alt

জাতীয়

সন্ত্রাসবিরোধী আইনে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ, যে কারণ বলা হলো প্রজ্ঞাপনে

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : শুক্রবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৪

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শতশত নিরপরাধ ছাত্র-জনতা ‘হত্যা’, রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ‘ষড়যন্ত্র’ এবং ‘সন্ত্রাসী’ কাজে জড়িত থাকাসহ বেশকিছু অভিযোগে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। ২০০৯ সালের সন্ত্রাসবিরোধী আইন অনুযায়ী সংগঠনটিকে নিষিদ্ধ করে এবং ‘নিষিদ্ধ সত্ত্বা’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করে ২৩ অক্টোবর বুধবার রাতে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

আওয়ামী লীগ সরকার পতনে নেতৃত্ব দেয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা বৃহস্পতিবারের মধ্যে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করার হুঁশিয়ারি দিয়েছিল। গত মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগের দাবিতে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে এ সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়। নিষিদ্ধ হওয়ার খবর আসার পর বুধবার রাতে এর প্রতিক্রিয়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আনন্দ মিছিল করে শিক্ষার্থীরা

**একই আইনে জামায়াত-শিবির**
একই আইনে বিগত আওয়ামী লীগ সরকার গত ১ আগস্ট জামায়াতে ইসলামী ও তাদের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবিরকে নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল, যা ২৮ আগস্ট বাতিল করে অন্তর্বর্তী সরকার।

ব্রিটিশ শাসন থেকে ভারত-পাকিস্তান বিভক্তির পর ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হল থেকে ‘পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ’ নাম নিয়ে শুরু করা সংগঠন ধাপে ধাপে পাল্টে স্বাধীনতার পর ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগ’ নামধারণ করে।

**ক্রান্তিকালে সোচ্চার ভূমিকা**
পাকিস্তান আমলে ভাষা আন্দোলন, ছাত্র অধিকার আন্দোলন ও স্বাধিকার আন্দোলনসহ জাতির সংকটকালে রাজপথে ছাত্রলীগ ছিল নেতৃত্বের ভূমিকায়; স্বাধীনতা যুদ্ধে ও দাবি আদায়ের সংগ্রামে ঝরে গেছে বহু নেতাকর্মীর প্রাণ। স্বাধীন বাংলাদেশেও সামরিক শাসনবিরোধী লড়াইয়েও ছাত্রলীগের সোচ্চার ভূমিকা ছিল।

**চাঁদাবাজি, হত্যা, সাজা**
নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানের পর গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় পরিস্থিতি পাল্টাতে থাকে। নানা ঘটনায় সমালোচনায় পড়তে হয় সংগঠনটিকে। ২০০৯ সাল থেকে টানা ১৫ বছর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে কমিটি বাণিজ্য ও চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, হত্যাসহ নানা অনিয়মে সংগঠনটির নাম জড়ায়। চাঁদাবাজির অভিযোগে ২০১৯ সালে সমালোচনার মুখে থাকা সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীকে ছাত্রলীগের নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া হয়।

২০১২ সালে দর্জি দোকানের কর্মী বিশ্বজিৎ দাস হত্যাকাণ্ড, একই বছর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ছাত্র জুবায়ের আহমেদ হত্যাকাণ্ড, ২০১৯ সালে বুয়েটে আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের সাজাও হয়।

চলতি বছর জুলাইয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের হামলার পরই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সহিংস রূপ পায়। আন্দোলন দমাতে প্রকাশ্যে রাজপথে সংগঠনটির সশস্ত্র কর্মীদের কর্মকাণ্ডের ছবি সংবাদমাধ্যমেও প্রকাশিত হয়।

এ হামলার জন্য ২০২২ সাল থেকে সংগঠনটির নেতৃত্বে থাকা সভাপতি সাদ্দাম হোসাইন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ (ইনান) এর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়।

