধীনতার দীর্ঘ ৩৯ বছর পর একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্তদের বিচারের মুখোমুখি করতে ২০১০ সালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে। ওই বছরের ২৫ মার্চ ট্রাইব্যুনালের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। এই ট্রাইব্যুনালে ইতোমধ্যে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে অনেকের বিচার ও সর্বোচ্চ শাস্তি কার্যকর হয়েছে।

পরে ২০১২ সালের ২২ মার্চ ট্রাইব্যুনাল-২ নামে আরেকটি ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। তবে ২০১৫ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর দুটি ট্রাইব্যুনালকে একীভূত করা হয়। ফলে একটি ট্রাইব্যুনালে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারকাজ চলমান ছিল। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর ট্রাইব্যুনাল নতুন চেয়াম্যান ও সদস্য নিয়োগ করে এই পুনর্গঠন করা হয়।

back to top