**নিষিদ্ধের দাবি**
সরকার পতনের পর থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীরা ছাত্রলীগ নিষিদ্ধের দাবি জানিয়ে আসছিল। গত কয়েকদিন তাদের দাবি জোরালো হয়। গত মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বিভিন্ন ব্যানার নিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করে আন্দোলনকারীরা। বিকেল থেকে দলে দলে শহীদ মিনারে জড়ো হন তারা। সেখানে সমাবেশে রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ ও সংবিধান বাতিলের পাশাপাশি ছাত্রলীগ নিষিদ্ধসহ পাঁচটি দাবি তুলে ধরেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ।

আগের দিন সোমবার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে মশাল মিছিল করে তারা। এছাড়া মঙ্গলবার রাষ্ট্রপতির অপসারণের পাশাপাশি ছাত্রলীগ নিষিদ্ধের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে ঘণ্টাব্যাপী অবস্থান কর্মসূচি পালন করে স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা কমিটি (স্বারক) নামের এক প্ল্যাটফর্ম।

এমন দাবির মধ্যে বুধবার রাতে ছাত্রলীগ নিষিদ্ধের প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার। প্রজ্ঞাপনে স্বাধীনতা পরবর্তী বিভিন্ন সময়ে বিশেষ করে গত ১৫ বছরে সংগঠনটির ‘সন্ত্রাসী’ কর্মকাণ্ডের কথা তুলে ধরে।

**যে কারণ বলা হলো**
এতে বলা হয়, ‘স্বৈরাচারী শাসনামলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ হত্যা, নির্যাতন, গণরুম কেন্দ্রিক নিপীড়ন, ছাত্রাবাসে সিট বাণিজ্য, টেন্ডারবাজি, ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নসহ নানাবিধ জননিরাপত্তা বিঘœকারী কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল এবং এত সম্পর্কিত প্রামাণ্য তথ্য দেশের সব প্রধান গণমাধ্যমে প্রকাশিত হইয়াছে এবং কিছু সন্ত্রাসী ঘটনায় সংগঠনটির নেতাকর্মীদের অপরাধ আদালতেও প্রমাণিত হইয়াছে।’

ছাত্র-জনতার তুমুল গণ আন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পালিয়ে ভারতে চলে যান। এরপর থেকে গ্রেপ্তার অভিযানের মধ্যে আগের সরকারের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীসহ দলের শীর্ষ নেতাদের অনেকে গ্রেপ্তার হন। অন্যরা প্রকাশ্যে নেই বা বিদেশে চলে গেছেন। ছাত্রলীগের নেতাদেরও বেশির ভাগ সরকার পতনের পর আর সামনে আসেননি, তারাও পালিয়ে আছেন।

**ছাত্রলীগের বিবৃতি**
এদিকে নিষিদ্ধের প্রজ্ঞাপনের পর ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান সাংবাদিকদের কাছে হোয়াটসঅ্যাপে বিবৃতি পাঠিয়ে এর প্রতিবাদ করেন। সংগঠনের ঐতিহাসিক ভূমিকার কথা তুলে ধরে তারা সংগঠনের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেন।

বর্তমান সরকারকে ‘অবৈধ ও অসাংবিধানিক সরকার’ আখ্যা দিয়ে তারা বিবৃতিতে বলেন, ‘দেশরতœ শেখ হাসিনা যখন ১৫ জুলাই থেকে সংঘটিত প্রতিটি ঘটনার আন্তর্জাতিক তদন্তের আয়োজন করেছিলেন, তখন এই অবৈধ সরকার হত্যা, ধ্বংসযজ্ঞ ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডকে দায়মুক্তি দিয়ে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনার চেষ্টা করছে তা সর্বৈব মিথ্যা ও বানোয়াট।’ বিবৃতিতে তারা সরকারের পদত্যাগও দাবি করেন।

ছবি

দানা ‘আসছে না’ ঝরছে বৃষ্টি, জলোচ্ছ্বাসের আভাস উপকূলে

সরকারি নিয়োগে বয়স বাড়লো ২ বছর তিনবারের বেশি বিসিএস নয়

ছবি

রাষ্ট্রপতির থাকা না থাকা : রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত

ছবি

ছাত্র-গণ আন্দোলনে জড়িতদের গ্রেপ্তার এবং দ্রুত বিচারের আশ্বাস সরকারের

ছবি

সরকারি চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫ না করার সিদ্ধান্তে আন্দোলন

ছবি

সাংবিধানিক পথে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন: আসিফ নজরুলের ব্যাখ্যা

ছবি

ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ: সন্ত্রাসী কার্যক্রমে জড়িত থাকার অভিযোগে সরকারের কঠোর পদক্ষেপ

ছবি

এসবি’র নতুন প্রধান খোন্দকার রফিকুল, পুলিশে ব্যাপক রদবদল

ছবি

গণমাধ্যমকে হুমকি ও ঘেরাওয়ের ঘোষণায় সরকারের কঠোর অবস্থান

ছবি

রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে: রিজওয়ানা

গণ–অভ্যুত্থান ঘিরে সহিংসতায় ৯৮৬ জনের মৃত্যু

১ টাকা ৩০ পয়সায় ঢাকায় আসবে কৃষিপণ্য, রাজশাহী থেকে কৃষিপণ্য স্পেশাল ট্রেন আগামী শনিবার থেকে চালু

ছবি

একজন চাকরিপ্রত্যাশী সর্বোচ্চ তিন বার বসতে পারবে বিসিএস পরীক্ষায়, উপদেষ্টা পরিষদে সিদ্ধান্ত

ছবি

খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ৪২ জনকে পুড়িয়ে মারার মামলা খারিজ

ছবি

ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’: ১৪ জেলায় জলোচ্ছ্বাসের সম্ভাবনা

ছবি

সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২ বছর অনুমোদন

ছবি

ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’ : ঢাকা থেকে ৫ রুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ

ছবি

শেখ হাসিনার পরিবারসহ অন্যদের বরাদ্দ প্লট বাতিলে হাইকোর্টের রুল

ছবি

সাবেক সিনিয়র সচিব মোস্তাফা কামাল গ্রেপ্তার

ছবি

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফেরাতে তিন আবেদনের শুনানি ১৭ নভেম্বর

ছবি

প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেওয়া দানা’র প্রভাবে উপকূলে অতি ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস

ছবি

গণ–অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের রাজনীতি করার অধিকার নেই: নাহিদ ইসলাম

৮ বছরের সাজা থেকে খালাস পেলেন বাবর

ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি

ছবি

বঙ্গভবন এলাকা থমথমে, কড়া নিরাপত্তা

রাষ্ট্রপতির ভবিষ্যৎ, সিদ্ধান্ত সাংবিধানিক না রাজনৈতিক

ছবি

বাংলাদেশের জলবায়ু সহনশীলতা বৃদ্ধিতে ১৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অনুদান দিচ্ছে ইউএসএআইডি

ছবি

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বিচারিক প্রক্রিয়া নিয়ে আইন সংশোধনের আহ্বান হিউম্যান রাইটস ওয়াচের

ছবি

ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আনন্দ মিছিল

ছবি

ছাত্রলীগ ‘নিষিদ্ধ ’, প্রজ্ঞাপন জারি করল সরকার

ছবি

ডেঙ্গু: অক্টোবরের ২৩ দিনেই মৃত্যু শতাধিক

ছবি

সাবেক নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ আটক

ছবি

বিটিআরসির নতুন কমিশনার ইকবাল আহমেদ

ছবি

ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’ আসছে, দেশের চার বন্দরে ৩ নম্বর সংকেত

ছবি

এইচএসসির ফল বাতিলের দাবিতে সচিবালয়ে ঢুকে বিক্ষোভ: নিরাপত্তা বাহিনীর লাঠিপেটা, গ্রেপ্তার ৫৪

ছবি

রাষ্ট্রপতি ইস্যুতে আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত আসবে: উপদেষ্টা নাহিদ

tab

জাতীয়

সন্ত্রাসবিরোধী আইনে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ, যে কারণ বলা হলো প্রজ্ঞাপনে

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

শুক্রবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৪

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শতশত নিরপরাধ ছাত্র-জনতা ‘হত্যা’, রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ‘ষড়যন্ত্র’ এবং ‘সন্ত্রাসী’ কাজে জড়িত থাকাসহ বেশকিছু অভিযোগে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। ২০০৯ সালের সন্ত্রাসবিরোধী আইন অনুযায়ী সংগঠনটিকে নিষিদ্ধ করে এবং ‘নিষিদ্ধ সত্ত্বা’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করে ২৩ অক্টোবর বুধবার রাতে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

আওয়ামী লীগ সরকার পতনে নেতৃত্ব দেয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা বৃহস্পতিবারের মধ্যে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করার হুঁশিয়ারি দিয়েছিল। গত মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগের দাবিতে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে এ সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়। নিষিদ্ধ হওয়ার খবর আসার পর বুধবার রাতে এর প্রতিক্রিয়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আনন্দ মিছিল করে শিক্ষার্থীরা

**একই আইনে জামায়াত-শিবির**
একই আইনে বিগত আওয়ামী লীগ সরকার গত ১ আগস্ট জামায়াতে ইসলামী ও তাদের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবিরকে নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল, যা ২৮ আগস্ট বাতিল করে অন্তর্বর্তী সরকার।

ব্রিটিশ শাসন থেকে ভারত-পাকিস্তান বিভক্তির পর ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হল থেকে ‘পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ’ নাম নিয়ে শুরু করা সংগঠন ধাপে ধাপে পাল্টে স্বাধীনতার পর ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগ’ নামধারণ করে।

**ক্রান্তিকালে সোচ্চার ভূমিকা**
পাকিস্তান আমলে ভাষা আন্দোলন, ছাত্র অধিকার আন্দোলন ও স্বাধিকার আন্দোলনসহ জাতির সংকটকালে রাজপথে ছাত্রলীগ ছিল নেতৃত্বের ভূমিকায়; স্বাধীনতা যুদ্ধে ও দাবি আদায়ের সংগ্রামে ঝরে গেছে বহু নেতাকর্মীর প্রাণ। স্বাধীন বাংলাদেশেও সামরিক শাসনবিরোধী লড়াইয়েও ছাত্রলীগের সোচ্চার ভূমিকা ছিল।

**চাঁদাবাজি, হত্যা, সাজা**
নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানের পর গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় পরিস্থিতি পাল্টাতে থাকে। নানা ঘটনায় সমালোচনায় পড়তে হয় সংগঠনটিকে। ২০০৯ সাল থেকে টানা ১৫ বছর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে কমিটি বাণিজ্য ও চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, হত্যাসহ নানা অনিয়মে সংগঠনটির নাম জড়ায়। চাঁদাবাজির অভিযোগে ২০১৯ সালে সমালোচনার মুখে থাকা সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীকে ছাত্রলীগের নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া হয়।

২০১২ সালে দর্জি দোকানের কর্মী বিশ্বজিৎ দাস হত্যাকাণ্ড, একই বছর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ছাত্র জুবায়ের আহমেদ হত্যাকাণ্ড, ২০১৯ সালে বুয়েটে আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের সাজাও হয়।

চলতি বছর জুলাইয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের হামলার পরই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সহিংস রূপ পায়। আন্দোলন দমাতে প্রকাশ্যে রাজপথে সংগঠনটির সশস্ত্র কর্মীদের কর্মকাণ্ডের ছবি সংবাদমাধ্যমেও প্রকাশিত হয়।

এ হামলার জন্য ২০২২ সাল থেকে সংগঠনটির নেতৃত্বে থাকা সভাপতি সাদ্দাম হোসাইন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ (ইনান) এর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়।

**নিষিদ্ধের দাবি**
সরকার পতনের পর থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীরা ছাত্রলীগ নিষিদ্ধের দাবি জানিয়ে আসছিল। গত কয়েকদিন তাদের দাবি জোরালো হয়। গত মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বিভিন্ন ব্যানার নিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করে আন্দোলনকারীরা। বিকেল থেকে দলে দলে শহীদ মিনারে জড়ো হন তারা। সেখানে সমাবেশে রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ ও সংবিধান বাতিলের পাশাপাশি ছাত্রলীগ নিষিদ্ধসহ পাঁচটি দাবি তুলে ধরেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ।

আগের দিন সোমবার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে মশাল মিছিল করে তারা। এছাড়া মঙ্গলবার রাষ্ট্রপতির অপসারণের পাশাপাশি ছাত্রলীগ নিষিদ্ধের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে ঘণ্টাব্যাপী অবস্থান কর্মসূচি পালন করে স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা কমিটি (স্বারক) নামের এক প্ল্যাটফর্ম।

এমন দাবির মধ্যে বুধবার রাতে ছাত্রলীগ নিষিদ্ধের প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার। প্রজ্ঞাপনে স্বাধীনতা পরবর্তী বিভিন্ন সময়ে বিশেষ করে গত ১৫ বছরে সংগঠনটির ‘সন্ত্রাসী’ কর্মকাণ্ডের কথা তুলে ধরে।

**যে কারণ বলা হলো**
এতে বলা হয়, ‘স্বৈরাচারী শাসনামলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ হত্যা, নির্যাতন, গণরুম কেন্দ্রিক নিপীড়ন, ছাত্রাবাসে সিট বাণিজ্য, টেন্ডারবাজি, ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নসহ নানাবিধ জননিরাপত্তা বিঘœকারী কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল এবং এত সম্পর্কিত প্রামাণ্য তথ্য দেশের সব প্রধান গণমাধ্যমে প্রকাশিত হইয়াছে এবং কিছু সন্ত্রাসী ঘটনায় সংগঠনটির নেতাকর্মীদের অপরাধ আদালতেও প্রমাণিত হইয়াছে।’

ছাত্র-জনতার তুমুল গণ আন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পালিয়ে ভারতে চলে যান। এরপর থেকে গ্রেপ্তার অভিযানের মধ্যে আগের সরকারের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীসহ দলের শীর্ষ নেতাদের অনেকে গ্রেপ্তার হন। অন্যরা প্রকাশ্যে নেই বা বিদেশে চলে গেছেন। ছাত্রলীগের নেতাদেরও বেশির ভাগ সরকার পতনের পর আর সামনে আসেননি, তারাও পালিয়ে আছেন।

**ছাত্রলীগের বিবৃতি**
এদিকে নিষিদ্ধের প্রজ্ঞাপনের পর ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান সাংবাদিকদের কাছে হোয়াটসঅ্যাপে বিবৃতি পাঠিয়ে এর প্রতিবাদ করেন। সংগঠনের ঐতিহাসিক ভূমিকার কথা তুলে ধরে তারা সংগঠনের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেন।

বর্তমান সরকারকে ‘অবৈধ ও অসাংবিধানিক সরকার’ আখ্যা দিয়ে তারা বিবৃতিতে বলেন, ‘দেশরতœ শেখ হাসিনা যখন ১৫ জুলাই থেকে সংঘটিত প্রতিটি ঘটনার আন্তর্জাতিক তদন্তের আয়োজন করেছিলেন, তখন এই অবৈধ সরকার হত্যা, ধ্বংসযজ্ঞ ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডকে দায়মুক্তি দিয়ে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনার চেষ্টা করছে তা সর্বৈব মিথ্যা ও বানোয়াট।’ বিবৃতিতে তারা সরকারের পদত্যাগও দাবি করেন।

back to top